আলো আঁধারের খেলা পর্ব -১৯+২০

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১৯
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

রুয়েল জান্নাতকে নিয়ে বাসায় ফিরলো।তবে সে এসব বিষয় নিয়ে কারো সাথে কোনো কথা বললো না।বা তার মাকেও বললো না কেনো তার ভাই আর ভাবী জান্নাতের বাড়ি গেলো না?তবে ঊর্মির চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে এখনো রেগে আছে রুয়েলের উপর।জান্নাত বাসায় প্রবেশ করেই ঊর্মিকে সালাম দিলো।বাট সে সালামের কোনো উত্তর পর্যন্ত দিলো না।বরং সেখান থেকে তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো।

পরের দিন সকালবেলা নাস্তার টেবিলে বসে রুয়েল তার সিদ্ধান্তের কথা জানালো।সে বললো,ভাইয়া আমি আর সিংগাপুর যেতে চাচ্ছি না।আমি দেশেই আপনার সাথে ব্যবসা করতে চাই।

কথাটা শোনামাত্র রুবেল আর ঊর্মির মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়লো।তারা কল্পনাও করে নি বিয়ে করার পর পরই রুয়েল এতো বড় একটা দুঃসংবাদ দেবে তাদের।আগে জানলে তারা কোনোদিনই রুয়েলকে বিয়ে করাতো না।আরো দেরী করে বিয়ে করাতো তাকে।এতোদিন তারা শুধু রুয়েলের টাকা খেয়েছে।তাকে একটিবারের জন্য দেশে এসে বিয়ে করার কথা বলে নি।অন্যদিকে রুয়েল নিজেও লজ্জার জন্য বিয়ের কথা বলতে পারে নি কাউকে।কারণ সে এখন যথেষ্ট ম্যাচিউর হয়েছে। সেজন্য কি করে তার নিজের বিয়ের কথা নিজের মুখে বলবে।কিন্তু তার মা যখন দেখলো রুবেল আর ঊর্মির রুয়েলের বিয়ে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই তখন তিনি নিজেই রুয়েলকে চাপ দিলেন বিয়ের জন্য।তাকে দেশে আসার জন্য অনেক রিকুয়েষ্ট করলেন।সেজন্য রুয়েল দেশে এসেছে এবার।

রুবেল তার মাথা ঠান্ডা রাখলো আর বললো,ভাই কি বলছিস এসব?সিংগাপুর যাবি না মানে?তাহলে আমাদের ওখানকার ব্যবসা বানিজ্যের কি হবে?

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,ভাইয়া,আমি ভাবছি দোকানটা বিক্রি করে দেবো।আর বিদেশ যেতে ইচ্ছে করছে না আমার।জীবনের পুরো সময় টা তো ওখানেই কাটালাম।এখন দেশে থেকেই কিছু একটা করতে চাই।

রুবেল তখন বললো,দেখ ভাই আরেকবার যা।আর কয়েকবছর থেকে আয়।বাংলাদেশের ব্যবসা বানিজ্য তেমন একটা ভালো না।তাছাড়া আমাদের শো রুম এখনো তেমন একটা প্রচলিত হয় নি।যা লাভ হয় তা দিয়ে কিছুতেই সংসার চলবে না।

রুয়েল তার ভাই এর কথা শুনে বেশ আশ্চর্য হলো,সে তখন চিৎকার করে বললো, আমাদের কি শুধু শো রুমই আছে?যে শো রুমের টাকা দিয়ে সংসার চলাতে হবে?দুইটা বিল্ডিং থেকে মিনিমাম ৬০ হাজার টাকা আসে।গাড়ি ভাড়া থেকে টাকা আসে।গ্রামের জমিজমা থেকে টাকা আসে।তাছাড়া ব্যাংকেও যথেষ্ট টাকা আছে যা দিয়ে আমরা ব্যবসাটাকে আরো বড় করতে পারি।

রুয়েলের মুখে টাকার হিসাব শুনে রুবেল আর কিছুতেই ঢোক গিলতে পারলো না।তবুও কষ্ট করে তাড়াতাড়ি করে ঢোক গিললো।আর এক গ্লাস পানি খেয়েই নাস্তা খাওয়া শেষ করলো।এদিকে রুয়েলের মা চুপচাপ আছে।তিনি আর এসবের মধ্যে কি বলবেন?এখন ছেলেদের হাতে সংসার।তারা যা ভালো মনে করবে সেটাই হবে।যত দিন রুয়েলের বাবা বেঁচে ছিলো ততোদিন ওনার রাজত্ব ছিলো।এখন তো পুরো সংসারের দায়িত্ব ঊর্মির হাতে।সে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়েছে সংসার টা।ঊর্মি আর তার বাচ্চাদের বিলাসিতা জীবন যাপন দেখেই তিনি রুয়েল কে তাড়াতাড়ি করে দেশে এনেছেন।যাতে রুয়েল বিয়ে করে সংসার বুঝতে পারে।যেহেতু রুবেল ও তার নিজেরই ছেলে।সেজন্য রুয়েলকে বলতেও পারি নি বাবা নিজের জন্য কিছু টাকা জমিয়ে রাখ,সব টাকা রুবেল কে দিস না।কারণ রুবেল আর ঊর্মি যদি একবার এই কথা টা শুনতো তখন সব দোষ তাকেই দিতো।বলতো,তাদের মায়ের জন্য রুয়েল এমন করছে।সেজন্য তিনি সবসময় টাকা পয়সার ব্যাপারে চুপচাপই থাকেন।

এদিকে ঊর্মি রুয়েলের কাছে গিয়ে বললো,দেখ ভাই!মাথা ঠান্ডা কর।একটু বোঝার চেষ্টা কর।তুই যে ৬০ হাজার টাকা বাসা ভাড়ার কথা বলছিস সেই টাকা তো প্রতি মাসে আসে না।আর ভাড়াটিয়া রা তো সবসময় থাকে না।কোনো মাসে পুরো ফ্ল্যাট ভাড়া থাকে আবার কোনো মাসে অর্ধেক ফ্ল্যাট ই পড়ে থাকে।আর যে কয় টা ভাড়াটিয়া আছে তারা ঠিকভাবে টাকা দিতে চায় না।এসব ঘর ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার কিছুতেই চলবে না।আমরা তোর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আরেকবার যেতে বলছি বিদেশ।বিয়ে করেছিস।দুই দিন পর ছেলেমেয়ে হবে।তাদের তো বড় করতে হবে।সেজন্য বলছি আরেকবার যা।কয়েক বছর থেকে আয়।এবারের টাকা আমাদের কে দিতে হবে না।তুই নিজের কাছেই রেখে দিস।তবুও দেশে থাকিস না।এখানে থেকে কিছুই করতে পারবি না।

–আমি বলেছি যে যাবো না,তো যাবোই না।সারাবছর এভাবে আমি বিদেশ গিয়ে পড়ে থাকতে পারবো না।কথাটা বেশ জোরে চিৎকার করেই বললো রুয়েল।কারণ তার মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে।সে ভাবতেই পারছে না দেশে থাকার কথা শুনে তার ভাই আর ভাবি এরকম কথা বলবে।

রুবেল এবার ভীষণ রেগে গেলো।সে রুয়েলের কাছে গিয়ে বললো,তুই বিদেশ যাবি কি যাবি না সেটা তোর ব্যাপার।তবে মনে রাখ দেশে থাকলে কিছুই করতে পারবি না।সংসার চালাতে কত টাকা লাগে তোর ধারণাই নাই। সংসার তো আর তুই চালাস না।সংসার চালাই আমি।সেজন্য একটা সংসার চালাতে কত টাকা লাগে সেটা তোর থেকে আমি ভালো জানি।এই যে তুই দেশে এসেছিস, এখন তো আর বিদেশ থেকে টাকা আসছে না। এতোগুলো মানুষ বসে থেকে খাচ্ছে।আমি একদম হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।আমি কিন্তু হাঁপিয়ে গেছি।আমি একা পারবো না সামলাতে।

রুয়েল তখন বললো,এতোগুলো মানুষ মানে?কোথায় এতোগুলো মানুষ? তোমার বউ বাচ্চা আর মা।আর আমি তো এসেছি মাত্র একমাস হলো।আর জান্নাত এসেছে মাত্র ১০ দিন হলো।আর তাদেই আপনি হাঁপসে গেছেন ভাইয়া?এতোবছর যে টাকা পয়সা পাঠালাম সেগুলো কোথায়?তাছাড়া আমি তো আমার ভাগের জমিজমা, বাড়ি, গাড়ি থেকে এখন পর্যন্ত একটা টাকাও নেই নি।বা কোনো দিন হিসাবই নেই নি।যখন আমি আমার ভাগের টাকা নিয়ে নেবো তখন তাহলে কি হবে?

রুবেল সেই কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।সে হঠাৎ রুয়েল কে জোরে করে একটা ধাক্কা মারলো?আর চিৎকার করে বললো,কিসের ভাগ রে?তুই কিসের ভাগ পাস?

রুবেলের ধাক্কা খেয়ে রুয়েল ছিটকে পড়ে গেলো।রুয়েলকে পড়া দেখে রুয়েলের মা আর জান্নাত দৌঁড়ে চলে গেলো।রুয়েল তখন ওদের কে সরিয়ে দিয়ে নিজেই উঠে এলো।
আর বললো,আমি ভাগ পাই না?বিল্ডিং এ ভাগ আছে আমার,জমিজমা তে ভাগ আছে।আপনি তো আমার ভাগ সহ খাচ্ছেন।আমি তো কিছুরই হিসাব নেয় নি আজ পর্যন্ত।আমার ভাগ সহ খাচ্ছেন তবুও বলছেন সংসার চালাতে চালাতে আপনি হাঁপসে গেছেন?আমি এতো যাবত যত টাকা পাঠায়ছি তার আগে হিসাব দেন।আজ আমি সবকিছুর হিসাব নিতে চাই।এতোদিন জানতে চাই নি।কিন্তু আজ বুঝতে পারছি কত বড় ভুল করেছি আমি!

রুবেল এবার আরো বেশি রেগে গেলো।সে তখন এগিয়ে এসে রুয়েলকে জোরে করে একটা চড় মারলো আর বললো,ভাগ শিখিয়ে দেবো।কিসের ভাগ পাস তুই?আর টাকার কথা বলছিস?এসব কি তোর টাকা?সব তো আমার টাকা।ওখানকার ব্যবসা বানিজ্য বাবা সব আমার হাতে দিয়ে গেছে।আমি ব্যবসাকে আরো বড় করেছি।তোর হাতে দিয়ে এসেছি দেখে কি তোর ব্যবসা হয়ে গেলো ওটা?আর আমি বিদেশ নিয়ে গেছিলাম দেখেই এতো টাকার মুখ দেখেছিস?দেশে থাকলে তো এতোদিন নষ্ট হয়ে যাইতিস।ভিক্ষা করেও ভাত পাইতি না।আর আজ আমাকে ভাগ শেখাস?যা তোর কিছুই নাই।আজ থেকে সবকিছু আমার।তোকে আমি কিছুই দেবো না।পারলে নিয়ে দেখা।এই বলে রুবেল তার রুমে চলে গেলো।

রুবেলের কথা শুনে রুয়েলের চোখে পানি এসে গেলো।তার ভাই এসব কি বলছে?যে ভাইকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো আজ সে এসব কি বলছে?এতোদিনের সব ইনকামের টাকা তো সে তাকেই দিতো।আর আজ যখন বিদেশ যাবে না জানালো আর তখনি তার ভাই এর আসল চেহারা ভেসে উঠলো।এই এক মাসেই সে তাদের কাছে বোঝা হয়ে গেলো?

রুয়েলের মা এবার এগিয়ে এলো রুয়েলের কাছে।আর হাত ধরে বললো,বাবা মাথা টা ঠান্ডা কর।রুবেল রাগের মাথায় ওসব বলেছে।মন খারাপ করিস না।

রুয়েল কোনো কথা না বলে রাগ করে তার রুমে চলে গেলো।তার আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।যে ছেলে জীবনেও কাঁদে নি তার আজ চোখ জলে ছলছল করছে।তার ভাই তো তাকে একটিবারের জন্য শান্ত্বনা দিয়ে বলতে পারতো যে, আর বিদেশ যেতে হবে না।দুই ভাই মিলেমিশেই দেশে কিছু একটা করবো।কিন্তু তিনি সেটা না করে উলটো বকাঝকা করলো।মাত্র এক মাস হইছে তার দেশে আসা।আর তাতেই সে সবার কাছে বোঝা হয়ে গেলো?

জান্নাত নিজেও চলে গেলো রুমে।কিন্তু সে রুমে গিয়ে দেখে রুয়েল নেই রুমে।সেজন্য জান্নাত বেলকুনিতে চলে গেলো।হ্যাঁ রুয়েল বেলকুনিতেই দাঁড়িয়ে আছে।আর মনের সুখে সিগারেট টানছে।জান্নাত সেজন্য সেখান থেকে সরে এলো।সে আর কিছু বললো না।

এদিকে ঊর্মি রুমে গিয়ে রুবেলের মাথা টা আরো খারাপ করে দিলো।ঊর্মি বললো,
এইসব ছোটলোক দের সাথে আসলেই আত্নীয়তা করা ঠিক হয় নি আমাদের।এসব রুয়েলের নিজস্ব মতামত না।নিশ্চয় রুয়েলের শশুড় শাশুড়ী এ বুদ্ধি দিয়েছে।তা না হলে রুয়েল হঠাৎ এতোকিছুর হিসাব নিচ্ছে কেনো?আর কেনোই বা দেশে থাকতে চাচ্ছে?আর কেনোই বা তোমার সাথে ব্যবসা করতে চাচ্ছে?

রুবেল চুপচাপ থাকলো।

ঊর্মি তখন বললো, এখনো সময় আছে হিয়ার আব্বু,যা করার করে নাও।পরে না হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।আর রুয়েল যদি বিদেশ চলেও যায় আমার মনে হয় না সে আগের মতো আর আমাদের কে টাকা পাঠাবে।সেজন্য ওকে বিদেশ পাঠিয়ে কোনো লাভও হবে না।বিদেশের টাকার আশা ছেড়ে দাও।এখনো যা কিছু আছে সব নিজের করে নাও।তা না হলে দুই দিন অন্তর অন্তর সে এসবের ভাগ চাইবে।ওকে যদি ভাগ দিয়ে আলাদা করে দাও,বিপদে তো পড়বো আমরা।আমি সেদিনই বুঝেছি রুয়েল পালটে গেছে।যেদিন ও বলেছে আমরা নাকি সবাই ওর রোজগার করা টাকা বসে বসে খাচ্ছি।

রুবেল এবারও চুপচাপ থাকলো

ঊর্মি তখন বললো,রুয়েল যদি জানে ব্যাংক ব্যালেন্স এ কোনো টাকা নেই তাহলে তো ওর মাথা আরো বেশি গরম হয়ে যাবে।কিছু একটা বুদ্ধি বের করে থামিয়ে দাও ওকে।

এদিকে ব্যাংকের সকল টাকা রুয়েল দেশে আসার আগেই রুবেল সরিয়ে ফেলেছে।সেই টাকা দিয়ে রুবেল আরো তিনটা গাড়ি কিনে ভাড়া দিয়েছে।আর গোপনে কিছু জমিও কিনেছে।রুয়েল এসবের কিছুই জানে না।কারণ তারা জানে বিয়ের পর রুয়েল অবশ্যই চেঞ্জ হবে।তখন তো আর আগের মতো টাকা দেবে না।সেজন্য তারা তাদের ব্যবস্থা আগেই করে নিয়েছে।

রুবেল তখন বললো,হ্যাঁ,এখন আমার মাথা গরম করলে চলবে না।ভেবেচিন্তে কাজ করতে হবে।রুয়েলের সাথে বেশি বড় কথা বললে ও আরো বেশি রেগে যাবে।আর ও যদি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন তো বিপদে পড়বো আমরাই।বিল্ডিং এর ভাড়ার টাকা সমান সমান ভাগ হবে।জমিজমা সবকিছুর ভাগ দিতে হবে। তার চেয়ে বরং ওর সাথে মিলেমিশে ব্যবসা টাই করি। তাহলে ওকে আর ব্যাংকের টাকার হিসাব ও দিতে হবে না।রুয়েল জিজ্ঞেস করলে বলবো,ব্যবসা করতেই সব টাকা শেষ হয়ে গেছে।

ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো,ঠিক বলেছো।এটাই করা উচিত।ও যখন বিদেশ যেতে চাইছে না,তাহলে ওকে আর এ ব্যাপারে জোর করা উচিত হবে না আমাদের।ওকে তোমার সাথে দোকানেই বসিয়ে রাখো।ও নিজেও দেখুক কত টাকা আসে দোকান থেকে?

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼

রুয়েল ওয়াশরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর রেডি হয়ে জান্নাতকে ডাকতে লাগলো।
জান্নাত এতোক্ষণ তার শাশুড়ীর রুমে ছিলো।রুয়েলের ডাক শোনামাত্র দৌঁড়ে চলে এলো রুমে। এসে দেখে রুয়েল কোথায় যেনো যাচ্ছে।

জান্নাত রুমে ঢুকতেই রুয়েল এগিয়ে এসে জান্নাতের কপালে একটা কিস করে বললো, আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।ফিরতে লেট হবে।
–কই যাবেন?
–একটা দরকারী কাজ আছে।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো,ঠিক আছে।তাড়াতাড়ি ফিরবেন কিন্তু।আর এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা করবেন না।মনে করে মসজিদে গিয়ে পড়ে নিবেন।

–হুম।এই বলে রুয়েল আরো একটা কিস করলো জান্নাতের কপালে।তারপর কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকলো।
জান্নাত বুঝতে পারলো রুয়েল মানসিক ভাবে ভীষণ ভেংগে পড়েছে।সে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু সে কিভাবে তাকে শান্ত্বনা দিতে পারে বুঝতে পারলো না।সেজন্য জান্নাত নিজেও রুয়েলকে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
রুয়েল তখন বললো,আচ্ছা আসি।দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।এই বলে রুয়েল তার মার রুমে চলে গেলো।

কিন্তু মায়ের রুমে গিয়ে দেখে রুবেল আর ঊর্মি গল্প করছে।রুয়েল তবুও তার মায়ের কাছে গেলো।আর তার মাকে বললো,মা আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।
রুয়েলের মা তখন বললো,এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস?পাঁচ মিনিট একটু দাঁড়া।রুবেল কি বলে শোন আগে।এই বলে মা রুবেল কে বললো,রুবেল বল,কি বলতে চাস।

রুবেল তখন রুয়েলের হাত ধরে বললো,ভাই ক্ষমা করে দে।রাগের মাথায় তো অনেক কথাই বলেছি তখন।আসলে আমার মাথাটা ঠিক ছিলো না।

রুয়েল চুপ করে থাকলো।এখানে তার আর কি বলার আছে?বড় ভাই মাফ চাচ্ছে সে আর কি বলবে?

রুবেল তখন বললো,তুই যখন বিদেশ যেতে চাচ্ছিস না,তখন আর যেতে হবে না।কাল থেকে আমাদের শো রুমে বসিস।

রুয়েল কোনো কথা বললো না।কারণ তার মন টা এখনো ভীষণ খারাপ।কিছুতেই তার এই ভাংগা মন আর ঠিক হবে না।তবুও বড় ভাই যখন এতো করে রিকুয়েষ্ট করছে সে আর না করতে পারলো না।সব কিছু ভুলে তার ভাই এর সাথে শো রুমে বসার সিদ্ধান্ত নিলো।
#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_২০
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

–হয়েছে এবার,ছাড়ুন বলছি।
–থাকুন না,ভালোই তো লাগছে।
–আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।
–রিয়েলি!তোমার চোখ মুখ দেখে কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে না।
জান্নাত তখন বললো, আপনার যা মনে হয় সেটা শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকুন।আমার কাজ আছে অনেক।এই বলে জান্নাত তাড়াতাড়ি করে উঠতে ধরলো।কিন্তু রুয়েল নাছোড়বান্দা! সে জোর করেই জান্নাত কে টেনে আনলো তার কাছে।আর বললো,আমি যখন চাইছি আপনাকে সাথে করে নিয়েই ঘুমাবো তখন সেটাই হবে।এই বলে রুয়েল জান্নাতকে নিয়ে বেডে চলে গেলো।জান্নাত তখন বললো,আমি শুয়ে থাকলে আপনাদের জন্য রান্নাবান্না করবে কে?
–রান্না করার বহুত লোক আছে।আপনি যে এতোদিন ছিলেন না,তখন বুঝি আমরা না খেয়ে ছিলাম।
রুয়েল বুঝতেই চাচ্ছে না জান্নাতের কথা।সে জোর করেই জান্নাতকে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখলো।জান্নাত অনেকবার বলার পরও রুয়েল কিছুতেই তাকে ছেড়ে দিলো না।

ফজরের নামায পড়ে রোজ রোজ রুয়েল এই একই আবদার করে।কিন্তু জান্নাত রুয়েলের সেই আবদার কিছুতেই পূরণ করতে পারে না।সকালবেলা সবার জন্য নাস্তা রেডি করার জন্য জান্নাতকে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে যেতে হয়।সে আর রুয়েলের সাথে ঘুমানোর সুযোগ পায় না।সেজন্য রুয়েল একা একাই শুয়ে থাকে।

জান্নাত এখন রোজ রোজ সবার জন্য সকাল বেলার নাস্তা রেডি করে।শুধু সকাল বেলাই না,দুপুর আর রাতের খাবারও সেই রেডি করে।তবে সকালের নাস্তা রেডি করতে জান্নাত কে বেশি হয়রানি হতে হয়।একেকজন একেক রকম খাবার খায়।ঊর্মি আর ভুল করেও রান্নাঘরের দিকে উঁকি দেয় না।সে শুধু টাইম মতো এসে তার নিজের খাবার টা খেয়ে যায়।তারপর স্বামী আর বাচ্চাদের খাবার টা আলাদা করে রাখে।জান্নাত এ নিয়ে কোনো ঝামেলা করে না।কারণ সে এই সংসার টাকে নিজের সংসার ভাবে আর সকল সদস্য কে নিজের পরিবারের একটা অংশ ভাবে।তাছাড়া ঊর্মি বার বার জান্নাতকে বলে দিয়েছে,বিয়ের পর থেকে সে সবার জন্য পরিশ্রম করে আসতেছে,হাত পুড়ে রান্না করেছে সবার জন্য,কিন্তু সে এখন আর কোনো কাজকর্ম করতে পারবে না,এখন বিশ্রাম নিতে চাই।এখন সব দায়িত্ব রুয়েলের বউ এর।কারণ সংসার টা তো এখন তারই।জান্নাত ঊর্মির মুখে এরকম কথা শুনে আর কখনোই তার জন্য কোনো কাজ ফেলে রাখে না।নিজের সংসার ভেবে একা একাই সব কাজ করে।

এতোদিন হেনার সাথে মিলেমিশে কাজ করেছে জান্নাত,সেজন্য অতোটা কষ্ট হয় নি।সময় মতোই সব কাজ একা একা সামলিয়ে নিয়েছে।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো হেনা এক সপ্তাহ থেকে কাজে আসছে না।শোনা যাচ্ছে সে আর কাজ করবে না এ বাড়িতে।হেনা নাকি গার্মেন্টসে চাকরি করবে এখন।এটাও ঊর্মিরই টেকনিক।সেই হেনাকে কাজে আসতে নিষেধ করেছে।যার জন্য হেনা আর কাজে আসে না।ঊর্মি জান্নাতের দ্বারাই সব কাজ করাতে চায়।সে জান্নাতকে শান্তিতে থাকতে দেবে না এটাই তার উদ্দেশ্য। অন্যদিকে রুয়েল জান্নাতের উপর কাজের চাপ কমানোর জন্য কাজের মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে।কিন্তু মনের মতো কাউকেই পায় নি এখন পর্যন্ত।সেজন্য বাধ্য হয়ে এখন জান্নাতকেই একা হাতে সব কাজ সামলাতে হয়।তার শাশুড়ী তো সারাদিন ঘরের মধ্যে শুয়ে থাকে।আর নামাযের টাইমে শুধু নামায পড়ে।তারও কোনো কাজ নেই এ বাড়িতে।অন্যদিকে ঊর্মি সারাদিন মোবাইল আর টিভি নিয়ে পড়ে থাকে।শুধু হিয়া আর হৃদয় কে স্কুলে দিয়ে আসে আর নিয়ে আসে।তাছাড়া আর কোনো কাজ নেই ঊর্মির।

এদিকে রুয়েল সকাল দশ টাই শো রুমে চলে যায়।আবার দুপুরে খেয়েদেয়ে একবারে রাত বারো টাই আসে।সারাদিন সে জান্নাতকে কোনো সময় দিতে পারে না।বা তার সাথে রোমান্টিক কোনো মুহুর্তও কাটাতে পারে না।তবুও জান্নাত কিছু বলে না,বা রুয়েলকে বলে না কেনো সে এভাবে একা একা শো রুমে পড়ে থাকে।অন্যদিকে রুবেল তার অসুখের বাহানা দিয়ে রাত আটটার দিকেই বাসায় চলে আসে।জান্নাত ব্যস্ত থাকে বাড়িতে।অন্যদিকে রুয়েল ব্যস্ত থাকে দোকানে।

অনেক দিন পর রুয়েল জান্নাত কে এইভাবে কাছে পেয়ে ভুলেই গেলো ইতোমধ্যে আটটা টা বেজে গেছে।জান্নাত নিজেও রুয়েলের বুকে মাথা দিয়ে আরাম করে শুয়ে থাকলো।হঠাৎ কে যেনো দরজা ঠকঠকাতে লাগলো।জান্নাত দরজা ঠোকার শব্দ শুনে একদম লাফ দিয়ে উঠলো।আর উঠেই ঘড়ির দিকে তাকালো।ওমা!এতো দেখি আটটা পার হয়ে গেছে।

জান্নাতকে এভাবে ওঠা দেখে রুয়েল নিজেও চমকে উঠলো।আর বললো,কি হয়েছে জান্নাত?জান্নাত রুয়েলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় পাচ্ছে না।সে তাড়াতাড়ি করে ওড়না টা ভালো করে পুরো শরীরে পেঁচিয়ে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলতে গেলো।দরজা খুলতেই দেখে তার শাশুড়ী দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত কিছু বলার আগেই তিনি বকাঝকা শুরু করে দিলেন।

–এটা কি তোমার বাপের বাড়ি পাইছো,যে যখন খুশি ঘুম থেকে উঠবে।সকালের রান্না কখন করবে?হিয়া আর হৃদয় যে স্কুলে যাবে সে খেয়াল আছে?

রুয়েল তার মায়ের কথা শুনে নিজেও উঠে এলো।আর বললো,কি হয়েছে মা?জান্নাতকে ওভাবে বকাঝকা করছো কেনো?

–কই বকাঝকা করলাম?সকালের নাস্তা বানাবে কখন?সেটা বলতেছি।

রুয়েল তখন বললো,না তুমি তো এটা বলো নি।আরো কি সব যেনো বললে?

রুয়েলের মা তখন বললো, হিয়া আর হৃদয় না খেয়েই স্কুলে যাচ্ছে।সেজন্য ঊর্মি রাগ হয়েছে।সেজন্য ডাকতে এসেছি জান্নাতকে।তোদের যা মন চায় কর গিয়ে।আমি কেন এসবের মধ্যে আসতে যামু?রান্না যখন হবে তখনি আমি খামু।এই বলে রুয়েলের মা চলে গেলো।

এদিকে জান্নাত তার শাশুড়ীর কথা শুনে একদম কেঁদে একাকার।সে কারো বড় কথা সহ্য করতে পারে না।তাছাড়া রোজ রোজই তো সে ঠিক সময়েই ওঠে।আজ একটু লেট হয়েছে আর তার জন্য এভাবে কথা শোনালো তাকে।

জান্নাত চোখের পানি মুছতে মুছতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।কিন্তু গিয়ে দেখে রান্নাঘরে ঊর্মি। সে আজ রান্না করছে।জান্নাত কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না।তবুও জান্নাত ভয়ে ভয়ে ঊর্মিকে বললো,ভাবি,আপনি রুমে যান,আমি রান্না করছি।
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো,লাগবে না রান্না করা।যাও তুমি রুমে যাও।স্বামীর সাথে আরো বেশি করে ঘুম পাড়ো।

ঊর্মির মুখে এমন কথা শুনে জান্নাতের চোখ দিয়ে আরো বেশি করে জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো।সে তখন চোখ মুছতে মুছতে বললো,ভাবি দেন আমাকে।আমি করছি রান্না।

ঊর্মি এবার চিৎকার করে বললো, তুমি গেলে না এখান থেকে।বললাম না লাগবে না রান্না করা।দুই দিনেই একেবারে হাঁপসে গেছো তুমি।আমরা সারা বছর তাহলে কেমনে আন্ধে বাড়ে খাওয়ায়ছি।এখন থেকে তুমিও বসে বসে খাবে।আমিই রান্না করবো।যাও ঘরে চলে যাও।খবরদার রান্নাঘরের আশেপাশে আসবে না।তোমার আশায় বসে থেকে আজ বাচ্চাগুলো আমার না খেয়েই স্কুলে যাচ্ছে।।এই বলে ঊর্মি নুডলস আর ডিম পোচ টেবিলে রেখে হিয়া আর হৃদয় কে ডাকতে লাগলো।আর একা একাই বকবকাতে লাগলো।

জান্নাত আর দাঁড়িয়ে থেকে কি করে।সে রুমে চলে৷ গেলো।

জান্নাত রুমে যেতেই রুয়েল এগিয়ে এসে বললো,কি হয়েছে জান্নাত?আপনি কাঁদছেন কেনো?মা আবার কিছু বলেছে?

জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো,না।

–তাহলে ভাবি কিছু বলেছে?

–না।এই বলে জান্নাত আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।তার দম মনে হয় বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো।সে আর রুয়েলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।তাড়াতাড়ি করে বেলকুনিতে চলে গেলো।রুয়েলও জান্নাতের পিছু পিছু চলে গেলো।আর জান্নাতকে এভাবে কাঁদা দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো, জান্নাত!সত্যি কথা বলুন।কি হয়েছে আপনার?আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো?জান্নাত কিছু তো বলুন।

জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।তার এতোটাই খারাপ লাগছে যে কিছুতেই চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারছে না।রুয়েল তখন জান্নাতকে রেখে রুম থেকে বের হলো আর চিৎকার করে তার মাকে ডাকতে লাগলো, মা!মা!জান্নাতকে আবার কিছু বলেছো?জান্নাত এভাবে কাঁদছে কেনো?

রুয়েলের মা রুয়েলের চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে এলো।আর বললো,কি হয়েছে বাবা?
রুয়েল তখন জোরে জোরে চিৎকার করে বললো, জান্নাত কাঁদছে কেনো এভাবে?ওকে কে কি বলেছে?

জান্নাতের চোখে পানি দেখে রুয়েলের মাথাটা একদম গরম হয়ে গেছে।সে আরো জোরে জোরে সেই একই কথা বলতে লাগলো।

ঊর্মি তখন এগিয়ে এসে বললো, এটা ভদ্র লোকের বাসা।আশেপাশে ভাড়াটিয়া রা আছে।এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেনো?

রুয়েল তখন বললো, হ্যাঁ,সেটা তো দেখতেই পারছি।কেমন ভদ্র লোকের বাড়ি এটা?

–কি বলতে চাচ্ছো তুমি?

–কিছুই বলার নাই আমার।শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।জান্নাত কাঁদছে কেনো?কি বলেছো ওকে?

ঊর্মি কথা টা শোনামাত্র রুবেল কে ডাকতে লাগলো।এ, শুনে যাও।দেখে যাও তোমার ভাই কি বলে।বউ এর হয়ে আমাকে জেরা করছে।এই বলে ঊর্মি রুয়েলকে বললো,
আমি কি বলেছি তোর বউকে?কিছুই তো বলি নি।জান্নাত নিশ্চয় কোনো মিথ্যা কথা বলে আমার নামে নালিশ করেছে?ছিঃ ছিঃ ভাবতেই পারছি না এই মেয়ের মধ্যে এতো শয়তানি।আসলে এসব নাক মুখ ঢাকা মেয়েগুলোই এক একটা বদের হাড্ডি হয়।আমি জানতাম এই মেয়ে কোনোদিনও ভালো থাকতে দেবে না আমাদের।

রুয়েল তখন বললো, মুখ সামলিয়ে কথা বলো ভাবি।জান্নাত তো আমাকে কিছুই বলে নি।কি সব ভুলভাল বকছো?

–তাহলে তুই এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেনো?

এদিকে রুবেলও এগিয়ে এসেছে।রুবেলকে আসা দেখে ঊর্মি রুবেলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,দেখছো জান্নাতের কান্ড।আমি শুধু বললাম আজ থেকে তোমাকে রান্না করতে হবে না।আমিই করবো সবার জন্য রান্না।আর জান্নাত রুয়েলকে কি যেনো বলেছে, রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে আমার সাথে জেরা নিচ্ছে।এই দিন দেখার জন্য বেঁচে আছি আমি।আল্লাহ আমার মরন কে হলো না?এই বলে ঊর্মি গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলো।আর বললো,এই সংসারের জন্য কতো খাঁটলাম,আর আজ ছোট দের কথা শুনতে হচ্ছে।

রুয়েল তখন বললো, তুমি আবার কাঁদছো কেনো?তোমাকে আবার কে কি বললো?
ঊর্মি তখন জোরে জোরে করে বললো,তুই তো বউ এর হয়ে ওকালতি করতে এসেছিস।আমাকে যা নয় তাই বলছিস।আর আমার হাদারাম টা তবুও চুপ করে আছে।

রুবেল এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারে নি আসলে হয়েছে টা কি?আর ঊর্মিই বা কাঁদছে কেনো?
সে তখন ঊর্মিকে বললো,কান্দাকাটি থামাবা তুমি?কি হয়েছে সেটাই তো বুঝলাম না।

ঊর্মি সেই কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো,তুমি তো বুঝবেই না।তোমার কি বোঝার ক্ষমতা আছে নাকি?

রুবেল এবার একটু রাগ হলো।আর চিৎকার করে বললো আবার বাড়তি পেঁচাল পাড়ে,কি হয়েছে সেটা আগে বলো।
ঊর্মি তখন বললো, জান্নাত কেবল উঠলো ঘুম থেকে।এদিকে হিয়া আর হৃদয়ের স্কুল যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।সেজন্য আমি তাড়াতাড়ি করে ওদের জন্য নাস্তা বানাচ্ছিলাম।কিন্তু জান্নাত এসে বলছে সে নাকি রান্না করবে।ওকে শুধু বললাম,আজ থেকে তোমাকে আর করতে হবে না রান্না।আমিই করবো।জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলকে যে কি কি বলেছে আমার নামে রুয়েল সেজন্য বকাঝকা করছে আমাকে।

রুয়েল তখন বললো, আমি কই বকাঝকা করলাম?তোমাকে তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম।

–তার মানে আমি মিথ্যাবাদী। আমাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাচ্ছিস?

রুবেল এবার রুয়েলের দিকে চোখ বড় বড় করে বললো,তুই তো ভালোই বেয়াদব হয়েছিস রুয়েল।তুই তোর ভাবির মুখের উপর কথা বলছিস?আর তোর বউ বলে সারাদিন নামায কালাম পড়ে।তাহলে তার সকালে উঠতে এতো দেরী হয় কেনো?সকালে ফজরের নামায কি পড়ে না?

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ পড়েই তো নামায।সে এক ওয়াক্ত নামায ও কাযা করে না।আর আজও ঠিক সময়েই উঠেছে।নামায পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।আর আমি বুঝি না,জান্নাতকে কি জন্য সকালে উঠতে হবে?হিয়া আর হৃদয়ের জন্য ভাবি নাস্তা বানালেই তো হয়।তাহলেই তো আর এতো ঝামেলা হয় না।জান্নাত পড়ে উঠে না হয় সবার জন্য নাস্তা বানাবে।

ঊর্মি কথা টা শোনামাত্র একদম জ্বলে উঠলো।সে তখন চিৎকার করে বললো, তোর বউকে তুই আটালে তুলে রাখ।লাগবে না কারো জন্য রান্না করা।দুই দিনেই আমাদের কে বেশি মনে হচ্ছে?তোর বউ নিশ্চয় আলাদা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।যা তোরা আজ থেকে আলাদাই খা।লাগবে না এক হাঁড়িতে ভাত আন্ধোন।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, ভাবি তুমি কিন্তু একটু বেশি বেশি বলছো?জান্নাত কখন আলাদা খেতে চাইলো?তোমাকে কি বলেছে কখনো?

–এসব কথা বলতে হয় না।কাজকর্মেই বোঝা যায়।মাত্র এক সপ্তাহ একটু রান্না করে খাওয়াইছে,আর তাতেই হাপসে গেছে।এই বলে ঊর্মি রুবেল কে বললো,ওদের তুমি আলাদা করেই দাও।আমি ওদের সাথে আর খাবো না।ওরা ওদের টা রান্না করবে আর আমরা আমাদের টা।আমাকে আর এসব কাহিনী ভালো লাগছে না।

এদিকে জান্নাত ঊর্মির সব কথা তার রুম থেকেই শুনতে পেলো।সে ভাবতেই পারে নি ঊর্মি এতো খারাপ একজন মহিলা।কিভাবে তার বদনাম করলো।জান্নাত স্বপ্নেও কল্পনা করে নি যে সে আলাদা খাবে।তার মনে এটা কখনোই ছিলো না।ঊর্মি নিজের থেকেই জান্নাতের নামে এসব ভুলভাল কথা বললো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here