#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
রুয়েলের চরিত্র আগে একদম ভালো ছিলো না।খারাপ বন্ধুবান্ধবদের সাথে রাত দিন আড্ডা দিয়ে বেড়াতো।এক সেকেন্ড সে বাসায় থাকতো না।আর প্রতিদিন নেশা করে বাসায় ফিরতো।সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের বাসায় একটা মেয়ে আগে কাজ করতো।রুয়েল সেই মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্য একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলো।তুমিই বলো এটা কি কখনো আমরা মেনে নিতে পারি?কাজের মেয়ে নাকি হবে এই বাড়ির বউ!আমরা কেউই রাজি হয় নি।
এজন্য মেয়েটাকেই আর কাজে রাখি নি আমরা।ওকে কাজ থেকে বের করে দেই।রুয়েল তখন ওই মেয়েটার বাড়ি পর্যন্ত যেতো।ওই মেয়েটার বাবা মা কিছুই বলতো না।তোমার ভাই যখন শুনতে পেলো কথাটা তিনি তখন রুয়েলকে বারণ করে দিলেন।তবুও রুয়েল শোনে নি তোমার ভাই এর কথা। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমরা মেয়েটার অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেই।রুয়েল সেজন্য অনেক পাগলামি করেছিলো।এক পর্যায়ে সে আত্নহত্যার হুমকি পর্যন্ত দেয় আমাদের।ওকে আমরা বাসা থেকে বের হতে দেই নি।আমরা খুব ভয়ের মধ্যে পড়েছিলাম ওকে নিয়ে।
তখন তোমার ভাই সিদ্ধান্ত নিলো রুয়েলকে আর দেশেই রাখবে না।তাকে ওনার সাথে সিংগাপুর নিয়ে যাবে।দুইজন মিলে একসাথে ব্যবসা করবে।এজন্যই ওকে সিংগাপুর নিয়ে গেছে তোমার ভাই।তবে রুয়েল কিছুতেই যেতে চাই নি।তোমার ভাই মিথ্যা কথা বলেছে,যে উনি ভীষণ অসুস্থ, ব্যবসা বানিজ্য একা সামলাতে পারছেন না।সেই কথা শুনে তখন যেতে রাজি হয়েছে রুয়েল।সে তো এস,এস,সি পাসও করে নি।পড়াশোনায় একদম কাঁচা ছিলো। তোমার ভাই জানতো একে দিয়ে পড়াশোনা হবে না,আর এস,এস,সি পরীক্ষা দিলে নির্ঘাত ফেল করবে,এই ভেবেই ওকে তাড়াতাড়ি করে সিংগাপুর নিয়ে গেছে।তাহলে ভাবো তোমার ভাই যদি ওকে বিদেশ না নিয়ে যেতো তাহলে ওর অবস্থান টা কোথায় যেতো?তোমার ভাই সবসময় রুয়েলের ভালোই চেয়েছে।আজও ওর ভালো চায়।
ঊর্মির কথাগুলো শুনে জান্নাতের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।তবে সে সেটা ঊর্মিকে বুঝতে দিলো না।জান্নাত নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো, ভাবি উনি আগে কেমন ছিলেন সেসব কথা কেনো বলছেন আমাকে?আমি ওনার অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে চাই না।প্লিজ আর কখনো বলবেন না এসব।
ঊর্মি তখন জান্নাতের হাত ধরে বললো,কি বলছো এসব?অতীতের কথা না শুনলে তুমি বুঝবে কি করে সে কেমন ছেলে?অতীত থেকেই তো মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত।তাছাড়া তুমি আমার বোনের মতো।আমি চাই না তোমার কোনো ক্ষতি হোক।সেজন্যই বলছি রুয়েলের দিকে একটু নজরদারি করিও।ও কোথায় যায়?কার সাথে থাকে সব তোমাকে খোঁজ নিতে হবে। তা না হলে ও জীবনেও ভালো হবে না।আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বিদেশ যেতে বলো।তা না হলে দেশে থাকলে এমন রাত বিরাতে শুধু ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।
জান্নাত এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।সে তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, ভাবি আপনারা যখন জানেনই আপনার দেবর এমন একজন দুশ্চরিত্র ছেলে তাহলে আমার মতো মেয়ের সাথে কেনো বিয়ে দিলেন?আপনারা তো জানতেনই আমি কেমন?আমার সাথে তার তো কোনো দিক দিয়েই মেলে না।আমার বাবা মা তো এতো কিছু জানতো না।ওনারা তো রুয়েলের বাহ্যিক ব্যবহার দেখেই রাজি হয়েছে বিয়েতে।কিন্তু আপনারা কেনো আমার জীবন টা এভাবে নষ্ট করলেন।
অল্প বয়সী জান্নাত রুয়েলের এসব অতীত শুনে খুব বেশি ইমোশনাল হয়ে গেলো।তার চোখের পানি কিছুতেই থামছে না।
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো,কেঁদো না জান্নাত।এসব তো আগের ঘটনা।এখন অবশ্য কোনো মেয়ের সাথে ওর রিলেশন নাই।দেশে থাকলে হয় তো এরকম হাজার টা মেয়ের সাথে ওঠাবসা করতো।সেজন্যই তোমার ভাই বুদ্ধি করে ওকে বিদেশ পার করেছে।আর তুমি তখন বললে না বিদেশ গিয়েও তো সে খারাপ হতে পারে?কিন্তু সে সুযোগ রুয়েল কিছুতেই পায় নি।তোমার ভাই সবসময় ওর সাথেই থাকতো।এখন যদিও সিংগাপুরে থাকেন না উনি তবুও ওখানকার সকল লোকের সাথে কথা হয় ফোনে।রুয়েল কখন কি করে সব খবর তোমার ভাই সাথে সাথে পেয়ে যায়।
ঊর্মির কথা শুনে জান্নাত আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।ঊর্মি তখন বললো,আমরা ভেবেছি তোমার মতো একটা ভদ্র মেয়েকে বিয়ে করলে সে হয় তো পরিবর্তন হবে।রাত বিরাতে ঘোরাঘুরি বন্ধ করবে।কিন্তু যার যে স্বভাব,স্বভাব যে কখনো পরিবর্তন হয় না তা আমরা বুঝতে পারি নি।তোমার মতো একজন সুন্দরী বউ পেয়েও সে আর ভালো হলো না।এতো রাতেও বাহিরে ঘোরাঘুরি করছে।শুনেছো কখনো কোনো ছেলে বিয়ে করলে এভাবে নতুন বউ রেখে রাত বিরাতে ঘোরাঘুরি করে?তাহলে ভাবো কেমন ছেলে সে?
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।ঊর্মি তখন বললো নবাবজাদা মনে হয় এসে গেছে।এখন বাজে রাত ১২ টা।আর উনি এতোক্ষণে আসলেন বাসায়।এই বলে ঊর্মি তার রুমে চলে গেলো।আর জান্নাতকে বললো,আমি যে এসব বললাম তোমাকে খবরদার রুয়েলকে যেনো বলো না আমার কথা।আমি কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই বললাম।রুয়েলকে বললে সে কখনোই এসব স্বীকার করবে না।কেউ কি কখনো নিজের অপরাধ স্বীকার করে?
এদিকে কলিং বেলের শব্দ শুনে জান্নাতের শাশুড়ী উঠে এলো।আর জান্নাত কে দেখে বললো, তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছো তবুও কেনো খুলছো না দরজাটা?রুয়েল হয় তো এসেছে।এই বলে জান্নাতের শাশুড়ী নিজেই খুলতে খেলো দরজা।
এদিকে জান্নাত কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ ঘরে চলে গেলো।তার কিছু ভালো লাগছে না।সে বিশ্বাসই করতে পারছে না রুয়েল এতো খারাপ!ঊর্মি কি সত্যি বলছে এসব?জান্নাত ভাবতে পারছে না আর।
দুই হাতে দুইটা ব্যাগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো রুয়েল।
জান্নাত রুয়েলকে দেখামাত্র বললো, আসসালামু আলাইকুম।
রুয়েল জান্নাতের কাছে তখন এগিয়ে এসে বললো ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কিন্তু জান্নাত রুয়েলের কাছ থেকে সরে যেতে ধরলো।রুয়েল তখন তার হাতের ব্যাগ দুইটি টেবিলের উপর রেখে জান্নাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,কি হলো জান্নাত?আমার কাছ থেকে সরে গেলেন কেনো?
জান্নাত তখন বললো, আপনার জন্য খাবার রেডি করতে যাচ্ছি।খাবার টেবিলে দেবো না রুমে আনবো?
–আপনি খেয়েছেন?
–না।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,নিশ্চয় আমার জন্য অপেক্ষা করছেন?আমি খায় নি দেখে আপনিও না খেয়ে বসে আছেন।কিন্তু এই কাজ আর কখনোই করবেন না।আমি কখন আসি না আসি তার ঠিক নেই।সেজন্য কি আপনি এভাবে না খেয়ে বসে থাকবেন?কাল থেকে কখনোই আর আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন না।যখন ক্ষুধা লাগবে তখনি খেয়ে নিবেন।
বুঝেছেন?
জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো জ্বি।
রুয়েল হঠাৎ জান্নাতের হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বললো,এখানে কিছু খাবার আছে জান্নাত।একটা প্লেট এনে এগুলো তাড়াতাড়ি সার্ভ করুন।আপনি আর আমি একসাথে আজ রুমের মধ্যেই খাবো।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, কি দরকার ছিলো এসব আনার?বাসার খাবার গুলো এখন কে খাবে?
রুয়েল তখন বললো,আসলে আমার বন্ধু চঞ্চল আজ একটা পার্টি দিয়েছিলো।যদি সেখানে না যেতাম ও ভীষণ মন খারাপ করতো,এমনিতেই সবাইকে না জানিয়ে বিয়ে করেছি তারজন্য সবাই খুবই আপসেট।সেজন্য বাধ্য হয়ে গিয়েছিলাম।আপনাকে বলি নি,কারণ বাসার কেউ জানে না পার্টির কথা।আসলে আমার পরিবারের কেউ চায় না আমি এসব বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দেই।কিন্তু তারা আমার বাল্যকালের বন্ধু।কিভাবে ভুলি তাদের?পার্টিতে অনেক খাবারের আয়োজন করা হয়েছে ।কিন্তু আমি কিছুই মুখে দেই নি।আমি জানি আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন।আপনাকে রেখে কিছুতেই খেতে পারি নি।
চঞ্চল খেয়াল করেছে ব্যাপার টা।সেজন্য সে খাবার প্যাকেট করে দিয়েছে।শুধু আমার জন্য না, আপনার জন্যও দিয়েছে।বন্ধুরা এ নিয়ে খুব মজা শুরু করেছে।আমি নাকি এক দিনেই বউ পাগল হয়ে গেছি।আপনারও কি তাই মনে হয়?আসলেই কি আমি বউ পাগল?
জান্নাত কোনো উত্তর দিলো না।সে নিচ মুখ হলো রুয়েলের কথা শুনে।
রুয়েল তখন বললো,লজ্জা পাচ্ছেন আপনি?লজ্জা পেতে হবে না আর।যান তাড়াতাড়ি খাবারগুলো সার্ভ করুন।ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে।
জান্নাত তখন বললো,সরি, মাফ করবেন আমাকে।আমি ওসব পার্টির জিনিস কিছুতেই খাবো না।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, কেনো?কেনো খাবেন না?
–এমনি।
রুয়েল এতোক্ষণে জান্নাতের দিকে ভালো করে তাকালো।আর জান্নাতের মুখ টি উপরে তুলে বললো,জান্নাত কি হয়েছে আপনার?আপনি আবার কেনো কেঁদেছেন?আপনার চোখ দুইটি এতো ফোলা ফোলা কেনো?
–কই কেঁদেছি?না কাঁদি নি আমি।
–আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।আপনি অনেক বেশি কেঁদেছেন।আপনি তো মিথ্যা কথা বলেন না জান্নাত।তাহলে কেনো মিথ্যা বলছেন?এই বলে রুয়েল জান্নাতকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।আর বললো, বাড়ির কথা মনে পড়ছে?আচ্ছা ঠিক আছে কাল আপনাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবো।কয়েকদিন গিয়ে থেকে আসবেন।তবুও এভাবে কাঁদবেন না প্লিজ।
জান্নাত একটা কথাও বললো না।সে তো ঊর্মির কথা মনে করে কাঁদছে।জান্নাত একবার ভাবছে তার রুয়েলকে এসব বলা উচিত, আরেকবার ভাবছে না, এ নিয়ে আবার সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হবে।যদি ঊর্মির কথা সত্য হয় তখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট সে নিজেই পাবে।আর ঊর্মির কথা যদি মিথ্যা হয় তখন সংসারে হয় তো এ নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হবে।তার চেয়ে বরং তার চুপ থাকাই ভালো।
জান্নাত তার চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হলো।সে রুয়েলকে কিছু বুঝতে দিলো না।সে তখন বললো, আসলে আমি শুনেছি পার্টিতে সবাই আজেবাজে জিনিস খায়।এসব আজেবাজে জিনিস খাওয়া একদম হারাম।আর সবচেয়ে বড় কথা পার্টিতে হই হুল্লোড় নাচ গান সবকিছু হয়।সেজন্য আমি এসব পার্টি থেকে আনা খাবার কিছুতেই খেতে চাচ্ছি না।
রুয়েল সেই কথা শুনে জোরে করে শব্দ করে হেসে উঠলো। আর বললো,আপনি এইজন্য কাঁদছেন?ভাবছেন আমিও এসব আজেবাজে জায়গায় গিয়েছি আর ওসব আজেবাজে জিনিস খেয়েছি?
সেজন্য পার্টি থেকে আনা খাবারও খাচ্ছেন না?
জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলের দিকে তাকালো।
রুয়েল তখন বললো,আপনি যে এতো বোকা সত্যি আমার জানা ছিলো না।এটা কি নাটক সিনেমার মতো সেই জমকালো পার্টি ভাবছেন?যেখানে মিউজিকের তালে তালে সবাই নাচবে।মোটেও তেমন পার্টি না।একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে আমাদের সকল বন্ধুদের ট্রিট দিয়েছে সে।চঞ্চলের গার্লফ্রেন্ড পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে।সেই খুশিতে বন্ধুদের জন্য এই পার্টির আয়োজন করেছে।আর কিছু না।এই পার্টিতে কোনো হারাম খাবার ছিলো না।বিশ্বাস করুন।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, সরি ভুল হয়ে গেছে আমার।আমি ভেবেছি আপনি ওসব আজেবাজে জায়গায় গিয়েছেন।আর ওখানকার খাবার আমার জন্য এনেছেন?
রুয়েল তখন জান্নাতের কপালে একটা কিস করলো।আর তার মুখ টি স্পর্শ করে বললো,আপনি আমার পবিত্র একজন বউ।আমি জানি আপনি এসব পছন্দ করেন না।তাহলে জেনেবুঝে কেনো সেসব জায়গার খাবার আনতে যাবো?আর কখনোই এসব কথা মনে আনবেন না জান্নাত।আপনি যেসব জিনিস পছন্দ করেন না,আমি কখনোই সেসব কাজ করবো না।এই বিশ্বাসটুকু রাখবেন প্লিজ।
জান্নাত তখন বললো, আচ্ছা বুঝলাম আজ কোনো আজেবাজে জায়গায় যান নি।তাহলে কি আগে এসব আজেবাজে জায়গায় যেতেন,আর এসব আজেবাজে জিনিস খেতেন?
রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।সে জান্নাতের কথা এড়িয়ে গেলো আর বললো, জান্নাত এ নিয়ে আমরা আরেকদিন কথা বলবো।এখন চলুন তাড়াতাড়ি খেয়ে নিই।খাবারগুলো তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।এই বলে রুয়েল নিজেই প্লেট আনলো।আর নিজেই খাবারগুলো প্লেটে রাখলো।জান্নাত সেই আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।
রুয়েল তখন জান্নাতকে বিছানায় বসিয়ে দিলো আর এক লোকমা বিরিয়ানি জান্নাতের মুখের কাছে নিয়ে গেলো।
জান্নাত শুধু রুয়েলের দিকে দেখছে।রুয়েল তখন বললো,হা করুন জান্নাত।
জান্নাত তখন বললো,আপনি আগে খান।আমি পরে খাবো।
–না আপনি আগে।
–না আপনি আগে খান।
রুয়েল তখন নিজেই আগে এক লোকমা মুখে দিলো।তা না হলে জান্নাত কিছুতেই খাবে না।রুয়েল নিজের মুখে দিয়েই জান্নাতের মুখে তাড়াতাড়ি এক লোকমা খাবার তুলে দিলো।
এইভাবে দুইজন খাওয়া শেষ করলো।খাওয়া শেষ করে এঁটো প্লেট গুলোও রুয়েল নিজেই বেসিনে নিয়ে গিয়ে মাজতে লাগলো।জান্নাত তা দেখে বললো, কি করছেন এসব?বাসার কেউ দেখলে কি হবে?
রুয়েল তখন বললো আপনি রুমে যান জান্নাত।বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।কেউ উঠবে না এখন।
জান্নাত সেই কথা শুনে রুমে চলে গেলো।
রুয়েল ফ্রেশ হয়ে জান্নাতের কাছে চলে গেলো।আর জান্নাতকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললো,আপনি মনে হয় গিফটের কথা ভুলে গেছেন জান্নাত?
–না ভুলি নি।
–তাহলে এখনো সাজছেন না কেনো?গিফট গুলো কি পছন্দ হয় নি তাহলে?
–না,না।কি বলছেন এসব?অনেক পছন্দ হয়েছে।আজ তো অনেক রাত হয়েছে।সেজন্য ভাবছিলাম কাল সাজবো।
–না আজকেই সাজতে হবে।
–কিন্তু আমি যে সাজতে পারি না।
–যেভাবে পারবেন সেভাবেই সাজবেন।
–তাহলে আপনি রুম থেকে বের হয়ে যান।
–কেনো!আমি থাকলে কি হবে?
–যান,তাহলে সাজবো না।এই বলে জান্নাত রুয়েল সরিয়ে দিলো।
–ওকে যাচ্ছি।সাজগোছ কম্পিলিট হলে ডাক দিবেন কিন্তু।এই বলে রুয়েল বেলকুনির দিকে চলে গেলো।
জান্নাত কি করবে এখন বুঝতে পারছে না।ওদিকে তো রুয়েল অপেক্ষা করে আছে।জান্নাত পাঁচমিনিট আগে উল্টিয়ে পালটিয়ে শাড়িটি দেখতে লাগলো।তার সাহস হচ্ছে না শাড়ি টা পড়ার।সেদিন ঊর্মি ভাবি সুন্দর করে পড়ে দিয়েছিলো শাড়িটা।কিন্তু আজ এতো রাতে ওনার রুমে যাওয়া তো ঠিক হবে না।এজন্য জান্নাত রুয়েলকে ডাক দিলো।রুয়েল ভেবেছে জান্নাত রেডি হয়েছে।কিন্তু এসে যখন দেখলো জান্নাত এখনো রেডি হয় নি সে তখন বললো, জান্নাত আপনি এখনো রেডি হন নি?আপনি তাহলে সত্যি আজ পড়তে চাইছেন না?আমি কত শখ করে আনলাম শাড়িটা!আচ্ছা ঠিক আছে,আপনার যখন পড়তে ইচ্ছা করছে না তাহলে পড়ার দরকার নাই।এই বলে রুয়েল রাগ করে শুয়ে পড়লো।
তখন জান্নাত বললো,আপনি কি রাগ করলেন আমার উপর।বিশ্বাস করুন আমি শাড়ি পড়তে পারি না।কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।
জান্নাত তখন শাড়িটা রেখে রুয়েলের কাছে চলে গেলো।কিন্তু রুয়েল কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়েছে।
জান্নাত তখন বললো,এই যে শুনছেন আপনি?রাগ করলেন কি?
রুয়েল এবারও কোনো উত্তর দিলো না।
জান্নাত তখন রুয়েলকে আর বিরক্ত করলো না।সে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে আবার শাড়ি টা হাতে নিলো।আর একা একাই পড়ার চেষ্টা করলো।জান্নাত কোনো রকমে শাড়ি টা পেঁচিয়ে নিলো।কিন্তু কিছুতেই আর হাঁটতে পারছিলো না।সে তখন চিৎকার করে বললো,এই যে শুনছেন?আমি তো হাঁটতে পারছি না।কি করবো এখন?এই যে?সাহায্য করুন প্লিজ।
রুয়েল সেই কথা শুনে জান্নাতের দিকে তাকালো আর বিছানাতে শুয়ে থেকেই হাসতে হাসতে বললো,শাড়ি এভাবে পেঁচিয়ে রাখলে কি করে হাঁটতে পারবেন?বুঝেছি, আপনার দ্বারা শাড়ি পড়া কখনোই সম্ভব না।উন্নত মানের ট্রেনিং এর প্রয়োজন আপনার।তাড়াতাড়ি খুলে ফেলুন শাড়িটা।
–কি বলছেন এসব?শাড়ি খুলবো মানে? পারবো না শাড়ি খুলতে।এইভাবেই শোবো আমি।
–ওকে তাহলে একা একাই আসার চেষ্টা করুন।আমি কোনো সাহায্য করতে পারবো না।এই বলে রুয়েল বিছানাতেই শুয়ে থাকলো।#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
জান্নাত পুরো শরীরে শাড়ি পেঁচিয়ে কিছুতেই হাঁটতে পারছে না।আবার শাড়িটা খুলতেও পারছে না।কারণ রুয়েল বিছানায় শুয়ে থেকে তার দিকেই দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।রুয়েল কে এমন মুচকি মুচকি হাসা দেখে জান্নাত আবার হাঁটার চেষ্টা করলো।কিন্তু এক পা এগোতেই একদম ধপাস করে পড়ে গেলো সে।রুয়েল তা দেখে দৌঁড়ে চলে গেলো জান্নাতের কাছে।আর বলতে লাগলো,জান্নাত!জান্নাত!আপনি কি ব্যাথা পেলেন?কত করে বললাম শাড়িটা খুলে ফেলুন,কিছুতেই আমার কথা শুনলেন না।এই বলে রুয়েল নিজেই জান্নাতের শাড়িটা খোলার চেষ্টা করলো।
জান্নাত তখন চিৎকার করে বললো,কি করছেন?কি করছেন আপনি?আমি কোনো ব্যাথা পাই নি।এই বলে একা একাই উঠতে ধরলো।কিন্তু কিছুতেই আর উঠতে পারলো না।রুয়েল তা দেখে এক ঝটকায় জান্নাতকে কোলে তুলে নিয়ে একদম আয়নার সামনে নিয়ে গেলো।জান্নাত কিছু বলার আগেই রুয়েল এক টানে জান্নাতের শাড়িটাও খুলে ফেললো।
জান্নাত রুয়েলের এমন কান্ড দেখে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।সে একদম হতবিম্ব হয়ে গেলো।আয়নায় চোখ পড়তেই আরো বেশি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো জান্নাত।তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।বুকটা ধড়াস ধড়াস করে কাঁপছে জান্নাতের।চোখের অবস্থা সেই আগের মতোই আছে।তবে সে পলকহীন ভাবে রুয়েলের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ রুয়েল শাড়ির আচল টি জান্নাতের বুকের উপর রাখলো।আর শাড়িটা পড়িয়ে দিতে লাগলো জান্নাতকে।শাড়ি পড়ানো হয়ে গেলে রুয়েল জান্নাতের চুলগুলোও বেঁধে দিলো।আর কিছু লাল গোলাপ জান্নাতের খোঁপায় গুজে দিলো।খুবই অপ্রকৃতিস্থ ভাবে নিশ্বাস টানতে লাগলো রুয়েল।রুয়েলের প্রতিটা নিশ্বাস জান্নাতের ঘাড়ে এসে ধাক্কা খেতে লাগলো।হঠাৎ জান্নাতের পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।কারণ জান্নাত রুয়েলের এমন কান্ড দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।তার মুখের ভাষা মুহুর্তের মধ্যে হারিয়ে গেছে।তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না।
অন্যদিকে রুয়েল তার রূপবতী জান্নাতকে দেখে আউট অফ মাইন্ড হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে সে সাক্ষাৎ কোনো আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর কিছুক্ষন থাকলে সেই আগুনের শিখায় একদম পুরে ছারখার হয়ে যাবে।হঠাৎ রুয়েল এক হাত জান্নাতের খোলা কোমরে রাখলো আর অন্য হাত দিয়ে জান্নাতের একটা হাত খপ করে ধরলো।জান্নাতের আংগুলের ফাঁকে নিজের আংগুল গুজিয়ে দিয়ে শক্ত করে আঁকড়িয়ে ধরলো তাকে।আজ জান্নাতের এতো কাছে গিয়ে রুয়েলের নিজেকে আটকানো একদম দুঃসাধ্য ছিলো।তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিলো সে।এদিকে জান্নাতের বুকের হৃদযন্ত্রটা উচ্চমাত্রায় ধড়ফড় করতে লাগলো,সারাদেহে বেগতিক হারে রক্ত ছুটছিলো।দুইজন দুইজনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।দুইজনের চাহনি দেখে বোঝা যাচ্ছে আজ তারা দুইজনই ভালোবাসার একদম কেন্দ্রবিন্দু তে পৌঁছতে চায়।
জান্নাত রুয়েলের এমন চাহনি দেখে লজ্জায় নিচ মুখ হলো।কিন্তু রুয়েল সবকিছু ভুলে গিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো জান্নাতকে।জান্নাত সাথে সাথে চোখ বুজে নিলো।এদিকে রুয়েল জান্নাতকে তার আরো কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
জান্নাত ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।সে তখন রুয়েলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু রুয়েল জান্নাতকে কোথাও যেতে দিলো না।আবার এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো জান্নাতকে।কোলে তুলে নিতেই জান্নাতের চুলের খোপা খুলে গেলো।চুলগুলো একদম মেঝে ছুয়ে ফেললো।এদিকে মাথায় গুজে দেওয়া গোলাপগুলো সব মেঝেতে পড়ে গেলো।রুয়েল তখন জান্নাতকে নিয়ে বিছানায় রাখলো।আর মেঝে থেকে ফুলগুলো কুঁড়িয়ে আনলো।
লাল টকটকে গোলাপগুলোর ঘ্রাণ নিয়ে সেগুলো জান্নাতের সামনে ধরে বললো, আমি কি আপনাকে একটু আদর করতে পারি জান্নাত?আপনাকে গভীরভাবে ভালোবাসার ইচ্ছা হচ্ছে আজ?
জান্নাত সেই কথা শুনে লজ্জায় অন্য মুখ হলো।সে বুঝতে পারছে না কি করে নিজের মুখে হ্যাঁ বলবে?
রুয়েল তখন বললো,জান্নাত উত্তর দিন।আপনি রাজি থাকলে তবেই আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে চাই।জান্নাত এবারও চুপ হয়ে রইলো।
রুয়েল তখন বললো, তার মানে আপনি এখনো আমাকে ভালোবাসতে পারেন নি?ওকে নো প্রবলেম।আপনাকে আমি আরো সময় দিচ্ছি।এই বলে রুয়েল কালকের মতো জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।তবে তার ভিতর টা একদম দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিলো।সে কিছুতেই আর তার মনের যন্ত্রনার কথা বললো না জান্নাতকে।সে জান্নাতকে তার বুকের সাথে পিষিয়ে নিলো।জান্নাত রুয়েলের এমন কাকুতি মিনতি দেখে আর কিছুতেই চুপ করে থাকতে পারলো না।সে নিজেও রুয়েলের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে।কিন্তু কি করে সেটা রুয়েলকে বলবে?এদিকে রুয়েল চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
জান্নাত তখন বললো, আপনি কি ঘুমালেন?
–না।
–আপনাকে আমার কিছু বলার ছিলো।
–জ্বি বলুন।
–আপনি কি আমাকে মন থেকে ভালোবাসেন?
–হ্যাঁ।অবশ্যই।আপনার কি আমার ভালোবাসা নিয়ে কোনো সন্দেহ হচ্ছে?
জান্নাত তখন রুয়েলকে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে বসলো।আর বললো,আপনি আমার স্বামী হন।আমার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার যেমন আপনার আছে।তেমনি আপনার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকারও আমার আছে।
রুয়েল সেই কথা শুনে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসতে চাই জান্নাত।অনেক বেশি ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখবো আপনাকে।কিন্তু আপনি সেটা কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো,এই কথাটা এর আগে আর কতজনকে বলেছেন?
রুয়েল জান্নাতের এমন প্রশ্ন শুনে বললো,কি বলছেন জান্নাত?আর কাউকে কেনো বলতে যাবো?
–তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমিই আপনার প্রথম ভালোবাসা?
–হ্যাঁ অবশ্যই।সারাজীবন তো টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতেই শেষ করে দিলাম নিজেকে।জীবনের ইয়ং কাল পার করেছি বিদেশে।আর বিদেশে নিশ্চয় বসে থাকি নি।সারাদিনরাত পরিশ্রম করেই আজ এতো সম্পদের মালিক হয়েছি।প্রেম ভালোবাসা করার সময় পেলাম কোথায়?আমার জীবনে এসব প্রেম ভালোবাসা আসে নি জান্নাত।তবে দেশে থাকলে প্রেম না করলেও অনেক আগে বিয়ে টা হয়তো করতাম।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে সুযোগ পেয়ে গেলো।সে তখন বললো,কেনো?তখন এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতেন কেনো?
রুয়েল তখন বললো, দেশে থাকতে তো আর রোজকার করি নি।বসে থেকে খেয়েছি।দিন রাত আড্ডা দিয়ে বেড়িয়েছি।অনেক কিছুই করেছি জান্নাত।তখন বিয়েও করতে চেয়েছি।কারণ বাবা যে টাকা পাঠাতো সেই টাকা দিয়ে বউ কে খাওয়াতে পারতাম।
কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পর যখন নিজে ইনকাম করা শুরু করলাম তখন বুঝলাম বাস্তবতা কি জিনিস?নিজের ইনকাম করা টাকা কিছুতেই অপব্যয় করতে পারি নি।একের পর এক চাহিদা বেড়ে গেলো আমার।জমি কিনলাম,তারপর মনে হলো এরপর বাড়ি করবো?তারপর ভাবলাম আরো কিছু সম্পদ করি।গাড়ি কিনলাম।বিয়ে যে করবো এই সময়ই আর পেলাম না।
জান্নাত তখন হাসতে হাসতে বললো,তাহলে দেশে থাকতে কি কি করেছেন বলা যাবে কি সেটা?
–বাবার হোটেলে খাওয়া ছেলেরা কি কি করে?সেসব করেছি।বাবা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাইতো,আর আমি আর ভাই বসে বসে খেতাম।অনেক উপভোগ করেছি জীবনটা।সেসব অতীত আর সামনে আনতে চাই না।এখন আমি বর্তমানে কেমন আছি,আর কি করছি সেটা জিজ্ঞেস করুন জান্নাত।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, আপনার ভাবি আমাকে কিছু গোপন কথা বলেছে।সেজন্য আপনাকে এতো জেরা করছি।
–কি গোপন কথা বলেছে?
–আমাকে বলতে নিষেধ করেছে।এজন্য বলতে পারছি না।সরি মাফ করবেন আমাকে।
রুয়েল তখন জান্নাতের হাত ধরে বললো, জান্নাত,আপনাকে আগেই বলেছি আমরা দুইজন এখন স্বামী স্ত্রী।সুতরাং আমাদের মধ্যে কোনো লুকোচুরি থাকা চলবে না।আপনি কখনোই অন্য মানুষের কথায় কান দিবেন না।কেউ কিছু বললে সবার প্রথম আমাকে জিজ্ঞেস করবেন।আমি কখনোই আপনাকে মিথ্যা কথা বলবো না।সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করবো।
জান্নাত তখন সব কথা বলে দিলো রুয়েলকে।রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে বললো,আমি জানি না ভাবি কেনো আপনাকে এসব কথা বলেছে?তবে আমি যদি এমন সত্যি হতাম তবুও ওনার আমার বিষয় টা গোপন রাখা উচিত ছিলো।যেহেতু আমি ওনার দেবর হই।আর আমি মাত্র বিয়ে করেছে।উনি কি করে একজন নতুন বউকে তার স্বামীর অতীত বলে এভাবে তার মন টা নষ্ট করে দিলো?নিশ্চয় ভাবি চাচ্ছে না আমরা দুইজন মিলেমিশে সংসার করি?
–তাহলে কি এসব কথা মিথ্যা?
–না।মিথ্যা না।আবার পুরাটা সত্যিও না।
–মানে বুঝলাম না।
রুয়েল তখন বললো একজন ক্লাস টেনের ছেলে প্রেম ভালোবাসার কি বোঝে?আর তারা বিয়ে, বউ,সংসার এসবেরই বা বোঝে কি?এই সময় টা খুব খারাপ জান্নাত।যাকে দেখে তাকেই ভালো লেগে যায়।রুহি নামের একটা মেয়ে আমাদের বাসায় কাজ করতো।সে আমার সমবয়সী ছিলো।আমার সাথে একই স্কুলে পড়তো।মেয়েটাকে আমার ভালো লেগে যায়।বলতে গেলে খুবই পছন্দ হয়েছিলো তাকে।কিন্তু আমি এসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করতাম না।সেজন্য আমার মাকে বলি মা,আমি রুহিকে বিয়ে করতে চাই।মা সাথে সাথে না করে দেয়।বলে এতো অল্প বয়সে কিসের বিয়ে?আগে নিজে ইনকাম করা শেখ।
আর ভাবি তো শুনতেই পারে নি।তিনি রাগ করে রুহিকে আর কাজে রাখেন নি।পরে ভাবি ওর বাবা মার সাহায্য নিয়ে রুহিকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়।যে মেয়েকে ভালো লাগতো তার যদি বিয়ে হয়ে যায় তার জন্য খারাপ লাগাটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার।
এদিকে জান্নাত রুয়েলের মুখে রুহির কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে একদম শেষ হয়ে গেলো।রুয়েল তখন জান্নাতকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,আপনি কাঁদবেন না জান্নাত।প্লিজ বিশ্বাস করুন আমাকে।ওই মেয়েকে আমি কখনোই টাচ করি নি।আর ওর বাড়িতেও যাই নি।ভাবি এসব মিথ্যা কথা বলেছে।কিন্তু ভাবি এসব কথা বলে কেনো আপনার মন টা ভেংগে দিয়েছে সত্যি বুঝতে পারছি না আমি।আপনি যদি প্রমাণ চান আমি অবশ্যই কালকে এ নিয়ে কথা বলবো ভাবির সাথে।
–না,না বলতে হবে না কিছু।আমার কোনো প্রমাণ চাই না।এই বলে জান্নাত আরো জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে লাগলো।
রুয়েল তখন বললো, একজন মেয়েকে ভালো লাগলে আর তাকে বিয়ে করতে চাইলেই কি ছেলেটা খারাপ হয়ে যায়?আর তখনকার বয়সটা ভাবুন। কাউকে ভালো লাগতেই পারে।কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি খারাপ ছেলে নই।আমি শুধু রুহিকে না,আর অন্য কোনো মেয়েকেও টাচ করি নি।বিশ্বাস করুন জান্নাত।
জান্নাত তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,শুধু এটাই না,আপনি যে নেশা করতেন সে কথা তো একবারও বললেন না।
রুয়েল তখন বললো, আপনি বলার সুযোগ দিলে তো বলবো।সেই থেকে শুধু বাচ্চাদের মতো কেঁদে চলছেন।এবার চোখের পানিটা দয়া করে মুছুন।আপনার চোখের পানি আমি আর দেখতে পাচ্ছি না।এই বলে রুয়েল নিজেই জান্নাতের চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।আর তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,জান্নাত আমি এখন কোনো নেশা করি না।তবে আগে বন্ধুদের দেখাদেখি কিছুদিন করেছি।কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পর সব নেশা ছেড়ে দিয়েছি।বিদেশে আমার ভাই সবসময় আমার সাথে সাথেই থাকতো।যখন যেখানে যাওয়ার দরকার ভাইয়া সাথে সাথেই থাকতো।তখন কি করে নেশা করবো বলুন তো?বিদেশ যাওয়ার পর সব ছেড়ে দিয়েছি। বিশ্বাস করুন।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে তার কান্না থামিয়ে দিলো।আর বললো,কিন্তু এখন তো আপনি একা একা থাকেন।আপনার ভাই তো থাকে না আর।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,ভাই নেই তো কি হয়েছে?ভাই এর বন্ধুবান্ধব আছে তো?আমার এক মামাতো ভাই আমার সাথে এক রুমেই থাকে।ওকে জিজ্ঞেস করে দেখুন আমি আর নেশা করি কিনা?বিশ্বাস করুন সব ছেড়ে দিয়েছি।আগে একটু একটু করতাম তো এজন্য সবাই ভাবে আমি এখনো নেশা করি?
জান্নাত তখন তার মাথায় রুয়েলের হাত রেখে বললো,সত্যি আর কোনো নেশা করেন না?
–না করি না।নেশা করা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি।শুধু মাঝেমধ্যে একটু সিগারেট টানি।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো,সিগারেট খাওয়াও বাদ দিতে হবে।সব নেশা জাতীয় জিনিস খাওয়া হারাম।
–ওকে চেষ্টা করবো।অনেক দিন ধরে খাই তো,একটু সময় লাগবে।
জান্নাত তখন বললো, না,কোনো সময় দিবো না আমি।আজ থেকেই কথা দিতে হবে।
রুয়েল তখন বললো, কি ছোটো বাচ্চাদের মতো আবদার করছেন বলুন তো?বললাম তো চেষ্টা করবো।যেখানে দিনে দুই তিন প্যাকেট খেতাম সেখানে না হয় এক প্যাকেট খেলাম?
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বললো,কি বলছেন এসব?এক দিনে দুই তিন প্যাকেট খেতেন।এই তো কিছুক্ষন আগেই বললেন অল্প একটু খান।
রুয়েল তখন বললো জান্নাত আপনি কি সারারাত আমার সাথে এভাবে ঝগড়া করবেন?কিছু কথা কালকের জন্য বাঁচিয়ে রাখুন।তা না হলে কাল আবার কি নিয়ে ঝগড়া করবেন?
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো,কথা ঘুরাচ্ছেন কেনো আপনি?আগে কথা দিন সিগারেট আর খাবেন না।তারপর আমি আর এ নিয়ে কখনো কথা বলবো না।
রুয়েল তখন জান্নাতের হাতে হাত রেখে বললো,ঠিক আছে।কথা দিলাম।শুধু মাঝেমধ্যে একটু খাবো।
–না,না।সেটা কখনোই হবে না।একবারেই অফ করে দিতে হবে।
রুয়েল তখন বললো, আচ্ছা,ট্রাই করবো।
হঠাৎ রুয়েলের ফোনে কল বেজে উঠলো।রুয়েল তার ফোনটা হাতে নিয়ে কল কেটে দিলো।জান্নাত তা দেখে বললো,কে কল দিয়েছে?আপনি ধরলেন না কেনো?
–না মানে এমনি?
–এমনি আবার কি?দেখি কে ফোন দিয়েছে?এই বলে জান্নাত রুয়েলের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।আর চেক করতে লাগলো।
জান্নাতের চোখ একদম কপালে উঠে গেলো।এতো রাতে একজন মেয়ে রুয়েলকে কি জন্য ফোন দিয়েছে?
জান্নাত তখন চোখ বড় বড় করে রুয়েলকে জিজ্ঞেস করলো,
রাইসা কে?
#চলবে,
#চলবে,