আলো_আঁধার পর্ব ৪

#আলো_আঁধার [৪]
#জেরিন_আক্তার_নিপা

আলো দীপ্তর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মানুষটা হয়তো এখনও তাকে ভালোবাসে। হয়তো না সত্যিই ভালোবাসে। আর তাইতো ওকে নিয়ে অতটা ভাবছে। আলোর শরীর আগে থেকেই দুর্বল। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। এখন মাথা ঘুরছে। সে বিছানার এক কোনায় বসে ভাবতে থাকল। দীপ্তর বাড়িতে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। এটা উচিতও না। সে নতুন করে দীপ্তকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে চায়না। দুই বছর আগে যা শেষ হয়ে গেছে তা নতুন করে শুধু হোক এটা আলো কোনো অবস্থাতেই চায়না। সে তার ভাগ্য নিয়ে একাই থাকবে। দীপ্ত তার নিজের জীবনে সুখে থাকুক।
অজানা এক অস্থিরতা অনুভব করতে লাগল আলো। চোখ বুজে সে অতীত মনে করতে চাইল। দীপ্তর সাথে ওর পরিচয় বেশিদিন আগের কথা না। এইতো দুই বছর আগের সেই দিনগুলো চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠছে।

হিয়ার হাত থেকে ছোঁ মেরে চিঠিটা কেড়ে নিয়ে মাঠের দিকে ছুটতে লাগল আলো। হিয়াও ওর পেছনে ছুটতে ছুটতে বলছে,

-“আলো দাঁড়া। ভালো হবে না কিন্তু। দাঁড়া বলছি। আমার চিঠি আমাকে দে।”

আলো থামল না। হাসতে হাসতে বলল,

-“উঁহু। আগে আমি পড়ব। তারপর তুই। এই ইন্টারনেটের যুগে চিঠি কে দেয় মামনী! চিঠিটা পড়ে দেখি তোমার মজনু কোন দেশের আবাল।”

-“তোকে আমি খুন করে ফেলব আলো। আমার জিনিস আমাকে দে তুই।”

-“আগে তো আমাকে ধর তারপর খুন করিস। আর আমাদের দু’জনের মধ্যে তোর আমার কী রে? তোর যা আমারও তা।”

-“অসহ্যকর মেয়ে। তোর জীবনে ভাল হবে না। স্বামীর হাতে কেলানি খেয়ে মরবি তুই দেখে নিস। তোর জামাই একটা বদ হবে। বদের হাড্ডি হবে মিলিয়ে নিস আমার কথা।”

হিয়ার রাগ দেখে আলোর হাসি আরও বেড়ে গেল। পেছনে হিয়ার দিকে ফিরে মাঠ দিয়ে ছুটছে সে। হঠাৎ কার সাথে যেন ধাক্কা লেগে টাল হারিয়ে ফেলল সে। পড়ে যেতে নিয়ে কোনরকমে সামলে নিল। তবুও কাঁধে ব্যথা পেয়েছে। মানুষ নাকি অন্যকিছু! আলোর হাত থেকে চিঠি পড়ে গেছে। হিয়া ওর কাছে এসে নিচে থেকে চিঠিটা তুলে নিয়ে আলোর পাশে এসে দাঁড়াল। ছেলেটার দিকে চেয়ে বলল,

-“কেরে মালটা? চিনিস ওকে?”

আলো চোখ পাকিয়ে বলল,

-“আমি কীকরে চিনব গাধী।”

আলো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে করতে কাঁধ ঢলছে। ভালোই ব্যথা পেয়েছে। হিয়া ওকে লক্ষ্য করে বলল,

-“ঠিক আছিস তুই? বেশি লেগেছে নাকি?”

-“লাগবে না! হাতির সাথে ধাক্কা খেয়েছি। হাতিটার গায়ে গন্ডারের মতো জোর। ধাক্কা দিয়ে কাঁধ ভেঙে ফেলল। অথচ দাঁড়িয়ে একটা বার সরি বলল না! কতটা অসভ্য!”

-“চল দেখি মালটা কে। ওর থেকে সরি নিয়ে আসি।”

-“থাক ঝামেলার দরকার নেই।”

-“আরে চল তো। ঝামেলা কে করতে যাচ্ছে।”
__________________________________________________
পাঁচ, ছয়টা ছেলে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু নিয়ে হাসাহাসি করছে। দীপ্ত এসে ওদের সামনে দাঁড়াল। ছেলেগুলো তাকে দেখেও কথা থামাল না।
দীপ্ত শীতল দৃষ্টিতে ছেলেগুলোকে দেখছে।

-“তোমাদের মাঝে রাহিম কে?”

দীপ্তর চোখে যে ছেলেটাকে দলের নেতার মত দেখা যাচ্ছিল। সে-ই এগিয়ে এলো। ত্যাড়ামি ভঙ্গিতে বলল,

-“কেন? রামিমকে দিয়ে তোমার কী কাজ মামু?”

তাহলে দীপ্তর অনুমানই ঠিক। এই ছেলেই এদের লিডার। দীপ্ত এপাশ ওপাশ মাথা দুলিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। ছেলেটা কিছু বুঝে ওঠার আগে এক ঘুসিতে দীপ্ত ওর মুখের চেহারা পাল্টে ফেলল। ছেলেটা দু’হাতে নাক মুখ চেপে ধরে হতবুদ্ধি হয়ে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে আছে। আস্তে আস্তে দীপ্তর চেহারা কঠিন হচ্ছে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল ওর। দীপ্ত ছেলেটার শার্টের কলার ধরে ওকে টেনে নিয়ে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসল৷ ওকে ছুড়ে ফেলে বলল,

-“কুত্তার বাচ্চা! তোর কত্ত বড় সাহস! আমার বোনের সাথে অসভ্যতা করিস!’ দীপ্ত ছেলেটার কাছে এগিয়ে এসে ঝুঁকে ওর হাত ধরল, এই হাত না? এই হাতে আমার বোনের ওড়না টেনে ধরেছিলি তুই? আজ তোর হাতই রাখব না আমি। তোর হাত ভেঙে কলেজ গেটের সামনে ঝুলিয়ে রাখব। এই কলেজে তোর মত আরও যে কয়টা কুলাঙ্গার আছে, ওরা যেন তোর পরিনতি দেখে কেঁপে ওঠে। নেক্সটে আর কোনো মেয়ের ওড়না ধরার আগে তোর কথা মনে করে। দেখি তোর কোন বাপ আজ আমার হাত থেকে তোকে বাঁচায়।”

দীপ্ত ছেলেটার হাত ভেঙে ফেলছিল প্রায়। ছেলেটা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। এই দৃশ্য দেখতে কলেজের বাকি সবাই মাঠে এসে ওদের ঘেরাও দিয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই অবাক হয়ে এই দৃশ্য দেখছে। কেউ দীপ্তকে থামানোর জন্য এগিয়ে আসছে না। এই মুহূর্তে দীপ্তকে আটকানোর সাহস কারো নেই। কারণ সবাই জানে দীপ্ত কেমন। কয়েক বছর আগেই কলেজ শেষ করে ফেললেও এখনও কলেজে তার রাজ চলে। তার প্রভাব কতটা এটা কমবেশি সবাই জানে। সব জেনেও ছেলেটাকে মরার জন্য কেন ওর বোনকেই চোখে দেখল। দিয়া যে দীপ্তর কাজিন এটা কি কারো অজানা। ঠিক বিচার হচ্ছে। ছেলেটা বেশি সাহসিকতার পরিচয় দিতে গিয়েছিল।
এই ভীড়ের মধ্যে আলো আর হিয়াও ছিল। দীপ্তর ভয়ঙ্কর রূপটা ওরা নিজের চোখে দেখে নিল। আলো হিয়াকে খামচে ধরে মিনমিন করে বলল,

-“কী সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার! কী ভয়ঙ্কর লোকরে হিয়া! ছেলেটাকে কীভাবে মারছে! একটুও দয়া লাগছে না। ছেলেটা তো মরেই যাবে।”

-” তুই ছেলেটার কথা ভাবছিস! এই ঘটনা যদি আর একটু পরে ঘটত তাহলে ছেলেটার জায়গায় আমরা দু’জন থাকতাম। এই ছেলের থেকে সরি নিতে এসেছিলাম আমরা! আমাদের ভাগ্য ভাল যে, আজ নিশ্চিত কেলানি খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলাম।”

-“হুম। এই ছেলের চোখে না পড়াই ভালো। এটা মানুষ না, আস্ত শয়তান।”

-“হুম।”

-“চল কেটে পড়ি দোস্ত।”

-“আরে দাঁড়া না দেখি কী হয়।”

-“কী হয় তা দেখার জন্য তুই দাঁড়িয়ে থাকবি এখানে! আমার কিন্তু ওই ছেলেটার জন্য মায়া হচ্ছে।”
.
-“আরও কোন মেয়ের ওড়না টেনে ধরবি? তোর চোখও তুলে দিয়ে যাব আজ। কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবি না তাহলে।”

দীপ্ত মারতে মারতে ছেলেটাকে প্রায় আধমরা বানিয়ে ফেলেছে। ছেলেটার চোখ উলটে যাচ্ছে। নক দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে।

-” ভাইয়া ওকে ছাড়। কী করছিস ভাইয়া! ছেলেটা মরে যাব। ভাইয়া ছাড় প্লিজ। ওর শাস্তি ও পেয়ে গেছে। ছেড়ে দে ওকে।”

দিয়া লাইব্রেরিতে ছিল। ওর এক বন্ধু গিয়ে ওকে খবরটা দিলে দিয়া ভাইকে থামানোর জন্য ছুটে আসে।

-” দিয়া! মাঠে গিয়ে দেখ কী হচ্ছে। তোর ভাই রাহিমকে মেরে ফেলল। ওর হাত মনে হয় ভেঙেই ফেলেছে। ছেলেটা মরে যাওয়ার আগে তোর ভাইকে গিয়ে থামা।”

দীপ্তকে দিয়া আটকাতে পারলে তো! তার এই ভাইটা রেগে গেলে কারো কথাই শুনে না। দিয়া দীপ্তকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে ছেলেটার থেকে দূরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

-” ভাইয়া পাগল হয়ে গেছিস তুই! ছেলেটা মারা গেলে তখন কী করবি? ”

-“মরুক। ওর মত কুলাঙ্গারের বাঁচার অধিকার নেই।” দিয়া দীপ্তকে তুলে দাঁড় করিয়েছে। ওর দুই হাত ধরে রেখেছে যেন ছেলেটাকে আর মারতে না পারে। দীপ্ত লাথি মেরে বলল,

-“ওই শালা ওই, আমার বোনের পায়ে ধরে মাফ চা শালা। বল আপু আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে। এমন ভুল আর জীবনে হবে না। বল, মাফ চা। নইলে এক্ষুনি তোকে পুঁতে ফেলব শালা। তাড়াতাড়ি পায়ে ধর।”

ছেলেটা নিজের জীবন বাঁচানোর তাগিদে সত্যিই দিয়ার পায়ের উপর এসে পড়ল। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না ওর। তবুও অস্পষ্ট স্বরে দীপ্তর বলা কথাগুলোই বলতে লাগল। দিয়ার ছেলেটার উপর সত্যিই মায়া হচ্ছে। ছেলেটা যেন মরে না যায় আবার।

-” হয়েছে। ও মাফ চেয়েছে। এবার চল ভাইয়া। আর মারতে হবে না। তুই তো ওকে মেরেই ফেলছিলি।”

দীপ্ত দিয়ার হাত ছাড়িয়ে গা ঝাড়া দিয়ে শার্ট ঠিক করল। শার্টের হাতায় রক্ত লেগেছে। দীপ্ত এতক্ষণ যতটা রেগে ছিল এবার ঠিক ততটাই শান্ত হয়ে গেল। স্বাভাবিক গলায় বলল,

-” তো কী? মারব না? আমার বোনের সাথে কেউ অসভ্যতা করবে আর তা জেনে আমি চুপ করে থাকব! এমনি এমনি ছেড়ে দেব ছেলেটাকে? ও মরে গেলেও আমার কিচ্ছু যেত আসত না। শালা আমার বোনের ওড়না টেনে ধরে! কত বড় বুকেরপাটা! জানে মেরে ফেলা উচিত ছিল। স্কাউন্ডেল!”

দিয়া ভাইয়ের হাত ধরে ভীড় ছেড়ে বেরিয়ে আসছে।

-” তোকে এসব কে জানিয়েছে? মা?”

-” না। মেজ মা’র মুখে শুনেছি।”

-“এই মেজ মা-টা না! আমি সবাইকে না করেছি তোকে যেন কিছু না জানায়। মেজ মা ঠিকই কথাটা তোর কানে তুলেছে।”

-“আমাকে জানাতে চাচ্ছিলি না কেন তুই? ”

-“তোকে জানাতাম আর তুই এসে এসব করতি! না জানিয়েও তো শেষ রক্ষা হলো না। ঠিকই তুই মারপিট করলি। জেঠু জানতে পারলে অনেক রাগ করবে। দাদা কী করবে কে জানে।”

-“তোকে আমার জন্য অত ভাবতে হবে না। এর পর থেকে এমন কিছু ঘটলে সবার আগে যদি আমাকে না জানাস, তাহলে তো ছেলেগুলোকে পরে মারব। আগে তোকে সাইজ করে নেব। অত পাকনা হতে কে বলেছে তোকে।”

-“তুই কি জানিস, পৃথিবীতে তুই সবথেকে বেশি কাকে ভালোবাসিস? জানিস না, না? আমাকে। তুই পৃথিবীতে আমাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসিস। এই কথা তুই না জানলেও আমি জানি।”

-” বলেছে তোকে! আমি পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ভালোবাসব আমার বউকে। আগে আমার বউ পরে তোরা।”

-“এহহ! এসেছে আমার বউয়ের সোহাগা … আমার জায়গা অন্য কাউকে দিলে তোর ঠ্যাং ভেঙে দেব।”

দিয়া বলতেই থাকল। দীপ্ত মুচকি হেসে শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে হাঁটছিল। হঠাৎ একটা মেয়ের উপর তার চোখ পড়ল। মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে যেন। কোথায় দেখেছে মেয়েটাকে? ওহ, একটু আগে তো এই মেয়েটার সাথেই ধাক্কা লেগেছিল।

-” পালা দোস্ত…

দীপ্ত আলোকে দেখছে বুঝতে পেরে আলো ঝট করে পেছন ফিরে উঠল। হিয়ার হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে ভীড়ের ভেতর হারিয়ে গেল। দীপ্ত বুঝতে পেরেছে, তাকে ভয় পেয়েই মেয়েটা অমনভাবে পালিয়ে গেল। হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল সে। মেয়েটা কী বলল? পালা দোস্ত!

-“এই ভাইয়া, তুই পাগলের মত একা একা হাসছিস কেন? মাথাটা কি সত্যিই গেছে? কী হয়েছে রে?”

-“কিছু না।”
__________________________________________________
আলো দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এভাবেই ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল। তারপর আরও কত ঘটনা ঘটে গেল। দুইটা বছর, দুইটা বছর আলো সব ভুলে ছিল। আজ আবার নতুন করে অতীতের কথা মনে করিয়ে দিতে তার জীবনে দীপ্তর আগমন ঘটে। দরজায় শব্দ হলে আলো ওদিকে তাকাল। দীপ্ত এসেছে। হাতে খাবারের প্লেট। আলো মনে মন ভাবল, লোকটা আমার জন্য এতকিছু কেন করছে? আমি তো উনার কেউ হইনা। উনাকে শুধু কষ্টই দিয়েছি আমি।’

লম্বা পা ফেলে ভেতরে এলো দীপ্ত। খাবার প্লেট টেবিলের উপর রেখে ড্রয়ার থেকে ফার্স্টএইড বক্স বের করে নিয়ে এসে আলোর সামনে দাঁড়াল।

-“তোমার জন্য খাবার এনেছি। রাতে খেয়েছ কিনা জানি না। তাই… কিছু মুখে দিয়ে ম্যাডিসিন নিয়ে নাও। ক্ষতস্থানে লাগানোর জন্যও মলম আছে। লাগিয়ে নিও। ব্যথা কমে যাবে।”

দু’জনই দু’জনের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পর দীপ্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

-” অনেক রাত হয়েছে। খেয়ে শুয়ে পড়ো।”

দীপ্ত চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালে আলো পেছন থেকে ডাকল,

-“শুনুন।”

-” হ্যাঁ। ”

-“আপনি আমার জন্য এতকিছু কেন করছেন? আমি আপনার কে হই?”

দীপ্ত মৃদু হাসল। বলল,

-” সব প্রশ্নের কি উত্তর হয়, আলো? পৃথিবীতে এমন কিছু কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। তোমার এই প্রশ্নটাও সেসব প্রশ্নের মধ্যে একটা। তবুও যদি এর উত্তর চাও, তাহলে উত্তরটা নাহয় তুমিই খুঁজে বের কোরো।”

চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here