আলো আধারের খেলা পর্ব -১১+১২

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আপনার চোখে অশ্রু কেনো জান্নাত?বাড়ির কথা ভেবে মন খারাপ হচ্ছে?
রুয়েলের কথা শুনে জান্নাত তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছিয়ে নিলো।রুয়েল তখন জান্নাতকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি বুঝতে পারছি আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে।জাহান আর দাদীকে মিস করছেন।কিন্তু কিছুই করার নাই।মেয়েদের জীবনটাই এমন।কেউ সারাবছর বাবার বাড়ি থাকে না।সবাইকে একদিন না একদিন স্বামীর বাড়ি যেতে হয়।আর নিজের আপনজনকে ছেড়ে এভাবেই বছরের পর পর কাটিয়ে দিতে হয়।
জান্নাত কোনো কথা বললো না।রুয়েলকে সে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর তার বুকে মাথা দিয়ে কেমন যেনো অন্যরকম এক শান্তি অনুভব করলো।
তবে সত্যি তার বাড়ির কথা ভীষণ মনে পড়ছে।জাহান আর দাদীকে দেখার জন্য মনটা একদম ছটফট করছে।একদিনেই সে এমন মিস করছে তাদের,না জানি সারাজীবন সে কিভাবে থাকবে?সবার কথা মনে হতেই আবার চোখে জল এলো জান্নাতের।
রুয়েল তখন বললো,আবার কাঁদছেন! দাঁড়ান এক্ষুনি আপনার মন ভালো করে দিচ্ছি।এই বলে রুয়েল জান্নাতের বাড়িতে ফোন দিলো।আর জান্নাতের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো,ধরুন দাদীর সাথে কথা বলুন।যা মন চায় বলুন।শুধু দাদী না।সবার সাথে কথা বলুন।সবার সাথে কথা বললে দেখবেন অনেকটা হালকা লাগছে।এই বলে রুয়েল ফোনটা জান্নাতের হাতে দিয়ে বাহিরে চলে গেলো।

জান্নাত চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হলো।সে ভালোভাবে এক এক করে সবার সাথে কথা বললো।দাদি,জাহান,তার আম্মু আব্বু সবার সাথে।জান্নাতের হাসি মাখা কন্ঠ শুনে তার বাবা মাও ভীষণ খুশি হলো।এদিকে কখন যে এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে জান্নাত বুঝতেও পারলো না।সে কথা বলতে বলতে ঘর থেকে বেলকুনিতে চলে গেলো।আবার বেলকুনি থেকে ঘরে আসলো।বাড়ির সবার সাথে কথা বলে মনে হলো তার ভেতরকার সব কষ্ট নিমিষেই দূর হয়েছে।নিজেকে ভীষণ হালকাও লাগছে।মনে হচ্ছে সে তাদের কে ছেড়ে দূরে কোথাও যায় নি,তাদের কাছাকাছিই আছে।

কিছুক্ষন পর রুয়েল প্রবেশ করলো রুমে।সে এসে দেখে জান্নাত এখনো কথা বলছে।সেজন্য সে আবার রুম থেকে চলে যেতে ধরলো।কারণ সে থাকলে হয় তো ভালোভাবে কথা বলতে পারবে না জান্নাত।কিন্তু জান্নাত রুয়েলকে যাওয়া দেখে বললো, এই যে শুনছেন আপনি?আপনার ফোনটা নিন।আমার কথা বলা শেষ হয়েছে।

রুয়েল জান্নাতের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।এই কিছুক্ষন আগেই কেমন মলিন ছিলো মুখটা।মনে হচ্ছিলো সমস্ত মেঘেরা এসে ভীড় জমিয়েছে জান্নাতের মনের গহীনে।আর অভিমানের বরফগুলো গলে অশ্রু হয়ে তার চোখ দিয়ে নামছে।আর এখন এক গাল হেসে হেসে কথা বলছে।জান্নাতের হাসিটা দেখলেই রুয়েলের বুকটা আনন্দে ভরে ওঠে।এ কোন মায়ায় বাঁধলো জান্নাত সত্যি সে বুঝতে পারছে না।

রুয়েল হঠাৎ জান্নাতের কাছে এগিয়ে গেলো।আর তাকে তার বুকের মাঝে টেনে নিলো।রুয়েল কোনো কথা বলছে না।তবে সে মনে মনে ভাবছে জান্নাত!কি মায়ায় জড়ালেন আমায়?আপনাকে ছাড়া আমাকে আর কিছুই ভালো লাগছে না।বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দেওয়া,সবাই মিলে দূরদূরান্তে ভ্রমনে যাওয়া সব ভুলে গেছি আমি।আপনাকে রেখে আমি আবার বিদেশ যাবো কি করে? এই চিন্তা এখন সারাক্ষণ ভাবাচ্ছে আমায়।আমি পারবো না আর বিদেশ যেতে।আপনাকে না দেখে আমি কিছুতেই আর থাকতে পারবো না।

হঠাৎ বাহিরে থেকে ঊর্মির কন্ঠ শোনা গেলো।ঊর্মি জোরে জোরে জান্নাতের নাম ধরে ডাকছে।জান্নাত তার নাম শোনামাত্র রুয়েলকে বললো,ছাড়ুন আমাকে। ভাবি ডাকছে।
–আমিও শুনেছি।ডাকুক।ডাকতে দাও।
–কি বলছেন এসব?ছাড়ুন বলছি।
–ছাড়তে ইচ্ছা করছে না।আর কিছুক্ষন একটু জড়িয়ে ধরে থাকি।
–না না।আর থাকা যাবে না।
রুয়েল তখন বললো,এই তো কিছুক্ষন আগেই একদম কেঁদে কেঁদে শেষ হচ্ছিলেন।এই আমি আপনার মন ভালো করে দিলাম।তার বিনিময়ে কি একটু জড়িয়ে ধরে থাকতে পারি না?
জান্নাত তখন নিজেই রুয়েলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।আর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো আপনি ভীষণ দুষ্টু একটা মানুষ। সবসময় কেমন কেমন করেন।এই বলে জান্নাত আয়নার সামনে গিয়ে ভালো করে ওড়না টা গায়ে মাথায় দিলো।
রুয়েল তখন নিজেও জান্নাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।আর তার ঘাড় ধরে বললো, আমি কেমন কেমন করি?
–জানি না।বলেই জান্নাত পালাতে ধরলো।কিন্তু রুয়েল জান্নাতের ওড়না টেনে ধরে বললো, বলেন আগে।
–কি বলবো?
–এই যে বললেন যে আমি নাকি আপনার সাথে কেমন কেমন করি।
ওদিকে ভাবি আবার ডাক দিলো।জান্নাত কি শুনতে পারছো না?তাড়াতাড়ি বাহিরে এসো একটু।
রুয়েল এবার নিজেই তাড়াতাড়ি করে ওড়না টা ভালো করে গায়ে মাথায় দিয়ে দিলো জান্নাতের।তারপর হঠাৎ জান্নাতের ঠোঁটে একটা আলতো করে চুমু খেলো।
জান্নাত হা করে তাকিয়ে থাকলো।রুয়েল তখন ওড়না দিয়ে জান্নাতের মুখ টা ঢেকে দিলো।আর বললো,যান তাড়াতাড়ি। ভাবি ডাকছে তো।
জান্নাত নিজেও আর সময় নষ্ট করলো না।তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জান্নাতকে দেখামাত্র ভাবি বললো,জান্নাত তুমি কি কানে কম শোনো?কখন থেকে ডাকছি তোমাকে?
জান্নাত তখন বললো না মানে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম।এজন্য শুনতে পারি নি।
এদিকে পাশের ফ্লাটের এক ভাবি এগিয়ে এসে বললো,তা নতুন বউ কিসের এতো ব্যস্ততা?
জান্নাত ওনাকে দেখামাত্র সালাম দিলো।তখন ঊর্মি বললো ইনি আমাদের পাশের ফ্লাটেই থাকেন।তোমাকে দেখতে এসেছে।সকালেও একবার দেখতে এসেছিলেন।কিন্তু তুমি তো তখন ঘুমে ছিলে।এজন্য আবার এসেছেন।
জান্নাত ঊর্মির কথা শুনে ভীষণ লজ্জাবোধ করলো।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো যে জান্নাতকে বাড়ির সবাই ভোরের পাখি বলতো আজ সেই জান্নাতকে বার বার এই কথা টা শুনতে হচ্ছে যে সে নাকি দেরীতে ঘুম থেকে ওঠে।তারা কেনো যে বার বার এই কথা টা বলছে সত্যি জান্নাত বুঝতে পারছে না।একদিন একটু লেট হয়েছে তার জন্য বার বার এভাবে বলতে হবে?

জান্নাত তার বাড়িতে রোজ পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতো।তারপর ফজরের নামায পড়ে আর ঘুমাতো না।কিছুক্ষন তসবিহ তেলায়ত করতো।কয়েক পাতা কোরান শরীফ পড়তো।তারপর আঙ্গিনায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতো।যখন ক্লাসের পড়া থাকতো সেটা সে এই ভোরবেলাতেই কম্পিলিট করে রাখতো।

হঠাৎ আরো কয়েকজন মহিলা এগিয়ে এলো জান্নাতের কাছে।তারা সবাই রুয়েলদের বাসার ভাড়াটিয়া।নতুন বউ দেখার জন্য এসেছে।তাদের সবাইকে দেখে জান্নাত আরেকবার সালাম দিলো।তখন সবাই বললো,তা নতুন বউ এর কি ঘুম ভেংগেছে এখন?না আরো ঘুমাবে?
জান্নাত ভাবিদের কথা শুনে নিচ মুখ হলো।
তখন একজন ভাবি বললো, আমরা এমনিতেই ঠাট্টা করছি।তুমি আমাদের অনেক ছোটো।এজন্য মজা করছি একটু। কিছু মনে করো না তুমি।দেখি একটু তোমার মুখটা।এভাবে বাসার মধ্যেও এতোবড় ঘোমটা দিয়ে আছো কেনো?
জান্নাত সেই কথা শুনে এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখের উপর থেকে কাপড় টা সরিয়ে নিলো।কিন্তু জান্নাতের মুখ টি পুরোপুরি দেখা যাচ্ছিলো না।তার আগেই জান্নাত আবার মুখ টা ঢেকে রাখলো তখন একজন ভাবি বললো,লজ্জার কি আছে?ভালো করে দেখি একটু।এই বলে তিনি নিজেই হাত দিয়ে জান্নাতের মাথার কাপড় টা খুলে ফেললো।আরেকজন চুলগুলো বুলিয়ে বুলিয়ে দেখতে লাগলো।
কিন্তু জান্নাত কিছুতেই এভাবে খোলামেলা থাকতে পারছিলো না।আবার কিছু বলতেও পারছিলো না।যেহেতু সবাই গুরুজন হয়।

রুয়েল দূর থেকে সব দেখছিলো।তার কেনো জানি খুব খারাপ লাগলো।ভাবি রা এমন ভাবে দেখছে কেনো জান্নাতকে?জান্নাত খোলামেলা ভাবে থাকতে মোটেও অভ্যস্ত না।ভাবিরা তো সেটা জানে না।ভাবিরা না জানলো ঊর্মি আর মা তো জানে।তারাও কিছু বলছে না কেনো?

হঠাৎ জান্নাতের শাশুড়ী বললো,জান্নাত রান্নাঘরে যাও।সবার জন্য একটু নাস্তা রেডি করে আনো।হেনা আছে।ও তোমাকে সাহায্য করবে।
এই বলে জান্নাতের শাশুড়ী সবাইকে নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেলো।

জান্নাত সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে ওড়না টা আবার ভালো করে দিয়ে নিলো আর রান্নাঘরে চলে গেলো।
জান্নাত রান্নাঘরে গিয়ে দেখে হেনা কাজ করছে।জান্নাত তখন বললো, হেনা মেহমানদের কি নাস্তা দেবো?মা বললো তোমাকে বললেই তুমি বলে দেবে।
হেনা সেই কথা শুনে বললো,ভাবি তুমি এটাও জানো না।মেহমানদের কি নাস্তা দিতে হয়?আপনাদের বাসায় কি মেহমান যেতো না।আপনার মতো বোকা মেয়ে আমি জীবনেও দেখি নি।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো,আসলে আমি বুঝতে পারছি না মেহমানদের দেওয়ার মতো বাসায় কি কি নাস্তা আছে?
হেনা তখন বললো,কি কি আছে মানে?সবকিছু আছে।এটা কি ফকির মিসকিনদের বাড়ি?
হেনার কথা শুনে জান্নাত মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেলো।সে আর কোনো কথা না বলে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
হেনা তখন বললো ওভাবে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?ফ্রিজ খুললেই সব জিনিস পাবেন।এই বলে হেনা আবার তার কাজে মন দিলো।

জান্নাত হেনার কথা শুনে ফ্রিজ খুলে মিষ্টি আর ফলমূল বের করতেই রুয়েল এসে দাঁড়ালো সামনে। সে জান্নাতের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট আর ফলমূল গুলো কেড়ে নিয়ে আবার ফ্রিজে রাখলো তারপর জান্নাতের হাত ধরে হেনার কাছে নিয়ে গেলো।
হেনা রুয়েলকে দেখে বললো,ভাই কিছু লাগবে আপনার?
রুয়েল হেনার কথা শুনে রাগান্বিত কন্ঠে বললো,জান্নাতকে তুই কি বললি তখন?

–কই কি বললাম ভাই?
–আমি তো শুনলাম তুই জান্নাতকে কি যেনো বললি?
হেনা সেই কথা শুনে বললো ভাবি নাস্তার কথা জিজ্ঞেস করছে।তাই আমি বললাম ফ্রিজে ফল আর মিষ্টি রাখা আছে।
রুয়েল তখন বললো জান্নাত এ বাড়ির বউ হয়।ওর সাথে বুঝেশুনে কথা বলবি।আর যদি দ্বিতীয় দিন ওর সাথে বড় গলায় কথা বলতে দেখছি তখন আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।
হেনা সেই কথা শুনে বললো, ভাই আমি তো কিছুই বলি নি।এই বলে হেনা জান্নাতকে বললো,ভাবি খারাপ কি বললাম তোমাকে?
রুয়েল তখন বললো,চুপ কর।তুই বয়সে জান্নাতের সমবয়সী।কিন্তু কথাবার্তা বলিস বড়দের মতো।তুই এতোবড় সাহস কই পেলি?জান্নাত কে কোন শাসনে তুই অপমান করে কথা বলিস?
হেনা রুয়েলের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই।আর বলবো না।
রুয়েল তখন বললো, আমি আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।শুধু হুশিয়ার করে দিলাম দ্বিতীয়বার যেনো জান্নাতকে আবোলতাবোল কথা না বলতে শুনি।

জান্নাত রুয়েলের এমন রাগ থেকে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।কারণ রুয়েল তো সবসময় জান্নাতের সাথে খুব নম্র আর ভদ্রভাবেই কথা বলে।
সেজন্য জান্নাত জানে রুয়েল খুব ভদ্র আর শান্তশিষ্ট ছেলে কিন্তু তার যে এতো রাগ সত্যি তার জানা ছিলো না।

রুয়েল এবার হেনাকে বললো,আর যেনো কোনোদিন জান্নাতকে হুকুমদারি করতেও না শুনি।যা ফ্রিজ থেকে ফলমূল আর মিষ্টি নিয়ে আয়।আর তাড়াতাড়ি রেডি করে দে জান্নাতকে।
হেনা সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে নিজেই ফ্রিজ থেকে কিছু মিষ্টি আর ফলমূল বের করে আনলো।আর সেগুলো তাড়াতাড়ি করে একটা ট্রে তে সাজিয়ে দিলো।

রুয়েল তখন নাস্তার ট্রে টি জান্নাতের হাতে দিয়ে বললো,জান্নাত এগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি গেস্ট রুমে যান।
জান্নাত রুয়েলের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।সে শুধু ভাবছে এক দিনেই রুয়েল তার কত আপনজন হয়ে গেছে।তার কত কেয়ার করছে।

–কি হলো জান্নাত।ট্রে টি নিয়ে তাড়াতাড়ি যান।
জান্নাত রুয়েলের ধমক শুনে ট্রে টি নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেলো।

জান্নাতকে এতোক্ষনে আসা দেখে তার শাশুড়ী বললো,এতো দেরী হলো কেনো জান্নাত?হেনা ছিলো না রান্নাঘরে।
–জ্বি মা।হেনাই রেডি করে দিয়েছে এসব।

ভাবিরা তখন বললো, নতুন মানুষ তো।সেজন্য এরকম লেট হলো।ধীরে ধীরে এমনিতেই সব শিখে নেবে।এই বলে ভাবিরা নাস্তা খেতে লাগলো।তারা জান্নাতকেও খেতে বললো।

এদিকে হেনা ঊর্মির কাছে চলে গেলো।সে সবকথা ঊর্মিকে বলে দিলো।
–দেখছেন ভাবী রুয়েল ভাই এর কান্ড।এক দিনেই বউ ভক্ত হয়ে গেছে।আমি জান্নাত কে কি যেনো বলেছি আর উনি কি বুঝি শুনেছো,সাথে সাথে আমাকে এসে ধমকানো শুরু করেছে।কি রাগ টাই না দেখালো আজ।আমি তো চিন্তা করছি আপনাকে নিয়ে।কোন দিন বুঝি আপনাকেও এভাবে ধমকায়।
–মানে কি বলছিস এসব পাগলের মতো।আমি ওর ভাবি হই।আমাকে ধমকানোর সাহস আছে নাকি ওর?
হেনা সেই কথা শুনে বললো, আমার কথা মিলিয়ে নিয়েন ভাবি,যেদিন বউ এর হয়ে আপনাকে অপমান করবে সেদিন বুঝবেন।আপনাকে এখুনি সেজন্য সতর্ক করে গেলাম।
–যাবি এখান থেকে তুই।তোর মাথা পাগল হয়ে গেছে।সেজন্য এসব ভুলভাল বকছিস।

ঊর্মি হেনার কথার গুরুত্ব না দিলেও সে বুঝতে পারছে রুয়েল জান্নাতকে খুব বেশি ভালোবাসে।আর জান্নাতকে যে অপমান করবে,বড় বড় কথা শোনাবে তাকে রুয়েল ছেড়ে কথা বলবে না।তবে ঊর্মির মনে ভয় ঢুকে গেলো রুয়েল যদি জান্নাতকে এভাবে মাথায় তুলে রাখে তাহলে তো ভবিষ্যতে সে জান্নাতের কথামতো উঠবে আর বসবে।তখন কি রুয়েল তাদের আবার মাসে মাসে আগের মতো টাকা দিবে?রুয়েল বউ কে পেয়ে তাদের আবার না জানি ভুলে যায়?
#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১২
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

চাচ্চু বাকি চিপস আর চকলেট গুলো দিলে না?
–তোমাদের কে তো দিয়েছি।এগুলো তোমাদের চাচীমনির জন্য।
–চাচীমনি কি ছোটো বাচ্চা? যে ওনাকেও চিপস আর চকলেট খেতে হবে।আমি সবগুলোই খাবো।এই বলে হিয়া রুয়েলের হাত থেকে চিপসের প্যাকেট আর চকলেট গুলো নিয়ে নিলো।হঠাৎ হিয়ার চোখ গেলো রুয়েলের পকেটের দিকে।
চাচ্চু!কত সুন্দর লাল গোলাপ।আমার জন্য এনেছো?এই বলে হিয়া ফুলগুলোও নিয়ে নিলো আর তাদের রুমে ঢুকলো।

রুয়েল কিছু বলতেও পারলো না।সে যদি বারণ করতো তাহলে হিয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়ি দিতো।সেজন্য রুয়েল খালি হাত নিয়েই রুমে প্রবেশ করলো।

রুয়েল তার বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য বাহিরে গিয়েছিলো।তাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সে বাসায় আসার সময় কিছু চিপস আর চকলেট বক্স নিয়ে এসেছিলো।সাথে কিছু টকটকে লাল গোলাপ।রুয়েল ভেবেছিলো জান্নাত এসব দেখে ভীষণ খুশি হবে।কিন্তু হিয়া তো বাসায় ঢুকতেই সব কিছু নিয়ে নিলো।রুয়েল ওদের জন্যও আলাদা করে চিপস আর চকলেট এনেছিলো।
রুয়েল হিয়া আর হৃদয়কে দেওয়ার পরও তার হাতে আরো চিপস আর চকলেট দেখে সেগুলোও নিয়ে নিলো হিয়া।
হিয়ার স্বভাবই এমন।সে কাউকে কিছু না দিয়ে সব একাই নিতে চায়।মাঝে মাঝে তো হৃদয়কেও দেয় না।এজন্য দুইভাইবোনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বাঁধে।সেজন্য যেকোনো জিনিস হিয়ার জন্য দুই একটা বেশি করে নিতে হয়।যাতে করে ও যখন ঝামেলা করে তখন সেগুলো তাকে দেওয়া যায়।

রুয়েল রুমে ঢুকে দেখে জান্নাত এশার নামায পড়ছে।সেজন্য রুয়েল আবার বাহিরে চলে গেলো।

এদিকে জান্নাত নামায পড়া শেষ করে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতে লাগলো।সে জানতো না রুয়েল এসেছিলো বাসায়।সেজন্য সে আরো কিছুক্ষন কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করলো।
তারপর কোরআন তেলাওয়াত শেষ করে জান্নাত তার শাশুড়ীর রুমে চলে গেলো।কিন্তু জান্নাতের শাশুড়ীর এখনো নামায পড়া শেষ হয় নি।সেজন্য জান্নাত আবার নিজের রুমে আসলো।

জান্নাত মনে মনে ভীষণ দুশ্চিন্তা করতে লাগলো রুয়েলের জন্য।সেই কখন বের হয়েছে এখনো বাসায় ফেরে নি।জান্নাত তখন মনে মনে ভাবলো ইসঃ তখন যদি ফোনটা নিতাম তাহলে এখন ওনাকে একবার কল করতে পারতাম।এখনো কেনো আসছেন না উনি?
এতো রাতে বাহিরে কি করছেন?এসব চিন্তা করতে করতে জান্নাত একদম শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।

হঠাৎ জান্নাতের শাশুড়ী আসলো জান্নাতের কাছে।আর বললো,জান্নাত রুয়েল আসে নি এখনো?
–না মা।
জান্নাতের শাশুড়ী সেই কথা শুনে বললো, এই ছেলে আর চেঞ্জ হবে না কোনোদিন।ঘরে বউ রেখে এখনো বাহিরে বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, মা উনি কি প্রতিদিন ই এমন দেরীতে আসে?
–তা ঘরে বসে সারাদিন কি করবে?ছয়মাসের জন্য দেশে আসে সেজন্য একটু আনন্দ ফূর্তি করেই কাটিয়ে দেয়।তবে এখন ওর এই অভ্যাস পাল্টাতে হবে।আজ বাসায় ফিরুক,এ নিয়ে কথা বলতে হবে।এই বলে জান্নাতের শাশুড়ী রুম থেকে বের হতেই রুয়েলও প্রবেশ করলো রুমে।

রুয়েল কে দেখামাত্র তার মা বললো,এতো দেরি করে আসলি কেনো?এতোক্ষণ কি করলি?
রুয়েল তখন বললো,অনেক আগেই তো এসেছি বাসায়।এসে দেখি জান্নাত নামায পড়ছে আর তুমিও পড়ছো।সেজন্য নিচে গিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম।

হঠাৎ রুয়েলের মায়ের চোখ যায় রুয়েলের হাতের ব্যাগটার দিকে।তিনি তখন বললেন,হাতে কিসের ব্যাগ ওটা?
রুয়েল তখন বললো, এমনিতেই আমার কিছু দরকারী জিনিস আছে এখানে।এই বলে রুয়েল ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখলো।আর তার মায়ের সাথে গল্প করতে লাগলো।কিছুক্ষন পর রুয়েলের মা বললো,বাবা ফ্রেশ হয়ে নে আগে।আর জান্নাত খাবার রেডি করে সবাইকে ডাইনিং টেবিলে ডেকে আনো।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,মা, একটু পরে খাবো আমি।তোমরা খেয়ে নাও।
রুয়েলের মা সেই কথা শুনে জান্নাতকে বললো,তাহলে আমাদের জন্য রেডি করো খাবার।ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে।
রুয়েল তখন বললো, মা হেনাকে একটু বলো না।জান্নাত এখন তার বাবা মার সাথে কথা বলবে।ওর বাবা জান্নাতের সাথে কথা বলার জন্য অনেকক্ষন থেকে ফোন দিচ্ছে।
–আচ্ছা ঠিক আছে।এই বলে জান্নাতের শাশুড়ী রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জান্নাত এবার নিজেই রুয়েলের কাছে এগিয়ে গেলো।আর বললো কই আপনার ফোন?দিন আমাকে।বাবা নাকি কল দিয়েছে।
রুয়েল সেই কথা শুনে হেঁচকা টানে জান্নাতকে কে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।আর বললো,আপনার বাবা কল দেয় নি জান্নাত।আমি মিথ্যা কথা বলেছি মাকে।

–কেনো?কেনো মিথ্যা বললেন মাকে?
–জান্নাত, আমি আপনার জন্য কিছু গিফট এনেছি।সেগুলো দেবো বলে।
–এসব গিফট তো পরেও দেওয়া যেতো।তাই বলে আপনি মিথ্যা বলবেন মাকে?আমি মিথ্যা কথা বলা মোটেও পছন্দ করি না।এই বলে জান্নাত রুয়েলের কাছ থেকে সরে গেলো।

রুয়েল তা দেখে কানে ধরে বললো,ওকে।ভুল হয়ে গেছে আমার।আর বলবো না মিথ্যা কথা।গিফটগুলো আগে নিন।এই বলে রুয়েল জান্নাতের হাতে ব্যাগটা দিলো।

জান্নাত ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করে টেবিলের উপর রাখলো।সে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।এসব কি এনেছে রুয়েল?লাল চুড়ি,লাল টিপ,লাল লিপিস্টিক আর একটা লাল শাড়ি।শুধু এগুলোই না, তার পছন্দের চিপস আর চকলেট ও আছে।আর কিছু ড্রাই ফ্রুটস।

–কি পছন্দ হয়েছে?
–এসব কেনো এনেছেন?এগুলো দিয়ে কি করবো আমি?
–কি করবেন মানে?সাজবেন।
–না পারবো না আমি সাজতে।এই বলে জান্নাত সরে গেলো।তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।রুয়েল কেনো তাকে এসব এনে দিলো?সে কি কখনো সেজেছে নাকি?জীবনের প্রথমবার কাল একটু সেজেছে।আর সেটাও ঊর্মি ভাবি সাজিয়ে দিয়েছে।আজ সে একা একা কি করে সাজবে?

রুয়েল তখন জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন জান্নাত।এখনো তো শাড়ি পড়েনই নি।তাহলে শাড়ি পড়লে আরো কি হবে?

–না মানে আমি পারি না তো শাড়ি পড়তে।
–যেটুকু পারবেন ওটুকুতেই চলবে।আমার ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে।
জান্নাত তখন হাসতে হাসতে বললো আমি তো সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,শাড়িতে দেখতে চাই আপনাকে।খুব কাছ থেকে দেখবো আজ।প্লিজ জান্নাত।আমি জানি স্বামীর কথা কখনোই অমান্য করবেন না আপনি।এই বলে রুয়েল জান্নাতের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো,ধরুন।আপাতত কথা বলুন বাবার সাথে।আমি একটু বাহির থেকে আসি?

–আবার কেনো বাহিরে যাচ্ছেন?
–আরো একটা জিনিস লাগবে।যেটা নিতে ভুলে গেছি।এই বলে রুয়েল রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জান্নাত সেজন্য তার বাবাকে কল দিলো।সে তার বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বললো মাকে দাও।কিন্তু জান্নাতের মা ঘুমিয়ে পড়েছে।এজন্য জান্নাত বললো বাবা তাহলে কাল কথা বলি মার সাথে।এই বলে জান্নাত কল কেটে দিলো। আর ফোনটা রেখে রুম থেকে বের হলো।

জান্নাত রুম থেকে বের হতেই তার শাশুড়ী বললো,বাবার সাথে কথা বলা শেষ হলো।
–হ্যাঁ মা।
–তাহলে সবাইকে খাবার দাও এখন।আমি সবাইকে ডেকে আনছি।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, আপনারা এখনো খান নি?
–ভাবলাম তুমি আর রুয়েলকে ছাড়া কি করে খেতে বসি?যাও তাড়াতাড়ি করে খাবারগুলো আনো।
জান্নাত তার শাশুড়ীর কথা শুনে টেবিলে এক এক করে সব খাবার আনলো।এদিকে সবাই এসেও গেছে টেবিলে।শুধু রুয়েল ছিলো না।

জান্নাতের শাশুড়ী তখন বললো, রুয়েল আবার কই গেলো?ওকে ডেকে আনো।
জান্নাত তখন বললো,মা আপনার ছেলে একটু বাহিরে গেছে।
–বাহিরে গেছে মানে?আবার কেনো যেতে দিলে?
জান্নাত কিছু না বলে চুপচাপ থাকলো।আর সবাইকে খাবার সার্ভ করলো।

ঊর্মি হঠাৎ বললো, যার যে স্বভাব।স্বভাব কি আর এক দিনে পরিবর্তন হয়?
রুবেল সেই কথা শুনে বললো, কত করে বলি এসব ছেলেদের সাথে মেলামেশা বাদ দে।তবুও সে ওদের সাথেই চলাফেরা করে।একেক টা ছেলে গাঞ্জাখোর,নেশাখোর।আরো কত কি খায়?

জান্নাতের শাশুড়ী তখন বললো, কি বলছিস এসব রুবেল?রুয়েল এসব নেশা করে না।হ্যাঁ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় এটা ঠিক।কিন্তু সে নেশাখোর নয়।ওর বন্ধুরা যদি এসব আজেবাজে জিনিস খায় তা ও কি করবে?

ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো, ওর বন্ধুরা নেশা করে আর আপনার ছেলে বসে বসে তা দেখে।এরকম কথা জীবনেও শুনি নি মা।এই বলেই ঊর্মি জোরে করে হেসে উঠলো।

–নতুন বউ এর সামনে এসব কি বলছো এসব?

–যা সত্য তাই বলছি।একদিন না একদিন তো জানবেই।এই বলে ঊর্মি জান্নাতের দিকে তাকালো।

এদিকে জান্নাত নেশার কথা শুনে একদম থমকে গেলো।তার পুরো শরীর স্তব্ধ হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে সে ভুল শুনছে এসব?সে ভাবতেই পারছে না রুয়েল নেশা করে।তবে জান্নাত নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো।সে কিছুতেই বিশ্বাস করলো না কথাটা।সে রুয়েলকে জিজ্ঞেস করবে।তারপর রুয়েল যেটা বলবে সেটাই সে বিশ্বাস করবে।সেজন্য জান্নাত চুপ করে থাকলো।

জান্নাতের শাশুড়ী হঠাৎ বললো,জান্নাত তুমি এভাবে চুপচাপ আছো কেনো?খাওয়া শুরু করো।
–আপনারা খান সবাই।আমি পরে খাবো।এই বলে জান্নাত তার রুমে চলে গেলো।

জান্নাত কেনো জানি স্থির হতে পারছিলো না।সে শুধু পায়চারি করতে লাগলো।আর রুয়েলের কথা ভাবতে লাগলো।
জান্নাত কিছুক্ষন রুমে পায়চারি করার পর আবার বের হলো রুম থেকে।ইতোমধ্যে সবার খাওয়া শেষ হয়েছে।সবাই যে যার রুমে চলে গেছে।শুধু হেনা একাই আছে ডাইনিং টেবিলে।সে টেবিল পরিষ্কার করছে।আর সকল প্লেট বাটি বেসিনে রাখছে।জান্নাতকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে হেনা বললো,ভাবি কিছু লাগবে?
–না লাগবে না।

হঠাৎ রুম থেকে ঊর্মি বের হলো।সে এসে হেনাকে বললো,জলদি তোর ভাই এর জন্য এক কাপ চা বানা।এই বলে ঊর্মি জান্নাতের কাছে এগিয়ে গেলো।আর বললো, অযথাই অপেক্ষা করে আছো জান্নাত।খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ো গিয়ে।ওর যখন আসার সময় হবে এমনিতেই আসবে।

জান্নাত তখন বললো,আচ্ছা ভাবি,রুবেল ভাইয়া বাহিরে কোনো আড্ডা দেয় না?
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো, না,তার কি আড্ডা দেওয়ার সময় আছে?সেই সকাল ৯ টায় যায় শো রুমে, আসে আবার রাত ৯ টায়।দুপুরে শুধু খেতে আসে একবার।কখন আড্ডা দেবে?

জান্নাত তখন বললো, তাহলে ভাবি আপনার দেবরকে শো রুমে যেতে বলেন না কেনো?ও একটু বসলেই তো রুবেল ভাই এর কষ্ট কিছুটা কম হয়।
ঊর্মি সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,রুয়েল বসবে দোকানে?ওর মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে না?তোমার ভাই কতবার বলেছে দোকানে বসার জন্য।কিন্তু ও বলে ছয় মাসের ছুটি কাটাতে দেশে আসি, একটু আরাম আয়াশে থাকবো বলে।আমি ওসব দোকানে বসতে পারবো না।
জান্নাত ঊর্মির কথা শুনে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,তাহলে ভাবি আপনার দেবর কেনো আর বিদেশ যায়?ওকে কেনো আর যেতে দেন আপনারা?ভাইয়ার সাথে ব্যবসা করলেই তো পারে।

জান্নাতের কথা শুনে ঊর্মির যেনো পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।এই মেয়ে বলে কি এসব?বিদেশ না গেলে মাসে মাসে টাকা পাঠাবে কে তাদের?এসব দোকানের টাকায় তাদের চলবে নাকি?

ঊর্মিকে চুপচাপ থাকা দেখে জান্নাত বললো,ভাবি চুপ হয়ে গেলেন যে?
ঊর্মি তখন বললো, দেশে থাকলে রুয়েল আরো বেশি খারাপ হয়ে যাবে।ও যাদের সাথে মেশে তারা একজনও ভালো না।সেজন্য রুয়েল বিদেশ থাকাই ভালো।

জান্নাত তখন বললো,ভাবি ও যখন দেশে ফ্যামিলির লোকের সামনেই এমন টইটই করে ঘুরে বেড়ায় তাহলে বিদেশ কি কি করে বেড়াবে সেসব জানবেন কি করে?বিদেশ গিয়ে তো আরো বেশি খারাপ হতে পারে।

জান্নাতের এমন প্রশ্ন শুনে ঊর্মি মনে মনে ভাবলো,এই মেয়ে তো মোটেও বোকা নয়।এক দিনেই কেমন প্রশ্ন করছে তাকে।না একে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না।এখানেই থামাতে হবে।সেইজন্য ঊর্মি বললো,জান্নাত তুমি হলে অনেক ছোট।তুমি সংসারের নিয়মকানুন কিছুই জানো না এখন।সেজন্য আমাদের পরিবার নিয়ে এতো বেশি মাথা ঘামিও না।তুমি তোমার মতো চুপচাপ থাকলে খুশি হবো।রুয়েল বিদেশ যাবে না দেশে থাকবে সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।রুয়েলের ভালোমন্দ ভাবার জন্য ওর মা আছে,ভাই আছে আর আমিও আছি।আমরা জানি কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক।বুঝেছো?এই বলে ঊর্মি তার রুমে চলে গেলো।

জান্নাত কিছুই বুঝতে পারলো না।হঠাৎ ঊর্মি এভাবে রিয়্যাক্ট করলো কেনো।সে তো খারাপ কিছু বলে নি।

#চলবে,
#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here