ঋণশোধ পর্ব ১১+১২

#ঋণশোধ
#পর্ব১১
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

রাতের খাবার খেয়ে আবেগ রুমে এসে অথৈয়ের অপেক্ষা করতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে ঘায়েল করতে পারবে। কিন্তু অপেক্ষা টা বৃথা গেল। অথৈ এলো না। আবেগ যখন বুঝতে পারলো যে আজও অনন্যার কাছে গেলে তখন রেগে গেল। কিন্তু জোর করে রাগ টা চাপা দিতে হলো। ওদের মধ্যকার কথা ফ্যামিলির কাউকে জানানো যাবে না। ওর মা ওকে বারবার বারণ করেছে অথৈকে বিয়ে না করতে, সুখি হবে না। কিন্তু আবেগ তার কথা শুনে নি। বিয়ের রাতের ওই কান্ড করে প্রায় ধরা পরে গিয়েছিলো মায়ের কাছে। আবেগ বুঝেছে যে তিনি বুঝতে পারছিলেন আবেগ কেনো তার বাধা মানে নি। তাই যা করার সাবধানে করতে হবে ওকে।

পরদিন সকালবেলায় আর অথৈয়ের উঠতে দেরি হলোনা। এবার অনন্যার আগেই উঠে গেলো। অনন্যার যেহেতু ওর মত কাজ করতে যেতে হবে না তাই ওকে আর ঘুম থেকে জাগালো না। আর আজকে অনন্যার ওয়াশরুম ই ইউজ করলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে নিচে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো সবে ওর শাশুড়ী রান্নাঘরে ঢুকতেছে। দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলো তাড়াতাড়ি গিয়ে বললো,
“মা আজকের নাস্তা আমি করি। আপনি আমায় জাস্ট দেখিয়ে দিন কিভাবে কি করবো। আসলে মা আমাদের দুবোন কে দিয়ে কাজ করাতো না তাই দুজনেই আনারি, তবে আপনি শিখিয়ে দিলে আমি পারবো “।

অথৈয়ের কথা শুনে ওর শাশুড়ী হেসে ফেললেন, বুঝতে পারলেন উনি বাধা দিলেও এই মেয়ে কথা শুনবে না। এই দুইদিন এ এতটুকু বুঝতে পেরেছেন। তাই অথৈকে কিভাবে কি করতে হবে দেখিয়ে দিতে লাগলেন। অথৈ আটা গুলতে গিয়ে বেশি পানি ঢেলে ফেললো। তারপর যখন বুঝতে পারলো ভুল করে ফেলেছে তখন জিব্বার এক অংশ কামড়ে ধরে শাশুড়ীর দিকে তাকালো। অথৈয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে হেসে বললেন, “আটা মাখতে পানি কম দিতে হয়,আর বেশি পানি হয়ে গেলে আরেকটু আটা নিয়ে তারপর মেখে গোলা বানাতে হয়”। এটা বলে উনি কিছু টা আটার গুড়ো ঢেলে দিলেন। তারপর অথৈয়ের কাছ থেকে নিয়ে নিজেই করতে লাগলেন আর বললেন, “আমি আজকে করে দেখাই তুমি কাল থেকে কোরো”
অথৈ হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে দেখতে লাগলো।

এদিকে আবেগ ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আবার অথৈয়ের অপেক্ষা করতে লাগলো ভাবলো ঘুম থেকে উঠে নিশ্চয়ই আসবে একবার। কিন্তু অথৈ যে একই ভুল দুইবার করে না এটা আবেগ বুঝতে পারেনি। অপেক্ষা করতে করতে যখন দেখলো খাওয়ার সময় হয়ে আসছে তখন উঠে খেতে গেলো আর মনে মনে ভাবলো আজও বুঝি উঠতে পারেনি, আর এটা ভেবে মনে মনে খুশি হলো। গুনগুন করতে করতে নিচে নেমে দেখলো অথৈ রান্নাঘর থেকে বের হয়ে টেবিলের কাছে আসছে। আর অনন্যা এক হাত অন্য হাতের সাথে ঘসা দিতে দিতে বললো,
“ভাবি তারাতাড়ি দাও তর সইছে না। আজকে তোমার বানানো নাস্তা খাবো”

অথৈ হেসে বললো,
“আমি তো বানাই নি, মা বানিয়েছে। আমি পাশে থেকে দেখেছি আর টুকটাক হেল্প করেছি”।
“ওই একটা হলেই হলো। তোমার হাতের একটু নাড়াচাড়ায় খাবারের স্বাদ বেড়ে যাবে”

” তাই বুঝি?”

অনন্যা ভাও করার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললো, ” জ্বি অবশ্যই ভাবি সাহেবা। এবার দয়া করে খেতে দিন”

অথৈ অনন্যাকে খাবার দিতে দিতে বললো,
“তাহলে তো গতকাল দুপুরের খাবার খেয়েও বলা উচিত ছিলো। তখনও আমি আর মা মিলে রান্না করেছিলাম”।

অনন্যা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“ওহ আচ্ছা এজন্যই এত মজা লাগছিলো আমি ও তো ভাবি মায়ের রান্না তো কখনও এমন মজা হয়না। তুমি হাত দিয়েছিলে বলেই হয়েছিল। আর আমি বুঝি ই নি।”

অনন্যার এমন করে কথা বলার ধরনে অথৈ জোরেই হেসে ফেললো। অনন্যার মাও হেসে ফেললেন তিনি তখন রান্নাঘর থেকে বের হয়ে খাবার টেবিলের কাছে আসছিলেন। এসেই অনন্যার মাথায় একটা গাট্টা মারলেন।

আবেগ তো অথৈকে দেখে দাড়িয়ে ছিলো ভাবেনি যে অথৈকে এখানে এসে পাবে। তাই কয়েক সেকেন্ড শকড ছিলো তারপর অনন্যার এমন কান্ড দেখে বিরক্ত হলো আর মনে মনে বলল, “অনুটার সব কিছু তেই বাড়াবাড়ি। এই মেয়েটাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা করার কি দরকার আছে। বড় বেশি করছে। ওকে থামানো দরকার।”
অথৈ কেমন মেয়ে, মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলতে ভালোবাসে এসব তো আবেগ জানে তাই ওর বোনকে এসব কিছুর স্বীকার হতে দিবেনা।
আগের দিনের মতোই সকালের নাস্তা করে যে যার কাজে চলে গেলো। অথৈ ওর শাশুড়ী সঙ্গে রান্নাঘরে কাটালো। তারপর কাজশেষে রুমে চলে গেলো।

রাতের খাবার খাওয়ার পর আবেগ টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে অথৈকে উদ্দেশ্যে করে বলে গেলো খাওয়া শেষ করে যেনো রুমে আসে। কথাটা ওর মা আর অনন্যার সামনে বলছে যাতে অথৈ বাধ্য হয়ে রুমে যায়। তাই জন্য অথৈকে বাধ্য হয়ে রুমে যেতে হলো।
রুমে ঢুকেই অথৈ জিজ্ঞেস করলো, “কি জন্য ডেকেছেন?”
আবেগ শুয়েছিলো, উঠে বসে বললো দরজা লাগাতে। অথৈ বললো দরজা খুলে রেখেই যা বলার বলতে। তখন আবেগ ই উঠে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। আর ড্রয়ার খুলে একটা কাগজ বের করে অথৈয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল পড়তে। অথৈ জিজ্ঞেস করলো কি এটা। আবেগ বললো আমাদের মধ্যকার কন্ট্রাক্ট। অথৈয়ের মনে পড়লো না এমন কিছুর কথা তাই বললো, “কিহ?”
তখন আবেগ বললো, “জ্বিহ। এখানে লেখা আছে আমাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কথা শুধু আমাদের দুজনের মধ্যে থাকবে। আমাদের রুমের মধ্যে আমাদের মধ্যে যেই সম্পর্ক ই থাক, রুমের বাহিরে আমরা হ্যাপি কাপাল।
তোমার আমার বাসায় কেউ যেনো না জানে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নেই। তুমি আমার বোনের থেকে দূরে থাকবে। তুমি এই রুমের বাহিরে আমার পারমিশন ছাড়া বের হয়ে অন্যকারো সঙ্গে থাকতে পারবে না। তোমাকে এই রুমে ই আমার সাথে থাকতে হবে। বাকিটা নিজেই পড়ে নাও”।
কাগজটা অথৈয়ের দিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিলো, অথৈ সেটাতে সাইডে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার এই চুক্তি কে মানবে? নিজে নিজে বানিয়ে এনেছেন। আমি তো এসব কিছু ই জানিনা। আর আমার সই ছাড়া আপনার এই কাগজের ভ্যেলু নেই। সুতরাং যেখান থেকে এনেছেন সেখানে ই নিয়ে ফেলে দিন।
নাহলে ঝালমুড়িওয়ালার কাছে বেঁচে দিন। আমি গেলাম”।
অথৈ দরজার দিকে পা বাড়াতে নিলো যাওয়ার জন্য তখন আবেগ হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে বললো, “এভাবে অধৈর্য হয়ে চলে গেলে হবে পাটরানি? তোমার যে শাস্তি সবে শুরু হতে যাচ্ছে।

পাটরানি অব্দি মিষ্টি করে বলে শাস্তির কথা বলার সময় হাতে জোরে একটা চাপ দিলো।
অথৈ কথাটার মানে জিজ্ঞেস করলো তখন কাগজ টা অথৈয়ের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“মানে নাহয় নিজেই দেখে নাও, তোমার কি মনে হয় আমি এতটা কাচা কাজ করবো? তোমার সই এই কাগজে আছে দেখো একদম জ্বলজ্বল করছে, দেখো দেখো।”
অথৈ অবাক হয়ে কাগজ টা টেনে নিলো, নিয়ে কাগজটা দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবেগের দিকে তাকালো। তখন আবেগ হাসি হাসি মুখ করে বললো, নিজের সইটা নিশ্চয়ই চিনতে পারছ?
অথৈ যেনো ভুল করেছে এমন ভাবে আবারও কাগজ টার দিকে তাকালো কিন্তু ভুল না ঠিকই দেখছে সই টা ওর ই। তখন আবেগকে জিজ্ঞেস করলো,

“আমি এমন কোনো কাগজে সই করেছি বলে আমার মনে পড়ে না। আসলে করি ই তো নি তাহলে মনে কি পড়বে। কিভাবে করেছেন এটা?”

আবেগ একটা রহস্যময় হাসি দিলো। তখন অথৈ জিজ্ঞেস করলো, “আমার সই নকল করেছেন?”
#ঋণশোধ
#পর্ব১২
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

অথৈয়ের এবারের প্রশ্নে তে আবেগের হাসি আরও চওড়া হয়ে গেলো। হেসে হেসে ই বললো,
“তোমার কি মনে হয় আমি ফ্রড? ঝালিয়াত? যে ঝালিয়াতি করে সই করবো।”

” এতে মনে হওয়ার কি আছে? আপনি তো আসলেই একটা ফ্রড, ঝালিয়াত। আপনি আমার ফ্যামিলিকে ফুসলিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন। সেখানে এই সই তো খুব ই সামান্য”
” ওহ আচ্ছা তাই তো বাট সই টা আপনি ই করেছেন পাটরাণি”

“কবে করেছি আমি?”

” একটু কষ্ট করে মনে করে দেখুন না।”

“আমার মনে পড়ছে না। তাই আপনি ই বলুন”

” অন্তু একটা কাগজ নিয়ে গিয়েছিল সেখানে অটোগ্রাফ দিতে বলেছিলো। মনে পড়ে কিছু?”

তখন অথৈয়ের মনে পড়লো বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ করে অন্তু এসে বারবার একটা অটোগ্রাফ চাচ্ছিলো। বলেছিলো, “আন্তি আন্তি আমালে এততা অতোগেলাফ দেও আমি তবাইকে দেকাবো”
বলে বলে পাগল দিচ্ছিলো দেখে অথৈ সই করে দিয়েছে। এতটাই পাগল করে দিচ্ছিলো যে অথৈ কিছু না দেখেই সই করে দিয়েছে। অথৈয়ের মনে পড়ায় বললো, ” বাহ ওইটুকু বাচ্চাকেও ইউজ করেছেন। আপনি আসলে….।” এইটুকু দাঁতে দাঁত চেপে বললো। তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো,
“আপনি আমার বাচ্চা ছেলেটাকে অব্দি আপনার কাছে ব্যবহার করেছেন। এখন চাইছেন যেনো আমি আপনার বোনের সঙ্গে না মিশি? মানে আপনি আমাকে আপনার মতো মনে করছেন?”

” উহু। তোমার মতো ধড়িবাজ মেয়েকে আমি আমার মতো মনে কেনো করবো। তোমাকে আমি তোমার মতোই ভেবেছি”

“কিহ! আমি ধড়িবাজ মেয়ে?”

“অবশ্যই নিঃসন্দেহে।”

“কি, কি করেছি আমি?”

অনেকটা রেগেই কথাটা বললো অথৈ। তখন আবেগ আগের মতো ই বললো কি করেছে সেটা অথৈই ভালো জানে। সেই প্রথম দিন থেকে এই এক কথা শুনে শুনে অথৈয়ের এবার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। অথৈ যা করেছে সেটা সরাসরি বলে দিলেই মিটে যেতো তা না করে বারবার এই এক কথা বলে যাচ্ছে। আরে যদি অথৈয়ের মনেই থাকতো বা বুঝতেই পারতো তাহলে কি আর অবুঝ হয়ে থাকতো। এইটা কি ওই লোক বোঝেনা। তাই অথৈ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে অনেক জোরে চিৎকার করে বললো, “আশ্চর্য তোহ আপনি বারবার এই এক কথা কেনো বলছেন যে আমি জানি আমি জানি আমি কিচ্ছু জানিনা। শুনেছেন? আমি কিচ্ছু জানিনা”।

অথৈ এত জোরে চিৎকার করে ফেললো যে ঘরের বাকিদের কান অব্দি পৌঁছে গেল। অথৈ আর কিছু বলার আগেই আবেগ ওর মুখ চেপে ধরলো। মুখ চেপে ধরে বললো,

” হচ্ছেটা কি? এত জোরে চিৎকার করে কথা বলছো কেনো? এলাকায় সবাইকে শোনাতে চাও? ”

অথৈয়ের মুখ চেপে ধরলো দেখে ও তো আর কিছু বলতে পারছিলো না। শুধু উ উ করে বলার চেষ্টা করলো। এরমধ্যে অনন্যা এসে দরজাতে নক করে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবি কি হইছে চেঁচালে কেন? ভাইয়া কি হইছে রে!”

অথৈয়ের মুখ চাপা তাই জবাব দিতে পারলো না। আবেগ জবাব দিয়ে বলল,
” কিছু হয়নি যা তুই ঘুমা”
এরমধ্যেই শুনতে পেলো ওদের মায়ের গলা
“কি হয়েছে রে অনু, চেঁচামেচির আওয়াজ শুনলাম। সবে ঘুম এলো এর মধ্যে ই”।
অনন্যা ওর মাকে বললো, “এখন যাও সকালে জানা যাবে কিসের চেঁচামেচি”। মনোয়ারা বেগম কিছু হলেও আন্দাজ করতে পারছেন কিসের চেঁচামেচি। তাই অনন্যার কথামত নিচে নেমে গেলেন। যেতে যেতে মনে মনে বললেন, “আল্লাহ ছেলেটাকে সুবুদ্ধি দাও,আর মেয়েটাকে ধৈর্য”। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।

অনন্যা আর ওর মা চলে গেছে সেটা বুঝতে পারার পর আবেগ চোখ গরম দিয়ে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে অথৈয়ের হাত পিছনে মুচড়ে ধরে বললো,
“এত জোরে চেঁচিয়ে কথা বলেছো যাতে আমার মা-বোন শুনতে পায় তাই জন্য? তারা এসে আমাকে মেরে তোমাকে বাঁচাবে।
খুব সেয়ানা মেয়ে তো তুমি।” বলেই আরও জোরে হাতে চাপ দিলো যেনো ভেঙেই ফেলবে। অথৈ ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো।
আবেগ যা যা বলেছে অথৈ এমন কিছু ই করতে চায় নি। অতিরিক্ত রাগে গলার স্বর জোরে হয়েছে ব্যস এতটুকু ই। অথৈ গরম গলায় ই বললো, “এমন কিছু ই করিনি বা করতে চাইনি। মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে দেখে গলার আওয়াজ জোরে হয়েছে। এর বেশি কিছু না, সবাই কে নিজের মতো কুটিল ভাব্বেন না।” অথৈয়ের এমন তেজ দেখে আবেগ আরও রেগে গেল। তাই অথৈয়ের হাত ধরে টেনে বারান্দায় নিয়ে গেল। বারান্দায় নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
“তুমি আজকে এখানে ই থাকবে। তোমার জন্য এই ঠান্ডা আবহাওয়া ই পার্ফেক্ট তাতে যদি তোমার তেজ কিছু টা কমে। মেয়ে মানুষের এত তেজ ভালো না। ঠান্ডায় থাকো কমে যাবে সব তেজ,গুড নাইট।” বলেই বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিলো। অথৈ দরজা ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো,
“প্লিজ এভাবে ঠান্ডার মধ্যে অন্ধকারে রেখে যাবেন না। প্লিজ মরে যাবো আমি।”

অথৈ ভীষণ ভয় পায় অন্ধকারে। আর ডিসেম্বরের ঠান্ডাটাও খুব খারাপ তার উপর কিছু ই সাথে নেই। শুধু গায়ে একটা পাতলা সোয়েটার। বাসার ভিতর বেশি শীত লাগে না তাই জামার উপরে পাতলা একটা সোয়েটার পরেছিলো। কিন্তু বারান্দা তো খোলা আর সো সো করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। আবেগ ভুল কিছু বলে নি। এই অন্ধকার আর ঠান্ডায় সত্যিই অথৈয়ের তেজ শেষ। এই প্রথম অথৈয়ের নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে। এতদিন ভেবেছে আবেগ এর সব কিছুকেই সামলে নেয়ার মতো মনের জোর আছে। কিন্তু এভাবে দুর্বল করে দিবে এটা বুঝতে পারেনি। এজন্যই বুঝি বলে, নিজের দুর্বলতার কথা কাউকে বলতে নেই। মানুষ সেই দুর্বলতা জেনে দুর্বল জায়গায় আঘাত করে।

অথৈ বিয়েতে রাজি হওয়ার পর আবেগের সঙ্গে কয়েক বার কথা হয়েছিলো। তখন আবেগ অথৈকে জিজ্ঞেস করেছিলো ওর কি ভালো লাগে, কি খারাপ লাগে, কিসে ভয় পায়, কিসে আনন্দ পায়। তখন বলেছিলো সবচেয়ে বেশি ভয় অন্ধকারকে পায়। আবেগ তখন জিজ্ঞেস করেছিলো কেনো ভয় পায়। তখন অথৈ বললো,

“খুব ছোটোবেলায় আমি একবার অন্ধকারে লুকোচুরি খেলতে খেলতে একটা রুমে ঢুকে পড়ি। সেখানে পুরোনো জিনিসপত্র বোঝাই করা ছিলো। মুলত ওটা স্টোররুম ই ছিলো পুরোনো জিনিসপত্র রাখার। তো আমি ভাব্লাম এটাই লুকানোর পার্ফেক্ট যায়গা। কেউ আমাকে সহজে খুজে পাবে না। আমি লুকিয়ে গেলাম। উঠে আসার সময় কিসে পাড়া পড়লো জানিনা। উপর থেকে কি জানি আমার গায়ে পড়লো আমি ভয় পেয়ে বেহুশ হয়ে গেলাম। এরপর থেকে কি হলো জানিনা। অন্ধকার হলেই আমার ভয় হয়। মনে হয় চারপাশ থেকে অনেক কিছু এসে আমার গায়ে পড়ছে। আমি আমার রুমের লাইট অব্দি অফ করিনা। সারারাত ধরে জ্বালিয়ে রেখে ঘুমাই।”
অথৈয়ের কথা শুনে আবেগ সেদিন করুণার চোখে তাকিয়ে ছিলো শুধু, কিন্তু কিছু বলে নি। অথৈ ভেবেছে আবেগ বলার কিছু পাচ্ছে না তাই ওমন ভাবে ছিলো তাই অথৈ টপিক চেঞ্জ করে ফেলেছিলো। আজকে অথৈয়ের মনে হচ্ছে বলে ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু এখন সে ভুল তো আর ও শোধরাতে পারবে না। ওর এই ঠান্ডা অন্ধকারেই পুরো রাত টা কাটাতে হবে। হঠাৎ করে অথৈয়ের মনে হলো এত অসহায় ওর কোনোদিন লাগে নি।
প্রতি টা সেকেন্ড কে ওর মনে হতে লাগলো একটা একটা বছর। সারাটা রাত ও এভাবে কিভাবে কাটাবে। আর অন্ধকারের মধ্যে আছে সেটা মনে হতেই ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। আবেগ যখন ধাক্কা দিয়ে ফেলে তখন গিয়ে রেলিঙের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এরপর থেকে দাড়িয়ে ই ছিলো তারপর গিয়ে বারান্দার এক কর্ণারে যেখানে কম শীত লাগে সেখানে গিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে পড়লো। কিন্তু শীত কম লাগছে বলে মনে হলো না একটুও। ভীষণ করে ওর মায়ের কথা মনে পড়তে লাগলো।
আগে শীতে কাঁপলে ওর মা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। এখন যদি এখানে ওর মা থাকতো তাহলে বুঝি সেভাবেই ঘুমাতো।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here