আলো আঁধারের খেলা পর্ব -১৭+১৮

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

জান্নাত বিয়ের পর আজ প্রথম তার বাবার বাড়ি যাচ্ছে।জান্নাত বাবার বাড়ি যাবে বলে তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিলো।কালো বোরকা আর মিষ্টি কালারের হিজাব পড়েছে সে।শুধু চোখ দুটি বের হয়ে আছে জান্নাতের।হাতে পায়েও কালো মোজা পড়ে নিলো জান্নাত।জান্নাতের চোখেমুখে আজ খুশির বন্যা বইছে।মনে হচ্ছে কত বছর পর তার নিজের গ্রামকে দেখবে।জান্নাতের আর তর সইছে না।কখন তার বাড়ি যাবে আর কখন জাহান আর দাদীকে জড়িয়ে ধরে গল্প করবে।তাছাড়া ইতোমধ্যে তাদের গাছের সব আম,কাঁঠাল লিচু পেকে গেছে।বাড়িতে থাকলে দুই বোন মিলে কত মজা করে খেতো।জহির সাহেব আসার সময় অনেকগুলো আম,কাঁঠাল আর লিচু সাথে করে নিয়ে এসেছে।সেগুলো বেশ মজা করে খাচ্ছে হিয়া আর হৃদয়।
বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে এতোক্ষন বেশ খুশিতেই ছিলো জান্নাত।কিন্তু রুয়েল যখন বললো সে যাবে না জান্নাতের সাথে, ঠিক তখনি জান্নাতের মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।রুয়েল কেনো যাবে না সেটা আর জিজ্ঞেস করলো না সে।জান্নাত মুখ গোমড়া করে রুম থেকে বের হলো।কারণ রুয়েল না গেলেও তাকে যে যেতেই হবে।কারণ তার বাবা তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যই এসেছে।

জহির সাহেব জান্নাতকে একলা দেখে বললো, মা, জামাই কোথায়?রেডি হইছে?
জান্নাত নিচ মুখ হয়ে বললো,উনি যাবেন না বাবা।

জহির সাহেব বিস্ময় ভরা মুখ নিয়ে বললো,যাবে না! কেনো?

জান্নাত তখন বললো, আমি জানি না বাবা।উনি শুধু আমাকে যেতে বললেন।
জহির সাহেব জান্নাতের কথা শুনে নিজেই চলে গেলেন রুয়েলের রুমে।কিন্তু তিনি রুমে প্রবেশ করে দেখেন রুয়েল রেডি হচ্ছে।জহির সাহেব কিছু বলার আগেই রুয়েল বললো,
বাবা,আমি রেডি।চলুন।এই বলে রুয়েল নিজেই জহির সাহেব কে সাথে করে নিয়ে রুম থেকে বের হলো।
জহির সাহেব কিছুই বুঝতে পারলেন না।জান্নাত বললো রুয়েল যাবে না।আর এখন দেখি রুয়েল নিজেই রেডি হয়ে বের হলো।

রুয়েল নিজেও মিষ্টি কালারের একটা ফুল শার্ট পড়েছে।সাথে জিন্সের প্যান্ট।চোখে আবার একটা কালো সানগ্লাস।পুরোই নায়কদের মতো লাগছে তাকে।এতোদিন সবসময় ক্লিন সেভ করতো সে।কিন্তু ইদানীং আর সেটা করছে না।সেজন্য খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি তে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছিলো তাকে।

জান্নাত রুয়েলকে দেখে হা করে দাঁড়িয়ে থাকলো।

কিন্তু রুয়েল জান্নাতের কাছে এসে বললো,কি হলো জান্নাত?দাঁড়িয়ে আছেন যে?চলুন?দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো?

জান্নাত এখনো সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে রইলো।কারণ রুয়েলকে রেডি হওয়া দেখে আর তার মতো ম্যাচিং করে শার্ট পড়া দেখে জান্নাত বেশ অবাকই হয়েছে।

এদিকে জহির সাহেব রুয়েলের মা,ঊর্মি আর রুবেলের থেকে বিদায় নিলো।আর তাদের জানিয়ে দিলো জান্নাত বেশ কয়েকদিন থাকবে তাদের বাড়ি।তারপর সবাই মিলে যেনো জান্নাত কে গিয়ে নিয়ে আসে।সবাইকে আম কাঁঠালের দাওয়াত দিয়ে গেলো জহির সাহেব।

রুয়েলের মা তখন বললো, বেয়াই সাহেব একটু তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।আর আমি না গেলেও ঊর্মি আর রুবেলকে পাঠিয়ে দেবো যেকোন একদিন।জহির সাহেব সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে বেয়াইন,তবে এক সপ্তাহ পর পাঠাবেন।এই বলে তিনি জান্নাতকে নিয়ে আগে আগে চললেন।

এদিকে রুয়েল তার মার থেকে বিদায় নিচ্ছে।তার মা যেনো ঠিকভাবে ঔষধ পত্র খায় সেটা বলছে।তার জন্য যেনো চিন্তা না করে এসব বুঝাচ্ছে।হঠাৎ ঊর্মি বললো,রুয়েল তুমিও কি এই কয়দিন জান্নাতের সাথেই থাকবে?তুমি না হয় জান্নাত কে রেখে এসে এখানে থাকিও।

রুয়েল ঊর্মির প্রশ্ন শুনে তাজ্জব হয়ে গেলো।তার ভাবি এসব কি বলছে?
রুয়েলের মা তখন বললো, এটা কি ধরনের প্রশ্ন ঊর্মি?নতুন বিয়ে করেছে।তা বউ কি একা একা বাবার বাড়ি থাকবে?
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো,মা আমি সেভাবে বলি নি।রুয়েল কি করে এতোদিন গ্রামে থাকবে সেটা বলছিলাম।গ্রামে তো সারাক্ষণ কারেন্ট চলে যায়।এই গরমের মধ্যে থাকতে পারবে রুয়েল?এসি ছাড়া যে ছেলে এক সেকেন্ড থাকে না সে কি করে এতো দিন ওই অজপাড়াগাঁয়ে থাকবে।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, ভাবি আমরা কিন্তু একসময় ওই গ্রামেই ছিলাম।পুরাতন দিন সব ভুলে গেলে?আর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।আমি সব পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি।কারণ দেশে এসে আরাম আয়াশে কাটালেও বিদেশ গিয়ে কিন্তু আমি এই গরমের মধ্যেই পরিশ্রম করি। রক্তঝরা পরিশ্রম করার পরই আমার হাতে কিন্তু টাকা আসে।আর সেই টাকা দিয়েই তোমরা দেশে সবাই আরাম আয়াশে থাকো।এই বলে রুয়েলও বাসা থেকে বের হলো।

রুয়েলের কথা শুনে ঊর্মি চিৎকার করে বললো, মা রুয়েল কি বলে গেলো আমাকে?আমি এখনি রুবেল কে সব বলে দিচ্ছি।ও আমাকে এতো বড় কথা বলতে পারলো।ওর টাকা আমরা বসে বসে খাই?ঊর্মি রুবেল কে বলার জন্য পা পাড়াতেই রুয়েলের মা হাত টেনে ধরলো ঊর্মির।কি বলছো এসব?রুবেল কে তুমি আবার কি বলবে?আর রুয়েল খারাপ কি বলে গেলো?তুমি যেমন প্রশ্ন করেছো ও তেমন উত্তর দিয়েছে।

ঊর্মি সেই কথা শুনে চিৎকার করে বললো, মা আপনি রুয়েলের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন?রুয়েল ছোট মুখে এতো বড় কথা বলে গেলো আর আপনি কিছুই বললেন না?
রুয়েলের মা কোনো উত্তর না দিয়ে তার রুমে চলে গেলেন।এদিকে ঊর্মি একা একাই চিৎকার করতে লাগলো।কারণ রুয়েলের কথা টা ঊর্মির গায়ে ভালো ভাবেই ফুটেছে।রুয়েল কোনো দিন এভাবে বলে নি।কিন্তু আজ যে কিভাবে তার মুখ দিয়ে বের হলো সে নিজেও বুঝতে পারছে না।

——— ——— ——— ——— ——— ——— ———
——— ——— ——— ——— ——— ——— ———

রুয়েল দের নিজস্ব গাড়িতে করে জান্নাত তার বাবার বাড়ি যাচ্ছে।এই গাড়িটা সচারাচর রুবেল ব্যবহার করে। সে এই গাড়ি টা নিয়েই শো রুমে যায়।ঊর্মি আর তার বাচ্চারা কোথাও বেড়াতে গেলে এটাই ইউজ করে।রুয়েল দুই টা গাড়ি কিনেছিলো দুই ভাই এর ব্যবহার করার জন্য।কিন্তু রুয়েল যেহেতু দেশে থাকে না সেজন্য একটা গাড়ি রুবেল ভাড়া দিয়েছে।
আজ যখন রুয়েল জান্নাত কে নিয়ে তার শশুড় বাড়ি যাচ্ছে সেজন্য রুবেল নিজেই বললো,রুয়েল এই গাড়িটাই আপাতত নিয়ে যা।আমরা এ কয়দিন ম্যানেজ করে নিবো।রুয়েল তখন বললো, ভাইয়া তুমি না হয় আমাদের ওই গাড়িটা নিয়ে আসিও।এখন যেহেতু আমি দেশে আছি সেজন্য দুই টা গাড়িই আমাদের এখন প্রয়োজন।রুবেল রুয়েলের কথার কোনো উত্তর দিলো না।কারণ সে ওই ভাড়া দেওয়া গাড়ি থেকে দিন ১৫০০ করে টাকা পায়।এতো বড় লস সে কিছুতেই মানতে পারবে না।

রুয়েল আর জান্নাত পিছনের ছিটে বসলো।আর জহির সাহেব বসেছে ড্রাইভারের পাশে।রুয়েল জান্নাতের হাতে হাত রেখে একদম তার গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসলো।জান্নাত তখন বললো সামনে বাবা আছে,কি করছেন এসব?ভালো হয়ে বসুন।রুয়েল কোনো কথা না বলে আরো কাছে চলে আসলো জান্নাতের।জান্নাত এবার আর কিছু বললো না।কারণ সে বুঝে গেলো রুয়েলকে বললেও সে শুনবে না।ওনার যেটা করতে মন চায় সেটাই ওনাকে করতে দেওয়া উচিত।
হঠাৎ জহির সাহেব রুয়েলকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।আর রুয়েল তখন জহির সাহেবের দিকে মনোযোগ দিলো।জহির সাহেব রুয়েলের সাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করলো।এদিকে রুয়েল জান্নাতের সাথে চোখাচোখি করছে শুধু।

যেই জান্নাত রা তাদের গ্রামে পৌঁছে গেলো সাথে সাথে জান্নাত চিৎকার করে বলে উঠলো, হুররে পৌঁছে গেছি আমরা।আর কিছুক্ষণ পরেই জাহান আর দাদীকে দেখতে পাবো।রুয়েল জান্নাতের এমন চিৎকার শুনে একদম চমকে গিয়েছিলো।তবে জান্নাতের এমন ছেলেমানুষী দেখে সে হেসে উঠলো।জহির সাহেব নিজেও হাসতে লাগলেন।তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন,মেয়ে আমার আর বড় হলো না,বিয়ে হয়েছে তবুও বাচ্চাদের মতো আচরণ এখনো রয়ে গেছে।

গাড়ি সোজা জান্নাতদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।কারণ জান্নাতদের বাড়ি একদম রাস্তার কাছাকাছি ছিলো।এই রাস্তা দিয়ে বড় কোনো গাড়ি যায় না।তবে ভ্যান, রিক্সা,সাইকেল সারাদিন চলতে থাকে।
জান্নাত গাড়ি থেকে সবার আগে নামতে চাইলো।কিন্তু সে গাড়ির দরজা খুলতে পারলো না।রুয়েল তখন নিজেই খুলে দিলো দরজা টা আর বললো, একটু শান্ত হোন জান্নাত।আপনি যেভাবে তাড়াহুড়ো করছেন কখন যে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান।ধীরে ধীরে নামুন।এই বলে রুয়েল নিজেই নামিয়ে দিলো জান্নাতকে।এদিকে জহির সাহেব আগেই নেমেছেন।

জান্নাতের মা, দাদী,আর জাহান আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। জান্নাত কে দেখামাত্র তারাও এগিয়ে আসলো।জাহান সবার আগে এগিয়ে এসে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরলো।সে জান্নাতকে দেখে কথা বলতে পারছিলো না।সে বোনকে ছেড়ে সে এক রাতও কোথাও থাকে নি আজ সেই বোন তার থেকে অনেক দূরে থাকে।এবার জান্নাতের আম্মু আর দাদী এগিয়ে এসে বললো,এখানেই কি থাকবি তোরা?যা রুমে চলে যা।এদিকে রুয়েল সবাইকে দেখে আগে সালাম দিলো। দাদী সালামের উত্তর দিয়ে রুয়েলের হাত ধরে বললো, তা নাতী জামাই কেমন আছো?
রুয়েল দাদীর মুখে এমন কথা শুনে বেশ লজ্জিত হলো। কারণ দাদী সবসময় তাকে রুয়েল বলেই ডাকতো।রুয়েল মুচকি একটা হেসে বললো,আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি দাদী।আপনারা সবাই কেমন আছেন?
দাদী তখন বললো, যেমন দেখছিস তেমনি আছি।চল রুমে গিয়ে কথা বলি।এই বলে রুয়েল দাদীর সাথে রুমের মধ্যে চলে গেলো।

রুয়েলকে দাদী বাহিরের রুমে নিয়ে গেলো।কারণ এই রুমের সাথে বারান্দা আছে।যার কারণে কারেন্ট গেলেও বাহির থেকে বাতাস আসে।রুয়েলের ড্রাইভার কে আগেই জহির সাহেব বসিয়ে রেখেছেন।তিনি ফ্রেশ হয়ে বসে আছেন।
জান্নাতের আম্মু সবার জন্য ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসলো।আরো হরেক রকমের নাস্তা।সাথে মৌসুমি সব ফল।রুয়েল ড্রাইভার আংকেল কে বললো,আংকেল আপনি নাস্তা করে নিন।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।এই বলে রুয়েল তার লাগেজ খুঁজতে লাগলো।কিন্তু লাগেজ ইতোমধ্যে জান্নাত তার নিজের রুমে নিয়ে গেছে।রুয়েলকে লাগেজ খোঁজা দেখে জাহান বললো,ভাইয়া লাগেজ তো আপুর রুমে।আপনি আসুন আমার সাথে।এই বলে জাহান রুয়েলকে নিয়ে জান্নাতের রুমে চলে গেলো।

রুয়েল লাগেজ থেকে তার দরকারী সব জিনিসপত্র বের করলো।জাহান তখন বললো, ভাইয়া আর কিছু লাগবে?
–না,লাগবে না।জান্নাত কই?ওকে একটু ডেকে দাও তো?
–আপু তো দাদীর সাথে বসে গল্প করছে।আপনার যা যা লাগবে আমাকে বলুন।
–না লাগবে না কিছু।শুধু একটু জান্নাতকে গিয়ে বলো আমি ডাকছি।
–ওকে ভাইয়া,এই বলে জাহান চলে গেলো।

জাহান দাদীর রুমে গিয়ে দেখে জান্নাত দাদীর সাথে মনের সুখে বসে গল্প করছে আর হি হি করে হেসে উঠছে।দাদী রুয়েল আর তার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করছে।জান্নাত সব প্রশ্নের উত্তর এভাবে হেসে হেসেই উড়ে দিচ্ছে।জান্নাতের মুখের এই হাসিটা দেখে দাদীর কলিজা একদম ঠান্ডা হয়ে গেলো।দাদী বুঝে গেলেন জান্নাত ভালোই আছে।রুয়েল তাকে সত্যি ভালো রেখেছে।
জাহান জান্নাতের কাছে গিয়ে বললো,এই আপু ভাইয়া তোকে ডাকছে।আর তুই দাদীর সাথে বসে গল্প করছিস?এখন পর্যন্ত তোর ড্রেস ও চেঞ্জ করিস নি।
জান্নাত সেই কথা শুনে দাদীকে বললো,দাদী একটু শুনে আসছি আমি।পরে এসে গল্প করছি।এই বলেই জান্নাত দৌঁড়ে চলে গেলো।

জান্নাত তার রুমে গিয়ে দেখে রুয়েল তোয়ালে, টি শার্ট আর একটা টাউজার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত তা দেখে বললো, এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?যান চেঞ্জ করে নিন।
রুয়েল তখন জান্নাতের হাত ধরে টেনে তার কাছে এনে মুখ ভেংচিয়ে বললো,যান চেঞ্জ করে নিন।তা আমি কই৷ গিয়ে চেঞ্জ করবো,কোথায় গিয়ে ফ্রেশ হবো সেটা তো আমাকে বলতে হবে।আপনি আমার কোনো খোঁজ না নিয়ে অন্য খানে গিয়ে বসে আছেন।আমি কি আপনার বাসার কোথায় কি আছে জানি কিছু?

জান্নাত তখন বললো, আমি তো জাহানকে বললাম যে তোর দুলাভাই এর কি কি প্রয়োজন জিজ্ঞেস কর গিয়ে।
ও আপনাকে সাহায্য করে নি?
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,হ্যাঁ করেছে সাহায্য।কিন্তু আমি জাহানকে বলতে পারি নি যে আমি ওয়াশরুমে যাবো।
জান্নাত সেই কথা শুনে হি হি করে হেসে উঠলো। আর হাসতে হাসতেই আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বললো,ওই পাশে আমাদের ওয়াশরুম।রুয়েল মনে মনে ভাবলো রুম থেকে এতো দূরে ওয়াশরুম!রুমের মধ্যে ওয়াশ রুম টা করলে কি হতো?

জান্নাত রুয়েলকে এভাবে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, কি হলো আপনার?যান ওয়াশরুমে।না আপনাকে একদম ওয়াশরুম পর্যন্ত এগিয়ে দিতে হবে?
রুয়েল সেই কথা শুনে একা একা ওয়াশরুমে চলে গেলো।

এদিকে জান্নাতও তার বোরকা টা খুলে ফেললো।তারপর নিজেও ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য লাগেজ থেকে একটা নতুন ড্রেস বের করলো।তারপর অন্য আরেকটা রুমে চলে গেলো।

জান্নাত ফ্রেশ হয়ে রুমের মধ্যে আসতেই দেখে রুয়েল ইতোমধ্যে এসে গেছে।রুয়েল আকাশি কালারের একটা টি শার্ট আর ছাই কালারের একটা টাউজার পড়ে বিছানার উপর বসে আছে।আর মনের সুখে মোবাইল টিপাটিপি করছে।
জান্নাত নিজেও কালো কালারের একটা সুতি গোলজামা পড়েছে,যাতে সোনালী কালারের সুতো দিয়ে হাতের কাজ করা।এই জামা টা রুয়েল তার জন্য এনেছিলো।কিন্তু জামাটার ওড়না টা খুব পাতলা হওয়াই একবারও পরে নি জান্নাত।কিন্তু আজ যেহেতু সে তার বাড়ি এসেছে আর বাড়িতে কোনো বাহিরের পুরুষ নাই সেজন্য এ জামাটিই পড়লো জান্নাত।

জান্নাত রুয়েলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, আপনাকে সবাই বাহিরের রুমে ডাকছে।আর আপনি এখানে একা একা বসে মোবাইল টিপছেন?
রুয়েল সেই কথা শুনে জান্নাতের দিকে তাকালো।কিন্তু সে কিছুতেই তার পলক ফেলাতে পারছিলো না।জান্নাতকে এতো সুন্দর লাগছিলো এই ড্রেসে যা সে কল্পনাও করে নি।কারণ বাসার মধ্যে সবসময় জান্নাত গায়ে মাথায় কাপড় দিয়ে থাকে।আর ওড়না গুলো সবসময় বড় বড় পড়ে।যার কারণে এই লুকে কখনোই জান্নাত রুয়েলের সামনে আসে না।

রুয়েল জান্নাতের কাছে এগিয়ে এসে বললো,মাশাল্লাহ। অনেক সুন্দর মানিয়েছে ড্রেস টা।জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে নিচ মুখ হয়ে বললো,আপনাকে সবাই ডাকছে।যান কথা বলে আসুন।রুয়েল সেই কথা শুনে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে কিস করতে করতে বললো, জান্নাত আপনাকে একটা রিকুয়েষ্ট করতে পারি কি?

–কি রিকুয়েষ্ট?

–আপনি তো সবসময় পুরো শরীর ঢেকে রাখেন।দিনের বেলায় বাসায় যেহেতু লোকজন আসা যাওয়া করে সেজন্য দিনের বেলায় এসব শৌখিন ড্রেস পড়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করবো না।কিন্তু প্রতিদিন রাতের বেলা যখন সকল কাজকর্ম শেষ করে নিজের রুমে আসবেন তখন কিন্তু প্রতিদিন এইভাবে সুন্দর সুন্দর ড্রেস পড়বেন।আর তার সাথে হালকা করে একটু সাঁজবেন।রাখবেন আমার রিকুয়েষ্ট টা?

জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলকে সরিয়ে দিয়ে বললো, আপনাকে সবাই ডাকছে তো বাহিরের ঘরে।আগে শুনে আসুন।তারপর উত্তর দিবো।এই বলে জান্নাত তার গায়ের পাতলা ওড়না টা পালটে নিয়ে আবার সেই বড় ওড়না গায়ে মাথায় জড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলো।
#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_১৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

লাল রঙের হাতের কাজ করা শাড়ি,সাথে আবার ম্যাচিং করে লাল রঙের চুড়ি আর টকটকে লাল গোলাপ দিয়ে খোপা বেধে নতুন বউ এর সাজে বসে আছে জান্নাত।রুয়েল ঠিক বুঝতে পারছে না এটি আসলে কে?কারণ জান্নাত অন্য মুখ হয়ে বড় একটা ঘোমটা টেনে চুপটি করে বসে আছে।তবে রুয়েল বুঝতে পারলো এটা জান্নাতই হবে।কারণ তার পরনে ছিলো রুয়েলের দেওয়া সেই লাল শাড়িটা।যেটা রুয়েল জান্নাতকে সেদিন পড়তে বলেছিলো।তবে রুয়েল কিছু বুঝতে পারলো না।কারণ এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো।জান্নাতকে তো সে আজ শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজে থাকতে বলে নি।তাহলে জান্নাত হঠাৎ একা একাই এতো সুন্দর করে সেজেছে কেনো?

রুয়েল মাত্র আড্ডাখানা থেকে ফিরলো।সে তার শাশুড়ীর হাতের হরেক রকম পিঠা আর বিভিন্ন রকমের ফলমূল খেয়ে ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে গ্রামে ঘুরতে বের হয়েছিলো।রুয়েল তাদের গ্রামের জমিজমা গুলোও দেখে এসেছে।রুয়েল তাদের গ্রামের বাড়িতে যেয়ে তার চাচা চাচির সাথেও সাক্ষাৎ করেছে।পুরো গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে আর গ্রামের চেনাজানা লোকের সাথে গল্প করতে করতে প্রায় রাত লেগে গেলো।কিন্তু রুয়েল জান্নাতের রুমে ঢুকতেই এতো বড় একটা সারপ্রাইজ পাবে সত্যি কোনোদিন ভাবতে পারে নি।

রুয়েল জান্নাতের দিকে এগিয়ে যেতেই জান্নাত বললো, আসসালামু আলাইকুম।রুয়েল জোরে করে শব্দ করে বললো,ওয়ালাইকুম আসসালাম।এই বলে রুয়েল জান্নাতের পাশে গিয়ে বসলো আর জান্নাতের মাথার উপর থেকে ঘোমটা সরাতেই সর্বপ্রথম জান্নাতের মাথার খোঁপাটি চোখে পড়লো রুয়েলের।একদম গাছের তাজা লাল গোলাপ বসানো হয়েছে খোঁপাতে।রুয়েল এবার জান্নাতের মুখটি তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ। আল্লাহর কি অপরুপ সৃষ্টি।সত্যি আপনার রুপের কোনো তুলনা হয় না জান্নাত।সৃষ্টিকর্তা যেনো পরম যত্নে আপনাকে গড়িয়েছেন।আর সেই অপরুপ সৌন্দর্য আমাকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।
জান্নাত রুয়েলের মুখে এতো এতো প্রশংসা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।সে কিছুতেই রুয়েলের দিকে তাকাতে পারছে না।ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।এভাবে সেজেগুজে কিছুতেই আর থাকতে ইচ্ছে করছে না।রুয়েল তখন জান্নাতের মুখ টি উপর করে ধরে বললো,জান্নাত!আপনাকে সুন্দরভাবে সেজেগুজে থাকতে বলেছিলাম,কিন্তু এভাবে আমার মাথা নষ্ট করতে বলি নি?আমি আপনাকে যত দেখছি ততো বেশি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে এতোক্ষণে একটু তাকালো আর মিনমিনিয়ে বললো,আমি সাজতে চাই নি।দাদী পড়ে দিয়েছে শাড়িটি।আর জাহান এভাবে সাজগোছ করে দিয়েছে।এতে আমার কোনো দোষ নেই।

রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে একটু অবাক হলো।সে তখন বললো, দাদী আর জাহান হঠাৎ এভাবে আপনাকে সাজিয়ে দিলো কেনো?
–জানি না আমি।আমি তো দাদীর সাথে বসে গল্প করছিলাম।হঠাৎ দাদী বললো, আজ তোকে আমি নিজের হাতে শাড়ি পড়ে দেবো।যা তোর একটা শাড়ি আন।
রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে বললো, তা দাদীর সাথে কি বিষয় নিয়ে গল্প হচ্ছিলো?আমাকে কি বলা যাবে?

–না,না,বলা যাবে না।
–কেনো?
–এমনিতেই।এই বলে জান্নাত বিছানা থেকে নেমে এলো।আর রুয়েলকে বললো,আপনি তো এইমাত্র বাহির থেকে আসলেন।যান ফ্রেশ হয়ে নিন।আপনার জন্য খাবার দাবার আমি রুমে এনেছি।কারণ এই শাড়ি পড়ে কিছুতেই সবার সামনে যেতে পারছিলাম না।বিশেষ করে আব্বুকে দেখে ভীষণ লজ্জা লাগছে।এজন্য জাহান কে বলেছি ঘরেই দিতে যেতে খাবার টা।

রুয়েল তখন নিজেও জান্নাতের কাছে চলে গেলো।আর তার হাত ধরে টেনে নিলো। জান্নাত তা দেখে বললো,আপনি ফ্রেশ হবেন কখন?

রুয়েল জান্নাতের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে জান্নাতকে তার একদম কাছে এনে বললো,আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছেন না?
–হুম।জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো।

রুয়েল তখন বললো, কিন্তু আমাকে দেখে তো এতো লজ্জা পেলে চলবে না।ফ্রি হতে হবে আমার সাথে। তা না হলে দুইজন দুইজনার কাছে আসবো কি করে?

জান্নাত রুয়েলের মুখে এমন কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার পুরো শরীর ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো।কারণ রুয়েল যখনই তার কাছে আসতে চায়,তাকে ভালোবাসতে চায় ঠিক তখনি জান্নাতের পুরো শরীর এভাবে অবশ হয়ে যায়।

রুয়েল হঠাৎ জান্নাতকে কোলে তুলে নিলো।আর বিছানার দিকে এগোতে লাগলো।কিন্তু জান্নাত নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত দিয়ে রুয়েল কে বাধা দিতে লাগলো।রুয়েল তখন জান্নাতের হাত দুটি শক্ত করে ধরে বললো,দাদী এতো সুন্দর করে সেজে দিয়েছে কিসের জন্য জানেন?আজ আর কোনো বারণ শুনবো না।

জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলের দিকে তাকালো।কারণ সে জানে।কেনো আজ দাদী তাকে এতো সুন্দর করে সেজে দিয়েছে।দাদী জান্নাতের থেকে সব শুনেছে।রুয়েলের ব্যাপারে সবকিছু বলেছে জান্নাত।তাদের মাঝে যে এখনো কোনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয় নি সেটাও বলেছে দাদীকে।
দাদী বুঝতে পারছে জান্নাতের সংকোচ এখনো দূর হয় নি।কিন্তু এভাবে চললে এদের মধ্যে মিলন টা হবে কি করে?

দাদী তখন জান্নাতকে বলেছে,স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক হলো পবিত্র একটা সম্পর্ক।এই সম্পর্ক সবসময় ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতে হবে।দুইজন দুইজনকে বুঝতে হবে।একে অপরের পাশে থেকে সকল সুখ দুঃখ শেয়ার করতে হবে।কখনোই এই বন্ধনের মাঝে তৃতীয় পক্ষ আসার সুযোগ দেওয়া যাবে না।আর ছেলেরা সবসময় ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়।এদের কে যত বেশি ভালোবাসা যায় এরা ততো বেশি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।আর আমার মনে হয় রুয়েল যথেষ্ট কেয়ারিং একজন ছেলে।তোকে অনেক বেশি ভালোবাসবে।সেজন্য তোর উচিত ওর ভালোবাসায় নিজেকে বিলীন করে দেওয়া।কখনোই রুয়েলের কথার অবাধ্য হবি না,ওর সাথে উচ্চস্বরে কথা বলবি না।ওর সাথে সুন্দর করে মিষ্টি ভাষায় কথা বলবি।ওকে এমন ভাবে ভালোবাসবি যাতে করে ওর মনে শুধু তুই রাজত্ব করতে পারিস।তুই ছাড়া কখনোই সে অন্য মেয়ের কথা ভাবতেই পারবে না।সেজন্য সবার প্রথম তোদের দুইজন কে ফ্রি হতে হবে।দুইজন দুইজনার কাছাকাছি থাকতে হবে সবসময়।আর কখনোই রুয়েলের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিবি না।
জান্নাত দাদীর কথাগুলো আজ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।এবং সে ঠিক করে নিলো আর কিছুতেই রুয়েলের থেকে সে মুখ ফিরে নিবে না।রুয়েল যখন তাকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধে করতে চাইবে সে নিজেও সঙ্গ দিবে তাকে।কারণ সে চায় না রুয়েল তাকে ভুল বুঝুক।তার থেকে মুখ ফিরে নিক।জান্নাত এখন সারাজীবন এর জন্য রুয়েলের সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চায়।

রুয়েল হঠাৎ জান্নাতের গলায় তার মুখ ডুবিয়ে নিয়ে বললো,আমার ভালোবাসা কি অনুভব করতে পারছেন জান্নাত?আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমার বুকের ভিতর টা একদম ছটফট করছে।আমাকে আর কত কষ্ট দিবেন বলেন তো?এই বলে রুয়েল জান্নাতকে কিস করতে লাগলো। সে আর কিছুতেই থামলো না।ভালোবাসার অতল গহবরে তলিয়ে গেলো সে।আজ তাকে আর কোনো শক্তিই বাধা দিতে পারবে না।জান্নাত নিজেও রুয়েলের ভালোবাসায় নিজেকে নিমজ্জিত করলো।সকল সংকোচ আর লাজ ভুলে রুয়েলের ভালোবাসায় সঙ্গ দিলো সে।কারণ সে ভালো করেই বুঝতে পারছে রুয়েলের অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে।সেজন্য বার বার তাকে কাছে পাওয়ার জন্য এতো কাকুতিমিনতি করছে।

আজ কোনো পূর্নিমার রাত ছিলো না।বা আকাশে কোনো তারার মেলাও ছিলো না। চারপাশ একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভরা।তবুও আজকের রাত টা রুয়েল আর জান্নাতের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত ছিলো।মনে হচ্ছিলো প্রকৃতির সমস্ত সুখ তাদের মাঝে এসে গেছে।এই সুখ থেকে কিছুতেই তাদের আর আলাদা করতে পারবে না।জান্নাত প্রতিজ্ঞা করলো সে আর কখনোই রুয়েলকে কষ্ট দেবে না।আর তার ভালোবাসায় রুয়েলকে সঠিক পথে চলার পরামর্শ দেবে।সবসময় তার পাশে থাকবে।অন্যদিকে রুয়েল নিজেও নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলো,কখনোই জান্নাত কে কষ্ট দেবে না।তাকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ দিয়ে সে ভরিয়ে রাখবে।জান্নাতের চোখে সে এক ফোঁটা পানিও ঝড়তে দেবে না।জান্নাতকে বউ হিসেবে পেয়ে রুয়েল নিজেকে ধন্য মনে করে।

জান্নাত শাওয়ার শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে বসে।তারপর মাথা থেকে তোয়ালে খুলে চুল আঁচড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।জান্নাত আয়নাতে বার বার নিজেকে দেখতে লাগলো।তার লজ্জা যেনো এখনো কমে নি।জান্নাতের চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।হঠাৎ রুয়েল এলো জান্নাতের কাছে।সে পাশে রাখা তোয়ালে টা নিয়ে নিজেই জান্নাতের চুল গুলো আবার মুছিয়ে দিতে লাগলো।জান্নাত কোনো কথা বললো না।সে আগের মতো চুপটি করে বসে থাকলো।রুয়েল জান্নাতের চুল গুলো মুছিয়ে দিয়ে হঠাৎ জান্নাতের কোলের উপর মাথা রাখলো।তবে কোনো কথা বললো না।জান্নাত তখন রুয়েলের মাথার চুল গুলো বোলাতে লাগলো।

রুয়েল হঠাৎ বললো, জান্নাত!আপনার মনে কোনো অভিমান নেই তো!আপনি কি আমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছেন?
–হ্যাঁ।আমি আপনাকে মন থেকেই মেনে নিয়েছি।আর জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনারই থাকতে চাই।আর কখনো এই প্রশ্ন টা করবেন না।
রুয়েল সেই কথা শুনে তার মাথা টা উপরে তুললো তারপর জান্নাতের কপালে একটা কিস করে বললো,আমারও এটাই চাওয়া জান্নাত।আমিও যেনো আপনাকে আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবাসতে পারি।আমি আপনাকে আমার জীবন সঙ্গীনি হিসেবে পেয়ে খুব খুব খুব বেশি গর্ববোধ করি।এই বলে রুয়েল দাঁড়িয়ে গেলো।আর জান্নাতের হাত ধরে বললো, চলুন জান্নাত।তাহাজ্জুদের নামায টা পড়ে নেই।আজ আল্লাহ কে আমার অনেক কিছু বলার আছে।
–কি বলবেন?
–আপনাকে বলা যাবে না।শুধুমাত্র আল্লাহকেই বলতে চাই।
এই বলে রুয়েল জান্নাতকে সাথে করে নিয়ে আবার ওয়াশ রুমে চলে গেলো।ওয়াশ রুম টা জান্নাতের রুম থেকে একটু দূরে হওয়াই বেশ অসুবিধাই হচ্ছে রুয়েলের। কারণ তাদের বাসায় তো সবার ওয়াশরুম বেড রুমের সাথেই।

জান্নাত মগে করে পানি ঢালছে আর রুয়েল সেই পানি দিয়ে অজু করছে।রুয়েলের অজু করা শেষ হলে সে জান্নাতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলো।তারপর জান্নাত অজু করে নিলো।
দাদী দূর থেকে জান্নাত আর রুয়েলের অজু করা দেখছিলো।কারণ দাদী নিজেও তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য অজু করতে এসেছে।পুরো বাড়ি জুড়ে একটাই ওয়াশরুম।সেজন্য দাদী তার রুমে চলে গেলেন।দাদী জান্নাত আর রুয়েলকে এভাবে একসাথে অযু করা দেখে মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন।জান্নাত আর রুয়েল যে এতো তাড়াতাড়ি দুইজনকে এতো আপন করে নেবে সত্যি তিনি ভাবতে পারেন নি।দাদীর তখন জান্নাতের দাদুর কথা মনে হলো।ঠিক এমনভাবেই দুইজন এভাবে গভীর রাতে একসাথে নামায পড়তো।তিনি বুঝতে পারলেন রুয়েলের সাথে বিয়ে হয়ে জান্নাতের তারা সর্বনাশ করেন নি।কতজন স্বামী এভাবে আরামের ঘুম বাদ দিয়ে স্ত্রীর সাথে গভীর রাতে নামায আদায় করে!

🖤🖤🖤

চোখের পলকে একটি সপ্তাহ পার হয়ে গেলো।রুয়েল আর জান্নাত এই সাতটি দিন খুব আনন্দে কাটালো।জান্নাত তো তার শশুড় বাড়ির কথা ভুলেই গেলো।দাদী আর জাহানের সাথে সারাদিন নানারকম গল্প আর হাসি ঠাট্টায় মেতে ছিলো এ কয়দিন।আবার অন্যদিকে রুয়েলের মতো এমন একজন হাজব্যান্ড পেয়ে সে দুনিয়াকেই বেহেশত মনে করছে।জান্নাত ভাবলো তার মতো এমন সুখী আর কেউ নয়।দুনিয়ার সমস্ত সুখ যেনো আল্লাহ তাকে দিয়েছে।কিন্তু এই সুখ যে তার জীবনে অস্থায়ী ভাবে এসেছে সে কখনো সেটা কল্পনাও করে নি।রুয়েল নিজেও বেশ আনন্দের মধ্যে আছে।তার কাছেও মনে হচ্ছে সে মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি।জান্নাতের মতো এমন একজন বউ দিয়েছে আল্লাহ তাকে,আর কিছু চাই না তার।এজন্য রুয়েল সিদ্ধান্ত নিলো আর বিদেশ যাবে না।দেশেই তার ভাই এর সাথে শো রুমে বসবে।দুইজন মিলেমিশে ব্যবসা কে আরো বড় করবে।আল্লাহ তো তাদের অনেক কিছুই দিয়েছে।দুইটা বিল্ডিং করেছে।দুইটা গাড়ি আছে।আর গ্রামে জমিজমাও অনেক করেছে।আর যেভাবেই হোক না খেয়ে থাকতে হবে না।তাছাড়া ব্যাংকে তো তার জমানো টাকা আছেই।সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে শো রুম টা আরো বড় করতে হবে।এসব পরিকল্পনা রুয়েল একা একাই করলো।কারন সে আর কিছুতেই জান্নাতকে রেখে বিদেশ গিয়ে থাকতে পারবে না।

সাতদিন পর হঠাৎ করে জান্নাতের বাড়িতে রুয়েলের চাচা আর চাচী আসলো।রুয়েল বেশ অবাক হলো যখন শুনলো তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তার চাচা চাচীকেই পাঠানো হয়েছে।রুয়েল সাথে সাথে তার মাকে ফোন দিলো।আর জিজ্ঞেস করলো আজ তো তার ভাই ভাবী আসার কথা।তাহলে তাদেরকে নিতে তার চাচা চাচী এসেছে কেনো?
রুয়েলের মা তখন বললো,বাবা রুবেল শো রুমে একটু ব্যস্ত আছে।সেজন্য যেতে পারে নি।আর ঊর্মি একা একা কি করে যাবে?আর জানিসই তো আমার শরীর ভালো না।সেজন্য রুবেল তোর চাচা আর চাচীকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নিলো না জহির সাহেব।তিনি রুয়েলকে বললেন,এটা ঠিক হলো না বাবা।অন্তত তোমার মা আর ঊর্মি এসে নিয়ে যেতে পারতো।জান্নাতকে আমরা গুরুজন ছাড়া একা একা কি করে পাঠাই?

রুয়েল তার শশুড়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।তবে সে বুঝতে পারলো ঊর্মি সেদিনের কথাটা তার ভাইকে বলে দিয়েছে আর সেজন্যই তার রুবেল ভাই রাগ করেছে।

#চলবে,
#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here