আমার_একটাই_যে_তুই❤️পর্ব ২১+২২

#আমার_একটাই_যে_তুই
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

২১
সেদিনের পর বেশ কটাদিন কেঁটে গেছে। ইউসুফের দেখা যেন কোন ভাবেই কুহু পাচ্ছিলো না। চৌচির মাঠের মতো বুকটা কুহুর খা খা করতে লাগলো। একই বাসায় থেকেও ইউসুফ যেন অমাবস্যার চাঁদ। বাগানের ঘাসের উপর বসে ভরদুপুর বেলা কুহু এসব ভাবছে। আর মেইন গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। ইউসুফের গাড়িটি কিছুক্ষণ আগেই বের হয়ে গেছে এই গেট অতিক্রম করে। কিন্তু হায় চোখে দেখাও মিললো না এক ঝলক। কুহু জোড়ালো শ্বাস ছাড়লো।

—” এই উত্তপ্ত রোদের মাঝে নিজেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কেন মারছো কুহু?”

ইউসুফ আম্মু কখন যে কুহুর পাশে এসে বসেছে কুহু বুঝতেই পারেনি। উনার কথায় চমকে উঠে বলল,,

—” খালামনি তুমি!”

ইউসুফ আম্মু কুহুর শুকনো মুখটি দেখে বলল,,

—” তোমাদের মাঝে যা হচ্ছে। তা আমার অজানা নয় কুহু। সংসারে এমন ঝড়-ঝাপটা আসেই। আমরা মেয়েরা হচ্ছি সেই সুপারি গাছের মতো। যত তুফান আসুক না কেন হেলে পড়ি না। ”

কুহু তার খালামনির কথা গুলো চুপ করে শুনলো। মাথার মাঝে যে এক গাদা প্রশ্নের বহর? তা কিভাবে শেষ হবে! কুহুকে চুপ থাকতে দেখে ইউসুফের আম্মু কুহুর কাঁধে হাত রেখে বলল,,

—” সম্পর্কটাকে এভাবে শেষ হতে দিও না।বিশ্বাস রাখো। বিশ্বাস যদি দুজন ব্যক্তির মাঝ থেকে নড়ে যায়? তা ভাঙ্গবেই। এমন ভাবেই ভাঙ্গবে যাকে জোড়া দেয়ার জন্য হয়ত টুকরোটি খুঁজেই পাবে না!”

কুহু এবার ফুপিয়ে উঠলো।তার খালামনিকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলো।

—-” খালামনি আমি কি করবো বুঝতে পারছি না! আমাকে সাহায্য করো! আমি এত সব কিভাবে সামলাবো? আমাদের সম্পর্কের মাঝে ফাটল ধরে গেছে খালামনি!”

ইউসুফের আম্মু শূন্য তাকিয়ে রইলো। কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে ফিসফিস করেই বলল,,

—” কুহুরে তুই তো আমার কাঁধে মাথা পেতে তোর চাপা কষ্টের বলিদান দিতে পারছিস। আমি তো তা কখনো পারিনি। তোকে সামলানোর জন্য আমি আছি। কিন্তু এক সময় ছিলো আমি এমন কাউকে পাইনি যার কাঁধে মাথা পেতে কাঁদবো।”

বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো ইউসুফের আম্মুর। কুহু আশ্চর্য হয়। তার খালামনির দিক এক পলক তাকিয়ে হাতটি ধরলো। অবাক হয়ে বলল,,

—-” তোমার এতো কিসের কষ্ট খালামনি? ”

ইউসুফের আম্মু ফিকে হাসলেন। বললেন,,

—” আমার কথা না হয় অন্য কোনো দিন বলবো! এবার চলো তোমাদের মধ্যেকার দূরত্ব দূর করতে চেষ্টা করি!”

কুহু অন্যমনস্ক হয়ে বলল,,

—” চাইলেই কি সব পাওয়া যায় খালামনি?”

—” না যায় না! চেষ্টাতো করতেই হয়! উঠো এবার চটপট! ”

ইউসুফের কুহুকে এক প্রকার টেনেই উঠিয়ে নিয়ে গেলো ভিতরে।

———-

মাথা ব্যথাটা যেন রোজ দিন কার সাথী হয়ে গেছে ইউসুফের। সাত তলার উপর একটি ইয়ার কন্ডিশনার রুমে বসে এক হাতে ফাইল আর অন্য হাতে নিজের চুল টেনে যাচ্ছে। ইউসুফের কাজ করার মাঝেই কেউ তার কামরায় নক করে। ইউসুফ ফাইলেই চোখে রেখে বলে উঠে,,

—“কামিং!”

দরজা ঠেলে ততখন কেউ একজন প্রবেশ করে। কিছু মুহূর্ত সেই ব্যক্তিটির সারা শব্দ না পেয়ে ইউসুফ কঁপাল কুঁচকে সামনে তাকাতেই ইউসুফের রাগ তীর তীর করে মাথায় উঠে যায়। তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় ইউসুফ।ফাইল টেবিলের উপর জোরে ফেলে দাঁড়িয়ে যায়। কন্ঠের মাঝে রাগ ঢেলে চিল্লিয়ে উঠে,,

—” হাউ ডেয়ার ইউ??কেন এসেছো এখানে? ”

সামনের ব্যাক্তিটি কোমর বাকিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ইউসুফের কথা তার ঠোঁট জোড়ায় হাসি হাসি ভাব।পাতলা ফিনফিনে শাড়িয়ে শরীরের প্রতিটি ভাজ দৃশ্যমান। ইউসুফের কথা যেনন তার কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি তেমন ভাব করেই এগিয়ে গেলো ইউসুফের কাছে। দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরলো ইউসুফের।আহ্লাদু কন্ঠে বলল,,

—-“এত রাগছো কেন ইউসুফ? হোয়াই?? দেখ আমি বড্ড সময় নিয়ে তোমার জন্য সেজেছি! লেটস স্পেন্ড সামটাইম অ্যালোন? ”

ইউসুফ আখিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে গালের মাঝে থাপড় লাগিয়ে দিলো। আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলল,,

—-” ডোন্ট টাচ মি! তোমার মতো সস্তা, রাস্তার মেয়ে আমি দু টো দেখিনি। ছিঃ! লজ্জা লাগে না? পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নিজেকে বাজারে তুলেছো?”

আখির যেন কথা গায়ে লাগে নি। এমন ভাব করে আরো কাছে চলে এলো। নিজ গালে হাত দিয়ে বেহায়ার মতো করে বলল,,

—” ইশশ! ইউসুফ কতদিন পর তুমি আমায় ছুলে। ”

ইউসুফ আখির দিক বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই। আখি ইউসুফের ঠোঁটের কাছে পৌঁছে গেলো।

——–
টিফিনকারী ভর্তি খাবার ভরে কুহুকে ইউসুফের মা ইউসুফ অফিসে পাঠিয়ে দেয়। ইউসুফের রুমের কাছে আসতেই তার চোখ কঁপালে উঠে যায়। আখি নামক প্রানীটি তার বরকে চুমু খাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইউসুফ তার কবল থেকে বাঁচবার জন্য বহু প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। এমন একটু মুহূর্ত যেন কুহু হৃদয় ভাঙ্গন করতে যথেষ্ট ছিল। প্রতিটি মেয়ে এই মুহূর্তে যাই করতো? তাই করলো কুহু। রাগে দুঃখে ইউসুফকে ভুল বুঝে উল্টো পথে হাটা ধরলো। পর মুহূর্তে ইউসুফের মার কথা মনে আসতেই। তার গন্তব্য ঠিক করে নিল। এবং ইউসুফ রুমে ডুকে আখিকে পিছন থেকে টেনে তার দিক ঘুরিয়ে ঠাস এক চড় বসিয়ে দিলো। আখি চড়ের জোর সহ্য করতে
না পেরে টেবিলে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। ঘটনা এতটাই জলদি হলো যে আখি গালে হাত দিয়ে বিস্ময়ে হতভম্ব। ইউসুফ-ও অবাক। আখি কিছু মুহূর্ত নিলো বুঝতে। যখন মাথায় সব টা ধরলো। তখনি রেগে মেগে তেড়ে আসে কুহুর দিক। কুহু আবার থাপড় মেরে দেয়। আখি হতবিহ্বল ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। কুহু সাবলীল ভাবে দু হাত বুকের মাঝে চেপে দাঁড়িয়ে। আখি তার ঠোঁট দুটি নাড়াবে তার আগেই কুহু ঠোঁট দুটি নড়ে উঠে। রাঙ্গে ফেটে পড়া কুহু অতি শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,,

—-” তোমায় প্রথম ছাড় দিয়েছি বলে বার বার দিবো অতটা ভাল আমি নই! তেমন মেয়েও নই নিজের জামাইকে অন্য কারো হাতে সমর্পণ করে কেঁদে কেঁটে দিন পার করবো!তোমাদের মতো মেয়েদের আমি দু চোখে দেখতে পাড়িনা। দেখলেই পা দিয়ে মারিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। যেমন এখন করছে। পরপুরুষ দেখলেই শরীরে কাম যেগে উঠে? তাই না! এতোই শরীর গরম তো পতিতালয় যাও না? ঘন্টায় ঘন্টায় কাম মেটাতে পাড়বে!”

কুহুর কথা কানে যেন গরম হয়ে উঠে আখির অবিশ্বাস-ও চোখে তাকিয়ে থাকে কুহুর দিক। আর এদিকে ইউসুফ মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে। তার বাবুইপাখি এত জেলাস হবে অন্য কোনো মেয়ের কাছে থাকলে? তাহলে আরো আগেই এই ট্রিক্স ফোলো করে ফেলতো।

আখি এবার মুখ খুললো। হাসি হাসি মুখে কুহুর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে হু হা করে হেসে দিলো। ইউসুফ আর কুহু দুজনেই যেন অবাক! মেয়েটা বুঝি শোকে পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি??

কুহু ভ্রু কুচকে বলল,,

—-” অতি শোকে মানুষ পাগল হয় শুনে ছিলাম। আজ দেখলাম!”

কুহুর কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না আখি। কুহুর কাছে এসে দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে বলল,,

—-” বিয়ে করলেই কেউ বউ হয়ে যায়না মেয়ে। বিয়ের পর বরের কাছ থেকে অধিকার না পেলে সেটা কি বিয়ে বলে ধরা যায়? তার থেকে বরং আমায় দেখো? আমি বিয়ে না করেও সে অধিকার পেয়ে গেছি এন্ড আম প্রেগনেন্ট? ইউসুফের বাচ্চার মা হচ্ছি!”

কুহু এবার বাঁকা হাসলো। বলল,,

—-” অবৈধ ভাবে যে কেউ যখন খুশি নিজের দেহ বেঁচে মা হয়ে যেতে পারে! এটি সমাজে নিকৃষ্ট ও ঘৃণার। আর সব থেকে বড় কথা হোয়াট ইজ দ্যা প্রুব
দ্যাট ইউ আর গোয়িং টু বি দ্য মাদার অফ ইউসুফ চাইল্ড?? ইজ দেয়ার এনি প্রুব?”

আখি চুপসে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,,

—-” আ-আমি ইউসুফ বাচ্চার মা! এটার জন্য প্রুব লাগবে কেন? আমি কি জানি না?”

—” তুমি একা জানলে তো চলবে না!আমাদের ও জানতে হবে! প্রুব আনো!”

আখি ভরকে গেলো৷ কথা খুঁজে পেলো না হঠাৎ।চোর যেন পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছে তেমন মুখটি করে রেখেছে সে। কি বলবে না বুঝতে পেরে চোখ রাঙ্গায়।আঙ্গুল তুলে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠে,,

—-“আমি তোমাকে দেখে নিবো মেয়ে। ”

কুহু হেসে হাওয়ায় হাত নাড়িয়ে বলল,,

—-” আমি আপেক্ষায় থাকবো। যখন দেখতে মন চায় একবার শুধু বলো। আমার সুন্দর মুখ খানা নিয়ে হাজির হয়ে যাবো। মন ভরে দেখে নিও।””

আখি রেগে ফুসতে ফুসতে বের হয়ে গেলো। কুহু সেদিকে তাকিয়েই হাসতে লাগলো। ঠিক তখনি পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইউসুফ আর তখনি কুহু…..
#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

২২
আখি রেগে ফুসতে ফুসতে বের হয়ে গেলো। কুহু সেদিকে তাকিয়েই হাসতে লাগলো। ঠিক তখনি পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইউসুফ আর তখনি কুহু ঠেলে দুরে সরিয়ে দিলো। বলল,,

—-” আমাকে একদম ছুঁবেন না। নেতা সাহেব!”

ইউসুফ ভ্রুকুচকালো। কুহুর কথা উপেক্ষা করে টেনে এনে বসালো ইউসুফের কোলে। বলল,,

—-” আমি ছোঁবো না তো কে ছুইবে?হুম। প্রিন্স ফিলিপ? ওই বুড়া বেটা তোকে ছুইতো তুই মজা পাইতি?”

কুহু হতাশ হলো। মনে মনে বলল,,

—-” ইউসুফ ভাই ইজ কামিং। মাই ঘুম হারামিং!”

কুহু গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। বলল,,

—-” আমাকেই কথার আগাগোড়ার মাঝে চিপে ধরতে পাড়বেন। যাদের ধরার তাদের তো পাড়বেন না। উল্টো ফিট হবেন টেনশনে। ”

ইউসুফ কুহুর নাকে নাক ঘসলো। ফিসফিস করে বলল,,

—” তুই আমার বউ তোরেই চিপবো। চিপে একদম টমেটোর জুস বানিয়ে ঢক ঢক করে গিলে ফেলবো!”

কুহুর চোখ কঁপালে।কি সাংঘাতিক। তড়িৎ গতি উঠে নিতেই ইউসুফ ঘাপটি মেরে ধরলো। কুহুর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঘাড়ের মাঝে তার দাঁড়ি
ঘষা দিতে কুহু ” ও মা গো ” বলে নড়েচড়ে উঠলো। তাও ছাড়লো না ইউসুফ। কুহুর সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হলো। ইউসুফের ঠোঁট জোড়া বিচরণ করতে লাগলো গা জুড়ে। কি শান্তি কি শান্তি। ইউসুফের প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। ফট করে কুহু ইউসুফ ঘাড়ে কামড় বসালো। অসহ্য ভাল লাগায় মারা যাচ্ছে কুহু। ইউসুফ “আহ রাক্ষস মাইয়া” বলে ছেড়ে দিলো। কুহু সটানভাবে দাঁড়িয়ে পড়লো। হাপাতে হাপাতে বলল,,

—-” আপনি গম্ভীর টাইপ ফর্মেই ভাল ছিলেন। সেই ফর্মে চলে যান। আগের ইউসুফ একদম ভালো না আমায় পুড়ায়!”

ইউসুফ চেয়ারের পিছনে দুহাত পেতে মাথা রাখলো। হেলে বসে মুচকি হেসে বলল,,

—-” অনেক দিন পর মনের শান্তি পেয়েছি বাবুইপাখি। তা তো আর আমি হারাচ্ছি না!এবার তোকে পড়াবো। পুড়িয়ে ছাই ছাই করে রেখে দিবো তালাবন্ধ করে”

বলে আবার কুহুকে কাছে টানলো। কুহু বাঁধা দিয়ে বলল,,

—-” এভাবে তো কাছে পাবেন না নেতা সাহেব। একদম না! আমাকে আগে সবটা বলুন। নয়তো ডিভোর্স ফাইনাল! ”

ইউসুফ কুহুর কণ্ঠনালি চেপে ধরলো। রাগী গলায় বলল,,

—-” সেদিনের মার ভুলে গেছিস? হুম। মাথা আওলায়া দিস কেন? কেন দিস মেরে দেই তোরে এখন?আই শুড কিল ইউ!”

কুহুর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ইউসুফের থেকে ছাড়া পাচ্ছেই না। মনে মনে নিজেকে গালি দিলো। কেন গেলো রাগাতে হুয়াই? ইউসুফ ছেড়ে দিলো কুহুকে। নিজের চুল টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কুহু খুক খুক করে কেশে উঠে বলল,,

—-” আপনার নামে কেশ করে দিবো! দিন দুপুরে মারার হুমকি! আহারে একটু হলেই দুনিয়া ত্যাগ করে ফেলতাম!”

ইউসুফ গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো কুহুকে আবার তার হাতে আবদ্ধ করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,,

—-” আমার হৃদয় আঘাত কেন করিস বল বাবুইপাখি। আমি তুই ছাড়া শূন্য। প্রাণ হারা।ইউ ফিল দ্যা ভয়েড ইন মাই চেষ্ট!”

কুহুর মায়া হলো। দু হাতে ইউসুফের গাল ধরে বলল,,

—-” সব বলুন না আমায়! আমি সব জানতে চাই। শুরু থেকে। সবববববববববব।”

কুহু বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলল। ইউসুফ হেসে ফেললো। কুহুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। গালের মাঝে আবার দাড়ি ঘষা দিলো। কুহু কটমট করে তাকালো। ইউসুফ হেসে ফেললো। কুহুর গালে শব্দে করে চুমু খেয়ে বলল “আমার রসগোল্লা”। কুহু লজ্জায় লাল-নীল। ইউসুফ মুচকি হেসে বলতে শুরু করলো,,

—-” আমার জীবনের প্রথম মেয়ে তুই ছিলিরে বাবুইপাখি! শুধু তুই! ভালো তোকেই বেশিছি ছোট থেকে!”

কুহু চুপ করে চেয়ে রইলো ইউসুফ মুখপানে। কত গর্ব করে বলছে কুহু তার প্রথম লাইফের। কুহুর মনে ভালো লাগা কাজ করলো। ইউসুফ আবার বলতে শুরু করলো।

—-” আমাদের বিয়ের দুই-তিনদিন পর আমাদের দলের অনিদার র্অ্যানিভার্সারিতে ইনভাইট করে আমাদের। তুই তখন আমাকে দু চোখেও দেখে পেতিস না। তোকে বলে ছিলাম সেদিন পার্টির কথা তুই না কোচ করেছিলি। মনে আছে? সেদিনেরই ঘটনা।সেদিন আমি কবির কে সেখানে উপস্থিত হয়ই। সেখানেই দেখা আখির সাথে। আখিকে এর আগে থেকে চিনতাম। আমার সাথে কলেজে পড়তো। বড্ড চিপকুস টাইপ মেয়ে। এর থেকে দূরে থাকতাম সব সময়!”

কুহু বড্ড অভিমান হলো। মুখ টা কাচুমাচু করে শুনছে। তার নেতা সাহেবকে সবার কেন চাই? দুনিয়াতে কি আর কোনো ছেলে নাই?ইউসুফ কথায় আবার কান দিলো কুহু।

—-” অনেক দিন পর তার সাথে দেখা হয়৷ সেদিন। সেধে এসে কথা বলল। আমিও কথা বললাম। সব স্বাভাবিক চলছিলো। কথার শেষ পর্যায় অাখি চলে যায়। গ্লাসের জুসে চুমুক দিচ্ছিলাম একটু করে। হুট করে তখন কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। পুরো দুনিয়া৷ উল্টে গেলো।তারপর আর কিছু মনে নেই।
পরের দিন সকালে যখন ঘুমভাঙ্গে তখন আখি আমায় ঝাপটে ধরে ছিলো। তার শরীরে কাপড়ের ছিটেফোঁটা ছিলো না। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম সেদিন। তারপর থেকেই আখি ব্ল্যাকমেইলিং শুরু এদিকে বাবার কাছে এ কথা পৌছাতেই উনিও পেশার দিচ্ছিলো। আখিও হুমকি দিচ্ছিলো তোকে সব বলে দেবে। আমার ব্রেনের নার্ভ যেন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তার উপর তোর অভিমান অভিযোগ। সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এর মাঝে তুই কি করলি ডিভোর্স পাঠালি! আমার দুনিয়াই সে দিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছিলো!”

এ পর্যায় ইউসুফের কন্ঠ ধরে এলো। কুহু ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,,

—-” আমি আপনাকে ডিভোর্স লেটা পাঠাইনি নেতা সাহেব। আমি গেছিলাম উকিলদের কাছে। কিন্তু সাহস পায়নি ডিভোর্স দেয়ার সত্যি বলছি। আমি জানি না কিছু। কে পাঠালো তা।”

কুহু ফুপিয়ে উঠলো ইউসুফের বুকে মুখ গুঁজে। ইউসুফ পরম যত্নে মাথায়৷ হাত বুলিয়ে বলল,,

—“কাদিস না! ”

কুহু শুনলো না কাঁদতেই লাগলো। কিন্তু ইউসুফের মাথায় চিন্তা ঢুকে গেলো। কে করলো এমন কাজ? নতুন কোনো শত্রু নাকি ঘরের শত্রু??

চলবে,

আশা করি ক্লিয়ার হয়েছেন কিছু টা? আপনাদের রেসস্পন্স একবার বারে একবার কমে খারাপ লাগে। আর লিখতেও ইচ্ছে করে না তখন। আপনাদের সাড়া পেলে মনোবল বাড়ে। দয়া করে সাড়া দিবেন। আর হে প্রতিদিন গল্প দিয়ার মতো সময় আমি পাচ্ছি না। তাই একদিন পর পর দিবো। নেক্সট পর্ব পরশু রাতে দিবো। ধন্যবাদ।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here