আলো আঁধারের খেলা পর্ব -১৫+১৬

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

রুয়েল নিজেও বুঝতে পারছে না রাইসা এতো রাতে তাকে কেনো ফোন দিয়েছে।তার সাথে তো রুয়েলের একদিনও কথা হয় নি।যখন রাইসার সাথে রুয়েলের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তখন ঊর্মি ফোন নাম্বার টা দিয়ে বলেছিলো,এটা তোর হবু বউ এর নাম্বার।নাম্বারটা সেভ করে নিয়ে কথা বলিস।রুয়েল তখন শুধু জাস্ট নাম্বার টা সেভ করে রেখেছিলো।কিন্তু কথা হয় নি কখনো।সে তো তখন জান্নাতের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলো।এজন্য রাইসার সাথে কথা বলার একটুও ইচ্ছে করে নি তার।তখন রুয়েলের মনে প্রানে শুধু জান্নাতের বসবাস ছিলো।

এদিকে রুয়েলকে এমন বোবার মতো চুপ করে থাকা দেখে জান্নাত নিজেই আবার ফোন দিলো রাইসা কে।
রাইসা রুয়েলের কল পাওয়া মাত্র সাথে সাথে রিসিভ করে বললো,হ্যালো, আপনি কি রুয়েল বলছেন?অনেক কষ্টে আপনার ফোন নাম্বার জোগাড় করেছি।আপনি নাকি বিয়ে করেছেন?কথাটা কি সত্যি?

জান্নাত রাইসার কথা শুনে বললো,আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?
রাইসা জান্নাতের কথা শুনে বললো,ওয়ালাইকুম আসসালাম।আপনি কে বলছেন?
জান্নাত তখন বললো,আপনি যাকে ফোন দিয়েছেন আমি তার স্ত্রী জান্নাত বলছি।
রাইসা জান্নাতের কথা শুনে বললো,ওহ,তাহলে ঠিক শুনেছি।রুয়েল তাহলে সত্যি সত্যি বিয়ে করেছে?
জান্নাত তখন বললো, জ্বি।তা আপনি কে হন ওনার?
রাইসা তখন বললো, কেউ না।আপনি দয়া করে আপনার হাজব্যান্ড কে একটু ফোন টা দিবেন?
–জ্বি সিওর।এই বলে জান্নাত রুয়েলের হাতে দিলো ফোনটা।

রুয়েল ফোনটা কানে ধরে যেই হ্যালো বলেছে,রাইসা এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো আপনাদের ফ্যামিলির মতো খারাপ ফ্যামিলি আমি জীবনেও দেখি নি।আপনারা কি করে এই রকম একটা জঘন্য কাজ করতে পারলেন।আপনারা আমার জীবন টা একদম তছনছ করে ফেললেন।এখন আমি কি করে সমাজে মুখ দেখাবো।পুরো এলাকার লোক জানে আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছে।অনেকে তো মনে করছে আমাদের দুইজনের বিয়ে হয়েও গেছে।সামান্য একটা কারণে আপনি সেদিন রেজিষ্ট্রির দিন রাগ করে চলে আসলেন।তারপর আর আপনারা কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করলেন না।আমরা ভেবেছি আপনারা আপনাদের পারিবারিক ঝামেলা মিটিয়ে আবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবেন।কিন্তু আজ শুনি আপনি বিয়েও করেছেন?কি দরকার ছিলো আমার জীবন টা নিয়ে খেলার?আপনার যখন আমাকে ভালোই লাগে নি তাহলে কেনো সেদিন বিয়ে করতে গিয়েছিলেন?আপনার যে অন্য কোথাও পছন্দ আছে সেটা আপনার ফ্যামিলির লোকদের না জানিয়ে ধিন ধিন করে নাচতে নাচতে বিয়ে করতে কেনো এসেছিলেন?

রুয়েল রাইসার প্রশ্নের কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিলো না।কারণ সেদিন সে সত্যি খারাপ করেছে রাইসার সাথে।এভাবে বিয়ের আসর থেকে চলে আসা ঠিক হয় নি তার।কিন্তু তার যে কিছুই করার ছিলো না।তার মন প্রাণ পড়ে ছিলো জান্নাতের কাছে।তবুও ভাই ভাবির মুখের দিকে তাকিয়ে রেজিস্ট্রি করতে গিয়েছিলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে তার ভাই এর যৌতুক নেওয়ার কথা টা শুনে সে আর কিছুতেই থাকতে পারে নি।হয় তো এটাই বিধাতার নিয়তি ছিলো।তা না হলে ঠিকঠাক হওয়া বিয়ে এভাবে কেনো ভেংগে গেলো?

রুয়েলকে চুপচাপ থাকা দেখে রাইসা বললো,কি হলো উত্তর দিন?আপনি কাজ টা কি ঠিক করেছেন?এভাবে একটা মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার অন্য আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছেন।আমরা ইচ্ছা করলে আইনের আশ্রয় নিতে পারি।কিন্তু আপনাদের মতো নিচু মনমানসিকতার লোক নই আমরা।গুড বাই।ভালো থাকবেন।এতো রাতে ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত।নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা রইলো।এই বলে রাইসা কল কেটে দিলো।তবে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে কাঁদছে।বার বার নাক টানছিলো সে।রুয়েলকে ভীষণ ভালো লেগেছিলো রাইসার।যেদিন রুয়েলের সাথে তার রেজিষ্ট্রি হওয়ার কথা ছিলো সেদিন রাইসা ভীষণ খুশি হয়েছিলো।কিন্তু বিয়েটা ভেংগে যাওয়াই মারাত্মকভাবে ভাবে ভেংগে পড়ে সে।রাইসার বাবা মা রুয়েলের সাথে যোগাযোগ না করলেও ঊর্মি আর রুবেলকে অনেকবার রিকুয়েষ্ট করেছে।কিন্তু রুবেল কোনো উত্তর দেয় নি।কারণ তারা তখন রুয়েলের মন ভালো করার জন্য ব্যস্ত ছিলো।রুয়েল যাকে বিয়ে করলে খুশি হবে তারা সেই জান্নাতের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টায় ছিলো।যাতে করে রুয়েল তাদের ভাই আর ভাবীর যৌতুক নেওয়ার অপরাধ টা ভুলে যায়।

রুয়েল ফোনটা হাতে নিয়ে চুপচাপ থাকলো।সে একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে রাইসার কথাগুলো শুনে।যে মেয়ের সাথে একদিনও তার কথা হয় নি সেই মেয়ে কিভাবে তাকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলো!আর সে বোকার মতো চুপচাপ শুনে গেলো।

জান্নাত এতোক্ষণে জিজ্ঞেস করলো রুয়েলকে।
বললো,মেয়েটি কে ছিলো?এভাবে এতোগুলো কথা শুনিয়ে কল কেটে দিলো কেনো?আর আপনি কিছু না বলে চুপচাপ ছিলেন কেনো?

রুয়েল তখন বললো,মেয়েটির নাম রাইসা।এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছিলো।কিন্তু শেষমেশ বিয়ে টা আর হয় নি।আপনাকে বিয়ে করায় মেয়েটা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।সেজন্য রাগ করে এতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।

জান্নাত সেই কথা শুনে বললো,ও,এটাই সেই মেয়ে!আমিও শুনেছিলাম আপনার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হইছে।জাহান আমাকে বলেছিলো।আপনার বিয়ের কথা শুনে আমি সেদিন অনেক বেশি খুশি হয়েছিলাম।

রুয়েল তখন বললো,তাই?তাহলে রাইসার সাথে বিয়ে টা হলেই ভালো হতো?

জান্নাত রুয়েলের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে অন্য মুখ হয়ে থাকলো।

রুয়েল তখন বললো, সবাই আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল।যে কয় টা মেয়েকে দেখতে গিয়েছি সবগুলো মেয়েই ভীষণ ভাবে পছন্দ করেছিলো আমাকে।সবাই আমাকে স্বামী হিসেবে পেতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমার কাউকে মনে ধরে নি,শুধু আপনি ছাড়া।আপনাকে দেখার পর কেনো জানি মনে হয়েছে আপনাকে আমি হাজার হাজার বছর ধরে চিনি।মনে হয় এর আগেও কোথায় যেনো দেখেছি আপনাকে।আপনি আমার মনের ভিতর এমন ভাবে গেঁথে ছিলেন যে আপনার চেহারা দেখারও প্রয়োজনবোধ করি নি।
আর আপনি বলছেন,আমার অন্য জায়গায় বিয়ের কথা শুনে আপনি অনেক বেশি খুশি হয়েছিলেন?

জান্নাত তখন বললো, হ্যাঁ কথা টা আপনি ঠিক বলেছেন?আমি কখনোই চাই নি আপনার সাথে আমার বিয়ে হোক।আপনার সাথে বিয়ে হবে শুনে আমি অনেক কেঁদেছি।কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।কিন্তু পরিবারের সবার রিকুয়েষ্ট এ রাজি হয়ে যাই।বিশেষ করে আমার আব্বু যখন আমার হাত ধরে রিকুয়েষ্ট করলো তখন আর কিছু বলতে পারি নি।

রুয়েল তখন জান্নাতের মুখ টা তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,কিন্তু জান্নাত আপনি তো বলেছিলেন আপনি মন থেকে রাজি আছেন এই বিয়েতে।আমি তো জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে।আমি যদি জানতাম আপনি রাজি ছিলেন না তাহলে কখনোই এভাবে জোর করে বিয়ে করতাম না।

জান্নাত তখন বললো, এসব কথা এখন বলে আর কি হবে?বিয়ে তো হয়েই গেছে।আমি আপনাকে কখনোই আমার জীবনে দেখতে চাই নি।কিন্তু ভাগ্যচক্রে আমি আপনার জীবনে এসে গেছি।

রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে ভীষণ মন খারাপ করলো।সে বুঝতেই পারে নি জান্নাত তাকে অপছন্দ করে।তাকে তার বাবা মা জোর করে বিয়ে দিয়েছে।মন খারাপ করে রুয়েল বেড থেকে হঠাৎ উঠে গেলো।

জান্নাত তা দেখে বললো, আপনি কই যাচ্ছেন? শুনুন আগে পুরো কথাটা।

–না,আর কিছু শোনার নাই আমার।যা বোঝার বুঝে গেছি আমি।আসলে ভুল টা আমারই হয়েছে।আমি বুঝতেই পারি নি সবার পছন্দ এক না।আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে দেখে যে আপনারও আমাকে পছন্দ হবে সেটা আমার মাথাতেই ছিলো না।এই বলে রুয়েল বেলকুনির দিকে চলে গেলো।সে আজ দিয়ে বুঝতে পারছে কেনো জান্নাত সারাক্ষণ এতো কাঁদে।আর কেনোই বা তার থেকে এতো দূরে দূরে থাকে।কেনো তাকে ভালোবাসতে দেয় না।রুয়েল ভেবেছিলো জান্নাত ছোটমানুষ,সেজন্য তাকে দেখে এভাবে পালিয়ে বেড়ায়,তার কাছে আসতে চায় না।রুয়েল এজন্যই ভেবেছে যে জান্নাতকে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বোঝার জন্য তার সময় দেওয়া উচিত।যেদিন সে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার পবিত্র ভালোবাসা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে সেদিন আপনা আপনি তার কাছে আসতে চাইবে।তাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নেবে।

বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে রুয়েল আনমনে দূরের ঐ চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে।রাতের বেলা চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার হলেও চাঁদের আলোয় কি সুন্দর চারদিকে ঝলমল করছে।হালকা একটু বাতাস ও বইছে।সেজন্য রুয়েলের পুরো শরীর টা শিরশিরে উঠলো।হঠাৎ জান্নাত এসে রুয়েলের ঘাড়ের উপর তার হাত টি রেখে বললো,

এভাবে বেড থেকে চলে আসলেন কেনো?

রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।

জান্নাত তখন বললো,আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না।এজন্য সত্য টা প্রকাশ করে দিলাম।আসলেই আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি।আমার ফ্যামিলি আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে।

রুয়েল সেই কথা শুনে জান্নাতের হাত দুটি সরিয়ে দিয়ে বললো,দোহাই লাগে আপনার।এই কথা টা আর বলেন না।আমার ভালো লাগছে না শুনতে।

জান্নাত তখন আবার রুয়েলের কাঁধে তার হাত রাখলো আর বললো,একশো বার বলবো,হাজারবার বলবো কথাটা।কারণ এটা একদম চরম সত্য কথা,যে আমি আপনাকে কখনোই বিয়ে করতে চাই নি।কিন্তু,

জান্নাত পুরো কথা শেষ না করতেই রুয়েল রাগ করে চলে যেতে ধরলো।জান্নাত তখন রুয়েলের হাত টেনে ধরে বললো,আপনি পুরো কথাটা না শুনেই এতো রাগ করতেছেন কেনো?আচ্ছা আপনি যদি মন খারাপ করে থাকেন তাহলে কি এই কথা টা মিথ্যা হয়ে যাবে যে,আমি আপনাক বিয়ে করতে চাই নি, সবাই মিলে জোর করে বাধ্য করেছে বিয়েটা করতে।

রুয়েল এবার জান্নাতের হাত টা ঝটকা মেরে ফেলে দিলো।সে আর বেলকুনিতেই থাকলো না।রুমে গিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।জান্নাত তা দেখে বললো,এই,আপনি এটা কি করলেন?আমি এখন রুমে যাবো কি করে?কিছুই তো দেখতে পারছি না।
রুয়েল সেই কথা শুনে আবার উঠে এসে লাইট টা অন করলো।আর এক মুহুর্ত দেরী না করে তাড়াতাড়ি করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।জান্নাত বুঝতে পারছে অনেক বেশি অভিমান করেছে রুয়েল।কিন্তু সে কি করে তার ভালোলাগার কথা জানাবে?আর কিভাবেই বা বলবে সে নিজেও ভীষণ ভাবে তার প্রেমে পড়েছে।তাকে ছাড়া সে নিজেও আর থাকতে পারবে না।জান্নাত বুঝতে পারলো এটাই ভালোবাসা।শুধু ভালোবাসা বললে ভুল হবে,কারন রুয়েলের মতো সেও তার গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

অন্যপাশ হয়ে শুয়ে আছে রুয়েল।আজ আর বললো না,জান্নাত আপনাকে কি বুকের মধ্যে নিয়ে একটু ঘুমাতে পারি?আপনাকে জড়িয়ে ধরে থাকলে আমার আত্নাটা ঠান্ডা হয়ে যায়।প্লিজ জান্নাত না করবেন না।

জান্নাত তখন নিজেই বললো,আমাকে আপনার বুকের মধ্যে আজ নিবেন না?

অপরপাশ থেকে অভিমান মাখা কন্ঠ নিয়ে রুয়েল উত্তর দিলো, না।

–কিন্তু কেনো?

–আমি জোর করে কাউকে ভালোবাসতে চাই না।

জান্নাত তখন বললো, আসলে আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে আমার মনের কথা আপনার সাথে শেয়ার করবো?

–আর শেয়ার করতে হবে না।যা বোঝার বুঝে গেছি আমি।

–কিন্তু আপনি তো বুঝেছেন অন্যটা।আমি আসলে বলতে চাইছিলাম আমাকে জোর করে বিয়েটা,

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, জান্নাত আবার আপনি সেই এক কথাই বলছেন?

–না মানে,সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে।ওই কথা আর ভুল করেও মুখ দিয়ে বের করবো না।আসল কথা হচ্ছে আমিও আপনাকে ভালোবাসি।

রুয়েল জান্নাতের মুখে ভালোবাসার কথা শুনেও কোনো রিয়্যাক্ট করলো না।

জান্নাত তখন বললো, আপনি কি কিছু শুনতে পান নি নাকি?

–কি শুনতে পাই নি?

–ওই যে বললাম, ভালোবাসি আপনাকে।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,তো এখন আমি কি করতে পারি?

–মানে?আপনার কিছুই মনে হচ্ছে না?

–না।

–ওকে।না মনে হওয়ায় ভালো।এই বলে জান্নাতও চুপচাপ শুয়ে থাকলো।সে আর একটি কথাও বললো না।অন্যদিকে রুয়েলও চুপচাপ। আজ দুটি মনেই ভালোবাসা জেগে উঠেছে।কিন্তু কেউ কাউকে ঠিকভাবে বোঝাতে পারছে না কে কতটুকু কাকে ভালোবাসে?#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

সকালবেলা রুয়েল এখনো বিছানা থেকে ওঠে নি।কাল রাত থেকে সে জান্নাতের উপর বড্ড অভিমান করে আছে।তবে জান্নাতের সাথে সে তাহাজ্জুদ নামায আর সকালের ফজরের নামায পড়তে ভোলে নি।ফজরের নামায পড়ে রুয়েল ঘুমানোর জন্য আবার শুয়ে পড়লেও কিছুতেই দু চোখের পাতা এক করতে পারলো না।জান্নাত নিজেও আর ঘুমিয়ে পড়লো না।সে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করে তারপর বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে সকালের সুন্দর আবহাওয়া উপভোগ করতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো যেভাবেই হোক রুয়েলে কে বোঝাতে হবে সেও তাকে ভীষণ ভালোবাসে।ধীরে ধীরে চারদিকে আলোয় ভরে যেতে লাগলো।আর মানুষ জন যে যার কাজে বের হলো। জান্নাত তখন নিজেও আর বেলকুনিতে না দাঁড়িয়ে থেকে রুয়েলের কাছে চলে গেলো।রুয়েল জান্নাতকে তার কাছে আসা দেখে ঘুমানোর ভান করে থাকলো।জান্নাত সেজন্য আর বিরক্ত করলো না রুয়েলকে।তবে জান্নাত মনের অজান্তেই রুয়েলের কপালে একটা কিস করলো আর তার দুই হাত দিয়ে রুয়েলের মুখমন্ডল স্পর্শ করে বললো, আমিও আপনাকে ভীষনভাবে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না।কিভাবে আপনাকে আমি বোঝাবো সত্যি বুঝতে পারছি না।আপনি দয়া করে নিজের থেকে বুঝে নিন।তা না হলে আমি নিজের মুখে কোনোদিন বলতেও পারবো না আর আপনি বুঝবেনও না কোনদিন।
রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে একটু নড়েচড়ে উঠলো।আর তা দেখে জান্নাত বললো,আপনি কি জেগে আছেন?কথা বলুন?
রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।জান্নাত তখন রুয়েলের কপালে আরেকটা কিস করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জান্নাত সোজা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।রান্নাঘরে গিয়ে দেখে হেনা নাস্তা বানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।কিন্তু ঊর্মিকে দেখতে পেলো না জান্নাত।

জান্নাতকে দেখামাত্র হেনা বললো,ভাবি আপনি আজ এতো সকালে উঠেছেন যে?যান ঘুমান গিয়ে।জান্নাত সেই কথা শুনে বললো ফজরের নামায পড়ে আর ঘুমাই নি আমি।সেই থেকে জেগেই আছি।সেজন্য ভাবলাম তোমাকে একটু নাস্তা বানাতে হেল্প করি।

–না ভাবি,আমার কোনো হেল্প লাগবে না।আপনি রুমে চলে যান।তা না হলে রুয়েল ভাইয়া আমাকে আজ আবার বকবে।
হেনার কথা শুনে জান্নাত বুঝতে পারলো ভালোই শিক্ষা হয়েছে হেনার।জান্নাত তখন বললো, কোনো সমস্যা নেই।আর তোমার রুয়েল ভাইয়াও কিছু বলবে না।এই বলে জান্নাত নিজেও হেনার সাথে রুটি বেলতে ধরলো। কিন্তু জান্নাতের এমন এবড়োখেবড়ো রুটি দেখে হেনার মুখে হাসি এলেও সে মুখ টিপে ধরে থাকলো,আর বললো,ভাবি আপনি না হয় রুটি গুলো ছেকুন,আর আমি তাড়াতাড়ি করে রুটি গুলো বানিয়ে দিচ্ছি।জান্নাত বুঝতে পারলো তার রুটি গুলো ভালো হচ্ছে না।সেজন্য সেও আর জিদ করলো না।হেনা রুটি করছে আর জান্নাত সেগুলো ছেকছে। ওদিকে ঊর্মি যখন রান্নাঘরের দিকে এলো,আর জান্নাতকে হেনার সাথে নাস্তা বানানো দেখলো সে আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না। আবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।ঊর্মি তো এটাই চাই যে এখন থেকে সংসারের সব কাজকর্ম জান্নাতই করবে।জান্নাতকে শুধু শুধু বসে থেকে খাওয়াবে নাকি?ঊর্মি সিদ্ধান্ত নিলো আজ থেকে সে আর কোনো কাজই করবে না।যেকোন একটা অজুহাত দেখিয়ে জান্নাতের দ্বারায় সব কাজ করাবে।এতোদিন তো অনেক করেছে পরিবারের জন্য,আজ থেকে জান্নাত কে সবকিছু বুঝিয়ে দেবে।আর সে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাবে।

ঊর্মির ছেলেমেয়েদের জন্য নুডলস আর ডিম পোচ করে তারপর কমলার জুস রেডি করলো জান্নাত।রুবেল আর তার মায়ের জন্য রুটি আর সবজি সাথে আবার সালাদ রেডি করে রাখলো।অন্যদিকে ঊর্মি আবার দেশি বুটের ডালের সাথে পরোটা খায়।সাথে শসা আর টমেটোর সালাদ।রুয়েল আবার সকালে উঠেই আগে আদা,লেবু দিয়ে রং চা খায়।তারপর নাস্তা করে।
জান্নাত এই প্রথমবার এতো খাবার রান্না করলো।আজ যদিও হেনা তাকে সাহায্য করেছে তবুও তার ভীষণ দেরি হলো।কারণ জান্নাত রান্নায় তেমন চালু নয়।আর হেনা একা একা আর কতই করে।তবে ঊর্মি ভীষণ চালু ছিলো।সে চোখের পলকে সব কাজ করে ফেলে।আগে তো নিজেই সব করতো।কিন্তু নিজের আরাম আয়াশের জন্য হেনাকে নিযুক্ত করেছে।হেনাকে কাজের জন্য নিলেও সে শুধু হেনার উপর নির্ভর করে থাকে না।হেনার কাজে অনেক সাহায্য করে সে।সেজন্য হেনার কাজ করতে কোনো অসুবিধাই হতো না।

হেনা বুঝতে পারছে না কিছু।আজ ঊর্মি ভাবির কি হলো?তিনি কেনো এখনো আসছেন না?

হঠাৎ রুয়েল এলো রান্নাঘরে।সে যদিও জান্নাতকে খুঁজতে এসেছে, কিন্তু হেনাকে বললো,আমার জন্য তাড়াতাড়ি চা রেডি কর।জান্নাত রুয়েলের জন্য চা রেডি করে আগেই ফ্লাস্কে রেখেছে।যাতে রুয়েল ওঠামাত্র তাকে দিতে পারে।জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে নিজেই চা নিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো।রুয়েল জান্নাতের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে রুমে চলে গেলো।একটা কথাও বললো না।হেনা তা দেখে বললো, ভাবি আপনি না হয় এখন চলে যান।বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।রুয়েল ভাইয়ার চেহারা দেখে বেশি সুবিধার মনে হলো না।আপনাকে কাজ করা দেখে উনি মনে হয়ে রেগে গেছেন।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, এখানে রাগের কি আছে?আমার সংসারের কাজ আমি না করলে আর কে করবে?

এদিকে এক এক করে বাসার সবাই উঠে এলো।যার যেটা প্রয়োজন জান্নাত নিজের হাতে নাস্তা সার্ভ করলো সবাইকে।আজ জান্নাতের শাশুড়ী ভীষণ খুশি হলেন জান্নাতকে দেখে।জান্নাত যে একদিনেই সংসারের কাজে এতো মনোযোগী হবে যা তিনি কল্পনাও করেন নি।
জান্নাত সবাইকে খাবার দিয়ে রুমে চলে গেলো।রুমে যেতেই রুয়েল বললো,আপনি সেই থেকে আর ঘুমান নি?
–না।
–ভালো।খুব ভালো।কিন্তু যদি আপনি অসুস্থ হয়ে যান তখন কিন্তু এর জন্য আপনিই দায়ি থাকবেন।
জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলের কাছে এগিয়ে গেলো আর তার হাতের কাপটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে বললো,সকালে না ঘুমালে কেউ অসুস্থ হয় না।বরং সকালের ঘুমটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশিই ক্ষতিকর।
–কিন্তু জান্নাত আপনি রাতে কতটুকু ঘুমিয়েছেন সে খেয়াল আছে?সকালে যদি আরেকটু না ঘুমান তাহলে তো শরীর খারাপ করবে।ঘুম কম হলে মাথা ব্যাথা করে এটা জানেন কি?
জান্নাত তখন বললো, আমার কথা বাদ দিন।আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আপনি ঘুমিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ।ঘুমাবো না কেনো?
–কিন্তু আপনাকে দেখে তো সেরকম মনে হচ্ছে না।আপনি যদি ঘুমাতেন তাহলে নিজের থেকে এভাবে উঠতেন না।তার মানে আপনি নিজেও সেই থেকে জেগে আছেন?

রুয়েল সেই কথা শুনে চুপ করে রইলো।

জান্নাত রুয়েল কে এভাবে চুপ করে থাকা দেখে মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হলো।রুয়েল কি তখন তাহলে জেগেই ছিলো।জান্নাত রুয়লকে কিস করে তখন কি সব ভালোবাসার কথা বললো এসব আবার শুনলো না তো?কি হবে এখন?উনি কি ভাবছে তাকে কে জানে?

হঠাৎ রুয়েল জান্নাতের হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো।আর বললো,তাহলে এখন কি করা উচিত আমার?
জান্নাত রুয়েলের দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো,বুঝলাম না আপনার কথা।কি করা উচিত?

রুয়েল তখন জান্নাতকে তার আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো, বোঝেন নি এখনো?আচ্ছা বুঝিয়ে দিচ্ছি।এই বলে রুয়েল জান্নাতকে হঠাৎ কিস করতে লাগলো।রুয়েল কিস করতেই আছে।জান্নাত কোনো কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে না।রুয়েল এবার কিস করা থামিয়ে দিয়ে বললো, জান্নাত!এখন কিছু বুঝছেন?

জান্নাত এবার আর একটা কথাও বললো না।সে আরো বেশি লজ্জা পেতে থাকলো।জান্নাতকে এরকম লজ্জা পাওয়া দেখে রুয়েল বললো,জান্নাত!আমার ভালোবাসার বউ!আমার একমাত্র আদরের জীবনসঙ্গিনী।আমি কখনো ভাবতেই পারি নি আপনি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবেন।আমি সত্যি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি আপনার কথাগুলো শুনে।
জান্নাত সেই কথা শুনে অন্য মুখ হলো।আর বললো,আপনি তাহলে সব কথা শুনেছেন তখন।তাহলে কেনো ঘুমানোর অভিনয় করছিলেন?
রুয়েল তখন জান্নাতকে আবার তার কাছে টেনে নিলো আর বললো, ঘুমানোর অভিনয় না করলে আপনি কি আপনার মনের কথাগুলো এভাবে বলতেন আমাকে।এভাবে সকাল সকাল আদর করে জড়িয়ে ধরতেন?
জান্নাত আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।ওড়না টা ভালো করে গায়ে মাথায় দিয়ে রুম থেকে বের হলো।রুয়েল নিজেও বের হলো জান্নাতের সাথে সাথে।

রুম থেকে বের হতেই জান্নাতের চোখ কপালে উঠে গেলো।জান্নাত তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো।জহির সাহেব সকাল বেলাই এসেছে মেয়ের বাড়িতে।
আর বাসার সবার সাথে বসে গল্প করছে।

জান্নাত তার বাবাকে দেখামাত্র ছোট বাচ্চাদের মতো দৌঁড়ে চলে গেলো।আর সবার সামনেই জড়িয়ে ধরলো। জহির সাহেব নিজেও বেশ আনন্দ অনুভব করতে লাগলেন।জান্নাতের মুখ টা হাত দিয়ে স্পর্শ করে ভাবতে লাগলেন,যে মেয়েটা তাদের ছাড়া একরাত কোথাও কাটাতো না সে আজ স্বামীর বাড়িতে সংসার করছে!
জান্নাত বললো,বাবা কেমন আছেন আপনি?দাদী কেমন আছে?জাহান কেমন আছে আর আম্মুই বা কেমন আছে?ওরা কেনো আসলো না?
জহির সাহেব তখন জান্নাতকে বললো,সবাই ভালো আছে মা।আমি তোকে বাড়িতে নিয়ে যেতে এসেছি।সেজন্য ওরা আর কেউ আসলো না।
জান্নাত বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো।তার আর কিছুতেই দেরী সইলো না।

রুয়েল তার শশুড় কে সালাম দিয়ে বললো,বাবা আপনি কেমন আছেন ?আর বাসার সবাই কেমন আছে?
জহির সাহেব বললেন,বাবা সবাই ভালো আছে।আমি জান্নাতকে নিয়ে যেতে এসেছি।তোমার দাদী বললো জান্নাত কয়েকদিন একটু আমাদের বাড়ি গিয়ে থাকুক।হঠাৎ সবাইকে এভাবে ছেড়ে এসেছে, ওকে দেখার জন্য সবাই খুব অস্থির হয়ে আছে।আর জান্নাতেরও নিশ্চয় সবার কথা মনে হচ্ছে।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ বাবা।আমিও এটাই ভাবছিলাম।কিছুদিন একটু বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসলে ওর মনটাও ভালো হয়ে যাবে।সারাদিন শুধু কাঁদে।জাহান আর দাদীর কথা সারাক্ষণ বলে।

রুয়েলের মা তখন বললো,বাবার বাড়ি বেশিদিন যেনো না থাকে জান্নাত।এখন যেহেতু বিয়ে হয়েছে,স্বামীর বাড়িতেই বেশি থাকবে জান্নাত।বাবার বাড়িতে বেশি যাওয়ার অভ্যাস করলে সংসারে তেমন মনোযোগ দিতে পারবে না।কাজে ফাঁকি দিতে চাইবে।এমনিতেই জান্নাত তেমন সংসারের কাজকর্ম করতে পারে না।

জহির সাহেব সেই কথা শুনে বললো,এখন যেহেতু নতুন বিয়ে হয়েছে,এখন একটু ঘন ঘন বাবার বাড়িতে যেতেই হবে বেয়াইন সাহেব।তা না হলে মন খারাপ হয়ে যাবে ওর।এখানেও থাকবে আবার ওখানেও থাকবে।এক জায়গায় বেশিদিন থাকলে মেয়েটা আমার মানসিক ভাবে ভেংগে পড়বে।আর কাজকর্মের কথা বলছেন!মেয়েটাকে কখনো কাজ করতে দেই নি বাড়িতে।সেজন্য সংসারের কাজকর্ম বিষয় এ তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই।তবে ধীরে ধীরে সব শিখে যাবে।মেয়ে আমার চালাক আছে।

রুয়েল এবার তার মায়ের কাছে গিয়ে ওনার হাত ধরে বললো, মা এভাবে বলছো কেনো?জান্নাত এখন বাবার বাড়ি থাকবে না তো কখন থাকবে?এখনি তো ওর বাবার বাড়ি যাওয়ার সময়।ঊর্মি ভাবিকে দেখো না।হিয়া আর হৃদয়ের স্কুলের জন্য বাবার বাড়ি গিয়ে এক রাতও থাকতে পারে না।আর তুমি সংসারের কথা বলছো?সেটা এমনিতেই শিখে নেবে।
এই বলে রুয়েল জান্নাতকে বললো যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।

ঊর্মি চুপচাপ থাকলো।সে একটি কথাও বললো না।সে সচারাচর সবার সামনে কিছু বলে না।যা কথা বলে সব মনে মনে।আর প্লানও করে মনে মনে।ঊর্মি মনে মনে ভাবলো কই একটু আরামে বসে থেকে খেতে চাইলাম,তার আগেই বাবার বাড়ি পালাচ্ছে।

জান্নাত রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে তার ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।তার আর তর সইছে না।রুয়েল দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে জান্নাতের রেডি হওয়া দেখতে লাগলো।এতোক্ষণে টের পেলো জান্নাত।সে রুয়েলকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো, আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?আপনি কখন রেডি হবেন?

রুয়েল তখন জান্নাতের কাছে এগিয়ে এসে বললো, কেনো?আমি রেডি হবো কেনো?

–কেনো আপনি যাবেন না?

–না।আমি যাবো না।আপনার বাবা তো আমাকে নিতে আসে নি।আপনাকে নিতে এসেছে সেজন্য আপনি একাই যাবেন।

#চলবে,

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here