এক চিলতে সিঁদুর পর্ব -০১

বিয়ের দুইদিন পর ডিভোর্স পেপার হাতে পেয়ে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় নিয়তির৷ যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখা৷ যাকে নিয়ে সারাজীবনের জন্য ঘর বাঁধা। সে লোক তাকে ধোঁকা দিল৷ ধপাস করে নিয়তি সোফায় বসে পড়ে৷
.
নির্বণ কোমল কন্ঠে মিষ্টি স্বরে বলে উঠে,
“আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছাতে বিয়ে করিনি৷ আমি তোমাকে নিজের সাথে জড়াতে পারবো না৷ তোমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও৷”
.
নিয়তির কোন সাড়া শব্দ নেই৷ নির্বণের কথাগুলো শুনে যাচ্ছে৷ চারিদিকে অন্ধকার ঘুনিয়ে আসছে৷ মাথার উপর দিয়ে সব যাচ্ছে৷ মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। নিয়তির দুই নয়ন থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ নিয়তির কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নির্বণ নিয়তির কাঁধে হাত রাখে। নিয়তি কাঁধে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে হয়ে উঠে৷
.
নিয়তি চোখের জল মুছে ভাঙা গলায় ,
“আপনি এসব কি বলছেন? আমার সাথে নিশ্চয় মজা করছেন তাই না৷”
.
আমি তোমার সাথে কোন মজা করছি না৷ আমি যা বলছি একদম সত্য কথা বলছি৷ আমি এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না৷
.
নিয়তি অবস্থা বুঝার জন্য নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কথা বলার কোন শক্তি নেই৷ ডিভোর্স পেপার ট্রি টেবিলে রেখে শক্তি না থাকা সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে পড়ে৷ ভাঙা গলায় আটকে আটকে বলে উঠে,
“তাহলে আপনি কেন আমাকে বিয়ে করলেন? আপনি বিয়েতে না করে দিতেন৷ কেন আমার জীবন নিয়ে খেললেন? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। কেন আমার এতো বড় ক্ষতি করলেন?”
.
ক্ষতির কথা আর দোষারোপের কথা শুনে নির্বণ একটু রেগে যায়৷ নির্বণ ক্ষোভ নিয়ে ঘৃনার সাথে বলে উঠে,
“আমি তোমার জীবন নিয়ে খেলতে চাইনি৷ তোমার জীবন নিয়ে খেলেছে তোমার বাবা৷ আমি তোমাকে বিয়ে করেছি শুধু চাহিদা মেটানোর জন্য।
.
নির্বণ আরও কিছু বলতে নিবে তার আগেই নিয়তি নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নির্বণ নিয়তির এমন ব্যবহার দেখে রেগে যায়৷ নির্বণও কোন অংশে কম নয়৷ সেও নিয়তিকে পাল্টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ নিয়তি বিছানার উপর ছিটকে পড়ে যায়৷ ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে৷
.
নির্বণ কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
“তোমাদের মতো মেয়েদের সাথে এমনই হওয়া উচিত। তোমার বাবা তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন৷ আমি তোমাকে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে এসেছি৷”
.
নিয়তি গালে হাত দিয়ে,
“আমাকে যা খুশি তাই বলেন৷ কিন্তু আমার বাবাকে নিয়ে কিছু বলবেন না৷ আমার কাছে আমার বাবা ইশ্বর তুল্য৷”
.
নিয়তির কথা শুনে নির্বণ অট্টহাসি দিয়ে,
“তোমার মতো বোকা মেয়ে এই দুনিয়াতে আর একটাও নেই৷ তুমি কি জানো,আমি তোমাকে দুই দিনের জন্য বিয়ে করেছি?দুই দিনে তোমার রেট কত?”
.
নিয়তি চকিত হয়ে ঘৃণার সাথে উঁচু স্বরে ,
“আমার রেট মানে! আপনি কি আমাকে বাজারের মেয়ে ভাবছেন? আমার রেট থাকবে!”
.
তুমি বাজারের মেয়েদের থেকে কোন অংশেই কম নয়৷ তোমার বাবা তোমাকে দিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন ৷ দুই দিনের জন্য আমার কাছ থেকে তোমার বাবা পুরো পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছেন৷
.
নিয়তি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চিৎকার করে ,
“আর একটা বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷ একবার ডিভোর্স পেপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলছেন, ‘ডিভোর্স দিবেন৷’ আবার এখন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন৷”
.
নিয়তি মুখ চেপে ধরে,
“আমার সামনে উঁচু স্বরে কথা বলার স্পর্ধা দেখাবে না৷ এখনো তুমি আমার রক্ষিতা৷ ৪৮ ঘন্টা এখনো পূর্ণ হয়নি। রক্ষিতা বলেই তোমার সাথে দুইদিন বিছানা শেয়ার করেছি৷”
.
তার মানে আপনি আমাকে চাহিদা মেটানোর জন্য কাছে টেনে নিয়েছিলেন৷ আপনি সেগুলো ভালোবাসা ছিল না৷ সবগুলো আপনার মোহ, চাহিদা ছিল। ছি! আপনার প্রতি আমার লজ্জা হচ্ছে৷
.
“লজ্জা! আমাকে না করে তোমার বাবাকে করো৷ আমি শুধু আমার টাকার তুলে নেওয়ার জন্য তোমার সাথে এসব কিছু করেছি৷ কোন কিছু তো পতিত ফেলে রাখা যায় না৷”
.
নিয়তি আরও রেগে যায়। রাগের কারণে নিয়তির গলার শিরা লাল হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠে। নিয়তি উঁচু স্বরে,
“আপনি অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে খুব পটু৷ নিজের দোষ অন্যের কাঁধে চাপাতে খুব ভালো লাগে৷”
.
নির্বণ চোখ পাকিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমি কারো উপর নিজের দোষ চাপাই না৷ আমার কাছে সব প্রমাণ আছে৷ আমি প্রমাণ করে দিতে পারি৷”
.
হুম দেখান সব প্রমাণ। আমিও দেখতে চাই আপনি কতটা নিচে নামতে পারেন৷ আমিও দেখি কিভাবে আমার সিঁথির সিঁদুর কেঁড়ে নেন?
.
নির্বণ মুখ ভেংচি কেটে মুচকি হেঁসে,
“তোমার সিঁথিতে কোন সিঁদুর নেই৷ তোমার সিঁথিতে লাল রং। আমি তোমার মাথায় সিঁদুর দিব ভাবলে কিভাবে?”
.
নিয়তি নিজের সিঁথিতে হাত দিয়ে,
“আপনি এসব কি বলছেন? আপনি নিজে আপনার মা বাবার সামনে মন্দিরের সামনে আমার মাথায় সিঁদুর পড়িয়েছেন৷”
.
হ্যাঁ সিদুরের জায়গায় রং ছিল৷ আর তুমি যাদের আমার মা বাবা ভাবছো তারা কেউ আমার মা বাবা নয়৷ তাদেরকে টাকার বিনিময়ে হায়ার করা হয়েছে। আর হ্যাঁ তোমাকে এত কিছু বলে কি লাভ? ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলেই হতো৷ আরে ডিভোর্স পেপার দিয়ে কি হবে? আমি তোমাকে বিয়ে করিনি৷
কিছুক্ষণ পর তোমার বাবা তোমাকে নিতে চলে আসবে৷ তখন বুঝতে পারবে আমি মিথ্যা কথা বলিনি৷
.
নিয়তি কিছু বলতে নিবে তার আগেই নির্বণ রুম থেকে বাহিরে চলে আসে৷ নিয়তি ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ে।বিছানার চাদর চেপে ধরে কান্না করতে থাকে। চোখের জল আজ কোন বাঁধা মানছে না৷ নিয়তির নয়ন দুটো দুটো ছোট নদী হয়ে বয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি বাস্তবতাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না৷ নিয়তি একবার নিবর্ণের কথা ভেবে যাচ্ছে৷ আর একবার তার বাবার কথা ভেবে যাচ্ছে৷ তার বাবা কি সত্যিই তার সাথে এমন করেছে? নিয়তি চোখের জল মুছে সব কিছু বুঝার চেষ্টা করে৷ নিয়তি চোখের জল মুছে ঠিক করে নেয়, সে সবকিছু খুঁজে বের করবে৷ নিয়তি দরজা খুলে ডাইনিং রুমে চলে আসে৷ ডাইনিং রুমে নির্বণ বসে বসে সিগারেট খাচ্ছিল৷ নিয়তি নির্বণের হাত ধরে ফেলে৷ নির্বণ নিয়তি কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়৷
.
নির্বণ উঁচু গলায়,
“তোমার সাহস হলো কি করে আমার হাত ধরার?”
.
নিয়তি মাথা নিচু করে টলমল চোখে,
“ভুল করলে ক্ষমা করবেন৷ আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে৷ প্লিজ আমার সাথে রুমে আসেন৷”
.
আমাকে কি তোমার চাকর মনে হয়৷ আমি তোমার কথায় রুমে যাব৷ আমি এখানে বসে আছি তোমার বাবা এখন আসবে৷
.
নিয়তির নির্বণের পায়ে পড়ে যায়৷ পা ধরে বলে উঠে,
“আপনি যা খুশি তাই মনে করেন৷ প্লিজ আমার সাথে একটু রুমে আসেন৷ আপনার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”
.
নিয়তির আকুতি শুনে নির্বণ নিয়তির কথামতো রুমে আসে৷ নিয়তি রুমের দরজা বন্ধ করে বলে উঠে,
“প্লিজ আমাকে সাহায্য করবেন৷”
.
নির্বণ ব্রো কুঁচকিয়ে,
“আমি তোমাকে কেন সাহায্য করতে যাব? আমার কাজ হয়ে গেছে এখন তুমি যেত পারো। তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ এখন আমার নতুন পাখি লাগবে৷ তোমার মতো একদম ভার্জিন।”
.
নির্বণের কথাগুলো নিয়তি গায়ে কাটার মতো বিঁধে যাচ্ছে৷ তবুও নির্বণের মুখ থেকে বাজে কথা শুনছে৷ একজন মানুষ কতটা খারাপ হলে এমন কথা বলতে পারে৷
.
নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে,
“আমাকে একটা কথা বলবেন?”
.
কি কথা? আমার হাতে তেমন সময় নেই৷ কি শুনতে চাও তাড়াতাড়ি বল?
.
ডিভোর্সের বিষয়টা আপনি নিয়েছেন নাকি বাবা৷ প্লিজ আমার প্রশ্ন এভয়েড করবেন না৷
.
আমার মাথায় ডিভোর্সের কোন ধারণা আসেনি৷ আমার চাহিদা মেটানোর পর তাকে এমনি তাড়িয়ে দেয়৷ তোমার বাবাই এসব করেছেন৷ এতে তোমার গায়ে কোন কলঙ্কের দাগ পড়বে না৷ তোমাকে যেন তোমার বাবা আর একটা মুরগীর কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন।
.
আমি বাবাকে ফোন করে কিছু বলিনি৷ তিনি আসলে সব প্রমান হয়ে যাবে। আপনি সত্য বলছেন কিনা মিথ্যা বলছেন।
.
নির্বণ চৌধুরী তোমার মতো দুই টাকার মেয়ের সাথে মিথ্যা কথা বলতে যাবে কেন? কেনই বা সত্যি কথা বলতে যাব? তোমার মতো কতো মেয়ে নির্বণ চৌধুরীর জন্য পাগল।
.
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
আপনি কেমন দুশ্চরিত্র মানুষ আমি হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছি৷ আপনার সব মেয়েদের প্রতি লোভ৷ খাসা মেয়ে খুঁজে যাচ্ছেন৷ এখন আপনার কথা মেনে নিচ্ছি৷ তারপর আমি আপনাকে কিভাবে নাচাই দেখে যান৷”
.
নির্বণ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে,
“আমার হাতে সময় নেই৷ যা বলার তাড়াতাড়ি বল। আমি ডাইনিং রুমে যাচ্ছি৷ তোমার বাবা এসে পড়েছে।”
.
আমার একটা কথা রাখবেন?
.
কি কথা? কি বলতে চাও তা সরাসরি বল? আমি নাটক একদম পছন্দ করি না৷
.
আপনি প্লিজ বাবার সামনে একটাও কথা বলবেন না৷ আপনি শুধু বাবার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবেন৷ যা বলার আমিই বলবো।
.
ওকে৷ আমার সাথে যেহেতু রাত কাটিয়েছি তার বিনিময়ে এই কাজটুকু করে দিব৷ কোন চিন্তা করো না৷ আমি কোন কথা বলবো না৷
.
নির্বণ নিয়তির আর কোন কথা না শুনে ডাইনিং রুমে চলে আসে৷ নিয়তিও নির্বণের পিছু পিছু ডাইনিং রুমে চলে আসে৷ নির্বণের থেকে একটু দৌড়ে বসে কান্না করে যাচ্ছে৷ চোখের জল আটকিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ কিন্তু বারং বার ব্যর্থ হচ্ছে৷ নির্বণের কথামতো কিছু সময়ের মাঝে নিয়তির বাবা বাড়িতে আসে৷ নিয়তির বাবা বাড়িতেই আসতে নিয়তি দৌড়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
.
নিয়তির বাবা এসে নিয়তির চোখের জল মুছে দেন৷ আলতো করে ভালোবাসা শহীত জড়িয়ে ধরেন৷ তারপর যা শুনে সেটা শুনার জন্য নিয়তি একদম প্রস্তুত ছিল না। অন্যদিকে নিয়তির কথা শুনে নির্বণ কি বলবে বুঝতে পারছে না?

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০১
#অধির_রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here