এক চিলতে সিঁদুর পর্ব -০৮

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়

চব্বিশ ঘন্টা হতে কিছু সময় বাকী রয়েছে৷ সকল ডাক্তার তাদের আশা ছেড়ে দিয়েছেন৷ সকলেই বলাবলি করছেন নির্বণ আর বেঁচে নেই৷ যেখানে মানুষের আশা ভরসা শেষ হয়ে যায়৷ সেখন থেকেই মহা দেবের আশীর্বাদের শুরু হয়। একটা নার্স নোটিশ করে নির্বণ হাতের আঙ্গুল নাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ নার্স বলে উঠে,
“স্যার পেসেন্ট রেসপন্স করছে।”
.
নার্সের কথা শুনে সবাই নির্বণের দিকে তাকায়৷ নিয়তির ভেজা চোখ একটু আশার আলো দেখতে পাই৷ নির্বণের মায়ের চোখ এখনো ছলছল করছে। এটা কোন কষ্টের অশ্রু নয়৷ সুখেও মানুষের চোখে অশ্রু আসে৷”
.
ডক্টর সবাইকে বাহিরে চলে যেতে বলেন৷ সবাই ডক্টরের কথামতো বাহিরে চলে আসে৷ সবার মুখে হাসি৷ হাতে যেন চাঁদ পেয়ে গেছে৷ সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে ছোঁয়া। নিয়তি আগুনকে হসপিটাল থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু আগুন চলে যাওয়ার পাত্র নয়৷ আগুন নিজের পোশাক পরিবর্তন করে হসপিটালে থেকে যায়। ছোঁয়াকে শক্তি জুগানোর জন্য আবির চলে আসে হসপিটালে। বিপদের সময় চেনা যায় কাছের মানুষ কে? নিয়তি নির্বণের মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়৷ তিনি হসপিটালে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন৷ নিয়তি চাইনা আর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ুক৷
.
দুপুরের দিকে আবির ছোঁয়ার কাঁধে হাত রেখে,
“চল ছোঁয়া, মুখে কিছু দিবে৷ কাল থেকে তুমি মুখে কিছু দাওনি৷”
.
ছোঁয়া এক বুক কষ্ট নিয়ে,
“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না৷ প্লিজ আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করবেন না৷”
.
আবির ছোঁয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,
“ছোঁয়া তুমি না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে৷ প্লিজ অল্প কিছু পরিমান খেয়ে নাও৷”
.
ছোঁয়া কাঁদু কাঁদু স্বরে,
“প্লিজ আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করবেন না৷ আমার একটুও ক্ষুধা নেই৷”
.
পৃথিবীতে ভাই বোনের ভালোবাসা কোন তুলনা হয়না৷ বোন ভাইকে ছাড়া থাকতে পারে না৷ ভাই বোনকে ছাড়া থাকতে পারে না৷ ভাইয়ের অভাব বুঝতে পারে সেই বোন যার কোন ভাই নেই৷ তেমনি বোনের অভাব বুঝতে পারে বোনহীন ভাইগুলো৷ ভাইয়ের শোকে পাথর হয়ে গেছে ছোঁয়া। দূর থেকে সবকিছু দেখছিল নিয়তি৷ নিয়তি ছোঁয়ার কাছে এসে,
“ছোঁয়া জিৎ করো না৷ তুমি কিছু খেয়ে নাও৷”
.
“প্লিজ দিদি আমাকে বিরক্ত করো না৷ আমার গলা দিয়ে কিছু নামবে না।”
.
নিয়তি ছোঁয়ার কথা শুনে চকিত হয়ে যায়৷ ছোঁয়া কখনোই নিয়তিকে পাত্তা দিত না৷ সব সময় নিয়তিকে ইগনোর করে চলতো৷ অপমান করতে দুই বার ভাবতো না৷ নিয়তি ছোঁয়ার কাছে বসে৷ নিয়তি ছোঁয়ার হাতে হাত রেখে,
“তুমি কি তোমার দাদাকে ভালোবাসাে না?”
.
নিয়তির দিকে চোখ করে তাকিয়ে,
“আমি আমার দাদার জন্য সবকিছু করতে পারি৷ আমার জীবনের থেকে বেশি আমি আমার দাদাকে ভালোবাসি৷”
.
“তুমি কি জানো? তোমার জন্য তোমার দাদা কষ্ট পাচ্ছে৷ তোমার দাদা সব সময় তোমার মুখে হাসি দেখতে চাইতো৷”
.
ছোঁয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ নিয়তির ছোঁয়ার হাত ধরে বলে উঠে,
“তোমাকে তোমার দাদার জন্য শক্ত হতে হবে৷ তুমি তোমার দাদার সাহস হবে। প্লিজ মন খারাপ করো না৷ খাবার খেয়ে নাও৷”
.
নিয়তির কথামতো ছোঁয়া খাবার খেতে রাজি হয়ে যায়। আবির ছোঁয়ার হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই ছোঁয়া থেমে যায়৷ আবির চকিত হয়ে,
“আবার কি হলো ছোঁয়া? তুমি দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?”
.
ছোঁয়া নিয়তির হাত ধরে,
“নিয়তি চলো আমাদের সাথে। তুমিও কাল থেকে কিছুই খাওনি৷”
.
নিয়তি মলিন হাসি দিয়ে,
“আমার কিছু হবে না৷ তুমি বরং খেয়ে আসো৷ এখানে তো একজনকে থাকতে হবে৷”
.
ছোঁয়া অভিমানী স্বরে বলে উঠে,
“এখানে কাউকে থাকতে হবে না৷ দাদার কিছু হবে না৷ আর আমরা দূরে কোথাও যাচ্ছি না৷”
.
নিয়তির এক প্রকার অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও তাদের সাথে খাবার খেতে চলে আসে৷ লোক দেখার মতো কিছু খাবার দুই জনে খেয়ে নেয়৷ আবার পুনরায় চলে আসে নির্বণের কাছে৷
.
.
দেখতে দেখতে হসপিটালে কেটে যায় বারো দিন৷ ছোঁয়া আবিরের সাথে মিলে ব্যবসার কাছে যোগ দেয়৷ যেন নির্বণ সুস্থ হয়ে সবকিছু ফিরে পায়৷ নিয়তিকে সঙ্গ দিয়ে গেছে আগুন চৌধুরী। আগুন নিয়তি প্রেমে পড়ে যায়৷ আগুন জানে না যে ‘নিয়তি নির্বণের ওয়াইফ৷’ আগুন ভালোবাসার টানে হলেও একবার নিয়তিকে দেখতে আসে৷ নিয়তি নিজের সবকিছু দিয়ে নির্বণকে সেবাযত্ন করে যাচ্ছে৷ আজ নির্বণকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাই এসেছে৷ নির্বণ এখনো বিছানা বাসী৷ কথা বলতে পারলেও কোম কাজ করতে পারে না৷ হাঁটা চলা করার জন্য অন্যকে ভর করতে হয়৷
.
নির্বণকে বাড়িতে নিয়ে আসে৷ রাতের বেলা সবাই যখন নির্বণের রুম থেকে চলে যায় তখন নির্বণ নিয়তিকে বলে উঠে,
“তুমি কেন আমার জন্য এতো কষ্ট করছো? আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি৷”
.
নিয়তি ছলছল চোখে,
“প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুস্থ করতেছি৷ অসুস্থ মানুষের সাথে তো আর প্রতিশোধ নেওয়া যায়না৷ সুস্থ হবার পর আমি আমার প্রতিশোধ নিব৷”
.
নির্বণ অতি কষ্টে বলে উঠে,
“তুমি কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও৷ তুমি তো এখন সহজেই প্রতিশোধ নিতে পারো।”
.
নিয়তি চকিত হয়ে,
“এখন আমি কিভাবে প্রতিশোধ নিব৷ শত্রু পক্ষ যখন দুর্বল থাকে তখন আমি প্রতিশোধ নেয় না৷”
.
“এখন তুমি ইচ্ছা করলেই আমাকে ছাঁদ থেকে ফেলে মেরে ফেলতে পারবে৷ তা না করতে পারলে কলা টিপেও তো প্রতিশোধ নিতে পারো। তোমাকে আর বিরক্ত করবো না৷ আমি মরে গেলে তো সব শেষ।”
.
নিয়তি নির্বণের মুখ ধরে ফেলে৷ অশ্রু ভরা চোখ নিয়ে,
“এমন কথা কোনদিন বলবেন না৷ আমি আপনার মুখ থেকে এমন কথা শুনতে চাইনা৷”
চোখ পাকিয়ে বলে উঠে,
“আপনাকে রেস্ট নিতে বলেছে। এসব নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে বলেনি। এখন ঘুমিয়ে নেন৷”
.
নির্বণ ঘুমানোর পর নিয়তি নির্বণের রুমে সোফায় শুয়ে পড়ে৷ ছোঁয়া নির্বণকে ছেড়ে কোথায় যেতে চাইনা৷ কখন নির্বণের কি দরকার পড়ে জানা নেই৷
.
পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিয়তির। আঁধার কাটিয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। নিয়তি সকলের জন্য সকালের ব্রেক ফাস্ট বানায়৷ নির্বণকে নিয়ে ছাঁদে আসে৷
.হালকা শীতের আমেজে সোনালী রোদ্দুরের আলো গায়ে মাখাতে কে না চাই৷ সকালের আলো মানুষের মন ভরিয়ে দেয়৷ ছোঁয়ার কাঁধে হাত রেখে হেঁটে যাচ্ছে নির্বণ। নিয়তি ক্লান্ত হয়ে নির্বণকে ছাঁদের দোলনায় বসিয়ে দেয়৷
.
নিয়তিকে দুষ্টামি করে বলে উঠে,
“আপনাকে একদম পাগল লাগছে৷ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি আজই পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছেন৷”
.
নির্বণ চোখ ছোট করে,
“আমাকে দেখে তোমার পাগল মনে হয়৷ আমাকে কোন দিক থেকে তোমার পাগল মনে হয়৷”
.
নিয়তি ফিক রে হেঁসে দিয়ে,
“আপনার গাল ভর্তি দাঁড়ি দেখে আপনাকে পাগল লাগছে৷ আপনি তো এতোদিন মুখ শেফস করতে পারেননি৷ একদম হনুমানের মতো লাগছে।”
.
নির্বণ মুখটা ছোট করে,
“আমাকে দেখে না হেঁসে পারলে আমার মুখ ক্লিন করে দাও৷”
.
নিয়তি নির্বণের দাঁড়িতে হাত দিয়ে,
“আপনাকে পাগল দেখালেও সুন্দর লাগছে৷ তবে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি আপনার দাঁড়ি ক্লিন করে দিচ্ছি৷”
.
নিয়তি বাড়িতে একজন নর সুন্দরকে ডেকে আনে।তিনি অতি যত্ন সহকারে নির্বণের চুল দাঁড়ি ছোট করে দেয়৷ নির্বণ এক প্রকার হাফ ছেড়ে বাঁচে।
.
এভাবে আরও কেটে যায় এক মাস৷ নির্বণ এখন অনেকটা সুস্থ৷ নিজে থেকে হাঁটতে পারে। তবে বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে না৷ নির্বণের শরীর এখনো অনেক ক্লান্ত৷ নির্বণের হাঁটা চলার একমাত্র সঙ্গী হলো নিয়তি। নিয়তিকে ছাড়া নির্বণ এক পাও এগিয়ে যেতে পারে না৷
অফিসের সকল কাজ ছোঁয়া নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে৷ রাতে বাড়ি ফিরলে নিয়তিকে সাহায্য করে। নিয়তির কষ্ট কম করার জন্য নিয়তির কাজ ছোঁয়া করে দেয়৷ যে ছোঁয়া এক গ্লাস জল ভরে খেতে পারতো না। আজ সেই ছোঁয়া নিজের কাঁধে ব্যবসা ভর তুলে নিয়েছে৷ বুদ্ধির সাথে সকলের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
.
ছোঁয়া ধীরে ধীরে আবিরকে ভালোবাসতে শুরু করে। ছোঁয়া বুঝতে পারে মা, দাদার পরই আবির তাকে সুখে রাখতে পারবে৷ কিন্তু আবিরের ভালোবাসা সে প্রকাশ করে না৷ আবিরের প্রতি ছোঁয়ার দুর্বলতা ছোঁয়া আবিরকে বুঝতে দেয় না৷
.
রাতের বেলা নির্বণ ঘুমানোর পর ছোঁয়া নিজের রুমে চলে আসে৷ নির্বণের গায়ে কম্বল দিয়ে নিয়তি চলে আসতে নিলেই…

চলবে…..

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here