এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -২৫

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_২৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

অনিকের অন্যমনস্কের সুযোগ নিলো প্রিয়া। পেছনের দিকে আঁড়চোখে তাকালো। ইতোমধ্যেই সেই ছেলেটিও এসে প্রিয়ার পেছনে দাঁড়ালো। মুহূর্তেই প্রিয়া ফোনটি ছেলেটির হাতে তুলে দিলো। ফোনটি হাতে পাওয়া মাত্রই ছেলেটি রকেট গতিতে রেস্টুরেন্ট ছেড়ে দৌঁড়ে পালালো!

প্রিয়াও এবার এক ছুটে রেস্টুরেন্টের টয়লেটে ঢুকে পড়ল! ভেতর থেকে দরোজার খিলটা আটকে সে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে লাগল। আধো আলোতে ঘেরা টয়লেটটিতে তাকিয়ে সে নাক সিঁটকালো।অতঃপর মুখে ওড়না চেপে ধরে হাঁপিয়ে ওঠা গলায় বলল,,

“থ্যাংকস গড। একটা কাজ তো অন্তত ঠিকঠাক মত হলো। এবার দ্বিতীয় কাজটা ঠিকঠাক মত করার পালা।”

ওয়াশরুমে আরও কিছুক্ষণ থেকে প্রিয়া অযথা সময় অপচয় করল। সেকেন্ড প্ল্যানিং অনুযায়ী নিজেকে তৈরী করতে লাগল। ট্যাব ছেড়ে হাতে কোষ ভর্তি পানি নিলো। সেখান থেকে দু’ফোঁটা জল তার চোখের কোটরে অনায়াসে ভরে নিলো! টলটলিয়ে পানি ঝড়তে লাগল চোখের কোণ থেকে। এমন করে আরও তিন থেকে চারবার প্রিয়া এই একই কাজ করল। মিথ্যে কান্নার ভান ধরল সে! যতটা সম্ভব মুখশ্রীতে দুঃখী দুঃখী ভাব ফুটিয়ে তুলল। মুখো ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছিল যেন তার মত অসহায় ব্যক্তি পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই! তার নাটক করার অভিজ্ঞতা যেন সিনেমার হিরোইনদের ফেল করাবে!

হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়া টয়লেট থেকে বের হয়ে এলো! যেহেতু সকাল টাইম তাই রেস্টুরেন্টে কাস্টমারদের ভীড় একদম নেই বললেই চলে। পুরো ফাঁকা এক রেস্তোরা। তাই এই মুহূর্তে রেস্টুরেন্টে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটলেও হীতে কোনো ক্ষতি হওয়ার সুযোগ নেই। রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরাও এখন তাদের নানাবিধ কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তবে প্রিয়ার গলা ফাটানো চিৎকারের আওয়াজ শোনা মাত্রই যেন তারা তাদের সমস্ত কাজকর্ম ফেলে ঘটনাচক্রে আসতে বাধ্য হলো। অন্যদিকে অনিকও বেশ বিচলিত হয়ে পিছু ঘুরে তাকালো। ক্রন্দনরত প্রিয়াকে দেখামাত্রই তার কলিজাটা অস্বাভাবিকভাবেই মোচড় দিয়ে উঠল! খারাপ কিছু ঘটার সম্ভাবনা তাকে গ্রাস করতে লাগল। যদিও সে প্রথম থেকেই খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করতে পেরেছিল! প্রিয়ার বর্তমান অবস্থা দেখে এবার সে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেল। আশঙ্কা তার সত্যিতে পরিণত হলো।

উত্তেজিত হয়ে টেবিল ছেড়ে ওঠে এলো অনিক। প্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে রুদ্ধশ্বাস ফেলতে লাগল। ক্ষুদ্ধ হয়ে দু’হাত দ্বারা প্রিয়াকে ঝাঁকাতে লাগল। প্রিয়ার আতঙ্কিত দু’চোখে তার অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ব্যগ্র গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই আমার ফোন কোথায়?”

অতিরিক্ত কান্নার সাথে সাথে শুকনো ঢোঁকও গিলল প্রিয়া। অনিকের আগুন ঝড়া দু’চোখে তার ভয়ানক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অনিকের চোখেমুখের এহেন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে কথা জড়িয়ে আসছিল তার। তবুও যেন সে বুকে সাহস রেখে ভীরু গলায় বলল,,

“সরি অনিক। আমার অসাবধানতার জন্যই তোমার ফোনটা টয়লেটের ভেতরে পড়ে গেছে!”

“কু”ত্তা”র বাচ্চা! তুই ইচ্ছে করে এমন করেছিস না?”

ঠাস ঠাস করে প্রিয়ার দু’গালে দু চ’ড় লাগিয়ে দিলো অনিক! মুহূর্তেই প্রিয়াকে ছেড়ে সে এক দৌঁড়ে টয়লেটের দিকে চলে গেল। হন্ন হয়ে টয়লেটের ভেতরে প্রবেশ করে সে হাই কমোডের দিকে এগিয়ে গেল। কমোডের ঢাকনাটি খুলে সে অন্য হাত দ্বারা তার নাক টিপে ধরল। পারছেনা সে কমোডের ভেতরে এক্ষণি হাত ঢুকিয়ে দিতে! কীভাবে তার মহামূল্যবান ফোনটি সে উদ্ধার করবে তার চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছিল।টয়লেটের ভেতরে থেকেই সে রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদের চিৎকার করে ডাকতে লাগল। অনিকের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা প্রত্যেকে টয়লেটের ভেতর চলে এলো। রাগে অস্থির হয়ে অনিক হাত-পা ঝাড়তে লাগল। চুল টেনে ঝাঁজালো গলায় কর্মচারীদের বলল,,

“এট অ্যানি কস্ট আমার ফোন ব্যাক চাই। আমার ফোনের মেমোরীটা ব্যাক চাই। তোরা যেভাবেই পারিস আমার ফোন ব্যাক করে দে।”

ভেতরে এত বেশী চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার দৌঁড়ে এলেন ওয়াশরুমে। নির্বোধ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের দিকে একবার তাকিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে অনিকের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। গলা ঝেড়ে উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“কী হয়েছে স্যার? অ্যানি প্রবলেম?”

“আমার ফোনটা কমোডের ভেতর ঢুকে গেছে। এটা অ্যানি কস্ট আমার ফোনটা আমি ব্যাক চাই। এবার আপনারা যেভাবে পারুন আমার ফোনটা ব্যাক করে দিন।”

“সরি স্যার। এখানে তো আমাদের কোনো ফল্ট নেই। এমন তো নয় যে আমি বা আমার রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা আপনার ফোনটা কমোডে ফেলে দিয়ে গেছে। যদি এমন হত নিশ্চয়ই আমরা রিস্ক নিতাম। ভুলটা যেহেতু আপনার কারণেই হয়েছে সো সেখানে আমাদের কিছু করার নেই স্যার। প্লিজ বিষয়টা লজিক্যালি ভাবুন।”

মাথা যেন অচল হয়ে গেল রাফায়াতের! কোনো বুদ্ধিই কাজ করছেনা তার। কেবল হাইপারটেনশন কাজ করছে তার। মুহূর্তেই কর্মচারীদের ঠেলে সে প্রিয়াকে খুুঁজতে খুঁজতে রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলে এলো। ওমা! সে কী? রেস্টুরেন্টের কোথাও তো প্রিয়ার ছায়াটিও দেখা যাচ্ছেনা! তবে কী প্রিয়া তাকে গোল দিয়ে পালালো? এই ছিল প্রিয়ার মনে? তার মানে কী প্রিয়া ইচ্ছে করেই তার ফোনটা কমোডের ভেতরে ফেলে দিয়েছে? কোনোভাবে ভিডিওটি লোপাট করার জন্য? রাফায়াতও কী এই প্ল্যানিংয়ের সাথে যুক্ত আছে? মাথাটা যেন ঘুরে এলো অনিকের। দিশেহারা হয়ে সে মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। তার সাজানো প্ল্যানিং রাফায়াত এভাবে চোপাট করে দিলো? তার সাথে ট্রিপল গেম খেলল?

প্রিয়ার গাল দুটি অসম্ভব জ্বালা করছে! না চাইতেও চোখ থেকে তার টলটলিয়ে পানি ঝড়ছে। তবুও যেন সেই ব্যথা তার কাছে তুচ্ছ! রাফায়াতের আগে তার কাছে কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাসায় পৌঁছেই প্রিয়া প্রথমে অনিকের ফোন থেকে সিম এবং মেমোরি কার্ডটি আলাদা করল। সিমটি ভেঙে গুড়িয়ে সে মেমোরি কার্ডটি সযত্নে তার বিছানার তলায় রেখে দিলো। রাতে রাফায়াত বাড়ি ফিরলেই সে মেমোরিটি রাফায়াতের হাতে তুলে দিবে। অনিক যে কখনও এই বাড়িতে আসার দুঃসাহস দেখাবেনা তা প্রিয়া বেশ ভালোভাবেই জানে। জানের ভয় তো সবারই আছে! মনে মনে ভীষণ খুশি প্রিয়া। জীবনে প্রথমবার রাফায়াতকে সে খুশি করতে যাচ্ছে!

___________________________

রাত্রী প্রায় এগারো বেজে পয়ত্রিশ মিনিট বাজছে ঘড়িতে। অয়ন্তী তার মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে চোখে বুজে যেন প্রশান্তির ঘুম ঘুমুচ্ছে! তার মা ও অতি যত্নে,আদরে,ভালোবাসায় তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘ তিন থেকে চারদিন পর মেয়েকে তিনি কাছে পেয়েছেন। পারছেন না যেন এক্ষণি তিনি মেয়েকে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে নেন। চুমোয় চুমোয়ে মেয়েকে ভরিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে অয়ন্তীর বাবা, রাফায়াত এবং চঞ্চল মিলে তাদের পূর্ণ মনোযোগ সহকারে অয়ন্তীদের জায়গা-সম্পত্তির দলিলপত্র ঘাটছে। সব তল্লাশির পর দেখা গেল তাদের জায়গা-সম্পত্তির আসল দলিলপত্র একটাও নেই ফাইলে! সব নকল দলিলপত্র! এতদিন ধরে অনিক ঢাকায় থেকে চুপিসারে সব আসল দলিলপত্র হাতিয়ে নিয়েছে। তার পরিবর্তে নকল দলিলপত্র সব ফাইলে রেখে দিয়ে গেছে। শুধু তাই নয় অয়ন্তীর মা এবং বাবাকে এতদিন যাবত পা’শ’বিক নির্যাতন করে তাদের হাতের সিগনেচার ও রেখে দিয়েছে! আজ সকালে যখন রাফায়াত এবং চঞ্চল ঢাকায় অয়ন্তীদের বাড়ি গেল অনিকের ল্যাপটপটি উদ্ধার করতে তখনি তারা বাড়ির মেইন দরোজা ভেঙে অয়ন্তীর মা এবং বাবাকে রুমে বন্দি অবস্থায় পেল! পরে আরিফ এবং আলিজার সাহায্যে তারা বদ্ধ রুম থেকে অয়ন্তীর মা এবং বাবাকে উদ্ধার করে। অনিকের বিরুদ্ধে এই নিয়ে পুলিশ কেইসও করা হয়। তবে সকাল থেকেই অনিক ফেরার! তবুও রাফায়াত রি’স্ক নিতে চায়নি। অয়ন্তীর মা এবং বাবাকে তার সাথে করে চট্টগ্রাম অয়ন্তীর ফ্লাটে নিয়ে আসে। সরাসরি তাদের নিয়ে বাড়ি যাওয়া রাফায়াতের পক্ষে সম্ভব নয়। বাড়ির লোকজন নানা ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারে। হয়ত বাড়িতে তাদের থাকতে দিতেও অসম্মতি প্রকাশ করতে পারে। এতদূর থেকে দুজন মানুষকে তার ভরসায় এনে অপমান করতে চায়নি রাফায়াত।

অনিককে ধরা এখন রাফায়াতের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ল্যাপটপ থেকে সমস্ত প্রমাণও সে লোপাট করে দিয়েছে। মেমোরি খুলে ল্যাপটপ ভেঙেচূড়ে খান খান। রাত গভীর হতেই অয়ন্তীকে অয়ন্তীর মা-বাবার কাছে রেখে রাফায়াত তার বাড়ি ফিরে গেল। প্রথমে প্রিয়ার কাছ থেকে ফোনের মেমোরি কার্ডটি হাতিয়ে নিলো। মেমোরিটা কোনো কারণে নষ্ট করতে চাইলনা সে। নিজের কাছেই রেখে দিলো। এর মধ্যে আবার বাড়িতে রাফায়াত এবং প্রিয়ার বিয়ে নিয়ে কথা চলছিল! আগামী সপ্তাহে-ই তাদের বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হলো। রাফায়াতের কানে খবরটা যেতেই রাফায়াত সরাসরি তা প্রত্যাখান করে দিলো! প্রিয়ার সামনে দাঁড়িয়েই রাফায়াত তার মা’কে বলল,,

“আমার কিছুটা সময় লাগবে মা। প্লিজ এক্ষণি তোমরা আমার বিয়ে নিয়ে ভেবো না।”

প্রিয়াসহ বাড়ির প্রত্যেককে উপেক্ষা করে রাফায়াত বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা চঞ্চলকে নিয়ে ফারার অনিককে খুঁজতে বের হয়ে গেল। রাফায়াতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে প্রিয়া চোখের জল ছেড়ে দিলো! তবে কী রাফায়াতও তার সাথে অভিনয় করল? অনিকের মত রাফায়াতও প্রিয়াকে ব্যবহার করল?

পুলিশের সাহায্য নিয়ে রাফায়াত ঢাকা শহরের চেনা-জানা প্রতিটা অলিগলি চুষে ফেলল৷ এমনকি চট্টগ্রাম অনিক যে ফ্লাটটি নিয়ে থাকে সেই ফ্লাটটিতেও তল্লাশি চালালো। কোথাও অনিকের কোনো অস্তিত্ব বিশেষ খুঁজে পাওয়া গেল না। এত বড়ো শহরে অনিককে খুঁজে বের করাও এখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত সহজে অনিককে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। একটা বিষয় নিয়ে রাফায়াত বড্ড দুঃশ্চিতায় আছে। অনিক না নিজের গাঁ ঢাকা দেওয়ার জন্য আবার ডুবাই তার বাবা-মায়ের কাছে ডুব দেয়!

রাতভর অনিককে খুঁজল রাফায়াত এবং চঞ্চল। নেতার আশেপাশে থেকে কন্সট্রাকশন নিয়ে কিছু টুকিটাকি কাজও রাফায়াত সেরে নিলো। ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথেই চঞ্চল তার বাড়ি ফিরে গেল। রাফায়াত হয়ে গেল একলা। এই মুহূর্তে তার বাড়িতে যাওয়া ঠিক নাকি অয়ন্তীর ফ্লাটে যাওয়া উচিৎ কিছুই বুঝতে পারছিলনা সে। তবে বাড়ি ফিরলে এখন প্রিয়াসহ বাড়ির সবার ঘ্যান ঘ্যান শুনতে হবে তাকে। এরচেয়ে বরং ফ্লাটেই যাওয়া যাক। অয়ন্তীকে একবার চোখের দেখা দেখে আসা যাক।

সকাল সাতটা অবধি রাফায়াত তার বাইক নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ালো। সাতটার পর হোটেল থেকে নাশতা নিয়ে সে ফ্লাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। অস্বস্তি নিয়ে রাফায়াত অয়ন্তীর রুমের কলিংবেল চাপতেই হুড়োহুড়ি করে অয়ন্তী এসে দরোজা খুলে দিলো! ঘুম জড়ানো নিবিড় চোখে সে রাফায়াতের দিকে তাকালো। অস্পষ্ট স্বরে বলল,,

“কাল রাতে আর আসলেন না কেন?”

অয়ন্তীর এই অদ্ভুত প্রশ্নে অবাক হলো রাফায়াত। ভ্রু যুগল ঈষৎ উঁচিয়ে সে নির্বোধ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কেন? আসার কথা ছিল নাকি আমার?”

দীর্ঘ এক হামি তুলে চোখ কচলালো অয়ন্তী। ঘুমের ঘোরে সে মনের সমস্ত ভাবনাচিন্তা আর একটুর জন্য উগলে দিচ্ছিল! সম্বিত ফিরে পেতেই সে রাফায়াতের বিস্মিত দৃষ্টিতে আবিষ্ট দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। প্রসঙ্গ পাল্টে কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“পাশের রুমটাও কী আপনি ভাড়ায় নিয়েছেন?”

“হ্যাঁ। তোমার বাবা-মায়ের জন্য।”

“আমরা আর কতদিন থাকব এখানে?”

“যতদিন অবধি না অনিককে খুঁজে পাচ্ছি ততদিন।”

“বাইরে দাঁড়িয়ে কেন কথা বলছেন? ভেতরে আসুন।”

“না। ভেতরে আসব না। একচুয়েলি তোমাদের সকালের নাশতাটা দিতে এসেছিলাম।”

“কিন্তু ভেতরে আসবেন না কেন?”

“আঙ্কেল, আন্টি আছেন। মাইন্ড করতে পারেন।”

“একটা কথা বলার ছিল আপনাকে!”

“কী?”

“সরি!”

“সরি ফর হুয়াই?”

“এইযে এতদিন আপনাকে খারাপ লোক ভেবে আসছিলাম তাই! আচ্ছা এতদিন আপনি বললেন না কেন? অনিক ভাইয়া যে ভেতরে ভেতরে আমাদের ক্ষ’তি করে আসছিল? আর এই খারাপ লোকটার থেকে বাঁচানোর জন্য-ই আপনি আমাকে কি’ড’ন্যা’প করে এনেছিলেন।”

“কারণ, আমি চাইতাম না রাফায়াতকে তুমি ভালোবেসে ফেলো! তাহলে তো রাদিফের সাথে অন্যায় করা হবে তাইনা?”

অয়ন্তীকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়ে রাফায়াত নাশতার প্যাকেটটা অয়ন্তীর হাতে ধরিয়ে দিলো। অচিরেই অয়ন্তীর দিকে রহস্যময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মন ভুলানো এক অদ্ভুত হাসি হাসল। দ্রুত কদমে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। পেছন থেকে রাফায়াতকে ডাকতে গিয়েও থেমে গেল অয়ন্তী। তার দূরদৃষ্টি পড়ল হঠাৎ রাফায়াতের পকেট থেকে পড়ে যাওয়া ভোটার আইডি কার্ডটির দিকে!

_________________________________

বাড়ি ফিরেই রাফায়াত পড়ে গেল মহা মুশকিলে। বিছানার উপর একটি চিরকুট রেখে প্রিয়া চলে গেছে বাড়ি ছেড়ে! চিরকুটটিতে কেবল পাঁচ শব্দের একটি বাক্য লিখা ছিল। “আমাকে ক্ষমা করে দিও রাফায়াত।” ব্যস এটুকুই বার্তা বহন করল সেই চিঠিটি। এতেই যেন বাড়ি শুদ্ধু লোক সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে গেল রাফায়াতের উপর। তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল সবাই। রাফায়াতের মা তো রাগে অতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাফায়াতের গালে জোরেশোরে এক চ’ড়’ বসিয়ে দিলেন! আর্ত গলায় চিৎকার করে বললেন,,

“তোর জন্য আমার মা ম’রা মেয়েটা আজ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমি তোকে কখনও ক্ষমা করতে পারব না রাফায়াত। কখনো না।”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here