ইচ্ছেটা_তোমারই পর্ব ৩

#গল্পঃ_ইচ্ছেটা_তোমারই
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ__৩

🌹
নিজের স্বামীর সাথে আখি দেখা করতে যাচ্ছে তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে। আখি আকাশের স্ত্রী হলেও কিছু বলার অধিকারটা নেই আকাশের। চুপচাপ ড্রাইবিং করছে সে। কারন বিয়েটা যে কন্টাক্টে।
কাচটা নামিয়ে মাথাটা বাইরে বের করলো আখি। চলন্ত গাড়িতে বাইরের হাওয়াটা আখির মুখটা যেনো ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে। খোলা চুল গুলো উড়ে এসে পরছে মুখের উপর। আকাশ বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছে তার দিকে। ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দিতে আখির মুখ থেকে। কিন্তু সে যে চাইলেও পারবেনা। সব ইচ্ছেতো আর পুরণ হওয়ার মতো নয়।
হটাৎ গাড়ি ব্রেক চাপতেই সামনের দিকে হেলে পরে আখি। ভাবনার সাগর থেকে উঠে আসে সে।
একটু অবাক হয়ে তাকায় আকাশের দিকে।
— এভাবে কেও গাড়ি থামায় নাকি।

আকাশ ঠোটে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
— ওই যে রাফিন।

রাফিনকে দেখেই আখির রাগি চেহারাটা হাস্যজ্জলে ভেসে উঠে। মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে নেমে পরে গাড়ি থেকে। আখিকে দেখেই উঠে দাড়ায় রাফিন। হাত দুটু সামনের দিকে বাড়াতেই আখি দৌড়ে গিয়ে ঝাপতে ধরে রাফিনকে। জড়িয়ে ধরে আছে একে অপরকে।
আকাশ গাড়িতেই বসা। আখি হাতের ইশারায় ডাকে তাকে। নিজের স্ত্রীকে অন্যের সাথে এভাবে সহ্য করতে না পারলেও মুখে জোর পূর্বক একটা হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে যায় আকাশ।

গোল টেবিলে তিনজন তিন চেয়ারে বসা। এর মাঝে আখি ও রাফিন একে অপরের কাছা কাছি। আকাশ একটু দুরে বসা।
তাদের একে অপরের ঘসাঘসি দেখে একটু বিরক্তি নিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে যায় আকাশ।

— একি কোথায় যাচ্ছেন আপনি?(আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে আখি)

— তোমরা কথা বলো আমি এইতো সামনেই আছি।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

আকাশ সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর রাফিনের কাছ থেকে একটু সরে বসে আখি।

— কি হলো এভাবে দুরে চলে যাচ্ছো কেনো?

— দেখো রাফিন আকাশ বেচারার গায়ে একটু হিট লেগেছে।

— ও তার মানে আকাশকে দেখানোর জন্য এতোক্ষন এভাবে ঘসে বসেছিলে?

— হ্যা, তুমি ঠিক বুঝতে পেরেছো। বাইদা ওয়ে, তুমি আমাকে অবিশ্যাস করছোনা তো?

— না, অবিশ্যাস করবো কেনো? তার সাথে দুরাত থেকেছো সেটা কোনো ব্যপার না।

— মানে?

— আরে আমার সোনাটা রাগ করোনা, একটু মজা করলাম আরকি?

— ওপ রাফিন তুমিও না?

প্রায় সন্ধে অব্দি গাড়িতে বসে আছে আকাশ। রাফিন আর আখি সেই কখন রেস্টুরেন্টে ঢুকলো তার কোনো হিসেব নেই।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে এসেছে দুজন। রাফিনের হাতটা জড়িয়ে ধরে আছে আখি।
গাড়িতে এসে বসলো আখি। রাফিন হালকা ঝুকে বললো, সাবধানে যেও। আর এইযে ভাই গাড়ি একটু সাবধানে চালাবেন ওকে?

— হ্যা ভাই খুব সাবধানে নিয়ে যাবো ঠিক আছে? আমিতো ওর ড্রাইভার তাইনা?

এটা বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো আকাশ। গাড়ি চলছে আলো অন্ধকার মিশ্রিত একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে।

— রাফিন তোমাকে খুব স্পেশাল একটা সময় উপহার দিয়েছে তাইনা?

— হ্যা, রাফিনের সাথে কাটানো আমার প্রতিটা সময়ই স্পেশাল।

— রাফিনের সম্পর্কে আমি যেমনটা ভেবেছিলাম রাফিন কিন্তু তার চাইতে অনেক ব্যতিক্রম।

— যেমন?

— ভেবেছিলাম, রাফিন তোমার সাথে রাগারাগি করবে অথবা অভিমান করবে, আর আমি নিজে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু কোনো কথাবার্তা ছারাই সে তোমাকে মেনে নিলো ব্যাপারটা হজম হচ্ছেনা আমার।

— হজম না হওয়ার কি আছে, আমি জানতাম রাফিন আমাকে অবিশ্বাস করবেনা। সে অনেক ভালোবাসে আমায়।

— অতি জিনিসটা খুবই ভয়ংকর।

— মানে?

আর কোনো কথা না বলেই গাড়ি আপন গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে রাফিন। দুজনার মাঝেই ফিনফিনে নিরবতা। মনে হচ্ছে একটা স্তব্দ গাড়ি চলছে রাস্তার মাঝে।

বাড়িতে এসে ভেতরে প্রবেশ করতেই আসিফ সাহেব বলে উঠে,
— তোদের না সন্ধার আগে বাসায় ফিরার কথা।

— পাস থেকে আখি বলে উঠে, আর বলবেন না বাবা, আমি কতো করে আপনার ছেলেকে বললাম, বাড়ি চলো বাড়ি চলো বাবা একা। আপনার ছেলেতো শুনলোইনা। তার জন্যইতো এতো দেরি হলো।

— দেখলি আকাশ, বাবার জন্য তোর কোনো চিন্তা না থাকলেও আমার মেয়েটার কতো চিন্তা আমার জন্য।

— হ্যা, এখন আমার থেকে সে বেশি আপন হয়ে গেলো তাইনা?

— অবশ্যই, তুই কে? তোকে আমি চিনিও না। আমার মেয়েটা আমার কাছে থাকলেই হবে।

— আচ্ছা, তোমরা থাকো বাপ মেয়ে মিলে, আমি গেলাম।

আসিফ চৌধুরির হাসিতে হেসে উঠে আখিও।

রাতের খাবার আখির তৈরি করার কথা থাকলেও, আকাশ চুপি চুপি রান্না করে দিয়ে আসলো আখিকে। কিচ্ছু করার নেই আখি যে রান্নায় একেবারে ঢেড়স।

খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে সবাই। আসিফ চৌধুরি বলে ওঠে,
— ও খাবারটা দারুন তো। বৌমার হাতে যাদু আছে মানতে হবে।

ওদিকে আকাশ বিড় বিড় করে বলে যাচ্ছে,
— জীবনে যতদিন রান্না করলাম একদিনও আমার রান্নার প্রশংসা করতে শুনি নি। আর আজ? যাই হোক, খাবারের প্রশংসাতো হলো। হোক না সেটা অন্য কারো নামে।

খাবার শেষে রাতে ছাদের কর্নিশ ধরে দাড়িয়ে তারা ভরা আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে সে। তার ভালোবাসা নামক তারাটা যেনো ওই হাজারো তারার মাঝে হারিয়ে গেছে। ছোট বেলা থেকেই কোনো প্রেম করেনি আকাশ। কারণ বিয়ের পর তার স্ত্রীকে সকল ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে এই ভেবে। কিন্তু নিয়তি তাকে আজ এনে দার করিয়েছে এন ভিন্ন জায়গায়।
পেছন থেকে আসিফ চৌধুরি কাধে হাত রাখতেই পেছনে ঘুরে দাড়ায় আকাশ।
— বাবা তুমি? কিছু বলবে?

— না, ভাবলাম তোর সাথে একটু ছাদে হাটাহাটি করি তাই এলাম। তোর কোনো প্রব্লেম নেইতো?

— আরে না বাবা, আমার আবার কিশের প্রব্লেম থাকবে?

ছাদে হাটাহাটি করছে বাপ ছেলে দুজন। আকাশের মনে জেগে উঠছে নানান চিন্তা। হয়তো আর বেশি দিন এভাবে বাবার সাথে সময় কাটাতে পারবেনা সে।

— আকাশ।

— হ্যা বাবা বলো।

— তোদের সাথে আমার সময়টা খুব ভালোই কাটছে রে। না জানি করদিন এই সুখ আমার কপালে সইবে। আর হ্যা, ডাক্তার সেদিন কি বলেছিলো? তুই তো আমাকে বলবি বলে আর বলিস নি। আমি কি আরো অনেক দিন বেচে থাকতে পারবো তোদের মাঝে?

— হ্যা বাবা, তুমি আরো অনেক দিন বেচে থাকবে আমাদের মাঝে। ডাক্তার বলেছে তোমার রিপোর্ট নরমাল।

কথাটা বলেই একটু আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলো আকাশ। সে যে তাকে তার কঠিন রোগের কথা জানাতে চায় না।

— আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তুই আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস। আমি মনে হয় আর বেশি দিন বাচবোনা। মাঝে মাঝে কেনো জানি মনে হয়, আমি এক্ষুনি মারা যাবো।

— এমন করে বলোনা বাবা। তুমি আরো বুহু বছর বেচে থাকবে আমাদের মাঝে।
,
,
,
রুমে এসে দেখে আখি বসে বসে ফোন টিপছে। মুখে একরাশ হাসি জড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি নেই, হয়তো রাফিনের সাথেই চ্যাটিং করছে। সোফায় গিয়ে সুয়ে পরলো আকাশ।

আধা ঘন্টা পর,
ফোনটা বেজে উঠলো আখির। রাফিন ফোন দিয়েছে।

— কি হলো ফোন দিয়েছো কেনো?

— কেনো কি হয়েছে?

— ঘুমাবো এখন।

— আমারতো একধমই ঘুম আসছেনা। ঘুম পারিয়ে দাওনা।

— তুমি কি শিশু নাকি যে তোমাকে এখন আমি ঘুম পাড়ানোর গান শুনাবো?

— তোমার ওই আকাশ ভিলেন টা কোথায়?

— সে ঘুমিয়ে পরেছে অনেক আগেই।

— শুনো না।

— কি কলবে তারাতারি বলো। ভিষন ঘুম পাচ্ছে। এটা বলে মুখে হাত দিয়ে লম্বা একটা হাই তুলে নিলো আখি।

— তোমার একটা নুড ভিডিও দাও না। প্লিজ না করো না।

— কি!

— আচ্ছা ভিডিও লাগবেনা। আপাততো একটা নুড পিক দাও। যদি আমায় ভালোবাসো তাহলে এবার নিশ্চই না বলবে না।

To be continue……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here