এক চিলতে রোদ ২ পর্ব -০১

#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila

১.

আকাশেও অল্প নীল,
ভুল হতো অন্তমিল
একা একা রং মিছিল,
ছিলে না যখন।
মুঠো ভরা মিথ্যে ফোন
ফিরে আসা ডাক পিয়ন,
মিছিমিছি মন কেমন,
ছিলে না যখন।
ভালোবাসা দিন কত টা রঙিন,
তা বুঝেছি তখন।
🎵🎵🎵🎵🎵🎵🎵🎵
সারাদিন ঠিকানাহীন ,
ঘুরি ফিরি সে বেদুইন।
লুকিয়ে ডানার ক্ষত, ওওওও
তুমি নেই ভাবলেই ব্যাথায় এসে দাঁড়াবেই,
উঁচু মিনারের মত।
শুকনো পাতা কাঁপত একা ঢালে,
গন্ধ খুঁজে ডুবেছি রুমালে।
কেমন ছিলাম এখন বুঝি (২)
আকাশেও অল্প নীল,
ভুল হতো অন্তমিল
একা একা রং মিছিল,
ছিলে না যখন।
গান শেষ হতেই চারপাশ থেকে বন্ধুদের হাত তালির শব্দের মুখরিত হতে লাগলো।

‘ সব সময় এর মতো জাক্কাস হয়েছে রে। কিন্তু একটা প্রেম ভালোবাসার রোমান্টিক গান গাইতি তাহলে ভালো লাগতো। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ছ্যাকা খাওয়া গান গাইলি‌ ক্যান রে ইহান।’ বলে উঠলো নাহিদ।

গিটার পাশে রেখে ইহান বললো, ‘ আমার যেটা মনে এসেছে সেটাই গাইছি।’

ফারিয়া কটমট করে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে। ইহান সেদিকে লক্ষ্য করলো না। ওর ফোন বেজে উঠলো। ও ফোনে কানে ধরে উঠে দাঁড়ালো।

‘হ্যা আম্মু।’

‘ভালো আছিস?’

‘ হ্যা ‌তুমি কেমন আছো?’

‘ আছি ভালোই‌।কবে আসবি বাসায়?’

‘কাল আসবো। বললাম না সকালে!’

‘ হ রে মনে ছিলো না। খাইছিস?’

‘ রাত এগারোটার বেশি বাজে। এখনো আমি কি না খেয়ে থাকবো তোমার মনে হয়?’

‘ বাড়ি না থাকলে তো তোর খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো হয়ই না‌। একটুও ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না। ‘

‘ এতো চিন্তা করো না তো। আমি বাচ্চা না নিজের কেয়ার নিতে জানি।’

‘ বললেই কি আর মায়ের চিন্তা যায় রে। বুঝবি না।’

‘ তুমি এখনো জেগে আছো কেন বলো তো। ঘুমাবে না আজ?’

‘ ঘুম আসছে না রে। কাল তোর খালার বাসায় যামু।’

‘ সেখানে কেন যাবে?’

‘ ওই তোর খালা আমারে…

‘ আচ্ছা তোমার যেখানে খুশি যাও আম্মু। আমি একজায়গায় বেড়াতে এসেছি তুমি আর এতো কল করে ডিস্টার্ব করা অফ করো প্লিজ।’

ইলিনা বেগম ‘আচ্ছা সবাধানে থাকিস।’ বলেই কল কেটে দিলো।

ফারিয়া, নাদিম, মুক্তা , মেহেদী, সিয়াম, বসে আছে গোল হয়ে। ওদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ইহান কথা বলছে।
কথা শেষ ইহান ওদের কাছে এসে বসলো। ওরা সবাই এখন আছে সিলেট। পাঁচদিনের টিপে এসেছিলো সব বন্ধুরা। আজকে লাস্ট। তাই রাত জেগে গানের আড্ডা জমিয়েছে রিসোর্ট এর বাগানে।

ইহার আসতেই সবাই ওর দিকে এমনভাবে তাকাল যে ও কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলো,
‘কি হলো সবাই আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন?’

‘তুই নাকি গোপনে আরেকটা প্রেম করিস?’ মুক্তা বললো।

‘ হোয়াট?’

ইহানের চেঁচানো শুনে ফারিয়া বললো, ‘ চেঁচাচ্ছিস কেন? আমার তাই মনে হয়।তুই যদি আরেকটা প্রেম না করতি আর অন্য কাউকে পছন্দ ভালো না বাসতি তাহলে তুই বারবার আমাকে কেন ফিরিয়ে দিস। ইগনোর করিস? এতদিন ধরে তোর পেছনে পড়ে আছি আর তুই এখন অব্দি আমাকে আই লাভ ইউ বলতে পারলি না।’

‘ফালতু বকবক বন্ধ করবি। নাকি এখানে থেকে চলে যাব। এই এক কথা ছাড়া কী তোর মাথায় আর কোন কথাই আসে না।’

ফারিয়া বললো, ‘না আমার মাথায় আর কিছু আসেনা আর আসবেও না। যে পর্যন্ত তুই আমাকে ভালোবাসি না বলবি।’

‘আরে ভাই ভালো না বাসলে ও কি আমি মুখে মুখে তোকে আই লাভ ইউ বলব নাকি? সেটা কি তোর ভাল লাগবে? তুই কি আমার মুখ দিয়ে মিথ্যে কথা বলাতে চাচ্ছিস?’

‘মিথ্যে কেন বলবি মন থেকে ভালবাস না। আমি কি দেখতে অতটা খারাপ নাকি যে আমাকে তুই পছন্দ করতে পারিস না। আমি কি তোর যোগ্য না বল?’

‘এখানে আবার সুন্দরের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? আমি কি তোকে বলেছি তুই আমার অযোগ্য আমি হয়তো তোর যোগ্য না‌।আর শোন আমি মিথ্যে কথা বলতে পারবো না। মনে এক রেখে মুখে আরেক কথা আমি বলি না‌। মেজাজটাই খারাপ করে দিলি আমি রুমে যাচ্ছি তোরা নিজেরাই আড্ডা দে।’

বলেই ইহান গিটার হাতে উঠে দাঁড়ালো।

মেহেদী তা দেখে বলে উঠল, ‘ উঠছিস কেন এখানে আমরা রাত দুটো পর্যন্ত আড্ডা দেব কথা ছিল। কত কিছু অর্ডার দিয়েছি খাবার চলে আসতেছে আর তুই এখন বলছিস রুমে চলে যাবি।’

‘তোরা নিজেরাই আড্ডা দে আর খা। আমার আর আড্ডা দেওয়ার মুড নাই।’

বলেই ইহান রিসোর্ট ভেতরে ঢুকে গেলো। পেছন থেকে ইহানকে সবাই চিৎকার করে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ইহান আর কারো কথা পাত্তা দিল না। ইহানের মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে। সব সময় এক প্যাচাল শুনতে শুনতে ওর কান পচে গেছে। রুমের ভেতরে এসে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

এদিকে পাঁচজন গোমরা মুখে ইহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এবার সবাই ফারিয়ার দিকে তাকাল রাগী দৃষ্টিতে। কারণ ফারিয়ার জন্যই ইহান রাগ করে চলে গেল। ইহান চলে যাওয়ায় আড্ডা ও থেমে গেলো। ইহান ছাড়া কি আর আড্ডা জমে!

‘কি হলো তোরা আমার দিকে এমন বড় চোখ করে তাকিয়ে আছিস কেন?’

ফারিয়ার কথায় রেগে ফুঁসে উঠে বললো মুক্তা, ‘তোর এখন এইসব বলার কি দরকার ছিল? তোর জন্য আড্ডাটাই মাটি হয়ে গেল!’

‘ আমার সাথে এমন করছিস কেন? ওই কি শুধু তোদের ফ্রেন্ড আমি কিছুই না‌। ও যে সব সময় আমাকে ফিরিয়ে দেয় সেটা কিছুই না।’

‘ জোর করে কিছু পাওয়া যায় না। আর তুই এখন এসব না বললেই হতো। ধুর’

সিয়াম পরিস্থিতি সামলাতে বললো, ‘ চুপ সবাই থাম এবার একটু। কাল চলে যাচ্ছি তাতেই মন খারাপ আর আজ সবাই নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করে সবাই রাগারাগী করছিস। থাম! ইহান গেছে ওকে রুমে থেকে ধরে নিয়ে আসবো। আজকে আড্ডা থামবে না।’

বলেই নাদিম কে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো সিয়াম। ইহান কে জোর করে ধরে নিয়ে এলো রুমে থেকে। আস্তে আস্তে সব রাগারাগী ভুলে সবাই মন খুলে আড্ডা দিতে লাগলো। ইনজয় করতে লাগলো।

.
গ্ৰামের বুকে কখনো পা রাখা হয়নি। দেখা হয়নি সবুজে ঘেরা দেশ। ক্ষেত ভড়া ধান। সবুজ গাছপালার সমাহার। নদীতে হাঁস প্যাক প্যাক করছে।পাখির কিচিরমিচির ডাক! আহ কি মিষ্টি!
মন ভরে শ্বাস ফেলা যায়। চোখ বন্ধ করে জানালা দিয়ে মুখ বের করে রেখেছি তখন আমার হাত ধরে টেনে কেউ ভেতরে নিয়ে জানালা আটকে দিলো।
আমি চমকে রাগ মিশ্রিত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। আম্মু ধমক সুরে বলল,

‘ এসব কি ঊষা? তুমি মাথা বের করে রেখেছো কেন?’

‘ আম্মু ছাড় আমাকে। ওই ভাবে আমার ভালো লাগছিলো কি সিগ্ধ বাতাস!’

‘ না ওই ভাবে মুখ বের করে রাখবে না আর। দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

আমি ঠোঁট উল্টে বললাম, ‘ নানু বাসা কতো দূরে আর?’

‘ এইতো চলে এসেছি।’

জানালার বাইরে আর মাথা রাখা হলো না ভেতরে থেকে তাকিয়ে আছি। অনেক পুরাতন একটা দোতলা বাড়িতে এসে গাড়ি থামলো। বাসার রং একবারে বাজে হয়ে গেছে। দেখতে খুব বিশ্রী লাগছে। আব্বু, আম্মু ও আমি গাড়ি থেকে নেমে পরলাম। বাড়িটা দেখছি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমি।আম্মু ভিতরে যাচ্ছে আমিও পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম।জীবনে প্রথমবার নানু বাড়ি এসেছি। এর আগে কখনো এখানে আসা হয়নি। আম্মু আব্বু ও কখন ও আসতো না। না আসার একটা লম্বা কাহিনী আছে অন্য সময় বলবো‌।ভেতরে থাকে কারো কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে আমি তাড়াতাড়ি ভেতরে গেলাম। ভেতরে গিয়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

আমার মায়ের মতো আরেকটা মহিলা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আমি বিস্মিত হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
তিনি আমাদের ভেতরে নিয়ে চেয়ারে বসতে দিল। এরমধ্যে জানতে পেরেছি তিনি আমার খালা। আর আমার মায়ের একমাত্র জমজ বোন। আমি গোল গোল চোখ করে দু’জনকে পরোক্ষ করছি সেম টু সেম।
শুধু একটু শুকনো আমার খালা।
বাইরে থেকে বাসাটার বাজে অবস্থা থাকলেও ভেতরে এসে এতটা খারাপ লাগছে না কারণ ভেতরে রং করা জিনিসপত্র যথেষ্ট গোছানো সুন্দর। তখনই একটা কাপড় পরা মহিলা এলো যার হাতে খাবারের বাটি তার পাশে একটা ছেলে ছয় কি সাত বছরের। তিনি আমাদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমার আম্মু তাকে দেখেই হাসি মুখ করে উঠে ভাবি বলে উঠল। তিনি হয়তো আমাদের আশা করেননি। তিনি পিছনে ঘুরে আম্মা আম্মা বলে ঘরের দিকে চলে। একটু পরে একজন সাদা পাকা দাড়িওয়ালা ফর্সা পাঞ্জাবি পরিহিত লোক বেরিয়ে এলো।তিনি অনেক লম্বা আর চেহারা অনেকটা আমার আম্মুর সাথে মিল আছে আমার মনে হয় উনি আমাদের নানাজান। তার পেছনে একজন ছুটে এলো কাপড় পরিহিত তিনি আমার আম্মুকে দেখে তো জড়িয়ে ধরল আম্মু উঃ তাকে জড়িয়ে ধরে মা বলে উঠলো।

সবার কান্না চলছিলো। আর আমি সেখানে নিরব শ্রোতা হয়ে সব দেখছিলাম। বাবা চেয়ারে বসে আছি চুপ করে। আমি সবাইকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। হঠাৎ একটা ঝড় বয়ে গেল। সেই ঝড়ে আমার খুঁটিয়ে দেখা বন্ধ হয়ে গেল সবার কান্না থেমে গেলো। আমি ভয়ার্ত চোখে আমার একমাত্র
নানা জানের দিকে তাকিয়ে আছি।

#চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here