এক চিলতে রোদ ২ পর্ব -০৪

#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila

৪.

স্টেজ ফাঁকা হয়ে গেলো। বিরতি দিয়ে সবাই নেমে গেছে। আমি কাচুমাচু মুখ করে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। সবার চেয়ার ছেড়ে উঠার অপেক্ষা করছি।সবাই জায়গা ত্যাগ করলো না। অনেক এখানে বসেই আড্ডা শুরু করে দিয়েছে। অনেকে দোকানে গিয়ে ভীড় জমাচ্ছে।
আমি কাচুমাচু করেই উঠে দাঁড়ালাম।

‘ তুই এইভাবেই থেকে যা না। একা আমার ভালো লাগবে না।’ তুলি বলে উঠলো।

‘ চৈতি দের সাথে থাকিস। আমি আর এই অবস্থায় থাকবো না রে অনুরোধ করে লাভ নাই‌।’

‘ আচ্ছা সাবধানে যা।’

নিচের দিকে তাকাতে থেকে গেট পেরিয়ে এলাম। বাইরে এসে ওই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটাকে দেখতে পেলাম। ছেলেটার নাম শুনেছিলাম যখন গান গাইতে স্টেজে থেকে নাম ডাকলো,
কি যেন বললো?
ভেবেও মনে করতে পারলাম না। আমাকে দেখেনি মনে হয়। দেখলে আবার সেই ফোন নিয়ে ঝামেলা করতে এসে পরতে পারে মনে হলো তাই মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।

অটো পেতেই ঝটপট উঠে গেলাম। তখন এতো কথা কিভাবে বললাম নিজেও জানিনা কিন্তু এখন যদি আবার ছেলেটা ঝামেলা করতে আসে আমি একটা কথাও বলতে পারবো না জানি। তাই ওই ছেলের নজরে না পরা টাই ভালো।

অটোতে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আমার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো ছেলে গুলো। অটো তাদের অতিক্রম করে যাবে আমি তাকিয়ে ছিলাম সেই মেয়ের দিকে যে আমাকে কথা শুনাতে এসেছিলো।

‘ এই ঝগড়ুটে মেয়ে! আমার ফোন ভেংগে পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

আমার নজর ঘুরে গেলো। আমি ঢোক গিলে ছেলেটার দিকে তাকালাম। আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। আর চেঁচিয়ে কথা গুলো বলছে। আমার নিজের শাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবছি। দোষ তো উনার উনার জন্য শাড়ি নষ্ট হলো সাথে আমার অনুষ্ঠান দেখা ভঙ্গ হলো। তাতে কিছু না যেন‌। আমাকে আবার চেঁচিয়ে বকা হচ্ছে খুব বাজে ছেলেটা।

বাসায় আসতেই আম্মু বললো,

‘ এতো তাড়াতাড়ি বাসা এলি কেন? বিকেল পর্যন্ত না বলে থাকবি!

বলতে বলতে আম্মু আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো, ‘ একি শাড়ির এই অবস্থা কেন?’

আমি বললাম, ‘ আমি পরে গেছিলাম কলেজে।’

‘ কিহহ! কিভাবে পরলি? কোথায় পরেছিলি? আর ব্যাথা পেয়েছিস নাকি দেখ!”

বলেই আমাকে চেক করতে লাগলো।আর হাতের আঘাত দেখে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
আম্মু আব্বু এমনি আমার একটু কিছু হলেই পাগল হয়ে যায়। আব্বু কে ভয় পেলেও আম্মু আমার বন্ধুর মতো। তাকে আমি সব বলি তাই আজ ও বাদ দিলাম না। ধাক্কা লাগা থেকে ঝগড়া করা সব কিছু আম্মু কে খুলে‌ বললাম। আম্মু সব শুনে খুশি হলো খুব যেন।

আম্মু বললো, ‘ আমার ভীতু মেয়েটা এতো কথা বলেছে বাব্বাহ। ছেলেটা আবার গান ও গায়। আচ্ছা দেখতে খুব হ্যান্ডসাম নাকি রে তোর পছন্দ হয়েছে?”

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ মানে কি? কি সব বলছো? পছন্দ হ‌ওয়ার কথা এখানে আসছে কেন? ছেলেটা কতোটা বাজে তুমি দেখেছো। তার কিছু বলছো না উল্টা কেমন দেখতে এসব নিয়ে পরলে কেন?’

‘ পছন্দ হয়েছে কিনা না জানলে বুঝবো কেমনে প্রেম হবে নাকি?’

আমি মাথা হাত দিয়ে বললাম, ‘ তুমি আমার মা নাকি বান্ধবী বুঝতেছিনা। এই ভাবে কেউ প্রেমের কথা বলে। আমার বুঝি লজ্জা করে না। আরেকটা কথা ওই সভ্য ছেলের সাথে আমি কখনো প্রেম করবো না।’

‘ তার মানে দেখতে ভালো না।’

‘ আমি কি বলেছে দেখতে খারাপ। দেখতে ভালো কিন্তু আমার জন্য না। আমি রুমে গেলাম এখানে থাকলে আজেবাজে কথা বলবে। তোমাকে এসব বলাই উচিত হয়নি।’

আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি রাগ দেখিয়ে রুমে চলে এলাম।

.
(কাল একটা শব্দ ভুল লিখেছিলাম। ইলা আপু কে ইহান এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাবে সেখানে হবে জেরিন আপু।)

জেরিন আপু কে ইহান ও ইহানের বড় খালু আনতে গিয়েছে। সেখানে থেকে ইহান ও বড় খালার বাসায় গিয়েছে। ইলিনা বেগম ছেলেকে দেখে খুশি সাথে বোনের মেয়েকে দেখে আরো খুশি। হা করে বিদেশি কালচারের বোনজিকে দেখছেন। কিন্তু বোনজি তার সাথে কথা বললো ইংরেজি তে তাতে তিনি আগামাথা কিছু বুঝলো না। বোকা চোখে তাকিয়ে র‌ইলো।

ইহানকে ধরে বেঁধেও রাতে রাখতে পারলো না। নয়টায় ই বেরিয়ে পরলো। ইলিনা বেগম অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কাজ হলো না। ছেলে তার কথা শুনলো না মুখ কালো করে র‌ইলো।
বাসায় এসে ইহান ফ্রেশ হয়ে কফি খাচ্ছে। ফোনের জন্য মনটা আনচান আনচান করছে। ল্যাপটপ নিয়ে ভিডিও কলে বন্ধুদের সাথে কথা বললো। ফোনের জন্য মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আর ওই ইডিয়েট মেয়েটা উপর রাগ লাগছে। রাগে গজগজ করতে লাগলো ও কল কেটে। এখন বাসায় ফোনের কথাও বলা মুশকিল। এক মাস হয়েছে ফোনের এখন আবার ফোন চাইতে হবে। বাবার কথা শুনতে হবে।

.
আজ টিফিন টাইমে, দুপুরেই স্কুল ছুটি হয়ে গেলো‌। তুলি হাত ধরে বলছে ওর সাথে শপিংমলে যেতে। আমার যাওয়ার ইচ্ছা নাই‌। একা কখনো শপিং মলে যায় না আমি সব সময় আম্মু আব্বুর সাথে যাই‌। একা যাওয়ার অভ্যাস নাই। তাই তুলিকে বলছি যাব না কিন্তু ও তা মানতে নারাজ। ও একা যাবে না। আমাকে নাকি যেতে হবে‌। কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে লাগলো।

‘ আচ্ছা চল। দেরি করবি না কিন্তু।’

‘ আরে দেরি করবো কেন! কেনা হলেই চলে আসবো আমার এতো সময় লাগে না।’

‘ হুম জানি তো। মিশু দের সাথে গেছিলি তখন কতো লেট করেছিলি জানি না তো আমি। তাই না।’

‘ আরে ঊষা সেদিন তো অনেক জিনিস কিনেছি তাই এতো সময় লেগেছিলো। আজ এতো জিনিস কিনমু নাকি শুধু একটা স্ক্যাপ কিনবো।’

‘ আচ্ছা দেখা যাবে। চল তারাতাড়ি।’

দশ মিনিটের রাস্তা এখানে থেকে শপিং মলের তাই চাইলেই হেঁটে যাওয়া যাবে। কিন্তু তা নেওয়া হলো না। কারণ আকাশে রোদের তাপ তীব্র। তাই রিকশা নেওয়া হলো।
শপিং মলে ঢুকে গেলাম আমি আগেই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে। তুলি ভাড়া মিটিয়ে এসে আমাকে নিয়ে লিফটের কাছে এলো। দুতালায় যেতে হবে এখন। মানে কি স্কাপ তো নিচেই আছে উপরে কেন যাচ্ছি।

‘ এই দুতালায় কেন যাচ্ছিস? স্কাপ তো নিচেই আছে।’

‘আমার একটা ঘড়ি ও কিনতে হবে চল না প্লিজ। দোতালায় ঘড়ির দোকান।’

‘ সে তো আমি জানি। কিন্তু তুই তো বলেছিলি শুধু স্কাপ কিনবি।’

‘ঘড়ির কথা তোকে বলতে মনে ছিল না।’

আমি রাগী চোখে ওকে দেখছি। আর কতো কিছু আছে আল্লাহ জানে। কিন্তু কি আর করার। এসেছি যখন সহ্য তো করতেই হবে। লিফটের দরজা খুলেই ঢুকে পরলাম। আমাদের সাথে আর দুইজন ঢুকলো। তাদের একজন কে দেখে আমার চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো।এই তো সেই ধাক্কা দেওয়া ছেলেটা। এখানে কি করছে?
ছেলেটা আমার দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে এগিয়ে এলো।

‘ এই তো পেয়েছি । সেদিন পালিয়ে গেছিলে না। এখন আমার ফোন কেনার টাকা দাও।তোমার জন্য আমি ফোন ছাড়া চলছি দুইদিন যাবত।’

আমি বললাম, ‘ আমি আপনাকে ফোন কেনার টাকা কেন দেবো? ফোন আপনার দোষে ভেঙেছে। নিজের দোষ আমার ঘাড়ে কেন চাপাচ্ছেন? আর সেই দিন আমি পালিয়ে গিয়েছে কে বলল আপনাকে? আমি কি চোর নাকি যে পালিয়ে যাবো?’

‘ পালিয়েই তো গেছো। আমাদের দেখে তারাতাড়ি অটো করে হাওয়া।’

‘দেখুন আপনার জন্য আমার শাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে তো আমি আপনাকে শাড়ি কিনে দিতে বলছি না। আর আপনি নিজের দোষে ফোন ভেঙে আমার পেছনে পড়ে আছেন টাকার জন্য? কি ফাজিল আপনি!”

‘তুমি শাড়ি কেনার কথা বলবে কেন তোমার শাড়ির আর কয় টাকা দাম হবে। আমার ফোন কত দামি ছিল জানো? দেড় লাখ টাকার ফোন ছিল ওইটা।’

‘জানি না জানতেও চাই না আমি কোন ফোন টোন কেনার টাকা পয়সা দিতে পারব না। যেটা দোষ আমার নয় তার খেসারত আমি দিতে যাব কোন সুখে?’

দুলাতায় চলে এসেছি দেখে ছেলেটাকে বললাম, ‘ সরে দাঁড়ান আমরা নামবো।’

‘ আমার ফোনের টাকা দাও।’

‘ বললাম তো দেবো না।’

‘ তাহলে আমি ও সরবো না।’

‘ পাগল নাকি। সরুন

কিন্তু অসভ্য বদ ছেলেটা খাম্বার মত দাড়িয়ে আছে। কি মুসিবতে পরলাম। এবার তুলি কথা বললো। কিন্তু সরলো না। ছেলেটার সাথে একটা ছেলে ছিলো সে এবার এগিয়ে এলো আর ছেলেটাকে টেনে ধরে বললো,

‘ ইহান সামান্য কারনে একটা মেয়ের সাথে এমন করছিস কেন? ছেড়ে দে না। তুই তো কখনো কোন মেয়ের সাথে এমন বিহেভ করিস নি আজ তাহলে এমন করছিস কেন?’

সামনে ফাঁকা পেতেই দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে এলাম। কি ডেঞ্জারাস! আর কোনদিন যেন এই হাফ পাগল ছেলেটা সাথে দেখা না হয় আল্লাহ! এ তো আমাকে একটা সামান্য ফোন এর জন্য যেখানে সেখানে চেপে ধরবে আর অত টাকা নাই কোথা থেকে দেবো। মেয়েদের হেনস্তা করা শুধু। পাশের ওই বন্ধুটার না থাকলে আজকে নিশ্চিতই টাকার জন্য আমাকে আটকে রাখতো।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here