এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ১৩+১৪

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_১৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“আম্মু…..আমি আর রূপ আগামী মাসেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। মাস তো প্রায় শেষের দিকে। আমার বউ তোমাদের বাড়িতে সেইফ না। তাই বাধ্য হচ্ছি।”

ফুফুমনি উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,,,,,

—-“এসব তুমি কি বলছ মুহিত? মাথা খারাপ হয়েছে তোমার?”

মুহিত ভাইয়া চোখ, মুখ লাল করে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—-“হুম আম্মু এটাই ফাইনাল। আগামী মাসেই আমরা এই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি।”

ফুফৃমনি মুহিত ভাইয়াকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,

—-“তুমি আমার ছেলে মুহিত। মুখে আটকাচ্ছে না কথাটা বলতে? বিবেকে ও বাঁধছে না?”

মুহিত ভাইয়া চোখ দুটো বন্ধ করে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আটকাচ্ছে না আম্মু।”

ফুফুমনি আমার দিকে আঙ্গুল তুলে মুহিত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,

—-“ঐ মেয়েটার জন্য তুমি আমাদের ছেড়ে যাবে মুহিত? আমাদের চেয়ে ঐ মেয়েটা তোমার কাছে খুব আপন হয়ে গেলো? আমি তোমার মা মুহিত। তুমি মা কে ছেড়ে চলে যাবে?”

মুহিত ভাইয়া অশ্রুসিক্ত চোখে ফুফুমনির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“মা তো সে ই হয় যে সন্তানের কষ্ট বুঝে, সন্তানকে আগলে রাখে, সন্তানকে সব প্রতিকূল অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে রাখে, বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে, কোনো স্বার্থ ছাড়াই সন্তানের জন্য পুরো পৃথিবীর সাথে লড়ে যায়, সন্তানরা কিছু বলার আগেই মা রা বুঝে যায়, আদর, ভালোবাসার কোনো কমতি রাখে না। সন্তানের দরদ বুঝে, বুকের সবটা জুড়ে সন্তানকে লালন করে, সন্তানের গাঁয়ে কোনো আঁচ আসতে দেয় না। সন্তানের গাঁয়ে আঘাত আসার আগেই মা রা ঝাপটে পড়ে সন্তানকে বাঁচাতে। মা হলো পৃথিবীর সবচে শক্তিশালী যোদ্ধা। কেবল মা ই পারে একটা সন্তানকে স্ট্রাগল করে একজন পরিপূর্ণ মানুষ তৈরী করতে। সন্তানের কষ্টে উনারা নিজে কষ্ট পায়, এক্টা আলাদা টান থাকে সন্তানের প্রতি। যে টান টা পৃথিবীর অন্য কোনো সম্পর্কে দেখা যায় না। আমি স্যালুট করি সে সব মা দের। মন থেকে শ্রদ্ধা করি এমনকি ভক্তি করি।”

মুহিত ভাইয়া কিছুটা থেমে আবারো তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,,

—–“আমি তোমার মধ্যে মা এর কোনো গুন ই খুঁজে পাই নি আম্মু। হয়তো কখনো পাবো না। কিছু কিছু অমিমাংসিত প্রশ্নের উওর আমার কিছুটা হলে ও জানা হয়ে গেছে। আমি তোমাদের আর জ্বালাতে চাই না। একা বাঁচতে চাই। রূপ আর আমি ছোট্ট এক্টা সংসার করতে চাই। মাঝে মাঝে তোমাদের সাথে দেখা করে যাবো। এতো বছরের সম্পর্ক হয়তো এতো সহজে ভুলতে পারব না। খানিকটা হলে ও পিছুটান থাকবে। তোমরা যদি কিছু মনে না করো তাহলে প্রতি সপ্তাহে এসে তোমাদের দেখে যাবো।”

ফুফুমনির চোখ থেকে টলটল করে পানি পড়ছে। উনি মুহিত ভাইয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুহিত ভাইয়া ও কাঁদছে। আচমকাই পেছন থেকে মৃন্ময় ভাইয়া চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—–“কে কোথায় যাবে? কার যাওয়ার কথা হচ্ছে এখানে?”

মুহিত ভাইয়া ফুফুমনির পাশ কাটিয়ে মৃন্ময় ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“ভাইয়া….. আমি আর রূপ আগামী মাসেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি।”

মৃন্ময় ভাইয়া নাক, মুখ কুঁচকে বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,,

—-“আর ইউ ক্রেইজি মুহিত? কি সব উটকো কথা বার্তা বলছিস? হুট করে এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের মানে কি?”

মুহিত ভাইয়া মলিন কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আমার রূপ এই বাড়িতে সেইফ না ভাইয়া। প্রতি পদে পদে ওকে অপমানিত হতে হয়, অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আজ ও তার বিপরীত হয় নি। সানায়া থেকে শুরু করে সাকিব ভাইয়া সবাই মিলে রূপকে মেরেছে, বকেছে। আমার রূপকে খাবার পর্যন্ত দেয় নি। ভিজা জামা কাপড় নিয়ে সেন্সলেস অবস্থায় বেডের উপর পড়ে ছিলো। ওর চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আমি ওকে সুখ দিতে গিয়ে অসুস্থ করে দিচ্ছি। দিন দিন হয়তো ওদের অত্যাচার আরো বাড়বে। রূপকে হারানোর আগেই আমি পরিস্থিতি কন্ট্রোলে আনতে চাই। প্লিজ তোরা কেউ আমাকে আটকাতে আসিস না। আমি কিন্তু কারো কথাই শুনব না।”

মৃন্ময় ভাইয়া অশ্রুসিক্ত চোখে ফুফুমনি, সানায়া আপু আর সোহেলী আন্টির দিকে তাকিয়ে মুহিত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“চলে যা তোরা। নিজেদের মতো করে বাঁচ। মুক্তভাবে নিশ্বাস নে। আমি প্রতিদিন সময় করে তোদের দেখে আসব। এই বাড়িতে থেকে নিজেদের এই ছোট্ট জীবনটা পিষিয়ে দিস না। নিজেদের সাদা কালো জীকনটাকে রঙ্গিনভাবে গুছিয়ে নে। এই বাড়িতে সব লোভীদের বাস। রক্তের টান এখানে ঠুনকো।”

ফুফুমনি, সোহেলী আন্টি আর সানায়া আপু মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফুফুমনির চোখ থেকে দু, এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে। মা বলে হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। কান্না ও করছে। মায়েদের খুব জ্বালা। সন্তানদের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। তবে সত্যিই যদি ফুফুমনি মা হতো তবে তো ছেলেকে ঝাপটে ধরে আটকে দিতো। কই ফুফুমনি তো কিছু করছে না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই কান্নার মানে কি? লোক দেখানো নাকি মাতৃত্ববোধ থেকে? কিছুই আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

চোখের জল গুলো মুছে মৃন্ময় ভাইয়া মুহিত ভাইয়াকে ক্রস করে বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“রূপ……তুই আমার ছোট বোন। ছোট বোনের মতো ভালোবাসি তোকে। সবসময় বড় ভাই হয়ে তোর পাশে থাকব। যেকোনো দরকারে আমাকে পাশে পাবি। তোর জন্য অনেক দোয়া রইল রূপ। মামু বেঁচে থাকলে হয়তো তুই খুব আদরে থাকতি। এতো নির্যাতন সহ্য করতে হতো না। তুই এক্টা সুস্থ, সুন্দর লাইফ ডিজার্ভ করিস রূপ। এই নরক থেকে তুই বের হয়ে যা। মুহিত তোকে এক্টা সুন্দর লাইফ উপহার দিবে। দুজন মিলে খুব সুখে থাক। আমি নিজ হাতে তোদের বিয়ে দিবো।”

আমি মুখ খুলে কিছু বলার আগে মুহিত ভাইয়া বলে উঠল,,,,,

—-“ভাইয়া…..আমরা অনেক আগেই রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে নিয়েছি। এবার শুধু সামাজিক নিয়মে ছোট করে এক্টা বিয়ের প্রোগ্রাম করলেই হবে। নতুন চাকরীটা হয়ে গেলেই সামাজিক নিয়মে বিয়ে করে নিবো। তুই কিন্তু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থাকবি ভাইয়া।”

মৃন্ময় ভাইয়া অভিমানী কন্ঠেে বলল,,,,,,,

—–“খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না? ভাই কে না জানিয়েই বিয়ে করে নিলি?”

মুহিত ভাইয়া মাথাটা নিচু করে অনুতপ্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“স্যরি ভাইয়া। আমি রিস্ক নিতে চাই নি। হুট করেই ডিসিশান টা নেই। তাই তোকে জানানো হয় নি।”

মৃন্ময় ভাইয়া এক্টা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,,,,,,

—–“কবে যাবি নতুন বাড়িতে?”

—-“আগামী মাসে!”

—-“বাড়ি খুঁজেছিস?”

—-“না। তবে কাল থেকে খুঁজব।”

—-“যেখানেই বাড়ি নিস এলাকাটা যেনো ভালো হয়। কারণ, তুই থাকবি সারাক্ষন অফিসে, রূপ থাকবে বাড়িতে। বুঝতেই তো পারছিস দেশের অবস্থা।”

—-“হুম। এজন্যই তো অনেকটা সময় লাগবে বাড়ি খুঁজতে।”

মৃন্ময় ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,

—-“রূপ…..তোর ফ্রেন্ড মারু কোথায়?”

আমি ক্ষিদের চোটে কথা বলতে পারছি না। শরীরটা ও কেমন ঝিম মেরে আসছে। মাথাটা ঘুরছে। গাঁ টা ও গরম হয়ে আছে। আমি খুব কষ্টে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,,,,,

—–“মামারু নোয়াখালী ফিরে গেছে ভাইয়া। ওর দাদু মারা গেছে।”

মৃন্ময় ভাইয়া উওেজিত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“কখন গেছে মারু?”

—-“সকালে।”

—-“তোরা একা একা ওকে পাঠিয়ে দিলি? পথে যদি কোনো বিপদ হয়!”

মুহিত ভাইয়া শান্ত কন্ঠে মৃন্ময় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“মারু ঠিকঠাক ভাবেই পৌঁছেছে ভাইয়া। বিকেলে কল করেছিলো আমায়।”

মৃন্ময় ভাইয়া আচমকাই বলে উঠল,,,,,

—-“মারুর ফোন নাম্বারটা দে।”

মুহিত ভাইয়া মৃদু হেসে মৃন্ময় ভাইয়াকে ফোন নম্বরটা গড়গড় করে বলে দিলো। মৃন্ময় ভাইয়ার ঠোঁটে মুচকি হাসি লেগে আছে। ভাই আমার প্রেমে পড়েছে। তা ও আবার আধ পাগল মারুটার। মারুর অনুপস্থিতি মৃন্ময় ভাইয়াকে ব্যাকুল করে তুলছে। উনার ফেইস দেখেই বুঝতে পারছি। খুব খুশি লাগছে। মারু এবার তার মৃন্ময়কে পাবে। আমরা দুই বেস্টু জা হবো। তবে….. একই বাড়িতে থাকতে পারব না।

আচমকাই ফুফুমনি রাগী কন্ঠে মৃন্ময় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“মৃন্ময়….তুই ঐ মেয়ের ফোন নাম্বার দিয়ে কি করবি?”

—-“আম্মু প্লিজ স্টপ। আমি এখন বড় হয়েছি। আমার সব পার্সোনাল ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করতে এসো না। তোমরা প্লিজ এই রুম থেকে বের হও। দিন দিন মন থেকে উঠে যাচ্ছ। নিজেদের দোষেই সন্তানদের কাছে ছোট হচ্ছ।”

ফুফুমনি চোখের পানি ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সাথে সোহেলী আন্টি আর সানায়া আপু ও। সানায়া আপুর দৃষ্টি কঠোর। উনি আমাকে নখে তুলে মারছে। সুযোগ পেলেই আমার সাথে রুড বিহেভ করবে। না হয় আবারো গাঁয়ে হাত তুলবে।

মৃন্ময় ভাইয়া ফোনটা প্যান্টের পকেটে রেখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,

—–“খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড় রূপ। আর হয়তো কিছু দিন পরে বাড়িতে ফিরে তোদের দেখতে পাবো না। খুব খালি খালি লাগবে। পুরো বাড়িটা খাঁ খাঁ করবে। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। তোর জন্য আজ ও পর্যন্ত ভালো কিছু করতে পারলাম না।”

কথাগুলো বলেই মুন্ময় ভাইয়া হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কথা গুলো বলার সময় মৃন্ময় ভাইয়ার গলাটা ধরে আসছিলো। তাই বেশিক্ষন দাঁড়ায় নি। হয়তো কেঁদে দিতো। মুহিত ভাইয়া রুমের দরজা আটকে আমার পাশে বসল। আমার চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুহিত ভাইয়া আমাকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—–“রূপ তোমার গাঁ টা গরম হয়ে আছে। হয়তো জ্বর আসবে।”

—-“কিছু হবে না মুহিত ভাইয়া। এমনিতেই গাঁ গরম হয়ে আছে।”

—-“আমাকে বুঝাতে এসো না রূপ। জামা পাল্টাতে হবে তোমার। ভেজা জামা নিয়ে শুয়ে আছো।”

—-“এখন কটা বাজছে মুহিত ভাইয়া?”

—-“রাত দশটা।”

—-“আমি এতোক্ষন ঘুমিয়েছি? আর দরজাটা কে খুলল? আমি তো দরজায় খিল লাগিয়েছিলাম।”

রূপ ভাইয়া আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,,,,,

—-“ব্যালকনী বেয়ে রুমে ঢুকেছি রূপ। অনেকক্ষন যাবত ডাকার পরে ও তুমি দরজা খুলছিলে না। জানটা বের হয়ে যাচ্ছিলো আমার। বুঝাতে পারব না কতো টা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উপায় বুদ্ধি না পেয়ে ব্যালকনি বেয়ে রুমে ঢুকেছি। তুমি সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলে রূপ। জামাটা ও ভেজা ছিলো।”

—-“জামা তো এতক্ষনে শুকিয়ে যাওয়ার কথা মুহিত ভাইয়া। সানায়া আপু তো সেই সকালে আমাকে ভিজিয়েছিলো।”

মুহিত ভাইয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“এখন শীত কাল রূপ। তাই হয়তো শুকায় নি।”

—-“আমার অনেক ক্ষিদে পেয়েছে মুহিত ভাইয়া।”

মুহিত ভাইয়া চোখের জল ছেড়ে আমাকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,

—–“আ’ম স্যরি রূপ। অনেক আগেই আমাদের এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত ছিলো। তাহলে হয়তো তোমাকে এতো অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো না। আমার ভিতরটা খুব জ্বলছে রূপ। আমি নিতে পারছি না এতো কষ্ট। আমি তোমাকে সুখী করতে পারছি না রূপ। আমি ব্যর্থ। নিজেকে খুব দোষী মনে হচ্ছে। মরে যেতে মন চাইছে। আমরা দুজনই খুব আনলাকী রূপ। খুব নির্মম আমাদের ভাগ্য। উপর ওয়ালা পৃথিবীর সব দুঃখ আর ব্যর্থতা আমাদের ভাগ্যেই চেঁপে দিয়েছে। জানি না উপর ওয়ালা কি চায়। আদৌ আমাদের কপালে সুখ আছে কিনা তা ও জানি না। তবে খুব চাই তোমাকে নিয়ে সুখি হতে। আর পাঁচটা কাপলদের মতো সুখে শান্তিতে সংসার করতে।”

মুহিত ভাইয়া হেচকি তুলে কাঁদছে। আমার ও কান্না আসছে। ক্ষিদের জ্বালায় আমার চোখ থেকে পানি ও পড়ছে না। মুহিত ভাইয়া তাড়াহুড়ো করে আমাকে ছেড়ে রুমের দরজা খুলে দৌঁড়ে নিচে চলে গেলো। আমি বেডে বসে বসে ঢুলছি। শরীরে শক্তি পাচ্ছি না। মুহিত ভাইয়া এখনো চেইন্জ্ঞ ও করে নি। ফ্রেশ ও হয় নি। চোখে, মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। লোকটা আমার জন্য দিন দিন নেতিয়ে পড়ছে। সারা দিন অফিসে খেটে বাড়িতে এসে আমার পিছনে খাঁটতে হয়। শারীরিক, মানসিক দুই দিক থেকেই মুহিত ভাইয়া ভেঙ্গে পড়ছে।

প্রায় দশ মিনিট পর মুহিত ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে এক প্লেইট খাবার নিয়ে রুমে ঢুকল। আধ প্লেইট সাদা ভাত আর এক্টা ওমলেট করা ডিম। মুহিত ভাইয়া ডিমটা মাএ ভেজে এনেছে। তরকারী হয়তো শেষ হয়ে গেছে তাই। মুহিত ভাইয়া আমার পাশে বসে ভাত মেখে ভাতের মাঝখানে ডিম পুরে আমার মুখে লোকমা পুড়ে দিলো। আমি গপাগপ খেয়ে নিচ্ছি। ক্ষিদেয় আমার আত, ভুড়ি জ্বলছে। প্রায় ছয় লোকমায় সম্পূর্ণ ভাত শেষ হয়ে গেলো। আমার আরো খেতে মন চাইছে। আমি পেটে হাত দিয়ে মুখটা কাচু মাচু করে মুহিত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মুহিত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে গলা জড়ানো কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“আরো খাবে রূপ?”

আমি মাথাটা ডানে বামে নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। মুহিত ভাইয়া আমার থেকে চোখ সরিয়ে ভাতের প্লেইটটা ডেস্কের উপর রেখে বলল,,,,,,

—-“এটুকু ভাত ই অবশিষ্ট ছিলো রূপ। আমি দোকান থেকে অন্য কিছু আনছি। তুমি এক্টু বসো।”

মুহিত ভাইয়া বসা থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মুহিত ভাইয়া ও কিছু খায় নি। উনার শুকনো মুখটা দেখেই বুঝতে পারছি। মৃন্ময় ভাইয়া বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে। তাই হয়তো কেউ আমাদের জন্য খাবার রাখে নি। ফুফুমনি কাজটা একদম ঠিক করে নি। আমার জন্য খাবার না রাখলে ও অন্তত মুহিত ভাইয়ার জন্য হলে ও রাখত। আমি না হয় পর, মুহিত ভাইয়া তো উনাদের আপন। কিভাবে পারে উনারা এতো নির্দয় হতে?

যাই হোক, আপাতত নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে। খাবার পেয়েই গপাগপ খেয়ে নিলাম। মুহিত ভাইয়ার পেটের দিকে তাকালাম না। এক তরফা নিজের দিকটাই ভাবলাম। খুব কান্না পাচ্ছে। হাটু গুজে কাঁদছি। আমার তো মা বাবা নেই তাই মনকে শান্তনা দিতে পারি। কিন্তু মুহিত ভাইয়ার তো থেকে ও……

আর কিছু ভাবতে পারছি না। হেচকি তুলে কেঁদে যাচ্ছি। উপর ওয়ালা কি কান্না ছাড়া আমার ভাগ্যে কিছু রাখে নি?
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_১৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

আর কিছু ভাবতে পারছি না। হেচকি তুলে কেঁদে যাচ্ছি। উপর ওয়ালা কি কান্না ছাড়া আমার ভাগ্যে কিছু রাখে নি?

কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ব্যাথা হয়ে গেছে। ফুলে হয়তো ঢোল ও হয়ে গেছে। চোখ জোড়া ঠিকভাবে খুলতে পারছি না। মিনমিন চোখে পুরো রুমে চোখ বুলাচ্ছি। এভাবে প্রায় পনেরো মিনিট কেটে গেলো। দরজার দিকে চোখ দুটো স্থির করে রেখেছি। মুহিত ভাইয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

দরজার দিক থেকে চোখ সরাতেই দরজায় খটখট আওয়াজ হলো। মুহিত ভাইয়া দরজা ঠেলে রুমে ঢুকেছে। হাতে কেকের প্যাকেট আর কলা নিয়ে। মুহিত ভাইয়া আমার পাশে বসে কেকের প্যাকেট টা খুলে কেকের পিস এক্টা আমার মুখে পুড়ে দিলো। আমি ছলছল চোখে মুহিত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মুহিত ভাইয়ার মুখটা শুকিয়ে ছোট হয়ে গেছে। সহ্য হচ্ছে না মুহিত ভাইয়ার এমন ভয়ংকর রূপ। চোখের জল ছেড়ে মুহিত ভাইয়াকে ঝাপটে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে বললাম,,,,,,,

—-“আমারর জন্যই তোমাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে মুহিত ভাইয়া। আমি খুবই আনলাকী এক্টা মেয়ে। তোমার লাইফে যবে থেকে ঢুকেছি তবে থেকেই তোমার লাইফটা নরক হয়ে গেলো। আমার জন্য তুমি শান্তিতে শ্বাস ও নিতে পারছ না। কুলিদের মতো কেবল খেঁটেই যাচ্ছ। আমি বাঁচতে চাই না মুহিত ভাইয়া। মরে যেতে চাই। আমি মরলেই তুমি বাঁচবে।”

মুহিত ভাইয়া আমাকে বুক থেকে উঠিয়ে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“জাস্ট শাট আপ রূপ। অনেকক্ষন ধরেই তোমার ঘ্যান ঘ্যান শুনছি। বিরক্ত লাগছে আমার। খুব বিরক্ত লাগছে। এমনিতেই মন মানসিকতা বিগড়ে আছে এর উপর তোমার এসব বিরক্তিকর কথা। সব মিলিয়ে আমি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি। আর কখনো যেনো তোমার মুখে মরার কথা না শুনি। মরলে দুজন একসাথে মরব। বাঁচলে একসাথে বাঁচব। তোমাকে কেন্দ্র করেই আমার বাঁচা মরা রূপ। তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আপন কেউ নেই। তুমি ও যেমন আমার উপর নির্ভরশীল। তদ্রুপ আমি ও তোমার উপর নির্ভরশীল। দুজনকে ছাড়া দুজনই নিষ্প্রাণ।”

কথাগুলো বলেই মুহিত ভাইয়া আমার মুখে কেকের পিস গুজে দিলো। আমি চোখের জল গুলো মুছে মুহিত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,

—-“এবার তুমি ও খাও মুহিত ভাইয়া। আমি তো অনেক খেয়েছি।”

—-“আমার ক্ষিদে নেই রূপ। তুমি ই খেয়ে নাও।”

—-“চুপ করো। আমাকে বুঝাতে এসো না। তুমি ও আমার সাথে খাবে ব্যাস শেষ।”

—-“খেতেই হবে?”

—-“হুম হবে।”

মুহিত ভাইয়া মৃদ্যু হেসে কেকের পিস মুখে পুড়ে নিলো। আমরা দুজনই খেয়ে চলছি। খাওয়া দাওয়া শেষে মুহিত ভাইয়া আমাকে পানি খাইয়ে দিলো। বেড ছেড়ে উঠে মুহিত ভাইয়া কাবার্ড থেকে এক্টা নীল রং এর সালোয়ার স্যুট বের করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,,,

—-“রূপ ড্রেস চেইন্জ্ঞ করতে হবে। তুমি কি নিজে করবে না আমি করে দিবো?”

আমি মুহিত ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,

—-“তুমি চেইন্জ্ঞ করে দাও মুহিত।”

মুহিত বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“বাহ্ মুহিত?”

আমি লজ্জা জড়িত কন্ঠে বললাম,,,,,,

—-“হুম মুহিত। তুমি আমার বর। বরকে ভাইয়া বলা যায় না। এবার থেকে তোমাকে মুহিত বলেই ডাকব।”

মুহিত বাঁকা হেসে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে আমার ঠোঁটে এক্টা চুমো খেয়ে আমার গাঁ থেকে উড়নাটা সরিয়ে ফেলল। রুমের লাইট অফ করে মুহিত আমার ড্রেস চেইন্জ্ঞ করে দিলো। আমি শটান হয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম। মুহিত আমার গাঁয়ে কম্বল টেনে দিলো। চোখ জোড়া খুলে আমি মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছি। মুহিত কাবার্ড থেকে শার্ট, প্যান্ট করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আমি ও চোখ বুজে নিলাম।

এভাবে কতোক্ষন ঘুমিয়েছি জানি না। ঘুমের মধ্যেই আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। শ্বাস নিয়ে আর ফেলতে পারছি না। নিশ্বাস আটকে আসছে। বুঝতে পারলাম আমার এজমা প্রবলেম দেখা দিয়েছে। সেই আগের রোগ। অনেকক্ষন ভেজা অবস্থায় ছিলাম বলে এমনটা হয়েছে। শ্বাস নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। খুব জোরে জোরে শ্বাস ফেলছি। চোখ খুলে পাশে তাকালাম। মুহিত পাশে নেই। ভয়টা যেনো আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। ভয়ের চোটে শ্বাস ও খানিক বেড়ে গেলো। শোয়া থেকে উঠে ধীর পায়ে ব্যালকনির দিকে এগুচ্ছি। যতো হাঁটছি ততোই শ্বাস বাড়ছে। মনে হচ্ছে কোনো বিষধর সাপ গোঙ্গাচ্ছে। ব্যালকনীতে পা রাখার সাথে সাথেই দেখলাম মুহিত ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। হাতে ফুফুমনি আর রেজাউল আঙ্কেলের ছবি। মুহিতের কান্নার আওয়াজে আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসছে। দৌঁড়ে গিয়ে মুহিতের পাশে দাঁড়ালাম। কাঁদতে কাঁদতে মুহিত এতোটাই বিভোর হয়ে গেছে যে পাশে আমার উপস্থিতি টের পাচ্ছে না।

মুহিত ফটোটায় মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“তোমাদের খুব মিস করব আম্মু, আব্বু। খুব খুব খুব মিস করব। তোমরা আমার আপন হয়ে ও আপন না। কাছে থেকে ও আমার নিজের না। দিন শেষে আমি ঠিকই অনাদ। নিজের বাবা থেকে ও এতিম। পারছি না আমি এতো কষ্টের বোঝা নিয়ে বাঁচতে। তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি। এতোটা অপ্রত্যাশিতভাবে সত্যিটা আমার সামনে আসবে আমি জাস্ট ভাবতে পারি নি। আপন মানুষ গুলোই যখন হুট করে পর হয়ে যায় তখন পুরো পৃথিবীটাই ফিকে হয়ে যায়। জানি না বাকি দিন গুলো কিভাবে কাটাবো। এতো বছরের অভ্যাস কিভাবে পিছু ছাড়াবো। আমি ক্লান্ত, অশান্ত, জীবন যুদ্ধে পরাজিত এক সৈনিক। মুখ থুবড়ে পড়েছি আমি। উঠার মতো শক্ত কোনো হাত নেই।”

মুহিতের কথা গুলো শুনে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছি না। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আমার আন্দাজ ই সঠিক ছিলো। মুহিত কিছু অজানা সত্যি জানে। যা ওর সহ্য শক্তির বাইরে। নিজেকে এতিম, অনাদ ভাবার কারণটা কি? ফুফুমনি কি মুহিতের আপন মা নয়? ইস মাথাটা ঘুড়ছে। সত্যিটা আমাকে জানতেই হবে। শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে। না জানি সত্যিটা জানার আগেই পৃথিবী ত্যাগ করতে হয়। মুহিত এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। ওর কষ্টটা চোখের সামনে দেখতে পারছি না। লোকটা সারাদিন আমাকে শান্তনা দেয় অথচ দিন শেষে নিজেই অশান্ত হয়ে পড়ে। আমার গোঙ্গানীর আওয়াজ যেনো আরো তিনগুন বেড়ে গেলো। মুহিতের কানে শব্দ গুলো যাওয়া সাথে সাথেই মুহিত চোখ তুলে পাশে তাকালো। আমি হেলে দুলে পড়ে যাচ্ছি। স্থির থাকতে পারছি না। শ্বাস এতোটাই বেড়ে গেছে যে আমার রুহ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মুহিত দৌঁড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,

—–“রূপ তোমার শ্বাস বেড়ে গেছে। ইনহেলার আছে সাথে?”

আমি মাথা নেঁড়ে না বুঝালাম। কথা বলতে পারছি না আমি। শ্বাস থমকে যাচ্ছে। মুহিত ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে হতাশ কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“ইসসস মাঝরাত হয়ে গেছে। কোনো ফার্মেসী দোকান ই তো খোলা পাবো না। কি করব এখন? রূপ তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?”

আমি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম।

মুহিত ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,

—–“রূপ…. প্রেসক্রিপশান সাথে আছে? ইনহেলারের নামটা তো জানতে হবে।”

—-“প্রেসক্রিপশান নেই। তবে ইনহেলারের নাম মনে আছে। সেরক্সিন ২৫০ এমজি।”

—-“ওকে রূপ। আমি দেখছি কি করা যায়।”

মুহিত আমাকে কোলে তুলে বেডের উপর বসিয়ে দিলো। আমি খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আর ফেলছি। বার বার মনে হচ্ছে আজই আমার পৃথিবীতে শেষ দিন। মুহিত পাগল হয়ে গেছে। কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মুহিত আমার আমার পাশে বসে বেশ পেরেশানী কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“রূপ….তুমি এখানেই বসো। আমি মৃন্ময় ভাইয়ার রুমে যাচ্ছি। দেখি মৃন্ময় ভাইয়ার কাছে কোনো পরিচিত ডক্টর আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে আমি কিছুক্ষনের মধ্যে উনার বাড়ি গিয়ে কোনো এক্টা উপায়ে ইনহেলার নিয়ে আসব। জাস্ট কয়েক মিনিট সময় দাও আমায়।”

আমি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। মুহিত আমাকে খাটের কর্ণারে বালিশ দিয়ে ঠ্যাস দিয়ে আমার গাঁয়ে ভালো করে কম্বল পেঁচিয়ে রুমের দরজা বাইরে থেকে অফ করে পাগলের মতো ছুটল মৃন্ময় ভাইয়ার রুমে। আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। বার বারই নিজেকে দোষ দিচ্ছি। আমার জন্য আজ মুহিতের এই অবস্থা। সব ক্ষেএেই আমি সমানভাবে দোষী। এসব ভাবতে গেলে যেনো দমটা আরো আগে বের হয়ে যায়।

মুহিত দৌঁড়ে মৃন্ময়ের রুমে গেলো। মৃন্ময় রুমের দরজা আটকে ব্যালকনিতে বসে আছে। মারুর নম্বরে কল করবে নাকি করবে না সেই চিন্তায় ভুগছে সে। জড়তা কাটিয়ে মৃন্ময় যেই না মারুর নাম্বারে কল করতে যাবে অমনি মুহিত রুমের দরজা ধাক্কানো শুরু করল। মৃন্ময় দৌঁড়ে এসে রুমের দরজা খুলে মুহিতকে দরজার বাইরে দেখতে পেলো। মুহিত মৃন্ময়কে দেখার সাথে সাথেই উওেজিত কন্ঠে বলল,,,,,,,

—–“ভাইয়া রূপের শ্বাস বেড়ে গেছে। ইনহেলার ও নেই। তোর কাছে কোনো ডক্টরের এড্রেস থাকলে দে। অথবা কোনো ফার্মেসী মালিকের ফোন নম্বর থাকলে দে। প্লিজ তাড়াতাড়ি দে।”

মৃন্ময় মাথায় হাত দিয়ে বলল,,,,,

—–“ইসসসস ওয়েট ওয়েট। আমি দেখছি কি করা যায়।”

—-“প্লিজ ভাইয়া তাড়াতাড়ি কর।”

মৃন্ময় ফোনটা বের করে কারো এক্টা নম্বরে কল দিয়ে বেশ উওেজিত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“রূপা…. তোর বাড়ির ঐ ভাড়াটিয়া লোকটা আছে? কি যেনো নাম টা। শাহরিয়া মেবি। উনার তো ফার্মেসীে দোকান আছে তাই না?”

রূপা ঢুলুঢুলু কন্ঠে বলল,,,,,

—-“হুম উনার নাম শাহরিয়া। উনার ফার্মেসী দোকান আছে। কেনো বল তো?”

—-“আমি মুহিতকে পাঠাচ্ছি। তুই লোকটাকে ইনফর্ম করে রাখ। ফার্মেসী তো উনার বাড়ির পাশে তাই না?”

—-“হুম বাড়ির পাশেই।”

মৃন্ময় কাতর কন্ঠে বলল,,,,,

—-“এক্টু কষ্ট কর দোস্ত। উনাকে এক্টু ডেকে দে। রূপের আচমকাই শ্বাস বেড়ে গেছে। অবস্থা খুব খারাপ।”

রূপা বেশ ব্যস্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“ওকে ওকে যাচ্ছি। তুই মুহিতকে পাঠা।”

—-“ওকে বায়।”

মৃন্ময় কলটা কেটে মুহিতের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,

—-“রূপার বাড়িটা চিনিস তো?”

—-“হুম ভাইয়া চিনি। আমি এক্ষনি যাচ্ছি।”

মৃন্ময় কিছু এক্টা ভেবে বলল,,,,,

—-“তোর যেতে হবে না মুহিত। আমিই যাচ্ছি। তুই রূপের পাশে থাক।”

মুহিত মৃন্ময়ের হাত ধরে মলিন হেসে বলল,,,,,

—-“থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া। অনেক বড় এক্টা উপকার করলি আমার। এই মুহূর্তে আমার রূপের পাশে থাকাটা খুবই জরুরি। তুই তাড়াতাড়ি যা ভাইয়া। আধ ঘন্টার আগেই ফিরে আসিস প্লিজ। আমার রূপ খুব কষ্ট পাচ্ছে।”

মৃন্ময় রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির দিকে দৌঁড়াচ্ছে আর পিছন থেকে চেঁচিয়ে মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,

—-“আমি আধ ঘন্টার আগেই ফিরব মুহিত। তুই রূপের কাছে যা।”

মুহিত ও চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—-“ভাইয়া ইনহেলারের নামটা মনে রাখিস। সেরক্সিন ২৫০ এমজি।”

—-“ওকে।”

মুহিত আর দেরি না করে দৌঁড়ে রুমে চলে এলো। আমি প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছি। জান যায় যায় অবস্থা। শ্বাস নিয়ে আর ফেলতে পারছি না। মুহিত দৌঁড়ে এসে আমার পাশে বসে আমাকে বালিশ থেকে উঠিয়ে ওর বুকের মাঝে চেঁপে ধরল। মুহিত ভাইয়া আমার পিঠে হাত বুলাচ্ছে আর আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলছে,,,,,,

—–“আর কিছুক্ষন ওয়েট করো রূপ। মৃন্ময় ভাইয়া গেছে ইনহেলার আনতে। আমার রূপ এক্টু পরেই সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে উঠবে।”

—–“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মুহিত। আমি হয়তো আর বাঁচব না।”

মুহিত আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল,,,,,,

—–“তোমার কিছু হবে না রূপ। কালই আমি তোমাকে ভালো একজন ডক্টর দেখাবো। আপাতত ইনহেলার নিয়ে নাও।”

—-“কাল তো তোমার অফিস আছে মুহিত।”

—-“যাবো না কাল অফিস। তোমার চেয়ে ইম্পরটেন্ট আর কিছু হয় না।”

—-“আমি তোমাকে খুব জ্বালাচ্ছি তাই না?”

—–“প্লিজ রূপ চুপ করো। তোমার মুখ থেকে এসব কথা শুনতে আমার একদম ভালো লাগে না। তাছাড়া কাল বাসা ও খুঁজতে হবে। তাই একদিন ছুটি নিতে হবে।”

—–“আমার মাথায় এক্টু হাত বুলিয়ে দাও না মুহিত। আমি এক্টু ঘুমুত চাই।”

—-“দিচ্ছি রূপ।”

মুহিত আমাকে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে আমার মাথার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শুলে যেনো শ্বাসটা আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে। দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বসলে এক্টু ব্যাটার লাগে। তবে চোখে প্রচন্ড ঘুম। মুহিত আমাকে শুয়া থেকে উঠিয়ে আবার বুকের মাঝে চেঁপে ধরল। পিঠে অনবরত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর আমি শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে যুদ্ধ করে চলছি।

এভাবে প্রায় আধ ঘন্টা কেটে গেলো। আধ ঘন্টা পর মৃন্ময় ভাইয়া হনহনিয়ে রুমে ঢুকল। হাতে ইনহেলার নিয়ে। মুহিত চট জলদি মৃন্ময় ভাইয়ার হাত থেকে ইনহেলারটা নিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,

—-“নাও রূপ। তাড়াতাড়ি পুশ করো।”

আমি মুহিতের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ইনহেলারটা মুখে চেঁপে একের পর এক কয়েকটা চাপ নিয়ে নিলাম। প্রায় দশ মিনিট ধরে মুখটা বন্ধ করে রাখলাম। আস্তে আস্তে আমার শ্বাস চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here