এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ১১

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-১১♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

ভয়ে থরথর করে কাঁপছে অন্বিতার পুরো শরীর। সাথে বাড়ছে হৃদপিন্ডের ডিবডিবে আওয়াজ। দেয়ালের সাথে সিটিয়ে ক্রমান্বয়ে গরম গরম নিশ্বাস ত্যাগ করে চলেছে সে। মুখ দিয়ে কোনো ধ্বনি নিসৃত করবার মতোও জো নেই তার। শুধুমাত্র ছটফট করতে করতে চাপা আর্তনাদই সঙ্গ দিয়েছে তাকে।

অন্বিতার এমন রুহু কাঁপা-কাঁপি টাইপ অবস্থা দেখে ঠান্ডা হবার বদলে নিশান্তের চোখের দৃষ্টি হয়েছে তীক্ষ্মতর। দু হাতে অন্বিতার গলা চেপে ধরে রেখেছে সে। তার ইচ্ছে হচ্ছে একেবারে মেয়েটাকে গলা টিপে মেরেই ফেলতে তবে মনের কোথাও এক ছটাক পরিমাণ হলেও বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে কেনো হচ্ছে তা জানা নেই নিশান্তের। হয়তো বা মনুষ্যত্বের তাগিদে নতুবা অন্যকিছু!

কিছুক্ষণ আগে অন্বিতার নিজেকে ভেঙিয়ে হাসা নিয়ে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলো নিশান্ত। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এক পর্যায়ে দেয়ালের সাথে তার দু বাহু চেপে ধরে সে। নিশান্তকে নিজের ওপর এভাবে আক্রমণাত্মক ভাবে হামলা করতে দেখায় ভয়ে চমকে ওঠে অন্বিতা। মনে মনে ভাবতে থাকে “এইরে তবে কি ব্যাটায় জেনে গেলো যে সিগারেট খাওয়ার নিউজটার প্রচারক আমিই!” তবে সাহস করে পাল্টা প্রশ্ন করে ওঠা হয়নি তার। নিশান্তের রাগান্বিত চেহারা দেখেই আত্মা কেঁপে উঠে তার, মুখ ফুটে আর বলা হয়ে উঠে নি কিছুই।

নিশান্ত নিজেকে সামলে নেয়। রাগে দুঃখে অন্বিতাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে নিজের চুল টানতে ব্যস্ত হয়ে পরে। নিশান্তের এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি দেখে কপাল কুঁচকায় অন্বিতা, শুধুমাত্র এরকম কমন একটা সত্যি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এতোটা রিয়াক্ট কেনো করছে নিশান্ত ভেবে পায় না সে। ভাবনার মাঝেই অন্বিতার চোখ যায় নিশান্তের থরথর করে কাঁপতে থাকা ঠোঁটজোড়ায়। নিশান্তের ঠোঁট দেখে মনে আবারও এক ফালি প্রশ্ন এসে হাতুড়ি পেটাতে শুরু করে তার। নিজের মনের ভেতরে একনাগাড়ে তবলা বাজিয়ে চলা প্রশ্নগুলো কিউরিসিটির দরুন আনমনেই আওড়ে বসে সে,

—- আচ্ছা আপনি কি লিপস্টিক ইউজ করেন?

অন্বিতার এমন আহাম্মক টাইপ প্রশ্নে চুল টানা ছেড়ে দিয়ে বিস্ময়ে চোখ তুলে তাকায় নিশান্ত। অন্বিতা নিশান্তের জবাবের অপেক্ষা না করেই দু ধাপ এগিয়ে সোজা নিশান্তের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্ক্রাব করতে শুরু করে। এমন পাগলাটে টাইপ আকস্মিক ঘটনার চোখ বড়বড় করে ফেলে নিশান্ত৷ অস্ফুট কন্ঠস্বরে অন্বিতাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে দুহাত দূরত্ব রেখে এক লাফে সরে এসে সে বলে,

—- একি করছেন আপনি? আমার ঠোঁটে হাত দিয়ে ঘষামাজা শুরু করেছেন কেনো? আমার ঠোঁট কে কি থালাবাসন ভেবেছেন?

অন্বিতা নিশান্তের বলা বাক্যটা এক কান দিয়ে ঢুকালেও অপর কান দিয়ে বের করে দেয় খুব সহজেই। কপাল কুঁচকে ঠোঁট উল্টায় সে। আঙুলে লিপস্টিকের কোনো মার্ক দেখতে না পেয়ে চিন্তিত গলায় আবারও প্রশ্ন করে সে,

—- কি হলো বলুন, পারমানেন্ট টাইপ লিপস্টিক ইউজ করেন নাকি যে ঘষার পরও উঠলো না!

বিস্ময় এবার আকাশ ছুঁয়ে ফেলে নিশান্তের। অন্বিতাকে সেই মুহূর্তে বদ্ধ উন্মাদ বলে মনে হয় তার। উদ্ভট সব প্রশ্নে নিজেই নিজের ঠোঁটে হাত বুলায় সে। কোনো ভিন্ন উপলব্ধি না আসায় পাল্টা প্রশ্ন করে,

—- আপনি কি এবার সত্যিই পাগল হয়ে গেলেন? আমি ছেলে হয়ে লিপস্টিক লাগাতে যাবো ভাবলেন কি করে আপনি?

অন্বিতার তাতে কোনো ভাবাবেগ হলো না। ডিটেকটিভ দের মতো ভ্রু নাচিয়ে সে বলে,

—- ছেলে হয়ে সিগারেট খেতে পারেন আর সিগারেট খেয়ে নিজের কালচে ঠোঁট লিপস্টিকের আড়ালে ঢাকতে পারবেন না তা তো অসম্ভব কিছু নয়! এতো খুবই সহজ হিসেব!

অন্বিতার মুখে সিগারেট শব্দটা শুনে কপাল কুঁচকে আসে নিশান্তের। সন্দেহের চোখ অন্বিতার মুখপানে তাকায় সে। বাম সাইডের ভ্রু উঁচু করে বলে,

—- ওয়েট ওয়েট, আপনি কি করে জানলেন আমি সিগারেট খেয়ে ঠোঁট কালো বানিয়ে ফেলেছি?

এক মুহুর্তের জন্য অন্বিতা ভুলেই গিয়েছিলো যে স্বয়ং বাঘ তার সামনে, আর সে তার তুচ্ছতম শিকার মাত্র! সেই ভাবনা সাইডে রেখেই মুখে হাসির রেশ টেনে বলে

—- যাক বাবা! আজই তো দেখলাম আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট ফুঁকছেন! তো হলো না সিগারেট খেয়ে ঠোঁট কালো? কিন্তু আপনার ঠোঁট তো গোলাপি, দ্যট মিনস আপনি লিপস্টিক দিয়েই নিজের কালচে ঠোঁট কভার করে রেখেছেন। সিম্পল!

নিশান্ত বুঝে ফেলে এই বিশ্রী মিথ্যে অপবাদের শেকড় অন্বিতাই। সে সাংবাদিক না হয়েই এই ভুয়া নিউজ কাগজে না ছেপে সোজা তার মায়ের কাছে এসে ঝেড়েছে।
সবটা বুঝতে আর নিজের মধ্যে থাকে না নিশান্ত। রাগ সাত-আসমান ছুঁতেই দুহাতে অন্বিতার গলা টিপে ধরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফেলে তার। চোখ থেকে বিনা বিস্ফোরণেই বিস্ফোরিত হয় রক্তিম আভা!

বর্তমানে অন্বিতা নিশান্তের হাত থেকে ছাড়া পাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তবে তাতে লাভবান হচ্ছে না কোনোমতেই। নিশান্ত এতোটা ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে তা আগে জানা ছিলো না অন্বিতার। নিজের বোকামির জন্য নিজের ওপরই চরম বিরক্ত সে।
ঢোক গিলতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। তবে তাতে বিন্দুমাত্রও দয়া হচ্ছে না নিশান্তের। সে চোখ দিয়ে লাভার বর্ষণ শুরু করেছে আজ, সাথে পণ করেছে অন্বিতাকে মেরে ফেলে তবেই ক্ষান্ত হবে সে।

একটা সময় এসে অন্বিতার চোখ দুটো বুঝে আসতে নিলেই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে ফেললো নিশান্ত। ছাড়া পেতেই জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে কাশতে শুরু করলো অন্বিতা। নিশান্ত দুহাতের মুঠো শক্ত করে চেপে ধরে নিজের ভেতরের রাগের ফোয়ারা দমাবার চেষ্টা চালাতে লাগলো। বেশকিছুক্ষণ সেভাবেই চুপ থেকে বেড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা অন্বিতার দিকে তা তাকিয়েই এগিয়ে দিলো সে। নিশান্তের হাত থেকে এক প্রকার ছিনিয়েই পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে সবটা পান করে গলা ভেজালো অন্বিতা। আগের থেকে বেটার ফিল হতেই আবারও বার কয়েক কেশে নিতে অস্ফুট কন্ঠস্বরে সে বললো,

—- আপনি মানুষ? এভাবে কেউ কাউকে গলা টিপে ধরে? আর একটু হলে তো মরেই যেতাম আমি!

অন্বিতার কথায় নিশান্তের কোনো ভাবাবেগ হলো না। বরং উল্টো দিকে ফিরে থেকেই কর্কশ গলায় সে বললো,

—- তাহলে মরেই যেতেন, বেঁচে যেতাম আমি! শুধুমাত্র খুন করা পাপ বিধায় মারতে পারলাম না আপনাকে। নয়তো এতোক্ষণে ওপারে পাঠিয়ে দিতে দুবার ভাবতাম না আমি। ইউ ইডিয়ট! কোনো কিছু সম্পূর্ণভাবে না জেনে মিথ্যে অভিযোগ দিলেন কিভাবে আমার ওপর? আমি সিগারেট খাই এটা কেনো বলেছেন আপনি আমার মা কে? বলুন!

অন্বিতা চমকে উঠলো। চোখেমুখে বিস্ময়ের রেশ ফুটিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,

—- তারমানে কি বুঝাতে চাচ্ছেন যে আপনি সিগারেট খান না?

—- এটা বুঝানোর কাছে? আমি সিগারেট খাইনা এটা শুধু আমার পরিবার নয়, এই এলাকার প্রত্যেকটা মানুষ জানে। সেখানে দু দিনের আপনি এসে আমায় নেশাখোর বানিয়ে দিলেন?

অন্বিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। অবাক চোখে চেয়ে আবারও প্রশ্ন ছুড়লো,

—- তাহলে আমি যে আজকে দেখলাম আপনি হাতে জলন্ত সিগারেট ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন!

নিশান্ত ভ্রু কুঁচকালো, অন্বিতার বিপরীতে বললো,

—- সো হোয়াট? সিগারেট হাতে ধরে রেখেছি মানেই যে তাতে টান মেরেছি এরকমটা কি কোনো ডিকশিনারীতে লিখা আছে? ডাফার! সানির সিগারেট ছিলো ওটা। আমায় ধরতে বলে নিজের ওয়ালেট আনতে গিয়েছিল ও।

সবটা শুনে অন্বিতা চোখ বড়বড় করে ফেললো। হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,

—- এইরে গালতিছে মিসটেইক হো গেয়া! স..স…সরি….!

অন্বিতার সরি’র বিনিময়ে তাচ্ছিল্যে ভরা হাসি হাসলো নিশান্ত। পকেটে দুহাত গুঁজে স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে কপালে পড়ে থাকে এলোমেলো চুলগুলো ঝাঁকালো সে। ভ্রু উঁচু করে বললো,

—- সরি! বাট সরি নামক দয়াময় শব্দটা যে নিশান্তের ডায়েরিতে নেই মিস অন্বিতা! ভুল যখন করেছেন শাস্তি তো পেতেই হবে। আপাতত চলুন, যার জন্য আমার গায়ে আম্মু হাত তুলেছে সেই সমীকরণে সমাধান করবেন চলুন!

বিনিময়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো অন্বিতা! তা বিন্দুমাত্রও নাড়া দিতে পারলো না নিশান্তের কঠোর মন! নিশান্ত ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুললো, “ফলো মি মিস অন্বিতা!” বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে এগিয়ে চললো সে।

_______________________

ড্রয়িং রুমে গম্ভীর মুখ করে টেবিলে স্থির দৃষ্টি ফেলে বসে রয়েছেন আফসানা বেগম। পাশে মাথা নিচু করে নূহাকে কোলে নিয়ে বসে আছে অন্বিতা। তবে নিশান্ত তাদের পাশে নেই। সোফার থেকে কয়েকধাপ পিছিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নীরবে ভ্রু কুঁচকে ফোনে স্ক্রল করে চলেছে সে।

বেশকিছুক্ষণ নীরবতার পর্দা ভেদ করে চোখের চিকন ফ্রেমের চশনাটা কাচের টেবিলে রাখলেন আফসানা বেগম। একবার নিজের ছেলের দিকে অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে অন্বিতার মুখে দৃষ্টি ফেললেন তিনি। পরিস্থিতির প্রতিকূলে থেকেই তিনি বলা শুরু করলেন,

—- আমি যা বুঝলাম তাতে এখানে কারোর ই কোনো দোষ নেই। দোষটা ছিলো চোখের দেখায়! অন্বিতার জায়গায় যে কেউ কেনো, আমি থাকলেও একই ভুল করে বসতাম। অন্বিতা নাহয় যা চোখে দেখেছে তাই আমায় দেখিয়ে বুঝিয়েছে, তবে মেইন ভুলটা করেছি আমি। আমিই নিশান্তের কোনো কথাই শুনতে চাইনি! রাগের বশে ওর ওপর হাতও উঠিয়ে ফেলেছি আমি।

আফসানা বেগমের কথার বিনময়ে নিচু করে রাখা মাথাটা আরো খানিকটা নিচু করলো অন্বিতা! নিশান্ত এখনোও ভাবলেশহীন! ভাবখানা তারে এমন যেনো পৃথিবীর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই সে ফোনের মধ্যে করছে এখন। যার দরুন আশেপাশে কোনো কথাই তার কান অবধি পৌঁছোতে পারছে না কোনোমতেই।

আফসানা বেগম বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। নিশান্তের দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে বললেন,

—- নিশান্ত এদিকে আয়!

নিশান্ত মায়ের ডাকে ফিরেও তাকালো না। অভিমানে মুখ ফিরিয়ে এক দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনেই চেয়ে রইলো সে।
ভাইকে অভিমানের পাহাড় বানিয়ে রেখে তার শীর্ষে উঠে বসে থাকতে দেখে ঠোঁট উল্টালো নূহা। আধো আধো বুলি আওড়ে বললো,

—- ভাইয়ুউউ…! ও ভাইয়ুউউ…! আমি আর মজা করবো না তোমার সাথে, আমাদের কাছে আসো।

বোনের ডাকেও কোনো হুশ না আসায় চোখ দুটো বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস টানলেন আফসানা বেগম। নিজের ছেলেকে অবিশ্বাস করায় নিজের ওপরই চরম রেগে রয়েছেন তিনি। অন্বিতা ঠোঁট ঠোঁট চেপে ধরে কিছু একটা ভাবলো৷ মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসায় নূহার কানে কানে ফিসফিসিয়ে কিছু বলতেই মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো নূহা। ভাইয়ের দিকে গোলগোল চোখে তাকিয়ে কাদো কাদো গলায় সে বললো,

—- ভাইয়ুউউ! উহুহুহু! পা মোচকে গেছে আমার….কোলে নাও ভাইয়ুউ..!

বোনের পা মোচকে গিয়েছে কথাটা কান অবধি পৌঁছোতেই চমকে উঠলো নিশান্ত। ফোনটা চট করে পকেটে ঢুকিয়ে এক ছুটে বোনের কাছে এসে তার ছোট্ট ছোট্ট পা দুটো উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে চিন্তিত গলায় সে বললো,

—- কোথায় লেগেছে বোন? খুব বেশি ব্যাথা করছে কি?

বিনিময়ে নূহা ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে তুললো। সোফা থেকে নেমে এক লাফে ভাইয়ের কোলে উঠে পড়ে বললো,

—- হেহে! দেখেছো আম্মুউ ভাইয়ুর রাগ কি সুন্দর ভ্যানিশ হয়ে গেলো!

আফসানা বেগম ছলছল চোখে তাকালেন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

—- মা’য়ের ওপর রাগ করে কতোক্ষণ থাকবি নিশান্ত?

নিশান্ত জানে এখন আর অভিমান দেখিয়ে পাড় পাবে না। তাই নূহাকে কোলে রেখেই মুচকি হাসলো সে। মায়ের আঁচল ধরে কোলে মাথা দিয়ে নিশান্ত বললো,

—- আম্মু মাঝেমাঝে আমি ভাবি তুমি বাহুবালী নাকি দেব সিনহা! উফফফ এক একটা মাইর তো মাইর না যেনো বাহুবালীর প্রহার!

আফসানা বেগম সহ সকলেই অবাক চোখে তাকালো। মুহুর্তেই হাসিতে ফেটে পড়লো সকলে। অন্বিতা আড়ালে চোখের কোণে জমানো জলগুলো মুছে নিলো। মা-ছেলের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে প্রশান্তির হাসি হাসলো সেও।

____________________

রাত দুটো বেজে পনেরো মিনিটের ঘরে ঘন্টা ও মিনিটের কাটার বিচরণ। ফোনে মেসেজের টোন বেজে উঠতেই চমকে হাত থেকে কলম টেবিলে রেখে তাকালো অন্বিতা। প্যাটার্ন টেনে লক খুলতেই চোখ বড়বড় হয়ে এলো তার। কি করে ভেবে না পেয়ে কিছুক্ষণ উত্তেজনায় ছটফট করতে করতে আর কোনো উপায় না পেয়েই উঠে দাঁড়ালো সে। কাবার্ড থেকে হুডিওয়ালা জ্যাকেট সাথে জিন্স-কেটস পরে নিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব আড়াল করে জানালা দিয়ে পাইপ বেয়ে বাগানে নেমে পড়লো সে।

ঘরে টেবিল ল্যাম্প জালিয়ে ভার্সিটির ড্রোন বানানোর প্রজেক্টে মনোযোগ দিয়ে সুক্ষ্ম চোখে পজিটিভ নেগেটিভ তার নিয়ে গবেষণা করছিলো নিশান্ত। হঠাৎ বাগান থেকে কারো লাফিয়ে পড়ার আওয়াজ কানে আসতেই সচেতন চোখে তাকালো সে। “বাসায় কোনো চোর-ডাকাত এলো না তো?” প্রশ্নটা নিজ মনে আলোড়নের সৃষ্টি করতেই প্রজেক্ট ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি ঝুঁকি মারতে লেগে পড়লো। হুডি ওয়ালা জ্যাকেট পরে কোনো নারী প্রতিমা কে মাঝরাতে লুকিয়ে লুকিয়ে গেইট থেকে বেরোতে দেখেই চোখ বড়বড় করে ফেললো নিশান্ত।

এতো রাতে তাদের বাসা থেকে কেউ লুকিয়ে চুরিয়ে বেড়োবে ব্যাপারটা অসম্ভব প্রায়! কে এই মেয়ে? তাদের বাসায় তো কোনো এডাল্ট মেয়ে নেই! প্রশ্নটা মাথায় আঘাত হানতেই হঠাৎ অন্বিতার কথা মাথায় এলো তার। এক মুহুর্তের জন্য অন্বিতার কথা মাথা থেকেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো তার। ওপরতলা ভাড়া দেয়েছে কথাটা এতো দেড়িতে মাথায় আসায় নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হলো সে। তবে দেড়ি করলে চলবে না। এতো রাতে কোনো মেয়ে এরকম গেট আপ নিয়ে ভালো উদ্দেশ্যে যে বাড়ি থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়োবে না তা স্পষ্ট! সেই কথার রেশ ধরেই অন্বিতার পিছু নিলো নিশান্ত। হেলমেট পড়ে নিজেকে আড়াল করে স্লোলি বাইক চালিয়ে অন্বিতার থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে তাকে ফলো করতে লাগলো সে।
.
.
.
চলবে……………….💕

(রি-চেইক না করায় বানান ভুল থাকতে পারে অনেক। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here