এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ৩২

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৩২.
_______________
সাফা এখনো নিভ্রর বুক ভাসাতে ব্যস্ত। নিভ্র বুঝে উঠতে পারছে না এমন কান্ডের কারন কি।হতভম্ভ হয়ে সাফাকে এক হাতে জড়িয়ে নিভ্র মাঝ মাঠে বসে আছে।বুকের বাঁ পাশটায় শিরশিরে অনুভুতি হচ্ছে। কালিজার পাশের হৃৎপিন্ডটা নিজ গতিতে লাফাচ্ছে।নিভ্র ডান হাত দিয়ে আর একটু টেনে নেয় সাফাকে।সাফার কান্না থামে।অগণিত হিঁচকির শব্দ নিভ্রর কানে আসে।শার্ট ভিঁজে ভাসিয়ে দিয়েছে।সাফা লজ্জায় নিজের চোখ খিঁচে। এটা কি করে ফেলেছে??প্রপোজ করেছে কথায় উত্তর দিবে তা না নিভ্রর বুঝে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।সাফা হুশ যেনো হুট করেই ভর করে শরীরে।লজ্জায় লাল হয় সে।সাফা এক ঝাটকায় সরে আসে।মনের সকল সুপ্ত অনুভুতি, আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসা সব গলায় এসে আঁটকে পড়ে।সাফা নিচের দিকে তাকায়।সবুজ ঘাসের বুকে এতসময় ছিল তারা।নিভ্র শান্ত চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে সাফার দিকে।সাফা একবার চোখ তুলে তাকায়।চোখে চোখ পড়ে সাফা সরিয়ে নেয় চোখ।কিছুসময়ের আগের কথা মনে পড়ে।নিজেকে নিজে ঝাড়ি দেয়।কত সুন্দর একটা মুহূর্ত সে নিজের কান্না দিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে।সাফা আহত চোখে নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্র একুই ভাবে বসে একদৃষ্টিতে সাফার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝার চেষ্টা করছে সাফা কি করতে চাচ্ছে??সাফা চুপ করে থাকে।লজ্জা ভয় তাকে গ্রাস করছে মুহূর্তেই।কাঁপনি সৃষ্টি করছে রঞ্জে রঞ্জে। সাফা শাড়ির আচঁল দিয়ে আঙ্গুল পেঁচাতে থাকে।নিজের আঙুল নিজে টানে।নিভ্র একদৃষ্টিতে সাফাকে পর্যবেক্ষণ করে।তারপর বলে…………
——” কি হয়েছে তোমার??অসুস্থ লাগছে??”

সাফা মাথা নাড়ায়।না বুঝাতে চায়।নিভ্র একটু কাছে এগিয়ে আসে।কান্নার কারনে সাফার নাক মুখ চোখ লাল হয়ে আছে।চোখের কাজল লেপ্টে গেছে।নিভ্র সাফার কাছে এসে তার মুখে নিজের দুই হাত রাখে। লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দেয়।সাফা তাকিয়ে থাক একনজরে।নিভ্র সাফার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।সাফার মুখের একদম কাছে মুখ নিয়ে এসে গভীর আবেগ মাখিয়ে ফিসফিসে বলে,
—–” যদি তোমার থেকে কিছু চাই দিবে??”

সাফা ভারী অবাক চোখে তাকায়।কিছু না বুঝেই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়।চোখ তুলে একবার নিভ্রর চোখে চোখ রাখে।দুটি চোখ এক হয়।নিভ্রর চোখে একরাশ নেশা।নেশাতর চোখে সাফার চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়। সাফার শরীর কাঁপে।বুকে হাতুরি পিটায় কেউ।নিভ্র বলে,
—-” আমি তোমাকে চাই সাফা।নিজের করে।আমার অন্ধকার ঘরের জোনাকির আলো করে রাখতে চাই।হবে আমার??”

নিভ্রর নিঃশ্বাস বিহিন কথা।সাফার দম আঁটকে শুনা।নিভ্র থামে।চোখ তুলে সাফার চোখে তাকায়।তারপর বলে,
——” কি হল?? তুমি কি শুনতে পাচ্ছ আমার কথা??”
সাফা এখন দম আঁটকে বসে আছে।হাতপা কাপঁছে ভয়ংকর ভাবে।তার মত চঞ্চল মেয়ের কখনো এমন অবস্থা হবে সে ভাবে নি।সাফা চোখ বুজে থাকে কিছু সময়।মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে।মানে সে সব শুনছে।নিভ্র সাফার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কখন চোখ খুলবে সে অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে।সাফা নিঃশ্বাস ফেলে দীর্ঘ করে। চোখ খুলে তাকায়।নিভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠা গলায় বলে,
——” এত প্রেম আপনার মনের কোটারে কবে জমেছে জানি না!!কিন্তু আমি মরেছি আপনার সবুজ চোখে বহু আগে!!বহু আগেই চেয়েছি আপনার জোনাকি হয়ে আকাশে ভাসতে।আমি বহু আগেই চেয়েছি আপনার বহুতে জীবন দিতে!!”

নিভ্র নিষ্পলক চাহনি।কত আবেগ,কত অনুভুতি নিয়ে বলেছে সাফা।নিভ্রর হৃৎপিন্ডে শীতল হওয়া বহে।নিভ্র নিজের মুঠো খোলে।সাফার ডান হাত নিজের হাতে রাখে।একটা ছোট ডায়মন্ড খজ্জিত রিং সাফার ডান আঙ্গুলে পরিয়ে দেয়।সাফা অবাক,বিস্মের সাথে তাকিয়ে সব দেখে।নিভ্র এবার সাফার হাতের তালু বুকে রাখে।সাফার শরীর কেঁপে উঠে মুহূর্তেই।হাতপা কাঁপছে গতি বিহিন।নিভ্র একবার সাফাকে দেখে।তারপর হাত ছেড়ে কোলে তুলে নেয়।আকাশ কালো মেঘে ডেকে গেছে।বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোটা গায়ে পড়ছে আবেশে।সাফাকে নিভ্র গাড়িতে বসিয়ে দেয়।নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে।সাফার যেতে ইচ্ছে করেনা।নিভ্রর পাশে থাকতে তার ভালো লাগে।কিন্তু এখন যেতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে।সাফা মুখ ভার করে।নিভ্র তাকায়।প্রশ্ন করে,
——” কি হয়েছে সাফারানীর??”
——” আমরা এখনই বাসায় যাবো??না মানে একটু পড়ে গেলে হয় না??”
নিভ্র হাসলো।হাঁসতে হাঁসতে বললো,
——” আজ যদি সারা দিন আমার সাথে থাকতে হয় বেশি কি ক্ষতি হবে??”

সাফা অবাক হয়।অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়।নিভ্রকি মনের কথা পড়তে পাড়ে??প্রশ্ন জাগে মনের খাঁজে। সাফা এটাই চেয়েছিল মনে প্রানে।সাফা হাঁসে ঠোঁট টিপে।নিভ্র গাড়ি স্টার্ট দেয়।সাফা জানালায় মুখ করে বসে।মাঝে মাঝে নিভ্রকে দেখে।কিছু মিনিটের ব্যবধানে বৃষ্টি নামে।আকাশে মেঘ ছিলো।আজ হঠাৎ বৃষ্টি নেমেছে।সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ।তবে আগের দিনও বৃষ্টি ছিলো না।আজ হঠাৎ করেই বৃষ্টির আগমন।সাফার মুখে পানির ছিটে আসে।তবুও তার চোখ জানালার বাহিরে।নিভ্র তাকিয়ে থাকে।তারপর বলে,
—– “জানালা বন্ধ করো। তা না হলে ভিঁজে ঠান্ডা লাগবে।”
—-“উঁহু”
—-“উঁহু কি??সব সময় আপন মর্জিতে চলা ছাড়া আর কিছু ভালো লাগে না??”
সাফা ঘুড়ে তাকায়।আগের কথায় পাত্তা না দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—–” কোথাই যাবো আমরা??”
——“কোথায় যেতে যাও??”
—–“রাতারগুলে!!চলেন যাই।”
নিভ্র সাফার দিকে তাকায়।সাফার সাথে একা সময় কাটাবে বলে সে সবার থেকে লুকিয়ে এনেছে আর সে কি না আবার সবার কাছে যেতে চাচ্ছে। নিভ্র দীর্ঘশ্বাস নেয়।তারপর বলে,
——“না ওখানে যাওয়া যাবে না।অন্য জায়গায় যাবো।”
সাফা অভিমানের সুর তুলে বললো,
——“আমি নৌকার বুকে ভেসে ছবি তুলবো বলে ঠিক করেছিলাম।কত ইচ্ছা ছিলো।আপনি তা হতে দিলেন না!!সব ইচ্ছায় মিনারেল ওয়াটার ঢেলে দিলেন।”

নিভ্র হাঁসে। একটু শব্দ হয়। সাফা চোখমুখ কুঁচকে তাকায়।নিভ্র বলে,
——-“নৌকার বুকে ভাসতে হবে কেনো??আমার বুক ভাসিয়ে শান্ত হয়ওনি??”
—–“আরে ওটাতো,! আমি এক্সাইটেড হয়েগেলে বা অপ্রত্যাশিত কিছু জীবনে হলে কান্না পায় মাথা ঘুড়ে তাই তো এমন করলাম।আর আমি ভেবে ছিলাম আপনি মাহি আপুকে পছন্দ করেন তাই!!

সাফা নিজের মুখ চেঁপে ধরে।বলতে বলতে সে সব বলে দিয়েছে। এটা সে চায় নি।নিভ্র আবার হাঁসে। সাফা তার জীবনে হাসির ঢল নিয়ে এসেছে।প্রতিটা কাজে, কথায় তাকে হাসিয়ে ছাড়ে।নিভ্র সাফার দিকে একবার তাকিয়ে সামনে তাকায়।তারপর মুখে বললো,
—–“চলো চা বাগানে যাই।”

সাফা খুশি হয়।খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করে।চা বাগানে যাওয়ার ইচ্ছেটা পুরানো।তাই আরো বেশি খুশি লাগছে।সাফা কথা বাড়ায়নি।দুজনে চুপ করে থাকে কিছু সময়।নিভ্র গাড়ি চালাতে মনযোগী। সিলেটের রাস্তা এঁকে বেঁকে চলেছে।তার উপর বৃষ্টির ঝাপ্টা।সাফা কান পেতে শব্দ শুনে।বৃষ্টির শব্দে মাদকতা আছে।বৃষ্টিকে প্রেমের একটা অধ্যায় হিসেবে ধরা হয়।খুবই গুরুত্বপর্ন এবং সুন্দর একটি অধ্যায়।ঝুম ঝুম শব্দ কখনো আবার ঝুমুড়ঝুমড়। কখনো হালকা ক্ষিণ শব্দ। কখনো আবার ভারী গভীর শব্দ।প্রতি শব্দেই প্রেমের গন্ধ পাওয়া যায়।যেনো উপড় থেকে ভালোবাসা বর্ষন হচ্ছে। যে করছে সেও ভালোবেসেই বর্ষন করছে।দুজন ব্যক্তি বসে পাশা পাশি।আকাশ মেঘে, বৃষ্টির গুমড় শব্দ।বাহিরেও ভালোবাসা মনের মাঝেও অফুরন্ত ভালোবাসা। চারদিকে যেনো ভালোবাসার কলরব।সাফা জানালা আরো খুলে দেয়।বৃষ্টিরা এসে আছঁড়ে পড়ে তার চোখে মুখে।চোখবুজে আবেশে তা গ্রহন করে সাফা।হাত বড়িয়ে দেয় বাহিরে। ছুঁয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছা তার।সাফার সামনের চুল উড়ে।শাড়ির আচঁল উড়ে এসে মুখে পড়ে নিভ্রর। নিভ্র ফিড়ে তাকায়।আচঁল টেনে হাতে পেঁচিয়ে নেয়।সাফা একমুঠো বৃষ্টি নিয়ে নিভ্রর দিকে তাকায়।মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি আসে।মুঠোভর্তি পানি নিভ্রর মুখে ছুঁড়ে দেয়।তারপর খিলখিল করে হাসে।নিভ্র তাকায়।রাগি রাগি ভাব নেয়।ঠোঁটে তার হাসি,
—–” বাচ্চাদের মত দুষ্টুমি না করে জানালা বন্ধ করো সাফা।ভিঁজে গেছো তুমি।এখন বেশি ভিঁজলে ঠান্ডা লাগবে।”

সাফা মুখবাঁকায়।তারপর বুক ফুলিয়ে বলে,
—–“নিজেকে কি অনেক বড় ডাক্তার মনে করেন??হু!!আমি এসব ডাক্তারেরো বড় ডাক্তার।তাই শিখাবেন না।আমি কি আপনাকে ভয় পাই মনে করছেন??মোটেও না।তাই এভবে তাকাবেন না ডাক্তার সাহেববববব।

নিভ্র হাঁসে শব্দ করে।সে শব্দ প্রতিধ্বনিত হয় গাড়ির কোনায় কোনায়।সাফা মুগ্ধ হয়ে দেখে সে হাসি।নিভ্র সামনে তাকিয়ে থেকে থেকে সাফার দিকে তাকায়।তারপর বলে,
—-“হুম আমি জানি তো কত বড় ডাক্তার তুমি।এবার জানালার গ্লাস উঠাও।শাড়ির সামনের দিক ভিঁজে গেছে তো!!আরো ভিঁজে যাবে আলরেডি ভিঁজে যাচ্ছে। উঠাও বলছি!!

সাফা জানালার গ্লাস উঠিয়ে দেয়।একটু খোলা রাখে বাতাসের জন্য।তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার সামনের অংশ অনেকটাই ভিঁজে গেছে।সাফা নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
—–“আর কতক্ষণ লাগবে??”
—- “বেশি না ১০-১৫মিনিট।বৃষ্টি মনে হয় থেমে যাবে।
সাফা আবার চুপ করে বসে।কিছুক্ষণ ভাবে তারপর বলে,
—– “যদি বৃষ্টিতে ভিঁজে ভিঁজে চা বাগান দেখি অনেক মজা হবে তাই না??তাহলে আমরা ভিঁজে ভিঁজেই দেখবো সব ঠক আছে??”
——“এত মজা দিয়ে কি করবে তুমি??অসুস্থ হওয়ার ধান্ধা সব।সব কিছুতে বাচ্চামু।বয়স কত হবে তোমার??”
—–“১৮+ মানে বিয়ে করতে পাড়বেন।”
নিভ্র চট করে তাকায়।সাফা জিহবায় কামড় দেয়।কি বলতে কি বলে ফেলছে??ইশশ্ সাফার লজ্জা লাগে খুব করে।নিভ্র গাড়ি থামায়। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।সাফা চোখ নামিয়ে নেয় নিচের দিকে।নিভ্র এবার ভ্রুকুঁচকে প্রশ্ন করে,
—–” তোমার এম ইন লাইফ কি বিয়ে করা??”
সাফা হেঁসে উঠে।তারপর নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
—–“এটা আবার কারো এম ইন লাইফ হয় নাকি??”
—–“হয়।তোমার দ্বারা সব হয়।নিত্যনতুন আইডিয়া তোমার মাথায় ঘুড়ে। হতে পারে এটা নতুন। তবে আইডিয়া খারাপ না।”

নিভ্র ঠোঁট বাঁকিয়ে হাঁসে।সাফা লজ্জায় নিভ্রর চোখে চোখ রাখতে পারেনা। বৃষ্টি থেমে গেছে বহু আগে। ভালো করে না থামা পর্যন্ত নিভ্র সাফাকে নামতে দেয় নি।সাফা একবার বের হতে চেয়েছে।কিন্তু নিভ্র তার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বসে থাকে।

তারা লাক্কাতুরা চা বাগানে এসেছে।সিলেট মানের চায়ের শহর।নিভ্র সাফার হাত ধরে গেটে দাড়ায়।নিভ্রকে দেখে সেখানের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চিনতে পারে। তারা অবাক হয়।নিভ্রনীল এখানে আসবে এটা অসম্ভব না কিন্তু তার পাশের মেয়েটার প্রতি তাদের কৌতুহল বেশি।নিভ্র প্রশ্ন করে,
—-“পর্যটক কেমন ভিতরে??”
একজন জবাবে বলে,
—–“তেমন নেই স্যার।”
—-” ভালো।”
—-“স্যার গার্ড নিয়ে যান।আপনাদের ঘুড়ে দেখতে সুবিধা হবে।”
—–“প্রয়োজন নেই।”

নিভ্র ওদের কিছুটা দিয়ে দেয়।তারপর সাফার হাত ধরে ভিতরে ডুকে।সাফা হাত ঝাড়িয়ে ফেলে।চারপাশ মুগ্ধ হয়ে দেখে।চারপাশে সবুজের দুনিয়া।নীল আকাশের নিচে সবুজ গালিচা পেতে আছে সবুজ প্রকৃতি।এক অদ্ভুত সবুজের সৌন্দর্যে ডেকে আছে চারপাশ।চায়ের প্রতিটি পাতা সতেজ।বৃষ্টি হওয়াই আরো সতেজ হয়ে উঠেছে।উচু-নিচু টিলা।আর টিলা ঘেরা সমতলে সবুজ চায়ের চাষাবাদ।চারপাশে সবুজ আর সবুজ।মাঝে মাঝে কিছু ছোট ছোট আঁকাবাঁকা জনপদ।আবার সবুজ গালিচার মাঝে একটা দুটো বিশাল গাছ রয়েছে।সাফা শাড়ি উঁচিয়ে দৌড় লাগায়।উঁচুনিচু মেঠো পথ বেয়ে সে দৌড়ায়।কিছু দূর যেই নিভ্র হাত টেনে ধরে।সাফা বিরক্তি নিয়ে তাকায়।তারপর বলে,
—–“হাত ধরেছেন কেনো??”
—-“বাচ্চাদের মত দৌড়াদৌড়ি করছ কেনো??পরে যাবে তো??রাস্তা ভিজাঁ। মাটির রাস্তা চারপাশে কাঁদা মাটি।পরে ব্যাথা তো পাবে সাথে হাত পা ছিড়ে ফেলবে।তারপর উপর তোমার শাড়ি।সব মিলিয়ে ধীরে হাটাঁ উত্তম।”
সাফা মুখ বাঁকায়। নিভ্র জানে অধিক জ্ঞান সাফার পছন্দ না।তবুও দেয়।একজন দম্পতি তাদের পাশ ঘেঁষে যাচ্ছিল।নিভ্রর শাসনের সুর শুনে এগিয়ে আসে।নিভ্রকে দেখে তারা চট করেই চিনে ফেলে।সাফা এদিও ওদিন দেখছে।নিভ্র থেকে পালানোর আইডিয়াও বের করছে সাফা।সাফার বন্ধি থাকতে নয় উড়ে বেড়াতে ভালো লাগে।দম্পতিদের মাঝে মেয়েটা বলে উঠে,
—–” নিভ্রনীল না!!”
নিভ্র একটু বিব্রত হয়।সাফার হাত আর একটু টেনে নেয়।সাফা চকিতেই মেয়েটার দিকে তাকায়।চিকনা একটা মেয়ে। গায়ের রং ফর্সা।চোখ ভর্তি কাজল আর ঠোঁট ভর্তি লিপস্টিক। লাল টকটকে লিপস্টিক।নিভ্রর এক হাতে তার ক্যামেরা।সাফার ছবি তুলবে বলে এনেছে।আর এক হাতে সাফা।মেয়েটা এবার চেঁচিয়ে নিভ্রর গায়ে পড়তে চায়।সাফা আর একটু টেনে নিভ্রর আড়াআড়ি দাঁড়ায়। মেয়েটা বুঝতে পারে একটু বেশিই করে ফলছে।নিজেকে সামলে খুশিতে আত্নহারা হয়ে বলে,
—–” আপনি এখানে?? ”
নিভ্র গম্ভীর ভঙিতে জবাব দেয়,
—-“কেনো আসা যায় না বুঝি??”
—-“আরে না সেটা না।তবে যাই হোক আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন??কিন্তু কিভাবে??এটা হতে পারেনা।আপনাকে আমার বিয়ে করার সখ প্রথম দেখেই।আর আপনি কি না বিয়ে করে ফেলেছেন??”

মেয়েটার এমন কাঁদোকাঁদো ভঙির কথা শুনে সাফার হিঁচকি উঠে।নিভ্র পিঠ চাপড়ে দেয়।পাশের ছেলেটার হাতে পানির বোতল ছিল।সে বোতল এগিয়ে দেয়।তারপর বলে,
—–“ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।আপনি ওর একটু বেশিই প্রিয়।তা না হলে হ্যাজবেন্ডের সামনে বিয়ে বিয়ে করে নাচ তো??”
সাফা পানি খায়।হিঁচকি থামে।নিভ্র পানির বোতল তাদের দিকে এগিয়ে বলে,
—-“থ্যাংকস ”
মেয়েটা এখনো তাকিয়ে আছে নিভ্রর দিকে ড্যাবড্যাব করে।সাফার তো মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।সুন্দর ছেলের প্রেমিকা হওয়া মোটেও উঁচিত না।এ এদিক দিয়ে টানবে তো ও ওদিন দিয়ে।সাফা নিভ্রকে টেনে আনে।নিভ্র মুখ টিপে হাঁসে। কিছু দূর এসে হাত ঝাড়ি দিয়ে বলে,
—-“আপনি আপনার মত ঘুড়েন আমি আমার মত ঘুড়বো।হু….!!”
নিভ্র হা করে ভাবে নিজেইত তাকে টেনে আনলো আবার নিজেই ছেড়ে দিচ্ছে। পরমুহূর্তে আবার হাঁসে। সাফা এদিক থেকে ওদিকে ছুটে।তার ছুটার কোনো শেষ নেই।দৌড়ে টিলায় উঠে পড়ে সে।নিভ্র হাপিয়ে গেছে সাফার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে।সাফা শাড়ি উঁচিয়ে দাঁড়ায় টিলায়।তারপর শাড়ি ছেড়ে দেয়।হাত দুই দিকে মেলে দেয় ডানার মত।বাতাস হয় চারপাশে। প্রকৃতি শীতল।চারিপাশে স্নিগ্ধতার ঘ্রান।সাফার শাড়ির আচঁল চা গাছের গালিচার মত বুকে আছঁড়ে পড়ে।হাত ভর্তি চুড়ির শব্দে নিভ্র চোখবুজে।কলাপাতা রংয়ের শাড়িতে সাফাকে এখন চা গাছের সাথে গুলিয়ে ফেলে যাবে।মেঘ ঠেলে হালকা সূর্যের কিরন সাফার মুখের এক পাশে পড়ে।নিভ্র ক্যামেরা চোখের সামনে ধরে।ল্যান্স বড় করে জুম করে।সাফার লাল হওয়া গালে সূর্যের কিরন এক অপরূপ রূপের সৃষ্টি করেছে।প্রকৃতির সৌন্দর্য যে কোনো সময় বিলিন হতে পারে।নিভ্র তাই সব ক্যামেরা বন্ধি করে।নিভ্র ক্যামেরা সরিয়ে বুকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস নেয়।মেয়েরা পাগল করা রূপে রঙিন।যেনো তার দম বন্ধ করে দেতে পারে এমন ক্ষমতা আছে এই রূপে।সাফা দীর্ঘশ্বাস নেয়।ঠোঁট মেলে হাঁসে। নিভ্র সেই দৃশ্য নিজের মাঝে ধারন করে বন্ধি করে ক্যামেরার পর্দায়।সাফা ঘুড়ে তাকায়।নিভ্র সেটাও একটা ছবি তুলে।সাফা হাত নাড়িয়ে নিভ্রকে ডাকে।নিভ্র হেঁটে তার পাশে দাঁড়ায়। সাফা আল্লাদী কন্ঠে বলে,
—–” কত সুন্দর বাতাস।আর কত সুন্দর এর গন্ধ!!চা চা ব্যাপার তাই না।সুন্দর পরিবেশ। তাই না??
—–” হুম সব সুন্দর সব সব সব”
সাফা ফিড়ে তাকায়।নিভ্র তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সাফা কপাল কুঁচকে বলে,
—-“চা বাগানের কথা বলছি??আমার না!!
নিভ্র মুচকি হাঁসে। হাত বাড়িয়ে খোঁপা খুলে দেয়।সাফার সাদা ফুলের গাঁজরা নিজের ডান হাতে পরে নেয়।চুলগুলো ঠিক করে দেয়।তারপর বলে,
——“এবার ঠিক লাগছে।

সাফা টিলা থেকে নামতে নেয় লাফিয়ে।কিন্তু ঘটে যায় একটা দূর্ঘটনা।সাফার পা পিছলে মুচকে যায়।নিভ্রর শার্ট ধরায় পড়ে যায় না।নিভ্র শক্ত করে ধরে।কিন্তু পা মুচকে গেছে তার।সাফা ব্যাথায় মৃদূ শব্দ করে।নিভ্র উদ্বিগ্ন হয়ে সাফার হাতে ক্যামেরা দিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয়।কোলে নিয়েই উত্তেজিত গলায় ঝাঁড়ি দেওয়া শুরু করে,
—-” সব সময় ফাইজলামি না করলে হয় না??লাফা লাফি ঝাপাঝাপি এসব বাদে কিছু ভালো লাগে না??এতটা কেয়ার লেস কেনো তুমি??সব সময় বাচ্চাদের মত কাজ করো??এখন ব্যাথা কে পাচ্ছে?? আমি না তুমি??কষ্ট কার হচ্ছে আমার না তোমার??সব সময় পাগলামি??আমার মনে হচ্ছে আমার পাগলের ডাক্তার হওয়া উঁচিত ছিলো তাহলে না হয় কিছু হত।”

সাফা ফুফিঁয়ে ফুফিঁয়ে কাদেঁ। থেমে থেমে কান্নার শব্দ আসছে।মনে মনে ভাবে নিভ্ররই মনে হয় সব কষ্ট হচ্ছে। সাফার কান্নার দমে শরীর কেঁপেকেঁপে উঠছে।নিভ্র আর একটু ভালো ভাবে ধরে।সাফার কান্নায় তার কলিজায় কষ্ট জমে তার চেয়ে বহু গুন।মনে হচ্ছে ব্যাথাটা সে পেলেই ভালো হত।কিন্তু কেনো যে সাফা পেলো??এটাই তার কষ্ট বহু গুনে হাজার গুনে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সাফা নিভ্রর শার্ট খামচে ঠোঁট উল্টে কাদেঁ। নিভ্রর মনে হচ্ছে কলিজায় জ্বলন্ত কিছু জ্বলছে।কষ্ট দম আঁটকে আসছে তার।টিলা থেকে নেমে একটা কাঠের বেঞ্চিতে সাফাকে বসায়।সাফার কান্নার মৃদূ শব্দ নিভ্রর কানে ভয়ংকর শব্দের সৃষ্টি করছে।বেঞ্চির এক পাশে চা তোলার ঝুঁড়ি রাখা।তার একটু দুরে তাকাতেই সাফা কিছু মহিলাকে চা তুলতে দেখে।মাথায় ঝুঁড়ি বেধে পাতা ছিঁড়ছে। নিভ্র সাফার মুখের দিকে তাকায়।কান্নার মুখের অবস্থা রক্তিম হয়ে আছে।মহিলা গুলো আগ্রহের সাথে তাদের দেখছে।নিভ্র পায়ে হাত দেয়। সাফা মৃদূ চিৎকার করে উঠে।নিভ্র বুঝতে পারে এখন ধরা যাবে না।তাহলে সাফা আরো বেশি ব্যাথা পাবে।নিভ্র উঠে দাঁড়ায়। সাফার পাশে বসে।সাফার মাথা নিজের বুকে লেপ্টে নেয়।মহিলা গুলো দাতঁ বের করে হাঁসে। নিভ্র সাফার চোখ মুছে দেয়।তারপর বলে,
—–” আমরা এর পর বিছানাকান্দি যাবো।তুমি যানো ওটা কত সুন্দর??”
সাফা কথা বলছে না।পায়ের ব্যাথা তাকে ঝেঁকে ধরেছে।নিভ্র সাফার চুল সরিয়ে দেয়। কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।মহিলাগুলো এবার আগ্রহের মাত্রা বাড়ায় হেঁসে হেঁসে একজন আর একজনকে কি যেনো বলে।নিভ্র সাফার হাত নিজের হাতে নেয়।আকাশে আবার মেঘ করেছে।নিভ্র সাফার পায়ের কাছে বসে।পাটা নিজের হাঁটু ভাঁজে নেয়।তারপর মুখে বলে,
—–“ভাবছি পাগলের ডাক্তারের উপর কোর্স করবো।কি বলো??”
.
.
#চলবে______________🍁
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য।

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here