আমার হৃদয়ে সে পর্ব -১৯+২০

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৯

“এই যে ভাইয়া এই আমাদের পারিসা আপু।আপু খুব খুব ভালো ড্রয়িং পারে।”

ফাহিমের কথা অনুসরণ করে সামনে তাকাই।তাকিয়ে নীল শার্ট ইন করে পড়া একটি ছেলে।ছেলেটিকে অবশ্যি চিনলাম না।এই প্রথম বোধহয় দেখলাম।ছেলেটি আমার সামনে অনেকটা অসংযত হয়ে যায়।টগবগ চোখে এদিক ওদিক তাকায়।তারপর ফের আবার দিকে ফিরে।খোঁচা খোঁচা দাঁড়িময় মুখে একগাল হাসি টেনে বলে,

“আসলে ফাহিম আমাকে এখানে জোর করে নিয়ে এসেছে তার পারিসা আপুকে দেখাতে।তার পারিসা আপু নাকি খুব ভালো ভালো ড্রয়িং পারে।আসলে বাচ্চা মানুষ তো একবার জিলাস হলে তার রেশ না কাঁটা পর্যন্ত শান্তি হয়না।তাই অগত্যা আসতে হলো আমাকে ।কনফিউজড না হলে আপনি বোধহয় ফাহিমের আপু,আইমিন পারিসা,রাইট?”

আমি দুই সেকেন্ডসের মতন চুপ থেকে তারপর একটু চাপা হাসলাম।বললাম,
” ইট’স ওকে।জ্বী,আমিই পারিসা।”
“ওহ আচ্ছা। আচ্ছা আপনি ফাহিমের কেমন বোন?আইমিন সম্পর্কে কি হোন?”

ফাহিম পাশ থেকে ফোঁড়ন কেঁটে বলে উঠে,
“আমার বড় খালামণি মেয়ে।মানে আমার কাজিন।”
“আচ্ছা।বায় দ্য ওয়ে,আই’ম হৃদয় হাসান।এন্ড উই আর এ্যাবাউট এফেকশনেটিং রিলেটিভ অফ ফাহিম’স ফাদার।”
“বুঝতে পেরেছি।”
“ইয়াহ।এন্ড থ্যাংকস।”

হাসলাম।ছেলেটি এবার ঘড়ির দিকে তাকালো।তারপর ফাহিমের দিকে।বললো,
“ফাহিম তোমার ত কেক কাঁটার সময় হয়ে গেছে।”
“ওহ!তাহলে ভাইয়া পরে কথা বলো।আপু তুমিও পরে কথা বলো।দেরী হয়ে যাচ্ছে।আগে আমার ব্রার্থডে শেষ করো।”
“বাব্বাহ,নিজের জন্মদিনের প্রতি নিজেরই এত জেলাস! কেক কেউ খেয়ে ফেলবে না।ওই টেনশন করিস না, ফাহু।”
বলে হাসলুম।আমার কথায় ফাহিম দু’গাল ফুলিয়ে ফেললো।আর ছেলেটি নিচের দিকে তাঁকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ফাহিমের অভিমানী রাগ ভাঙ্গাতে ওর গালের দিকে হাত বাড়িয়ে আবার বলি,

“আরেহ ফাহু ,মন খারাপ করে না!আপুদের কথায় মন খারাপ করতে নেই।মন খারাপ করলে আমাদের কে কেক কেঁটে খাওয়াবে।যাও।তাড়াতাড়ি যাও।আপু আসতেছি।”

ফাহিমের গম্ভীর মুখখানা মুহূর্তে ঝলকে উঠলো।চিকচিক দাঁতে বলে উঠলো,
“থ্যাংকুউউ আপু।”

ফাহিম এবং ছেলেটি হলরুমে চলে যাওয়ার পর আমিও কিছুক্ষণ বাদে সেদিকে যাই।গিয়ে দেখি জন্মদিনের হোল এলিমেন্টস রেডি।এখন শুধু মোমাবতিগুলো জালিয়ে কেক কাঁটা বাকি।

“আরেহ ম্যাম,ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?এখানে আসেন।”

আমি সবার দৃষ্টি এড়িয়ে একদম পশ্চিমের কর্ণারে ফাহিমের বামপাশে নীল শার্ট পড়া সেই ছেলেটির দিকে তাকাই।কারণ কথাটা সেই ছেলেটিই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা সৌজন্যতা হাসলাম ।ছেলেটিও তাই হাসলো।খালামণি পাশ থেকে বলে উঠেন,

“তাইতো, ওখানে দাঁড়িয়ে কি করিস!এখানে আয় তাড়াতাড়ি। ”

আমি ফাহিমের ডানপাশে এসে দাঁড়ালাম।ছেলেটি ম্যাচে আগুন তুলে সবগুলো মোমবাতি সাথে সাথে জ্বালিয়ে দিলো।আর বাসার লাইট অফ করে দেওয়া হলো।ফাহিমের শুরু হলো।মোমবাতিগুলো নেভানো।আমরা সবাই তাতে তাল মিলিয়ে হাতের তালি বাঁজিয়ে “হ্যাপী ব্রার্থডে টু ইউ!” বলে ফাহিমের সম্বোধন করতে থাকি।ফাহিমের সবগুলো মোমবাতি নেভানো শেষ হলে কেক কাঁটা শুরু হয়।তারপর এক এক করে আমাদের সবাইকে ফাহিম কেক পরিবেশন করে দেয়!অনেক জায়গায় দেখা যায় জন্মদিন পার্টিতে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক থাকে যারা কেক না পরিবেশন করে উল্টো সেই কেক মুখে, গাঁয়ে মেখে দেয়।কিন্তু ফাহিমের ব্রার্থ ডে তে তেমন কাউকে দেখা গেলো না।সবাই ভালো।খালামণিকে সো থ্যাংকস যে খালামণি ভদ্র মানুষগুলো দেখে দেখে ইনভাইট করেছে।নাহলে এই স্বাভাবিক সাঁজটা এতক্ষণে আমার অস্বাভাবিক হয়ে যেত।পা বাড়ালাম বেসিনের দিকে।এঁটো হাতটা ধুঁতে।এমন সময় ফাহিম এসে সামনে দাঁড়ালো আমার।বললো,

“আপু?একটু বসবে?”
ভড়কে গেলাম।সাডেন বসবো মানে?চারপাশে একফোঁড় তাঁকিয়ে বললাম,
“কেন?”
“আহা বসতে বলছি।বসো!”
“আগে কারণ বল কেন বসতে হবে।”

ফাহিম এবার কুটিল হাসলো।আমি ভ্রু যুগল কুঁচকালাম।ফাহিম বললো,

“আপু?তোমাকে এখনো ভালোমতন কেক খাওয়াতে পারি নি।সবার সাথে তখন কীভাবে পরিবেশন করালাম,না করালাম।প্লিজ আপু বসো।আর বসে বড় করে হা করো।আমি আমার প্রিয় আপুটাকে আবার কেক খাওয়াবো।”

ফাহিমের কথায় ইনোসেন্ট হয়ে গেলাম।আসলে বাচ্চাটা আপুটাকে খুব ভালোবাসে।ধরফর করে হাঁটু ভেঙ্গে বড় করে একটা হা করলাম।আর ফাহিম তার হাতের পুরো কেকটা সাথে সাথে আমার সারামুখে ক্রিমের মতন মাখিয়ে দিলো!আমি চিৎকার করে উঠলাম।আমার চিৎকার শুনে চারপাশে থাকা সবাই খিলখিল করে হেসে উঠলো!রাগ উঠে গেলো!জেদী গলায় চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,

“তুই কি করলি এটা?”

সবাই আবারো হেসে উঠলো।আমাকে এহেন অবস্থায় দেখে সবাই যেনো বড্ড মজা পেলো।আমি আর এক সেকেন্ডও দাঁড়িয়ে থাকলাম না।সুড়সুড় করল রাগ মুখ নিয়ে রুমে চলে এলাম।দরজা বন্ধ করে দিলাম।

২৮.
দশটার পর পুরো বাসাটা এখন খালি।মেহমান সব সেই ন’টার দিকেই এক এক করে বিদেয় হয়েছে।আমার মাও চলে গিয়েছে।যাওয়ার সময় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেছেন।সাথে বলেছেন,
“আমি আবার আসবো।রাগ করে থাকিস না আমার উপর।আমিতো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি রে মা।”

আমি এ’কথার পিঠে কুটিল হাসলাম।আসলে এ’কথার পিঠে উনাদের কি বলবো সেই ভাষাটুকুও এখন আর আমার নেই।আমি পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুললাম।ফেসবুকে ঢুকলাম।স্ক্রিনে চোখ রাখতে দেখি দুইটা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এসেছে।আমি “রিকুয়েষ্ট ফ্রেন্ডস” অপশনে ঢুকলাম।ঢুকামাত্রই আমার চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।আজকেই ওই নীল শার্ট পড়া ছেলেটি,যাকে ফাহিম আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছিলো!আমি চোখমুখ খিঁচে উুঁচু গলায় ফাহিমকে ডাকতে থাকলাম,

“ফাহিম?ফাহিম?ফাহিম?”

তিন সেকেন্ডের মাথায় ফাহিম আমার রুমে এসে হাজির!
“আপু এভাবে আওয়াজ করে ডাকতেছো কেন?কিছু হয়েছে?”

আমি স্ক্রিনটা ওর দিকে তাক করে বলি,
“লুক এন্ড স্যা!উনি আমাকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে কেন?”
” আ মি জা নি না।”আমতা আমতা গলায়।
“তুই জানিস না,তাইতো?আচ্ছা, ওই ছেলে তোকে কয়টা ক্যান্ডি খাওয়াইছে?”
“ক্যান্ডি খাওয়াবে কেন?”
“উনাকে আমার আইডি বলে দিয়েছিস।এবং উনার কথায় আমার মুখে আজকে কেকও মেখে দিয়েছিস!বাহ,একদিনে এত বশ হয়ে গেছিস!?”
“আপু আমি তোমার আইডিও দিই নি।এবং কেকও উনার কথায় মাখি নি।”

বুঝতেছি!এই পোলা সত্যি কথা কইবো না।একে অন্যভাবে চাপাতে হবে। কীভাবে চাপানো যায়?কীভাবে…..?ইয়েস পেয়েছি।ফাহিমের দিকে সরু চোখে তাকালাম,
“ফাহিম? ”

ফাহিম আমার দিকে চোখ রাখে।
“এবারের পরিক্ষায় তুই গণিত বিষয়ে কত জানি পেয়েছিস?”

ফাহিম এবার নড়ে উঠলো।চোখমুখে ভয় স্পষ্ট হয়ে গেল!হুম আমি এই ওর ভয়টুকুর জন্যেই অপেক্ষা করলাম এতক্ষণ।দেখবো… বাছাধন এবার মিথ্যে বলে কীভাবে পার পায়!বললো,
“৪৩ যে পেয়েছি এখন তা বাবাকে বলে দিবা?”
“তুই কি চাস আঙ্কেলকে ডেকে বলে দিই?আঙ্কেল?আঙ্কেল?’
” আপু প্লিজ, নাহ নাহ বাবাকে বলো না।”
“তাহলে বল?”
“বলছি…।হ্যাঁ,উনি আমাকে চিপস,ক্যান্ডি,ফ্রুটস খাইয়ে তোমার আইডির নাম জেনে নিয়েছে।আর কেকের মাখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটাও উনার কথায় করেছি।সরি আপু!”

বলে ফাহিম আবার মাথা নত করে ফেলে।থাক একে আর কি বলবো?এ ত বাচ্চা।একে যেভাবে জিলাস দেখিয়ে পেরেছে কাজ আদায় করে নিয়েছে।কিন্তু এতসব করে ওর কী লাভ?ওই ছেলে কি আমার জীবন সম্পর্কে জানে?জানে না!কিছুই জানে না!একটু সাময়িক মুগ্ধ হয়েছে বৈ কি!আমার সম্পর্কে শুনার পর এই মুগ্ধতাটুকুও থাকবে না।মনে মনে বলে মুখে একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি ফুটে উঠলো।হাসি থামিয়ে ফাহিমকে বললাম,

“ফাহিম যা রুমে যা।”
“আচ্ছা, আপু।আর শুনো?বাবাকে বলো না প্লিজ?’
” বলবো না।আর হ্যাঁ,আমার ব্যাপারে আর ওই ছেলেকে কিছু বলিস না।”
“আচ্ছা,ঠিক আছে।”

ফাহিম চলে গেলো।মোবাইলটা ওয়ালেট অফ করে বালিশের পাশে রেখে দিয়ে কম্বল টেনে লাইট বন্ধ করে বালিশে মাথা রাখলাম।দুই চোখ বুজলাম।কিছুক্ষণ এভাবে বুজে রাখতেই হুট করে দুইফোঁটা অশ্রু বালিশের উপর গড়িয়ে পড়লো।চোখ মেললাম।চারপাশে অন্ধকার। ফোনের ওয়ালেটটা অন করে স্ক্রিন আনলাম।অন্ধকারে আলো ঝলঝল করে উঠলো।গটর গটর করে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলাম।দুইদিন আগের পাঠানো অভির এবং তার নববধূকে আরেকটিবার দেখলাম।এই আঁধারে কষ্টগুলো যেন এখন আরো চেপে ধরলো ভেতরটায়। বুকটা আরো ভার হয়ে গেলো।চোখের পানি আরো জমা হতে থাকলো চোখের কোণে।চাই!খুব করে চাই সব ভুলে যেতে।আবার আগের মতন নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে।হাসিখুশিতে রাখতে।প্রাণোচ্ছলে রাখতে।দিনশেষে রাতটা যখন আসে।কিন্তু তখন আর পারি না!কেন পারি না!কেন?কেন?কেন প্রতিরাতে দুই নয়ন কান্না করে!এই কান্না কি কোনোদিনই শেষ হবে না?
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২০

ইদানীং নাকি আমার মাঝে খুব পরিবর্তন এসেছে।এই যে নিজের প্রতি খুব কনক্রিট হয়েছি।বাসার সবার সাথে টাইম ম্যানেজমেন্ট করছি।আগে তো প্রয়োজন ছাড়া খালামণি,আঙ্কেল ইভেন ফাহিমের সাথেও কথা বলতাম না।বাট এখন তার উল্টোটা।এখন খালামণি,আঙ্কেল এবং ফাহিমের সাথে সুযোগের পেলেই কথা বলতে বসি।আবার কোনো টুকটাক কাজে সাহায্য করি।আমার এহেন বিহেভিয়ারে খালামণি,আঙ্কেল কিছুটা হলেও অবাক হলেও সাথে বেশ খুশি!তারাও চায় আমি আগের সব ভুলে সামনে নিজেকে মুভ অন করি।আমি তাই ই করছি।মন না চাইলেও করছি।করতে হবে আমাকে।কারণ অতীতের কষ্ট,দুঃখ এবং বেদনা আমাকে আফসোস ছাড়া আর কিছুই দিবে না।আমার ভবিষ্যৎ আমার বর্তমানের উপর নির্ভরশীল। ভবিষ্যতের জন্যে হলেও আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে।কারণ জীবনে দুঃখে আসলে তা নিজেকেই বইতে হবে।লাইফ ইজ ভেরী ডিফিকাল্ট অফ পিপল।দ্যাট রিমেম্বার আই ট্রাই টু রিপেয়ার মাইসেলভসআজ একটু তাড়াতাড়ি ই নাস্তাটা সেরেছি। আমাকে “ইকো কোম্পানি” তে আবার যেতে হবে।তারা সেই সকালে কল করে বলেছে তাদের অফিসে যেতে।আর্জেন্টলি কী একটা প্রজেক্টের উপর বিজ্ঞাপন বানাতে হবে।আঁটটার দিকে একটা রিক্সা নিয়ে সোঁজা ইকো কোম্পানিতে পৌঁছে যাই।বিজ্ঞাপন বানানোর ডিল টা শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে যায়।
দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে সেখানে সবার,আইমিন কোম্পানির লোকদের আমাকে নিয়ে একটা বাঁধ বেঁধে যায়।তা হলো,

“ম্যাম,আজ আমাদের এখানে থেকে লাঞ্চটা করার আবদার করছি।আপনার বিজ্ঞাপনের প্রজেক্টটা যার সাথে ডিল হয়েছে একটি সেই কোম্পানির পরিচালক এবং তার ওয়াইফ কে আমাদের এখানে আজ লাঞ্চ করতে বিশেষভাবে ইনভাইট করা হয়েছে।সেই সুবাধে আজ আমাদের আজ একটা রেস্টুরেন্টে ভেরাইটিজ অর্ডার করা হয়েছে।সবাই সেখানে লাঞ্চ করবে।আপনিও করবেন প্লিজ?”

সবার এহেন রিকুয়েষ্ট আর ফেলতে পারি নি।লাঞ্চটা করতে রাজি হই।রেস্টুরেন্টে আসার কয়েক মিনিটস পর ওই কোম্পানির পরিচালক এবং তার ওয়াইফও পৌঁছে যায়।আমি প্রথমে তাদের খেয়াল করিনি।”ইকো কোম্পানির”সবাই যখন তাদের সাদরে গ্রহণ করতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আমিও সাথে তাল মিলিয়ে দাঁড়াতে যেয়ে সামনে তাদের দিলে এবার তাকাই।তাকাতেই আমার সারা শরীরে সুপ্ত লোমগুলো এক এক করে কাঁটার মতন দাঁড়িয়ে যায়।কানদুটো গরম হয়ে যায়।আর চোখজোড়ায় আকাশ ছোঁয়া বিস্ময়।তরতর করে আমার হাত-পা ঘামতে থাকে।কপাল,নাক,ঘাড়ের পেছনের অংশ ঘামতে থাকে।আমার এরকম হবার কারণ কি আপনারা বুঝতেছেন?বলতেছি বুঝবেন!
অভি এবং তার সেই নববধূ এই মুহূর্তে এখন আমার সামনে দাঁড়ানো।তাদের মুখে কি মৃদু হাসি লেপানো।আমি ধপ করে সবার মাঝখান থেকে বসে পড়ি!আমার এহেন কান্ডে আশপাশের সবার একটু হলেও নজর গিয়েছে।এবং অভি এবং তার নববধূরও!তবে অভি তাতে বরদাস্ত হয়নি।সেই মৃদু হাসি মুখে রেখেই সবার দিকে চোখজোড়া প্রসারিত করে বলে,

“সি ইজ মাই ওয়াইফ!আই লাভ হার ভেরী মারচ এন্ড সি লাভস টু মি!ফর দ্যাট’স রিজন, আই ক্যান্ট কাম হেয়ার এলোন উইথআউট হার!”(সে আমার ওয়াইফ!আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি এবং সেও আমাকে ভালোবাসে।সেকারণে,আমি তাকে ছাড়া এখানে একা আসতে পারি নি।

অভির কথা শুনে ইকো কোম্পানির সব এমপ্লেয়ার ভারী করুণ চোখে তাকায়।সাথে আবেগ প্রবণ হয়ে যায় !এত ভালোবাসে বউকে!এমন বউ পাগল আজও পৃথিবীতে আছে?সবার চোখমুখে এরকম ভাব ফুঁটে উঠছে যেন!আর এই পারিসা তো চুপ করার মতন ব্যক্তি নন।সে ওই লোক দেখানো লোকটাকে বাঁকা আঙ্গুল দেখাতে উঠে লাগে।সটাং বলে উঠি,

” ভালোই তো!ম্যাম ইউ সো লাকী যে দ্বিতীয়বার বিয়ে করা পুরুষের এমন ভালোবাসা পাচ্ছেন!আমিতো ভেবেছি সব ভালোবাসা নাকি আবার প্রথম বউকেই দিয়ে দিলো!এখন দেখি না!আসলেই মানুষের চিন্তাধারা একদমই ভুল! প্রথম ভালোবাসা প্রথম ভালোলাগা শুধু প্রথমেই বরাদ্দ থাকে না।তা দ্বিতীয়,তৃতীয়,চতুর্থতেও প্রসারিত হয়!আপনারাই তা প্রমাণিত!”

আমার কথা শুনে অভির বউয়ের মুখে কীরকম যেন একটা হতাশ হতাশ ভাব চলে আসে।সে এখানে এসে এহেন কিছু শুনবে হয়তো তা কস্মিনকালেও ভাবে নি।
এদিক ওদিক তাকিয়ে খুব ধাতস্থতা করার চেষ্টা করে নিজেকে।তারপর সৌজন্যতার টানে আবার আমার দিকে ফিরে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।আর অভিতো হয়তো ভেতরে রেগে ফেঁটে চৌচির!এদিক দিয়ে উপস্থিত ইকো কোম্পানির সব এমপ্লেয়ার আমার কথার যেন মানে বুঝলো না!ভ্রু কুটি তুলে প্রশ্নাতীত চোখে তাকালো।এদের মাঝে তো একজন প্রায় বলেই ফেললো,

“অভি স্যারের প্রথম স্ত্রী মানে,আবার দ্বিতীয় স্ত্রী! বুঝলাম না! স্যার কি দুই বিয়ে করেছেন?”

অভি হালকা নড়ে উঠলো।মুখে হাসি টানলো।খুব নিঁখুত হাসি।ফোঁড়ন কেঁটে বললো,

“মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু থাকেই।সেই অপ্রত্যাশিত কিছু কি মানুষ সারাজীবন বয়ে বেড়ায়?বয়ে বেড়ালেই কিন্তু জীবন আরো রিস্কি হয়ে যায়।ঝামেলা বেড়ে যায়।সারাজীবন সেই ঝামেলার গ্লানি কাঁটানো বড়ই কষ্টকর।তারচে সেই অপ্রত্যাশিত কিছু যেখান থেকে এসেছে সেখানেই ছুঁড়ে ফেলা কি উচিত নয়,বলুন?”
“রাইট, স্যার!যেটা লাইফের জন্যে সুইটেবল নয়।তা নিয়ে সামনে চলাও ঠিক নয়।আমার মাও তাই বলতেন!”

অভি এই কথাটা আমাকে অপমাণ করার জন্যে বলেছে আমি বুঝেছি।তবে পারিসা এই অপমাণ গাঁয়ে বিঁধার মতন কি মেয়ে?বলেই ফেললাম,

“সেই অপ্রত্যাশিত,আপনাকেই কিন্তু ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলেছে।আপনি নন!কারণ তার সাথে সেই ডাস্টবিন যায় না!”
“ডু ইউ ওয়ান্ট টু স্যা?প্লিজ অল স্টপ হিম!নাহলে এই প্রজেক্টটা…!”

আমি ফোঁড়ন কেঁটে এবার বলে উঠলাম,
“আপনাকে এই প্রজেক্ট ক্যান্সেল করতে হবে না।বরঞ্চ আমি এই প্রজেক্টের বিজ্ঞাপনটা ক্যান্সেল করে দিচ্ছি…!”
বলে “ইকো কোম্পানির” এমপ্লেয়ারদের দিকে তাকালাম,
“ইকো কোম্পানি’ এমপ্লেয়ারস,সরি!আই কান্ট ডু দিস ওয়ার্ক !ইফ এনোদার কোম্পানি’স উইল ডিল উইথ ইউ,আমি উইল দ্যাট ওয়ার্ক।থ্যাংকস!”

বলে সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে পাশ কেঁটে চলে আসলাম।আহা,মনের মাঝে একটা তৃপ্তি পেলাম।কীভাবে একে একেবারল ধুঁয়ে দিলাম।

২৯.
বাসায় ফেরার পর চোখমুখে আর সেই তৃপ্তিটা থাকলো না!তৃপ্তির বদলে চোখমুখ জুড়ে ছুঁয়ে গেল এবার বিস্ময়।প্রকট রকমের বিস্ময় ।কারণটা বলছি।খালামণি বললেন আমি ইকো কোম্পানিতে যাওয়ার পর হৃদয় নামের সেই ছেলেটি নাকি তার মাকে নিয়ে খালামণিদের বাসায় এসেছে।তার মা খালামণিকে সরাসরি আমাকে হৃদয়ের সাথে এনগেইজ করার প্রস্তাব দেয়।সাডেন এহেন কিছু শুনে খালামণি যেন খুব অপ্রস্তুত হয়ে যায়।অবশ্যি হৃদয় জানে না আমি যে ডিভোর্সি।আর খালামণি বলতেও পারেননি তা সরাসরি।আমি ডিভোর্সি শুনলে রিয়েক্ট করে বসবে আর এখানে আমার মানসম্মানের প্রশ্ন।তাই খালামণি সন্তপর্ণে বিষয়টাকে এভয়েড করতে বলেছিলেন,

“আসলে…আমি এ বিষয়ে এখন আশ্বস্ত দিতে পারছি না।আমার মনে হয় পারিসা এখন বিয়ে করবে না!”

খালামণির কথা হৃদয় নামের ছেলেটি নাকি গাঁয়ে ই মাখলো না।বলে উঠলো,
“পারিসা কেন বিয়ে করবে না?কোনো রিজন আছে? যদি বলতেন….?”
“আসলে আমি জানি না।ও এখনো বিয়ে করতে প্রস্তুত নয়।এটাই হয়তো!”
“আমি কী ওর সাথে এ বিষয় নিয়ে একটু কথা বলতে পারি?প্লিজ আন্টি এখানেও অনাশ্বস্ত করবেন না!অনেক আশা নিয়ে এসেছি।”

আন্টি বলেন ছেলেটি কথাগুলো বলার মাঝে নাকি খুব ইনোসেন্ট হয়ে যায়।ছেলেদের এতটা ইনোসেন্ট এই প্রথম ওই ছেলেটির মাঝে তিনি দেখেছেন।দেখে যাই বুঝলেন সে নাকি আমাকে পাগলের মতন ভালোবাসে!এখন আমার কাছে বিষয়টা কেমন ফানি ফানি লাগতেছে!এক দেখাতে কেউ কাকে পাগলের মতন ভালোবাসতে পারে?হাউ পসিবল ইট ইজ!যাইহোক,ছেলেটির সাথে আসলেই সরাসরি কথা বলবো এত করে যেহেতু বলেছে।আর কথা বলেই আমার অতীতের সেই ঘটনাগুলো বলে দিবো!তারপর দেখবো বেচারার আমাকে পাগলের মতন ভালোবাসা কই যায়।হা হা হা হা হা হা..!

৩০.
আর দেরী করলাম না।স্পেমে জমা হয়ে থাকা ছেলেটির পাঠানো মেসেজ অপশনে ঢুকলাম। দশদিন আগের মেসেজ!বেশি মেসেজ ছিল না।এই দুইটার মতন!লেখা,
“আই’ম সরি,ফাহিমকে দিয়ে আপনার মুখে কেক মাখানোর ওরকম কুবুদ্ধি আমার মাথায় কীভাবে এলো নিজেই বুঝতেছি না।”
দ্বিতীয় মেসেজ,
“আমি আসলে ওই রকম টাইপের ছেলে না।প্লিজ আপনি কিছু মাইন্ড করবেন না।আর শুনন?সরি বলতেই আমি ফাহিমের থেকে আপনার আইডি টা জেনে নিয়েছি।প্লিজ মাইন্ড করবেন না!

মেসেজগুলো পড়ে হাসলাম।খুব হাসলাম!ছেলেটা আবেগে ভাসতাছে।আহা…!তারপর হাসি থামিয়ে লিখলাম,
” আপনার সাথে কাল দেখা করতে চাই।আপনি কি জার্নাল হাউজের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবেন?”

মেসেজ সেন্ড করে পাশে রাখলাম ফোনটা।সাথে সাথে মেসেন্জারে টুং করে শব্দ হলো।সামনে এনে দেখি ছেলেটির মেসেজ।লিখা,
“অবশ্যই।সময়টা বলুন কাইন্ডলি?”
“বিকেলের দিকে।মানে তিনটে বা চারটার কাছাকাছি সময়।”
“জ্বী,আচ্ছা। ”
“বায়।”
বুক থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস!চোখজোড়া পানিতে ভরে গেলো,
“জীবনটা আমার কেন এরকম ছন্নছাড়া, এরকম বৈচিত্রা!এরকম না হলে পারতো না!?”

চলবে….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here