এই অবেলায় তুমি পর্ব -০৫

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রুদ্র,আদি,আবির,নীল অবাক হয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে!!

রুহি নিচে পরে আছে।আর এক হাতে কোমর আরেক হাতে পা ধরে ফেচফেচ করে কান্না করেই যাচ্ছে।

এতক্ষনে বাসার সবাই এসে রুহির রুমের সামনে ভিড় জমিয়ে ফেলেছে।

রুহির আম্মু নিজের মেয়ের এই অবস্থা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। কিভাবে কি হলো!

সবাই জিজ্ঞাসা করছে কিভাবে পরলো?

রুহি কিছুই বলছে না।

তখন মাহি এসে বললো,” আহা সবাই কি শুরু করেছো। নতুন বউ হাঁটতে গিয়ে পরে গেছে। ওহ মাই গড!! রুহি তোর কি হাঁটতে গিয়ে যেখানে সেখানে পরে যাওয়ার রোগ আছে নাকি?

রুহির আম্মু রুপা বেগম বলে উঠলো, ” এসব কি বলছিস মাহি। রুহি তো তোদের কাছে থেকেই বড় হলো।ওর কি কখনো এই সব রোগ দেখেছিস! আজ হয়তো হাঁটতে গিয়ে পা বেজে পরে গেছে।

মাহি বলে উঠলো, ” আসলে কি বলবো ফুপিমণি। আমার একটা বান্ধবী ছিলো ওর একটা রোগ ছিলো। কিন্তু দেখে একদমি বুঝাই যেতো না।একদিন ও আমাদের সাথে হাঁটতে গিয়ে পরে গেলো। আমরা সবাই ওকে ধরে হসপিটাল নিয়ে গেলাম। ডাক্তার বললো..এটা নাকি খুব ভয়ংকর রোগ। বেশি হাঁটা চলা করলে আসতে আসতে পা… এতটুকু বলে মুখে হাত দিয়ে দুঃখী দুঃখী মুখ করে, মাহি বললো থাক আমি আর এই নাম মুখে নিতে চাই না।

রুপা বেগম ভয় পেয়ে গেলেন। উনার মেয়ের কি তাহলে এই রোগ হয়েছে।উনি আজকেই মেয়েকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে জাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।

রুহি এতোক্ষন চুপ করে থাকলেও এবার বলে উঠলো, ” আমি মরছি ব্যথায় আর তুমি আছো গল্প নিয়ে আপু।আমাকে উঠাও!!
রুহি হাত বাড়িয়ে দিলো, রুদ্রের দিকে। রুদ্র ভড়কে গেলো,কারন এখানে আদি আছে। আর রুহির দরকার ছিলো নিজের স্বামীর দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার।আদিও চুপ করে রুহির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আদির চোখ শিকারির চোখ মুখ দেখলেই মনের হাবভাব আন্দাজ করে নিতে পারে।

মাহির রাগ উঠে গেলো,নিজের পেয়ারার জামাই সামনে থাকতে রুদ্রের দিকে কেনো হাত বারালো। মাহি রেগে রুহির হাত ধরে দিলো একটান… রুহি বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।আগের থেকে যেনো ব্যথাটা আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেলো।ব্যথায় রুহির চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।

মাহিঃ দেখো ফুপিমণি আমি বলে ছিলাম না। আমার বান্ধবীর কথা একবার ভেবে দেখো তুমি! ইসস ব্যথা পেয়েছো রুহি ভাবি?এক মাস বেড রেস্ট নিলে একদম ঠিক হয়ে যাবে।

রুদ্র এতোক্ষন চুপচাপ মাহির দিকে তাকিয়ে ছিলো।মাহির কথার মধ্যে কেমন যেনো রহস্য রহস্য ভাব রয়েছে।আর মাহির কথাগুলো শুনে রুদ্রের মনে হচ্ছে সব গুলো কথাই যেনো আগে থেকে গুছিয়ে রাখা।নাহলে এমন সিচুয়েশনে মানুষ কিভাবে এই ধরনের কথা বলতে পারে। আর রুহি এই বা পরলো কিভাবে?

রুহিকে এনে খাটে বসালো।বেচারি হাঁটতেও পারছে না। পা মনে হয় মচকেছে।

রুহি শকুনের চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।ওর বিশ্বাস ওকে ফালানোর প্লেনটা নূরের।
রুহি মনে মনে বলে উঠলো, ” আমি যেনো আদির সাথে শপিংয়ে যেতে না পারি তাই তো তুই দরজার সামনে তেল ফেলে রেখেছিলি না।উড়েনে যত পারিস উড়েনে।একবার শুধু পা টা ঠিক হোক।তারপর বুঝবি আমি কি!! এতো দিন ভালো মানুষি দেখেছিস এখন দেখবি আমার আসল রূপ!..
(রুহি যখন নিচে পরে তখনি ওর মনে হয় ও কিছুর সাথে পিছলে পড়েছে। হাতে নিয়ে দেখে তেল।তখনি ও ভেবে নেয় এটা নূরের কাজ ছাড়া আর কারো কাজ না?

নীল বলে উঠলো, ” তা আম্মু আপুর তো পা মচকে গেছে। আপু তো যেতে পারবে না৷ আমরা কি যাবো?

নীলের বড় মামী রুদ্রের আম্মু বলে উঠলো, ” আচ্ছা তোরা চলে যা। রুহি তো যেতে পারবে না। রুহির যা যা লাগবে নূরকে বলে দে।নূর নিয়ে আসবে।

——

শপিং মলে এসে সবাই এটা সেটা দেখা নিয়ে ভেস্ত হয়ে পরলো।
রুদ্র একটার পর একটা শো পিছ,টেডিবিয়ার দেখছে কিন্তু একটাও পছন্দ হচ্ছে না।মিম আসার সময় বলে দিয়েছে ওর জন্য কিছু না নিলে রুদ্রের সাথে কথাই বলবে না।হঠাৎ রুদ্রের একটা শো পিছ দেখে অনেক পছন্দ হয়ে যায়।রুদ্র গিয়ে শো পিছটায় হাত দিলে কেউ একজন শো পিছটার একপাশে হাত রাখে….

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,”তুমি????”
নূরঃ হাঁ আমি! দেখতেই তো পাচ্ছেন এভাবে জিজ্ঞেস করার কি আছে!!
রুদ্রঃ শো পিছ থেকে হাত সরাও।প্রথমে আমি ধরেছি এটা..
নূরঃ এএহ আসছে এটা উনি আগে ধরেছে।এটা আমি আগে দেখেছি, এটা আমার…
রুদ্রঃবলছিনা এটা আমি আগে ধরেছি!!
নূরঃ আমি আগে দেখেছি দূর থেকে সো এটা আমার। ছাড়েন বলছি?
মাহি বলে উঠলো, ” ছেড়ে দে না নূর। আরো অনেক রকম আছে ।দেখ এটার থেকেও আরো বেশি সুন্দর।

নূরঃ না আমার এটা লাগবে মানে এটাই লাগবে!
রুদ্রঃএকদম না,এটা আমার পছন্দ হয়েছে, তুমি অন্য একটা নিলেই তো হয়..
নূরঃ আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন..

আবির এতোক্ষন নূর আর রুদ্রের ঝগড়া দেখছিলো।এখন কাছে এসে বললো,”তোরা এটা নিয়ে এভাবে টানাটানি কেনো করতেছোস,, ভেঙে যাবে তো…এটা তো এক বাসায় যাবে, একজন নিলেই তো হয়!”

মাহি বলে উঠলো, “নূর এটা ভেঙে যাবে,রুদ্র ভাইয়া কে দিয়ে দে…প্লিজ বাড়াবাড়ি করিস না।

নূরঃ দিবো না, দিবো না, দিবো না, উনাকে ছেড়ে দিতে বল..
রুদ্র রেগে বললো,” আমিও ছাড়বো না।এটা আমি নিয়েই ছাড়বো।

টানাটানির এক পর্যায়ে শো পিছটা দুইজনের হাত থেকেই পড়ে যায়।
মাহি মুখে হাত দিয়ে ফেলে,,এটা কি করলি!!??

আবির বলে উঠলো, ” এতো বার করে বললাম ভেঙে যাবে।শুনলি না আমার কথা এবার দাম দে!”

নূরঃ আমি কোনো দাম দিতে পারবো না। উনি ভেঙেছে,দাম উনি দিবে..
রুদ্র কিছুক্ষন নূরের দিকে তাকিয়ে থেকে দাম দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।

~এমনটা করার কি দরকার ছিলো?
~আপু তুই ও না। আমি ওটা প্রথম দেখেছি।আর উনি এসে নিয়ে যাবে!
~আর এখন যে কেউই নিতে পারলি না।উল্টো রুদ্র ভাই কতগুলো টাকা জরিমানা দেওয়া লাগলো।
নূর শুনেও না শুনার মতো অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে ও নিজেও বুঝতে পারেনি এই সাধারণ একটা জিনিস নিয়ে সে এমনটা কেনো করলো!?

আদি শপিং মলের আসার পর একটা কথাও বলেনি। না ওর কোনো কিছুতে মন বসছে হঠাৎ একটা শাড়ি চোখে পরলো। মনে হলো শাড়িটা নূরকে খুব মানাবে।কিন্তু নূরকে দিলে তো নূর নিবে না। ফুরফুরে মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।

কেনাকাটা শেষ করে সবাই শপিং মল থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলের জন্য।

মাহির ফ্রেন্ডরা কল দেওয়াই মাহি সবাইকে বলে চলে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

নূর দাঁড়িয়ে আছে আর এদিক সেদিক তাকিয়ে নীলের অপেক্ষা করছে।রুদ্র ভাইয়া, আবির ভাই,আদি ভাই দাঁড়িয়ে কথা বলছে।নিজেদের কাজ নিয়ে।

“আরে নূর তুই এখানে?”
নূর চমকে পিছনে ফিরে তাকালো। ইরিন দাঁড়িয়ে আছে। নূরের বেস্ট ফ্রেন্ড ইরিন।
নূর কিছু বলবে তার আগে কেউ বলে উঠলো,
“এই হরিন”
ইরিন প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে পিছনে ফিরে তাকালো। এই ছেলেটাকে যদি পারতো ঠাটিয়ে চড় মারতো।ওর এতো সুন্দর নামটা কে ‘হরিন’বলে ডাকার জন্য।

নীল যখনি নূরের বেস্ট ফ্রেন্ড ইরিনকে দেখে তখনি ‘ হরিন’ বলে খেপায়।আর ইরিনও রেগে ঝগড়া লেগে যায়।

নীল মাশাল্লাহ দেখতে ফর্সা, খুবই কিউট, খুবই ট্যালেন্ট ছেলে,মেডিক্যাল নিয়ে পড়াশোনা করছে।কিন্তু সব দিক দিয়ে পারফেক্ট হয়েও সে কারো কাছে একটু সম্মান পায়না। আসল কথা হলো সে যখন তখন যার তার সাথে। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে লেগে যায়। তাই ওকে সম্মান তো দূর অসম্মান করতেও কেউ দু’বার ভাবে না।

ইরিন শুনেও না শুনার ভাব করে নূরের সাথে কথা বলা শুরু করলো।

নীল ইরিনের সামনে এসে বললো, ” কানে কালা নাকি তুমি?কতবার ডাকলাম একবার ফিরেও তাকালে না।
ইরিনঃ শুনতে পাইনি ভাইয়া।
নীলঃ শুনতে পা-ওনি নাকি ইচ্ছে করেই জবাব দাওনি…?
ইরিনঃ তাতে কি আসে যায় ভাইয়া।আপনি কি কিছু বলবেন?
নীলঃ তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?
ইরিনঃ জ্বি ভাইয়া! বিয়ে ঠিক হয়েছে…
নীলঃ ছেলে কি পছন্দ হয়েছে?
ইরিনঃ সেটা আপনি জেনে কি করবেন? বিয়ে ঠিক হলে দাওয়াত পেয়ে যাবেন।
নীলঃ আগে তো তোমাকে পছন্দ হোক!!
ইরিন রেগে নীলকে কিছু না বলে। নূরকে বললো,যেনো বাসায় গিয়ে ফোন দেয় অনেক কথা জমে আছে।বলে হাঁটা শুরু করলো।
নীল পিছন থেকে ডেকে বলে উঠলো, ” এই হরিন আমি তোমাকে আজকে একটা ছেলের সাথে রিক্সায় দেখেছি। তোমার আম্মুর কাছে কিন্তু বলে দিবো!!”

ইরিন পিছন ফিরে এমন ভাবে নীলের দিকে তাকালো যেনো চোখ দিয়েই নীল কে শেষ করে ফেলবে।

(ছোট ছোট চোখে কুচকুচে দুটি মনি,ভাসা ভাসা খয়েরী ঠোঁট, ঠোঁটের নিচে থুতনির পাশে একটা তিল।চাপা গায়ের রং এর মেয়েটাকে দেখতে যেনো ভীষণ মায়াবী দেখা যায়।)

নূর নীলকে বলে উঠলো, ” ভাই তোর আর ইরিনের মধ্যে এমন সাপে নেউরা সম্পর্ক কেনো? সব সময় মেয়েটাকে রাগিয়ে দেছ কেনো?”

নীল বলে উঠলো, ” সেটা তোর মতো গাঁধির মাথায় ঢুকবে না।এবার চল বাসায় যাওয়া যাক।”

নূরঃ এএএএএহহ এইছে আমার ব্রিলিয়ান্ট জ্ঞানী ভাই!!

——

মাহি ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পাড় হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে মাহির হাত থেকে ক্লাসের একটা নোট পড়ে যায়।মাহি তারাতারি নোটটা তুলার সময় সামনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। সব কিছু কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে যায়। ওর যে সামনে থেকে সরে যাওয়া উচিৎ সেটাই মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। উত্তেজনায় হাত পা ভীষণ কাঁপতে থাকে সরে যাবে সেটাও পারছে না।দুই হাতে মুখ ডেকে চোখ বন্ধ করে নেয়।ছিটকে গিয়ে রাস্তার কিনারায় পড়ে মাহি…….

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here