ইস্ক সাহেবান পর্ব -০৩

#ইস্ক_সাহেবান
#হীর_এহতেশাম

||পর্ব-৩||

★ইরফান খাওয়ার টেবিলে অর্ধ-খাবার রেখেই উঠে এলো। কিছুতেই তার গলা দিয়ে খাবার নামছিল না। ইবাদ ইরফানের পরিবর্তন লক্ষ্য করলো। ইরফানের হাসোজ্জল মুখশ্রীর হুট করে এমন বিরাট পরিবর্তন ইবাদ টের পেয়েছে। নিজের খাওয়া শেষ করে চুপচাপ উঠে এলো ইবাদ। পুরোটা সময় একটুও কথা বলে নি ইবাদ।

ইরফান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ইবাদ গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। রেলিংয়ে দু’হাতের ভর দিয়ে ইরফানের মুখের দিকে তাকালো।

—-কি ব্যাপার তোর কি হলো বলতো?

ইরফান উত্তরে কিছুই বললো না। ইবাদ আবারো বলে উঠল,

—-কি হলো? কেন উঠে এলি? এভ্রিথিং ইজ অলরাইট?

—নো! এভ্রিথিং ইজ নট রাইট! ইবাদের দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলে ইরফান।

—কুল! কি হয়েছে?

—-ইবাদ আমি তোকে বলেছিলাম না, আজ থেকে তিনদিন আগে আমি একটি মেয়েকে দেখেছি। যাকে দেখার পর আমি সেই একজায়গায় আটকে রইলাম। আমি কিছুতেই সেই মুহুর্ত থেকে বের হতে পারছিনা। ওই একজায়গায় আমি আটকে যাচ্ছি। আই নো যে, আহামরি কিছু হয় নি। বাট মেয়েটার হাসি, কথা বলার ধরন, বিশ্বাস কর আমার মাথা জাস্ট এলোমেলো করে রেখে দিয়েছে।

—–এই পৃথিবীতে হাজার মেয়ে আছে। তুই না ওর নাম জানিস, না ওর এড্রেস! কিভাবে খুঁজবো আমি?

—–আমি তাকে পেয়েছি ইবাদ। ইয়েস আই ফন্ড দ্যা গার্ল।

ইরফানের কথা শুনে ইবাদ ভ্রু কুঁচকে নিলো। কিন্তু মনে মনে অনেক খুশি হলো। ইরফানের কাধে হাত রেখে হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো,

—-হু ইজ শি?

—-তোদের বাড়িতেই আছে। ইবাদের দিকে তাকিয়ে বলল ইরফান।

—মানে? ইউ মিন টু স্যা ইফতি ইস দ্যা গার্ল?

—–ইয়েস ব্রো! ইফতি’ই সে। আমি তাকে দেখে জাস্ট শকড এ ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিৎ?

—-ওকে আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড। তুই এত উত্তেজিত হোস না। তুই খুঁজে পেয়েছিস বাকিটা আমি দেখে নেব। তোর খুশির জন্য ইবাদ মাহসান সব কিছু করতে পারে। সব মানে সব। বলেই হাসলো ইবাদ। ইরফান ইবাদ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ইবাদ কে জড়িয়ে ধরতেই ইবাদের ফোন বেজে উঠলো। ইবাদ পকেট থেকে ফোন বের করতেই স্ক্রিনে ভাসতে থাকা ‘সাহেবান’ নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ইরফান স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ইবাদ কে সরস গলায় বলল,

—–যা কথা বল। বেচারী নিশ্চিত আধমরা হয়ে গেছে।
ইরফানের কথায় ইবাদ হাসলো।
★ফোন রিসিভ করলো না। রিং হয়ে কেটে যেতেই ইবাদ কল ব্যাক করলো। একবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করলো। ইবাদ মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,

—-কেমন আছেন?

—-আপনার সাথে কথা নেই।

—–সে কী? আমি আবার কি করলাম?

—-আপনি জানেন না? আপনি কি করেছেন?

—-কি করেছি? কার পাকা ধানে মই দিয়েছি না বললে কি করে বুঝবো?

—শুনুন এই ঠান্ডা ঠান্ডা কথায় না এবার আমার মন গলবার নয়।

অপরপাশে থাকা রমণীর কথা শুনে ইবাদ হেঁসে দিলো। রকিং চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে এক হাতে মাথার চুল আলতোভাবে টেনে ধরলো ইবাদ।

—-কি করেছি সাহেবান? আমার অপরাধ কি?

—–আমি ফোন দিলে আপনি কেন ফোন রিসিভ করেন না?

—-এই ব্যাপার?

—-হ্যাঁ এই ব্যাপার! আপনি ফোন রিসিভ করেন না কেন?

—-আচ্ছা চলুন একটা প্রশ্নের উত্তর দিন।

—-বলুন?

—-মান্থলি ইনকাম কত আপনার?

ইবাদের কথা শুনে রমণীর মুখ ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করলো। গাল ফুলিয়ে বলল,

—-জিরো!

—-আমার কত জানেন?

—–জানতে চাই না।

—–আচ্ছা বেশ! যে মান্থলি এক টাকাও ইনকাম করে না সে অন্যের পেছনে টাকা খরচ করবে ভাবাটা বোকামী নয় কি?

—-আপনি অন্য?

—–তাহলে? কে আমি?

—–ফোনের এই অল্প টাকা আমার হাত খরচ থেকেই হয়ে যায়। ইনকামের দরকার পড়ে না। আমার ইচ্ছের মূল্য দেওয়া উচিৎ।

—–তাই নাকি? রিচার্জ কে করে দেয়?

—-আব্বু আম্মু সবাই!

—–ওহ্! আচ্ছা চলুন আমি সবে মাত্র এসেছি ফ্রেশ হয়ে নি আপনি ঠিক ১২০সেকেন্ড পর আমায় কল করুন। ঠিক আছে?

—-ওকে!

ইবাদ ফোন কেটে দিলো। ফ্রেশ হয়ে ট্রাউজার আর কালো রঙের একটি টি-শার্ট পড়ে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথার চুল দু’হাতে ঠিক করছিলো তখনই ফোন বেজে উঠলো। হালকা হেসে ফোন রিসিভ করে বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে।

—-এইইইই! আপনি আমায় রিচার্জ করে দিলেন কেন?

—-আমি তো আপনার ইচ্ছের মূল্য দিলাম।

—মোটেও না। আমি রিচার্জের কথা বলি নি। আমি তো বলেছি কল করার কথা।

—-সেটাই তো। আজ থেকে আপনি আমায় কল করবেন। আমি করবো না। আর করলেই কেটে দেব।

—- এটা তো যেই লাউ সেই কদু’ই হয়ে গেল।

ইবাদ স্ব-শব্দে হেঁসে দিলো। ইবাদের হাসির শব্দ কানে পৌঁছাতেই রমণী নিজেও হাসলো।

—-এবার বলুন কি করছেন?

—-কি করছি? কিছুই করছি না!

—ওহ্! বাড়ির সবাই ভালো আছে?

—-হ্যাঁ ভালোই আছে।

—নতুন বাড়িতে কেমন লাগছে?

—-ভালোই এখানে সবাই অনেক ভালো। শুধু আমারই মন বসছে না। একা একা ভালো লাগছে না আমার। সমবয়সী কেউ নেই ও।

—-ওহ্! আপনি বললে আমি আসি?

—-সে গুড়ে বালি! যে নিজের নামই বললো না আজ পর্যন্ত সে আবার আসবে! হুহ!

—-একদিন হুট করেই রোদ্দুরে হঠাৎ বৃষ্টির মত আমি হাজির হয়ে যাবো। দেখবেন সেদিন আপনি আমায় দেখে বিস্ময়ের চরম সীমায় গিয়ে তবেই থামবেন।

—-অবশ্যই কেন নয়! সেদিন আমার বিয়ের দিন হবে।

ইবাদ চট করেই সোজা হয়ে বসলো। মুখের হাসি উধাও হয়ে গেল মুহুর্তেই। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

—-সাহেবান?

—হুম!

—-আপনার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করার মত ক্ষমতা বা শক্তি কোনোটাই আমার কোনো কালে হয়ে উঠবে না।

—-কেন?

—-আপনি এতোটাও অবুঝ না সাহেবান।

—-আপনি বুঝিয়েও বলছেন না। আর না বুঝতে দিচ্ছেন।

—-ছোট মানুষের ছোট মাথায় এসব ঢুকবে না।

—-আমি মোটেও ছোট না। এমএসসি কমপ্লিট করেছি আমি।

—-আমার চেয়ে ছোট আপনি।

—-কি আর করার ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। বলেই গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো রমণী।

★রাতের বেলা ইরফান কে নিয়ে ইবাদ ছাদে গেল। ছাদে প্রবেশ করতেই ইরফান ইফতি কে দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ইফতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে এক দৃষ্টিতে। ইফতি পেছনে ফিরতেই ইবাদ আর ইরফান কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। ইফতি ঘুরে দাঁড়াতেই ইবাদ প্রশ্ন করলো,

—-এই রাতে ছাদে কি করছেন?

—-কিছু না। এমনি এসেছিলাম।

—–এসেছেন যখন থাকুন আমরাও ছাদে এসেছি আড্ডা দেব বলে। আপনিও জয়েন করুন। ইরফানের কথা শুনে ইফতি ইরফানের দিকে তাকালো।

—- আমি কি আড্ডা দেব? আমি আপনাদের সাথে ভালোভাবে পরিচিত নই।

—–সমস্যা নেই! কথা বললেই তো পরিচিত হয় মানুষ। আসুন বসবেন। ইবাদ আর ইরফান বসে পড়লো ইফতির সামনে। ইফতি একরাশ অস্বস্তি নিয়ে বসে পড়লো দুজনের সামনে। ইফতি বসতেই ইরফান জিজ্ঞেস করলো,

—-আপনার নাম?

—-ইফরা এহতেশাম হীর। তুই চাইলে হীর বলে ডাকতে পারিস। ইফতি উত্তর দেওয়ার আগেই বলে উঠে ইবাদ। ইবাদের কথা শুনে ইফতি মৃদু হাসলো।

—নাহ্ আমি হীর ডাকবো না। আমি হীরামতি বলে ডাকবো। সুন্দর না নামটা।

—হ্যাঁ সুন্দর। বলেই মৃদু হাসলো ইবাদ। ইফতির রাগ হলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। ইবাদের আচরণ বিরক্ত লাগছে ইফতির। এই লোক এমনিতে ইফতি কে কত কথা শোনায় আর আজ নিজের বন্ধুর সামনে কত কদর করছে। যত্তসব!!

ইরফান আর ইবাদ লক্ষ্য করলো ইফতি বার বার হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। ইবাদ আর ইরফান পরস্পরের দিকে একবার তাকিয়ে ইফতির দিকে তাকালো। ইবাদ ইফতিকে বললো,

—–আর ইউ ওকে?

ইবাদের গম্ভীর কন্ঠস্বর ইফতি কেঁপে উঠলো,

—–হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।

—–বার বার ফোনের দিকে তাকাচ্ছেন কেন?

—-নাহ্ এমনি টাইম দেখছিলাম।

—–ওহ্! আচ্ছা এসব বাদ একটা গান শোনান!

ইরফানের কথায় ইফতি চমকে উঠলো,

—–গান? না না আমি গান পারি না।

—-মিথ্যে বলবেন না। আমি জানি আপনি গান পারেন। একটা গানই তো! প্লিজ শুনিয়ে দিন। প্লিজজজ!!!

ইরফান উত্তেজিত হয়ে পড়ছে দেখে ইবাদ বলে উঠলো,

—–শুনিয়ে দিন! এতো রিকোয়েস্ট করছে। একটা গান গাইলে আপনার জাত যাবে না। ইবাদের কথায় ইফতির রাগের মাত্রা বেড়ে গেল। এই লোক এমন কেন? বন্ধু আকাশের চাঁদ চাইলে কি তাও দিতে হবে? যত্তসব!

—–কি হলো চুপ করে আছেন কেন?

ইরফানের কন্ঠ ইফতির ভাবনাচ্ছেদ ঘটালো,

—–গাইছি!

★★★

Raigaan
Hein wafa yaha
Raigaaan, sahebaan
Jo laga tha kabhi wo farebe nazar asmaan..
Ab sharafat nehi, yeh rivayat nehi baqiii,
Ho kisiki qadar aisi adaat nehi baqiiii….
Aisa nehi kahi koyi hein galat femi jo bani hein,
Khoya nehi apna pan ehsas ki rah chuni hein…

ইফতি গান শেষ করার আগেই ফোন বেজে উঠলো। চট করেই ইফতি উঠে দাঁড়িয়ে গেল। ইরফান ত্রস্তনয়নে তাকালো,

—–কি হলো ঠিক আছেন?

—-আমার যেতে হবে! এক্সকিউজ মি…..

ইরফান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইফতি একপ্রকার দৌঁড় দিয়ে চলে গেল। ইরফান ইফতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। ইবাদ অনেক্ষণ আগেই উঠে ছাদের কিনারায় চলে এসেছে। রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে নিজের সাহেবান কে কল করলো।★

চলবে…..?

||ইরফান আর ইবাদ এই দুজনের মাঝে একজন ভিলেন হবে। বাকিটা দেখা যাক!||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here