আমার হৃদয়ে সে পর্ব -২১+২২

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২১

৩১.
জার্নাল হাউজের পাশে “কুকিং ফুড” নামের একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।কথা ছিল জার্নাল হাউজের সামনে সাক্ষাৎ করবো।কিন্তু হৃদয় নামের ছেলেটি পরে আবার মেসেজ করে বললো “কুকিং ফুড” রেস্টুরেন্টে দেখা করবে।”জার্নাল হাউজ”পাবলিক প্লেস।ওখানে সাক্ষাৎ করা সুবিধের না!তাই এখানেই আসলাম।সামনে অনেকগুলো হলদে কালারের বড় ড্রিম লাইট।সেগুলো খানিকক্ষণ পর পর টিমটিম করে জলছে আবার তা আপনাই বন্ধ হয়ে আবার সেখান থেকে নীল আলো জলে উঠছে।ভাবলাম লাইটটায় শুধু হলদে আলো এবং নীল আলোয় সংমিশ্রণে।কিন্তু না।সময়টা ধীরে ধীরে বিস্তৃতহতে ড্রিম লাইটগুলোতে লাল,সবুজ,আকাশি আরো অনেক কালার জলে উঠছে।এধরনের লাইট সবগুলো ডাইনিং এ খুব পরিপাটি ভাবে সাঁজানো।আমি লাইটগুলোর দিকে বেশ খানিকক্ষণ হলো তাকিয়ে আছি।তাকানোর মাঝে “অপেক্ষা” নামক শব্দটা বারংবার মস্তিষ্কে ঠুকরে উঠতে টাইম দেখে নিচ্ছি।অপেক্ষা সেই ছেলেটির জন্যেই।এখানে এসে বসেছি মিনিট বিশেক হবে।অথচ ছেলেটি এখনো আসছে না।বিরক্তি লাগে যে নি এমন নয়।বিরক্তি ত অবশ্যই লাগছে।মন চায় এখুনি উঠে বাসায় ফিরে যাই।

“এক্সকিউজ মি?”

ভাবনার গোচর কেঁটে যায়।তরহর পেছনে ফিরি।তাকিয়ে হৃদয় ছেলেটি।যাক এসে পড়লো।একটু বৈচিত্র্য হাসলাম।তবললাম,

“বসুন।”

ছেলেটি আমার সামনের চেয়ারটায় বসলো।বসতে বসতে বললো,
“আসলে খুব জ্যাম পড়েছিল। তাই লেট হয়ে গেছে।আপনি নিশ্চয়ই আমার উপর রেগে গেছেন।তাই না?”
“জ্বী না।রাগি নি।”
“থ্যাংকস।”

বলে হাসলো।আমিও তাল মিলিয়ে হেসে নিলাম।তারপর ছেলেটি চারপাশে তাকালো।হয়তো ওয়েটারকে খুঁজছে।আমি বললাম,
“ওয়েটারকে খুঁজতে হবে না।আমি কিছু খাবো না।আপনার সাথে কিছু কথা বলে আমি বাসায় ফিরে যাবো।”
“এত কম সময় নিয়ে এসছেন তা মানছি না,ম্যাম।আপনি আমার গেস্ট।কত রিকুয়েষ্টের পর আপনার সাথে দেখা করার সৌভাগ্য হলো।যদি কিছু না খান। রিয়েলি খুব হার্ট হবো।”
“দেখুন ব্যাপারটা তা নয়।আমার খেতে ইচ্ছে করতেছে না।তাছাড়া আসার সময় আমি পেট ভরে খেয়ে এসেছি।সো এখন এক্সট্রা কিছু খাওয়ার একদম ইন্টারেস্ট নাই।এবার আপনি আমার কথা শুনুন….!”

ছেলেটি সরু চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি এবার হালকা নড়ে স্বাভাবিকভাবে বসলাম।মুখে আবার আগের সেই হাসিটুকু টেনে বলতে থাকলাম,
“শুনলাম আপনি আপনার মাকে নিয়ে খালামণির কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন?”

সরাসরি প্রশ্নে ভাবলাম ছেলেটি কিছুটা হলেও অসংযত হয়ে যাবে বা লজ্জা পাবে।কিন্তু না।ছেলেটির মাঝে তেমন ভাবান্তর দেখা হলো।বরঞ্চ সে আগের থেকে এখন আরো স্বাভাবিক।স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো,
“জ্বী।”
“কতটুকু জানেন আমাকে?”

ছেলেটি মৃদু হাসলো।বললো,
“তেমন জানি না।তবে জানার ইচ্ছেও নেই।জীবনে এই প্রথম আমার কোনো মেয়েকে ভালো লাগলো।কত মেয়েকে দেখলাম।কত মেয়ের সাথে স্কুল,কলেজ,ভার্সিটির গন্ডি পেরুলাম।আজ পর্যন্ত মনের মতন তেমন কাউকেই পাই নি শুধু আপনাকে ছাড়া!!যদি বলি রূপ দেখে ভালো লেগেছে তা একদমই ভুল।মানুষ মানুষের রূপের প্রেমে পড়ে।আমি তা নই।আপনি খুব বেশি রূপবতী না।অবশ্যি আপনি মায়াবী।আপনার এই মায়াবীকতারই প্রেমে পড়েছি বলতে পারেন।”
“এক দেখায়,একবার কথায় ব্যাপারটা কেমন অবিশ্বাস্য না?মানে কেউ কাউকে এক দেখায়,একবার কথা বলে কীভাবে বুঝতে পারে সেই মানুষটা মায়াবী?আচ্ছা,আপনার আইকিউ ভালো?”
“তা অবশ্যি জানি না।তবে,আপনার চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় আপনি ভীষণ মায়াবী।হুমায়ুন আহমেদের একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম, মায়াবী মেয়েদের চোখ আয়তলোচন।আপনার চোখও তাই।”

হাসি চলে এলো।
“ভারী রসিক মানুষ আপনি।”
“নো ম্যাম,আমি রসিকতা করছি না।আমি সত্যি বলছি!”
“বুঝলাম সত্য বলেছেন।তবে আমার ব্যাপারে আপনি ভালোভাবে না জেনে,না শুনে আমাকে পছন্দ করেছেন,বা ভালো বেসেছেন অথবা যেটাই করেছেন সে প্রেক্ষিতে আমি বলছি আপনার তা একদমই উচিত হয়নি!”
“আন্টির থেকে শুনলাম আপনি এখন বিয়ে করতে রাজি না।আসলে কারণটা কী?”
“বিয়ে তো আমার হয়েছে একবার!আবার নতুন করে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখবো কেন?”
“মানে?”

বলে ছেলেটি চোখ বড় করে তাকালো।আমি নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলাম।খুব জোরে শ্বাস ছাড়লাম।কুটিল হাসলাম।বললাম,
“আমি ডিভোর্সি!আপনি ভুল করেছেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেয়ে।ভালো থাকবেন।আসি।”

ছেলেটি আগের মতনই বসে।বলে উঠলো,
“চলে যাবেন!কিছু তো খেয়ে…।”

আমি ছেলেটির কথা আর কানে নিলাম না।চেয়ার ছেড়ে সুড়সুড় করে বেরিয়ে এলাম।বাসায় ফেরার পর দুইঘন্টার মতন মুড অফ ছিল।খালামণি,আঙ্কেলও তা দেখলেন।বুঝলেন আমার মুড অফ হওয়ার ব্যাপারটা।কিছু বললেন না।নিরবে দেখে গেলেন। উনারা জানেন আমি আজ হৃদয় নামের ওই ছেলেটির সাথে দেখা করেছি।এবং আমার সব বায়ো তাকে বলে দিয়েছি।তাই আমাকে আর কীভাবেঃ সান্তনা দিবেন।কতভাবেই ত দিয়েছেন এ পর্যন্ত।

৩২.
রাত ন’টার দিকে খালামণির খাবারের ডাক আসে।আমি বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে ঢুকলাম।মুখে কয়েক কোষ পানি ঝাপটা দিয়ে নিজেকে হালকা করলাম কিছুটা।তবে মাথাব্যথা টা চরম লেভেলে।টেবলেট খেতে হবে একটা।ফ্রেশ হয়ে এসে বাইরে এলাম।আঙ্কেল, ফাহিম চেয়ারে বসেছে।আমি ডাইনিং এ যেতেই খালামণি আমার হাত ধরে টেনে আরেকটা চেয়ারে বসান।ভাতের প্লেট সামনে এগিয়ে দেন।

“ইলিশ মাছের ভুনা,টাকি মাছের ঝোঁল, সালাদ,সবজি সব আছে তোর যা ভাল্লাগে খা।”
“খালামণি তোমার মাথাব্যথার ওষুধ আছে?”

খালামণি আঁতকে যাওয়ার মতন হয়ে গেলেন।কপালে,চোখে,মাথায় হাত রেখে বলেন,
“কপাল টা তো গরমে খুব পুড়ছে!কখন থেকে তোর মাথাব্যথা?”

আঙ্কেল পাশ থেকে বলে উঠেন,
“জ্বর উঠেছে?”
“তাপমাত্রা ত তাই বলতেছে।তোমার থার্মোমিটারটা কোথায়?”অস্থির হয়ে।
“টেবিলের উপরে পেন ঝুঁড়িতে দেখো।সেখানে পাবে।”

খালামণি হর্ণ পায়ে ছুট লাগালেন রুমের দিকে।ত্রিশ সেকেন্ডের মাথায় থার্মোমিটার হাতে ফিরে এলেন।হা কর।জ্বরটা আগে মেপে নিই!
“উফস, খালামণি কি শুরু করেছো, তুমি?সারাদিন বাইরে ছিলাম তাই রোদে,গরমে একটু তাপমাত্রা বেড়ে গেছে।সেকারণে হালকা মাথাব্যথা করছে।এইতো।”

আঙ্কেল পাশ থেকে বলে উঠেন,
“রাহেলা?ও আগে খেয়ে নিক?তারপর নাহয় দেখো?”
“তুমি চুপ করো।তুমি এই মেয়ের ব্যাপারে জানো?এই মেয়ে ইদানীং নিজের কোনো যত্নই করছে না।কে জানে জ্বরটর যদি হয়েই থাকলো, তখন?পারিসা তুই হা কর।আমি মেপে দেখি তাপমাত্রা আসলেই ঠিক আছে কি না।প্লিজ হা কর মা আমার!”

মন গলানো কথা!পারলাম এই মহিলার কথার অবাধ্য হতে?হা করতেই হলো।খালামণি থার্মোমিটার টা কিছুক্ষণ মুখের ভেতর রেখে তারপর আবার বের করলেন।চেক করলেন।চেক করার পর কিছু বললেন না।কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেলেন।থার্মোমিটারটা জ্যাকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে গম্ভীরা মুখে বললেন,

“পারিসা?খেয়ে নে।”

আমি আর খালামণিকে কিছু না জিজ্ঞেস করে খাওয়ায় মন দিলাম।খাওয়া শেষ হলে বেসিনে হাত ধোঁয়া শেষ হলেই খালামণি আবার বলে উঠেন,
“রুমে যা তোর।আমি আসতেছি কিছুক্ষণ পর।”

রুমে আসার পর বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা হাতে নিলাম।মেসেন্জারের চ্যাটলিস্টের প্রথমেই ওই ছেলেটার দেখলাম।ছেলেটা এখন অনলাইনে।আমি আর দেরী করলাম না।খামোখা ছেলেটার সাথে আমার ইনবক্সে এড রাখার মানেই হয় না।ওমনি ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিলাম।ফেসবুক থেকেও ব্লক করলাম।তারপর ফোন নাম্বারও।এরমাঝে খালামণি ঢুকলেন।তাও খালি হাতে না।ওষুধের অনেকগুলো প্যাকেট নিয়ে।আমি চোখ বড় করে ফেললাম।বললাম,
“মাথাব্যথার জন্যে এত ওষুধ লাগে?”

খালামণি আমার কথার উত্তর না দিয়ে ওষুধগুলো সোঁজা টেবিলের উপর রাখলেন।তারপর আবার আমার দিকে ফিরে চোখমুখ কেমন মলীন করে ফেললেন।আমি এগিয়ে গেলাম,
“কি হয়েছে,খালামণি?তোমার মন বোধহয় খারাপ?”

খালামণি চুপ করে থাকলেন।চল্লিশ সেকেন্ডের মতন পার হতেই বলে উঠলেন,
“ভালো কি আর থাকতে দিলি আমাকে?কতবার বললাম ওই অভিটভি সব ভুলে যেতিস!ওসব খারাপ কিছু ভেবে কী লাভ?যেটা হয়ে গেছে সেটা ত হয়েই গেছে।সেটা কেন বারবার মনে করে নিজের শরীরের অবস্থা খারাপ করতেছিস!কেন?!”
“মানে খালামণি?কি হয়েছে?”
“কী হয়েছে?জ্বর হয়েছে কেন তোর?”
“জ্বর হয়েছে?”
“একশো দুই ডিগ্রী তোর শরীরের তাপমাত্রা এখন।নিজের খেয়া রাখিস তুই?”

মাথা নুইয়ে ফেললাম।আসলে সত্যি আমি বুঝতে পারছি না আমার শরীর এত গরম!ভাবনার মাঝে খালামণি বলেন,

“ওষুধগুলো দিচ্ছি খেয়ে নে।ওষুধ খাওয়ার পর শুয়ে পড়িস।আমি মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি।”
বলে খালামণি টেবিলের উপরে রাখা সবগুলো টেবলেটের পাতা থেকে একটা একটা করে টেবলেট হাতে নিয়ে এবং জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে মুখের সামনে আনেন।
“ওষুধ গুলো খা।”

খালামণির হাত থেকে গ্লাস নিয়ে সবগুলো ওষুধ খেলাম।তারপর শুলাম। শোয়ার পর খালামণি মাথায় জলপট্টি দিলেন। সারা শরীর শীতে শিরশির করে উঠলো।গাঁয়ের।পশম কাঁটা দিলো।সাথে কাঁপনও খুব।খালামণি ওমনি সারা শরীর কম্বলে ঢেকে দিলেন।আমি কম্বল নিজেকে মুড়িয়ে চোখ বুঁজলাম।কাহিল,দুর্বল,অচেতন শরীরে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলাম না।
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২২

৩৩.
জ্বর এখন কিছুটা স্বাভাবিক।গত এক সপ্তাহের খালামণির সেবা-সুস্থতায় একশোর নিচে কমে এসেছে।তবে হ্যাঁ,দু্র্বলতা টা যায়নি তেমন।শরীরটা নিস্তেজ ভীষণ।বেশি সময়ই খাটে পিঠ ঠেকিয়ে থাকতে হচ্ছে।শরীরে একটু বল পেলে আশা করি এভাবে কাঠখোট্টার মতন পড়ে থাকতে হবে না।

“আপু?আপু?ভাইয়া তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।”

ফাহিমের কন্ঠধ্বনিতে মাথা বেঁকে দরজার দিকে তাকাই।চোখমুখ তীব্র কুঁচকে ফেলি।বলি,
“কোন ভাইয়া!”
“দেখলেই বুঝবে।”

বলে ও কুটিল হেসে দরজার থেকে সরে যায়।তারপর দুই মিনিটের মাথায় অন্য কেউ একজন এসে দাঁড়ায়।আমি তাকে দেখে হতবাক!সেই ছেলেটি!মানে হৃদয়!ওমনি আমি তরহর শোয়া থেকে উঠে বসি।সে মুখে লম্বা একটা মৃদু হাসি টেনে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
“এত উত্তেজিত হবার কিছু নেই!আমি ই তো।”
বলে সে কোনোরকম ফর্মালিটি না দেখিয়ে আমার সামনে পড়ে থাকা একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে।তারপর ফের আবার তাকিয়ে এবার কিছুটা সেম্পেথি গলায় বলে,
” শুনলাম আপনার খুব জ্বর হয়েছে।আরো আগেই দেখতে আসতাম।ফাহিমের সাথে কাল আমার দেখা হলো।তাড থেকে শুনলাম।আর আপনার থেকে আপনার খোঁজ নেবই বা কীভাবে।নাম্বার, মেসেন্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সব থেকে ব্লক করেছেন!তা এখন আপনার শরীরটা কেমন?”

আমি চুপ করে থাকলাম।আমি বুঝতেছি না এখন ছেলেটিকে আমার কী জবাব দেওয়া উচিত!ছেলেটি নিজ থেকে আবার বলে উঠলো,
“উত্তর আশা করছি…।”

এবার আমি ছেলেটির দিকে ক্ষীণ চোখে তাকাই।সোঁজা বলে উঠি,
“আপনি চাচ্ছেন টা কী আসলে?”

ছেলেটি হাসলো।মৃদুই হাসলো।তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
“আপাতত তা নাই শুনুন।যে টপিক নিয়ে শুরু করেছি তা নিয়ে কথা বলি?”

রাগটা আরো যেন বেড়ে গেল।
“আপনি কেন এসেছেন মিস্টার হৃদয় তা আমি জানি।দেখুন আমি সরাসরি আপনাকে এবার কিছু কথা বলে দিই।আপনি যে জন্যেই আসুন আমার পক্ষে তা সম্ভব না।আপনি খুব ভালো করে ই জানেন আমি ডিভোর্সি।ডিভোর্সি একজন মেয়েকে আপনার মা-বাবার যেমন পছন্দ হবে না।তেমনি একদিন আপনারও আমাকে পছন্দ হবে না।আপনার এখন আমার প্রতি জাস্ট ভালোলাগা করেছে।এই ভালোলাগাটাও একদিন থাকবে না।দেখতে দেখতে মুগ্ধতা কমে যাবে আর ভালোলাগাটাও চলে যাবে!সো,প্লিজ?নিজের রাস্তা দেখুন।এখানে আর আসবেন না!”

ছেলেটি আমার একটা কথারও উত্তর দিলো না!শুধু এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তাকিয়ে থাকার সময়টা একটু বেশিই গড়ালো।এরফাঁকে ওপাশ থেকে খালামণির ডাক চলে এলো।
“হৃদয়?সোফায় আসো?”

খালামণি হয়তো খাবারের জন্যে ডেকেছেন।ছেলেটি একদৃষ্টিতেই উঠে দাঁড়ালো।যাওয়ার সময় খুব আলতো গলায় আমাকে বলে গেলো,
“আসি”

বেরিয়ে গেলো।বেরিয়ে যেতে খুব তাচ্ছিল্যকর হাসি চলে এলো,
“ডিভোর্সি জানার পরও লেগে আছে?আজব লোক পৃথিবীতে! হা হা হা হা হা। ”

তারপর একমাস কেঁটে যায়।এই এক মাসের মধ্যে ছেলেটিকে আর আমার সামনে কখনো আসতে দেখে নি।আমিও ছেলেটিকে নিয়ে ওত আর ভাবি নি।বলা যায় একপ্রকারে ভুলেই গিয়েছি ছেলেটিকে।কারণ এরমাঝে জবের প্রতি কনক্রিট হই।কোম্পানি থেকে বিজ্ঞাপনের অফার আসতে থাকে।ভালো মতন দেখে স্বনামধন্য কয়েকটা কোম্পানির অফার একসেপ্ট করি।তাদের প্রোডাক্টসের স্যাম্পল নিয়ে কাজ শুরু করি ।বেড়ে যায় কাজের চাপ।কমে যায় সময়।।পরপর আরো দুইমাস কেঁটে যায়। কাজগুলোও শেষ হয়।কাজগুলো শেষ হলে বিজ্ঞাপন ফাইলগুলো কোম্পানিগুলোতে পাঠিয়ে দিই।এরমাঝে “নয়াপুরী টেক্সটাইল ” কোম্পানি থেকে আমাকে কল করা হয়।আমি তখন সবে গোসল করে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি।ভেঁজা চুলগুলোও ভালো করে মুছি নি।আর্জেন্ট ভেবে তরহর কলটা রিসিভ করি।

“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম?পারিসা বলছি।”
“ম্যাম,আমি ” নয়াপুরী টেক্সটাইল “কোম্পানির ম্যানেজার রাকিব মাহতাব বলছি।”
“জ্বী,বলুন?”
“আপনি কি ম্যাম,কাল আমাদের অফিসে একটু আসতে পারবেন?”
“কাজে কোনো ত্রুটি হয়েছে?”
“তা নয়, ম্যাম।কাজ ওকে।বাট একটু অন্য বিষয়ে কথা বলতাম চাচ্ছি।”
“কখন যেতে হবে?”
“আপনার যখন সুবিধে।তবে সাতটার পর নয়।কারণ সাতটা আমাদের অফিস বন্ধ হয়ে যায়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।সমস্যা নেই।আমি কাল দশটার দিকে যাবো।”
“থ্যাংকস!”

৩৪.
“নয়াপুরী টেক্সটাইলে” পরদিন ঠিক ঠিক সকাল দশটায় এসে পৌঁছে যায়।ম্যানেজারের অফিসে ঢুকে পড়ি।বসেই বলি,
“জ্বী,কেন ডেকেছেন, স্যার?”

ম্যানেজার ল্যাপটপের সাটার বন্ধ করলো।আমার দিকে তাকালো।বললো,
“ধন্যবাদ ম্যাম,আসার জন্যে।”
বলে কিঞ্চিৎ থেমে তারপর আবার বলে,
“ম্যাম, আমরা আমাদের কোম্পানির কথা ভেবে একটা ডিসিশন নিয়েছি।তা হলো আমাদের কোম্পানিতে আমরা পার্মানেন্টলি একজন এডভার্টিজার চাচ্ছি।আর সেটা আপনাকেই।আপনার বিজ্ঞাপন ডিজাইনগুলো আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। ”
“স্যার,আমাকে অনেক কোম্পানি থেকেই পার্মানেন্টলি বিজ্ঞাপনদাতা হিসেবে জয়েন করার অফার করেছে।ইভেন তিনমাস আগেও একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে করেছিলো।আমি রাজি হইনি।”
“কেন, ম্যাম?”
“আমার ভালো লাগে না।আসলে টুকটাক কাজই আমার পছন্দ।রেগুলার একই সময়ে, একই জায়গায় এসে কাজ করা আমার কেমন যেন খাপছাড়া খাপছাড়া লাগে।তাছাড়া,আমার মতো সবার লাগে যে এমন না।আসলে আমার কেন জানি এরকম কাজ করতে ভালো লাগে না।ভালো লাগলে এতদিন কোনো না কোনো কোম্পানিতে পার্মানেন্টলি বিজ্ঞােনদাতা হিসেবে নিযুক্ত থাকতাম।আপনার এখানে আর বিজ্ঞাপন বানাতে আসতাম না।”

বলে হাসলাম।ম্যানেজার রাকীব মাহতাব বলেন,
“তারপরও দেখুন,ম্যাম।”

“রাকীব?”
“আরেহ হৃদয় যে?হোয়াট হ্যাপেন্ড,ব্রো?সাডেন আমার অফিসে?”
“এখান দিয়ে গেলাম।ভাবলাম তোর সঙ্গে দেখা করে যাই।”

কন্ঠস্বরটা পরিচিত মনে হতেই পাশ ফিরতে সেই ব্যক্তি আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।আমি তার একপাশ দেখলাম।দেখে চিনে ফেললাম। হৃদয়!কথাবার্তার ধরনে মনে হচ্ছে হৃদয় এবং ম্যানেজার রাকীব মাহতাব দুজন বন্ধু!আমি যে খুব স্বাভাবিক তা ব
নয়!অস্বাভাবিক থেকেও অস্বাভাবিক!হৃদয় নামের ছেলেটি অবশ্যি এখনো আমাকে খেয়াল করেনি।করলে তো তারও রিয়াকশন কি হয়!ভাবনার মাঝেই,

“ম্যাম,সরি!বন্ধু তো?কথা না বলে আর ..?”

আমি পিটপিট চোখে ম্যানেজারের দিকে তাকালাম।মৃদু হাসলাম।ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললাম,
“ইট’স ওকে!”

এই “ইট’স ওকে” বলামাত্রই হৃদয় নামের ছেলেটি ওমনি তরতর করে আমার দিকে তাকালো।আমি হালকা চোখমুখ ছোট্ট করে আনলাম।

চলবে..
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here