ইচ্ছেমতি পর্ব -০৭

#ইচ্ছেমতি
#পর্ব_৭
#শামছুন্নাহার

মিলির বিয়ে হয়েছে আজকে চারদিন। শশুড় বাড়ির লোকজন খুব ভালো মনের মানুষ,ভীষণ মিশুক তারা। নতুন বউ বলে এমন নয় তো? মিহির ভালো লাগে এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকে। প্রতিদিনের মতো আজকেও নাস্তা শেষে বসে গল্প করছে সবাই। তবে ঈশা ছাড়া। বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেই ঈশা পণ করেছে সে আর একদিনও কলেজ মিস দিবে না। তাই সে আজকে কলেজে চলে গেছে। এতক্ষণ নিজের বোন মিলির সাথে আড্ডা দিচ্ছিল মিহি। মৃদূল বাড়িতে ছিল না তাই। এ বাড়ির মেহমানরা একেএকে বিদায় নিয়েছে গতকাল বৌভাতের অনুষ্ঠানের পরেই।আজকে সকালে ঈশার ছোট খালা ফিরুজা বেগম ও ফুফু মমতাজ বেগমও চলে গেছেন। বাড়িতে এখন শুধু ইলমা আপু, তাদের মেঝো খালা ফরিনা বেগম ও ওয়াসিফ। ওয়াসিফের অফিস শনিবার পর্যন্ত বন্ধ তাই তারা শুক্রবারে ঢাকা ফিরবে।

সময়টা এগারোটা বেজে দশ মিনিট। ফরিদা বেগম রান্নাঘরে রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত। কাজের মেয়ে জবা আছে তাকে সাহায্য করার জন্য। এ বাড়ির সব কাজ জবা করলেও রান্নার কাজটা মূলত ফরিদা বেগমই করেন। বাহিরে বাতাস বইছে প্রচুর। ঠাণ্ডা, শরীর শীতল করা বাতাস । আকাশে কালো মেঘ ধারণ করেছে।আকাশে বিকট ধ্বনি হচ্ছে। এই বুজি বৃষ্টি নামবে। একাধারে রৌদ থাকার পর হঠাৎ যখন বৃষ্টি হয় ওই বৃষ্টিটা ভালো লাগে। বিশেষ করে বৃষ্টি আসার ঠিক আগ মূহুর্তটা মিহির ভীষণ পছন্দের।
বৃষ্টি নামা দেখে মানুষের চারদিকে ছুটাছুটি করা,কেউ বারান্দার কাপর নিয়ে অথবা কারও হঠাৎ করে মনে পরে ছাদের কাপরগুলার কথা তারপর সে কি দৌড়!তাছাড়া ধানের সময় ছোটাছুটি যেটা গ্রামে বেশিই দেখা যায়। এই দৃশ্যগুলো খুব ভালো লাগে।

বাহিরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। চারদিকের গাছগাছালি একবার ডানপাশ তো আরেকবার বা পাশে হেলছে। অর্থাৎ বাহিরে এখনো বাতাস বিদ্যমান। ওয়াসিফ বারান্দায় বসে গান শুনছে। ইলমার মেয়ে ঐশি আকাশের বিকট ধ্বনির আওয়াজে ভয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। হঠাৎ ইলমার মনে পড়লো ছাদে ঐশির কতগুলা কাপর দেওয়া আছে।
—“হায়রে! এক বালতি কাপর সকালে ছাদে দিয়ে আসছিলাম। এই মেয়ে যেভাবে কান্না শুরু করেছে যাবো কিভাবে?(ইলমা)
—“তুই রুমে যা আমি আর মিহি যাচ্ছি ছাদে।” ফরিনা বেগম বললেন।
কথা না বাড়িয়ে মিহির হাত ধরে ফরিনা বেগম ছুটলেন ছাদের উদ্দেশ্যে। মিহি যেন এটারই অপেক্ষা করছিল।ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে। ঈশা থাকলে হয়তো দুজনেই ভিজতো। কিন্তু আন্টিকে কি এটা বলা যায়? ইলমা আপুকে অবশ্য বলা যেতো কিন্তু যেই মেয়ে আছে বাপ’রে একবার কান্না করলে তিনঘণ্টা লাগে শান্ত করতে।

ফরিনা বেগম কাপরগুলা নিয়ে বের হতেই মিহি তার হাত ধরে আহ্লাদী কন্ঠে আবদার করে-“চলুন না আন্টি বৃষ্টিতে ভিজি!”
—“পাগল হয়েছিস তুই?কাপরগুলা ভিজে যাচ্ছে। চল।”
—“প্লিজ আন্টি চলুন না!”
—“আরে এগুলা কই রাখবো এখন?”
মিহি ফরিনা বেগমের হাত থেকে কাপরগুলা নিয়ে ছাদে উঠার জন্য সিঁড়ির রেলিং এর উপরে রেখে ফের ছাদে চলে আসে। ইতিমধ্যেই সজোরে বৃষ্টি নামতে শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টি পড়ার পরিমান বেড়ে গেছে অনেক। মিহি আকাশের দিকে একপলক তাকিয়ে হাত দুটো দু’দিকে মেলে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফরিনা বেগম মিহির কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। মিনিট পাঁচেক পর মিহি চোখ খুলে ফরিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওনি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। মিহিও হাসলো। ফরিনা বেগমের হাত দুটো দুদিক মেলে দিয়ে মিহি শুধালো-
-” চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকান আন্টি। বৃষ্টিটাকে উপভোগ করুন। দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে একদম।”
ফরিনা বেগম তাই করল। মিহি আগের ন্যায় বৃষ্টি উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। ফরিনা বেগম ফিরে গেল তার শৈশবে। এ মূহুর্তের আনন্দ তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না। টলমল বৃষ্টি পড়ছে,সেই সাথে বাতাস। দুই ব্যক্তি উপভোগ করছে সুন্দর এক মূহুর্ত!

এদিকে পুরো বাড়ি খোঁজে ওয়াসিফ তার মা’কে পায় নি। বড় খালা,জবাকে জিজ্ঞেস করেও কোনো লাভ হল না। তারা নাকি জানে না। ঘুরতে ঘুরতে ইলমা আপুর রুমে এসে দরজায় নক দিয়ে রুমে ঢুকে সে। ইলমাকে জিজ্ঞাস করতেই তিনি বলেন-“খালামনি তো ছাদে গিয়েছিল। দেখ এদিকে কোথাও আছে হয়তো! ”
—” সারা বাড়ি খুঁজেছি তুমি বলছো এদিকে কোথাও আছে?”
—” তবে কি ছাদে আছে এখনও? খালামনি ছাদে কি করবে এখনও। কাপর আনতে কি এত সময় লাগে? তুই ভালো করে খোঁজ পাবি।”

ওয়াসিফ কথা না বাড়িয়ে ছাদে উঠে আসে। দরজাটা অর্ধেক ভেড়ানো। হাত দিয়ে আরেকটু খুলতেই থমকে গেল সে। আম্মু চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজছে? আম্মু রোমান্টিক কিন্তু এতো? হায়রে! মনে মনে বলে ওয়াসিফ। এক পা সামনে ফেলে ডাক দিতে যাবে তখনই মিহিকে চোখে পড়ে তার। দুজনে একিভাবে অনুভবে ব্যস্ত। কেউ যে এসে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সে খেয়াল নেই। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট,পনেরো মিনিট দাড়িয়ে রইল ওয়াসিফ। দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দু হাত আড়াআড়ি রেখে দাঁড়িয়ে আছে সে। হঠাৎ ধমকা হাওয়া গায়ে শীতল স্পর্শ একে দিল ওয়াসিফের। দৃষ্টি সামনে থাকা দুই ব্যক্তির ওপর। শনশন বাতাসে কৃষ্ণচূড়া গাছের কয়েকটা ফুল টপটপ বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। এটা মিহির চোখ এড়ালো না। একটা ফুল তুলে ফরিনা বেগমের কানে গুজে দিল মিহি। ফরিনা বেগমের নির্জীব চাহনি। মিহির এমন কান্তে খানিকটা অবাক হলেন তিনি। মিহি ওনার এমন চাহনি দেখে হাসলো,শুধালো–” মনে হচ্ছে বয়স বোধহয় কুড়িতে পা দিয়েছে। খুব মানিয়েছে আপনাকে। ভীষণ সুন্দর লাগছে। বিশ্বাস করুন আন্টি একটুও মিথ্যা বলছি না।”
ফরিনা বেগমও মিহির বেণি করা চুলে একটা কৃষ্ণচূড়া ফুল গেঁথে দিলেন। দুজন শব্দ করে হাসলো। প্রানউজ্জ্বল হাসি।

বারান্দায় দাড়িয়ে আছে মিলি। এক হাত বাহিরে বৃষ্টি স্পর্শ করতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর পর মুখে ছিটিয়ে দিচ্ছে সেই ফুটা ফুটা বৃষ্টির পানি। বৃষ্টি তার খুব পছন্দ। বৃষ্টি হলেই সে আর মিহি উঠানে দাড়িয়ে আকাশে দিকে তাকিয়ে হাত দুটো ছড়িয়ে ভিজতো। দু’বোনের আর কবে একসাথে বৃষ্টি ভেজা হয় কে জানে! আম্মু যে কত বকতেন এই ভিজার জন্য। ভাবী বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুজনের কান্ড আর আম্মুর বকা শুনে হাসতো।

ছোট্ট ঐশিরাণী মাত্র ঘুমালো। ইলমা তাকে সযত্নে শুয়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে ওয়াসিফকে খুঁজতে লাগে।মিহি,ওয়াসিফ, ফরিনা কাউকেই খুঁজে না পেয়ে সেও ছাদের সিঁড়ি এক পা দু পা করে এগিয়ে আসে। পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে ওয়াসিফ দাড়িয়ে আছে দরজার একপাশে হেলান দিয়ে। ইলমা ওয়াসিফের কাধে হাত রাখতেই চমকে উঠে ওয়াসিফ। পিছনে তাকিয়ে তার ইলমা আপুকে দেখেই বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে,টি শার্ট একটু ফাঁক করে বুকে থুথু দিল সে। ওয়াসিফের চমকে ওঠা ইলমার কাছে যেন ভালো লাগলো না। সে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল –“কি হয়েছে ওয়া…” পুরো কথা বলার আগেই ওয়াসিফ তার মুখ চেপে ধরে। ইলমাকে ঘুরিয়ে ছাদের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দুজন বৃষ্টিপ্রেমীকে দেখায়। ইলমা তাদের এমন কান্ড দেখে হেসে ফেসে। ওয়াসিফও হাসলো। ওয়াসিফের সঙ্গী হল ইলমাও। চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে মিহি ও তাদের খালা ফরিনাকে। মিনিট দশেক পার হতেই ফরিদা বেগম এসে সব উলটপালট করে দিলেন। তিনি স্বজোড়ে চেঁচিয়ে উঠেন। কপালে ভাজ ফেলে চেঁচিয়ে উঠেন—“হায় হায় রে! তুই এ বয়সে এসেও থামলি না ফরিনা? জ্বর আসবে তো তোর। তাড়াতাড়ি আয়।”
ফরিদা বেগমের চেঁচানোতে অপ্রস্তুত সবাই। মিহি,ফরিনা বেগম তাকিয়ে দেখে সবাই এসে দাড়িয়ে আছে। মিহি ঘুমটা টানে মাথায়। দৃষ্টি নিচের দিকে,মনে হয় বড় কোনো অন্যায় করে ফেলেছে সে। ফরিদা বেগমের প্রতিউত্তরে তার বোন ফরিনা বলেন-
–” একদিন ভিজলে কিছু হবে না আপা। তুমিও আসো না?”
—-” বৃষ্টি আমার এলার্জি তুই জানিস না? বেশি ভিজলে ঠাণ্ডা লাগবে তোদের। এবার অন্তত থামরে বাপ!”

দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই ঘুমাচ্ছে। ঘণ্টা দুয়েক আগে যে এত বৃষ্টি হয়ে গেল তা বিশ্বাস করার কোনো কারন এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাহিরে কাঠফাটা রোদ উঠেছে। মিহি মাত্র ঘুম থেকে জাগলো। ঘড়ির কাটায় তখন তিনটা বায়ান্ন মিনিট। কলেজ থেকে ঈশা ফিরেছে। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দিল বিছানায়। একটু ঘুমাবে সে। সন্ধ্যার আগে যেন কেউ না ডাকে মিহিকে বলে ঘুমের রাজ্যে চলে গেল সে। মিহি মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে নিউজফিড দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

বিকেলবেলা
বাহিরে চা’য়ের আড্ডা বসেছে। বৃষ্টি ভেজায় মিহির কিছু না হলেও ফরিনা বেগম একের পর এক হাচি দিচ্ছেন।নাক লাল হয়ে আছে তার। হঠাৎ ভিজাতে এরকম হয়েছে বোধহয়। তবুও তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। বরং মিহিকে আবারও ধন্যবাদ জানায় আজকের দিনটার জন্য। মিহির এমন পাগলামোর কান্ড শুনে মিলি তার বোনকে বকতে গেলে উল্টো সবাই তাকে বকা শুরু করে।

ওয়াসিফের কল আসায় সে কথা বলতে বলতে ছাদে চলে আসে। হঠাৎ নিচে তাকাতেই ভরকে গেল সে,চমকালো খুব। মিহি একটা পিচ্ছি ছেলের কাছে সাইকেলের জন্য আবদার করছে। ওয়াসিফ চেয়ে রইলো সেদিকে। ফোনের ওপারে থাকা লোকটা হ্যালো হ্যালো করতে করতে এক পর্যায় কল কেটে ফের কল করে। ফোনের রিংটোনে ঘোর কাটে ওয়াসিফের। রিসিভ করে ওপারের লোকটিকে কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে ওয়াসিফ বলে–“বাকি কথা পরে হবে। রাখছি।”

মিহি আনন্দে সাইকেল চালাচ্ছে। সেই কবে শিখেছিল! ঈশাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় মানুষজনদের আনাগোনা খুব কম তাই মিহির কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। মুখে হাসি, খোলা চুল উড়ছে অবাধ্য হয়ে,ঠাণ্ডা পরিবেশে মন্দ নয়। ওয়াসিফ ছাদ থেকে দৌড়ে নেমে আসে। মিহির সামনে এসে ওর পথ আটকায়। মিহি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মেজাজটা তীক্ষ্ণ হলেও শান্ত গলায় শুধালো —“সামনে থেকে সরুন।”
—“তুমি সাইকেল চালাতেও জানো?”

তুমি? প্রথমদিন আপনি করে কথা বললো আর এখন তুমি? মিহি আরেকবার অবাক হল যেন! ওয়াসিফ বোধহয় বুঝতে পারে বিষয়টা। তৎক্ষণাৎ ফের বললো–“দেখো আপনি আপনি বিষয়টা কেমন যেন লাগে! আমি তোমায় আপনি করে বলতে পারবো না।”
মিহি কিছু বললো না। সামনে এগুতেই পিছন থেকে ওয়াসিফের ডাক-“তুমি চাইলে আমার বাইকে চড়তে পারো ইচ্ছেমতি! এই সাইকেল থেকে আমার বাইকে তোমাকে বেশি মানাবে।”

মিহি সাইকেল থামালো। সাইকেল থেকে নেমে সাইকেলের মালিক সেই পিচ্ছি ছেলেটাকে দিয়ে ওর গাল টেনে আদর করে দিল। ছেলেটার মুখে হাসি ফুটে উঠে। মিহি ছেলেটার মাথার চুলগুলো নাড়িয়ে হেসে প্রশ্ন করে–“নাম কি তোমার?”
—“আরিয়ান”
–“বাহ!খুব সুন্দর নাম। তোমাকে এত্তগুলো ধন্যবাদ। কেন জানো? আমাকে সাইকেলটা চালাতে দিয়েছো তাই। আবার এসো কেমন?”

পিচ্ছি ছেলে আরিয়ান মাথা নেড়ে সায় দিল। মিহির গালে আরিয়ান তার ছোট্ট ঠোঁটের পরশ একে দিল।আরিয়ানের এমন কাহিনীতে মিহি ওয়াসিফ দুজনেই অবাক হল খুব। ওয়াসিফের দিকে আড়চোখে তাকালো একবার। পরক্ষনেই মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে আরিয়ানের কপালে চুমু দেয় মিহি। আরিয়ান চলে যায়।
মিহি পিছন ফিরে দেখল ওয়াসিফ তখনো দাড়িয়ে আছে। মিহি চলে যেতেই ওয়াসিফ ফের প্রশ্ন করে–” ইগনোর করছো আমাকে?উত্তর দিলে না যে? চল ঘুরে আসি।”
মিহি এক পা পিছিয়ে ওয়াসিফের সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখে চোখ রেখে দাতে দাত চেপে কর্কশ কন্ঠে শুধালো–“আপনার মনে হয় না আপনি একটু বেশিই করছেন?”
ভ্রু কুঁচকে ওয়াসিফের উত্তর –“আমি আবার কি করলাম?”
—” কি করেছেন জানেন না?”
—“না তো! তুমিই বলো কি করেছি।” বলে ঠোঁটের এক কোনে হেসে মিহির দিকে মুখটা এগিয়ে দিল। মিহি দু পা পিছিয়ে শুধালো –” ফাজলামো বন্ধ করুন ওয়াসিফ। আচ্ছা আপনি কি আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছেন? ”
—“What?”
— “আপনি কি করে জানেন যে আমার ফেসবুক আইডির নিক নেইম ইচ্ছেমতি? ”
—“তোমার মোবাইলেই তো দেখেছি।”
—“কখন? আমি তো আপনার ধারেকাছেও যাইনি। নিশ্চই ঈশা করেছে? ওয়েট।”
—“আব্বে দাড়াও। ঈশা কিছু জানেনা এ ব্যাপারে। ওই আম্মু যে তোমাকে ডেকেছিল,ঈশা তোমার সাথে গিয়েছিল? মোবাইলটা টি টেবিলে রেখে গিয়েছিলে তখন দেখেছি। বলে মুচকি হাসে ওয়াসিফ। মিহি চেঁচিয়ে উঠে—“অনুমতি ছাড়া অন্যের ফোন ধরা কোন ধরনের বেয়াদবি? আচ্ছা বাদ দেন। গতকাল ছেলেটাকে এভাবে মারলেন কেন? ও আমার দিকে তাকিয়েছে,আমার হাত ধরেছে তাতে আপনার কি ওয়াসিফ? ”
—“আমি তোমাকে ভালবাসি ইচ্ছেমতি!”
—” মাত্র চারদিন ওয়াসিফ। চারদিনে ভালবাসা হয়?”
— চার মিনিটে যদি ভাল লাগতে পারে, চার ঘণ্টা নয় চারদিন। চারদিনে কি ভালবাসা যায় না মিহি?”
—“আপনি কিন্তু আবারও বেশি করছেন। আমি… আমি আপনার আম্মুর কাছে নালিশ করবো যে আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন।”
মিহির কথায় ওয়াসিফ কি ভয় পেলো? না। বরং ফিক করে হেসে দিল সে। ওয়াসিফের হাসিতে মিহি যেন অপ্রস্তুত হল,ভরকালো খুব। কপালে বলিরেখার ভাজ পরলো কয়েকটা। মিহির প্রতিউত্তরে ওয়াসিফ বললো –“আচ্ছা বলিও। আম্মু জানে আমি তোমাকে পছন্দ করি!”
—“ভালো লাগা আর ভালবাসা এক নয়!”
—“সেজন্যই তো পছন্দ করা ছেড়ে দিয়েছি। নতুন করে ভালবাসতে শুরু করেছি।”
— “ওই ছেলেটাকে মারা আপনার উচিত হয় নি। না মেরে বুজাইলে ঠিকই বুজতো।”
—“তাই বলে হাত ধরে ওর প্রেমকাহিনী শুনাতে হবে তাও আবার আরেকজন প্রেমীক পুরুষের সামনে? আমার এটা সহ্য হয়নি ইচ্ছেমতি! ”

মিহি আর দাঁড়ালো না। কথা বললেই কথা বাড়বে। সে বাড়ির ভিতরে ফিরে এল। ওয়াসিফ ঠাই দাড়িয়ে রইল সেখানে। মিহির চলে যাওয়া দেখছে আনমনে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here