আলো আঁধারের লুকোচুরি পর্ব -০৬

#আলো_আঁধারের_লুকোচুরি
#Part_06
#Writer_NOVA
ক্যাটাগরি: রাজনৈতিক + থ্রিলার

‘দুদিন আগে ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখেছি। এরপর থেকে তোকে ভীষণ মনে পরছিলো বুঝলি! তাই দেখা করতে চলে এলাম।’

হাতের হকিস্টিকটায় ঠেকনা দিয়ে রেখে সামনে থাকা মানুষটাকে কথাগুলো বলে উঠলো ইয়াসফি। গোডাউনের বস্তাগুলোর ওপর এলেমেলো হয়ে পরে আছে এক সুঠামদেহী পুরুষ। তার পরনের জামাকাপড় ধুলো জমে পরিত্যক্ত বস্তার রং ধারণ করেছে। মুখে ফা’সির আসামির মতো কালো কাপড় প্যাচানো। চোখ দুটোর জায়গায় গোল করে কাটা। যাতে সে সবকিছু দেখতে পারে। হাত-পা বাঁধা। সারা শরীরে অসংখ্য মা’রের দাগ। শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসছে। শব্দ না পেয়ে ইয়াসফি হকিস্টিক দিয়ে জোরে খোঁচা দিলো।

‘কিরে, এতো দ্রুত হাঁপিয়ে গেলি? আরো বহুকিছু দেখার বাকি আছে তো।’

একটু থেমে ফের বললো,
‘লোকটা প্রায় সময় আমার কাছে এসে তার সন্তানকে চায়। কিন্তু আমার কোন দয়া হয় না তার জন্য। এমনকি তোর জন্য হয় না। আমি কি দয়ামায়াহীন হয়ে যাচ্ছি?’

ভাবুক ভঙ্গিমায় ইয়াসফি ছেলেটার দিকে তাকালো। এরপর রানের মধ্যে কষিয়ে এক লাথি মেরে চেচিয়ে উঠলো।

‘উঠ! এতো সহজে তোকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে দিবো না আমি। তুই নিজের চোখে দেখবি আমি কি করে তোর থেকে সবকিছু কেড়ে নেই।’

চোখ মুখে রাগের বহিঃপ্রকাশ। কি প্রচন্ড আক্রোশ! ক্ষোভে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে। থেমে থেমে কপালের রগ ফুলেফেঁপে উঠছে। যা দেখে অপু কিছুটা তটস্থ হয়ে পরলো। ইয়াসফিকে এই রূপে দেখলে তার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। তখন কতটা হিংস্র যে দেখায় যা মুখে বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। অপু ইয়াসফির বিশ্বস্ত সহযোগী। যেসব ঝামেলা একটু-আধটু মারামারি, গুন্ডামী করে সামলাতে হয় সেগুলোর দায়িত্ব অপুর ঘাড়ে পরে। অপু মোটামুটি ইয়াসফির নাড়ীনক্ষত্র সব জানে। যার এক তৃতীয়াংশ ওমর জানে না।

ছেলেটার থেকে আশাতীত সাড়া না পেয়ে ইয়াসফি হুংকার দিলো।

‘অপু, ঘাড় ধরে উঠা তো।’

অপু আদেশ পেয়ে দেরী করলো না। ছেলেটার ঘাড় ধরে মাথাটাকে পেছন থেকে উঁচু করে ধরলো। ইয়াসফি ভালো করে নজর দিতেই দেখলো কালো কাপড়ের ভেতর থেকে এক জোড়া রক্তলাল চোখ ওর দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি তেজ সেই চাহনির! ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়। যেনো এই মুহুর্তে ইয়াসফিকে চোখের আগুনে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে। ইয়াসফি এবার শান্ত হলো। কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো।

‘এই তো নিজের পূর্ব ফর্মে ফিরে এসেছিস। আমি এই দীপ্তি দেখতে চাই তোর চোখে। নয়তো লড়াই করে মজা পাবো না।’

রাগে চোখ নামিয়ে নিলো ছেলেটি। অপুকে ইয়াসফি ইশারা করতেই ছেড়ে দিলো। ইয়াসফি ভেবেছিলো ধপ করে পরে যাবে। কিন্তু তা হলো না। শক্ত করে নিজেকে দুই পায়ে ভর দিয়ে বসিয়ে রাখলো। ইয়াসফি সামনে এসে থুতনি উঁচু করে ধরে বললো,

‘দূর্বল শরীর নিয়েও এতো শক্তি আসে কোথা থেকে তোর?’

ছেলেটা ঝাড়া মেরে তা মুখটাকে ইয়াসফির হাত থেকে সরিয়ে নিলো। যাতে ইয়াসফির সূক্ষ্ণ রাগটা তরতর করে বেড়ে গেলো। শক্ত করে দুগাল চেপে ধরে ফিসফাস করে বললো,

‘আগুন নিভে গেছে তাও তেজ কমেনি।’

ধাক্কা মেরে ছেলেটাকে বস্তার ওপর ফেলে দিলো। দূর্বল শরীরে ব্যাথা পেলেও একটা টুঁশব্দও করলো না। ইয়াসফির এই বিষয়টাতেও খুব করে গায়ে লাগলো।অপুকে হুকুম ছুড়লো।

‘ওকে ধরে বেঁধে ইচ্ছে মতো পিটা। যতখন পর্যন্ত ওর তেজ না কমবে ততক্ষণ পর্যন্ত পিটাবি।’

‘জ্বি ভাই।’

রাগে হকিস্টিক ছুঁড়ে মেরে হনহনিয়ে গোডাউন থেকে বেরিয়ে গেলো ইয়াসফি। রাগে তার মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। ইয়াসফি যেতেই ছেলেটার দূর্বল ঠোঁটে এক টুকরো হাসির আবির্ভাব ঘটলো। নীরবতা সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এত বছর পর কথাটার মর্ম সে বেশ উপলব্ধি করতে পারছে।

মুখের কালো মাস্কটাকে ভালো করে সেঁটে মাথার ক্যাপটাকে ঠিক করে নিলো রুহানি। মাসুমকে আঙুলের ইশারায় কিছু বুঝিয়ে দুই প্রান্ত দিয়ে দুজন হাঁটতে আরম্ভ করলো৷ গলায় ঝুলানো ওড়নাটাকে ঠিক করে দোকানের সামনে দাঁড়ালো। মাথা উঁচু করে নামটা দেখে নিলো। “মায়ের দোয়া স্টোর”। বড় বড় কদম ফেলে ভেতরে ঢুকলো। দোকানীর চেয়ারে ষোল বছরের কিশোর বসা। নাম কালাম। রুহানিকে এগিয়ে আসতে দেখে কালাম টুল থেকে উঠে সৌজন্যতা মূলক হাসি বিনিময় করে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি লাগবো আফা?’

রুহানি সতর্কতার চোখে একবার আশপাশ দেখে নিলো। এরপর গলার স্বর মোটা করে বললো,

‘সালমান ভাই আছে?’

‘জে আছে।’

‘একটু ডেকে দিবেন।’

‘কেন?’

‘একটু দরকার ছিলো। যদি ডেকে দিতে।’

‘আপনি খাড়ান আমি দিতাছি।’

কালাম গলা উঁচিয়ে ডাকলো,
‘সালমান ভাই!

‘হৈ! কি হইছে?’

‘কাস্টমার আইছে আপনেরে ডাকে।’

‘খাড়াইতে ক। খাইয়া আইতাছি।’

রুহানি মনে মনে সালমানকে সাংঘাতিক এক গালি দিয়ে আওড়ালো, “খা বেডা, খা। জন্মের খাওন খা। একবার আমার হাতে পরলে এত শান্তিতে আর খাইতে পারবি না”। চতুরতার সাথে চারিপাশ দেখে মোটামুটি ছক কষে নিলো সালমানকে কি করে উঠাবে। দুপুর হওয়া মানুষজন কম। মাঝে মধ্যে দু-চারটা রিকশার আনাগোনা। কালাম এর মধ্যে এসে একটা টুল দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। টুলে বসে পা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে রুহানি বিরক্তিতে হাই তুলতে লাগলো। এত সময় লাগে খেতে?

সালমান ফিরলো আরো পাঁচ মিনিট পর। হাতের রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুহানি সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি লাগবো কন।’

‘তোকে।’

সালমান ভড়কে গেলো। ততক্ষণে মাসুম সেখানে হাজির। চেচিয়ে কালামকে ডাকতে যাবে তার আগেই মাসুম পেছন থেকে ক্লোরোফোম যুক্ত রুমাল সালমানের মুখে চেপে ধরলো।

‘হ্যালো, ইয়াসফি! কবে ফিরবি তুই? তোর মামী তোকে না দেখে ভয়ংকর জেদ করছে। আমি কোনভাবে ঠান্ডা করতে পারছি না। একবার এসে দেখা করে যা বাপ।’

‘মামা, সময় বের করতে পারছি না। এতো চাপ আমার জান যায় যায় অবস্থা।’

‘আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তোর মামী বুঝতে চাইছে না। বাচ্চাদের মতো গত দুই দিন ধরে না খেয়ে আছে। এভাবে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।’

ইয়াসফি লঘু শ্বাস ফেললো। মোবাইল কান থেকে সরিয়ে একবার সময় দেখে নিলো। কি উত্তর দেওয়া উচিত তা সে ভেবে পাচ্ছে না। মামীর এই ভয়ানক কর্মকান্ডগুলো তার ভেতরকার সত্ত্বাকে গভীর চিন্তায় মগ্ন করে দেয়। যেখানে সে তলিয়ে যায় অন্ত গহ্বরে। যাতে কোন ঠাঁই নেই।

অপরপাশে পিনপিনে নীরবতা টের পেয়ে আজিম সারোয়ার সাহস পেলেন। গলার স্বর আরো দৃঢ় করে বললেন,

‘এক দুপুরের জন্য ঘুরে যা বাবা। নয়তো পাগলীটাকে দমানো মুশকিল হয়ে যাবে।’

এবার শব্দ করে শ্বাস ফেললো ইয়াসফি। মানুষটা এতো আশা নিয়ে কল করেছে তাকে নিরাশ করতে মন চাইছে না। নিজের অস্থির মনকে যথাসম্ভব ঠান্ডা করে উত্তর দিলো,

‘ঠিক আছে, এই সপ্তাহে আসছি।’

‘সত্যি?’

‘হু!’

আজিম সারোয়ারের কন্ঠে প্রফুল্লতা ছেয়ে গেলো৷ অবশেষে পাঁচ মাস পর ভাগ্নেকে বাড়িতে আসার জন্য রাজী করাতে পারলো। তুষ্টি বাবার পাশেই ছিলো। হঠাৎ করে বাবার মুখে হাসি দেখে প্রশ্ন করলো।

‘দাভাই আসতে রাজি হয়েছে?’

‘হ্যাঁ, বললো এই সপ্তাহে আসবে।’

‘কি? সত্যি! দাও আমি একটু দাভাইয়ের সাথে কথা বলি।’

বাবার হাত থেকে মোবাইলটা এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে গেলো তুষ্টি। কানে চেপে অভিমান, অভিযোগের ঝুলি খুলে বসলো।

‘আমায় তো ভুলেই গেছো। তুষ্টি নামে যে তোমার একটা বোন আছে তা তোমার মনেই নেই। কত ব্যস্ত মানুষ তুমি৷ কল করলে পাওয়া যায় না। তোমার সময়ের কি কদর! এখন কি আমাদেরও মাস খানিক আগ থেকে এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে হবে?’

বোনের কথায় মুচকি হাসলো ইয়াসফি৷ নরম গলায় বললো,

‘নারে অপুষ্টি, তোকে কি ভুলতে পারি?’

তুষ্টি হৈ হৈ করে উঠলো,
‘এই খবরদার আমাকে অপুষ্টি বলবে না। আমি যথেষ্ট পুষ্টিমান বাচ্চা।’

‘তুই আমার কাছে সারাজীবন অপুষ্টি থাকবি।’

তুষ্টি গাল ফুলিয়ে অভিমানী স্বরে বললো,
‘ভালো হবে না দাভাই।’

ইয়াসফি হো হো করে হেসে উঠলো। এরপর বোনের মনের অবস্থান বুঝে দ্রুত কথা ঘুরিয়ে ফেললো।

‘তোর জন্য কি আনবো বল।’

তুষ্টি উত্তর দিতে একটু সময় নিলো। এরপর খিলখিল করে হেসে বললো,

‘উমমম, কতগুলো উপন্যাসের বই।’

ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত শরীরটা আর চলছে না ইরফানের। নিজেকে কোন রকম টেনেহিঁচড়ে সামনে এগুচ্ছে সে। বস্তির প্রতিটা আনাচকানাচে ঢু্ঁ মারা শেষ। সবাইকে রুহানির ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু কেউ মেয়েটার একটা খোঁজ দিতে পারলো না। এমনকি কেউ নাকি মেয়েটাকে একবার দেখেওনি৷ এটা কি করে সম্ভব?

ইরফানের মনে আছে সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে রুহানি বারবার এই বস্তির কথা বলতো। বস্তির মেয়ে বলে ইরফান তখন রুহানিকে নিয়ে তত একটা মাথা ঘামায়নি৷ থাকলে থাকুক, না থাকলে না থাকুক কিছু আসে-যায় না। টাইমপাস করতে মেয়ে পেয়েছে এটাই অনেক। তবে এখন নিজেকে তার রামছাগল মনে হচ্ছে। রুহানি বাসস্থান দেখতে চাইলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। এর জন্য তো এতবড় ঘোল তাকে খাওয়াতে পেরেছে। কোথাকার কোন ছেলেকে মন্ত্রী ইয়াসফি সাজিয়ে তার বুকের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে গেছে। চালাকির সাথে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে ঠিকানা বিহীন এক নিমন্ত্রণ পত্র। সে যদি রামছাগল না হতো তাহলে কি একটু টের পেতো না এই জালিয়াতির?

একে একে রুহানির যাবতীয় কার্যক্রমগুলোও ইরফানের টনক নড়ালো। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। তেমন হয়েছে তার দশা। মেয়েটাকে পেলে আগে ঠাটিয়ে এক চড় মারবে৷ তাকে বেকুব বানানোর শাস্তিও দিবে। ইয়াসফি ফেসবুক লাইভে এসে সবটা ক্লিয়ার করার পর থেকে বন্ধুমহলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ অহরহ চলছে৷ সে বর্তমানে হাসির খোরাক। তার রাগে, জিদে এসেছে রুহানিকে খুঁজতে। মেয়েটাকে সামনে পেলে জিন্দা কবর দিবে। কি ক্ষতি করেছিলো ওর? যার জন্য জীবনটাকে কমেডি সিনেমা বানিয়ে দিলো। খুঁজতে এসে সে হতাশ। সম্ভাব্য জায়গাগুলোর মধ্যে রুহানি নেই। গত চার-পাঁচ দিন খুঁজেও মেয়েটার কোন হদিস পায়নি। জলজ্যান্ত মানুষটা হঠাৎ হাওয়া হয়ে গেলো কোথায়?

একটা বালক গলায় গামছা ঝুলিয়ে নেচে-কুঁদে এদিকেই আসছে। ইরফান মনে মনে ঠিক করলো আজকের মতো এটাই শেষ। তারপর আর কাউকে জিজ্ঞেস করবে না। মোবাইলের ব্রাইটনেস বাড়িয়ে ছেলেটাকে থামালো।

‘এই ছেলে দাঁড়াও।’

নিজের দিকে আঙুল তাক করে ছেলেটা বললো,
‘জে আমারে কইতাছেন?’

‘হ্যাঁ! দেখো তো মেয়েটাকে চিনো কিনা।’

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে ছবিটার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। এরপর বোকা ভঙ্গিতে মাথা চুলকে বললো,

‘জে না ভাইজান।’

ইরফান আশাহত হলো৷
‘আচ্ছা যাও।’

ছেলেটা গান গাইতে গাইতে পথ ধরলো৷ কিছু পথ গিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে পাগলের মতো হাসলো। দেরী না করে দৌড়ে আড়ালে চলে গেলো। ইরফান ভাবনায় ডুবে থাকায় সেসব লক্ষ্য করলো না।

আচমকা ইরফানের মনে হচ্ছে সবকিছুতে বিশাল এক ঝামেলা রয়ে গেছে। রুহানিকে সে যতটা সাধারণ কেউ ভেবেছিলো তেমনটা সে নয়। মেয়েটা যেনো আগাগোড়া রহস্যে মড়ানো। কোন স্বার্থ হাসিল করতে সে ইরফানকে ব্যবহার করেছে। তাকে জানার আগ্রহ পূর্বের থেকে দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। আপনমনে ইরফান নিজেকে প্রশ্ন করে বসলো,

‘কে এই রুহানি?’

[ধৈর্য্য ধরুন আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন। কাহিনি মাথার ওপর দিয়েই যাবে। মাথার ভেতরে ঢুকানোর জন্য আমি আছি তো। থ্রিলার গল্পের কাহিনি আগে ধরে ফেললে কি সেটা থ্রিলার হবে🤷‍♀️?]

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here