ইংলিশ টিচার পর্ব ১

গল্পঃ ইংলিশ টিচার
সুমনা হক
১ম পর্ব

বাবা তুমি যদি একটা রিকশাচালক এর সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইতে আমি আপুর জন্য না হয় বিয়েটা করেই ফেলতাম কিন্তু আমি এই লোকটাকে বিয়ে করতে পারবোনা।

মিলির বাবা মেয়ের এই কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো, চুপ হবে নাই বা কেন বিয়ে বাড়িতে কত্ত মানুষ আর তার চেয়ে বড় কথা যার সম্পর্কে এসব বলছে সে ও এখানে উপস্থিত।

মিলির বাবা মিলিকে বলছে,

-এই ছেলে তোর কলেজ এর টিচার আর তুই তাকে রিকশাচালক এর সাথে তুলনা করছিস?

-বাবা তুমি কি জানো এই লোকটাকে রিকশাচালক এর সাথেও তুলনা করা ঠিক না,আর যদি তুমি তা করো রিকশাচালকদের অপমান করা হবে।

-মিলি কি সব বলছিস তুই? এমনি তোর বোন চলে গেছে বিয়ে না করে আর তারমধ্যে তারা যে তুকে তুর বোন এর জায়গায় নিয়ে যাবে সেটাই তো বেশি।তারা তো আমাদের এখন পর্যন্ত অপমান করে নাই বরং ভালোভাবে চেষ্টা করছে জেনো সমস্যার সমাধান করা যায়।
-বাবা আমি এত্ত কিছু জানিনা। আমি এই বিয়ে করছিনা এইটাই শেষ কথা।
তখন মিলির হবু শ্বশুর এসে মিলিকে বললো
-আচ্ছা মা আমার ছেলেকে তোমার এত্ত অপছন্দ কেন বলতো?
-আংকেল মশাই আপনি জানেন সে আমাকে একদিন ক্লাস থেকে বের করে দিছে একটু লেইট করে ক্লাসে গিয়েছিলাম তাই।
-এই একটা কারনে আমার ছেলেকে এত্ত অপছন্দ করো?
-না আংকেল মশাই, এইটা তো জাস্ট শুরু ছিলো। তার জন্য আমি ১ম সেমিস্টার এ ইংলিশ এ ফেইল করছি।
-আমার ছেলের জন্য ফেইল কিভাবে করলে?সে কি তোমার খাতায় নাম্বার দেয়নি?
মিলির এসব কথা শুনে ও শুভ চুপ ছিলো কিন্তু এবার সে আর চুপ করতে পারেনি, সে তার বাবাকে বললো
-ফেইল করবেনা তো কি করবে বাবা? তুমি জানো পুরো খাতা জুড়ে সে একটাই লিখেছে আর সেটা কি জানো?
ডিয়ার স্যার প্লিজ পাশ মার্ক দিয়ে দিয়েন।আসলে ১ সপ্তাহ হলো মামার বিয়ে খেয়ে আসলাম আর মামার বিয়ে খেয়ে আসার পর মনে হচ্ছিলো নিজের বিয়েটা কবে জানি হবে। বুঝেনি তো বিয়েবাড়ির আমেজ টা অনেকদিন থাকে আর এই আমেজ থাকতে থাকতে পরীক্ষা এসে গেলো তারমধ্যে আর পড়া হয়নি।আর হ্যা আমার রুল ৯৯ বলে ভাববেন না জেনো আমি খারাপ ছাত্রী আসলে সেই পরীক্ষায় ও এক মামার বিয়ে ছিলো সো বুঝতেই পারছেন।

এই কথা শুনে বিয়েবাড়ির সবায় হাসা হাসি শুরু করলো।
এরিমধ্যে মিলি বলে উঠলো
-বাবা আমার তো মামাই নাই, তুমিই বলো আমি এসব কেন লিখতে যাবো? তুমি এই লোকটাকে বলো তার কাছে কোনো প্রমাণ আছে নাকি আমি যে এসব লিখছি?
শুভ রেগে আগুন হয়ে আছে আর সে জানিয়ে দেয় এমন মিথ্যা যে বলে সে মেয়েকে সে বিয়ে করতে পারবেনা।
এবার পাত্রপাত্রী দুইজন একমত যে তারা বিয়ে করবেনা।
বাসায় ঠাণ্ডা থমথমে পরিবেশ হয়ে আছে।
ঘন্টা খানিক পর মিলির বাবা গেলো শুভ কে রাজি করাতে আর শুভুর বাবা গেলো মিলিকে রাজি করাতে।

মিলির বাবা গিয়ে শুভকে বলে
-আসলে বাবা মিলির এই পাগলামির জন্য আমরাই দায়ী। আমার বড় মেয়ে সমসময় পড়াশুনোতে ভালো ছিলো তাই মিলিকে ছোট থেকেই অনেক কথা শুনতে হতো কেন বোনের মতো হতে পারেনি। কিন্তু পড়াশুনা ছাড়া সব দিকে মিলি অনেক ভালো তা খেয়াল করেনি যার জন্য আজ মিলি পড়ালেখা কে এত্ত ভয় পায়।আর সে যদি ইংলিশ টিচার হয় তাহলে তো কথায় নাই।
বাবা প্লিজ তুমি আমার মেয়ের পাগলামি গুলার জন্য বিয়েটা বন্ধ করোনা,লোকে তারপর দেখা যাবে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে নানান বাজে মন্তব্য করবে।

কথা গুলো শুনে শুভ অনেকটাই বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে কিন্তু মিলিকে রাজি করাবে কিভাবে তাই ভেবে পাচ্ছিলো না শুভর বাবা।
মিলির রুমে এসে শুভর বাবা বললো
-মিলি আসবো?
-আসেন আংকেল। কিছু বলবেন?
-মিলি আমি তোমাকে কিছু ভালো বুদ্ধি দিবো যদি তুমি চাও।
-জ্বী আংকেল বলেন।
-তোমার কি ইচ্ছে করেনা শুভকে রুম থেকে বের করে দিতে? যেমনটা তোমাকে করে দিয়েছিলো?
-জ্বী ইয়ে মানে আংকেল ইচ্ছে তো সেই কবে থেকেই করে কিন্তু পসিবল তো আর না।
-অবশ্যই পসিবল।তুমি বিয়েটা করে ফেলো যখন দেখবে শুভ লেইট করে বাসায় আসছে তখন শুভকে রুম থেকে বের করে দিবে আর তখন আমি সাপোর্ট দিবো। আর বাসায় শুভ যতক্ষণ থাকবে এত্ত প্যারা দিবে যে সে কলেজ এ গিয়ে তোমাকে দেখেও না দেখার ভান করবে পড়া জিজ্ঞাস করবে তো দূরের কথা। ভালো না আইডিয়া টা?

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here