আমার হৃদয়ে সে পর্ব -১৭+১৮

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৭

“বিয়েটা পুতুল খেলা নয়!”
“জীবনটাও!”

আমার কথা শুনে অভি যেন কিছুটা অবাক হবার মতন তাকালো।পরক্ষণে চোখমুখ স্বাভাবিক করে বাম পাশের ভ্রু টা উঁচিয়ে আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে বললো,
“জীবনটা কি আমার সাথে ডিভোর্স করার পর বুঝবে!”

এ’কথার পিঠে হালকা হাসলাম।এই ছন্নছাড়া হাসির মাঝে লুকিয়ে রাখলাম আকাশসম বিস্ময়ের আঁশ।অত্যন্ত শান্ত স্বরে বললাম,
“জীবন কারো জন্যে থেমে থাকে না!”

২৪.
দুইদিন পার শেষ হলো আজ!আমি অন্যদিনের মতন আজও চুপচাপ বসে আছি চারকোণা রুমের কোণার বিছানাটায়।দুপুরের শেষ লগ্নে খালামণি শেষ করে রুমে ঢুকেন। আমার কাছে আসেন!মাথায় হাত রাখেন।বলেন,

“মন খারাপ?”

আমি এবার নড়ে উঠলাম।এতক্ষণে খেয়াল হলো খালমণি আমার রুমে।হালকা হেসে বললাম,
“নাহ।মন খারাপ কেন হবে?”

খালামণি আর ঘাটলেন না।যদিও বুঝেছেন আমি মিথ্যে বলেছি।সারা রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে এবার আবার দিকে তাঁকিয়ে বলেন,

“ডিসিশন নেওয়া শেষ?”
“কিসের ডিসিশন?”

খালামণি একটু ধাতস্থতা হলেন।তারপর আবার স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললেন,
“নাহ মানে,ওদিন অভির বাবা যে আসলো উনাকে ডেট …!”

খালামণির পুরো কথা শেষ না করতে দিয়ে বলে উঠলাম,
“তা টেবিলের উপরেই আছে।”
“বুঝলাম না।”
“মানে টেবিলের কাছে গেলেই দেখবে একটা কাগজ।আর সাথে একটা চিঠিও আছে।”

খালামণি আমার কথা যেন বুঝতে পারলেন না।কাপল কুঁচকে তাকিয়ে থাকলেন।পরক্ষণে কুঁচকে ভাবটা মসৃণ করে আমাকে আর কিছু না জিজ্ঞেস করে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন!টেবিলের কাছে যেতে দেখলেন টেবিলের উপর একটা কাগজ পড়ে আছে।তিনি কাগজটা হাতে নিলেন।কাগমের মোড়কটা সরালেন।কাগজের উপর চোখ বুলাতেই চোখজোড়া মার্বেলের মতন বড় করে ফেললেন।বললেন,

“ডিভোর্স পেপার!তোর সই!অতঃপর অভিকে ডিভোর্স দিয়ে ফেলবি?”

আমি আবারো হাসলাম।বললাম,
“খালামণি,তুমিও শেষে চাইছিলে অভিকে ক্ষমা করে দিতে, তাই না?হ্যাঁ,আমিও মনে মনে ভেবেছিলাম অভিকে আর একটাবার সুযোগ দিব।কিন্তু দুইদিন আগে অভি সন্ধে শেষবার আমার সাথে দেখা করার পর তার একটা কথায় তাকে ক্ষমা করার ভাবনটা আমার মাথা থেকক সাথে সাথে উবে গেলো!তার আসল চরিত্রটা তখনই সামনে চলে এলো!”
“মানে?কী বলেছে সে?”
“উত্তর চিঠিতে!”

খালামণি ডিভোর্স পেপারটা নিচে নামিয়ে তরতর করে চিরকুটটা হাতে তুলে নেন,
“মিস্টার অভি?এতক্ষণে নিশ্চয়ই ডিভোর্স পেপারটা হাতে পেয়ে গেছেন!আপনি আমার সাথে আপনাদের বাসায় যে বিহেভ করেছিলেন তারথেকে সবথেকে নিকৃষ্ট বিহেভ হলো আমার গাঁয়ে হাত তুলেছেন!আপনার ওই অবিশ্বাসের ব্যাপারটাতে আমি ওতটা চাপ ক্রিয়েট করি নি।জানেন কেন?আপনার সেদিন ওকথাগুলে আমি পুরোপুরি না হলেও কিছুটা বিশ্বাস করেছি। আপনি বলেছিলেন আপনি আমাকে ভালোভাবে জানেন না।শুনেন না।সেই তাকে নিয়েই খারাপ ইস্যু শুনেছেন।এটা সাডেন একজন নতুন বউয়ের প্রতি নতুন বরের মনে কতটা আশানুরূপ হতে পারে তা খুবই কষ্টকর!হ্যাঁ, আমি আপনার ওই কথাগুলো আপনার জায়গা থেকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি।তাই বলে এই নয় যে আপনি ওই একই কথাতে নেচে যাবেন।নেচে তো গেলেন ই।আপনি পরে আবার সেই কথার জাস্টিফাই করার চেষ্টাই করেননি!মানুষের এত রাগ কীভাবে হয়,মিস্টার অভি?এই যে সেই অবিশ্বাসে আমার সাথে কখনো প্রয়োজনতিরিক্ত কথা বলেননি।আবার গাঁয়ে হাত পর্যন্ত তুলেছেন।গাঁয়ে হাত তুলে কত টা যে নিকৃষ্ট পশুর পরচয় দিয়েছেন তা নিজেও জানেন না!যাক ওসব বাদ!আপনি অতঃপর সত্যটা সব জানলেন!তারপর আবার বিশ্বাস করলেন।।ছুটে চলে এলেন ক্ষমা চাইত!আমি ক্ষমা করিনি।এই নিয়ে আপনার মা,বাবা,বোন এবং বাবাকে একে একে আমার কাছে পাঠানো শেষ করেছেন!এরসাথে আপনার আমাকে অসংখ্য”সরি সরির” মেসেজ তো আছেই এবং ফোনকলও!জানেন আপনার এসবেতে আমি তখন কিছুটা নরম হয়েছিলাম।বার বার ভেবেছিলাম আপনাকে আসলেই একবার সুযোগ দেওয়া যায় কি না।কারণ মানুষ মাত্রই ভুল।মানুষ ভুল করতেই পারে।তাই বলে পরে আবার ভুল করবে এটা তো কোনো কথা না!নাহ অভি সেরকম না।সে ভুল করবে না।সে যতটা নরম,যতটা তার আত্মসমর্পণ,যতটা আত্মাসম্মাম হীন হয়ে গেছে সত্যিই সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে!কিন্তু আমার ভাবনাকে আপনাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে শেষবার আমার সাথে আপনার বাবা বাসায় ফিরে যাবার পর সন্ধে যে আমার সাথে দেখা করলেন, সেই সাক্ষাৎকারে আপনার সবথেকে “জীবনটা কী ডিভোর্স করার বুঝবে!”এই একটা কথাই আপনার সবকিছু প্রমাণ হয়ে গেলো।আপনি সেই আগের অমানুষটা অমানুষই।কখনোই আর ঠিক হবেন না!সংসারে আবার গেলেও আপনার সেই ইগো,সেই এটিটিউড থাকবেই। তাই বলে এটা বলবেন না যে আমি এই কারণে আপনাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছি।ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছি এই কারণে আপনি মানুষটা আসলে ই মনের দিক দিয়ে একদমই ভালো নেই।আর যে মনের দিক দিয়ে ভালো না তার সাথে সংসার করার কথা পারসা ভাবতেই পারে না!আপনার যেমন ইগো,ভাব,মুড আছে।মিস্টার অভি?এই পারিসা খুব ছোট্ট?নাকি এই পারিসা খুব তাচ্ছিল্যকর আপনার কাছে?”

খালামণি পুরো চিঠিটা পড়া শেষ করে আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকলেন!কি বলবেন নিজেই বুঝতে পারছেন না!নিজেকে শান্ত করতে খানিকক্ষণ সময় লাগলো।শান্ত হলে ডিভোর্স পেপার এবং চিঠিটা আবার আগের জায়গা রেখে আমার কাছে এলেন।বললেন,

“ভেরী আপসেট!শেষপর্যন্তও ও তার আসল রূপটা দেখিয়ে দিলো?বুঝি না এরা কীভাবে পারে সব পরিস্থিতিতে নিজেদের এটিটিউড টানতে?টানার আগে একবারও ভাবে না এইতো তার আসল রূপ বেরিয়ে এলো?তবে অভি তোর কোনোদিক দিয়েই যোগ্য না!যাইহোক,এ নিয়ে আর মন খারাপ নয়।ইনশাআল্লাহ! সামনে যা হবে ভালোই হবে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ মা।আর একজন শিক্ষিত মেয়ে হিসেবে আই হোপ সেই কনফিডেন্সটা তোর আছে।”

বলে খালামণি এবার থামেন।তারপর দুই তিন সেকেন্ডস চুপ থেকে বলেন,
“তোর মা-বাবাকে জানিয়েছিস এই ব্যাপারটা?”

দুই পাশে মাথা নাড়লাম!
“কেনো জানাস নি?জানিয়ে দে।”
“দিব।আজ রাতের মধ্যেই জানিয়ে দিয়ে কাল সকালে পাঠিয়ে দিব।”
“যেটা ভালো মনে হয় তোর।’
বলে তাকিয়ে থাকেন।তারপর ব্যস্ত হয়ে বলেন,
“থাক উঠলাম।”

আমি খালামণির হাতটা ধরে রাখলাম।খালামণি হাতের দিকে তাঁকিয়ে আবার মুখের দিকে তাকালেন।আমার চোখমুখ ক্রমশ কুঁচকে আসতে থাকে।এই বুঝি কেঁদে ফেললাম।আমি এক সপাটে খালামণিকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলাম।মনপ্রাণ উজাড় করে কাঁদতে থাকলাম।খালামণি আমাকে শান্ত করতে উঠে পড়তে লাগলেন।কিন্তু আমি কিছুতেই শান্ত হতে পারলাম না।ভেতরের সবকিছুকে দমিয়ে উচ্চ আওয়াজে কান্নামুখরে
শুধু একটা কথাই বেরিয়ে এলো,

“খালামণি,আমিতে আগে স্বপ্ন দেখতাম আমার এক ভাত,এক কাপড়ে যেতে।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এটা আজ কী হলো?!কী হলো?!

২৫.
ডিভোর্স লেটার পাঠানোর একঘন্টা বাদেই অভির মার কল!কল দিয়েই কেঁদে উঠলেন।

“এটা কী করলে,পারিসা?কী করলে?আমাকে পর করে দিলে?তোমাকে ছাড়া যে আর ভালো থাকতে পারবো না।”
বলে আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।নিজেকে শক্ত করলাম।চোখখিঁচে বললাম,
“আই’ম সরি,মা!আমার আর কিছুই করার ছিল না।”

অভির মা আর কিছু বললেন না।শুধু কেঁদে চললেন।অভির মার থেকে মনে হয় অভির বাবা ফোন কেঁটে নেয়।বলে,
“একদম ঠিক করেছো পারিসা!সত্যি কথা জানো কি
এ তোমার কোনোকালেই যোগ্য না!ও এর এটিটিউডের জন্যে দেখবে একদিন সব হারিয়ে ফেলবে!সব।ইভেন আমাদেরও !”

বলে আঙ্কেল চুপসে যান।অভির মারও ওপাশ থেকে আর কান্নাকাটির আওয়াজ পাই নি।ফোনটা আমি কানের কাছে ওভাবে ধরেই রাখি!ধরে রাখতে রাখতে কলটা কেঁটে যায়!কল কেঁটে যাওয়ার আধা ঘন্টা পর সেই নাম্বার থেকে আবার কল আসে।তবে এবারের কলার অভির মা এবং বাবা নয়।স্বয়ং অভি নিজেই,

“ডিভোর্স দিয়ে খুব বড় হয়ে গিয়েছো!”
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৮

২৬.
পরদিন সকালে মা-বাবা আসেন।এসে বাবা থমথমা মুখে বেশ খানিক্ষন বসে থাকেন।আমি সোফার দিকে যেতে বাবা আমার দিকে তাকিয়ে চোখজোড়া সরু করে ফেলেন।মা না।মা স্বাভাবিক ই বসে।আমি একপাশে দাঁড়াই।আর দুইহাত সোঁজা করে বাবার দিকে তাকাই।।খালামণি বাবার চোখমুখের ভাব দেখে বুঝতে পারলেন বাবা আমার উপর মোটামুটি রেগে।বলেন,

“ভাইজান?যা হবার হয়ে গেছে তা নিয়ে আমার মনে হয় আর ঘাটাঘাটি করার দরকার নেই।”
“ডিভোর্সটা তোমার কাছে খুব ঠুনকো মনে হচ্ছে,রাহেলা?”সাথে সাথে বাবার জবাব।অত্যন্ত ক্রোধান্বিত প্রতিটি কথার শব্দ!খালামণি নিজেকে ধাতস্থতার সহিত বলেন,
“তা কেন ভাইজান?আসলে পারিসা অভির সাথে সুখে ছিল না।আপনিই তো পরে সব জানতে পেলেন অভি আঁটটা মাস কি ব্যবহার টাই না তার সাথে করেছে।”
“মাত্র আঁটমাস, আঁট বছর তো নয়!”

খালামণি আরো কিছু বলতে গেলেন।আমি চোখের ইশারায় খালামণিকে থামালাম।এবার আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“যে আঁটমাসে মিসবিহেভ করতে পারে সে আঁটবছরেও যে করবে না এমন কোনো কথা নেই!বাবা,গত আঁট আঁটটা মাস আমি অভিকে দেখে এসেছি।ওর সব বিহেভিয়ার ই মোটামুটি মুখস্ত আমার।ওর সাথে সংসারে গেলেও খুনসুটি লেগেই থাকতো।সন্দেহ,অবিশ্বাস সবসময় করে আসতো।ভালোভাবে ওর সাথে সংসার জীবন কাঁটতো না!’
” এতটা সিউর কীভাবে তুমি যে ও পরেও তোমার সাথে ওরকম ব্যবহার করবে?”
“যে আগে করতে পারে সে পরেও করতে পারবে বাবা।”
“এই ধারণায় ওকে তুমি ডিভোর্স দিয়েছো?শুধুমাত্র এটুকু ধারনায়?শুনতেছো শাহেলা তোমার মেয়ের কথা?”

মা চুপ হয়ে থাকেন।বাবা জেদ ভরা প্রসঙ্গে আবার বলে উঠেন,
“এই আঁটটা মাসে অভি যা করেছে সে তারজন্যে অনুতপ্ত হয়েছে।এবং ক্ষমাও চেয়েছে তোমার কাছে।সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে।মানুষ ভুল করে!ভুল শুধলেও নিতে পারে।ভুল সবসময় করে না মানুষ!অভিও তাই হতো।কিন্তু তুমি সেই সুযোগটা দিলে না।এরজন্যে সামনে কঠিন পশ্তাবে পারিসা!কঠিনভাবে পস্তাবে!
বলে খানিক থামেন।তারপর আবার বলেন,
“এখন কি করবে নাউ জাস্ট ডিসিশন ইউরস!তোমার ব্যাপারে আমি আর কোনো জানি না এবং জানতেও চাই না।শাহেলা উঠো?বাসায় যাবো!উঠো!”

মা বাবার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে যান।এবং অপ্রস্তুত চোখে আমার এবং খালামণির দিকে তাকান।খালামণিও চুপ হয়ে থাকেন।মা বাধ্য হয়ে এবার উঠে দাঁড়ান।আমাদের দিকে তাকিয়ে,
“আসি।”

বলে চলে যান।তাকিয়ে থাকি উনাদের চলে যাওয়ার দিকে।
এভাবে দেখতে দেখতে আরো সাতদিন শেষ হয়।এই সাতদিনে আমার প্রচন্ড মুড অফ ছিল!খালামণির সাথে কথা বলি নি।আঙ্কেলের সাথে কথা বলিনি।এবং ফাহিমের সাথেও না।অভিকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যাপারে আমার মা-বাবার রিয়াকশনটা খুবই কষ্টদায়ক ছিল।সন্তানের বিপদ-আপদে কাছের মানুষ থাকে মা-বাবা।আর আমার বিপদে কেউই নেই।খুবই নিরীহ,তুচ্ছ প্রাণি আমি।এই সাতদিনেট ভেতর মা মাত্র দুবার আমাকে কল করেছে।তাও প্রয়োজনে।এর বাড়তি একটা খুচরো কথাও আমার সাথে বলেন নি।একবার মুখ ফুঁটে বলেন নি,
“বাসায় আসবি?”

আমার আসলেই এখন আর কোনো বাড়ি নেই।পরিবার নেই।কেউ নেই।আমি বাউণ্ডুলে!এমন সময় ফোনে একটা মেসেজ টোন বেজো উঠে।অচেতন পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিই।স্ক্রিন ওপেন করি।তাঁকিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কারো “সেন্ট আ ফটো”। আমি আগ্রহ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকি।ঢুকার পর যেই নাম্বার থেকে ফটো টি পাঠানো হয়েছে তাতে টাচ করি।ফটোটা সো হতে যা দেখি তা দেখতে আমি আদৌ প্রস্তুত ছিলাম কি ছিলাম না নিজেও জানি না।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ফটো তে অভি এবং পাশে লালরঙ্গা লেহেঙ্গা পড়া নববধূ! বিয়ে করেছে সে!এই সাতদিনের ভেতরে বিয়ে করে ফেলেছে?ভাবনার মাঝে টোন করে ফোটের নিচে বাংলা অক্ষরে লেখা একটা মেসেজ এসে জমা হয়।মেসেজে লেখা-” Pray for us! We live together!Ar dekhle?Ovi 1 week er moddhe biyeo kore feleche!Korbei na ba kno!Se vul koreche tmr moton ekta meyeke deserve kore!”

আমার কেনজানি মনের অজান্তে মুখে খুব হাসি ফুটে উঠলো!ঠোঁট চড়ানো সেই হাসি।মনে মনে আশ্বস্ত হলাম,
“যাক একটা লম্পটকে লাইফ থেকে সরালাম!”
বলার মাঝে মুখটা আবার মলীন হয়ে গেল।আফসোস একটা দীর্ঘশ্বাস টানলাম,
“জীবনে একজন প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ পাওয়া খুব কঠিন!”

এরমাঝে খালামণি ঢুকলেন।খুব উৎফুল্লতা স্বরে বললেন,
“পারিসা?পারিসা?একটা কথা বলতে তোমাকে ভুলে গিয়েছি।তুমিতো জানো না আগামী পরসু আমাদের ফাহিমের ব্রার্থ ডে।এবারের ব্রার্থ ডে নিয়ে আমাদের অনেক বড় ইচ্ছে আছে।”

খালামণি ভাবলেন আমার থেকে তার প্রত্যাশিত উত্তরটা এবাট পাবেন।কিন্তু তা হলো না।তিনি খুব করে খেয়াল করলেন আমি আনমনা মনে ফোন হাতে অন্যদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি!তিনি আরো এগিয়ে এলেন। বললেন,

“কত আর এভাবে মন খারাপ করে থাকবি?লাইফ এভাবে চলে না পারিসা?এভার একটু মুভ অন হ।লাইফ এনজয় করে।আগের কথা যত ভাববি তত কষ্ট পাবি।প্লিজ সব ভুলে যা!”

এবার আমি চেতনে ঢুকলাম।খালামণির দিকে তাকালাম।বললাম,
“কিছু বললে?”

খালামণি মাজায় হাত রাখলেন।হালকা রাগ নিয়ে বললেন,
“এই দ্যাখো মেয়ে,আমি এতক্ষণে যা বললাম কিছুই কানে গেলো না!”
“সরি খালামণি আবার বলো।আসলে খেয়াল করি নি।”

খালামণি আগের কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করলেন।আমি হাসলাম।ফাহিমকে অগ্রিম হ্যাপী ব্রার্থ ডে জানালাম।খালামণি বললেন,
“এখন জানিয়ে লাভ নেই।পরসু ভালো করে জানালেই হবে।এখন বহুৎ কাজ।প্যান্ডেল,ডেকোরেশন,খাওয়া,দাওয়ার সবকিছুর একটা প্লানিং ছক বানাতে হবে।এখন ডাইনিং এ আসো আমার সাথে।”

আমি মাথা নাড়লাম।বিছানা থেকে নামলাম।খালামণি দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।পেছন থেকে ডাকলাম,
“খালামণি শুনো?”
“হু?”
“দাঁড়াও একটু।”
খালামণি ঘুরে দাড়ালেন।বলেন,
“তাড়াতাড়ি বল কি বলবি।”
“অভি অলরেডি এনগেজড!”

খালামণি আমার কথায় ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেললেন।মানে আমি কি বললাম কথা ঠিক বুঝলেন না তা বুঝালেন।আমি হেসে দিয়ে ফোনের স্ক্রিনটা উনার সামনে তুলে ধরি,
“অভি বিয়ে করেছে।”

খালামণি যেন আকাশ থেকে পড়লেন।এক মিনিট লাগলো খালামণির সৎবিৎ আসতে।তারপর বললেন,
” কিছু হুজুগে টাইপের মানুষ চিনিস তুই?”

প্রশ্নবোধক চোখে তাকালাম।খালামণি বলেন,
“হুজুগে টাইপের মানুষ হলো মানে সময়েতে উদ্দীপনা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।চরমভাবে ঘুরে বেড়ায়।সময়েতে এই এই জিনিসটা ভাল্লাগে,আবার ভাল্লাগে না।এটা প্রয়োজন, ওটা প্রয়োজন না।মানে এরা স্থির না কিছুতে!এক কথায় এরা ছলনাময়ী!মিথ্যাবাদী!বেয়াদব!জঘন্য বেয়াদব!এদের থেকে দূরে থাকাই ভালো!এখন একটা কাজ কর এই ছবি এবং মেসেজটা তোর বাবাকে পাঠিয়ে দে।পাঠিয়ে দিয়ে বল আপনার ভালোবাসার জামাই বাবাজী!ও সরি অন্ধ বিশ্বাসের সোনায়া সোহাগা!আপনার মেয়েকে এক সপ্তাহের মধ্যে ভুলে যেয়ে নতুন আরেকরা বিয়েও করে নিয়েছে!দেখছেন?তাও কতটা এটিটিউড দেখিয়ে বিয়ে করেছে!বাহ বিয়ে করাও আবার এটিটটউড হয়!হায়রে দুনিয়া!”

শেষ দুটো কথাতে খালামণি খুব আপসেট হয়ে যান।আমি ধাতস্থ করি।বলি,
“বাদ দাও খালামণি।এ আজ থেকে আমার মন থেকে মুছে গেছে।ভুলে গিয়েছি একে!একদম ভুলে গিয়েছি।ইনশাআল্লাহ এখন সামনের দিকে মুভ অন করবো।দ্যাখো তুমি।”

খালামণি হেসে দিলেন।বললেন,
“থ্যাংকস পারিসা।এটাই চাই।তুই সহজ-সাবলীলভাবে জীবনটা শুরু কর আবার। আর হ্যাঁ ফোনটা আমাকে একটু দে।”

বলে খালামণি আমার হাত থেকে মুহূর্তে কেড়ে নেন।তার কিছুক্ষণ ফোনে ঘুটঘুট করে আবার আমায় ফেরত দেন।ফেরত দিয়ে বলেন,
“অভি এবং অভির ওয়াইফের ছবি তোর বাবার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
“দরকার কি ছিল খালামণি?”
“চুপ একদম।দেখুক না তার জানপ্রাণের জামাই বাবাজীকে।”

২৭.
আজ ফাহিমের ব্রার্থ ডে।মোটামুটি সব গেস্টদেরই ইনভাইট করা হয়েছে।অনেক গেস্ট ইতোমধ্যে এসেও পড়েছে।আর একটা কথা জানেন আপনারা?আজ আমার মাও কিন্তু ফাহিমের ব্রার্থ ডে তে এসেছে।খালামণি মা এবং বাবাকে দুজনেই ইনভাইট করে আসার জন্যে।বাবা সাথে সাথে নাঁখোশ করে দেন।মা যে আসবেন ফোনে খালামণিকে বলেননি।আজ সকালে হুট করে এসেই আমাদের অবাক করে দেন। এসে মা প্রথমে যেটা করেন তা হলো মা সোঁজা আমার রুমে ঢুকে আমাকে জড়িয়ে ধরেন।আর সাথে সাথে কেঁদে উঠেন।কান্নারত গলায় বলেন,

“তোকে খামোখা তোর বাবার সাথে থেকে কতটা ভুল বুঝেছি!ওই অভি ছেলেটা আসলেই ভালো না।ভালো হলে কেউ এত তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে ভাঙ্গার শক না কাঁটিয়ে উঠতে আরেকটা বিয়ে করে ফেলে?ও না পারিসা?সত্যি তোকে কখনো ভালোবাসে নি। তুই ঠিক ই করেছিস ওকে ডিভোর্স দিয়ে!সত্যি মা এখন বুঝতেছি ওর ঘরে গেলে তুই সুখে থাকতিস না!”

বলে মা আরো কাতর জড়ানো কন্ঠে কেঁদেকুটে আকুল হয়ে যান।আমি বুঝলাম অভির ছবিটা দেখার পর মা
মোটামুটি আমাকে বুঝতে পেরেছেন।খুব করে বুঝেতে পেরেছেন!মার মতন বাবাও যদি বুঝতেন!তারপর মার সাথে অনেকক্ষণ যাবৎ কথাবার্তা বলি।খালামণিও তার কিছু কাজকর্ম ফেলে যোগ দেন আমাদের সাথে।দুপুর পর্যন্ত এভাবেই যায়।তারপর খালামণি মাকে নিয়ে আবার বাইরে চলে যায় কি কাজটাজ নাকি বাকি আছে।

সময় নেই তেমন।আর মাত্র দশ মিনিটস পর ফাহিমের কেক কাঁটা হবে।আমি রুম থেকে দরজার ঠেলে বাইরের দিকে আলতো উঁকি দিই।পুরো ডাইনিং এ,হলরুমে গেস্ট ভরে গেছে!আমি মাথার ওড়নাটা আরেকটু সামনে টেনে এনে রুম থেকে বেরিয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলাম। হুট করে কোথা থেকে ফাহিম এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আর লাফিয়ে লাফিয়ে কাউকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এই যে ভাইয়া?এই যে আমাদের পারিসা আপু!আপু খুব খুব ভালো ড্রয়িং পারে!”

চলবে..
চলবে…..
( এখন থেকে গল্পটা রেগুলার দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here