এক্সিডেন্টলি পর্ব ৪

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

—- আউউউউউউউ…….!

নিশান্তের গলা ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ এভাবে চিৎকার করে উঠায় চমকে উঠলো সবাই। আফসানা বেগম খাওয়া ফেলে হন্তদন্ত উঠে ছেলের কাছে ছুটে গিয়ে আতংকিত কন্ঠস্বরে বলে উঠলেন,

—- কিরে কি হয়েছে? চেঁচালি কেনো?

নিশান্ত মার কথার জবাব না দিয়ে চট করে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাম পাটা হাটু ভাজ করে হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে সে বললো,

—- আহহ! কেউ আমায় আঁচড় কেটেছে আম্মু! ইশশস জ্বলে যাচ্ছে…!

নিশান্তের কথায় আহাম্মক বনে গেলো সবাই। রফিক সাহেব ছেলের চাপা আর্তনাদে কপাল কুঁচকে বললেন,

—- আঁচড় কেটেছে মানে? এখানে কেউ তোর পায়ে কি করে আঁচড় কাটবে নিশান্ত?

নিশান্ত বাবার করা উক্তিটির বিপরীতে কোনো জবাব দেবে তার আগেই চট করে দাঁড়িয়ে মুখে জোড় পূর্বক চিন্তার ছাপ ফুটারবার চেষ্টা চালিয়ে অন্বিতা বললো,

—- এমা! বেড়াল শেষমেশ আপনার পায়েই আঁচড় কেটে বসলো! ইশশশ সো স্যাড!

অন্বিতার কথায় চোখ বড়বড় করে ফেললো নিশান্ত। “হোয়াট!” বলে চেঁচিয়েই ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরলো সে।
নিশান্তকে বিড়ালছানাটি আঁচড় কেটেছে ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না আনন্দর। টেবিলের তলে হেলে বিড়ালটিকে খুজার জন্য চোখ বুলাতেই অন্বিতার পেছনে পায়ের নিকটে তাকে আবিস্কার করলো সে। বেড়াল যদি নিশান্তকে আচড় দেয় তবে এতোদূর এলো কিভাবে? আর এতো শান্তশিষ্ট ভাবেই বা রয়েছে কিভাবে! ব্যাপারটায় বড্ড খটকা লাগতে লাগলো আনন্দর। সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বেড়ালের আঁচড় না কাটার বয়ান তুলে ধরবার জন্য,

—- কিন্তু মেয়াওটা তো…..

এটুকু বলতেই নিজের পা দিয়ে তার পায়ে জোরেশোরে একটা লাথি মেরে দিলো অন্বিতা। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে তাকে চুপ মেরে থাকতে বলে সকলের উদ্দেশ্যে সে বলে উঠলো,

—- আরে কোনো ব্যাপার না, মাত্র কয়েকটা ইঞ্জেকশনেরই তো ব্যাপার! ভ্যাকসিন দিয়ে নিয়ে বিড়ালটাকেও ভ্যাকসিন দিইয়ে নেবেন তাহলে নেক্সট টাইম থেকে আঁচড় অথবা কামড় দিলেও কোনো বিষ লাগবে না। আবার সব বেড়ালের তো বিষ থাকেও না। আঁচড় কেটেছে মানেই যে আপনার জলাতঙ্ক হবে এমনটা তো নয়। সো ভয় পাবেন না।

অন্বিতার এভাবে ভয় ছুড়ে মারা সান্ত্বনা বিষের মতো ঠেকলো নিশান্তের গায়ে। মেয়ে বলে কি? কতগুলো ইঞ্জেকশন দিতে হবে সেটা নাকি কোনো ফ্যাক্টই না। এমন ভাব নিয়ে কথাগুলো সে বললো যেনো বেড়াল আঁচড় কাটে নি বরং চুম্মা দিয়েছে তাকে। মেজাজ চরমভাবে বিগড়ে যাওয়ায় “শাট আপ…!বলে চেঁচিয়ে উঠলো নিশান্ত। আফসানা বেগম ছেলেকে শান্ত হতে বলে পায়ের আঁচড় কাটা জায়গায় ভ্রু কুঁচকে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি। এই ফাঁকে সকলের আড়ালে বেড়ালছানাটিকে টেবিলের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো অন্বিতা। নূহা ভাইয়ের এমন করুন অবস্থা দেখে মন খারাপ করবে নাকি হাসবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না বিধায় কনফিউজড হয়ে অন্বিতার ওড়না টেনে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

—- এই মিষ্টিপু আমি হাসবো না মুখ ফুলাবো বলো তো?

নূহার প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে ভ্রু কুঁচকালো অন্বিতা। নূহা অন্বিতার এমন হতভম্ব টাইপ রিয়াকশন দেখে জিহ্ব কামড়ে ধরলো। মিনমিন করে সে হাত ঘষতে ঘষতে বললো,

—- আসলে ভাইয়ু তো বিল্লুটার সাথে পঁচা বিহেভ করেছে তাও বিল্লুটা ভাইয়ুর ওপর রাগ করে ফুসস করে আঁচড় কেটে দিয়েছে। তাহলে তো এখানে বিল্লুর দোষ নেই। দোষ তো ভাইয়ুর যে কিনা আমার কিউট বিল্লুটাকে পঁচা বলেছে। তাইনা?

নূহার বিপরীতে কি বলা উচিত জানা নেই অন্বিতার। সে অবাক দৃষ্টিতে এক নজরে চেয়েই রয়েছে নূহার মুখপানে। এতোটুকুনি একটা মেয়ে এতো পাকা পাকা কথা বলে কিভাবে মাথায় খেলে না তার। নিজের ভাইয়ার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক না হয়ে পাড়লো না অন্বিতা। তাও হয়তো মানা যেতো যদি না নিশান্তের জায়গায় অন্য কেউ থাকতো।
অন্বিতার ভাবনার মাঝেই চোখ কপালে তুললেন আফসানা বেগম। কপাল কুঁচকে বিচক্ষণ ভঙ্গিতে তিনি বললেন,

—- এটা কোনো বেড়ালের নখের দাগ বলে তো মনে হচ্ছে না। বেড়ালের নখের আঁচড় হলে তো কালো সুক্ষ্ম দাগ বসে যেতো।

মা’র কথা কানে যেতেই নিজের পায়ের দিকে সচেতন চোখে তাকালো নিশান্ত। আসলেই তো তাই আঁচড়টা বেড়ালে কেটেছে বলে তো মনে হচ্ছে না।
সন্দেহ নিজের দিকেই পড়তে পারে ভেবেই গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলো অন্বিতা। ব্যস্তস্বরে আমতা আমতা করে সে বললো,

—- আ…আরে এটা তো বিড়াল না বিড়ালের বাচ্চা কেটেছে। তাই হয়তো নখের দাগটা অন্যরকম। অথবা এমনও হতে পারে যে টেবিলের কোনো পেরেকে পা লাগায় কেটে গিয়েছে, হতেই তো পারে তাই নয় কি?

অন্বিতার দেখানো যুক্তির রেশ ধরে টেবিল সুদ্ধ সকলের মুখেই ভাবনার ছাপ সৃষ্টি হলো শুধুমাত্র নিশান্ত ব্যতীত। রাগে দুঃখে বড়বড় পায়ে হেটে শব্দ করে দরজা চাপিয়ে ঢুকে পড়লো সে নিজের ঘরে। নিশান্তের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ভিলেনি হাসি হাসলো অন্বিতা। এমন সময় নূহার দিকে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকালো সে। নুহা একমনে টেবিলে বসে পা দুলিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগায় নূহাকে উদ্দেশ্য করে সে প্রশ্ন ছুড়লো,

—- একি বাবু তুমি এভাবে পা দোলাচ্ছো কেনো?

নূহা অন্বিতার প্রশ্নের বিনিময়ে বোকাবোকা চাহনিতে ঠোঁট উল্টে বললো,

—- কেনো মিষ্টিপু এটা কি পঁচা অভ্যাস? আম্মু বলে এভাবে পা না দোলাতে কিন্তু আমার তো এমনি এমনিই পা লাফালাফি করে। তোমার পায়ে বুঝি পা লেগেছে আমার?

নূহার জবাবে গোলগোল আঁখিদুটি বিস্ময়ে আগের তুলনায় আরো খানিকটা বড় করে ফেললো অন্বিতা। একটা শুকনো ঢোক গিলে সে মনে মনে বলে উঠলো,

—- এইরে তবে কি তখন নূহার পা ই আমার পায়ে লেগেছিলো? আর আমি ভুল বুঝে উনার পায়ে আঁচড় কেটে ফেলেছি!

কথাটা বার কয়েক নিজ মনে আওড়ে নিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো সে। আফসানা বেগম ছেলের এভাবে খাবার ফেলে উঠে যাওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেলেন।

—- আরে খাবার ফেলে কোথায় চললি? খেয়ে যা….নিশান্ত….!

এভাবে বেশ কয়েকবার ডাকার পরও যখন ওদিক থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো না তখন আবারও হতাশ হয়ে পড়লেন তিনি। আমজাদ হোসেন সহ বাকি সকলকেই খাবার শেষ করতে অনুরোধ করে নিশান্তের প্লেটটা ঢেকে রেখে দিলেন মুখ কালো করে। ছেলের হঠাৎ এমন পরিবর্তন বড্ড চোখে লাগছে আফসানা বেগমের। যেই ছেলে চুপচাপ বসে খাবার খাওয়ার সময় একটা কথাও বলতো না, সে কিনা আজ রেগে খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়লো? ব্যাপারটা মোটেও স্বাভাবিক ঠেকছে না তার কাছে।

আফসানা বেগমের ভাবনার মাঝেই এগিয়ে এলো অন্বিতা। নিশান্তের প্লেটটা হাতে তুলে নিয়ে চোখের পলক ফেলে তাকে আস্বস্ত করে সে বললো,

—- আন্টি আপনি আমায় দিন, আমি নাহয় উনাকে ঘরে খাবারটা দিয়ে আসছি।

অন্বিতার আশ্বাসের খানিকটা আশ্বস্ত হলেন আফসানা বেগম। মুচকি হেসে অন্বিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় সম্মতি জানালেন তিনি। অন্বিতা মিষ্টি করে হেসে খাবারের প্লেট হাতে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চললো নিশান্তের ঘরের দিকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে এই বিরক্তিকর কাজটি সম্পন্ন করতে হচ্ছে ভেবেই চরম বিরক্ত সে। তবুও ভুলটা যেহেতু তারই সে হিসেবে এতোটুকু স্যাক্রিফাইস তো করাই যাই ভেবেই নিজের মনকে সান্ত্বনা দিলো অন্বিতা।

দরজায় টোকা পড়ায় হাত থেকে এসাইনমেন্টের শিটটা নামিয়ে নিলো নিশান্ত। খানিকটা কর্কশ গলায় সে মাথা উঁচু করে জবাব দিলো,

—- আম্মু, যাও তো খাবো না আমি। খিদে নেই আমার!

নিশান্তের গলা পেয়ে বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলে নিলো অন্বিতা। গলা খাঁকারি দিয়ে দরজা ঠেলে উঁকি মেরে বলে সে বললো,

—- আজ্ঞে আপনার মাম্মি নয়, এসেছি আমি।

অন্বিতাকে দেখে মেজাজটা আগের থেকেও বেশি বিগড়ে গেল নিশান্তের। অন্বিতার ভয়ে মাখা মুখের দিকে না তাকিয়েই ঝাঁঝালো গলায় সে বললো,

—- আপনি আবার এসেছেন কোন দুঃখে? কাটা ঘায়ের নূনের ছিটে দিতে?

নিশান্তের মুখে এমন মহিলা টাইপ কথাবার্তা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো অন্বিতা। সে বুঝলো ভালো কথায় কাজ হবার নয় তাই পারমিশন ছাড়াই দরজা ঠেলে গুটিগুটি পায়ে ঘরে ঢুকে পড়লো সে। খাবারের প্লেটটা বেড টেবিলে রেখে দিয়ে একহাতে আঙুল ফোটাতে ফোটাতে মিনমিন করে অন্বিতা বললো,

—- ইয়ে মানে বলছিলাম কি, বিড়াল আপনাকে আঁচড় কাটে নি তাই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

অন্বিতার কথায় কপালে স্লাইড করা বন্ধ করে দিলো নিশান্ত। চোখ তুলে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে সে বললো,

—- ওয়েট ওয়েট ওয়েট! একটু আগে আপনিই গলা ফাটিয়ে বললেন যে ওই ইডিয়ট টা আমায় আঁচড় কেটেছে এখন আবার বলছেন কাটেনি? আচ্ছা আপনার ব্রেইন কি গিরগিটির মতো মিনিটে মিনিটে রং পাল্টায়?

নিশান্তের কথায় গা জ্বালানো প্রচন্ড রাগের জোয়ার ধেয়ে এলেও নিজের রাগটাকে দমিয়ে নিলো অন্বিতা। আফটার অল দোষটা তারই সে ভেবেই মনকে শান্ত করে জোড় পূর্বক হাসলো সে। দুহাতের আঙুল খোটাতে খোটাতে সে বললো,

—- আসলে ব্যাপারটা ঠিক সেটা নয়। খাওয়ার টাইমে নূহার পা আমার পায়ে লেগে গিয়েছিলো বাই এনি চান্স। এন্ড দ্যট টাইম আমি বুঝতে পারিনি যে ওটা নূহার পা ছিলো, এমনিতেই আপনি আবার আমার বিপরীত ধর্মী তাই সন্দেহের জোড়টা আপনার দিকেই জোড়ালো হয়েছিলো। দ্যটস হোয়ায় রেজাল্টে প্রতিশোধ স্বরূপ আমি আপনার পায়ে নখ দিয়ে আঁচড় কেটে দিয়েছি।

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে থামলো অন্বিতা। জোড়ে একটা শ্বাস টেনে ছোট্ট করে সে বললো “সরি!”
এতোক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অন্বিতার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে চেয়ে থাকলেও “সরি” শব্দটা শুনে রাগটা যেনো আকাশ ছুঁইয়ে ফেললো নিশান্তের। সটান করে দাঁড়িয়ে পরে আঙুল তুলে প্রচন্ড রাগান্বিত কন্ঠে সে বলে উঠলো,

—- সরি মানে? সরি বলে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি যে যা করেছেন তা ক্ষমার সমতূল্য? ননসেন্স! কি করে ভাবলেন আমি আপনাকে টাচ করতে যাবো? ইউ ফুল! আর ওটা আপনার পায়ের নখ ছিলো…! লাইক সিরিয়াসলি! আরে আপনি তো মানুষ নন আস্ত একটা পেত্নী আপনি!

এবার আর নিজের রাগটা কন্ট্রোলে রাখতে পারলো না অন্বিতা। নিজের দিকে তোলা নিশান্তের আঙুল এক হাত দিয়ে নামিয়ে দিয়ে চোখের দৃষ্টি কঠিন করে সে বললো,

—- ভালোয় ভালোয় সরি বললাম কোথায় ইটস ওকে বলে ভদ্র ভাবে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলবেন তা নয় যা ইচ্ছে তাই বলে আমায় হেনস্ত করতে চাইছেন আপনি? আপনার সাহস তো কম নয়!

কথার মাঝেই একহাতে তুড়ি বাজিয়ে অন্বিতা আবারও বলে উঠলো,

—- এইযে শুনুন আপনি শুধু মাত্র বাড়িওয়ালার ছেলে বিধায় কিছু বললাম না। নয়তো যদি অন্য কেউ হতেন তবে আপনার একটা হাড়-গোড়ও আস্ত থাকতো কিনা সন্দেহ আমার। জাস্ট খাল্লাস করে ফেলতাম এইভাবে তুড়ি বাজিয়েই! যত্তসব….!

বলেই নাকে আঙুল দিয়ে ঘষে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মুখ বাঁকালো অন্বিতা। এক হাতে নিজের সামনে থাকা চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে নিশান্তকে কোনো কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই বড়বড় পায়ে বেড়িয়ে গেলো সে। অন্বিতা যেতেই খাটের স্ট্যান্ডে সজোরে লাথি মেরে দিলো নিশান্ত। রাগে-দুঃখে নিজের চুল ছিড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।

__________________________

(দ্বিতীয় দিন)

বেলা ৮ টা বেজে ১৩ মিনিট। আজ আকাশের মন ঠিক কেমন বুঝে উঠতে পারছে না আনন্দ। তার কাছে মনে হচ্ছে আজ আকাশ একটু পর পরই খুশি হচ্ছে আবার একটু পরপরই উদাস! মেঘের সাথে সূর্য আবার সূর্যের সাথে মেঘ এক অদম্য খেলায় নেমে পড়েছে যেনো। যার দরুন হঠাৎ করেই রোদ উঠছে তো হঠাৎ করেই মেঘের চাদরে ঢাকা পরে রোদ হয়ে যাচ্ছে বিলীন। সাথে বইছে হাল্কা মন জুড়ানো হীমেল হাওয়া। হয়তো বা বৃষ্টি হবে, হয়তো বা না। কেমন যেনো কনফিউশন ধরানো ওয়েদার আজকে।

এই অদ্ভুত কনফিউশন ধরানো ওয়েদারে মুখ ফুলিয়ে বসে রয়েছে আনন্দ। তার পাশেই ঠোঁট উল্টে বসে আছে তমা। এতোবেলা অবদি অন্বিতার ঘুম মোটেও স্বাভাবিক ঠেকছে না তাদের দুজনেরই কাছে। যেখানে ৬ টার আগেই ঘুম থেকে উঠে মর্নিং ওয়াকের জন্য বেড়িয়ে পড়ে অন্বিতা, সেখানে আজ ৮ টা পেড়িয়ে গেলো অথচ তার ঘুম ভাঙার কোনো নাম অথবা নিশান নেই। আবার এতোক্ষণে যেখানে তার বাচ্চাদের গান শেখাবার জন্য সমিতিতে যাওয়ার কথা সেখানে উল্টে উল্টে ঘুমোচ্ছে অন্বিতা!
এসব ভাবতে ভাবতেই আনন্দের দিকে এক পলক তাকিয়ে ঠোঁট উল্টানোর পরিধি বৃদ্ধি করলো তমা। হতাশাগ্রস্ত কন্ঠে সে বলে উঠলো,

—- এই আনন্ত, অন্বিপু উততেছে না তেনো?

তমার মুখে আবারও সেই তোতলা ভাষা শুনে ভ্রু কুঁচকালো আনন্দ। তমার তোতলানোতে চরম বিরক্ত হলেও কোনো কিছু বদলাবার নয় ভেবেই ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো সে। কয়েক সেকেন্ড সেই তোতলা ভাষায় বলা বুলিটাকে নিজের মেমোরিতে শুদ্ধ ভাষায় কনভার্ট করে আসল মিনিং বুঝে নিয়ে সে বলে উঠলো,

—- রাতে মেইবি দেড়ি করে ঘুমিয়েছে আপু। তুই দাঁড়া আমি একটা আইডিয়া পেয়েছি। এবার দেখিস কি সুন্দর ডাকা ছাড়াই লাফ মেরে উঠে পড়বে।

বলেই রান্নাঘরে ছুট লাগালো আনন্দ। ট্যাপ থেকে এক গ্লাস পানি ভরিয়ে এনে রহস্যময়ী হাসি হেসে সোজা গ্লাস উল্টে দিলো অন্বিতার মুখের ওপর।
ঘুমের ঘোরে হঠাৎ মুখে পানি পড়ায় ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো অন্বিতা! বুক চেপে ধরে জোড়ে জোড়ে বার কয়েক শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে আড় চোখে আনন্দের দিকে তাকাতেই গ্লাস হাতে ধরে রেখে হুহা করে ঘর কাঁপিয়ে তাকে হাসতে আবিষ্কার করলো সে। রেগেমেগে চিৎকার করে সে বলে উঠলো,

—– ওই তুই আমার গায়ে পানি মারলি কেনো?

আনন্দ হাসতে হাসতেই জবাব স্বরূপ বলে উঠলো,

—– বারে তোমাকে হাজার বার ডাকার পরও তুমি উঠবানা আর আমরা বুঝি তোমায় ডেকে ডেকে গলা ভেঙে ফেলবো?

আনন্দের কথায় দাঁতে দাঁত চেপে “তবে রে…..!” বলেই ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো অন্বিতা। ট্যাপ থেকে এক মগ পানি ভরিয়ে এনে আনন্দকে ভিজিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে তেড়ে আসতেই দিশকূল না পেয়ে বারান্দার দিকে ছুট লাগালো আনন্দ। “দাঁড়া…! কোথায় পালাবি? আজকে তো তোরে আমি খাইছি!” বলেই আনন্দের পিছু পিছু ছুট লাগালো অন্বিতাও।

______________________

—– নিশান্ত হলো তোর? আবে লেইট হয়ে যাচ্ছে তো! জলদি আয়!

রিভানের ডাকে হন্তদন্ত হয়ে ফাইল হাতে বেড়িয়ে এলো নিশান্ত। ভার্সিটিতে আজ এসাইনমেন্ট জমা নেবার দিন। এমনিতেই লেইট হয়ে গিয়েছে ঘুম থেকে উঠতে ভেবেই চরম বিরক্ত রিভান। নিশান্ত শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বেড়িয়ে এসে নিজের হাতের ফাইলটা রিভানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

—– আর জাস্ট একটা মিনিট ওয়েট কর, বাইকটা স্টার্ট দেই।

বলেই শার্টের অবশিষ্ট বোতামটা লাগাতে নিতেই বিনা মেঘে বর্ষণ নেমে এলো তার ওপর। নিশান্তকে বৃষ্টির বদলেই আকাশ থেকে নামা পানিতে ভিজে যেতে দেখো বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে ফেললো রিভান। মাথায় হাত দিয়ে অবাক কন্ঠে সে বললো,

—– ওত্তেরী! বিন মৌসাম বারসাত কিধার সে হুয়া রে বাবা!

নিজের চুল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানিগুলো এক হাতে ঝেড়ে নিয়ে পানির উৎস খুঁজতে উপরে তাকাতেই বারান্দায় অন্বিতাকে চোখ বড়বড় করে মুখে হাত চেপে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে আবিষ্কার করলো নিশান্ত। অন্বিতা বুঝলো গালতি সে মিস্টেক হয়ে গিয়েছে তার। আনন্দের দিকে পানি ছুড়ে মারতে গিয়ে তার সরে যাওয়ার দরুন পানিগুলো সোজা নিচে গিয়ে ভুলক্রমে ভুল মানুষের ওপরই গিয়ে ল্যান্ড করে বসেছে অবশেষে! এই অসময়ে এমন বিশ্রী অঘটন ঘটানোর দরুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিশান্ত অন্বিতার দিকে তাকাতেই জিহবা কামড়ে ধরলো অন্বিতা। হতবাক হয়ে ভয়ার্ত গলায় আনমনেই সে বলে উঠলো,

—– আশ্চর্য বখরীর তিন ঠ্যাং,
ধরা পড়লেই মারবে ল্যাং!
.
.
.
.
চলবে…………….💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here