আলো আঁধারের খেলা পর্ব -২১+২২

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_২১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

জান্নাত একটিবারের জন্য বলে নি যে, সে আলাদা করে খাবে।বা রুয়েল নিজেও এ ব্যাপারে কিছু বলে নি।আসলে ঊর্মি নিজেই অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো।তার অসহ্য লাগছিলো জান্নাত এবং রুয়েলকে।এতোদিন একা একা থেকেছে তো,হঠাৎ করে জান্নাত তার সংসারে আসায় তার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো। সেজন্য তার নিজের মনের কথা জান্নাতের উপর চাপিয়ে দিলো।জান্নাত শুধু একদিন একটু দেরীতে উঠেছে ,আর তাতেই ঊর্মি রেগে আগুন হয়ে গেছে।

জান্নাত শুধু ঘরে বসে থেকে কাঁদছে।কারণ সে তো কখনোই আলাদা হতে চায় নি।তাহলে ঊর্মি কেনো এভাবে তাকে দোষারোপ করছে।জান্নাতের কিছুই ভালো লাগছে না।সে তখন মনে মনে ভাবলো,কেনো যে তার বিয়ে হলো?বিয়ে না হলেই বেশি ভালো হতো।নিজের বাড়িতে বেশ ভালো ছিলো সে।আজ দিয়ে জান্নাত একটা জিনিস ভালোভাবেই বুঝে গেলো।শুধু স্বামী ভালো হলেই হয় না।স্বামীর বাড়ির লোকদের ও ভালো হতে হয়।

রুয়েল এখন শো রুমে যাবে।সেজন্য জান্নাতকে বললো কোনো কান্দাকাটি করবেন না খবরদার।আর ভাবি তখন রাগ করে আলাদা হওয়ার কথা বলেছে।এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।এই বলে জান্নাতের কপালে একটা কিস করে বললো,এবার একটু হাসুন জান্নাত।আপনার চোখের পানি একদম সহ্য হয় না আমার।এই বলে রুয়েল জান্নাতকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকার পর বললো, কি আনবো আসার সময়?আপনি কি খাবেন বলেন?
–খাবো না কিছু।
–আচ্ছা ঠিক আছে।যা খেতে মন চাইবে শুধু ফোন করে বলবেন।আসার সময় নিয়ে আসবো।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে মাথা নাড়লো।আর স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো।কারণ যত মন খারাপই হোক না কেনো তার রুয়েল কথা বললে নিমিষেই তার মন ভালো হয়ে যায়, সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায় তার।ছেলেটা আসলেই যাদু জানে।এমন ভাবে কথা বলে কিছুক্ষন আগে কি ঘটেছিলো সব ভুলে যায় জান্নাত।রুয়েল চলে গেলো।কিন্তু যেতে ধরে আবার ফিরিয়ে এলো সে।আর জান্নাতের কপালে আরো একটা কিস করলো।জান্নাত এতোক্ষণে একটু হেসে উঠলো।

এদিকে ঊর্মি রাগ করে তার স্বামী আর সন্তানের জন্য শুধু দুপুরের খাবার রেডি করছে।কারণ সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে আর একসাথে থাকবে না।জান্নাত আর রুয়েলকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে।আর তারা শহরের বাসায় থাকবে।

রুয়েল চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রুয়েলের মা এলো জান্নাতের রুমে।আর বললো,তুমি এভাবে রুমে বসে আছো কেনো?রান্না করতে হবে না?

জান্নাত সেই কথা শুনে রান্নাঘরের দিকে যেতে ধরলো। তখন রুয়েলের মা বললো, ঊর্মিকে গিয়ে আগে সরি বলো।তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।আর বলবে ভাবি,কখনোই আর উঠতে লেট হবে না।আমার ভুল হয়ে গেছে ভাবি।এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।

জান্নাত তার শাশুড়ীর কথা শুনে বললো,মা আমি তো কোনো অন্যায় করি নি।আর আমার দোষ টা কোথায়? কি জন্য আমাকে এসব বলতে হবে?

–তুমি তো বড্ড জেদি মেয়ে।যা বলছি সেটাই শোনো।তুমি হলে ছোট।আর ছোটরাই সবসময় নত হয়।যাও ঊর্মির হাত ধরে সরি বলো।

জান্নাত তার শাশুড়ীর কথা শুনে ঊর্মির কাছে চলে গেলো।আর তার শাশুড়ীর কথামতো ঊর্মির হাত ধরে বললো,ভাবি আমার ভুল হয়েছে।আর উঠবো না দেরী করে।আপনি মাথা টা ঠান্ডা করুন।আমি আলাদা হতে চাই না।আমরা সবাই মিলেমিশে একসাথেই থাকতে চাই।

ঊর্মি জান্নাতের কথা শুনে বললো, না ভাই,আমি আর একসাথে থাকতে চাই না।যার যার সংসার তাই তাই করে খাও।আর তুমি যতই মুখে বলো না কেনো আমাদের সাথে একসাথে থাকতে চাও,তোমার মন কিন্তু আলাদা হওয়ার কথা শুনে খুশিই হয়েছে।অযথা সংসারে ঝামেলা করতে চাই না আমি।নিজের স্বামীর কামাই খায়া কেনো আমি অন্য মানুষের কথা শুনবো।আমি বলবো এক কথা আর তুমি রুয়েল কে বলবে অন্য কথা।যার জন্য সংসারে নিত্যদিন অশান্তির সৃষ্টি হবে।

জান্নাত সেই কথা শুনে বললো,ভাবি আমি মোটেও এমন মেয়ে নই।তাহলে কেনো আমাকে অযথা দোষারোপ করছেন?কেনো বার বার বলছেন,জান্নাত আলাদা হতে চাচ্ছে।আমি কিন্তু মন থেকে বলছি ভাবি,সত্যি আমি আলাদা হতে চাই না।আমি সংসারে কোনো অশান্তিও চাই না।

ঊর্মি তখন তার বুকে চড় দিয়ে বললো,যাও সব দোষ আমার।তুমি কোনো দোষ করো নি।কারণ তুমি একদম ধোয়া তুলসিপাতা।তোমার কোনো দোষ থাকতেই পারে না।তুমি তো নিজেকে ওলি আউলিয়া ভাইবা বসে আছো।আমাদের মতো খারাপ মানুষের সাথে একসাথে খাওয়ার কোনো দরকার নেই।

রুয়েলের মা তখন বললো,ঊর্মি তুমি এরকম করছো কেনো?কেনো হঠাৎ আলাদা হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগছো?

–মা!কি বলছেন এসব?আমাকে দোষারোপ করছেন আপনি?আমি আলাদা হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগছি?হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো আমাকেই দোষারোপ করবেন।এখন ছোট ছেলে বিয়ে করেছে।আমার কি আর দরকার আছে।ছোট ছেলের বউ এর হাতের খাবেন।ভালো, খুব ভালো।বুঝেছি,সবাই একজোট হয়েছেন।যান,আজ থেকে আপনি আপনার ছোট ছেলের মধ্যে খাবেন।আপনাকেও চাই না আমাদের।

জান্নাতের শাশুড়ী ঊর্মির কথা শুনে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।ঊর্মি কি সব ভুলভাল বলছে।তিনি কখন বললেন ছোট ছেলের সাথে আলাদা থাকবেন?এই ঊর্মি টা কেনো যে এরকম অশান্তি শুরু করছে সংসারের মধ্যে?রুয়েলের মা ভয়ে আর একটি কথাও বললো না।কারণ ঊর্মির কথার সাথে তিনি কিছুতেই পেরে উঠবেন না।খুবই ব্যবহার খারাপ ঊর্মির।

জান্নাত ঊর্মির এমন খারাপ ব্যবহার দেখে আবার তার রুমে চলে গেলো।তার মন টা আবার খারাপ হয়ে গেলো।সে বুঝতেই পারছে না সারাবছর এই রকম একটা জঘন্য মহিলার সাথে থাকবে কি করে?যিনি একেক বার একেক কথা বলে।যার মিনিটে মিনিটে কথার স্বর চেঞ্জ হয়।

দুপুরবেলা রুয়েল আর রুবেল ভাত খেতে আসলো বাসায়।
কিন্তু রুয়েল যখন বাসায় এসে শুনলো কোনো খাবার রান্না করে নি জান্নাত।আর ঊর্মি আলাদা করে শুধু নিজের টা রান্না করেছে, তখন রুয়েলের মাথা একদম গরম হয়ে গেলো।একদিকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরেছে রুয়েল।ভেবেছিলো গোসল করে খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার দোকানে যাবে, তা না করে কি সব ঝামেলা শুরু করেছে ঊর্মি।রুয়েল চিৎকার করতে করতে ঊর্মিকে ডাকতে লাগলো।

ভাবি!ভাবি!বের হয়ে আসেন তো একটু।

রুয়েলের চিৎকার শুনে রুবেল বের হয়ে এলো।আর বললো,কি হয়েছে?এভাবে চিৎকার করছিস কেনো?

–ভাবি কোথায়?ভাবিকে ডাকুন।কি জন্য উনি এমন করছেন আমি জিজ্ঞেস করতে চাই?

–তোর ভাবি অসুস্থ।শুয়ে আছে।যা বলার আমাকে বল।

রুয়েল সেই কথা শুনে নিজেই ঊর্মির কাছে চলে গেলো।আর বললো,আপনার সমস্যা টা কোথায়?বলবেন কি?কেনো সংসারে এরকম অশান্তির সৃষ্টি করছেন?আপনি যে আলাদা আলাদা করছেন, জানেন আলাদা হলে কি হবে?দেন আমার ভাগগুলো বের করে দেন।বিল্ডিং থেকে কত ভাড়া আসে তার হিসাব দেন।আমার গাড়ি কই, কত টাকা আসে তাড়াতাড়ি হিসাব দেন।রুয়েল একদম রেগে আগুন হয়ে গেলো।সে এক নিঃশ্বাসে কথা বলতে লাগলো।

ঊর্মি তখন অসুস্থ রোগীর মতো মিনমিনিয়ে বললো,কি হয়েছে তোর আবার?কেনো এরকম চিৎকার চেঁচামেচি করছিস?আমার শরীর ভালো নেই।যা বলার ধীরে সুস্থে বল।এতো জোরে কথা শুনলে আমার প্রবলেম হয়ে যাবে।

রুয়েল তখন বললো, দুপুরের খাবার কোথায়?তুমি বলে শুধু নিজেদের টা রান্না করেছো আমাদের খাবার কোথায়?

ঊর্মি তখন বললো, কেনো জান্নাত রান্না করে নি?

–না করে নি।আপনি নাকি বলেছেন আলাদা করে রান্না করতে।সেজন্য ও রান্না করে নি।

ঊর্মি তখন বললো, আমি তো এসব রাগ করে বলেছি।তাই বলে ও রান্না করবে না?আমি কি ওকে রান্না করতে বারণ করেছি?এই মেয়েটা যে আসলে কি চাচ্ছে সত্যি আমার মাথাতে ঢুকছে না।এই বলে ঊর্মি আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।আর বললো,আমার শরীর টা ভালো নয়।সেজন্য সবার জন্য রান্না করতে পারি নি।শুধু হিয়া আর দিয়ার জন্য একটু করেছি।সেখান থেকে একটু তোর ভাই ও খেলো।
এখন আমি কি করতে পারি বল?জান্নাত যদি ভাত না রান্না করে সেটাও কি আমার দোষ?আমার সাথে তোরা এরকম শুরু করেছিস কেনো?কোনদিকে যেতে বলছিস আমাকে?

রুয়েল এখন কাকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না।সেজন্য রুয়েল রাগ করে বাহিরে চলে গেলো।তার এসব অশান্তি ভালো লাগছে না।বিয়ে করে কই একটু শান্তি তে থাকবে উলটো অশান্তি শুরু হইছে সংসারের মধ্যে।

এদিকে রুয়েল রুম থেকে বের হতেই ঊর্মি রুবেল কে বললো,এই কু,,,বাচ্চা! কত করে বলেছি বিল্ডিং দুই টা নিজের নামে কর,বাচ্চাদের নামে কর।দরদ মাইরা যে ভাইকে দিয়েছিস,সে তো কথায় কথায় বিল্ডিং এর ভাগ চায়।এই বিল্ডিং দুইটা ভাগ হয়ে গেলে আমরা খাবো কি?চলবো কিভাবে?টাকা পাবো কোথায়?
রুবেল সেই কথা শুনে বললো, সেটাই তো ভাবছি।এ তো দেখি কথায় কথায় বিল্ডিং এর ভাগ চায়।কি করা যায় এখন?
ঊর্মি তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো, বসে থেকে আংগুল চোস?তুই আর কি করতে পারবি?আমি এতো করে বলেছি আমাদের ভবিষ্যৎ আছে।আর রুয়েল তো বিদেশেই ছিলো।বিল্ডিং দুই টাতে আজ যদি শুধু তোমার নাম দিতে তাহলে কি কথায় কথায় বিল্ডিং এর ভাগ চাইতো?আমাদের পা ধরে বসে থাকতো সে।

রুবেল তখন বললো,এসব ভাগাভাগি তো তুমি শুরু করছো?তোমাকে কে বলেছে সংসার আলাদা করার কথা?একটা কথা ভেবেচিন্তে বলো না।রুয়েলকে যদি আলাদা করে দেই তাহলে তো ও সবকিছু ভাগ করে নেবে।তখন তো ফাঁসবো আমরাই।সেজন্য ভুল করেও আর সংসার ভাগ করার কথা বলবে না।মিলেমিশে থাকো সবাই।

–কিন্তু আমার যে অসহ্য লাগছে জান্নাতকে।আমি সহ্য করতে পারছি না ওই মেয়েকে।বাসা থেকে বের হতে পারছি না আমি।সবাই শুধু বলছে একজনের বউ স্টাইল করে ঘুরে বেড়ায় আর আরেকজনের বউ কত সুন্দর পর্দা করে চলাফেরা করে।এসব আমার ভালো লাগছে না।সেজন্য কোথাও গেলে আমাকেও বোরকা পড়তে হচ্ছে।আমার কিন্তু এসব অসহ্য লাগছে।এই বলে ঊর্মি চিৎকার দিয়ে উঠলো।

রুবেল সেই কথা শুনে বললো, আমি তো চাই নি জান্নাতকে এ বাড়িতে বউ করে আনতে।তুমিই তো বুদ্ধি দিলে।বললে,মেয়েটা সহজ সরল।আমি যেভাবে বলবো সেভাবেই চলবে।তাহলে এখন সহ্য করো জ্বালা।আমাকে খবরদার এর মধ্যে টানবে না।এই বলে রুবেল দোকানে চলে গেলো।

ঊর্মি তখন মনে মনে ভাবলো,মেয়েটাকে তো এনেছিলাম রুয়েলের মনে জায়গা করে নেওয়ার জন্য,যাতে সে ভাবে আমরা ওর জন্য খুব চিন্তা করি।ওর খুব ভালো চাই।যাতে বিদেশ যাওয়ার পরও রুয়েল আমাদেরই টাকা দেয়।কিন্তু এখন তো বিদেশ গেলোই না।উলটো বসে বসে খাচ্ছে সংসারে।কি করি এখন?কিছুই বুঝতে পারছি না।

কিছুক্ষন পর রুয়েল আবার বাসায় আসলো।আর হোটেল থেকে জান্নাত আর তার মায়ের জন্য খাবার নিয়ে আসলো।রুয়েল তার মায়ের খাবার টা রুমে দিয়ে আসলো। আর জান্নাতের খাবারটা এনে জান্নাতের হাতে দিলো।আর বললো,তাড়াতাড়ি খাবারগুলো বের করুন।আর খেয়ে নিন।
জান্নাত চুপচাপ থাকলো।কারণ তার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।আর এসব খাবারদাবার কিছুতেই এখন তার গলা দিয়ে নামবে না।

হঠাৎ হিয়া আসলো রুমে।আর বললো,চাচ্চু!চাচ্চু!তুমি কি আনলা হাতে করে?তোমার হাতে ওটা কিসের ব্যাগ দেখলাম?
–কই কি মা?
–আমি তো দেখলাম।এই বলে টেবিলের উপর রাখা বিরিয়ানির প্যাকেট টার উপর চোখ গেলো তার।আর সে সাথে সাথে চিৎকার করে বললো,বিরিয়ানি এনেছো তুমি?দাও আমাকে।

রুয়েল তখন বললো, মামুনি তুমি তো এইমাত্র ভাত খেলে।আরেকটু পরে খাও।আমি তোমার জন্য বিকেলবেলা আবার আনবো।

–না আমি এটাই নিবো।

জান্নাত তখন বললো,দিয়ে দেন না ওকে।ওরকম করছেন কেনো?

–তাহলে আপনি এখন কি খাবেন?

–লাগবে না খাওয়া।তাছাড়া আমার খেতে ইচ্ছেও করছে না এখন।

হিয়া তখন বললো, ও এগুলো চাচীমনির জন্য এনেছো?আমার জন্য আনো নি?এই বলে হিয়া রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_২২
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আমি কি সাধে আলাদা হতে চাচ্ছি!এরা যে কাহিনী শুরু করেছে একজন সুস্থ সবল মানুষের পক্ষে এটা কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।একই বাড়িতে থাকে অথচ চুরি চুরি করে বউ এর জন্য এটা ওটা নিয়ে আসে।বড় মানুষ গুলোর কথা বাদই দিলাম,বাড়িতে যে দুইজন বাচ্চা আছে সেটা ভুলে যায় কি করে? নিজের বাপ আর চাচার মধ্যে আসলেই রাত দিন তফাত।নিজের ছোল হলে কি এই কাজ টা করতে পারতো।দুইদিনেই আমার বাচ্চারা বেশি হয়ে গেলো।এখনো তো নিজের বাচ্চা হয় ই নি।তখন যে আরো কি হবে কে জানে? এসব কাহিনী দেখে সত্যি আমার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।
ঊর্মি জোরে জোরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে কথাগুলো।

রুয়েল আর জান্নাত তাদের ঘর থেকেই কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে।তারা বুঝতে পারলো হিয়া তার মাকে গিয়ে সবকিছু বলে দিয়েছে।এসব কথা শোনার পর কি করে খাবারগুলো খাবে জান্নাত?
জান্নাত তখন রুয়েলকে বললো,আপনি আসলেই ভুল করেছেন।জানেনই তো বাসায় আরো মানুষ আছে।এভাবে শুধু আমার জন্য কেনো আনতে গেলেন?আপনার সবার জন্য আনা উচিত ছিলো।

রুয়েল তখন বললো,আমি কি এতোকিছু ভেবেছি নাকি?আপনি না খেয়ে আছেন সেজন্য আনলাম।তাছাড়া ভাবি তো ওদের জন্য রান্না করেছেই।আপনি আর মা যে না খেয়ে আছেন সে খোঁজ কি নিয়েছেন উনি?
–আমি এতোকিছু বুঝি না।এখন থেকে আর এভাবে শুধু আমার জন্য কিছু আনতে যাবেন না।যা আনবেন সবার জন্য আনবেন।
–আনিই তো।সবসময় তো বেশি করেই আনি।কিন্তু আজকে কারো কথা মাথাতেই ছিলো না।
–যান,এখন আনেন গিয়ে।সবার জন্য আনবেন।তারপর আমি খাবো।
রুয়েল সেই কথা শুনে আবার বাজারে চলে গেলো আর সবার জন্য বিরিয়ানির প্যাকেট আনলো।কিন্তু যেই বিরিয়ানির প্যাকেট ঊর্মির হাতে দিয়েছে,ঊর্মি সাথে সাথে সেগুলো ফেরত দিলো।আর বললো,এগুলো আবার আনতে গিয়েছিস কেনো?কে বলেছে আনতে?বিরিয়ানি না খেলে কি দিন যাবে না আমাদের?তাছাড়া তোর ভাই কি মরে গেছে নাকি?সে এখনো বেঁচেই আছে।হিয়া ওর বাবাকে বিরিয়ানি আনতে বলেছে।তোর বিরিয়ানি তুই খা।

রুয়েলের ভীষণ খারাপ লাগলো কথা গুলো শুনে।সে তখন বললো, ভাবি তুমি এভাবে বলছো কেনো?আমি কি হিয়া আর হৃদয় এর জন্য কিছু আনি না?প্রতিদিনই তো আনি।তাছাড়া আজ ঊর্মি আর মা না খেয়ে আছে।সেজন্য দুইজনের জন্য এনেছি শুধু।কিন্তু তুমি যেভাবে অশান্তি শুরু করছো সত্যি আমি আর নিতে পারছি না এসব।

–এখন তো আমার কথা ভালো লাগবেই না।আমরা তো সবাই এখন তোর বেশি হয়ে গেছি।

–ভাবি তুমি থামবে এবার!প্লিজ সংসারে আর অশান্তির সৃষ্টি করো না।তুমি কিন্তু খুব বেশি ঝামেলা করছো।আমার টাকা পয়সা খেয়েই তো ওরা আজ এতো বড় হয়েছে।তারপর ও কেনো এভাবে বলো যে চাচা আর বাবার মধ্যে রাত দিন তফাত?আমি তো কখনো ওদেরকে ভাই এর বাচ্চা ভাবি না।আমি তো মনে করি ওরা আমারই বাচ্চা।কিন্তু এখন তো আমার মনে হচ্ছে আমি বিদেশ যাই নি দেখে তোমার এতো রাগ আমার উপর?সেজন্য সারাক্ষণ এভাবে ঝগড়া করছো?

–কি বললি তুই?আবার বড় কথা বললি আমাকে?আমি ঝগড়া করছি?আর কি বললি?তুই বিদেশ না গেলে কি আমাদের সংসার চলতো না?আমরা কি না খেয়ে মরে যেতাম?শুনে রাখ!এতো লোভ নাই আমাদের।আর আমার বাচ্চারা তার বাপের টা খেয়েই বড় হয়েছে।আসলে তুই যে পালটে গেছিস সেটা আমি বুঝতে পারছি।তোর থেকে আর কিছুই আশা করি না আমরা।এই বলে ঊর্মি তার রুমে চলে যেতে ধরলো। কিন্তু রুয়েল তখন বললো,আমার আছে টাই বা কি?আর কি আশা করবা তোমরা?এ যাবত যা ইনকাম করছি সব তোমাদের দিয়েছি।তোমরা সেসব টাকা কি কি করেছো সেটার খোঁজ পর্যন্ত নেই নি আমি।কিন্তু তুমি যে ভাবে ঝামেলা করছো আর সংসারে অশান্তি করছো সেজন্য মনে হচ্ছে আমি মস্ত বড় এক ভুল করেছি।আমার সবকিছু খোঁজ নেওয়া উচিত ছিলো।তোমরা বেশি পেয়ে পেয়ে আজ মাথায় উঠে গেছো।আজ ভাইয়া বাসায় আসলে ব্যাপার টা মিটিয়ে নিতে চাই।আমার আর সত্যি ভালো লাগছে না।কারণ আমি শান্তি চাই।এতো অশান্তির মধ্যে আমি থাকতে পারবো না।এই বলে রুয়েল বাসা থেকেই বের হয়ে গেলো।সে বুঝতেই পারছে না তার এখন কি করা উচিত।কারণ তার কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই।সব তার ভাই এর কাছে।কিন্তু তার ভাবি যেভাবে পদে পদে ঝামেলা করছে এর তো একটা বিহিত করা উচিত তার।

ঊর্মি রুয়েলের মুখে এসব কথা শোনার সাথে সাথে রুবেল কে জানিয়ে দিলো।সে তার নিজের দোষের কথা কিছুই বললো না।শুধু রুয়েলের দোষ দিয়ে বললো, শীঘ্রই তোমার ভাই এর একটা ব্যবস্থা করো।এর কিন্তু পাওয়ার বেড়ে যাচ্ছে।আজকেও আমাকে বকে থুয়ে গেলো।যা নয় তাই বললো।আমি কি এখন ওর বড় বড় কথা সহ্য করে থাকবো নাকি?আজ বাচ্চাদের ও যা নয় তাই বললো,আমার ছেলে মেয়ে নাকি ওর টাকা খেয়ে বড় হইছে।তুমি যদি আজ রুয়েলের কিছু একটা না করো আমি কিন্তু শেষ করে ফেলবো নিজেকে।এই বলে ঊর্মি মায়া কান্না শুরু করে দিলো।

রুবেল ঊর্মির মুখে এসব কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।সে চিৎকার করে বললো,রুয়েল এতো বড় সাহস কই থেকে পেলো?আমার বাচ্চাদের কেও ছাড়ছে না সে।কথায় কথায় এতো টাকার হিসাব চাচ্ছে?দাঁড়াও এর একটা ব্যবস্থা করছি।এই বলে রুবেল কল কেটে দিলো।

কিছুক্ষণ পর রুয়েল দোকানে গেলে হঠাৎ দোকান ভরা মানুষের সামনেই রুবেল রুয়েলকে ধাক্কা দিতে দিতে দোকান থেকে বের করে দিলো।আর বললো,খবরদার আর দোকানের আশেপাশেও আসবি না।এটা আমার দোকান।এই দোকানে যেনো তোর ছায়াও না পড়ে।

রুয়েলের মেজাজ একদম গরম হয়ে গেলো।তার পুরো শরীর রাগে লাল হয়ে গেলো।কিন্তু বড় ভাই দেখে হাত তুলতে পারলো না।তবে সে আংগুল দেখিয়ে বললো,ভাই আপনি আমার গুরুজন।সেজন্য আপনার উপর হাত তোলার সাহস আমার নাই।কিন্তু আপনি ইদানীং আমার উপর যে অত্যাচার শুরু করেছেন তাতে আমি আর চুপ থাকতে পারছি না।যেদিন আমার এই হাত উঠে যাবে সেদিন কিন্তু আর থামবে না।আমি এখন বড় হয়ে গেছি।যখন তখন যেখানে সেখানে এভাবে আমার শরীরে হাত তুলবেন না।বি কেয়ারফুল!

–কি বললি তুই?এই কি বললি তুই?এই বলে রুবেল সবার সামনে রুয়েলকে মারতে লাগলো।রুয়েল কানে কপালে চড় খেয়ে নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারলো না।কারণ তার আজ ধৈর্যের বাঁধ ভেংগে গেছে।এতোগুলোর মানুষের সামনে তার ভাই আজ তাকে মারলো?তার অন্যায় টা কোথায় এটাই তো সে বুঝতে পারছে না।তবে রুয়েলের মেজাজ জ চরমে পৌঁছে গেছে।রুবেল যখন আবার তাকে মারতে এলো রুয়েল এবার আর চুপ করে থাকলো না।সে তখন তার পাশে রাখা চেয়ার টা উঠিয়ে রুবেলের দিকে তেড়ে আসলো।

তখন আশেপাশের মানুষ জন্য রুয়েলকে থামিয়ে দিলো।কিন্তু রুয়েল থামছেই না।কারণ সে এখন নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই।তার মনেই হচ্ছে না সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা তার নিজেরই ভাই।যাকে সে পিতার আসনে বসিয়ে রেখেছিলো এক সময়।

রুবেল তখন চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,মারবি আমাকে?মার!আয় মার আমাকে।আপনারা ছেড়ে দিন ওকে।এটাই মনে হয় দেখার বাকি ছিলো।যাকে ছোট থেকে বড় করলাম তারই হাতের আজ মার খাবো।এই বলে রুবেল মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।এদিকে সবাই রুয়েলকে ধমকাতে লাগলো।আর বললো,এটা কোনো কাজ করলে তুমি?এইভাবে বড় ভাই এর গায়ে কেউ হাত তোলে?ছিঃ রুয়েল! এট আমরা আশা করি নি।এইভাবে সবাই রুয়েলকেই বকতে লাগলো।কিন্তু রুবেল যে এতোক্ষণ তাকে বিনা কারণে মারতে লাগলো সেটা কারো চোখে পড়লো না।

রুয়েল চুপ করে থাকলো।কারন সে নিজেও জানে না কি করতে গিয়েছিলো সে।হঠাৎ রুবেল তাড়াতাড়ি করে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেলো।রুয়েল চুপচাপ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।তার ভালো লাগছে না কিছু।কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

রুবেল বাসায় গিয়ে রুয়েলের রুমের ভিতর যেয়ে তার সব কাপড়চোপড় বাহিরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।এদিকে জান্নাত রুমে বসে নামায পড়ছে।সে তার নামায শেষ না করা পর্যন্ত উঠতেও পারছে না।অন্যদিকে রুবেল একের পর এক জিনিস বাহিরে ফেলে দিচ্ছে।হঠাৎ রুয়েলের মা এলো সেখানে।আর বললো,বাবা কি হয়েছে তোর?কেনো এমন করছিস?

রুবেল তখন চিৎকার করে বললো, কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যাও।আর যদি একটা কথা বলো তাহলে কিন্তু ছেলের সাথে সাথে তোমাকেও বাসা থেকে বের করে দিবো।
রুয়েলের মা তখন বললো, তোর কি মাথা পাগল হয়েছে?কি বলছিস এসব?
–হ্যাঁ ঠিক বলছি।ওই জানোয়ার কে আমি আর এ বাসায় রাখবো না।ওর মুখ ও আমি আর দেখতে চাই না।আর যে ওর হয়ে ওকালতি করবে তাকেও রাখবো না আমি।

রুয়েলের মা সেই কথা শুনে বললো,তুই বললি আর হলো নাকি?তোর কি একার বাসা এটা?যে তুই একাই থাকবি?প্রতিদিন কি অশান্তি শুরু করেছিস তোরা?

–ছেলের হয়ে ওকালতি করতে আসছিস?তোকেও কিন্তু বের করে দিবো।কোনো কথা না বলে চুপচাপ বের হয়ে যা।
রুবেলের কথা শুনে তার মায়ের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।এতো বড় কথা তাকে বলতে পারলো রুবেল।এতো নীচে নেমে গেছে সে?রুয়েলের মা আর কোনো কথা না বলে তার রুমে চলে গেলো।তবে তিনিও আজ ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন।

এদিকে জান্নাত নামায পড়া শেষ করে যেই জায়নামাজ টা গুছিয়ে রাখতে গেছে ঠিক তখনি রুবেল এসে বললো,এই মুখোশধারী শয়তান মেয়ে!তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে স্বামীকে নিয়ে বের হয়ে যা।আজ তোর কারণেই সংসারে এতো অশান্তি হচ্ছে।আগে তো আমাদের সংসার এমন ছিলো না।তুই আসার পর থেকেই এমন অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।শুধু মুখ ঢাকলে আর নামায কালাম পড়লেই ভালো হওয়া যায় না।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।আগে জানলে ভুল করেও তোকে দিয়ে আমার ভাই এর বিয়ে দিতাম না।

জান্নাত যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।সে আর এক পা এগোতে বা পিছাতে পারলো না।রুবেলের মুখের এমন বাজে ভাষা শুনে সে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার বড় ভাসুর যে কোনো দিন এভাবে তাকে বলবে সে কল্পনাও করে নি।জান্নাতের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো।তার চোখের পানি কিছুতেই আর থামলো না।সে তখন তার বাবাকে ফোন দিলো।আর কাঁদতে কাঁদতে বললো,বাবা কই আছো তুমি?তাড়াতাড়ি এসে আমাকে নিয়ে যাও।আমি আর থাকতে পারবো না এই বাড়িতে।

জান্নাতের কান্না করা দেখে জহির সাহেব বললেন, মা!কি হয়েছে তোর?এভাবে কাঁদছিস কেনো?

জান্নাত তখন বললো,আগে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।তারপর বলছি।প্লিজ বাবা!আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আমি আর থাকতে পারছি না এ বাড়িতে।এই বলে জান্নাত ফোন রেখে দিলো।

জহির সাহেব জান্নাতের কান্না করা দেখে আর স্থির হতে পারলেন না।তখন তিনি সাথে সাথে রুয়েল কে ফোন দিলেন।আর বললেন,বাবা রুয়েল।জান্নাতের কি হয়েছে?ও এভাবে কাঁদছে কেনো?আর আমাকে কেনো তোমাদের বাসায় যেতে বলছে?

রুয়েল বুঝতে পারলো তার ভাই বাসায় গিয়ে অশান্তি শুরু করেছে।সেজন্য সে তার শশুড় কে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,বাবা আপনি ওকে নিয়ে অযথাই চিন্তা করছেন। কিছুই হয় নি।হয়তো সবার কথা মনে পড়েছে এজন্য কাঁদছে।এই বলে রুয়েল তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে গেলো।

রুয়েল বাসায় গিয়ে দেখে তার সব জিনিসপত্র বাহিরে ফেলে দেওয়া।রুয়েল সেজন্য তাড়াতাড়ি করে রুমে ঢুকলো।রুমে যেতেই জান্নাত তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।আর রুবেল তাকে কি কি বলেছে সব কথা বললো।রুয়েল জান্নাতের মুখে এসব কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলেও,নিজেকে সে কন্ট্রোল করে নিলো।কারণ সে বুঝতে পারলো এভাবে রাগারাগি, মারামারি করে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।তাছাড়া আর কখনোই তাদের একসাথে থাকা সম্ভব নয়।সেজন্য এ নিয়ে ঝামেলা না করে সে ভালোই ভালোই আলাদা হয়ে যাবে।ওরা ওদের মতো থাকবে আর সে জান্নাত আর তার মাকে নিয়ে আলাদা থাকবে।এদিকে জান্নাত কাঁদতেই আছে।কারণ রুবেলের কথাগুলো তার ভীষণ খারাপ লেগেছে।তার খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।

রুয়েল তখন জান্নাতকে তার বুকের সাথে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরলো, আর তার মাথা বুলিয়ে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।
জান্নাত!আমার লক্ষ্ণী বউ।আর কাঁদবেন না প্লিজ।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত।ভাইয়া কেনো যে আমাদের সাথে এরকম করছে সত্যি আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।আমার ভাইয়া তো আগে এরকম ছিলো না।তবে আমি আর ভাইয়া ভাবিকে সুযোগ দিতে চাই না।জীবনে অনেক বড় ভুল করেছি তাদের কে বিশ্বাস করে।আমি কখনো কল্পনাও করি নি তারা আমার সাথে এমন আচরণ করবে।এতোদিন তারা আমার টাকাকে ভালোবেসেছে।আমাকে কখনো তারা ভালোই বাসে নি।জীবনের সমস্ত ইনকাম তাদের হাতে তুলে দিয়েছি।কিন্তু তারা যে এভাবে তার প্রতিদান দেবে সত্যি আমি ভাবি নি কখনো।সেজন্য এখন আর আমি ভুল করতে চাই না।এখনো যা যা আছে ঠিক ভাবে চলতে পারবো।হয় তো রাজার মতো চলাফেরা করতে পারবো না,তবে দিনপথ যাবে ইনশাআল্লাহ। প্লিজ জান্নাত!আমার এই বিপদে আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না।আমার পাশে থেকে সারাজীবন সাহস যোগাবেন।এটাই আমি চাই।আর কিছু চাই না আমি।প্লিজ জান্নাত!কথা দিন আর কখনো আমাকে রেখে একা একা কোথাও যেতে চাইবেন না?

জান্নাত রুয়েলের মুখে এমন কথা শুনে আর কি করে বাড়ি চলে যাবে?সেজন্য সে তার সিদ্ধান্ত পালটিয়ে ফেললো।তবে রুবেলের কথাগুলো সে কখনো ভুলতে পারবে না।সারাজীবন এই কথাগুলো তার মনে হবে।
কারণ রুবেলের কথাগুলো শুনে সত্যি সে অনেক বেশি আঘাত পেয়েছে।নামায শেষে যখন সে মোনাজাত করে সবার প্রথম রুবেলের সেই কথাগুলোই তার মনে হয়।আর দু চোখ বেয়ে এমনিতেই জল গড়িয়ে পড়ে।তাহলে কত টা আঘাত পেয়েছে সে!

কিছুক্ষন পর রুয়েল তার বোন আর দুলাভাই এবং মামাকে খবর দিলো।তারা যেনো তাড়াতাড়ি তাদের বাসায় আসে।সবাই যখন জিজ্ঞেস করলো কেনো আসতে হবে?
রুয়েল তখন বললো,আমি মা আর জান্নাতকে নিয়ে আলাদা থাকবো।আপনারা এসে আমার ভাগের জমিজমা,বাড়ি-গাড়ি যা কিছু আছে সব বের করে দিন।আমি আর ভাই ভাবীর সাথে থাকতে চাই না।

রুয়েলের কথা শুনে সবাই বেশ অবাক হলো।মাত্র কয়েকদিন হলো বিয়ে করেছে আর তাতেই রুয়েল আলাদা থাকতে চাচ্ছে?

রুয়েল আর ফোনের মধ্যে এসব ঝামেলার কথা বললো না।শুধু বললো তাড়াতাড়ি সবাই আমার বাসায় চলে আসো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here