আলো আঁধারের খেলা পর্ব -২৫+২৬

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_২৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

রুবেল মারা যাওয়ার এক মাস পরে হঠাৎ ঊর্মি তাদের সকল আত্নীয়স্বজনদের ইনভাইট করলো।সকল আত্নীয়স্বজন উপস্থিত হলে ঊর্মি বললো,

আমি আজকে একটা কথা ক্লিয়ার করে দিতে চাই।যার জন্য সবাইকে আজ ডেকেছি।কথাটা হলো, রুবেল তার ভাই রুয়েলকে দয়া করে তার বাসায় থাকতে দিয়েছে।কারণ রুয়েলের এখন কোনো বাসা বাড়ি নাই।সে কিছুদিন আগে তার ভাই এর কাছে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে।কিন্তু আমি আর এরকম দয়া করতে পারছি না।কারণ আমার ছেলেমেয়েদের একটা ভবিষ্যৎ আছে।যেহেতু রুবেল নাই,সেজন্য তার অনুপস্থিতিতে তার সকল সম্পদ,জমিজমা দেখাশোনা করার দায়িত্ব তো আমারই।সেই সাথে হিয়া আর হৃদয় কে বড় করার দায়িত্ব ও আমার।এই কথা টা রুয়েল কে বলতে পারছিলাম না,সেজন্য সবাইকে ইনভাইট করেই কথা টা জানালাম।এখন আপনারাই বলুন আমার কি করা উচিত।

ঊর্মির কথা শুনে সবাই অবাক!

রুয়েল ভাবলো স্বামীর মৃত্যুতে ঊর্মি মনে হয় পাগল হয়ে গেছে।সেজন্য এসব ভুলভাল বকছে।আসলে রুয়েল এখনো বুঝতেই পারছে না তার কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে।

ঊর্মি তখন তার সকল জমিজমার পেপার বের করে দেখালো সবাইকে।আর বললো, পেপারে কি লেখা আছে আপনারাই বলুন।আমি আর নিজের মুখে কিছু বলতে চাই না।

রুয়েল ঊর্মির মুখে এই কথাটা শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে পেপার টা কেড়ে নিলো।আর দেখতে লাগলো।পেপার পড়ে রুয়েলের মাথা যেনো চক্কর দিয়ে উঠলো।এটা সে কি দেখছে!

রুয়েলের মামা তখন কেড়ে নিলো পেপার টা।আর জোরে জোরে পড়তে লাগলো।পেপারে স্পষ্ট লেখা,

❝আমি আমার ভাগের সমস্ত সম্পত্তি, জমিজমা আমার বড় ভাই রুবেল এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি।আর তার বিনিময়ে আমি কিছু টাকা নিয়েছে।যে টাকাগুলো আমার ভীষণ দরকার ছিলো।আমি স্বজ্ঞানে আমার সবকিছু আমার ভাই কে লিখে দিলাম আমার এসব জমিজমা।এর জন্য আমি বা অন্য কেউ দায়ী থাকবে না❞

নিচে স্পষ্ট রুয়েলের সিগনেচার আছে।আর সমস্ত কাগজপত্র একদম অরজিনাল।

মামা এগিয়ে এসে বললো,রুয়েল এসব কি করেছো তুমি? কেনো এ কাজ করেছো?

রুয়েল তখন বললো,মামা বিশ্বাস করুন।এই কাজ আমি করি নি।কেনো আমি ভাইকে এসব লিখে দিবো?আমার কি নিজের কোনো সংসার নাই নাকি?এসব মিথ্যা।ভাবি নিশ্চয় কোনো জাল দলিল বানায়ছে।

মামা তখন বললো,কিন্তু এগুলো তো অরজিনাল কাগজ।তোমার ভাই বেঁচে থাকতেই এসব কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছে।ডেট দেখো ভালো করে।

রুয়েল তখন দৌঁড়ে ঊর্মির কাছে চলে গেলো,আর বললো,এসব কি ভাবি?কি জন্য এরকম করেছো আমার সাথে?আমি কোনদিন এসব বিক্রি করলাম?

–আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না রুয়েল।কারণ আমি কাগজে বিশ্বাস করি।তোমার ভাই বেঁচে থাকলে এতো বড় মিথ্যা কথা টা কিছুতেই বলতে পারতে না।আমি জানি তুমি ঝামেলা করবে সেজন্য সবাইকে ডেকে এনেছি।আমার স্বামী মারা গিয়েছে তো কি হইছে তার ছেলেমেয়ে তো আছে?আমি আমার ছেলেমেয়ের হক সঠিকভাবে আদায় করতে চাই।তাদের যেটা পাওনা সেটা তারা যাতে ঠিকভাবে পায় সেজন্য সবার কাছে বিচার চাচ্ছি।

ঊর্মির এক রেলাটিভ তখন বললো, যেহেতু রুয়েল সব লিখেই দিয়েছে সেজন্য মনে হয় না তার এ বাড়িতে থাকা উচিত।রুয়েল তুমি তাহলে গ্রামে চলে যাও।

রুয়েল কি আর বলবে?তার যে কথা বলার ভাষাই নেই কোনো।আর দোষ তো রুয়েলেরই।সে যখন দেখলো তার ভাই আর ভাবির আসল চেহারা বের হয়ে এসেছে,তারপর ও সে কেনো দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করতে গেলো তাদের?রুয়েল আসলেই সহজ সরল মনের মানুষ। সে তার ভাই ভাবীর মিষ্টি কথায় সব ভুলে গেছে।রুয়েল তো ভেবেছিলো তার ভাই সত্যি সত্যি তাকে দুইমাস পরে সবকিছু সমান ভাগ করে দেবে।সে তো আর জানতো না এই দুইমাসের মধ্যে তারা তাকে এভাবে নিঃশ্ব করে দেবে?

রুয়েলের মা এবার দৌঁড়ে এলো ঊর্মির কাছে,আর ঊর্মিকে ধাক্কা দিয়ে বললো, কি করেছিস তোরা এটা?এতো বড় পাপ করতে বুক টা কি একবারও কাঁপলো না তোদের?আমি জীবনেও বিশ্বাস করি না এটা।রুয়েল কি জন্য তার জমিজমা, বাসা তোদের দিতে যাবে?
এই বলে রুয়েলের মা সবাইকে বললো,আপনারা প্লিজ কিছু একটা করুন।এই ঊর্মি মিথ্যা কথা বলছে।এরা রুয়েলকে ঠকিয়ে এই রকম একটা জঘন্য কাজ করেছে।

ঊর্মি তখন বললো, কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে সেটা কাগজপত্র বলে দেবে।রুয়েল সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে এটাই সত্য।এখন মুখে যতই না না করুক না কেনো সেটা কখনোই হবে না।রুবেল বেঁচে থাকতেই রুয়েল তার সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে।কেউ চাইলেই আর এই কাগজ পরিবর্তন করতে পারবে না।সেজন্য আমি আপনাদের কাছে সঠিক বিচার চাই।প্লিজ আপনারা কিছু একটা করুন।রুবেল বেঁচে থাকলে এরা কিছু বলার সাহসই পেতো না।যেই দেখলো রুবেল মারা গিয়েছে আর তাতে সবাই সবকিছু ভুলে গেছে।ভাগ্যিস রুবেল কাগজপত্র গুলো আমার কাছে রেখেছিলো।রুয়েলের কাছে থাকলে তো সে কোনোদিন এই সত্য টা স্বীকার ই করতো না।

রুয়েলের মা ঊর্মির কথা শুনে রুবেল কে একের পর এক অভিশাপ দিতে লাগলো।আর বলতে লাগলো,এটা কি করলি তুই?তুই মরেও গেলি,আর আমাদেরকে মারেও গেলি।তুই তোর পাপের শাস্তি তো সাথে সাথেই পেয়ে গেলি।কি নির্মম ভাবে তোর মৃত্যু হলো।ছোট ভাই এর সাথে বেঈমানী করে সবকিছু লিখে নিলি,দেখ সেগুলো ভোগও করতে পারলি না।কেনো করলি এসব?যে কালনাগিনীর কথামতো এসব অন্যায় করলি সে দিব্যি আছে।আল্লাহ এই কালনাগিনীকেও ধ্বংস করে দাও।তুমি এর বিচার করো আল্লাহ।

ঊর্মি এবার আর কোনো উত্তর দিলো না।তার চোখে মুখে নেই কোনো আফসোস, নেই কোনো পাপের ভয়।কি সুন্দরভাবে একের পর এক মিথ্যা বলেই যাচ্ছে।একটুও তার বুক কাঁপছে না।সে বুঝতেই পারছে না একদিন এর জন্য পরকালে তাকে জবাবদিহিতা করতে হবে।

উপস্থিত সবাই তখন নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতে লাগলো।সবাই কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো যে এটা আসলেই রুয়েলের সাথে বেঈমানি করা হয়েছে।কিন্তু কেউ আর সেটা প্রকাশ করলো না।কারণ ঊর্মির কাছে কাগজপত্র আছে।সে যদি আইনের আশ্রয় নেয় আর বলে তার স্বামী মারা যাওয়ায় তার ছোট ভাই জোর করে তার সম্পদ ভোগ করছে তাহলে রুয়েলই সাজা পাবে।

সেজন্য তারা রুয়েলকে বললো,কাগজ অনুযায়ী তো তোমার বাসা বাড়ি কিছুই নাই এখন।তাহলে তো আর তুমি এই বাসায় থাকতে পারো না,বা তোমার বাসা বলে দাবী করতে পারো না।এখন যদি ঊর্মি বা তার ছেলেমেয়ে তোমাকে থাকতে দেয় তবেই তুমি এই বাসাতে থাকতে পারবে।

রুয়েল একটা কথাও বললো না।কারন সে বুঝতে পারলো আর চেঁচিয়ে কোনো লাভ হবে না।তার ভাই আর ভাবি যা সর্বনাশ করার তা আগেই করে ফেলেছে।এখন শুধু আফসোস করা ছাড়া তার আর কিছু করার নাই।

রুয়েল চুপচাপ জান্নাত আর তার মাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।একটা জিনিস ও নিলো না,আর একটিবারের জন্য তাকালোও না বিল্ডিং এর দিকে।সে এর জন্য তার ভাই বা ভাবী কাউকেই দোষারোপ করলো না।কারণ সে মনে করে এর জন্য সে নিজেই দায়ী।কারণ রুয়েলের প্রথম ভুল সে কেনো তার ভাইকে এতো বেশি বিশ্বাস করলো?তার দ্বিতীয় ভুল কেনো সে তার সমস্ত ইনকামের টাকা ভাই কে দিতো?নিজের কাছে কেনো সে রাখে নি?বা আলাদা কোনো একাউন্ট কেনো করে নি?তৃতীয় নাম্বার ভুল,একদিনের জন্য ও কেনো খোঁজ নেয় নি তার ভাই আর ভাবি তার পাঠানো টাকা দিয়ে আসলে করছে টা কি?চতুর্থ আর সর্বশেষ ভুল হলো,তার ভাই আর ভাবীর আসল চেহারা দেখার পরও আবার দ্বিতীয় বার কেনো অন্ধের মতো বিশ্বাস করলো?কেনো তাদের মিথ্যা অভিনয় বুঝতে পারলো না।

জান্নাত আর রুয়েলের মা শুধু কাঁদছে।কি হয়ে গেলো এসব?যেটা তারা কল্পনাও করে নি কখনো।

রুয়েলের মা এবার কাঁদতে কাঁদতে বললো,কতবার তোকে বললাম,এ বাবা এদের লক্ষণ কেনো জানি ভালো মনে হচ্ছে না।এরা হঠাৎ করে এতো ভালো হয়ে গেলো কেনো?ভালো করে একটু খোঁজখবর নি।তুই আমার কথা না শুনে বললি,ওরা ভালো হয়েছে মা।আল্লাহ মনে হয় ওদের হেদায়েত করেছে।আল্লাহ রে! কিসের হেদায়েত কিসের কি?এরা তো তোকে একদম পথের ভিখারি বানিয়ে দিলো।এখন কি করবি তুই?কিভাবে সংসার চলবে আমাদের?

রুয়েল একদম বোবার মতো হয়ে থাকলো।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আর ভাবলো,আল্লাহ, এটা কোন পাপের শাস্তি দিলে আমাকে?জীবনের সমস্ত রোজগার চোখের পলকে শেষ হয়ে গেলো।এখন আমি কি করবো?আর কিভাবে চলবো?

রুয়েলের মা এখনো রুবেল কে বকে যাচ্ছে। হায় রে শয়তান ছেলে তুই!তোকে কি আমি এই পেটে ধারণ করেছিলাম।কি করলি তুই এটা?বউ এর কথা শুনে নিচে নামতে নামতে নিজের জীবন টাই শেষ করে ফেললি।কি সুখ পাইলি তুই?না নিজে ভোগ করতে পারলি, না ভাইটাকে শান্তিতে বাঁচতে দিলি?

রুয়েল জান্নাত আর তার মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে উঠলো।সেখানে গিয়ে দেখে তিনটা রুম তালা দেওয়া আর দুই টা রুম খোলা আছে।তার মানে ঊর্মি গ্রামের বাড়িও পুরো ছেড়ে দেবে না।রুবেলের ভাগ এখানেও ঠিকভাবে নেবে।রুয়েল একদম শান্ত হয়েই থাকলো।সে কোনো রাগারাগি বা গালাগালি কিছুই করলো না।একরুমে তার মাকে উঠতে বললো,আর আরেক রুমে জান্নাতকে।গ্রামের বাড়িতে কেউ থাকে না দেখে বাড়ি টা একদম নোংরা হয়ে আছে।পানি খাওয়ার টিউবওয়েল টাও ঠিক নাই।সব নতুন করে ঠিক করতে হবে।কিন্তু হাতে তো একটা কানাকড়ি নেই।কিভাবে কি করবে সত্যি রুয়েল বুঝতে পারছিলো না।

গ্রামের মানুষ জন এক এক আসতে লাগলো।সবাই শুধু বলছে রুয়েল এরকম কাজ কেনো করলো?কেনো তার নিজের ভাগ রুবেলকে দিয়েছে?তবে কিছু কিছু লোক বিশ্বাস করলো না কথাটা।তারা বুঝে গেলো নিশ্চয় রুবেল চালাকি করেছে।আর চালাকি করেই রুয়েলকে ঠকিয়েছে।এজন্যই তার এমন নির্মম মৃত্যু হয়েছে।পাপ যে তার বাপকেও ছাড়ে না তার একমাত্র দৃষ্টান্ত হলো রুবেল।

জহির সাহেব, দাদী,জান্নাতের মা সবাই শোনামাত্র দৌঁড়ে চলে এলো।তারা কিছুতেই মানুষের কথা বিশ্বাস করতে পারছিলো না।কিন্তু তারা যখন দেখলো সত্যি সত্যি জান্নাত গ্রামের বাড়িতে উঠেছে ততোক্ষনে বিশ্বাস হলো তাদের।জান্নাত তার মা বাবাকে দেখামাত্র হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। জান্নাতের মা আর দাদীও কাঁদছে।এদিকে জহির সাহেব রুয়েলকে এক নাগারে বকতে লাগলো,
দুনিয়ায় অনেক বোকা মানুষ দেখেছি,কিন্তু তোমার মতো বোকা মানুষ দেখি নি। তোমার থেকে সবকিছু লিখে নিলো আর তুমি তার কিছুই টের পেলে না।এতো বোকা তুমি!

রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।

জহির সাহেব তখন বললো, এখন কি করবে?কিছু তো করতে হবে।আমার দোকানের পাশে কিছু জায়গা আছে।ওখানে একটা দোকান দাও।এভাবে বসে থেকে তো দিনপথ চলবে না।

রুয়েলের মা তখন বললো,বেয়াই সাহেব কি আর বলবো আপনাকে?রুয়েলের কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই।টাকা ছাড়া কিভাবে ব্যবসা করবে?

–টাকাও নেই?একজন বিদেশ থাকা ছেলের একাউন্টে কোনো টাকা নাই?টাকাগুলোও কি নিয়েছে সব?

রুয়েলের মা তখন বললো,ওর তো কোনো একাউন্টই ছিলো না।সব টাকা রুবেলের একাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছে।এখন বলছে কোনো টাকাই পাঠায় নি।রুবেল যে এমন বেঈমানী করবে সত্যি আমরা বুঝতে পারি নি।কারণ ও এরকম ছিলো না আগে।সেজন্যই তো ভাইকে এতো টা বিশ্বাস করতো রুয়েল।নিজের বাবার মতো শ্রদ্ধা আর সম্মান করতো।

জহির সাহেব শোনামাত্র বললেন,ছিঃ ছিঃ ছিঃ।মানুষ এতো বড় বেঈমান কি করে হতে পারে?এরকম ভাই আমি জীবনেও দেখি নি।এর থেকে তো পাড়াপ্রতিবেশি ভাই ই ভালো।আল্লাহ মনে হয় সেজন্যই এর এমন নির্মম মৃত্যু দিয়েছে।আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছি ঊর্মিকে দেখে।রুবেলের এমন নির্মম মৃত্যু দেখেও সে বিন্দুমাত্র ভয় পাচ্ছে না।উল্টো সালিস করে রুয়েলকে বের করে দিলো।এই মেয়ের জন্য নিশ্চয় বড় কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করেছে আল্লাহ।

রুয়েলের মা সেই কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,ওই কালনাগিনী যেভাবে আমাদের বাসা থেকে বের করে দিলো,ঠিক এমনভাবে একদিন তাকেও বের করে দিবে সবাই।আল্লাহ আমার মনের আশা টা পূরণ করো।

জহির সাহেব এবার রুয়েলকে তাদের বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দিলো।জহির সাহেব বললো,বাবা রুয়েল!যতদিন তোমাদের কোনো ব্যবস্থা হয় নি ততোদিন তোমরা সবাই আমাদের বাড়িতে চলো।এই বাড়িতে থাকতে হলে অনেক কিছু নতুন করে ঠিক করতে হবে।

রুয়েল একদম চুপচাপ হয়ে আছে।তার মুখে কোনো কথা নাই।তবে তার এতোবড় ক্ষতি হওয়ার পরও সে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলো।রুয়েল সেজন্য সাথে সাথে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। কারণ তার বিদেশ যাওয়ার ডেট এখনো আছে।ভাগ্যিস ডেট শেষ হওয়ার আগেই ঊর্মি প্রকাশ করলো কথাটা।তা না হলে তার লাইফ টা তো একেবারেই শেষ হয়ে যেতো।

রুয়েল হঠাৎ তার শশুড় কে বললো,
বাবা আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।ইনশাআল্লাহ আমি আবার উঠে দাঁড়াবো।আমি যদি সত্যি হই তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে নিরাশ করবেন না।কারণ আমি আবার বিদেশ যেতে চাই।আপনি শুধু জান্নাত আর মাকে একটু দেখে রাখবেন।

জহির সাহেব সেই কথা শুনে বললো,তাহলে তো ভালোই হবে।নতুন করে আবার গড়ে তোলো নিজেকে। আল্লাহ চাইলে তুমি আবার অনেক কিছু করতে পারবে।

–ইনশাল্লাহ বাবা।শুধু দোয়া করবেন সবাই।

রুয়েলের বিদেশ যাওয়ার কথা শুনে জান্নাতের ভীষণ মন খারাপ হলো।কিন্তু সে তার মন খারাপের কথা রুয়েলকে আর বললো না।সে রুয়েলকে উৎসাহিত করতে লাগলো।তার মনে সাহস যোগাতে লাগলো।রুয়েল তখন বললো, জান্নাত আপনি শুধু আমার জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করবেন।যাতে খুব তাড়াতাড়ি আমি বেশি টাকা ইনকাম করতে পারি।দেশে ব্যবসা বানিজ্য করার মতো টাকা জমা হলেই আমি ফিরে আসবো দেশে।

জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না।জান্নাতের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো।তবুও সে তার কান্না আঁটকিয়ে বললো,আপনি আমার জন্য কোনো চিন্তা করবেন না।দয়া করে নিজের যত্ন নিবেন।আপনি সুস্থ থাকলেই আমিও ভালো থাকবো।
রুয়েল নিজেও একদম কেঁদে দিলো।জান্নাতকে রেখে এভাবে চলে যেতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।তবুও ভাগ্যকে মেনে নিয়ে রুয়েল আবার বিদেশ চলে গেলো।

রুয়েল চলে যাওয়ার দুইমাস পরে হঠাৎ জান্নাত ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে।সে কিছু খেতে পারছিলো না।কিন্তু সে তার অসুস্থতার কথা কাউকে বলে না।সে ভেবেছে এমনি এরকম হচ্ছে।কিন্তু জান্নাতের দাদী টের পেয়ে যায় ব্যাপার টা।জান্নাত কেমন যেনো শুকিয়ে যাচ্ছে।তার চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে একদম।মাঝে মাঝে বমিও হয়।দাদী তখন জান্নাতের শরীর চেক করার জন্য নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়।জান্নাতের এক চাচাতো বোন ও সেখানে চাকরি করে।জান্নাতের চাচাতো বোন টি জানালো দাদী মিষ্টি খাওয়ান আগে।খুশির খবর আছে।
দাদী তখন বললো কয় মাস চলছে?

–জান্নাত তো তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

–তিন মাস?দাদী ভীষণ অবাক হলো।জান্নাত তো একদিন ও বলে নি তাদের।

আসলে জান্নাত নিজেই জানতো না তার অন্তঃসত্ত্বার কথা।তার যে পিরিয়ড তিন মাস ধরে হচ্ছে না সেকথা টা একবারের জন্যও কাউকে বলে নি।সে ভেবেছিলো এমনি আটকে আছে পিরিয়ড। কারণ তার অনিয়মিত পিরিয়ড হয়।
#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_২৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

টাকা দিতে এতো কিপটামি করো কেনো?এগুলো তোমার বাপের টাকা নাকি?যে দিতে মায়া লাগে।এগুলো আমার বাপের টাকা।আর বাপ তো সেই কবেই গায়েব হইছে,সে হিসেবে এখন তো আমিই মালিক।সেজন্য যখন যত টাকা চাইবো তখন তত টাকাই দিবে।বুঝেছো?
এই বলে হৃদয় ঊর্মির হাত থেকে সবগুলো টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হলো।এখন এই টাকা দিয়ে বন্ধুদের সাথে বসে নেশা করবে।মাত্র ক্লাস এইটে উঠেছে হৃদয়,আর এই টুকু বয়সেই সে নেশা করা শিখে গিয়েছে।
অন্যদিকে হিয়া একের পর এক ছেলের সাথে মেলামেশা করে শেষ পর্যন্ত ক্লাস টেনে উঠে ফাঁন্দে পড়ে যায়।অনিক নামের এক ছেলেকে ভালোবেসে তাকেই বিয়ে করতে চায়।কিন্তু ঊর্মি রাজি হয় না।কারণ অনিকদের পরিবার স্বচ্ছল ছিলো না।তখন হিয়া রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়,আর অনিককে বিয়ে করে।কিন্তু কয়েকদিন পরেই অনিক কে আর ভালো লাগে না তার।মুখে বলতেও পারছে না,সেজন্য একা একা তার নিজের বাসায় চলে আসে।ঊর্মি হিয়াকে একটুও শাসন করতে পারে না।কিছু বললেই সেও হৃদয়ের মতো বড় বড় কথা বলে।
হিয়া বলে,
এটা আমার বাবার বাসা।এখানে শুধু আমার রাজত্ব চলবে।তুমি চুপচাপ শুধু খাবে আর রান্না করবে।তোমার আর কোনো কাজ নাই এ বাড়িতে।সুতরাং আমার ব্যাপারে বেশি নাক গলাবে না।আমার যা মন চায় আমি সেটাই করবো।

কিছুদিন হলো ঊর্মিদের বাসায় তুহিন নামের নতুন এক ভাড়াটিয়া উঠেছে।ছেলেটা নাকি বড় এক ব্যবসায়ী। তুহিন কে হ্যান্ডসাম আর বড়লোক ভেবে হিয়া তাকে পটাতে চেষ্টা করে।তুহিনও ভাবে বড়লোকের মেয়ে,বাসা বাড়ি আছে,এরকম মেয়েকে বিয়ে করায় যাই।হিয়া তখন অনিক কে ডিভোর্স দিয়ে আবার তুহিন কে বিয়ে করে।আর তাদের বাসাতেই থাকে।

কথায় আছে,মা যেমন হয়,তার সন্তানেরা ঠিক তেমনি হয়।ঊর্মির ছেলেমেয়েরাও তার ব্যতিক্রম হলো না।রুয়েলের ধন সম্পদ আত্নসাৎ করে ঊর্মি ভেবেছিলো সে খুব ভালো থাকবে।তার ছেলেমেয়েদের অনেকদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করাবে।কিন্তু তার ছেলেমেয়েরা তার থেকেও আরো বেশি নিকৃষ্ট হলো।

ঊর্মি ছেলেমেয়েদের এমন কান্ড দেখে আর তাদের মুখে এতো অপমান জনক কথাবার্তা শুনে দিনরাত শুধু কাঁদতে থাকে।আর রুবেলকে গালিগালাজ করে।কু,,,র বাচ্চা।কত করে বলেছি বাসা টা আমার নামে লিখে দি,দেস নি।নিজেও খেতে পারলি না,আমাকেও শান্তিমতো থাকতে দিচ্ছিস না।এখন ছেলেমেয়ের লাথি খেয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে।পুরাটা না দিলি আমাকে যদি অল্প কিছু লিখে দিতিস তাহলে আজ আমাকে এই দিন টা দেখতে হতো না।

রুবেলের প্রতি ঊর্মির এতোটুকু অনুশোচনা বা ভালোবাসা কিছুই নাই।সে কখনো ভালোই বাসে নি রুবেলকে।অথচ রুবেল তাকে কত ভালোবাসতো।ঊর্মির কথা শুনে রুবেল তার মা ভাই সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।রুয়েলের মতো সহজ সরল ভাইকে ঠকিয়ে তার জমিজমা আত্নসাৎ করেছে।অথচ সেই বউ তখনো পরকিয়ায় আসক্ত ছিলো যা রুবেল বুঝতেই পারে নি।

ঊর্মির সেই গোপন প্রেমিক রাশেদ এখন ঊর্মিকে ব্লাকমেল করে করে টাকা আদায় করছে।ঊর্মি যদি তাকে একদিন টাকা না দেয় তাহলেই সে ঊর্মিকে ভয় দেখায়।তাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে বলে দেবে বলে জানিয়ে দেয়।বিশেষ করে তার ছেলেমেয়েদের বললেই তারা ঊর্মিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবে।ঊর্মি এই ভয়ে তাকে টাকা দিতে থাকে।কিন্তু ঊর্মি আর পারছে না টাকা দিতে।কারণ হিয়া এখন নিজেই সবকিছু দেখাশোনা করে।কারন সে তার দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে এই বাসাতেই থাকে।

ঊর্মি তখন রাগ করে রাশেদ কে বলে, আমার কাছে আর কোনো টাকা নাই।আমি আর দিতে পারবো না টাকা।যা করার কর গিয়ে।

ঊর্মি ভাবতেও পারে নি রাশেদ সত্যি সত্যি হিয়া আর হৃদয় কে বলতে যাবে।রাশেদ কে বাসায় দেখামাত্র ঊর্মির পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।সে তখন কৌশল করে রাশেদকে বললো,তুমি চলে যাও।আমি টাকা পাঠিয়ে দেবো।রাশেদ সেই কথা শুনে চলে গেলো।

এদিকে হিয়া একটু চালাক প্রকৃতির ছিলো।সে রাশেদ কে তাদের বাসায় আসা দেখে কিছু একটা অনুমান করতে পারে।কারণ সে তার মায়ের পরকিয়ার কথা লোকেমুখে শুনেছিলো।তবে বিশ্বাস করে নি।কিন্তু আজ যখন রাশেদ কে তাদের বাসায় দেখলো সেজন্য হিয়া ফলো করতে লাগলো ঊর্মিকে।

গভীর রাতে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ঊর্মি রাশেদের বাড়ি চলে যায়।সাথে কিছু টাকাও নেয়।হিয়া হৃদয় কে সাথে করে নিয়ে সেও পিছু পিছু ধাওয়া করে।আর হাতেনাতে ধরে ফেলে ওদের।হিয়ার ব্যবহার খুবই বাজে ছিলো।আর ও ভীষণ রগচটা ছিলো।সে ঊর্মিকে কানে কপালে চড় দিতে দিতে বলে এর সাথে তাহলে তুই এখনো নোংরামি করিস?
ঊর্মি তখন বলে,মুখ সামলিয়ে কথা বল হিয়া।আমি তোর মা হই।
–মা!কিসের মা?যে মহিলা তার স্বামীকে ভুলে গিয়ে পরকিয়া করতে পারে সে আবার কিসের মা হয়?

ঊর্মি তখন বলে তুই ফির খুব ভালো। এই বয়সে দুইটা স্বামী করেছিস।আরো যে কয়টা স্বামী হবে কে জানে?

হিয়া সেই কথা শোনামাত্র আরো বেশি রেগে যায়।আর চিৎকার করে বলে আমি তো বিয়ে করেছি,তোর মতো পরকিয়া করি নি।বেয়াদব মহিলা!আর আমাদের বাড়িতে উঠতে পারবি না।এই বেটার লগে এই বাড়িতেই থাক।এই বলে হিয়া চলে যায়।

ঊর্মি তখন হৃদয়ের হাত ধরে বলে,বাবা কি বলছে এসব হিয়া?তুই কিছু বলছিস না কেনো?

হৃদয় তখন বললো,আমি আর কি বলবো?আপু যখন চাইছে না তুমি থাকো আমাদের বাসায় তাহলে সেটাই হবে।তুমি থাকলে একটু অসুবিধায় হয় আমার।ঠিক করে টাকা দিতে চাও না।আর আপু বলার সাথেই নোট বের করে দেয়।এই বলে হৃদয় ও চলে গেলো।

ঊর্মি তার ছেলেমেয়ের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে যায়।এই ছেলেমেয়ের জন্য সে এতো কিছু করেছে?সে স্বপ্নেও ভাবে নি হিয়া আর হৃদয় এমন বেয়াদব হয়ে যাবে।

ঊর্মির অসহায়ত্ব দেখে রাশেদ বলে ওরা যখন জেনেই গেছে তাহলে আর কিসের লুকোচুরি? চল আমরা বিয়ে করে ফেলি।তাছাড়া তোর আর কোনো গতি নাই।তোর ছেলেমেয়ের যে ব্যবহার দেখলাম মনে তো হয় না ওই বাড়িতে তুই শান্তিতে থাকতে পারবি।তারচেয়ে বরং আমার সাথেই থাক।বিলাসিতা ভাবে না চলতে পারলেও চারটা ডাল ভাত কিন্তু খেতে পারবি।

ঊর্মি অনেক কিছু ভেবে রাশেদ কে বিয়ে করে ফেলে।

ঊর্মি যখন রাশেদ কে বিয়ে করে পুরো এলাকায় হইচই পড়ে যায়।সবাই ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।এই বয়সে ঊর্মি বিয়ে করেছে।এতো বড় বড় ছেলেমেয়ে রেখে কি করে ঊর্মি বিয়ে করলো?

ঊর্মি একদম নীরব হয়ে থাকলো।সে কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।যে ঊর্মির মুখ দিয়ে খই এর মতো কথা ফোটে আজ সে ঊর্মি চুপচাপ হয়ে গেছে।

ঊর্মির বিয়ের কথা শুনে হিয়া আর হৃদয় আরো বেশি রেগে যায়।তারা ভাবতেই পারে নি সত্যি সত্যি ঊর্মি বিয়ে করবে।হিয়া ভেবেছিলো হয় তো তার মা এসে তাদের রিকুয়েষ্ট করবে।কিন্তু তার মা তো ডাইরেক্ট বিয়ে করে নিলো।

কিছুদিন যেতেই রাশেদ ঊর্মিকে চাপ দিলো সে যেনো তার স্বামীর অংশ বের করে নিয়ে আসে।যেহেতু ঊর্মি রুবেলের স্ত্রী ছিলো সেজন্য সে এখনো দুই আনা সম্পত্তির মালিক।

ঊর্মি রাশেদের এমন সিদ্ধান্তে রাজি হয় না।সে তখন বলে আমি এ কাজ জীবনেও করতে পারবো না।আমি আর ওই ছেলেমেয়ের কাছে জীবনেও যাবো না।রাশেদ তখন ঊর্মির উপর ভীষণ টরচার করতে থাকে।শেষ মেষ বাধ্য হয়ে ঊর্মি তার ছেলেমেয়েদের কাছে প্রস্তাব দেয় তার সম্পদ বের করে দেওয়ার জন্য।

হৃদয় আর হিয়া শোনামাত্র ভীষণ ক্ষেপে যায়।তার মা শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছে!
এদিকে হিয়ার স্বামী তুহিন তাদের পরিবারের এই অবস্থা দেখে সেও সুযোগ নিতে থাকে।তার কাছে তো ঊর্মিকেই তার পথের কাটা মনে হয়।এই ঊর্মি যতদিন থাকবে ততোদিন সে কিছুই করতে পারবে না।সেজন্য তুহিন হিয়াকে বলে,
আম্মা যখন তার জমি বের করেই চাচ্ছে তাকে দিয়ে দাও হিয়া।কারণ এটা ওনার স্বামীর সম্পদ।উনি যতই অন্য কাউকে বিয়ে করুক না কেনো এই সম্পদ ওনার অধিকার।
হিয়া সেই কথা শুনে বলে,আমাদের সম্পদ অন্য কেউ খাবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।
তুহিন তখন বলে,অন্যজন খাবে কেনো?তোমার মায়ের সম্পদ আমি কিনে নেবো।
হিয়া সেই কথা শুনে রাজি হয়ে যায়।

ঊর্মি তার ভাগের অংশ বিক্রি করে যে টাকা পায় সেটা আর রাশেদ কে দেয় না।কারণ সে বুঝতে পারে রাশেদ এই টাকার জন্যই তাকে বিয়ে করেছে।এই টাকা শেষ হলে আবার তার উপর অত্যাচার করবে সে।এতোদিন এই টাকার জন্য তার উপর সে অনেক অত্যাচার করেছে। সেজন্য ঊর্মি টাকাটা তার নিজের কাছেই রাখে।কিন্তু টাকা না পেয়ে রাশেদের মাথা পাগল হয়ে যায়।এই টাকা টাকা করে প্রতিদিন তাদের ঝগড়া শুরু হয়।এক পর্যায়ে ঊর্মি বাপের বাড়ি চলে যায়।আর সিদ্ধান্ত নেয় রাশেদকে ডিভোর্স দেবে।

রাশেদ ডিভোর্সের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে ঊর্মির বাড়ি গিয়ে বলে আসে আমি যদি এই টাকা না পাই তাহলে আমি সব ফাঁস করে দেবো।তুই যে রুবেল কে মেরেছিস সব বলে দিবো সবাইকে।

–ঊর্মি তখন বলে যা বল গিয়ে।তুই যদি মুখ খুলিস তাহলে তুই ও ফাঁসবি।কারণ রুবেলকে তুই নিজের হাতে খুন করেছিস।আমার কাছে সেটার ভিডিও আছে।

রাশেদ ঊর্মির কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়।সেজন্য সে আর ঝামেলা করে না।তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে চলে যায়।

এদিকে ঊর্মি মাথায় হাত দিয়ে জোরে জোরে করে কাঁদতে থাকে।সে কি করেছে এসব?শুধুমাত্র রাশেদের কথায় সে তার সহজ সরল স্বামীকে মেরে ফেলেছে।শুধুমাত্র রাশেদের জন্য তার আজ এই দুর্দশা।রুবেল বেঁচে থাকলে সে আজ রানীর মতো করে বেঁচে থাকতো।
সেইদিন রাতে রাশেদ আবার আসে ঊর্মির ঘরে।আর ঊর্মির হাত পা বেঁধে তার সব টাকাপয়সা মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।ঊর্মির কাছে আর কিছুই থাকলো না।
ঊর্মি পরের দিন পুলিশ ষ্টেশনে গিয়ে রাশেদের নামে মামলা করে।কিন্তু পুলিশ রাশেদ কে আর খুঁজে পায় না।রাশেদ যে কই উধাও হয়েছে কেউ জানে না।এখন নিঃশ্ব ঊর্মি তার ভাই বউ এর আঙিনা ঝাঁড় দেয়,থালাবাসন মাজে।তারপরেও তার ভাই বউ নানা রকমের কথা বলে। ঊর্মির আর কোনো উপাই ও নাই,যে রাগ করে কোথাও চলে যাবে।সে তার ভাই বউ এর কথা শুনেই থাকে।আর দিন রাত শুধু চোখের পানি ফেলে।

ঊর্মি বুঝতে পারে এই পরিনতির জন্য শুধু মাত্র সেই দায়ী।সে নিজের হাত দিয়ে তার কপাল শেষ করেছে।আর সবচেয়ে বড় কথা রুয়েলের সাথে সে মারাত্মক অন্যায় করেছে,যার কোনো ক্ষমা নাই।ঊর্মির এখন ইচ্ছা করে রুয়েল আর জান্নাতের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে।কিন্তু সে সাহস তার আর হয় না।

এদিকে তুহিন আর হিয়া এখন পুরো সংসারে রাজত্ব করছে।হৃদয় তো দিন রাতে নেশা করে করে ঘুরে বেড়ায়।কোনোদিন বাসায় আসে আবার কোনোদিন আসে না।তুহিন নিজেও সুযোগ খুঁজতে থাকে।সে কোনদিন সবাইকে ঠকিয়ে পালিয়ে যাবে।কিন্তু হিয়া বড্ড চালাক।তাকে চালাকি দেওয়ার মতো ছেলের জন্মই হয় নি।তুহিন সেজন্য হিয়ার সম্পদের আশা ছেড়ে দিলো।

দুই বছর পর হৃদয় কে বিয়ে করালো হিয়া।কারণ হৃদয় বিয়ে করার জন্য ভীষণ চাপ দিচ্ছিলো।কিছুদিন ভালোভাবে চললেও পরে তাদের সংসারেও অশান্তির সৃষ্টি হয়।হৃদয়ের বউ হৃদয় কে বলে তোমার বাবার সম্পত্তিতে তোমার অধিকার বেশি,সেখানে তোমার বোন এতো দালালি করে কেনো?ও তোমার পিছু পিছু ঘুরবে,তা না করে বোকার মতো তুমি ওর পিছু পিছু ঘোরো কেনো?
হৃদয় যখন বুঝলো হ্যাঁ ঠিকই তো।সে কেনো তার বোনের থেকে এভাবে টাকা চেয়ে চেয়ে নেবে?হৃদয় তখন প্রস্তাব দিলো আজ থেকে সে সবকিছু দেখাশোনা করবে।
হিয়া হৃদয়ের কথা শুনে রাগে ফায়ার হয়ে যায়।সে তখন হৃদয় কে বকতে থাকে।এই ভাবে দুই ভাই বোনের মধ্যেও ঝগড়া লেগে যায়।তখন হৃদয় আর হিয়া দুইজনে তাদের বাবার সম্পদ ভাগ করে নেয়।

হিয়া যেটুকু ভাগে পায় সেটুকু দিয়ে তার সংসার চলে না।সেজন্য সে তার সম্পদ বেঁচে তার স্বামীর গ্রামে চলে যায়।কিন্তু তার স্বামীর গ্রামে গিয়ে দেখে তুহিনের কিছুই নাই।তুহিন বলেছিলো তাদের অনেক জমিজমা আছে।বাড়িগাড়ি সব আছে।হিয়ার মাথা গরম হয়ে গেলো।কিন্তু কিছুই আর করার নাই।কারণ তার ও নিজের বলতে আর কিছুই থাকলো না।তার বাবার জমি বিক্রি করা টাকা দিয়ে তুহিন ব্যবসা শুরু করে।কিন্তু ব্যবসাতে তেমন লাভ করতে পারে না।শেষমেশ স্বামী স্ত্রী দুইজনই গার্মেন্টস এ চলে যায়।

অন্যদিকে হৃদয়ের বউ একটু চালাক হওয়াই সংসার টা ধরে রেখেছিলো কিছুদিন।কিন্তু তাদের সংসার টা বেশিদিন টেকে না।কারণ হৃদয় দিনে রাতে নেশা করে করে বাড়ি ফেরে।কোনো কাজকর্ম করে না।এভাবে বসে থেকে আর কতদিন চলে।শেষমেশ হৃদয়ের বউ ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়।হৃদয় এবার পুরো স্বাধীনতা পেয়ে যায়।সে আগের চেয়ে আরো বেশি নেশাখোর হয়ে যায়।হৃদয়ের আর কোনো সম্পদই বাকি থাকে না।সব বেঁচে শেষমেশ হৃদয় পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here