ইস্ক সাহেবান পর্ব -০২

#ইস্ক_সাহেবান
#হীর_এহতেশাম

|| পর্ব-২||

★ইবাদ নিজের কাজ শেষ করে খেয়ে নিলো তাড়াতাড়ি। তারপর ফোন হাতে নিয়ে আবারো ‘সাহেবান’ দিয়ে সেভ করা নাম্বারটিতে কল করলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটি অস্থিরতায় ভরপুর কন্ঠস্বর ভেসে এলো,

—–খেয়েছেন?

—-হ্যাঁ খেয়েছি। এত হুড়মুড়িয়ে প্রশ্ন করলেন যে?

—এমনি। অপরপাশে থাকা রমণীকে চুপ থাকতে দেখে ইবাদ মৃদু হেসে বলল,

—সাহেবান?

—-হুম?

—খেয়ে নিন। আমার সাহেবানের খিদে সহ্য হয় না।

—-আচ্ছা।

—দেরী করার জন্য দুঃখিত।

রমণীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ফোন কেটে দিতেই ইবাদ ফোন রেখে চেয়ারে হেলান দিলো।

********তিন মাস আগের কথা******

★প্রচন্ড ব্যস্ততা শেষ করে ইবাদ চেম্বারে এসে বসে। শার্টের হাতের বোতাম খুলে দিয়ে হাতা ভাজ করে নেয়। ব্লেজার খুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ইবাদের ফোন বেজে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ইবাফ ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো। রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটি কান্না জড়িত কন্ঠ। ইবাদ চট করেই সোজা হয়ে বসে পড়লো। শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

—-হ্যালো কে আপনি? কি হয়েছে?

—-আমাকে একটু সাহায্য করুন প্লিজ। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমার কিছু টাকার প্রয়োজন প্লিজ আমাকে হেল্প করুন।

ইবাদ অপরপাশে থাকা মেয়েটির কান্নাজড়িত কন্ঠস্বর শুনে কেমন অস্থিরতা অনুভব করলো। শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

—-আচ্ছা থামুন আপনি কাদঁবেন না আমি দেখছি। আপনি আমাকে একটা বিকাশ নাম্বার দিন আমি টাকা পাঠাচ্ছি।

ইবাদের কথা শুনে মেয়েটির কান্না কিছুটা কমলো। মেয়েটি বিকাশ নাম্বার দিলো। নাম্বার দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ইবাদ টাকা পাঠিয়ে দিলো। মেয়েটি টাকা পাওয়ার পর ছোট করে থ্যাংক ইউ দিয়ে ফোন কেটে দিলো। ইবাদকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। ইবাদ ফোন টেবিলে রেখে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর চেয়ারে আবারও হেলান দিলো।

—–বাহ্ ডাক্তার বাবু, দিল দরিয়া আপনি এখানে আরামসে চিল করছেন? আমিতো ভাবলাম আপনি থ্যাংক ইউ নিতে ব্যস্ত। চেম্বারে প্রবেশ করতে করতে বলে ইরফান। ইবাদ মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকালো। চেয়ার সোজা করে ঘুরিয়ে ইরফান কে চোখের ইশারায় চেয়ারে বসতে বলল।।ইরফান বসে পড়তেই ইবাদ বলল,

—চা নাকি কফি?

—সিরিয়াসলি? চা নাকি কফি? ভাই তুই কি রে? তুই কি কোনোদিন শুধরাবি না। আর একটু আগে কাকে টাকা দিলি তুই?

—একজন বিপদে পড়েছিলো। তাকেই সাহায্য করেছি। আমার বের হতে ইচ্ছে করছিলো না তাই তোকে দিতে বলেছি। কিন্তু তুই এতোটা হাইপার হচ্ছিস কেন? আমি তোর টাকা তোকে দিয়ে দেব ডোন্ট ওয়ারি।

—-টাকা? সিরিয়াসলি? তুই টাকা নিয়ে পড়ে আছিস? আমি এটাই ভেবে পাচ্ছিনা কেউ তোকে বললো আর তুই ওমনি দিয়ে দিলি। কি গ্যারান্টি আছে যে মেয়েটা সত্যি বলেছে? যদি কোনো ধান্দাবাজ মেয়ে……

—–ইরফান!! ইরফান কথা শেষ করার আগেই ইবাদ থামিয়ে দিলো। ইবাদকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইরফান টেবিলে হালকা ঘুষি বসালো।

—পাগল তুই? আজকাল দুনিয়া কই থেকে কই চলে গেছে আর তুই এখনো এসব বিশ্বাস করিস?

—ইরফান ওই কন্ঠে যেই অস্থিরতা ছিলো, সেটা মিথ্যে হতেই পারে না।

—-বাহ্ বাহ্! আমি আপনাকেই খুঁজছিলাম জনাব। তুই বিশ্বাস করলি কি করে?

—আমি কাউকে সহজে বিশ্বাস করি না। সেখানে আজকে কাউকে হুট করে বিশ্বাস করেছি মানে তার কোনো না কোনো কারণ নিশ্চয় আছে। আর যদি মিথ্যে হয় তাহলে টাকা যাবে, কিন্তু সত্যি হলে একটা প্রাণ বেঁচে ফিরবে ইরফান। আর আমি একজন ডাক্তার। ডাক্তার হিসেবে এইটুকু তো করতেই পারি। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ইবাদ।

—-ওহ হোওও ডাক্তার সাহেব, এতোই যখন সমাজ সেবা করার শখ আপনার তাহলে আগে আমারই সেবা করুন। বিগত তিনদিন ধরে আমার মাথা ব্যাথা। দিন দিন আমার ব্যাথা টা কমিয়ে দিন।

—-আমি সাইকিয়াট্রিস্ট। মানসিক রোগের ডাক্তার তুই অন্য ডাক্তার দেখা।

—- ইব……..ইরফান কিছু বলে ওঠার আগেই ইবাদের ফোন বেজে উঠলো। ইবাদ ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই একটি উচ্ছ্বসিত কন্ঠ ভেসে এলো।

—থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, সো মাচ!! ইবাদ কান থেকে ফোন একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল। হালকা হেসে বলল,

—ওদিকটা ঠিক আছে?

—হ্যাঁ ঠিক আছে। আজ আপনি সাহায্য না করলে কি যে হতো? আপনাকে ধন্যবাদ জানালেও কম হবে। আপনার এই ঋণ শোধ করার মত না।

ইবাদ হালকা হাসলো। জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

—কিছু ঋণ শোধ করতে নেই। আর কিছু মানুষকে ঋণী করে রাখতে ভালোই লাগে।

—আপনি খুব সুন্দত কথা বলেন।

—ধন্যবাদ! এটা বলুন আমার নাম্বার কোথায় পেলেন।

—ইটস অ্যা কো-ইন্সিডেন্স। আমি আন্দাজেই ডায়েল করেছিলাম। তখন পরিস্থিতি এমন ছিলো যে মাথায় কাজ করছিলো না।

— ভাগ্যবান আমি।

—মানে?

—মানে কিছু না। নিজের ফ্রেন্ডের খেয়াল রাখুন। আপনিও বিশ্রাম নিয়ে নিন। অনেক দৌঁড়ঝাপ হয়েছে।

—একটা কথা বলি?

—জি বলুন?

—আমি মাঝে মাঝে ফোন করলে আপনি বিরক্ত হবেন না তো?

ইবাদ হেসে দিলো। মেয়েটির কথা শুনে ইবাদের হাসিই পেলো। হাসি আটকে বলল,

—আমি এত সহজে বিরক্ত হই না। আর একবার হয়ে গেলে…….

—–ধন্যবাদ। রাখছি আজ।

—বাই। বলেই ইবাফ ফোন কেটে দিলো। ইরফান এতক্ষণ হা করে বিস্ময়কর চাহনি নিয়ে তাকিয়েছিলো। ইবাদ কথা শেষ করে ফিরতেই ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলল,

—এটা সেই মেয়েটা না?

—হুম! থ্যাংকস জানাতে ফোন করেছিলো। চেয়ারে বসে বলল ইবাদ।

—তুই এত হেঁসে হেঁসে কথা বলছিলি কেন?

—জানিনা। তবে মেয়েটার কন্ঠস্বর আমার মুখে হাসি ফোটাতে বাধ্য করলো! বলেই ইবাদ আবারো হালকা হাসলো। ইরফানের চোখ কপালে উঠে গেল।

—সামান্য একটা মেয়ের কথা শুনে তুই হাসলি?

—নট সামান্য। শি ইজ ভেরি স্পেশাল ফর মি। বলেই বাকা হাসি হাসলো ইবাদ।

**********************

★নাহিদা বেগম ইফতির সাথে ফোনে কথা বলছে। মেয়েকে তিনদিন চোখের আড়াল করে নাহিদা বেগম নিজেও যেন ভালো নেই। ইফতি ছাড়া পুরো বাড়ি যেন মরুভূমির মত হয়ে গেছে।

—আম্মু তুমি অযথা চিন্তা করছো! আমি এখানে ঠিক আছি। আর আমি কিন্তু আসতে চাই নি, তুমি নিজেই আমাকে পাঠিয়েছো। আর এখন নিজেই চিন্তা করছো? এটা কি ঠিক?

—ইফতি! সাবধানে থাকিস। ওই এলাকাটা ভালো না। আজকে নিউজে দেখলাম। আমি আগে জানলে তোকে পাঠাতাম না। মামা আবদার করেছে বলেই আমি তোকে পাঠিয়েছি। কিন্তু আজ সকালে যা দেখলাম তা আমার একটুও ভালো লাগলো না। একরাশ চিন্তা নিয়ে বলেন নাহিদা বেগম।

—আম্মু! আমি বাসা থেকে বের হচ্ছি না। আর আমার সমস্যাও হবে না তুমি চিন্তা করো না। আমি খুব শীগ্রই ফিরে আসবো আম্মু।

—-সাবধানে থাকিস আম্মা।

—-তুমিও নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ। বলেই ফোন রেখে দিলো ইফতি।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে ইবাদের অনেকটা দেরী হয়ে গেল। সন্ধ্যা শেষের পথে। ইবাদ যাওয়ার সময় ডিম পরোটা কিনে নিলো। দিদার মাহসান ডিম পরোটা খুব পছন্দ করেন।

—-নানাজান? আম্মু বলছিলো আজ নিউজে দেখেছেন এখানে নাকি কি হয়েছে?

ইফতির কথা শুনে দিদার মাহসান ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

—কই আমি তো জানি না। আজকে আমার নিউজ দেখা হয় নি। আর কিছু হলে তো কানাঘুঁষা হতোই।

—-তাহলে আম্মু যে বলেছে?

—দিদিভাই! আজকাল নিউজ চ্যানেল গুলো তিল থেকে তাল বানায়। হয়তো এলাকার ছেলেরা নিজেরা নিজেরা দাঙায় মেতেছে আর তারই ঘটনা ইনিয়েবিনিয়ে লম্বা করে নিউজ করেছে। এদের আর কাজ কি? বলেই লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো দিদার মাহসান। ইফতি খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়লো। আসলেই কি তাই? নিউজ চ্যানেল এতটা মিথ্যে বলবে কেন? সত্যি কি? আর নানাজান মিথ্যে কেন বলবে? কিছু হলে তো নানাজানই বলতো! লুকানোর কিছু তো নেই। ইফতি নিজেই মাথায় নিজেই চড় বসালো, অযথা ভাবছে সে।

—–কেমন আছেন দাদুভাই? দিদার মাহসান ইরফানের কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো। ইবাদ এর সাথে ইরফান এসেছে।

—-অনেক ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

—–আমিও ভালো আছি। যাক আমি ঠিক সময়ে এসেছি একদম খাওয়ার সময়ে। ইরফানের কথা শুনে দিদার মাহসান হাসলো।

—আগে ফ্রেশ তো হয়ে নে।

—ওর আর কি এক পায়ে জুতো এক পায়ে মোজা। দিদার মাহসানের কথার উত্তর ইবাদ দিলো। ইবাদের কথা শুনে ইফতি হেসে দিলো। হাসির শব্দ শুনে ইরফান ইফতির দিকে তাকালো। এতক্ষণ ইফতিকে খেয়াল করে নি। ইফতি কে দেখে ইরফান ধীরগতিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইফতির দিকে। ইবাফ ইরফানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

—–দাঁড়িয়ে গেলি কেন, কি হলো তোর?

ইরফান এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। দৃষ্টিদ্বয় সামনে থাকা রমণীর দিকে নিবদ্ধ।

চলবে?

||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here