এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ৩৩

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
৩৩.
_________________
নিভ্র সাফার মনযোগ ঘুড়াতে চায়।তাই বলে,
—-” দেখো ওই পাত্তিওয়ালির মত তুমিও যদি মাথায় ঝুঁড়ি নেও তোমাকে আদিবাসীদের মত লাগবে।নিবে??”
—-” আদিবাসী কেনো লাগবে আমার কি নাক বোঁচা চোখ ছোট ছোট বা ওদের মত জামা নাকি যে ওদের মত লাগবে??”
—-” আরে না নিলে কিভাবে বুঝবে??তুমি ঝুঁড়ি মাথায় বেধে চা তুলেবে ব্যাপারটা মাজার না??

সাফা কিছুসময় ভাবে।নিভ্র এই ভাবনাকেই কাজে লাগায়।সাফার ব্যাথা পাওয়া পাটাকে ডান বাম ঘুড়িয়ে দেয়।সাফা চিৎকার করে উঠে মৃদু। নিভ্রর দিকে রেগে তাকায় সাফা।নিভ্র হাঁসে। নিভ্রর এমন হাসি দেখে সাফার প্রচন্ড রাগ হয়।মন চায় চা বাগানে কুচি কুচি করে ফেলে দিতে।তখন এই পাত্তিওয়ালিরা নিভ্রকে নিজেদের ঝুঁড়িতে তুলে নিবে।বেশ হবে।সাফা কান্নার গতি বাড়ায়।নিভ্র ভ্রুকুঁচকে তাকায়।কাঁদোকাঁদো স্বরে সাফা বলে,
—–” এই আপনার ভালোবাসা??”
নিভ্র থ হয়ে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।তারপর বলে,
—–” পায়ের সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক কি??মাথা পায়ের সাথে মোচকে গেছে নাকি??”
—–” ভালোবাসলে ব্যাথা দিতে পারতেন?? বলেন??আপনি মোটেও ভালোবাসেন না সব ফাউ কথা।মডেলরা এমনই হয়।ক্যারেক্টার ল্যাস।মুখে বলে এক কাজে করে আর এক!!”
নিভ্র চোখ বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, শান্ত গলায় বলে,
——” আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে এমন মনে হয়??”
—–” এখন মনে পড়ছে না পড়লে আবার বলবো!!এখন আপনার সাথে আমার কথা নেই।যেতে পারেন??”
নিভ্র এবার চরম অবাক।যেতে পারেন মানে কি??সাফাকি এই শহরের আনাচে কানাচে সব চিনে নাকি??কথার ভাব দেখে তো এমনই মনে হয়।নিভ্র উঠে সাফার পাশ ঘেঁষে বসে।হাত পিছনে ঘুড়িয়ে একটা হাত সাফার অপর প্রান্তে নেয়।তারপর আর একটা হাত এই পাশে নিয়ে দু’পাশে উড়ন্ত চুল গুলে সাফার গাল থেকে টেনে দেয়।সাফা ঠোঁট উল্টে চোখ ছোট করে।নিভ্রর দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়।তারপর বায়নার সুর তুলে বলে,
——” আমি চা পাতা চুরি করবো!!ব্যাপারটা মজার হবে।তাই না?? ”
নিভ্র বিষম খায়।হাত সরিয়ে সাফার দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা সত্যিই তাকে পাগল বানাবে।তা নাহলে পাগলের ডাক্তার।নিভ্র শান্ত গলায় বলে,
——” চা পাতা চুরি করতে যাবে কেনো??আমি ওদের বলে নিয়ে দিবো।ওরা এমনেই দিবে।উঠে একটু হাঁটো তো।দেখি পা ঠিক হয়েছে কি না??”
—-” হাঁটতে পারবো না পায়ে ব্যাথা!

সাফা মুখ বাঁকিয়ে বলে।নিভ্র দাঁড়িয়ে হাত টেনে দাড় করায়।সাফা প্রথমে ব্যাথা পাবে ভেবে দাড়াঁতে চায় না।পরে দাঁড়ায়। কিন্তু তার পায়ে ব্যাথা লাগে না।সাফা খুশিতে ঘুড়ে ঘুড়ে দেখে।নিভ্র হাঁসে। সাফার হাসি কান্নার পর্বটা নিভ্রর কাছে কখনো বৃষ্টি কখনো রোদ মনে হয়।চোখে পানি রেখেই হাঁসে। তখন সাফার নীলাভ চোখ পানিতে ভরে চিকচিক করে।ঠোঁটে হাসি চোখে পানি দারুন দৃশ্য। মারাত্মক এর প্রভাব।যেনো মনের আনাচে কানাচে সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। মনের মনি কোঠায় ভাঙ্গন ধরাচ্ছে।সাফা এক আঙ্গুল দিয়ে নিভ্রকে ঠেলে।নিভ্রর হুশ হয়।সাফার দিকে সবুজ চোখের তির্যক চাহনি মেলে দেয়।সাফা নিভ্রর আর একটু কাছে এসে মুখে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলে………
——-” পা তো ভালো করে দিলেন এবার চলেন চুপিচুপি চা পাতা চুরি করে দৌড় লাগাই।”
নিভ্র বিরক্তি সহিত তাকায়।চুরি করবে এটা কেমন কথা??তাও নিভ্রনীল থাকবে পাশে??নিভ্র সাফার দিকে চোখমুখ চুকে তাকিয়ে থাকে।সাফা একটু দমে।চেহারায় ইনোসেন্ট ভাব টেনে বলে,
—“এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো??যান চুরির ইচ্ছা বাদ।শত হক নিভ্রনীলের সাথে থেকে তো এটা করা যায় না।তাই বরং বাদ দিলাম। কিন্তু ঝুঁড়ি মাথায় নিবো না??”
—” চলো ওদের বলি!”
নিভ্র মুচকি হাঁসে। সাফার নিভ্রর পাশে পাশে হাঁটে।কি বুঝে সাফা নিভ্রর একহাতের বাহু নিজের একহাতে জড়িয়ে আর এক হাতে শক্ত করে ধরে।নিভ্র তাকায় একবার তারপর আবার সামনে তাকিয়ে হাঁসে। পাত্তিওয়ালিরা চা তুলছে আর সাফা নিভ্রকে দেখছে।এই জুটি তাদের ভালো লাগছে।নিভ্র তাদের মাঝে একজনের সাথে কথা বলে।কথা শেষ করতেই মহিলাটা নিজের মাথার ঝুঁড়ি খুলে নিভ্রর হাতে দেয়।নিভ্র সাফার মাথায় ঝুঁড়ি পড়িয়ে দেয়।সামনের চুলগুলো সরিয়ে দেয় দু’পাশ থেকে।সাফা খুশিতে আত্নহারা। মহিলাগুলো সাথে তার সক্ষতা গড়ে উঠেছে।হেঁসে হেঁসে তাদের সাথে সাফা কথা বলছে।আর কিভাবে চায়ের পাতা ছিড়তে হয় তা শিখছে।নিভ্র মনোযোগীদের মত তাকিয়ে তা দেখছে।দু’পাশ গুচ্ছ গুচ্ছক চুল আর মাথায় এক ঝুঁড়ি। সাফাকে অন্য রূপে দারূন লাগছে।নিভ্র ক্যামরা বন্ধি করে।সাফা মহিলাগুলোকে নানা আজেবাজে কথা বলছে।সাফার এমন কান্ডে নিভ্র হাঁসে।সাফা অনেকগুলো চা পাতা নিয়ে নিভ্রর সামনে দাড়ায়।নিভ্র ক্যামেরায় তোলা ছবি গুলো দেখছে।সাফা পাশ ঘেঁষে দাড়াঁতে নিভ্র ভ্রুকুঁচকে তাকায়।সাফা ঢুলে ঢুলে বলে,
—–” চা পাতা নিয়েছি।এবার কিন্তু চুরি করে না।ওদের বলেই নিয়েছি।তবে চুরি করে নিলেও চুরি হত না।”
নিভ্র চোখ ছোট করে প্রশ্ন করে,
—–” কেনো?? তুমি সাফা বলে?”
—-” আরে না।দেখেন চা বাগান মানে দেশের সম্পদ।তাই না??”
—“হুম”
—-“আর আমি কি??”
—-” কার??”
—-” আরে বাংলাদেশের??”
—” নাগরিক।
—–” দেশ যখন আমার দেশের সম্পদও আমার। তাই এটা চুরি হত না।”
নিভ্র হা করে তাকিয়ে আছে সাফার দিকে।কি যুক্তিরে বাবা।সাফা পাতা গুলো দেখিয়ে বলে,
—-“এই পাতা দিয়ে চা বানাবো।আমার এক কাপ,আম্মুর এক কাপ আর রাফাপুর এক কাপ।তারপর আমরা খাবো।আহ কি মজা!!”
—-” আমারটা কই??আর তুমি তো চা খাও না।তাহলে তখন কিভাবে খাবে??”
—-” আপনি বরং নিজেরটা আর স্যারের জন্য পাতা নেন। আমি দিবো না।”
নিভ্রর হঠাৎ কি যেনো হল।সে দমে যায়।আর তর্কে আগায় না।অভ্রর কথা হঠাৎ করেই মাথায় ঘুড়তে থাকে।

দুজনেই আরো অনেকটা পথ হাঁটে।ঘুড়ে ঘুড়ে সব দেখে।তারপর বেড়িয়ে আসে।সাফার মন খুব ভালো এখন।আজকের দিকটাই তার জীবনে সেরা দিন ছিলো।নিভ্র পাশে বসে ড্রাইভিং এ মন দেয়।সাফা প্রশ্ন করে,
—-” আমরা বাসায় যাবো এখন??”
—-” না। বলেছিনা আজ সারা দিন একসাথে ঘুড়বো।তুমি তো সিলেট এখনো কিছুই দেখনি।আর তোমার ইচ্ছাটা বাকি আছে এখনো।”
সাফা নিভ্রর দিকে তাকায়।কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবে।তারপর বলে,
—-” কোথায় যাবো আমরা??”
—” গেলেই দেখতে পাবে।”
সাফা চুপ করে বসে।বসে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে যায়।সাফার মাথা বেকে পড়ে যায়।সিট থেকে পড়ার সময় নিভ্র নিজের হাত দিয়ে মাথা ধরে।সাফাকে আরো একটু টেনে নিজের বুকে রাখে।একহাতে ড্রাইভ করতে নিভ্রর কষ্ট হয় তবে এই কষ্টের মাঝে প্রাপ্তির এটা ব্যাপার আছে।নিভ্র সাফার চুল ঠিক করে এক হাতে। তারপর চুলের উপর একটা চুমু খায়।সাফার বোকা বোকা কথা গুলো মনে করে নিভ্র হাঁসে। তারপর আবার সামনে মনোযোগ দেয়।

হাদারপার নামের জায়গায় নিভ্র গাড়ি থামায়।সাফা এখনো নিভ্রর বুকে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।নিভ্র ডাকে।ধীর গলার স্বরে বলে,
—“সাফা!সাফা!!আমরা চলে এসেছি!!”
সাফা হকচিকে উঠে।নিজেকে কারো বুকে লেপ্টে থাকতে দেখে প্রথমে চমকায়।মাথা তুলে উপড়ে তাকায়।নিভ্রকে দেখে।মনের ভয় কাঁটে। সে তো ভয় পেয়ে গেছিলো।সাফা উঠে বসে।লজ্জায় লাল হয় গালের এপাশ ওপাশ।নিভ্রর বুকে সে কিভাবে লেপ্টে ছিলো তা ভেবেই সাফা মাথা নিচু করে।চুলে হাত বুলিয়ে তা ঠিক করে।নিভ্র মাথা চুলকে ঠোঁট কামড়ে হাঁসে। তারপর গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।সাথে সাফাও।সাফা বেশ অবাক।বাজারে কেনো নিয়ে এসেছে নিভ্র তাকে??সাফা এদিক ওদিক তাকায়।চারপাশের অবস্থা বুঝতে চায়।কান খাটা করে শুনে কথোপকথন। পানির শব্দ আসছে সাঁ সাঁ করে। কথা থেকে আসছে সাফা চারদিকে খুঁজে।নিভ্র হাত ক্যামেরা নিয়ে নিভ্র সাফার হাত ধরে।সাফা প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকায় নিভ্র সাফার দিকে তাকায় তারপর সামনে তাকায়।মুখে বলে,
—-” গেলেই দেখবে, এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো??চল”

সাফা প্রশ্ন মাথায় নিয়েই নিভ্রর সাথে হাঁটে।এক হাতে শাড়ির কুচি আর এক হাতে নিভ্রর বাহু ধরে সাফা হেটে চলেছে।কিছুদূর যেতেই নৌকা দেখে সাথে জলাশয়। একটা নদী দেখে সাফা অবাক হয়ে তাকায় নিভ্রর দিকে।তাহলে এটাই রাতারগুলে যাওয়ার পথ??সাফা নিভ্রর হাত টেনে ধরে।তার অবাক হওয়া গলায় সে বলল,
—-“আমরা কি রাতারগুলে যাচ্ছি?? ”
নিভ্র এক হাতে ক্যামেটা সাফার হাতে দেয়।সাফা হাতে নিয়ে দাঁড়ায়।তারপর বলে,
—-” না।বিছানাকান্দির যাচ্ছি। ”
—“এটা আবার কি??আর কেমন কেমন নাম। দেখতে ভালো হবে না।চলেন অন্য কথাও যাই।”
—” আগে চলো তারপর দেখা যাবে ভালো কি না।”

সাফা বিরক্ত হয়।মনে মনে ভাবে এখন কি নদীর পাড় ঘেঁষে হাটবে তারা??তবে ভালো হবে।এটাও প্রেমের মধ্যে পড়ে।হাত ধরে দুজনে পাশা পাশি।বাতাস,মেঘ কখনো বা বৃষ্টি। দরূন অভিজ্ঞতা।সাফার মুখে হাসি ফুটে।মনে মনে ভাবে নিভ্র কি গান পারে??হয় তো পারে। সাফা নিভ্রকে গান ধরতে বলবে।সুন্দর একটা গান বেশ হবে।নিভ্র নৌকার কাছে যায়।একটা নৌকা ভাড়া করে। আর কোনো নৌকা নেই আশেপাশে। একটা ছেলে আর মেয়ে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।নিভ্রর কাছে এসে রিকুয়েস্টের সুরু বলে,
—-” মি.নিভ্রনীল আমাদেরকে কি নৌকায় নেওয়া যাবে?”
সাফা ঘুড়ে তাকায়।তারা নৌকা ভ্রমনে যাবে ভেবে তার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করে।পরক্ষনেই পাশের ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে তাকায়।থ্রিকোয়াটার প্যান্ট পড়া একটা ছেলে,কাধে গিটার,উজ্জ্বল শ্যাম তার গায়ের রং।উপড়ে পড়েছে নীল টিশার্ট।মাথায় কাপড় বেধে রেখেছে।এটা যে স্টাইল সাফার বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছে।তার বাম পাশে দাঁড়ানো চিকনাচাকনা মেয়ে।হাইট কম।গায়ে টিশার্ট আর পড়নে ছেলেটার মতই থ্রিকোয়াটার প্যান্ট।তাদের চেহারায় দুঃখি দুঃখি ভাব।নিভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে তারা।নিভ্র ঘুড়ে তাকায়।তারপর বলে,
—-” আসো।সমস্যা নেই।
ছেলে মেয়ে দুইজনেই খিশিতে আত্নহারা। মনে হচ্ছে মহান কিছু পেয়েছে।নিভ্র সাফাকে ডাকে।তার হাত ধরে নৌকায় উঠায়।এই দৃশ্য ছেলে মেয়ে দুজনেই বেশ আগ্রহের সাথে দেখে।তারা নিভ্রকে চিনে।মডেল হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে নিভ্রর।তবে ঘুড়তে এসে নিভ্রকে নিয়ে নাচা নাচির মুড আপাতোত তাদের মাঝে অনুপস্থিত।সাফা এটা লক্ষ করেছে।নিভ্র সাফার পাশে বসে। আর ওই ছেলেমেয়েরা এক পাশে।সাফা চারপাশের প্রকৃতি দেখছে।দুই পাশে গাছ পালা পাহাড় সবুজের সমারোহ।আর তার মাঝে বয়ে চলেছে পানির প্রবাহ।একটু দুরেই পাহাড়।আর পাহাড়ের উপড় অসংখ্য মেঘ বাসা বেধেঁছে।আকাশ কালো হয়েছে বেশ।আবার মেঘ বৃষ্টির খেলা চলবে।সাফা নিভ্রর কাধে মাথা দেয়।সাফার মুখের উপড়ের চুলগুলো নিভ্র নিজের আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দেয়।সামনের দুজনের কৌতুহল জাগে। প্রশ্ন করবে কিনা ভাবে।এবার করেই দেয়,
—-” স্যার আপনি তো বিয়ে করেন নি শুনেছি তবে ওনি কে যানতে পারি??”
সাফা চট করে মাথা তুলে বসে।নিভ্রর চোখেমুখে বিরক্তি ছেঁয়ে যায়।তবুও মুখে বলে,
—-” ও আমার বউ।”
নিভ্রর মুখে বউ কথা শুনে সাফা চমকে তাকায়।চোখ বড় হয়ে আসে মুহূর্তেই।এত সহজে বলে দিল বউ কথাটা??সাফার মন হঠাৎ করে জ্বলে উঠে।শরীর কাঁপে বাতাসের গতিতে।ভালো লাগার মাঝেও এক ভালো লাগা খুঁজে পায় সে। কাঁপনে কাঁপনে মনে জাগে সুপ্ত আবেগ।আবার নিভ্রর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে তার।সাফার চোখ নিভ্রতে আঁটকে আছে।নিভ্র সাফার মাথা টেনে তার বহুতে রাখে।সামনে তাকিয়ে বলে,
—-” তোমরা কারা??মানে একজন একজন কেনো??হ্যাজবেন্ড ওয়াইফ মনে হয় না তাই বললাম।
ছেলেমেয়ে দুজনেই একটু কাচুমাচু করে।এদিক সেদিক তাকায়।ভয় ভীতি কাজ করছে তাদের মাঝে।নিভ্র কৌতুহলি চোখে তাকায়।কিন্তু কিছু বলে না।বলার হলে তারাই বলবে।অন্যের ব্যাপারে নিভ্রর আগ্রহ কম।ছেলেটা সাহস যোগায় তারপর বলে,
—-” পালিয়ে বিয়ে করেছি স্যার।”
সাফা এবার চমকে উঠে যায়।নিভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে সে খুব স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে যানতো এমন কিছুই হবে।সাফা এবার নিজে থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে প্রশ্ন করে,
—” কবে বিয়ে করেছেন??”
—” এক সাপ্তাহ হবে।
—” বাড়িতে কেউ জানে??”
—” জানা জানি হয়েগেছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মনে নিবে না।অনেক পড়ে হয় তো মনে নিবে।তবে নিবেটা নিশ্চিত। আপনাদেরও কি পালিয়ে বিয়ে??কিন্তু নিভ্রনীলকে কোন বাবা মা ফিড়াবে।এটা তো হতে পারে না।লাভ ম্যারেজ মনে হচ্ছে। স্যার খুব ভালোবাসে আপনাকে??”
মেয়েটা বলে উঠে,
—” কিছু শিখ।কত কেয়ারি।ইশশ্ কত কিউট করে আলত হাতে উনাকে নৌকায় তুলেছে দেখলে।তার উপড় মাথাট কত সুন্দর করে যত্নের সাথে বাহুতে রেখেছে।আহ কি ভালোবাসা।পরিবেশের তালে তালে মিলে যাচ্ছে স্যার।”

নিভ্র পানির দিকে তাকিয়ে হাঁসে।তারপর সাফার কোমড় আর একটু টেনে কাছে লাগিয়ে বসে। তারপর বলে,
—” ভালোবাসা শিখা যায় না।এটা মনের ব্যাপার মন যেমন বলে তেমনটা প্রকাশ পায়।আর ভালোবাসা থাকলে যত্ন নিতে হয়।এটাই স্বাভাবিক। ও তোমাকে ভালোবাসে বলেই হাতটা ধরে রেখেছে যাতে পিছনে পড়ে না যাও।এটাই ওর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

মেয়েটা এবার নিজের হাতের দিকে তাকায়।সত্যিই তাকে ধরে রেখেছে তার হ্যাজবেন্ড।মেয়েটা এবার হাঁসে। সাফা অবাক হয়ে নিভ্রকে দেখে।নিভ্রর এক হাত তার কোমড়ে।কোথায় সে ভেবেছে নিভ্র রোম্যান্টিক তাই এমনটা করেছে কিন্তু না এটা সে কেয়ার ন্যাস থেকে করেছে।যাতে পিছনে পরে না যায় সাফা।সাফা মনে হচ্ছে সে খুব লাকি।নিজেকে সত্যিই তার আলাদা মনে হচ্ছে সবার থেকে।মনে হচ্ছে সে ভয়ংকর প্রেমিকের ভয়ংকর প্রেমের জালে আঁটকা পড়েছে।এই প্রেম আলাদা সব কিছুর ঊর্ধ্বে এই প্রেমের প্রহার।ছেলেটা বলে,
—-” ধন্যবাদ স্যার এই পাগলি বউকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যে তার স্বামী কতটা কেয়ারি।বায় দ্যা ওয়ে আমি কৌশিক আর ও ইশানি।আপনার নাম তো জানি কিন্তু ম্যাডামের নাম??”
নিভ্র সাফার দিকে তাকায়।চোখে চোখ রেখে বলে,
—-” সাফা ওর নাম। আমার সাফারানী।”
—-” স্যার একটা রিকুয়েস্ট করতে পারি??”
নিভ্র কৌশিকের দিকে তাকায়।তারপর বলে,
—-” বলো??”
—” আপনার গানের গলা খুবই সুন্দর। একবার একটা আলোচনায় গেয়েছিলেন সেখানে গাইতে দেখেছি।যদি আজ আপনার সাফারানীর জন্য গেয়ে আমাদের শুনাতেন?ওয়েদারটা সুন্দর তাই বলছিলাম। ”
ছেলেটা নিজের গিটার নিভ্রর দিকে এগিয়ে দেয়।নিভ্র হাতে নেয়।সাফার দিকে তাকিয়ে। কৌশিক আর ইশানি একটু ঝুঁকে বসে গান শুনার জন্য।মাঝিও কান খাড়া করে। সাফার চোখ সরু।একবার চারপাশের প্রকৃতি দিকে তাকায় একবার নিভ্রর দিকে।নিভ্র শীতল কন্ঠে সুর তুলে গায়,

আদিম অকৃত্রিম বর্ণমালা সে জানে
ক্ষনিকের পরিচয়ে ছন্দপাতে প্রানে,
পাজরের সেই হাড় হঠাৎ ব্যাথায় কাতর
সে যে ছুটে যায় ঐ হৃদয়ের বাম প্রকোষ্ঠে
ভারসাম্যহীন রগ্ন কাতর আমি আজ
ভীত সন্ত্রস্থ ঐ আদি মানবী দেখে
স্বর্গ যদি হয় অচেনা অপ্সরীদের আসর
চাইনা আমি স্বর্গ, আমি তোমার স্পর্শ চাই
মিথ্যা অভিনয় ঠুনকো বাঁধা বিদ্রপ উপদেশ
পারবে না কিছুতে থামাতে রাশিতে লেখা এ প্রেম
তুমি জানো আমি তোমার
তুমি জানো আমি তোমার
তুমি আমার সেই পাজরের ভাঙা হাওয়া
তুমি আমার সেই পাজরের ভাঙা হাওয়া….

__তাহসান.

নিভ্র থামে।সাফার দিক থেকে চোখ সরায়।কৌশিক ইশানির হাত নিজের বুকে নিয়ে উৎসাহের সাথে বলে,
—-” তুমি আমার সেই পাজরের ভাঙা হাওয়া।”
ইশানি লজ্জা পায়।খুব।নিভ্র সাফার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-” স্বর্গ যদি হয় অচেনা অপ্সরীদের আসর, চাইনা স্বর্গ আমি শুধু তোমার স্পর্শ চাই।শুধু তোমার।
নিভ্র সাফার হাত নিজের হাতে পাচঁ আঙ্গুলের খাঁজে নেয়।সাফার উড়ন্ত শাড়ির আচঁল টেনে দেয়।ভালোবাসা মাখানো হাতে আলত করে ধরেই রাখে সাফাকে।
.
.
#চলবে_________
অনেকে যানতে চেয়েছেন অতিত কবে শেষ হবে তাদের জন্য বলছি শুরু যখন হয়েছে শেষও হবে ইনশাআল্লাহ্‌।।অতিত এটার জন্য না যে সাফা কেনো চলে গেছে বরং এটা যানানোর জন্যে তাদের ভালোবাসা কতটা গভীর ছিল।কিছুদিন পরেই সব জানা যাবে।ধৈর্যের সাথে পড়েন।সব ক্লিয়ার হবে।আর আজ ছোট হয়েছে আমি জানি তাই স্যরি।কারন ছাড়া ছোট করে দিনা আমি।তাই আশা করি বুঝবেন।

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here