এই অবেলায় তুমি পর্ব -১১+১২

#এই_অবেলায়_তুমি

#পর্ব_১১

লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ইরিনঃ এই নূর আর কতক্ষন?
নূরঃ আর পাঁচ মিনিট দুস্ত আসতেছি।
ইরিনঃ তুই সব সময় দেরি করছ।তোর সাজগোজ করতে এতক্ষন লাগে!!
নূরঃ বকবক না করে সামনে তাকা। রাস্তায় না দাঁড়িয়ে বাসায় গেলেই তো পারতি। আচ্ছা চল রিক্সা দেখ।

ইরিনঃদুস্ত সামনে দেখ!! ওওহহ আল্লাহ এতো কিউট পুলা। হোয়াইট কালারের শার্ট, কালো প্যান্ট, দামি ঘড়ি। কতো হ্যান্ডসাম,স্টাইলিশ যেমন বডি তেমন লম্বা আর গায়ের রং তো মাশাল্লাহ সব মিলিয়ে ইয়ায়য়য়য়য়য়য়য়য় বড় ক্রাশ খাইছি দুস্ত!!….
নূরঃ আর কাউকেই পাস নাই তুই এই সাদা হনুমানের উপরেও ক্রাশ খাইলি।
ইরিনঃ ভুল কি বলছি। তুই একবার ভালো করে দেখ। কত সুন্দর ছেলে।ক্রাশ খাওয়ার মতই।
নূরঃ ওই লুচ্চি দিনে কয়টার উপর ক্রাশ খাস তুই।দিনে বারো ঘন্টায় চব্বিশটা ক্রাশ খাস।
ইরিনঃ থুর থাম তুই, সব গুলার থেকে এটা বেশি সুন্দর।
নূর বিরক্ত হয়ে বললো,”হয়েছে হয়েছে ক্রাশ খাইস পড়ে। আগে রিক্সা দেখ। কলেজ যাওয়া দরকার। (লাস্টে কিনা রুদ্র ভাইয়ার উপরে ও ক্রাশ খাইলো এই মাইয়া)

——

আজ এখনো মাহি আসেনি। আদিবা অনেকক্ষন মাহির জন্য দাঁড়িয়ে থেকে ভার্সিটির গেইটে ঢুকলো। মোবাইল ও নেই যে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবে কোথায় আছে।মামি যে মোবাইল নিয়ে গেছে অনেক বার মোবাইলটার কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ফিরে এসেছে। যদি রেগে আবার মারে।মোবািলটা মাহি ওকে ওর বার্থডের দিন গিফট করে ছিলো।এই একটা মেয়ে যাকে দেখলে ওর বাঁচতে ইচ্ছে হয়। যে ওকে বাঁচার ইচ্ছে জোগায়। হঠাৎ ওর সামনে চার-পাঁচটা সিনিয়র ভাইয়া এসে ধারালো।
একটা ছেলে আদিবার চারপাশ ঘুরে ধারালো।
আদিবা ভয়ে ভয়ে সালাম দিলো…
আদিবাঃ কিছু বলবেন ভাইয়া!!?
একটা ছেলে বলে উঠলো, ” আহা আপু,ওহহ না সুন্দরী আপু। তুমি বেশি ভয় পেয়ো না।তোমাকে বেশি কষ্ট দেবো না।ওই যে দেখছো কালো শার্ট পরা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে গিয়ে একটা কিস করবে।
আদিবাঃ প্লিজ ভাইয়া।আমি ওইরকম মেয়ে না। আমাকে ক্লাসে যেতে দিন প্লিজ। আমি এটা করতে পারবো না ভাইয়া।

আরেকটা ছেলে বলে উঠলো, ” আরে আরে সোনামণি তুমি কান্না করছো কেনো? তোমাকে কি কেউ বকেছে নাকি মেরেছে?তুমি তোমার কাজ কমপ্লিট করো আর ক্লাসে চলে যাও।

আদিবাঃ এটা আমি করতে পারবো না।

~সিনিয়রদের মুখের উপর কথা বলছো।ভয় করছে না। আমাদের কথা না শুনলে একদিন ও এই ভার্সিটিতে টিকতে পারবে না।

আদিবা এইবার ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো, সত্যি যদি ওরা কিছু করে তাই মিনমিনিয়ে বললো, “যাচ্ছি ভাইয়া”

ছেলেটা উল্টো দিকে ফিরে আছে তাই মুখ দেখা যাচ্ছে না। আদিবা ভাবলো মুখ দেখে কি করবো কিস করে উল্টো দিকে দিবো দৌড়। এক দৌড়ে ক্লাসে চলে যাবো।

তারপর আবারো পিছন ফিরে ছেলেগুলোর দিকে তাকালো ওরা এই দিকেই তাকিয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসছে।

আদিবা ছেলেটার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে একপা এগিয়ে গালে কিস করে দিলো।ভয়ে বুক ধুকপুক করছে।এই প্রথম কোনো ছেলেকে কিস করেছে দৌড় দিবে তো দূরের কথা, মনে হচ্ছে হাত পা অচল হয়ে গেছে। এখন যে তার দৌড়ে পালানোর দরকার সেটাই ভুলে গেছে।

হঠাৎ ছেলেটা ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।ছেলেটার মুখ দেখে আদিবা ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে যেতে নিলে ছেলেটা দু’হাতে আগলে নেয় ওর দুর্বল শরীর টাকে।

——

নূর আর ইরিন ক্লাসে বসে আছে। হঠাৎ নূরের মাথায় আসলো আজ ও আর ক্লাস করবে না। আজকে সিনেমা দেখতে যাবে।
নূরঃ এই ইরিন আজ আর ক্লাস করবো না চল!!..
ইরিনঃ মাথা ঠিক আছে তোর। ক্লাস করবি না। তাহলে কেনো আসছোস? আর এখন কই যাবি?
নূরঃ সিনেমা দেখতে যাবো..
ইরিনঃ বেশি কথা না বলে চুপচাপ বসে থাক। কিসের সিনেমা!! আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে।
নূরঃ আচ্ছা তুই আমাকে একটা কথা বল এতো ক্লাস ক্লাস কেনো করিস?এতো পড়াশোনা করে কি লাভ হবে! একদিন তো মরেই যাবি…
ইরিনঃ কই থেকে এই কথাগুলা পাস তুই?
নূরঃ বেশি কথা না বলে চল।

“হেই গার্লস, তোমরা ফাস্ট ইয়ারের না??
নূর আর ইরিন থমকে দাঁড়ালো।পিছন ফিরে দেখলো ফায়াজ বুকে হাত গুঁজে ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নূরঃ জ্বি স্যার,আমরা ফাস্ট ইয়ারের।আসসালামু আলাইকুম স্যার।কেমন আছেন স্যার?আপনার শরীর মন দুইটাই ভালো আছে তো স্যার?

ফায়াজ ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে হয়তো মনে মনে ভাবছে, এ আবার কোন ধরনের কুশল বিনিময়!!
ইরিন নূরকে ফিসফিস করে বলে,”ইসস স্যারের মতো যদি আমার একটা বর থাকতো!কতো সুন্দর হতো।

নূরের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। এই মেয়ে যাকে দেখে তার উপরেই ক্রাশ খায়।আর এখন কি না যাকে জিজু বানানোর প্লেন করে রেখেছে তার উপরেও নজর দিলো। কিন্তু এই কি সেই ফায়াজ? ওফ্ফ এখনো আপুকে পিকটা দেখানো হয়নি বলে মন খারাপ করলো তারপর কিছুটা রেগেই উচ্চ সুরেই বলে উঠলো, “এই লুচ্চি মাইয়া একদম আমার জিজুর দিকে নজর দিবি না। বলে নিজেই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো ইইস এটা কি বলে ফেললো তাও স্যারের সামনে।”

ইরিন হা করে একবার নূরের দিকে আরেক বার ফায়াজের দিকে তাকাচ্ছে।

ফায়াজ চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,”ওয়ালাইকুম আসসালাম,এখন তো ক্লাস টাইম কোথায় যাচ্ছো তোমরা?
ইরিনঃজ্বি স্যার,বলতেই নূর ওকে হালকা করে চিমটি কাটলো।
ইরিন আবার বলে উঠলো, ” জ্বি স্যার আমরা তো ক্লাসেই যাচ্ছি। বলে ক্লাসের ভেতর চলে গেলো।”

শুভ ভাই বাইকের উপর বসে আছে। খুব রেগে আছেন উনি।শুভ ভাই হলেন এই কলেজের ভি.পি আর এক কথায় এই এলাকার মাস্তান, মাফিয়া গেং এর লিডারের সাথে উনার উঠা বসা।উনাকে ভয়ে সবাই শুভ ভাই বলে ডাকে।উনাকে চিনে না এমন কেউ নেই। কিন্তু আজ উনি নিজেই দাঁড়িয়ে আছে, অপেক্ষা করছে একটা সাধারণ মেয়ের জন্য। মেয়েটার কতো বড় কলিজা যে কি না তার আদরের ছোট ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছে।সেই হাত আজ ওর ভেঙে দিবে!।
শুভ ভাই এদিক ওদিকে তাকাচ্ছেন। হঠাৎ উনার চোখ আটকে গেলো একটা মেয়ের উপর, “মেয়েটি অসম্ভব কিউট আর সুন্দরী দেখতে।ফর্সা গায়ের রং, হাইট 5,5,চুলগুলো কোমরের নিচ পর্যন্ত, পরনে লং গ্রাউন ড্রেস গলায় স্কার্ফ।”

তখনি পাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো, ” বস ওই তো এই মেয়েটা!!”
ছেলেটার ডাকে হুঁশ ফিরে শুভ ভাইয়ের। উনি বলে উঠে, “কোন মেয়েটা?”
~বস কালো জামা পরা মাইয়াডা।
শুভ ভাই অবাক হয়ে বলে আবার ভালো করে দেখে বল!?
~হ ভাই এইডা ওই।

শুভ ভাই গিয়ে নূরের সামনে দাঁড়ালো।
নূর ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো, ” কি হলো রাস্তা আটকে দাড়িয়েছেন কেনো?”
শুভ ভাই নূরকে ঘুরে ঘুরে দেখা শুরু করলো।
নূরঃ কি ভাই! আমাকে কি দেখতে চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণির মতো লাগছে যে ঘুরে ঘুরে দেখছেন?

শুভ ভাই নূরের সামনে দাঁড়ালো তারপর বললো,” দেখতে তো নিস্পাপ বাচ্চা মেয়ে মনে হয়। কিন্তু তেজ দেকলে তো বাব্বাহ্!! আমি শুভ ভাই, এই এলাকার মানুষের হার্টবিট কাঁপানো শুভ ভাই, ভয় পেয়ে গেলাম কথার কি তেজ!!
নূরঃ ফাজলামো করেন। সামনে থেকে সরে দাঁড়ান!!…
শুভঃ তুমি জানো আমি কে???
নূরঃ আপনি কে সেটা যেনে আমার লাভ কি?
শুভঃ সব কিছুতে লাভ লস হিসেব করতে নেই বোকা মেয়ে। এবার মেইন কথায় আসি…তুমি আমার ভাইকে কেনো মেরেছো?
নূরঃ ওওহ আচ্ছা! তাহলে ওই বেয়াদব ছেলেটা আপনার ভাই।
শুভঃ ঠিক করে কথা বলো।তুমি যানো তুমি কার সাথে কথা বলছো? কার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছো?আমি চাইলে এক্ষনি তোমাকে এই কলেজ থেকে বের করে দিতে পারি!!
নূরঃ কলেজটা কি আপনার বাবার দেওয়া সম্পত্তি। আর বারবার বলছেন আপনি কে? আপনি কে? আপনি কে সেটা আমার জানার দরকার নেই। আমার সামনে আপনি একজন সাধারণ মানুষ বাঁধে আর কিছুই না। এর বাহিরে আপনার আরো হাজারটা পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আপনার ভাই অন্যায় করেছে তাই মেরেছি!!

শুভঃ আমার ভাইয়ের অন্যায়টা কি? আর আমার ভাই অন্যায় করলে আমার কাছে বলতে। তুমি নিজে মেরে কাজটা একদম ঠিক করোনি।
নূরঃ বিষয়টা যখন একটা মেয়ের সম্মানের তখন কি আপনি হিরোদের মতো আসবেন সেই আশায় প্রতিবাদ না করে বসে থাকবো আপনার জন্য। আপনাদের পাওয়া যায় যত সব ফালতু কাজের সময়। ভালো কাজের সময়,আপনাদের খুঁজেও পাওয়া যায় না।আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করবেন কেনো আপনার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছি।? আর সাবধান করে দিবেন, দ্বিতীয় বার যদি কোনো মেয়েকে এমন করতে দেখি আবার হাত তুলতে আমি দ্বিতীয় বার ভাববো না!!।বলেই শুভ ভাইকে পাশ কাটিয়ে ইরিনকে নিয়ে চলে গেলো নূর।

পাশ থেকে একটা ছেলে রাগে গজ গজ করে বলে উঠলো, ” দেখেছেন ভাই কি তেজ মেয়েটার।”

শুভ ভাই বলে উঠলো, ” মেয়েটি কেরে খুজ লাগা।বাসা কই? থাকে কোথায়? কলেজে এতো সুন্দর, সাহসী মেয়ে আছে আর আমি জানিনা।”
~ভাই ভুলেও এই মেয়ের দিকে নজর দিয়েন না। ওই দিন ছোট ভাইয়েরে যেই মাইর দিছে যদি দেখতেন।এই মেয়ে খুবই ডেঞ্জারাস!!

শুভঃ এই প্রথম কোনো মেয়েকে এতো ভালো লাগলো সে যতই ডেঞ্জারাস হোক না কেনো। আমি তো তাকে আমার করেই ছারবো।
~বস এই মেয়ে আপনার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছে।!!
শুভঃ এই মেয়ে বলতে যেনো দ্বিতীয় বার না শুনি”ভাবি” বলবি।
~ওকে বস শুধু ভাবি না! ডেঞ্জারাস ভাবি…
শুভঃ হুম তোদের ডেঞ্জারাস শুভ ভাইয়ের ডেঞ্জারাস বউ।এবার ডিটেইলস বের কর গিয়ে যা…

(শুভ ভাই দেখতে গায়ের রং কালো হলেও হাসিটা মারাত্মক সুন্দর। উনার একটা ভালো দিক হলো উনি মেয়েদের প্রতি আসক্ত না। মেয়েদের দিকে খারাপ নজরে কখনো তাকান না। তার এই ভালো দিকের জন্য অনেক মেয়েই উনাকে খুব পছন্দ করতো।কিন্তু কেউ ভয়ে বলার সাহস পায়নি।)

নূর ইরিনের হাত দরে গেইট থেকে বের হয়ে বললো,” কি রে এবার ও বল এই পুলার উপর তোর ক্রাশ নামের বাঁশ খাইছস।”

ইরিনঃ সত্যি কইতে দুস্ত হাসিটা মারাত্মক সুন্দর। ক্রাশের উপরে কিছু থাকলে সেটাই খাইছি।

নূর ইরিনের কথা শুনে কপাল চাপরে বললো” তুই আর ভালা হবি না।তোর ভবিষ্যৎ জামার কথা ভেবে আমার খুব মায়া হচ্ছে। আহারে বেচারার কপালে যে কি আছে!!

——

রুদ্র নার্সের সাথে কথা বলে কেবিনে ডোকে। তখনি চোখে পরে ফায়াজ পায়ের উপর পা তুলে ওর চেয়ারে বসে আছে।
ফায়াজ কে এভাবে বসে থাকতে দেখে রুদ্র হেসে বলে উঠলো, “কি রে তুই কখন আসলি?”
ফায়াজঃ একটু আগে আসলাম।
রুদ্রঃ ভালো করেছিস! আম্মু তোর কথা বলতেছিলো চল আমার সাথে। আজ আমাদের বাসায় যাবি!
ফায়াজঃ আজ না…অন্য দিন যাবো।
রুদ্রঃ আজ কিন্তু আমি কোনো কথা শুনছি না। আজ আমার সাথে যেতেই হবে।

——

ফায়াজ কে নিয়ে রুদ্র ওদের বাসায় এসেছে অনেকক্ষন হলো।রুদ্রের বাসার সবাই ফায়াজ কে নিয়ে ভেস্ত হয়ে পরলো। ফায়াজের মনে হচ্ছে সে নতুন জামাই প্রথম শশুর বাড়িতে এসেছে আর সবাই তাকে নিয়ে ভেস্ত হয়ে পরেছে।
রুদ্র এসে বললো,” তোমাদের যা আদর যত্ন করা বাকি আছে পরে করো। আমি এখন ফায়াজকে নিয়ে উপরে গেলাম।

রিদয় মাঝারে! রেখেছি তোমারে!
তোমার জন্য অনুভূতি আমার মনটা জুড়ে…
এই দুটি চোখে! আমার স্বপ্ন জমেছে।
অশান্ত এ মন ছুটে যায় তরি কাছে
আমার মনে অকারণে তুমি দিও না জ্বালা
তুমি ছাড়া এ জীবনটা আমার বড় একেলা
তোমায় পেলে এ জীবনে আর তো কিছু চাই না
সারা জীবন থাকবো পাশে তোমায় ছেড়ে যাবো না
ম্যাঁ হু তেরা মাহি তো মেরি আশিকি
সব কুছ ওদ য়া কারলিয়া
তুমছে পেয়ার কারে গী….

ফায়াজ এবার ফিক করে হেসে দিলো। আর মাহি চমকে পিছন ফিরে তাকালো।
ফায়াজঃ এতো বড় মেয়ে বেডের উপর এভাবে লাফাচ্ছ কেনো?আর তোমার এই গান শুনে নিশ্চয়ই রুমের দেওয়াল গুলোও বলছে। ছেড়ে দে বইন কেঁদে বাঁচি তাও তোর মুখ বন্ধ কর বলে ফায়াজ আবার শব্দ করে হাসা শুরু করলো।

——
সামনের দেওয়াল টপকে বাড়ি থেকে বের হলো নূর।আল্লাহ প্লিজ এবারের মতো বাচায় দাও আর কোনো দিন ও বাসা থেকে চুড়ি করে বের হবো না।

আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখছে কেউ আছে কিনা। হঠাৎ পেছন থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ বেসে আসলো।”চুড়ি করে কোথায় যাচ্ছো?”

চলবে…….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি

#পর্ব_১২(বোনাস পর্ব)

লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ইরিন দাঁড়িয়ে আছে ফুচকার দোকানের সামনে।ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।
ইরিন নিজে নিজে বিরবির করে বলছে, ” বেয়াদব মাইয়া,নূরের বাচ্চা আজ খালি তরে হাতে পাই।এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আর এই মেয়ের কোনো খবর নাই।আমাকে নিজেই বললো আসতে আবার নিজেই উধাও!!

“এই হরিণ ”

ইরিনের এখন মন চাচ্ছে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় বসাতে। কেনো যে নূরের কথা শুনে আসতে গেলো।এখন আবার আরেক পাগলের আমদানি হইছে!!

ইরিন আগের মতই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
নীল ওর সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,” এই মেয়ে ভয়ডর নাই। এখানে একা একা কি করো?
ইরিনঃ সেটা যেনে আপনার কাজ কি?আপনি আপনার নিজের রাস্তায় জান!..
নীলঃ হরিন তুমি রেগে আছো কেনো?
ইরিন তো এমনিতেই রেগে ছিলো তারপর নীল আবার হরিন বলেছে।আগুনের উপর ঘি ঢালবার মতো অবস্থা।
ইরিন রেগে বলে উঠলো, ” এই ছেলে! এই আপনার সমস্যা কি? আপনি যদি আরেক বার হরিণ বলেছেন একদম মুখ সেলাই করে দিবো!! বোন একঘন্টা ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে আর ভাই আসছে মাথা খাইতে।”
নীল ভদ্র ছেলের মতো মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো আর বলবো না।এবার বলো এখানে কি করছো?
ইরিনঃ ফুচকা খেতে এসেছি।
নীলঃ তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
ইরিনঃ নূ….বলে থেমে গেলো। কাউকে বলা যাবে না নূরের কথা। এমনি…
নীলঃ এমনি!! নাকি কারো জন্য অপেক্ষা করছো?
ইরিনঃ কার জন্য অপেক্ষা করবো?
নীলঃ আরে তুমি তো দেখছি কিছুই বুঝো না। এক কাজ করো ফুচকার বদলে ফিটার খাও,কাজে দিবে।
ইরিন রেগে বললো, ” আপনি আসলে কি বলতে চাচ্ছেন। ক্লিয়ার করে বলুন?”
নীলঃ দেখো আমার থেকে লুকিয়ে লাভ নেই।আমি সব জানি..
ইরিনঃ কি জানেন আপনি?
নীলঃ তুমি যে মাঝে মাঝে একটা ছেলের সাথে রিক্সায় করে আসো। আমি কিন্তু দেখেছি।

ইরিন নীলের কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।তারপর হাসতে হাসতে বললো,” ওটা তো আমার ভাই ”
নীল চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,” কেমন ভাই?”
ইরিনঃ আমার আপন বড় ভাই!…
ইরিনের কথা শুনে নীলের মন চাচ্ছে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় মারতে।ওই ছেলে ইরিনের ভাই আর ও কিনা কতো কিছু ভেবে রেখেছে ওদের নিয়ে।

ইরিনঃ ফুচকা খাবেন?
নীলঃ কখনো খাইনি।তবে আজ খাওয়া যায়!
ইরিন মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো ফুচকা আনতে।

ইরিনঃ মামা দুই প্লেট ফুচকা দেন তো।

ফুচকাওয়ালাঃ মামুনি ঝাল কেমন দিমু?
ইরিন শয়তানী হাসি দিয়ে বললো, ” একটায় প্রচুর ঝাল দেন।আরেকটায় মিডিয়াম।”

ইরিন মুচকি হেসে ফুচকার প্লেট নীলের হাতে দিলো।

নীল একটা ফুচকা মুখে দিয়েই মুখ লাল হয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে আছে।
ইরিন অবাক হয়ে গেলো নীলের মুখ দেখে।
নীলের মনে হচ্ছে কান দিয়ে গরম ধুঁয়া বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। নীল ঝাল একদম খেতে পারে না৷
ইরিন নীলের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে আসে।কিন্তু নীল এর আগেই চলে যায়। পানি নিয়ে এসে ইরিন কাউকে পায় না। সে হাটু ভেঙে বসে কান্না করে দেয়। সে কি নিজের অজান্তেই ছেলেটাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললো।

——

বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করে চলেছে আদিবা। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ।ব্যথায় শরীর নারাতেও পারছে না। কিন্তু ঠিকি শুনতে পাচ্ছে বাহির থেকে ওর মামির অশ্রাব্য গালাগালির আওয়াজ।আজ দেরি করে বাসায় ফেরার কারনে ওর মামি ওকে খুব মেরেছে।

(আজ যখন কিস করার পর ছেলেটা ওর দিকে ফিরে আবিরকে দেখেই ভয়ে ও জ্ঞান হারায়, এমনিতেই শরীর খুব দুর্বল ছিলো তার উপর এতোটা ভয় নিতে পারেনি জ্ঞান হারায়।তারপর যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করে। সামনে আবিরকে দেখেই বুঝতে পারে ওকে আবির নিয়ে এসেছে।ও উঠতে নিলে,
আবিরঃ আপনার শরীর তো খুব দুর্বল উঠবেন না শুয়ে থাকুন!
” আদিবা জানতে চায় কয়টা বাজে?”
আবিরঃ এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আপনি এতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিলেন।
আদিবাঃ কিইইইই!! আমি এতো সময় ঘুমিয়েছি!! ডাক দিলেন না কেনো?
আবিরঃ আপনার শরীর প্রচুর দুর্বল ছিলো। তাই ঘুমের ওষুধ দিয়ে ছিলো। আপনার বাসার ঠিকানা বলুন! না হলে নাম্বার দিন। ফোন দিয়ে বলি আসার জন্য।
আদিবা ভাবছে উনি কি ভুলে গেলেন নাকি, আমি যে উনার গালে ছি!ছি!ছি নিশ্চয়ই আমাকে নির্লজ্জ মেয়ে ভাববেন উনি।
আবিরঃ কি হলো নাম্বার দেন?
আদিবাঃ ধন্যবাদ ভাইয়া আমাকে সাহায্য করার জন্য। হসপিটাল বিল কতো এসেছে বলেন? আমি এখন বাসায় যাবো!
আবিরঃ আরে আপনি তো অসুস্থ একা যেতে পারবেন না। আর হসপিটাল বিল আমি দিয়ে এসেছি!
আদিবা কাঠকাঠ কন্ঠে বলে উঠলো, ” আপনি কেনো দিবেন? কারো করুনা আমার পছন্দ না।”
আবিরঃ আমি আপনাকে করুনা কেনো করবো। এখন তো আপনার কাছে টাকা নেই।কোথায় থেকে দিবেন। আর আপনাকে বলছি নাম্বার দিতে তাও দিচ্ছেন না।
আদিবা লজ্জা পেয়ে গেলো, আসলেই তো সাথে তো এক টাকা ও নেই।

আদিবাঃ আমি আপনার টাকা ফিরিয়ে দেবো!! এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে।

আবিরঃ হুম সাবধানে যাবেন।আর রাস্তার মধ্যে যাকে তাকে কিস করবেন না! সবাই আমার মতো না!…

আদিবা লজ্জায় তারাহুরো করে বের হতে গিয়ে পরে যেতে নেয়। আবির আগলে নেয় ওকে। আদিবার মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থমকে যাক।সারাজীবন আবির ওকে এভাবে আগলে নিক।এই জাহান্নাম জীবন থেকে মুক্তি দিক।

বাসায় ঢুকেই বুঝতে পারলো ওর মামি খুব রেগে আছে।ওর সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো কোথায় ছিলো। ভার্সিটি তো অনেক আগেই ছুটি তাহলে এতোক্ষন কার সাথে ছিলো।

আদিবা ভয়ে চুপ করে আছে।

আদিবাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওর মামি আকটা লাঠি নিয়ে আসে আর ওকে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে।আদিবা তাও চুপ করে থাকে।মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ ও বের করে না।মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে বলেন, ” আজ তোর মামু আসুক, আজ যদি তোর বিচার না করে। আমি বাপের বাড়ি চলে যামু। এই বাড়িতে তুই থাকবি না হলে আমি।)
আদিবা এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। আর মা-বাবার নামে হাজারো অভিযোগ আল্লাহর কাছে বলছে।

——

রুহিঃ কেনো আদি কেনো এমন করছো তুমি?আগে তো এমন ছিলে না! তুমি আমাকে এভয়েড করছো।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না!?
আদিঃদেখো রুহি ঝামেলা করো না।
রুহিঃ কিইই!! আমি ঝামেলা করছি নাকি তুমি? সব সমস্যার মূল ও নূর তাই না!!?
আদিঃ আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। যত তোমাকে দেখছি। তুমি না ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমাদের মতো কিছু মেয়ের কারনেই মানুষ বেস্ট ফ্রেন্ড নামক বন্ধন টাকে এতো ঘৃণা করে।
রুহিঃ ভালো মানুষি একদম দেখাবে না! তুমি নিজে কি? আমি না হয় বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি আর তুমি! তুমি তো প্রেমিক ছিলে কেনো ঠকালে? কেনো ওর বিশ্বাস নিয়ে খেললে? ওকে রেখে ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের দিকে কেনো নজর দিলে?ওর থেকে মন উঠে গিয়ে ছিলো বুঝি, পুরাতন হয়ে গিয়ে ছিলো আর আজ সেই মেয়েই আবার রসগোল্লা হয়ে গেলো।আমি এখন আবার আমি পুরাতন হয়ে গেয়েছি।

আদিঃ নূরের প্রতি তোমার এতো কিসের রাগ?
রুহিঃ ওর প্রতি আমার কোনো রাগ না, ঘৃণা হয় আমার ঘৃণা। ওর কারনে আমি সব হারিয়েছি!! সব!!ওকে আমি ছাড়বো না..
আদিঃ ওর কিছু করলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো না!!

——

নূর ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে দেখলো রুদ্র রাগি মুডে তাকিয়ে আছে,( ওদের বাসায় নিয়ম, সন্ধ্যার পরে কোনো মেয়ে একা বাসা থেকে বের হতে পারবে না। এটা ওর বড় আব্বুর নিয়ম।).
আচমকাই নূর দৌড়ে গিয়ে রুদ্রের হাত ধরে বললো,” প্লিজ ভাইয়া বড় আব্বুকে বলবেন না। আমি আপনাকে দুইটা চকলেট কিনে দেবো!! আমার নাতি-নাতনীদের নানা বানাবো!! রুদ্রকে দেখে ভয়ে কি বলতে গিয়ে কি বলছে সে নিজেও হয়তো জানে না!!

রুদ্র বললো,” সত্যি নানা বানাবে তো!?
নূরঃ হ্যাঁ পাক্কা সত্যি, তাও বইলেন না!
রুদ্র হেসে বললো,” আবার ভেবে বলো”?
নূর আবার বলতে গিয়ে থেমে গেলো। যখন বুঝলো ও কি বলেছে।লজ্জায় এক দৌড়ে বাসার মধ্যে চলে গেলো।
রুদ্র এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে হাসছে।

——

মাহি হা করে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। ভালো করে চোখগুলো কচলে আবার সামনে তাকালো।তাও তো ফায়াজ কে দেখছে। খাট থেকে নেমে ফায়াজের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর হাত বাড়িয়ে ফায়াজের হাতের উপর হাত রেখে দিলো এক চিমটি। ব্যথায় ফায়াজ” আহহহ” বলে উঠলো।

মাহিঃ তার মানে আপনি সত্যি আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন!?
ফায়াজঃ কেনো আমাকে কি তোমার স্বপ্ন মনে হচ্ছে।? তুমি কি এর আগে আমাকে স্বপ্নে দেখেছো নাকি? আমি জানি আমি দেখতে হ্যান্ডসাম একটা ছেলে৷ যে কোনো মেয়ে একবার দেখলেই দ্বিতীয় বার স্বপ্নে দেখা শুরু করে।
মাহি হা করে তাকিয়ে ভাবছে,” একটা মানুষ কিভাবে নিজের প্রসংশা নিজে করতে পারে৷ এই ছেলেকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না। আবার মাথায় আসলো এই ছেলে এখানে কি করছে?

——

শুভ্রতা নিজের খাট গোছাচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলো কেউ।
শুভ্রতা বলে উঠলো, ” এই ছাড়েন বলছি! ধরবেন না আমাকে।আমি কে? আমার কথার কি কোনো দাম আছে আপনার কাছে?
জিসান শুভ্রতাকে না ছেড়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘারে থুঁতনি রেখে বললো,” আমার লক্ষি বউটা কি আমার উপর রাগ করেছে?আমার বউটা তো অবুঝ নয় সে তো বুঝে তার বরের কতো কাজ। কাজ শেষ না করে বাসায় আসি কিভাবে।
শুভ্রতাঃ কাজ!কাজ! কাজ, আপনার কাছে কাজ টাই বড়।আমি যে বলে ছিলাম আজ একটু ঘুরতে যাবো।বিয়ের পর কোনো দিন আমাকে নিয়ে আপনি কোথাও গিয়েছেন?যখনি বলি আপনার শুধু কাজ।
জিসানঃ আজকে অপরাধের পাল্লাটা কি বেশি হয়ে গেছে।দেখো আসার সময় তোমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছি।
না শুভ্রতা তাও ফিরে তাকালো না। কত সখ করে শাড়ি পরে ছিলো সেজে ছিলো। ঘুরতে যাবে বলে কিন্তু তার স্বামী কি করলো।ওর সব আশায় পানি ঢেলে দিলো।
জিসানঃ কাল নিয়ে যাবো প্রমিজ। এবার তো ফিরো লক্ষি বউ আমার।
শুভ্রতাঃ এটা তো আপনি প্রতি রাতেই বলেন। দিন হলে তো আপনার ছায়াও দেখা যায় না।
জিসানঃ সরি বউ,এই দেকো কানে ধরলাম আর এমন হবে না।
জিসানের কানে ধরবার স্টাইল দেখে শুভ্রতা ফিক করে হেসে দিলো।
জিসানঃ নাও এবার একটু জড়িয়ে ধরো।

——

মাহিঃ আপনি এখানে কি করছেন? বাসা চিনলেন কিভাবে?
ফায়াজ কিছু বলবে তার আগেই নূর দৌড়ে মাহির রুমে ঢুকতে নিয়ে ফায়াজের সাথে ধাক্কা খায়। ফায়াজ তাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পরে মাহির উপর।

নূরঃ একি আপু তুই বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বাসায় চলে আসছোস!!!??

চলবে….
(💁‍♀️নাও এবার সবাই বলে যাও, কার নায়ক কে?👩‍❤️‍👨)

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here