এক চিলতে সিঁদুর পর্ব -০৫

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়

নির্বণ পাগলের মতো আবিরের মাথা নিজের কোলে রেখে বলে যাচ্ছে,
“প্লিজ অধির চোখ মেলে তাকা৷ তোর সাথে আর কখনো খারাপ ব্যবহার করবো না৷ তুই উঠে দাঁড়া।”
.
নির্বণকে দেখে মনে হচ্ছে নির্বণ আবিরের সাথে কিছু করেছে৷ অাবির অচেতন হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। কোন সাড়াশব্দ নেই৷ নিয়তি নির্বণের এমন অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি করে নির্বণের কাছে আসে৷ নির্বণের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,
“কি হয়েছে? এভাবে অচেতন হয়ে পড়ে আছে কেন?”
.
নির্বণ নিয়তিকে দেখতে পেয়ে কিছুটা সাহস পায়৷ অসহায় দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আমি কিছু করিনি৷ নিয়তি আমি সত্যি বলছি আমি আবিরকে ইচ্ছা করে আঘাত করিনি৷ প্লিজ তুমি আবিরকে বাঁচিয়ে দাও৷ আমার তোমার কাছে হাত জোড় করছি৷”
.
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ আবিরের কিছু হবে না৷ আপনি বরং জল নিয়ে আসেন৷”
.
নির্বণ আবিরের মাথা ফ্লোরে রেখে জলে নিয়ে এসে আবিরের চোখে মুখে ছিড়িয়ে দেয়৷ তবুও আবিরের জ্ঞান ফিরছে না৷ নির্বণ মেয়ে মানুষের মতো কান্না করে যাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত রেখে,
“এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না৷ আপনি বরং এম্বুলেন্স ডাকেন।”
.
“আবিরের কিছু হবে না তো৷”
.
“আমি আছি আবিরের কাছে আপনি বরং এম্বুলেন্সকে ফোন দেন৷ যেন তাড়াতাড়ি আসে বলে দিবেন৷”

নির্বণ আর আবির খুব ভালো ফ্রেন্ড। সেই ছোট বেলা থেকে একে অপরের বন্ধু৷ তাদের মাঝে এর আগে এমন কখনো হয়নি৷ কখনো কেউ অন্যের দ্বারা আঘাত পায়নি৷


নির্বণের মন দিয়ে অফিসের কাজ করে যাচ্ছে৷ এমন সময় আবির নির্বণের কাছে আসে৷ নির্বণ আবিরের সামনে বসে বলে উঠে,
“কি রে, এতো মন দিয়ে কি কাজ করিস?”
.
নির্বণ ফাইলের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠে,
“নতুন একটা প্রজেক্টের কাজ পেয়েছি৷ আমি চাই সেই প্রজেক্টটা সর্বোচ্চ হোক৷ আর এই প্রজেক্টের সাথে আমার মান সম্মান জড়িয়ে আছে৷”
.
“চিন্তা করিস না৷ তোর প্রজেক্টই বেস্ট হবে৷ তুই সেই ছোট বেলা থেকে অফিসের কাজ করে যাচ্ছিস৷ তোর প্রজেক্টের কাছে সবকিছু হার মানবে৷”
.
“খুব ভয় লাগছে। কিছু ভুল হয়ে গেলেই সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে৷ আমার মান সম্মান সব এই প্রজেক্টের উপর জড়িয়ে আছে।”
.
“এতো চিন্তা করার কোন কারণ নেই৷ তুই প্রজেক্টে হার মানলেও আমি তোকে আমার শালা সাবু বানাবো৷”
.
শালা বাবু কথাটা নির্বণ ভালোভাবে নিতে পারল না৷ নির্বণ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আবির তুই তোর লিমিটের মাঝে থাকবি৷ তুই ভুলেও আমার বোনের দিকে চোখ তুলে তাকাবি না৷”
.
আবির আধিক্যেতা দেখিয়ে নির্বণে কাছে এসে ঘুরঘুর করে বলে উঠে,
“তুই যায় বলিস না কেন? ছোঁয়া শুধু আবিরের। আবির ছোঁয়াকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না৷”
.
নির্বণ নিজের রাগ কন্টোল করতে না পেরে আবিরকে ধাক্কা দেয়৷ আবির দেয়ালের সাথে ভারী খায়৷ সাথে সাথে আবির চিৎকার করে ফ্লোরে পড়ে যায়৷
.
নির্বণ সারা রুমে পায়েচারী করছে। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না৷ এম্বুলেন্সের লোক ফোন ধরছে না৷ নিয়তি হুট করেই বলে উঠে,
“আবিরের জ্ঞান ফিরেছে৷ আবির সুস্থ হয়ে যাবে৷ কোন চিন্তা করতে হবে না৷”
.
নির্বণ তাড়াতাড়ি করে আবিরের কাছে আসে৷ আবির পিন পিন করে আঁখি মেলে তাকায়। আবির আঁখি মেলে তাকিয়ে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ নির্বণের চোখে মুখে ভয়ের আতঙ্ক। আবির ধীরে ধীরে বলে উঠে,
“কি হয়েছে? তুই এভাবে ভয় পেয়ে আছিস কেন?”
.
নির্বণ আবিরকে জড়িয়ে ধরে,
“তুই ঠিক আছিস তো? তোর কিছু হয়নি তো৷ তোর কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না৷”
.
“আরে ছাড় আমাকে৷ তুই যেভাবে জড়িয়ে ধরে আছিস মনে হচ্ছে আমি এখনই মরে যাব৷ আমার কিছু হয়নি৷ আমি একদম ঠিক আছি৷”
.
নির্বণ আবিরকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়৷ আবির রুমে নির্বণকে ছাড়া আরও একজনকে দেখতে পাই৷ সে আর কেউ নয়৷ সে হচ্ছে নিয়তি৷ আবির নিয়তির দিকে তাকিয়ে,
“কে তুমি! তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না৷”
.
নির্বণ কিভাবে নিয়তির পরিচয় দিবে বুঝতে পারছে না? নির্বণ মাথা নিচু করে ফেলে৷ নিয়তি পরিস্থিতি বুঝতে পেয়ে বলে উঠে,
“আমি স্যারদের বাসায় কাজ করি৷ স্যারের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি৷”
.
আবির এক পলক নিয়তির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি নির্বণের বাসায় কাজ করো৷ কে তুমি? সত্যি করে বলবে।”
.
“না আপনি ভুল ভাবছেন! আমি সত্যি সেই বাসায় কাজ করি৷ সবাই আমাকে খুব আদর করে৷”
.
“আমি ওই বাসায় আরও আগে গিয়েছি৷ কিন্তু তোমাকে কোনদিন দেখতে পাইনি৷ কোন একটা রহস্য তো আছেই৷”
.
নির্বণ আবিরের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,
“তুই যেভাবে কথা বলছিস মনে হচ্ছে তুই একজন এডভোকেট। এভার তুই চুপ করে বস। চল আমরা একসাথে খাবার খাবো৷”
.
নিয়তি খাবার তাদের সামনে রেখে বাড়িতে চলে আসে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে সে একদম ঠিক কাজ করেছে আজ৷ যদি আবিরের সামনে সত্য কথা বলে দিলে নির্বণের মাথা নিচু হয়ে যেত৷ মেয়েরা এমনই হয়৷ হাজার অপমান করার পরও স্বামীর মাথা নিচু হতে দিবে না৷ সব সময় স্বামীর পাশে থাকতে চাই৷ বাঙালি মেয়েদের কাছে এক চিলতে সিঁদুর তার কাছে অনেক মূল্যবান৷
________

নিয়তি রুমের ভিতরে পা রাখতেই ছোঁয়া পথ আটকিয়ে দাঁড়ায়৷ ছোঁয়া নিয়তির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমার প্রিয় দিদি৷ এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?”
.
নিয়তি ছোঁয়ার রাগ বুঝতে পারে। ছোঁয়াকে দিয়ে অনেকগুলো কাপড় পরিষ্কার করিয়েছে৷ ভাবতেই নিয়তির হাসি পাচ্ছে৷ ছোঁয়াকে রাউন্ড করে বলে উঠে,
“ছোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য রাগ ভালো নয়৷ সকল রাগকে মুছে ফেলো। জলদি খাবার টেবিলে আসো খেতে দিচ্ছি৷”
.
ছোঁয়া নাক ফুলিয়ে বলে উঠে,
“আমি কিছু খাবো না৷ আমি তোমাকে দেখে নিব৷ আমি তোমাকে কিছুতেই ছাড়বো না৷”
.
নিয়তির ছোঁয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে নিয়তির একটা পিক তুলে৷ ছোঁয়ার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে,
“ছোঁয়া রাগ করো না৷ তোমার যখন ইচ্ছা তখন আমাকে দেখে নিতে পারবে৷ প্রয়োজন পড়লে ফোনের ওয়ালপেপারেও রেখে দিতে পারো৷ আমি কিছু মাইন্ড করবো না৷”
.
ছোঁয়া রাগে গজগজ করতে নিজ রুমে চলে যায়৷ নিয়তি ছোঁয়ার এমন অবস্থা দেখে হেঁসে উঠে৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
“তোমাদের দুই ভাই-বোনদের আমি সঠিক পথে নিয়ে আসবো৷ গরিবদের আর অবহেলা করতে দিব না৷ আমি নিয়ে আসবো তোমাদের মাঝে সমতা৷”
______

নিয়তি নির্বণের মায়ের কাছে আসে৷ নির্বণে মা নিয়তিকে দেখে কাছে টেনে নিয়ে বসান৷ তিনি মুচকি হেঁসে বলে উঠেন,
“তুই আজ ঠিক কাজ করেছো? তুমি নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে ছোঁয়াকে দিয়ে আজ অনেকগুলো কাপড় পরিষ্কার করিয়েছো?”
.
নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার উপর রাগ করেছেন৷”
.
“আমি তোমার উপর রাগ করবো কেন?”
.
“আমি ছোঁয়াকে এতো কাজ করিয়েছি৷ ছোঁয়া এসব কাজ করতে অভস্ত্য নয়৷ কিন্তু আমি তাকে দিয়ে জোর করে কাপড় ধৌত করিয়েছি৷”
.
নির্বণের মা এক রাশি হাসি দিয়ে,
“আমি খুব খুশি হয়েছি৷ তাকে তো সবকিছু শিখতে হবে৷ এভাবে অহংকার নিয়ে বড় হতে থাকলে তার জীবনে অনেক সমস্যা আসবে৷ তুমি তোমার বুদ্ধি খাটিয়ে তাকে কাজ শিখিয়ে দিবে৷”
.
নির্বণের মায়ের হাতের উপর হাত রেখে বলে উঠেন,
“মা আপনি কোন চিন্তা করবেন না৷ আমি সব ঠিক করে দিব৷ ছোঁয়াকে একজন আদর্শ মেয়ে হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে৷ শুধু আপনি আমাকে সঙ্গ দিবেন৷”
.
নিয়তির গালে হাত রেখে,
“আরে পাগলী, আমি সব সময় তোমার পাশে আছি৷ তুমি তোমার কাজে অটুট বিশ্বাস রাখো৷ সাফল্য একদিন আসবেই৷”
.
নিয়তি এতোদিন পর কাউকে ভরসা করতে পারছে৷ নির্বণের মায়ের ভালোবাসা পেয়ে নিয়তির চোখে জল এসে পড়ে৷ নিয়তির চোখের জল মুছে দিয়ে,
“কোন কান্না নয়৷ কান্না মেয়েদের দুর্বল করে তুলে৷ আমি চাই তুমি সব সময় হাসিখুশি থাকো৷”
.
“হুম আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আর চোখের জল ফেলবো না৷ এখন থেকে হাসিখুশি থাকবো৷ আর সকল বাঁধার সাথে মোকাবেলা করবো৷”
_____

রাতের বেলা নিয়তি চুপি চুপি নির্বণের রুমে আসে৷ নির্বণের গায়ে কম্বল দিয়ে চলে যেতে নিলেই….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here