এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ১২

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-১২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

বিস্ময়ে চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম নিশান্তের। মুখ থেকে “টু” শব্দও বেড় করবার জো নেই তার। একি দেখছে সে! একি আদৌ বাস্তব নাকি বেঘোরে ঘুমোবার ফলে দৃশ্যমান দুঃস্বপ্ন মাত্র?

অন্বিতা গানের ট্রিগারে আঙুল আধচাপা অবস্থায় রেখে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাক করে রেখেছে সামনে থাকা হ্যাংলা-পাতলা ছেলেটির ওপর। তারপাশের চেয়ারে বাঁধা রয়েছে উৎপল নামের মধ্যবয়সী এক যুবক। মুখ ভর্তি দাড়ি তার, সাথে বিশাল এক গোপ! চর্বি যুক্ত ফোলা পেটটা আষ্টেপৃষ্ঠে দড়ির অসংখ্য প্যাচের মাঝে বন্দী রেয়েছে তার। থরথর করে কেঁপে চলেছে দুজনই! ঘাম ছুটে ভিজে যাচ্ছে তাদের অর্ধনগ্ন শরীর। অন্বিতা সুক্ষ্ম চোখে গানটা এবার তাক করলো উৎপলের ওপর। শান্ত গলায় ভয় ছুড়ে মারা কন্ঠে বললো,

—- প্রাণে বাঁচতে চাস তো তমা কোথায় ভালোয় ভালোয় বলে দে, বল…..!

উৎপল শুকনো ঢোক গিললো পাশে হাত উঁচু করে রাখা তারই গ্যাং এর ছেলেটাকে ইশারা করে কিছু একটা বুঝিয়ে মুখে বললো,

—- রাতুল রে…মাইয়াডারে লে আয়, নাইলে এই ছেমড়ি আমাগো এক্কেরে সত্যি সত্যিই মাইরালাইবে!

রাতুল থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপাল বেয়ে গড়িয়ে পরা ঘামগুলো মুছলো। অস্পষ্ট গলায় “জে..জে ভাই!” বলেই ছোট্ট ছোট্ট ধাপ ফেলে পাশের ঘরের গুপ্ত দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। অন্বিতার দৃষ্টি এখনো উৎপলেই স্থির! চুন থেকে পান খসলেই সোজা শুট করে গুলি মাথার এসপার থেকে ওসপার করে ফেলার মতো অঙ্গভঙ্গি তার। উৎপলের মনে ভয়, সামান্য কিছু টাকার জন্য শেষমেশ নিজের মাথার খুলিই উড়িয়ে ফেলতে হয় নাকি এই ভেবে!

প্রায় ২০ কি ১৫ মিনিট আগের ঘটনা,
অন্বিতার ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে চলা বাইকের পিছু নিয়ে কয়েক ফিট দূরত্বে সমান তালে তাল মিলিয়ে ধাওয়া করছিলো নিশান্ত। মূলত বাইকটা তার নিজের নয় তার বাবার। অন্বিতাকে এভাবে মধ্যরাতে বাইক চালিয়ে কোথাও যেতে দেখে নিশান্তের মনে বাসা বাঁধে একগুচ্ছ উত্তেজনায় ভরা প্রশ্নের সমাহার। সে যতোই অন্বিতাকে দেখে ততই অবাক হয়। এইতো সেদিনই শাড়ি পরিহিতা হাস্যজ্বল তরুণ রমনীর বেশে বৃষ্টির সাথে খেলা করছিলো মেয়েটি, আজ হঠাৎ বাইকে চরে হুডি ওয়ালা জ্যাকেট পরে মধ্যরাতে বেড়িয়ে ছুটে চলছে সে কোনো এক অজানায়! আসল রূপ কি তার? কি তার পরিচয়? সে যে বাইকও চালাতে পারে এটাতো আগে জানা ছিলো না নিশান্তের। আর এতো রাতেই বা বাহিরে কিসের কাজ থাকতে পারে একটা মেয়ের, ভেবে পায় না সে।

এসব প্রশ্ন নিজ মনেই প্রতিধ্বনির সৃষ্টি করতে করতে একটা সময় গিয়ে ব্রেক কষলো নিশান্ত। অন্বিতা বাইক সাইড করে নেমে পড়ে। নেমেই প্রথমে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় যতোদূর দৃষ্টির সীমানা যায়। নিশান্ত আড়ালে চলে যায় এই ফাঁকে, কোনো ভাবেই রহস্য উদঘাটনের পূর্বে অন্বিতার চোখে ধরা পড়তে চায় না সে। অন্বিতা ফোন বের করে বিচক্ষণ চোখে কিছু একটা দেখে নেয়। আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে রোড সাইডের ঝোপের আড়ালে ঢুকে পরে সে খুবই সচেতনতার সাথে। নিশান্ত গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসে। অন্বিতাকে চোখের আড়াল করবার ভয়ে এক ছুটে জংগলে ঢুকে পড়ে সেও।

রেললাইনের থেকে অতি নিকটেই এক পোড়াবাড়ি টাইপ আধভাঙ্গা বাড়ি দৃষ্টিগোচর হতেই বুক ফুলিয়ে শ্বাস টেনে খানিক সাহস সঞ্চয় করে নিয়ে খুবই সাবধানে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে অন্বিতা। নিশান্ত অবাক চোখে তাকায়। এই আধাভাঙ্গা বাড়িটাকে কোনো জ্বিন বা ভূতের বাড়ি থেকে কম লাগছিলো না তার কাছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রহস্যভেদ করবার কিউরিসিটির জন্য হলেও তাকে সেই বাড়িটার ভেতরে প্রবেশ করতেই হবে এমন একটা টেন্ডেন্সি নিয়েই ভেতরে ঢুকে পড়লো সেও।

কেটস পরিহিত পায়ের খটমট শব্দ উহ্য রেখেই নিঃশব্দে বাড়ির আনাচে কানাচে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলো অন্বিতা। হঠাৎই ভেতরের একটি ঘর থেকে মৃদু আলো দৃষ্টি গোচর হতেই সচেতন চোখে তাকায় সে। হাতে থাকা স্বল্প তীর্যক আলোযুক্ত টর্চলাইটটা অফ করে পকেটে গুঁজে সেই আলোর উৎস বরাবরই ছুটে চলে সে। নিশান্ত নোংরা, ধুলোবালি ভরা, সাথে মাকড়সার জালে ভরপুর টাইপ পরিবেশের সাথে পূর্বপরিচিত না হওয়ায় একটু বেশিই বেগ পেতে হচ্ছিলো তাকে। ধুলোবালি চোখে মুখে ঢুকে পড়ায় যে একটু শান্তিমতো কেশে স্বস্তি লাভ করবে এরও কোনো উপায় ছিলো না তার। কাশলেই ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে টাইপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হতো তাকে।

অন্বিতা ঘরটাতে উঁকি দিতেই থমকে দাঁড়িয়ে পরে। অন্বিতাকে থামতে দেখে পিলারের পেছনে নিজেকে আড়াল করে থেমে দাঁড়ায় নিশান্তও।
অন্বিতা নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে নেবার তাদিগে বার কয়েক জোড়ে জোড়ে শ্বাস টানে। উপায় নেই জেনে আর কোনো কিছু না ভেবেই ভেতরে ঢুকে পরে সে। ঘরের ভেতরে হারিকেন এর আলোয় টাকার হিসেব করছিলো উৎপল-রাতুল। নিজেদের আস্তানায় কোনো আগুন্তকঃ এর আগমনে বিস্ময়ে চোখ তুলে তাকায় তারা। তাদের সুক্ষ্ম বুদ্ধিতে করা কিডন্যাপিং কোনো অর্থের বিনিময়ে ছাড়াই বিফলে যাবে তা মানতে নারাজ উৎপল। সে সচেতন চোখে তাকিয়ে রাতুলকে ইশারা করে অন্বিতাকে প্রহার করে মেরে দেওয়ার জন্য। সর্দারের ইশারায় এক মুহুর্ত দেড়ি না করে উঠে দাঁড়ায় রাতুল। তেড়ে আসে সে অন্বিতাকে মেরে পথের কাটা সরিয়ে ফেলবার উদ্দেশ্যে।

তবে মুহুর্তেই রাতুলের পরিকল্পনা বানের জলে ভেসে গিয়ে পড়ে রয় শুকনো ফাটল ধরা মাঠ। অন্বিতা হাতের কুনুই দিয়ে রাতুলের মাথায় সজোরে আঘাত করে হাটু দিয়ে সোজা তার মেইন পয়েন্ট বরাবর হিট করে দেয়। ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পরে রাতুল। অন্বিতা থামে না। পা দিয়ে লাথি মারতে মারতে তার অবস্থার দফারফা করে ফেলে নিমিষেই। রাতুলকে মার খেতে দেখে উঠে দাঁড়ায় উৎপল। অন্বিতাকে মারার জন্য তেড়ে আসতেই অন্বিতা চোখের পলকে ফ্লিপ মেরে তার উল্টো দিকে ল্যান্ড করে লাথি বসিয়ে দেয় পিঠে। টাল সামলাতে পারে না উৎপল। সোজা গিয়ে পরে সে রাতুলের ওপর। অন্বিতা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে রামকেলানি দিতে থাকে তাদের। ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে তারা। একটা সময় গিয়ে অন্বিতা থেমে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। একেবারে মেরে ফেলে জেলে যাওয়াটা ঠিক হবে না তারওপর তমাকে উদ্ধার করতে হবে ভেবেই উৎপলকে উঠিয়ে চেয়ারে বেঁধে দেয় সে। তবে রাতুলকে বাঁধে না। দুজনকেই বাঁধলে তমাক এনে দেবে কে এই ভেবে।
ততক্ষণে স্ট্যাচু তে পরিণত হওয়া সাড়া নিশান্তের। মেয়েরাও যে এতোটা সাবলীল ভাবে কাউকে কেলাতে পারে তা সকলের কাম্য নয় জানা কথা নিশান্তের। তবে অন্বিতা ব্যতিক্রম! তার কর্মকান্ডে হতবাক না হয়ে পারে না সে। শকের পর শক পেতে পেতে বোধহয় ফিউজই উড়ে যাবার উপক্রম হয় তার।
________________________

অতীতের পাতা বন্ধ করে খানিকবাদেই হ্যাংলা-পাতলা রাতুল নামক ছেলেটা সাথে তাদেরই দলের আরোও একটি লোক বন্দী অবস্থায় তমাকে নিয়ে হাজির হলো তমা ক্লান্ত চোখে তার অন্বিপুর মুখপানে তাকালো। মুহূর্তেই হাসি ফুটে উঠলো তার অস্থিরতা ভরা চোখমুখে।
তমাকে মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখে মুখ চেপে চাপা আর্তনাদ করলো নিশান্ত। ভুলবশত তার হাত লেগে পরে গেলো বেঁতের তৈরি একটি বেত। পেছন থেকে কোনো অজানা শব্দের আগমনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো সকলেই। নিশান্তকে এই সময় এই জায়গায় আবিষ্কার করে বিস্ময়ে আনমনেই অন্বিতা বললো,

—- নিশান্ত! আপনি এখানে?

ঠিক এই ধরণেরই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো উৎপলের দল। উৎপল চোখের ইশারায় নিশান্তের গলায় ছুড়ি চেপে ধরতে বলা মাত্রই এক ছুটে নিশান্তের গলায় ছুড়ি চেপে ধরে অন্বিতার দিকে তাকালো মোস্তাক। নিশান্ত চমকে গিয়ে ভড়কে গেলো। অন্বিতার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট! উৎপল চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় থেকেই এক বিশ্রী হাসিতে ফেটে পড়লো। অন্বিতাকে ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো,

—- কেয়া ম্যাডাম জি! আব কেয়া কারেংগে আপ? এই মাইয়াডা আর ওই পোলাডারে জীবিত অবস্থায় চাইলে এক্ষুনি মালপত্র বাইর করেন, নয়তো নিজেই ধরা দেন। আপনারে বেচলে আরো ঢেড় লাভ হইবো হামার।

অন্বিতা ঘৃণ্যিত চোখে তাকালো উৎপলের দিকে। নিশান্তের মাথাটা ফাটিয়ে দুভাগ করে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে তার। কে বলেছিলো তাকে এই জায়গায় আসতে, এসেছেই যখন আড়ালেই থাকতো৷ এভাবে ধরা দিয়ে নিজেদেরও ফাঁসিয়ে দেওয়ার মানে কি? নিশান্ত বুঝলো বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছে তার। এখান থেকে এক চুল পরিমাণ নড়াচড়া করলেই গালায় চেপে রাখা ছুড়িটা যে তার ধর থেকে মাথাটা আলাদা করে দিতে পারে সেই অসম্ভব তেতো সত্যটা বেশ উপলব্ধি করতে পারছে সে। তবে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চুপ থাকলে চলবে না তার। যতোই মারামারি নামক বিশ্রী কারাবার থেকে এতোদিন লেজ গুটিয়ে থাকুক আজ আর লেজ গুটিয়ে পালালে চলবে না।

অন্বিতা পড়লো মহাবিপদে। গুলি চালিয়ে প্রত্যেকের খুলি উড়িয়ে দেবার মতো উপায় ও নেই হাতে। মনে মনে নিজেকে শক্ত করলো সে। এই মুহুর্তে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় নেই। নিজেকে উৎপলদের হাতে ছেড়ে দিলো হয়তো বা বেঁচে ফেরা যাবে কিন্তু তা যদি না করে তবে দু দুটো প্রাণ অযাচিত ভাবে মারা যাবে। নিজের সিদ্ধান্ত ধার্য্য করে নড়েচড়ে দাঁড়ালো অন্বিতা। বুক ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস টেনে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে কানে এলো কারোও তীব্র আর্তনাদ।

ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মোস্তাক।
নিশান্তের হাতে রক্তে মাখা ছুড়ি। চোখমুখ হিংস্রতা কম ভয়ের ছাপ বেশি। হবেই বা না কেন? যে ছেলে সামান্য পিঁপড়ে মারতে পারবেনা বলে রাস্তায় লাফিয়ে চলে সে কিনা মানুষের শরীর থেকে রক্ত ঝড়াচ্ছে। ব্যাপারটা অসম্ভব প্রায় হলেও সম্ভবপর করেছে নিশান্ত। অন্বিতা অবাক চোখে তাকালো। মুহুর্তেই হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে। অন্বিতা নিচে পড়ে থাকা একটা রড হাতে তুলে নিলো। ইচ্ছেমতো রাতুল-উৎপল ও মোস্তাককে কেলিয়ে রড টা ফেলে দিলো হাত থেকে। তমা ভয়ে আঁতকে উঠছিলো এসব দেখতে দেখতে। অন্বিতা চোখের পলক ফেলে তাকে আস্বস্ত করলো। চোখের পলকে তাকে কোলে উঠিয়ে নিশান্তের নিকটে এগিয়ে গেলো সে। নিশান্তকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো অন্বিতা। নিশান্তের হাত থেকে ছুড়িটা ফেলে দিয়ে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে ঝাঁকালো সে। নিশান্ত বিস্ময় ফেলে চমকে তাকাতেই অন্বিতা তার হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে বললো,

—- কি হলো এখনোও দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেনো? চলুন!

বলেই নিশান্তকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলো অন্বিতা। নিশান্ত বোকা চোখে এক দৃষ্টিতে অন্বিতাকে দেখতে দেখতে তার সাথে তাল মিলিয়েই এগোতে লাগলো।
রোড সাইডে বাইকের পাশে এসে তবে নিশান্তের হাত ছেড়ে দাঁড়ালো অন্বিতা। তমাকে কোল থেকে নামিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নিশান্তের দিকে আঙুল তুলে চেয়ে বললো,

—- এইযে মি. খারুশ, ওভার ব্রিলিয়ান্ট নিশান্ত খান! আপনি আমার পিছু নিয়ে এসেছেন কেনো বলুন তো?

অন্বিতার কথায় ভ্রু কুঁচকালো নিশান্ত। নামের বিকৃতি করায় প্রতিবাদ স্বরূপ বললো,

—- ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার নাম নিশান্ত খান নয়। আর আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন, আপনি একটা মেয়ে হয়ে মাঝরাতে এরকম গেট আপ নিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে বাড়ি থেকে বেড়োলে তা দেখেই আপনাকে কেই বা সন্দেহ না করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতো বলতে পারেন?

অন্বিতা থতমত খেয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বললো,

—- দে..দেখুন আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বের হইনি। আফটার অল আমার প্রাণপ্রিয় তমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কেউ রাস্তার মোড় থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে এটা জানার পরও কি আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতাম? অবশ্যই না! সেই জন্যেই তমাকে ফেরাতে এই উদ্ভট ছদ্মবেশ। যদিও আমায় বেশ মানায় সব কিছুতেই তবু আমি ভাও খাই না বুঝেছেন?

—- ওয়েট ওয়েট ভাও টা আবার কি?

অন্বিতা বিস্ময় মাখা চোখে তাকালো, মুখ বাঁকিয়ে বললো,

—- হা? আপনি ভাও মানে কি তাও জানেন না? ইশস কি শিখলেন বলুন তো জীবনে? নূহাকে আস্ক করবেন, দেখবেন ওই টুকুনি মেয়েও ভাও খাওয়া কাকে বলে সুন্দর মতো বিশ্লেষণ করে আপনার মাথায় ঢুকিয়ে দেবে। কি রে তমা তুই বুঝিস তো ভাও মানে কি?

তমা মুখে দীর্ঘ হাসির রেশ ফুটিয়ে তুলে বললো,

—- হ্যা! তানি তো, তাও মানে তাও!

নিশান্ত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। অন্বিতা মাথায় চুলকে মুখে জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো,

—- এইতো দেখলেন তমাও বোঝে শুধু আপনিই বুঝেন না। যাজ্ঞে এখন বাসায় চলুন অনেক রাত হলো। ভোরের সূর্য উদয় হলো বলে….

নিশান্ত অন্বিতাকে কথার মাঝে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলো। ডান সাইডের ভ্রু উঁচু করে বললো,

—- বাড়ি যাওয়া হবে আগে আমার সব প্রশ্নের জবাব দিন। আপনি বাইক চালাতে পারেন, আবার ক্যারাটে ট্রিকসও জানেন, আর তমাকে যে এরাই কিডন্যাপ করেছে তা কোনো পুলিশের সাহায্য ছাড়াই আপনি জানলেন কিভাবে?

অন্বিতা ফিক করে হেসে ফেললো। জ্যাকেটের হুডি নামিয়ে খোপা করে রাখা লম্বা চুলগুলো ঠিক করতে কর‍তে বললো,

—- খুবই সহজ হিসেব, ফার্স্টলি বাইক চালাতে পারাটা আহামরি তেমন কিছুই না৷ শখের বসে আব্বুর থেকেই ট্রেনিং নিয়ে শিখেছি, দেন ক্যারাটের কথায় আসা যাক। আমি ক্যারাটের প্রত্যেকটা ট্রেকসই ভালোভাবে না জানলেও গুটিকয়েক এপ্লাই করতে পারি। গ্রানফা একটা সময় শিখিয়েছিলো আমায়। আবার নিজের দাদু ভাববেন না, আমি যেই সমিতিতে গান শেখাই তার ওউনার গ্রানি আর গ্রানফা। তবে এই গত বছরেই স্ট্রোক করে গত হয়েছেন তিনি। তারপর থেকে গ্রানিই সবটা একা হাতে সামলায়, আমিও সঙ্গ দেই যতোটা পারি।

এতোটুকু বলে থামলো অন্বিতা। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বলতে শুরু করলো,

—- আর যেন কি আস্ক করলেন? ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে আমি কীভাবে জানলাম তমাকে উৎপলের দলই এখানে তুলে এনেছে তাইতো? দেন শুনুন, এইযে ভূরি ওয়ালা উৎপলকে দেখলেন, এই লোকটা অনেক আগে থেকেই এসব শিশু কিডন্যাপিং, শিশু পাচার, নারীদের নিয়ে ব্যবসা এসবের সাথে জড়িত ছিলো। যদিও কেউ তেমন তার ব্যাপারে জানতো না তবে আমি জানতাম ভালো মতোই। সমাজ নিয়ে গবেষণার দরুন বেশকিছু খবরই জানা আমার। এই শহরে এরকম একটা কাজ যে উৎপলের দল ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না তা জেনেই তাদের ডেড়ায় চলে আসি আমি। পুলিশ কিন্তু তাদের খুঁজছে, তবে পুলিশদের সাথে করে আনতে গেলে সময় লাগতো বেশি, সাথে তমাকে হারানোর ভয়। সব মিলিয়ে একাই তাকে উদ্ধার করতে আসি আমি। অবশ্য পুলিশদের ব্যাপারটা জানিয়ে দিয়েছি আমি। তারা এসে ওদের এরেস্ট কর নিয়ে যাবে চিন্তা করবেন না।

অন্বিতার কথার মাঝেই সাদা গাড়ির ওপরে রেড হুইসেল যুক্ত বাল্ব থেকে আলো ছড়াতে ছড়াতে এসে থামলো বিডি পুলিশ। অন্বিতা তাদের দেখে মুচকি হেসে বললো,

—- এই দেখুন, চলে এসেছে বিডি পুলিশ! দেখলেন কতোটা লেইট করলো! এতোক্ষণে তমাকে ভ্যানিশ করে ফেলতো ওই খচ্চরের দল।

অন্বিতার কথায় ভয়ে সিটিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে ধরলো তমা। অন্বিতা ফিক করে হেসে অভয় দিয়ে তমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

—- আরে পাগলি, এখন তুই সেইফ। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।

তমা মুচকি হাসলো। নিশান্ত সবটা শুনে অবাক হয়ে আবারও প্রশ্ন ছুড়লো,

—- আচ্ছা সবই বুঝলাম এখন এটা বলুন আপনি গান পেলেন কোথায় থেকে? আপনি আবার পলিটিক্সও করেন নাকি?

নিশান্তের প্রশ্নে হু হা করে হেসে ফেললো অন্বিতা। প্যান্টের পকেট থেকে বন্দুকটা বের করে নিশান্তের চোখের সামনে নাচিয়ে বলে উঠলো,

—- এটা? হেহেহে! আরে এটা তো আনন্দর খেলনা পিস্তল! আমি জাস্ট ভয় দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম, কেনো বলুন তো, আপনার লাগবে নাকি? লাগলে বলবেন। ভাইয়ের কাছে এরকম আরোও বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল আছে। সো নো টেনশন!
.
.
.
.
চলবে…………….💕

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here