আলো আঁধারের খেলা পর্ব -২৩+২৪

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_২৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

দূর মিয়া কি বলো এসব?মাথা পাগল হইছে নাকি তোমার?তোমাদের দুই ভাই এর মিল মহব্বতের কথা পুরো এলাকার লোক জানে।সবাই বলে ভাই হলে রুবেল আর রুয়েলের মতো হও।কি সুন্দর মিল দুই ভাই এর।এমন ভাই এ ভাই এ মিল সত্যি আজকাল দেখা যায় না।মাথা গরম না করে সব মিটমাট করে নাও।আর একখানে থাকলে এমন দুই চার টা কথা এমনিতেই হয়।
রুয়েলের আত্নীয়স্বজন রা এভাবে বোঝাতে লাগলো রুয়েলকে।
এদিকে সব দোষ করেও রুবেল সাধু সেজে বসে থাকলো।আর ঊর্মি হলো ধার্মিক বউ।দুইটাই হলো নাটকবাজ।মুখে মধু আর অন্তরে বিষ।খুব সুন্দর করে মানুষ জন পটাতে পারে।যেভাবে তারা রুয়েলকে পটিয়ে সবকিছু আত্নসাৎ করেছে।আর এখন কি সুন্দর অভিনয় করছে মামা আর দুলাভাই এর সামনে। মামা আর দুলাভাই এর সামনে মায়া কান্না কেঁদে পটিয়ে নিলো তাদেরকে।সেজন্য মামা আর দুলাভাই ভাবলো সব দোষ রুয়েলেরই।আর রুবেল আর ঊর্মি নির্দোষ।সেজন্য মামা আর দুলাভাই রুয়েলকে বোঝাতে লাগলো।

কিন্তু রুয়েল বললো,না মামা!আমাকে আর বোঝাতে হবে না।যা বোঝার বুঝে গেছি আমি।আমি আর চাইছি না একসাথে থাকতে।

রুবেল সাথে সাথে তখন চিৎকার করে বললো, দেখছেন মামা!কত চেঞ্জ হয়েছে সে।এই কি সেই রুয়েল!দেখেন আপনারাই দেখেন।আলাদা হওয়ার জন্য কিভাবে উঠেপড়ে লাগছে।এখন আপনারাই বলুন আমার কি করা উচিত?

ঊর্মি ও রুবেলের সাথে সাথে গলা বাজিয়ে উঠলো,আমি কি আর সাধে চিল্লায়?ওদের দুইজনের কান্ডকারখানা দেখেই তো মুখ দিয়ে আমার কথা বের হয়।আলাদা হওয়ার জন্য আপনাদের পর্যন্ত বলেছে।কি দিনকাল আইলো ভাই।মুখোশধারী কিছু শয়তান মেয়ের জন্য এভাবে সংসারে ফাটল ধরে।জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে বললো ঊর্মি।অথচ জান্নাত এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলে নি।তবুও বার বার ঊর্মি জান্নাতের দিকে আংগুল তোলে।

রুবেল আবার বলতে লাগলো, জানেন দুলাভাই!আমাকে রুয়েল মারতেও এসেছিলো।ওর কতো বড় সাহস?আমাকে মারতে আসে।বলেন তো এখন!আমার মাথা টা কি করে ঠিক থাকে?

রুয়েল চুপচাপ থাকলো।সে একটি কথাও বললো না।কারণ সে আর কিছুতেই একখানে খাবে না।কারণ তার মন একদম বিগড়ে গেছে।তার ভাই যত কাহিনীই করুক না কেনো রুয়েলের মন আর গলাতে পারবে না।

রুয়েলের মামা তখন বললো, আচ্ছা সবাই এখন একটু চুপ করো।আমি যা সিদ্ধান্ত নেবো তোমাদের কিন্তু এখন সেটাই শুনতে হবে।আর সেভাবেই চলতে হবে।শুনবে আমার কথা।

রুয়েল তখন বললো,হ্যাঁ অবশ্যই মামা।আপনি হলেন গুরুজন। আশা করি বুঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

মামা তখন বললো, প্রথম পরামর্শ হলো এতোদিন যা যা হয়েছে সবকিছু ভুলে যাও। আর কখনোই ভুল করে আলাদা হওয়ার কথা বলবে না।দুইভাই মিলেমিশে থাকো।আমরা চাই না তোমরা আলাদা হও।কারণ বাহিরের লোকজন খারাপ বলবে।তোমরা দয়া করে বাহিরের মানুষের হাসির পাত্র হও না।এভাবে একটা সুখের সংসারে আমরা কিছুতেই ফাটল ধরতে দিবো না।আমরা আজ তাহলে আসি।

রুয়েল তখন বললো,না মামা।আপনারা আগেই যাবেন না।আমি বলেছি তো আর হবে না আমাদের একসাথে থাকা।যে হাঁড়ি ভেংগে যায় তা আর কখনো জোড়া লাগে না।ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের সংসার ইতোমধ্যে ভেংগেই গেছে।এটা আর জোড়া লাগানো সম্ভব না।আমি আর পারছি না।আমার সহ্যের সীমা ছেড়ে গেছে।আপনারা এখনো আসল কাহিনী জানেন না।সংসারে যা শুরু হইছে সেখানে একটা সুস্থ মানুষ কিছুতেই থাকতে পারে না।

রুবেল সেই কথা শুনে বললো, তোকে কে বারণ করছে? যা আলাদা হ।কেউ কি তোকে ধরে আছে?যা এখনি এবং আজ থেকে আলাদা হয়ে যা।

রুয়েল তখন বললো,তাহলে আমার সবকিছু বুঝিয়ে দাও।আমার বিল্ডিং জমি জমা,আর গাড়ি আমাকে দিয়ে দাও।ব্যাংকে আমার কত টাকা আছে তার হিসাব দাও আগে।

–টাকা?কিসের টাকা?ব্যাংকে কোনো টাকা নাই তোর।তুই ব্যাংক চেক করে দেখ গিয়ে।একটা টাকাও নাই।এই বলে রুবেল ঊর্মির দিকে তাকালো।ঊর্মি তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো,তুই টাকা পাঠালে তো টাকা থাকবে ব্যাংকে?তুই কোনো টাকাই পাঠাস নি।

রুবেল আর ঊর্মির কথা শুনে রুয়েলের মাথা যেনো আরো বেশি হিট হয়ে গেলো।সে তবুও স্বাভাবিক ভাবেই বললো,টাকা পাঠাই নি মানে?তাহলে বিদেশ থেকে আমি মাসে মাসে কাকে টাকা দিতাম?

–সেটা তুই ভালো জানিস।তোর টাকা কাকে দিয়েছিস সেটা আমরা কি করে জানবো?এই বলে রুবেল তার মামাকে বললো,মামা শোনেন!আজ আমি একটা সত্য কথা বলছি।রুয়েল আগে ভালোই টাকা পাঠাতো।আর সেই টাকা দিয়ে গ্রামে কিছু জমি নিয়েছি।কিন্তু তারপর যে কাকে টাকা দিয়েছে সেটা আমার জানা নাই।এই বিল্ডিং কিন্তু আমার টাকাই বানিয়েছি।এতে ওর একটা টাকাও ছিলো না।তবুও দয়া করে ওর নাম বসিয়েছি।আর আজ সেই বিল্ডিং এর ভাগ চাইতে আসছে।কত বড় বেঈমান ভাবতে পারছেন?

রুয়েল এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।সে রাগ দেখিয়ে চিৎকার করে বললো,ভাইয়া আল্লাহকে একটু ভয় করেন।দয়া করে এভাবে মিথ্যা কথা বলবেন না।আল্লাহ কিন্তু সব দেখছে।কেনো এভাবে ঠকাচ্ছেন আমাকে?আমার কষ্ট করা উপার্জনের টাকায় কিন্তু বিল্ডিং দুইটা তৈরি হইছে।আপনি তো অনেক আগেই বিদেশ থেকে চলে এসেছেন।আপনি টাকা পেলেন কই?

রুবেল একদম রুয়েলের মুখের কাছে চলে গেলো আর আংগুল দেখিয়ে বললো,এই বেঈমান!আমাকে আল্লাহর ভয় দেখাচ্ছিস?তুই আগে ভয় কর আল্লাহকে।আগে বল আমি যদি তোকে না নিয়ে যেতাম বিদেশ তুই কি যেতে পারতিছ সেখানে?বিদেশ নিয়ে গেছি দেখেই তো টাকার মুখ দেখেছিস।

রুয়েল তখন বললো, সেই টাকা তো আপনারাই খেয়েছেন।আমার কি কোনো বউ বাচ্চা ছিলো?যে তারা ভোগ করছে আমার টাকা?আপনার বউ বাচ্চা তারাই তো খেয়েছে আমার কামাই।আমি যা ইনকাম করছি সব আপনাদেরই পাঠায়ছি।আপনারা সবাই বসে থেকে খেয়েছেন।

–বেঈমান!তুই যে এমন মুনাফিক হবি আমার তা জানা ছিলো না।যা আজ থেকে তুই এই বাসাতেও থাকতে পারবি না।বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে।তোকে কোনো কিছুর ভাগ দিবো না আমি।দেখি তুই কিভাবে এসবের ভাগ পাস?

–আপনি বললেই হলো নাকি?মগের মুল্লুক পাইছেন?সব কিছু জোর করে আদায় করা যায় না কিন্তু।আমি আমার অধিকার ঠিক আদায় করে নেবো।

রুবেল এই কথা শোনামাত্র রুয়েলকে আবার মারতে এলো। আর মামা দুলাভাই এর সামনেই রুয়েলকে চড় মারতে লাগলো।রুয়েল এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।কারণ বার বার এভাবে চড় খেতে খেতে তার শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেলো।তখন সেও রাগ করে তার ভাইকে ধাক্কা দিয়ে বললো,বার বার বলেছি আমার গায়ে হাত তুলবেন না।আমি কিন্তু আর ছোট নই।তবুও কেনো আমাকে এভাবে মারেন?

মামা তখন দৌঁড়ে এসে রুবেলকে তুললো,আর দুলাভাই রুয়েলকে বললো, রুয়েল কি হচ্ছে এসব?তুমি তোমার ভাইকে ধাক্কা দিলে?

রুয়েল তখন বললো, আমি আগে হাত তুলেছি?উনিই তো আমাকে আগে মারলেন। আজকাল আমাকে কথায় কথায় মারছেন।যখন তখন মারছেন।এর বিচার কে করবে?

–উনি মারতেই পারে।কারণ উনি তোমার বড় ভাই হয়।তুমি আসলেই বেয়াদব হয়ে গেছো।ছিঃ রুয়েল তোমার দ্বারা এই কাজ আমরা আশা করি নি।

এদিকে ঊর্মি হাউমাউ করে কাঁদছে।ও আল্লাহ এই দিন দেখার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছো।ছোট ভাই এর হাতে বড় ভাই মার খায়।কি জামানা আইলো।

রুয়েলের মা এবার কথা বলে উঠলো।তিনি এতোক্ষণ চুপচাপ ছিলেন।তিনি তার ভাইকে বললেন,

ভাই শোন!আমি কারো দোষ দিতে চাই না।আমি এই কয়দিনে যা বোঝার বুঝে গেছি।তোরা আর এদের দুইজনকে বোঝাস না।আমার মনে হয় এদের কে আলাদা করাই ভালো হবে।তা না হলে খুব খারাপ কিছু ঘটতে পারে।তোরা আজ এসে ভালোই করেছিস।এদের দুইজনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলাদা করে দে।

রুয়েলের মায়ের কথা শুনে ঊর্মি গলা বাজিয়ে উঠলো, আর বললো,আপনি এটা বলতে পারলেন?আপনার রুয়েল চোখের সামনেই রুবেল কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো তারপরেও ওকে কিছু বললেন না?ছেলের হয়ে ওকালতি করতে আসছেন?ওকে আলাদা করে দেওয়ার আইডিয়া টা কি তাহলে আপনারই?

–ঊর্মি চুপ করো থাকো।খুব মুখ ফুটেছে আজকাল তোমার।যা নয় তাই বলো।আর আলাদা হওয়ার কথাতো তুমিই প্রথম বলেছো।জান্নাত আর রুয়েল একবারও বলে নি।সংসারের মধ্যে অশান্তি তুমিই কিন্তু শুরু করেছো?

–ও মোর আল্লাহ!কি বলে ইনি।এতোদিন তাহলে কি আমরা দুধ দিয়ে কালসাপ পুষেছি। যার এতোদিন খেলো তার সাথেই বেঈমানি করছে।এই বলে ঊর্মি মায়া কান্না জুড়ে দিলো।

রুয়েল তখন বললো মুখ সামলিয়ে কথা বলো ভাবি।উনি আমার মা হয়।মায়ের সাথে ভালো করে কথা বলো।আর তুমি কি বললে তোমার টা খেয়েছে মা?তুমি টাকা কই পেলে?বরং তুমিই ওনার ছেলের ইনকাম বসে বসে খাচ্ছো।

ঊর্মি তখন রুবেলের কাছে গিয়ে বললো,তুমি কিছু বলছো না কেনো?তোমার ভাই যে আমাকে যা নয় তাই বলছে তুমি তবুও চুপ করে থাকবে?সবার সামনে আমাকে কিভাবে অপমান করছে?

রুবেল ঊর্মির প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে তখন তার মামার কাছে গিয়ে বললো,মামা ডিসিশন ফাইনাল করলাম আমি।আমি নিজেও আর একসাথে থাকতে চাই না।ওকে আলাদা করেই দিতে চাই।তবে রুয়েল বিল্ডিং এ থাকতে পারবে না।ওকে গ্রামে গিয়ে আলাদা থাকতে হবে।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, ভাই আপনি কিন্তু আবার ঝগড়ার সৃষ্টি করছেন।সারাবছর কষ্ট করে ইনকাম করলাম,আর বাড়ি তৈরি করলাম।তাতে আমি থাকতে পারবো না?

–শোন আগে পুরো কথা।আমি তো বলছি না থাকতে পারবি না।থাকবি, অবশ্যই থাকবি।তবে দুই মাস পরে। কারণ কোনো ফ্লাট খালি নাই এখন।আর সবাই দুইমাসের অগ্রিম ভাড়া দিয়ে উঠেছে।সেজন্য বিল্ডিং এ থাকতে হলে দুইমাস অপেক্ষা করতে হবে।

রুয়েল তার ভাই এর কথা শুনে আর কিছু বললো না।কারন সে কিছু বললেই ঝগড়া হয়ে যায়।রুয়েল ভাবলো,দুইমাসের ই তো ব্যাপার।তারপর তো সে তার বিল্ডিং পেয়েই যাবে।তবে সে সিদ্ধান্ত নিলো গ্রামে গিয়ে থাকবে না।কারণ গ্রামে গিয়ে থাকলে পরে যদি রুবেল আর বিল্ডিং না দিতে চায়?সেজন্য এখানে থেকেই তাকে তার বিল্ডিং দখল করতে হবে।
এইভাবে সবাই আবার একসাথে থাকা শুরু করলো।তবে সেটা শুধুমাত্র দুইমাসের জন্য।দুইমাস পরেই রুবেল রুয়েলের ভাগ বুঝে দেবে সবার সামনে সেটাই কথা দিলো।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂

ইদানীং ঊর্মি অনেক ভালো হয়ে গেছে।সে আর অযথাই চিল্লাচিল্লি করে না।সবার সাথে ভালো করেই কথা বলে।সেজন্য রুবেল ও আর সংসারে অশান্তির সৃষ্টি করে না।
রুয়েল তার ভাই ভাবীর এতো পরিবর্তন দেখে ভীষণ খুশি হলো।সে ভাবলো জমিজমা ভাগ হওয়ার কথা শুনে হয়তো তারা ভালো হয়ে গেছে।এইভাবে মিলেমিশে প্রথম থেকে থাকলে তো আর কোনো অশান্তিই হতো না সংসারে।রুবেল নিজের মুখে রুয়েলকে দোকানেও বসতে বললো।রুবেলের ব্যবহার দেখে মনে হলো এতোদিন কিছুই হয় নি তাদের সাথে।

আজ জান্নাতের এস,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো।জান্নাত তার স্কুলের মধ্যে একাই এ প্লাস পেয়ে পাস করেছে।জান্নাতের থেকে রুয়েল বেশি খুশি হলো।খুশিতে সে সারা এলাকা মিষ্টি বিতরণ করে বেড়ালো।আর এই মিষ্টি কিনে এনেছে রুবেল নিজেই।

এদিকে ঊর্মি বাসায় হরেক রকমের খাবার রান্না করলো আজ।জান্নাতের ফ্যামিলির সবাইকে তাদের বাসায় ইনভাইট করেছে।জান্নাতের বাবা মা দাদী তো একদম খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছে।জান্নাত নিজেও বেশ খুশি আজ।
রুবেল তখন সবার সামনে রুয়েলকে বললো,জান্নাতকে এখন ভালো একটা কলেজ এ ভর্তি করে দে।ও যখন মেধাবী স্টুডেন্ট তাহলে কেনো সে পড়াশোনা বাদ দেবে।সংসারের পাশাপাশি পড়ালেখা টাও চালিয়ে যাবে সে।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ অবশ্যই।আমিও চাই জান্নাত কলেজে পড়ুক।জান্নাত নিজেও অনেকদূর পর্যন্ত পড়তে চায়।তার ভীষণ ইচ্ছা পড়ালেখা করার।সে তার ইচ্ছার কথা আমাকে বলেছে।রুয়েল জান্নাতকে কথা দিয়েছে সে যতদূর মন চায় পড়তে পারবে।

জান্নাত তার কলেজে পড়ার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো।কারণ সে তো এটাই চায়।তার স্বামীর বাড়ির সবাই যে তাকে এভাবে সাপোর্ট করবে সত্যি সে ভাবতে পারে নি।আর ঊর্মি আর রুবেলের পরিবর্তন দেখে সত্যি সবাই তাজ্জব লেগে গেলো।তবে রুয়েলের মা কিছুতেই এটা বিশ্বাস করতে পারলেন না।এটা কি করে সম্ভব?
ঊর্মি আর রুবেল হঠাৎ এতো ভালো হলো কেমনে?

এদিকে জান্নাতের বাবা যখন জান্নাতের স্কুলের স্যারদের মিষ্টি দিতে গেলেন তখন জান্নাতের স্যার ম্যাডামরা জান্নাতের বিয়ের কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলেন।তিনি জহির সাহেব কে বললেন,আপনারা মস্ত বড় এক ভুল করেছেন।এতো তাড়াতাড়ি কেনো বিয়ে দিয়েছেন জান্নাতের?

জহির সাহেব তখন বললো, স্যার আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ। অতোদূর পড়ার সামর্থ আমাদের নেই।তাছাড়া ভালো ঘর পেয়ে কি করে হাতছাড়া করি?তবে আমার জামাই আর জামাই এর ফ্যামিলির লোকজন কিন্তু জান্নাতকে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেবেন।তারা তাকে পড়াতে চায়।

–ও তাই নাকি?তাহলে তো ভালোই।আমরা ভেবেছি জান্নাত মনে হয় আর পড়বে না।

আজ রুয়েল জান্নাতের সাথে স্পেশাল ভাবে সময় কাটাতে চায়।কারণ বিয়ের পর থেকে জান্নাত ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে আছে।সংসারের এসব ঝামেলার কারণে জান্নাতকে নিয়ে সে কোথাও যেতে পারে নি।সেজন্য রুয়েল ঠিক করলো জান্নাত কে নিয়ে সে বেড়াতে যাবে।আজ সারাদিন ঘুরে বেড়াবে।তারপর ওই পাশ দিয়েই আজকেই তার শশুড় বাড়ি যাবে।তারপর সেখানে গিয়ে কিছুদিন থাকবে।তাহলে জান্নাতের মন টা অনেক ভালো হয়ে যাবে।সে সংসারের এসব অশান্তির কথা ভুলে যাবে।তাছাড়া কলেজ শুরু হলে তো আর জান্নাত বাবার বাড়ি যেতে পারবে না।#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_২৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আজ সারাদিন রুয়েল জান্নাতের সাথে ছিলো।দিনটা বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করলো তারা।জান্নাত তো সেই খুশি।তাছাড়া এ কয় দিন যে অশান্তি শুরু হইছিলো জান্নাত ভাবতেই পারে নি এতো সহজে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।এতোদিন বাদে মনে হলো আসলেই জীবন টা সুন্দর। রুয়েলের সাথে বিয়ে হয়ে সত্যি তার জীবন টা পালটে গেছে।আজ তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,আপনার স্ত্রী হতে পেরে নিজেকে আমি ধন্য মনে করছি। আপনি আমার জীবনের দেখা সেরা একজন পুরুষ।এটাই একমাত্র সত্যি যে, আপনি আমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সবকিছু করতে পারেন।এতোদিন জান্নাতের মনে হয়েছে বিয়ে করে তার জীবন টা একদম শেষ হয়ে গেছে।তার বাবা মা কিভাবে এই ভুল কাজটা করতে পারলো?তবে রুয়েল যখন তার সাথে হাসিমুখে কথা বলে,আদরে ভালোবাসায় তার জীবন টা ভরিয়ে তোলে সে নিজেকে পৃথিবীর সেরা ভাগ্যবান স্ত্রী মনে করে।রুয়েল সবসময় জান্নাত কে একটা কথাই বলে,

❝জান্নাত!আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে দামী উপহার।আপনার রুপে আমি বরাবরি মুগ্ধ।আর আপনার গুনে আমি বিস্মিত হয়।আপনাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।তবে আমার অজান্তে বা আমার ফ্যামিলির কারো ব্যবহারে আপনি যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।কারণ আপনার কষ্ট আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারি না।ইচ্ছে করে পৃথিবীর সমস্ত সুখ আপনার হাতের মুঠোয় এনে দেই।কিন্তু ভাগ্যের খেলায় আজ আমি আপনাকে মনের মতো করে কিছু দিতে পারছি না।তবুও আমার সামর্থ অনুযায়ী দেওয়ার চেষ্টা করবো।আপনাকে খুশি রাখায় আমার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।আপনি শুধু আমার পাশে থেকে আমাকে সাহস যোগাবেন।যা কিছু হয়ে যাক না কেনো আপনি কখনোই আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ।আমি আপনাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না।কারণ আপনি আমার জীবনের একমাত্র শান্তি।আপনার মুখের হাসি দেখলে আমি সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যাই❞

ঘুরতে ঘুরতে একদম সন্ধ্যা হয়ে গেলো।এবার তাদের ফেরার সময় হয়ে গেছে।সেজন্য রুয়েল জান্নাতকে নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হলো।তারা কয়েকদিন জান্নাতদের বাড়িতে থাকবে।রুয়েল একদম জান্নাতের গ্রামের কাছাকাছি চলে এলো।কিন্তু হঠাৎ রুয়েলের গাড়িটা একদম খাদে পড়ে গেলো।তারপর কি হলো তাদের কিছু মনে করতে পারে না তারা।চারদিকে একদম হই পরে গেলো।যেহেতু সন্ধ্যার টাইম ছিলো সেজন্য মুহুর্তের মধ্যে লোকজন এসে জমা হলো।আর তাড়াতাড়ি করে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলো।রুয়েল আর জান্নাতের এমন খারাপ অবস্থা দেখে সবাই ভেবেছে তারা মারাই গিয়েছে।কারণ অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিলো তাদের।কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে তারা প্রাণ ভিক্ষা পায়।তবে তাদের ক্ষত গুলো অনেক গভীর ছিলো।যা সারতে অনেক সময় লাগবে।রুয়েলের মাথায় আঘাত লেগেছে বেশি আর জান্নাতের একটা হাতের অবস্থা খুব খারাপ।

রুয়েল আর জান্নাত যখন চোখ মেলে তাকালো তারা তাদের কে হাসপাতালের বেডে দেখতে পেলো।জান্নাতের পাশে তার মা বাবা দাদী জাহান সবাই বসে আছে আর কাঁদছে।
অন্যদিকে রুয়েলের পাশে রুয়েলের মা, ভাই আর ভাবি বসে আছে।দুইজন দুই কক্ষে আছে।সেজন্য জান্নাতের জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে সে রুয়েলের কথা জিজ্ঞেস করে, সে কেমন আছে জানতে চায়।অন্যদিকে রুয়েল ও চোখ মেলে তাকাতেই জান্নাত জান্নাত বলে চিৎকার করতে থাকে।সবাই বলছে জান্নাত ভালো আছে তবুও রুয়েলের বিশ্বাস হচ্ছে না।সে ওঠার চেষ্টা করলো। তখন রুবেল ভিডিও কলের মাধ্যমে জান্নাতকে দেখালো,তখন দিয়ে রুয়েলের বিশ্বাস হলো।রুয়েল জান্নাত কে সুস্থ অবস্থায় দেখে আল্লাহর কাছে মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলো।আল্লাহ যে তাকে তার জান্নাতকে ফিরে দিয়েছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে?সে তো ভেবেছিলো আর কখনোই তাদের আর দেখা হবে না।
ঊর্মি জান্নাতকে নিয়ে এতো চিন্তা করা দেখে বললো, ভাই এবার নিজের কথা একটু ভাবো।তোমার শরীর কিন্তু মোটেও সুস্থ নেই।যে হারে রক্ত পড়েছে বাঁচার কথাই ছিলো না।

–সব আল্লাহর ইচ্ছা।আল্লাহ না চাইলে কেউ মারা যেতে পারে না।

অন্যদিকে রুয়েলের মা শুধু কাঁদছে আর বলছে,সাবধানে একটু গাড়ি চালাতে পারিস না?কোন দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাস?
রুয়েল তখন তার মায়ের হাত ধরে বললো, মা ঠিক আছি তো আমি।আর আমি ঠিক ভাবেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম।কিন্তু হঠাৎ পিছন দিক থেকে একটা গাড়ি আমাকে ধাক্কা দেয়।সত্যি আমি বুঝতে পারি নি কিভাবে এটা হলো?
রুবেল সেই কথা শুনে বললো, কিন্তু অন্য কোনো গাড়ী তো ছিলো না সেখানে।শুধু আমাদের গাড়িটাই একদম ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে।
—বুঝতে পারলাম না ভাইয়া।তবে আমি সিওর যে অন্য আরেকটা গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে আমাদের গাড়িটাকে।

জান্নাত অসুস্থ দেখে তার মা বাবা আর তাকে শশুড় বাড়ি পাঠাতে চাইলো না।তাকে নিয়ে তাদের বাড়ি চলে যেতে চাইলো।কারণ এই মুহুর্তে জান্নাতের রেস্টের প্র‍য়োজন।অন্যদিকে রুয়েল ও অসুস্থ।সে তো আর জান্নাতের সেবা করতে পারবে না।কিন্তু রুয়েল জান্নাতের পরিবারের এমন সিদ্ধান্তে রাজি হলো না।সে বললো,জান্নাত আমাদের বাসাতেই থাকবে।তবে দাদী আর জাহান জান্নাতের কাছে থাকতে পারে যতদিন না সে সুস্থ হয়।জান্নাতের মা বাবা সেজন্য জাহান আর দাদীকে পাঠালো জান্নাতের সাথে।

রুয়েলের মাথায় সেলাই দেওয়ার কারনে তার পুরো মাথা ন্যাড়া করতে হয়েছে।তবে শরীরের ক্ষতগুলো কিছুটা শুকিয়ে গেছে।কিন্তু জান্নাতের হাতের ব্যান্ডেজ এখনো খোলা হয় নি।কারণ তার হাতে মারাত্মক রকমের চোট লেগেছে।দাদী আর জাহান জান্নাতের ভালোভাবেই দেখাশোনা করতে লাগলো। জাহান ঊর্মিকে কাজে সাহায্য করতে চাইলে ঊর্মি তাকে নিষেধ করে দেয়।ঊর্মি বলে তোমরা আমাদের গেস্ট হও,রান্না বান্না এগুলো কিছু করতে হবে না।আমি একাই পারবো।তোমরা শুধু জান্নাতের দেখাশোনা করো।

জাহান আর দাদী ঊর্মির কথা শুনে খুব খুশি হলো।তারা মনে মনে ভাবলো জান্নাত আসলেই অনেক সুখী।কারণ তার পরিবারের প্রতিটা মানুষ ই তাকে আদর করে।বিশেষ করে ঊর্মির ব্যবহারে সত্যি তারা মুগ্ধ হয়েছে।এদিকে রুবেল জান্নাত আর রুয়েলের জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস এনে দিতে লাগলো।যাতে জান্নাত আর রুয়েলের কোনো অসুবিধা না হয়।রুয়েলের পরিবারের সবার এমন ভালো ব্যবহার দেখে দাদী ফোন করে জহির কেও বললো সব।জান্নাতের মা এসব শুনে যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।যাক জান্নাতকে নিয়ে তাদের সব টেনশন দূর হলো।তারা ভীষণ টেনশন করতেন জান্নাতকে নিয়ে।

প্রায় একমাসের মতো দাদী আর জাহান রুয়েলদের বাসায় থাকলো।এখন মোটামুটি দুইজনই সুস্থ হয়েছে।তবে জান্নাতের হাতের ব্যাথাটা এখনো পুরোপুরি ঠিক হয় নি।জান্নাত তার দাদীকে আরো কিছুদিন থাকতে বললো,কিন্তু দাদী রাজি হলো না।দাদী বললো অনেক দিনই তো থাকলাম,আর নয়।অন্য আরেকদিন আবার আসবো।
রুয়েল সেজন্য দাদী আর জাহানকে নিজে গিয়ে রেখে আসলো।রুয়েল তখন ভাবলো গ্রামে যখন এসেছিই একবার গ্রামের জমিজমা গুলো দেখে আসি।এজন্য রুয়েল তাদের গ্রামের জমিজমা পরিদর্ষনে বের হলো।

কিন্তু রুয়েল সেখানে গিয়ে শুনলো,তার ভাই রুবেল তাদের সমস্ত জমি বন্ধক রেখেছে।রুয়েল তখন বললো, কি বলছেন এসব?ভাই কেনো এসব জমিজমা বন্ধক রাখতে যাবে?
রুয়েল সাথে সাথে রুবেল কে ফোন দিলো আর জিজ্ঞেস করলো,ভাই এসব কি শুনছি?আপনি নাকি আমাদের সমস্ত জমি বন্ধক রেখেছেন।

–হ্যাঁ রেখেছি।কারণ আমার কাছে কোনো জমানো টাকা নেই।তোর আর জান্নাতের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো।এই কম সময়ে এতো টাকা কই পেতাম?সেজন্য জমিগুলোই বন্ধক রেখেছি।

–তাই বলে এতো টাকা?আমাদের চিকিৎসা করাতে এতো টাকা লাগছে?

–তো?কি মনে হচ্ছে তোর?আমি কি মিথ্যা কথা বলছি?

–না,না।মিথ্যা কথা বলবেন কেনো?

–হ্যাঁ সেটাই তো।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো,টাকা গেলে টাকা পাওয়া যাবে,কিন্তু কেউ মারা গেলে তাকে আর ফেরত আনা সম্ভব না।তোরা যে সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছিস এটাই অনেক।

রুয়েল ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলো।কারণ এতোগুলো টাকা কবে তারা পরিশোধ করবে আর কবে এসব জমিজমা হাতে পাবে।রুয়েল মন খারাপ নিয়ে তাদের বাসায় প্রবেশ করলো।

জান্নাত বুঝতে পারলো আবার কিছু একটা হয়েছে।তা না হলে রুয়েল এতো গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে কেনো?জান্নাত তখন রুয়েলের কাছে গিয়ে বললো, কি হয়েছে আপনার?আপনার মুখখানা এতো মলিন কেনো?
রুয়েল জান্নাতকে জমি বন্ধক রাখার কথা টা জানালো না।কারণ জান্নাত শুনলে ভীষণ মন খারাপ করবে।সে ভাববে তার জন্য রুয়েল দের জমিজমা বন্ধক রাখতে হয়েছে।রুয়েল তখন জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বললো,কিছুই হয় নি জান্নাত।আমি শুধু ভাবছি কবে আপনার হাত টা পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে।আমি ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছি।
জান্নাত তখন বললো,আপনি অযথায় চিন্তা করছেন আমাকে নিয়ে। আমি তো এখন একদম পুরোপুরি সুস্থ আছি।

এইভাবেই সবকিছু চলছিলো।জান্নাতের হাত টা ভালো হলো।রুয়েলের মাথার সেলাই খুলে ফেলা হলো।জান্নাতকে রুয়েল কলেজেও ভর্তি করে দিলো।রুয়েল প্রতিদিন দোকানে যাওয়ার সময় জান্নাতকে কলেজে রেখে আসে।জান্নাত যেহেতু পড়াশোনা করছে সেজন্য ঊর্মি আর রুবেল বাসায় নতুন আরেকজন কাজের মেয়ে এনেছে।খুবই ভালোভাবেই দিন যাচ্ছিলো তাদের।যাকে বলে সুখের সংসার।যে সংসারে কোনো দুঃখ ছিলো না।সুখের সাগরে ডুবে থেকে জান্নাত আর রুয়েল ভুলেই গেলো যে তাদের ভাই আর ভাবি একসময় তাদের সাথে কত অত্যাচার করেছে?এতো তাড়াতাড়ি কি করে তারা ভালো হলো একবারের জন্যও ভাবে নি রুয়েল।সে ভেবেছে হয় তো সত্যি তার ভাই ভাবি পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছে।

হঠাৎ একদিন গভীর রাতে ঊর্মির কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো।ঊর্মি গলা ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে করে চিৎকার করছে।রুয়েল আর জান্নাত তখন গভীর নিদ্রায় ছিলো।ঠিক তখনি রুয়েলের মা রুয়েলকে ডাকতে লাগলো।বাবা রুয়েল!তাড়াতাড়ি ওঠ।রুবেল মনে হয় আর বাঁচবে না।

রুয়েল সেই কথা শুনে এক লাফে বিছানা থেকে উঠলো।সে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দেখে তার মা কাঁদছে আর বলছে, রুবেল কে বাঁচা বাবা।রুবেল কে বাঁচা।

রুয়েল এক দৌঁড়ে তার ভাই এর রুমে চলে গেলো।গিয়ে দেখে রুবেলের মাথা টা একদম ক্ষত বিক্ষত।রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর।রুবেলের শরীর টা একদম নেতিয়ে পড়েছে।তবুও রুবেল কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো রুয়েলকে।কিন্তু তার আগেই চোখ বন্ধ করে ফেলে সে।

ঊর্মি তখন চিৎকার করে বলে, রুবেল কথা বলো,কথা বলো।কি হলো তোমার?এই বলে ঊর্মি রুবেলের মাথা টা তার বুকের সাথে নিয়ে কাঁদতে থাকে।রুয়েল একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।এমন মৃত্যু সে জীবনেও দেখে নি।চোখের সামনে তার ভাই এর লাশ পড়ে আছে।এই কিছুদিন আগেই যে রক্তের গরমে তার উপর কত অত্যাচার করেছে আজ সে চুপচাপ শুয়ে শুয়ে আছে।ঊর্মি কাঁদছে আর বলছে ভাগ্যিস আজ বাচ্চারা কেউ ছিলো না,তা না হলে আমার বাচ্চারাও শেষ হয়ে যেতো।কি হতো তখন আমার?আমি কিভাবে বেঁচে থাকতাম তখন?আমিও তো শেষ হয়ে যেতাম যদি না আমি ওয়াশরুমে থাকতাম!

মাথার উপর ফ্যান ছিড়ে পড়েছিলো রুবেলের।সেজন্য রুয়েলের মাথা একদম ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।যার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।হিয়া আর হৃদয় নানার বাড়ি গিয়েছে বেড়াতে।আর ঊর্মি ছিলো ওয়াশরুমে।তবে সবাই বেশ অবাক হলো,এটা কি করে সম্ভব!ফ্যান মাথায় পড়লেই কি করে কেউ মারা যেতে পারে।বেশি হলে মাথা ফেটে যেতো বা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলে যেতে পারতো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেলো।সবাই শেষবারের মতো দেখতে আসলো রুবেলকে।রুয়েলের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার ভাই মারা গিয়েছে।রুয়েলের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।সে মনে মনে বললো,ভাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।আপনাকে অনেক দুঃখ দিয়েছি আমি।ক্ষমা নেওয়ারও সুযোগ দিলেন না আপনি।রুয়েলের শুধু বার বার সেদিনের কথা মনে হলো।যেদিন সে রাগ করে তার ভাইকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো।
জান্নাত নিজেও আফসোস করতে লাগলো।যতই তিনি তাদের উপর অত্যাচার করুক না কেনো মৃত্যুর আগে খুব ভালো ব্যবহার করেছিলো।তাদের ভালোভাবে দেখাশোনাও করেছিলো।

পরের দিন যোহর নামাযের পর রুবেলের মাটি হলো।পুরো এলাকার লোক ভেংগে এসেছিলো রুবেল কে দেখতে।কেউ রুবেলের মৃত্যু টাকে মেনে নিতে পারছিলো না।সবাই ছেলেটার জন্য আফসোস করতে লাগলো।সবাই শুধু বলতে লাগলো,আহা রে! ছেলেটা অনেক ভালো ছিলো।এতো কম বয়সে মারা গেলো!

রুবেলের এমন নির্মম মৃত্যু কেউ মেনে নিতে না পারলেও এটাই সত্যি যে সে তার পাপের শাস্তি পেয়েছে।সে ঊর্মির কথা শুনে এতোটাই নিচে নেমেছে যে মা ভাই এর সাথে খুবই বাজে ব্যবহার করেছে।সে আরো এমন একটা জঘন্য কাজ করেছে যে রুয়েলের পুরো ক্যারিয়ার টাই একদম শেষ। রুবেল ঊর্মির কথামতো রুয়েলের সমস্ত সম্পত্তি লিখে নিয়েছে।যার কারণে সে এতোদিন এতো ভালো ব্যবহার করেছে রুয়েলের সাথে।আর রুয়েলের গাড়ি কে ধাক্কা দিয়েছে রুবেলের ভাড়া করা লোকের গাড়ি।সে প্রথমে ঠিক করলো রুয়েলকে একেবারে শেষ করে ফেলবে।তারপর পুরো সম্পত্তি একাই ভোগ করবে।কিন্তু যখন দেখলো রুয়েলের কিছুই হলো না,সে বেঁচে ফিরলো, তখন সে জমি বন্ধক রাখার নাম করে সমস্ত পেপারে রুয়েলের সিগনেচার নিয়ে নেয়।এখন বর্তমানে রুয়েলের নামে শুধু তার বাবার রেখে যাওয়া গ্রামের বাড়ি, আর দুই একটা জমিজমা আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে রুবেলের মৃত্যু কি সত্যি আকস্মিকভাবে হয়েছে?না তাকেও পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে?

ঊর্মির মতো মুখোশধারী স্বামী ভক্ত মেয়ের অভাব নেই দুনিয়ায়।তাদের মুখে এতো মধু যে, যে কেউ সহজেই পটে যেতে পারে।আর রুবেলের মতো কাপুরষ স্বামীরা ভাবে তাদের বউ তাদের কত ভালোবাসে?কিন্তু তাদের বউ যে তাদের কতদূর নিচে নামিয়ে দিচ্ছে তারা সেটা ভাবতেই পারে না। রুবেল ঊর্মির কারনেই এতো টা নিচে নেমেছে।কারণ ঊর্মি সবসময় তার ভাই আর মায়ের বিপক্ষে উসকে দিতো।রুবেল সেটা বিশ্বাস করে তাদের কে গালিগালাজ করতো।ঊর্মি সবসময় বলতো,এখনো সময় আছে হিয়ার আব্বু রুয়েলের সমস্ত কিছু নিজের করে নাও,তা না হলে কিন্তু একদিন রুয়েলের পা ধরে বসে থাকতে হবে তোমাকে।তুমি কি পারবে ছোট ভাইয়ের কাছে এভাবে মাথা নত করে বেঁচে থাকতে?তাছাড়া আমার বাচ্চাদের ও তো একটা ভবিষ্যৎ আছে।তুমি তোমার চোখের সামনে এটা সহ্য করতে পারবে?রুয়েলের ব্যবহার তো দেখছোই,কত বাজে আচরণ করছে তোমার সাথে,তোমাকে মারতেও সে পিছপা হচ্ছে না,একদিন হয় তো রাগে মেরেও ফেলবে।আমার মনে হয় তার আগেই ওকে শেষ করা উচিত।এখনো ওর বাচ্চাকাচ্চা হয় নি।বাচ্চাকাচ্চা হলে তখন আর কিছুই করতে পারবো না।রুবেল অমানুষের মতো ঊর্মির কথা শুনে রুয়েলকে হত্যা করার পরিকল্পনা ও নেয়।কিন্তু ভাগ্যক্রমে রুয়েল বেঁচে যায়।

রুবেল যখন বিদেশ থাকতো তখন ঊর্মি কিন্তু পরকিয়ায় আসক্ত হয়েছিলো।রুবেল সেজন্য ঊর্মির সেই প্রেমিক কে অনেক মেরেছিলো।আর ঊর্মিকেও মেরেছিলো।সে চাইছিলো না ঊর্মিকে নিয়ে সংসার করতে।কিন্তু ঊর্মি যেহেতু তার ফুফাতো বোন হয়,সেজন্য ফুফু আর ফুপার কান্নাকাটি দেখে, আর সবার রিকুয়েষ্ট এ আবার ঊর্মিকে নিয়ে সে সংসার করেছে।তখন ঊর্মি মাত্র ক্লাস নাইনে পড়তো।সে ছোট বলে সবাই তার দোষকে মাফ করে দিয়েছিলো।ঊর্মিও রুবেলের সাথে নিজেকে এমন ভাবে মানিয়ে নিয়েছে যে রুবেল ভুলেই গিয়েছিলো ঊর্মি একজন বাজে চরিত্রের মেয়ে।রুবেল ভেবেছিলো ঊর্মি সত্যি ভালো হয়েছে।রুবেল শুধুমাত্র ঊর্মির জন্যই আর বিদেশ যায় নি।সে ভেবেছে ঊর্মি তাকে ছেড়ে গেলে সে আর এমন সুন্দরী বউ পাবে না।কিন্তু এসব সুন্দরী আর পরপুরুষে আসক্ত মেয়েরা যে কখনোই ভালো হয় না,সেটা রুবেলের মতো ছেলেরা ভুলে যায়।যার কারণে একটা পুরো পরিবার ধবংস হয়ে যায়।সুখের সংসারে আগুন লেগে পুড়ে ছারখার হয়,আর এর জন্য ফল ভুগতে হয় অল্পতেই মানুষ কে বিশ্বাস করা রুয়েলের মতো ছেলেদের,আর জান্নাতের মতো সহজ সরল ভালো মনের মেয়েদের।
দিনশেষে ঊর্মির মতো খারাপ মেয়েরাই ভালো থাকে।আর কষ্টে দিন পার করতে হয় জান্নাতের মতো মেয়েদের।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here