এই রাত তোমার আমার পর্ব ১৬

#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#১৬তম_পর্ব

রাত অনেক হয়েছে। আজকে এখনো মাহিয়াত নুহার সাথে দেখা করতে আসেনি।ফোনও করেছে কয়েকবার রিং হয়েছে কিন্তু ধরেনি কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করে দেখে ফোন বন্ধ।নুহা হতাশ হলো।

ইদানিং মাহিয়াতের হাতে সময় থাকে না। সে খুব ব্যাস্ত আজ কাল, না না কাজে নয় ফিমার দেখাশোনায়।আগে নুহার কাছে থাকতে চাইতো তার সাথে বেশি সময় কাটাতে চাইতো বরং সেই জোর করে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো।আর এখন এসেই যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে বারবার ফোন চেক করে টাইম দেখে। তার কার্য হাসিল করার পর আর বেশিক্ষণ থাকে না নুহাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বেরিয়ে পরে।

নুহা শুধু দেখে মানুষের পরিবর্তন।ফিমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া তাকে নিয়মিত চেকাপ করানো সারাদিন আসেপাশে থেকে তার খেয়াল আর রাত জেগে তার সাথে গল্প করার সময় থাকলেও নুহার জন্য যেন তার কাছে খুব বেশি সময় অবশিষ্ট থাকে না। শুধু মাত্র দায় এড়াতে আর নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্যই এখানে আসা।রাত জেগে গল্প করার কথাটা মাহিয়াতই একদিন কথায় কথায় বলে দিয়েছিলো তখনি সে জেনেছে।পরে অবশ্য সে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা ঘুরানোর জোরদার চেষ্টা করছে কিন্তু নুহাতো তাকে বারো বছর যাবৎ চেনে।

মাঝে মাঝে মনে আরে এটাতো তার সেই মাহি যার হৃদয়ে নুহার জন্য অসংখ্য ভালোবাসা বিদ্যমান যার প্রত্যেকটা রগ রগ নুহার চেনা আবার মাঝে মাঝে মনে হয় এই মাহিকে সে চেনেই না একদম না।

অবশ্য এ পরিস্থিতির জন্য এক প্রকার সে নিজেকেই দায়ী মনে করে।মাহিয়াত হাজার নিষেধ করেছিলো তাকে।বিয়ে করতে চায় না সে বাচ্চার প্রয়োজন নেই তার। কিন্তু সে ই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজেকে দোষমুক্ত করার জন্য তাকে বিয়ে করতে বলে। তখন সে মনে করেছিলো মাত্র এক বছরের ব্যাপার দেখতে দেখতে কেটে যাবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এক বছর কত লম্বা সময়?এক একটা দিন একেকটা বছরের সমান মনে হচ্ছে তার কাছে। এখান তার মনের মধ্যে শুধুই একটা সঙ্কা কাজ করে মাহিয়াত তাকে ছেড়ে দিবে নাতো?

মাহিয়াতের ব্যাবহার গুলো তাকে কষ্ট দেয়। খুব কষ্ট।সে সহ্য করতে পারে না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তাকে গিয়ে বলতে,
—চাইনা আমার বাচ্চা তুমি ঐ মেয়েকে টাকা দিয়ে বিদায় করো আবার আমার আগের মাহি হয়ে যাও যে আমার শুধু আমার।

কিন্তু চাইলেই তো আর সে এ কথা বলতে পারে না। কারণ বাচ্চাটাকে নিয়ে মাহিয়াতের অনেক স্বপ্ন অনেক আশা।যখন সে বাচ্চার নড়াচড়ার কথা বলে তখন নুহারও ইচ্ছে করে এই অনুভূতিটার সাথে পরিচিত হতে।মাহিয়াতের পাশাপাশি সেও যদি ফিমার পেটা কান পেতে বাচ্চার অস্তিত্বের আওয়াজ শুনতে পারতো হাত দিয়ে নাড়াচাড়া অনুভব করতে পারতো,তাহলে হয়তো ভিতরের যন্তণাটা একটু হলেও কমতো।

প্রেত্যেক বার বাচ্চার কথা বলার সময় মাহিয়াতের চোখে মুখে সে আনন্দের সে ঝিলিক দেখে তা বার বার তার ব্যর্থতার কথা তাকে মনে করিয়ে দেয়। এখানে তো তার দোষ নেই আল্লাহ কেড়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে তার মাতৃত্ব।এখন কি সে তার ভালোবাসাকেও কেড়ে নিতে চাইছে কিনা কে জানে?

সারারাত নানান দুশ্চিন্তায় আর মাহিয়াতের ফোনের আশায় আশায় পার করে ফজরের নামাজের সময় কান্নায় ভেঙে পড়লো নুহা। তার সংসার তার ভালোবাসা ফেরত চাইলো।এই দুঃখের দিনে একটা জিনিস বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে সে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তার সাহায্য করবে না।তাই নিয়মিত নামাজ পরছে আর সুখ দুঃখের কথা সব তার সাথেই মন খুলে বলছে।




বেশ রাত করে বাড়ি ফিরেছে মাহিয়াত। প্রচন্ড ক্লান্ত সে।অফিসে গিয়ে এক দন্ডও ফুরসত পায়নি।একাউন্টেনে ঝামেলা হয়ে গিয়েছিলো।অন্যের উপর কাজ দিলে এমনি হয় ঠিক ভাবে করেনি হিসাবে গড়মিল করে ফেলেছে।যার দরুন এম ডির কাছে আচ্ছা মত গাল মন্দ শুনতে হয়েছে আর পুরো মাসের হিসাব এক বসায় শেষ করতে হয়েছে।দম ফেলারও সময় পায়নি।আর না ফিমা খেয়েছে কিনা মেডিসিন নিয়েছে কিনা খবর নিতে পেরেছে।কাজ শেষ হয়েছে প্রায় রাত একটার কাছাকাছি সময়ে।

যদি কালকের মধ্যে সব পেপার্স সাবমিট করতে না হতো তাহলে দুইদিন সময় নিতো। আবার বাসায় বসে কাজ করবে তারও জো নেই,এম ডি কড়া ভাবে বলে গেছেন কাজ অফিসেই করতে হবে আর আজকের মধ্যেই নয়তো চাকরি বাতিল। এই সময়ে এত ভালো বেতনের আর আরামের কাজ ছেড়ে দেয়া বোকামি। তাই কোনো প্রকার ভুল করে চাকরি হারানোর মত বোকামি সে করতে চায় না।

কাজ শেষ হতেই সে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো নুহাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যদিও শরীরে এক রত্তি এনার্জি নেই কিন্তু নুহার সাথে দেখা না করলে তার হাঁসফাঁস লাগে,মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, বুকে ব্যাথা হয়।আর নুহাও তাকে দেখা ছাড়া থাকতে পারে না বড্ড বেশিই ভালোবাসে তাকে মেয়েটা। কিন্তু তার মনে হয় সে এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।

নুহাদের বাড়িতে পৌঁছে সে নুহাকে ফোন দেয়ার জন্য মোবাইল বের করতেই দেখে ফোন অফ হয়ে আছে।চার্জ নেই রাত তখন একটা কয়েক বার ডাকাডাকি করেও দারোয়ান কে পেলো না সে তবুও আধঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু লাভ হয়নি তাই বাসায় চলে গেছে। প্রচন্ড ক্লান্ত সে।

বাসায় গিয়ে দেখলো ফিমা শুয়ে আছে ল্যাপটপ ব্যগটা রেখে সে ফিমার কাছে গিয়ে ঝুঁকি কপালে একটা চুমু দিলো।তারপর কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।মাহিয়াত চলে যেতেই ফিমা টুপ করে চোখ খুলে ফেললো। তারপর এক হাত দিয়ে কপাল ছুঁয়ে দেখলো এখনো মনে হয় মাহিয়াতের স্পর্শ লেগে আছে কপালটা শিরশির করছে। ভালোবাসা না থাকলে কি আর ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ চুমু দেয়?

ফিমা বেশ খুশি হয়ে গেলো,মাহিয়াত তাকে ভালোবাসে এটা আবিষ্কার করতে পেরে। কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকলো না ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মাহিয়াত জোরে একটা ধমক দিলো,

—আপনি উঠে বসে আছেন কেনো? আপনি না ঘুমিয়ে ছিলেন? এখান কয়টা বাজে?

মাহিয়াতের ধমকে ফিমা ভয় পেলো তাই আমতা আমতা করে বলল,
—না মানে ঘুমিয়ে ছিলাম তো?মাত্রই উঠেছি আর আপনি এসেই ধমক দিলেন।

—আপনি যে কেমন ঘুমিয়েছেন তা আপনার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।এত রাত পর্যন্ত জেগে আছেন কেন?

ফিমা কি বলবে? আপনি পাশে ছিলেন না,আপনার শরীরের উষ্ণতা পাইনি,কেউ মাথায় বিলি কেটে দেয়নি আপনার জন্য আজকে মনটা একটু বেশি ছটফট করছিলো তাই ঘুম আসছিলো না?আদোও কি এ কথা তার মুখ দিয়ে বের হবে তাই হাত কচলে প্রশ্ন এড়াতে চেষ্টা করলো,

—অনেক রাত হয়ে গেছে আপনি খাবেন না?বসুন আমি খাবার নিয়ে আসছি।

—প্রয়োজন নেই খেতে ইচ্ছে করছে না।আর দরকার পড়লে আমি নিজে গিয়ে খেয়ে আসবো। আপনাকে কেউ পাকনামী করে নিচে যেতে বলে নি। আপনি খেয়েছেন?

—হুম।

—মেডিসিন নিয়েছেন ঠিক ঠাক?

—হুম।

—আজকে রাজপুত্র বেশি জ্বালাতন করেছে?

—না, শুধু রাজা সাহেবকে মিস করছিল।

—আচ্ছা সমস্যা নেই রাজা সাহেব এসে পরেছে এখন বেশি করে আদর দিয়ে সারাদিনের আদর পুষিয়ে দেবে।এখন আসুন শুয়ে পরুন।

—নাহ,

—নাহ মানে?

—আমার ঘুম আসছে না বারান্দায় থাকতে ইচ্ছে করছে।

মাহিয়াত বিরক্ত হলো তার ঘুমের প্রয়োজন ছিল আর নুহার ব্যাপারটা নিয়ে সে বেশ চিন্তিত কিন্তু ফিমার পাপি ফেস দেখে আর না করলে পারলো না। বিছানা থেকে বালিশ আর একটা চাদর নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।ফিমাও খুশি খুশি তার পেছনে চলে গেলো।

আজ ভরা পূর্ণিমা আকাশে বড় থালার মত চাঁদটা এজকে একটু বেশিই বড় মনে হচ্ছে।আর আকাশটাকে আরো আকর্ষণীয় করেছে হাজারো লাখো ছোট বড় অগণিত তারারা। কোলাহল মুক্ত নিরব পরিবেশ বেলি ফুলের গন্ধ আর বারান্দার মৃদু আলো পুরো আবহাওয়াটা কে করে তুলেছে মাতাল। ঠান্ডা বাতাস গা ছুয়ে যাচ্ছে তাদের।

মাহিয়াত দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছে,আর ফিমা মাহায়াতের খোলা বুকে মাথা রাখে।উঁচু পেটে বসতে যেনো অসুবিধা না হয় তাই তার পিঠের নিচে একটা বালিশ দিয়ে দিলো।আর মাহিয়াত তার দুই হাত দিয়ে তাকে ভালোভাবে আকড়ে ধরলো। কিছুক্ষণ চুপ চাপ থেকে ফিমা খুব মনোযোগ দিয়ে মাহিয়াতের হৃদস্পন্দন শুনলো।কি সুন্দর আওয়াজ করে সমান তালে চলছে।কি মধুর সেই আওয়াজ। আচ্ছা এখানে কার নাম প্রতিধ্বনি হচ্ছে তার নাকি নুহার।সে কি একবার জিজ্ঞেস করবে?

—সাহেব?

—হুম,

—আমাকে ভালোবেসেন?

……

—বলুন না ভালোবাসেন?

—হুম খুব ভালোবাসি তো আমার বাচ্চার মাকে।

বলে আর একটু শক্ত করে জরিয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেলো।ব্যেস ফিমার কলিজা ঠান্ডা। যত বারই সে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগে প্রেত্যেকবার সে তাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে আর মাহিয়াতের উত্তর ও একি হয়।

কিন্তু তবুও একটা কিন্তু থেকেই যায় আর রয়ে যায় অনেক প্রশ্ন যা কোনোদিন করা হয় না।তাই সে আজকে চিন্তা করলো তার সব প্রশ্নের উত্তর নিবে মাহিয়াতের কাছে।যদি সে তাকে ভালোবাসে থাকে তাহলে নুহা? সে কে?মাহিয়াত কি এখন আর তাকে ভালোবাসে না।তাদের এত বছরের ভালোবাসা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে। আর ফিমাকে কি সত্যিই সে ভালোবাসে নাকি তার মোহ মাত্র।আর যদি ভালোবেসে থাকে তাহলে এর শেষ পরিণতি কি হবে?কন্ট্রাক অনুযায়ী কি বাচ্চা হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেবে নাকি দুজনের সাথেই সংসার করবে?যদি দুজনের সাথেই সংসার করে তাহলেও তার কোন অসুবিধা নেই।সে মাহিয়াতকে ছাড়া থাকতে পারবে না। কিন্তু নুহা যদি না মানে? মাথায় এত প্রশ্নের বোঝা না করে সে সরাসরি মাহিয়াতকে প্রশ্ন করল,

—সাহেব?

—হুম?

—আমাদের বাচ্চা হয়ে গেলে কি আমাকে ডিভোর্স দিবেন?আমাকে টাকা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিবেন?ফিমা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে কথাটা বললো,

—হঠাৎ এইসব প্রশ্ন কেন বেগাম।আর আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো?চুপ চুপ শান্ত হোন কেউ কোথাও যাবে না। আপনি সব সময় আমার সাথে থাকবেন।

ফিমা থামলো না উল্টো মাহিয়াতের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগলো তার হঠাৎ ভয় হচ্ছে মাহিয়াতকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাই ভয় দূর করতে সে কান্না করতে করতেই বললো,
—আমি আপনাকে ছাড়া আমার রাজপুত্র কে ছাড়া থাকতে পারবো না সাহেব।আমি কিচ্ছু চাই না সাহেব টাকা পায়শা কিচ্ছু চাই না। শুধু আপনার সাথে থাকতে চাই আমার সন্তানের কাছে থাকতে চাই। দরকার হলে আমি আপনাদের এত বড় বাড়ির একটা কোনায় পরে থাকবো কাজ করে খাবো কিন্তু আপনাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না। আমার আপন বলতে এখান শুধু আপনি আর রাজপুত্রই আছেন আর কেউ নেই।আর নুহা কোনো দিন জানাতেও পারবেনা আমি কে? বলবেন নতুন মেইড।আপনারও আমার কাছে আসা লাগবে না আমি শুধু দূর থেকে আপনাদের দেখে যাবো। এতেই আমি খুশি। আপনি আমাকে যেই রাত গুলো উপহার দিয়েছেন সেগুলো মনে করেই আমি সারাজীবন পার করে দিতে পারবো। কোনো দিন আপনার কাছে অধিকার চাইবো না।

আর রাজপুত্রের জন্মের পর তার দেখা শোনা করার জন্য হলোও তো একজন মেইড লাগবে। আপনি নাহয় আমাকেই রেখে দিয়েন। তবুও চলে যেতে বলবেন না।আমি মরে যাব সাহেব মরে যাবো।

ফিমা তার মনের কথা গুলো একদমে বলে ফেললো। তার কেনো জানি মনে হচ্ছে তার কাছে আর বেশি সময় নেই আর কিছুক্ষণ পরই সে মাহিয়াতকে হারিয়ে ফেলবে।

ফিমার মরে যাওয়ার কথা শুনে মাহিয়াতের বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো সে ফিমাকে নিজের বুকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে ভাঙা গলায় বললো,

—কিছু হবে না আপনার। কিছু না কোথাও যেতে হবে না আপনাকে। আমি আপনার পাশে আছি আমাদের রাজপুত্র আছে।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি শান্ত হন বেগাম শান্ত হোন।

সেদিনের রাত তিনজনের জন্যই ছিলো বিষাদময়।তবে কেউ কি জানতো পরেরদিন সকল তাদের জন্য কি নিয়ে অপেক্ষা করছে?

সকালে
ফিমা রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছে তাই সকালে ঘুম ভাঙ্গল দেরি করে চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো এ আর নতুন কি?অভ্যস্ত সে এসবের। বিছানার আরেক পাশে হাত দিয়ে দেখলো মাহিয়াত নেই। দুই হাতে ভর দিয়ে কোনোরকম উঠে বসলো সে।হঠাৎই কানে কারো চাপা ধমক শুনতে পেলো ভালো করে শুনে বুঝল এটা মাহিয়াতের গলা।
তারপর ভাবলো হয়তো কাজ নিয়ে কারো সাথে কথা বলছে কিন্তু হঠাৎই যেন সে তার নাম শুনতে পেলো। ফিমা কৌতুহল চেপে না রেখে শব্দহীন পায়ে বারান্দায় গেল,মাহিয়াত পুরো বারান্দায় পায়চারী করছে আর বলছে,

—প্লিজ নুহা তুমি আমার কথা বুঝর চেষ্টা করো।আমি সত্যিই অনেক ঝামেলায় ছিলাম তাই ফোনের কথা খেয়াল ছিলো না।না না তুমি আমার কথা…

………

—আমার কথাটা তো শুনবে?আমি গিয়েছিলাম তোমাদের বাড়িতে কিন্তু দারোয়ান ছিলো না,
………
—আশ্চর্য আমি তোমাকে মিথ্যা কেন বলব? হ্যা দেখো তোমাদের দারোয়ান হয়তো মিথ্যা বলছে।
………
—তুমি বারবার একি কথা বলছো কেনো নুহা। তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?আর কেয়ারের কথা বলছো তো? তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমাদের সন্তান এখন ওর গর্ভে আছে আর তাকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে আনার জন্য হলোও ঐ মেয়ের কেয়ার করতে হবে।
……….
—নুহা প্লিজ স্টপ আমি আর নিতে পারছি না।আমি এসবে ধারে কাছেই ছিলাম না।আমি তোমার কথাতেই কিন্তু এত দিন এসব ভালোবাসা আর কেয়ারিং এর নাটক করে গেছি আর এখন তুমি এগুলো সহ্য করতে পারছো না।
…………
—হ্যা মানছি প্রথমে এসব আমিই বলেছিলাম পরে তোমাকেও বারবার জিজ্ঞেস করেছি আমরা ঠিক করছি কিনা আমি পরে নিষেধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি বলেছো এতো কষ্টের পর আমরা আমাদের বাচ্চাকে হারাতে চাই না। তাই যা করছি বাচ্চার ভালো থাকার জন্য করেছি।তাহলে এখন এই কথা কেনো?
…… ……
—আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি নুহা আর কাউকে না বিশ্বাস করো।ঐ মেয়ের সাথে যা করি তা সবই অভিনয়।আর তোমার কি মনে হয় এমন একটা থার্টক্লাশ মেয়ের সাথে থেকে আমি তার প্রেমে পরে যাবো। আর আমাদের এতো দিনের ভালোবাসা ভুলে যাবো?এসব মেয়েদের ধান্দা আমার জানা আছে…

আর কিছু শুনতে পারলো না ফিমা চোখ দিয়ে অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে।কান দুটো ঝা ঝা করছে।মাহিয়াতের সব ভালোবাসা, কেয়ারিং,শত শত ওয়াদা,আবেগ মেশানো কবিতা সব নাটক ছিল শুধু মাত্র সুস্থ সন্তানের জন্য তার অনুভূতি নিয়ে খেললো?এসব শোনার আগে তার মরণ হলো না কেনো?তাহলে ফাহির কথাগুলোই সত্যি।সে দ্রুত পায়ে বারান্দা থেকে সরে গেলো, কিন্তু হাত লেগে বারান্দার দরজার পাশের ফ্লাওয়ার ভাসটা পরে গেলো।সাথে সাথেই মাহিয়াত সে দিকে তাকালো। তার মনে হলো মাত্র কেউ যেন সরে গেলো।

মাহিয়াতের ভয় হতে লাগলো ফিমা নয়তো?সে কি সব শুনে ফেলেছে?সে ফোন টা রেখে ঘরে গিয়ে দেখলো ফিমা বিছানায় বসে আছে চেহারা বিধ্বস্ত, মাহিয়াতের কলিজা ধক করে উঠলো।সে এগিয়ে গিয়ে কিছু বলবে তারও জো নেই তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে সে সব শুনে নিয়েছে। কিন্তু সে তো শুধু নুহার রাগ ভাঙাতে ফিমাকে নিয়ে উল্টো পাল্টা বলেছে এখন কি হবে?তাও সে নিশ্চিত হতে আমতা আমতা করে বলল,

—আসলে বেগাম…

মাহিয়াতকে কিছু বলতে না দিয়ে ফিমাই বললো,

—থাকেনা মাহিয়াত বাবু অভিনয় করার দরকার নেই।আর ভুলে আপনার প্রিয় ফ্লাওয়ার ভাসটা ভেঙে ফেলেছি।আমি আমি ইচ্ছে করে ভাঙ্গিনি আপনি আমার প্রাপ্য টাকা থেকে কেটে নিয়েন।

বলে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো আবার কি মনে করে যেন পিছনে ফিরে অশ্রুসিক্ত নয়নে মুচকি হেসে মাহিয়াতের দিকে তাকালো কিন্তু ভেতরের ভাঙ্গন শুধু সে বুঝতে পারছে।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

–আপনি খুব ভালো অভিনেতা মাহিয়াত বাবু আমি কখনো বুঝতেই পারিনি আপনি অভিনয় করছেন। কিন্তু কারো অনুভূতি নিয়ে খেলা করা মোটেও আপনার উচিত হয় নি।সন্তানের সুস্থ্য তার জন্য করেছেন তো এই সব। ঠিক আছে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি আমার জীবনের বিনিময় হলেও যেন আল্লাহ আপনাকে সুস্থ সন্তান দিক।

মাহিয়াত কিছু বলতে পারছে না।কি বলবে সে?ক্ষমা চাইবে?কেনো আর কত কিছুর জন্য। কিন্তু প্রথম দিকে মাহিয়াত ফিমার সাথে অভিনয় করলেও ইদানিং সে না চাইতেও ফিমা তার মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এটা ভালোবাসার নাকি মায়ার জানে না সে।

আল্লাহ বোধহয় ফিমার দোয়া খুব দ্রত শুনে নিয়েছে।সে ওয়াশরুমের দরজা আটকে সামনে আগাতে নিয়েই হঠাৎ করে পা পিছলে পরে গেলো। শরীরে যে নিজের ভার সামলানোর শক্তিও ছিল না। পা দুটো কাঁপছিল।যার ফল এই দূর্ঘটনা।

হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে ফিমার চিৎকার শুনে মাহিয়াত হতবুদ্ধি হয়ে গেলো…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here