এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ৯

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.

…..২বছর আগে…………🍁
.
সাফা রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে। হুট করে তার চোখ আটকা পরে পাচঁ বছরের একটা বাচ্চার উপড়।একটা পাচঁ বছরের মেয়ে মাথায় হাত দিয়ে কাদঁছে। মাথা ফেঁটে গেছে মনে হয়।সাফা রাস্তা ক্রশ করে মেয়েটার সামনে দাঁড়ায়।নিজের এক হাত তার কপালে চেপে ধরে।আস্তে করে জিগ্যেস করে……
—“নাম কি তোমার বাবু??”
মেয়েটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠে…..
—“নিহা”
—“মাথা ফেঁটেছে কিভাবে”??
—“রাস্তায় পড়ে গেছি ইটের সাথে লেগে”
–“তুমি এখানে কি করো??”
–“মায়ের সাথে এসেছি।মাকে খুজে পাচ্ছি না তাই খুঁজতে ছিলাম।কোথায় যেন গেছে??”
.
সাফা বুঝতে পারছে মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে তাই সে কান্না করছে।সাফা মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে তাকে দেখছে।সাফা একটা সিএনজিকে দাড় করিয়ে উঠে পড়ে।যাওয়ার আগে পাশের ফলের দোকনদারকে বলে যায় ওর আম্মু খুঁজতে আসলে বলবেন…..
“NSC হসপিটালে নিয়ে গেছি।”
দোকানদার মাথা ঝাঁকিয়ে ঠিক আছে বলেছে।সাফা বাচ্চাটাকে ধরে আছে।মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে।তবে সাফা সেদিকে তাকাতে পাড়ছেনা। রক্তে তার প্রচণ্ড রকমের ফুভিয়া আছে।তাই সে এত রক্ত একসাথে দেখতে পারে না।দেখলেই মাথা ঘুড়ে।সাফা বাচ্চাটার সাথে নানা ভঙিতে কথা বলছে।যাতে সে তার ব্যাথা ভুলে থাকতে পারে।
.
.
নিভ্র রোগী দেখছে।এখন বাচ্চাদের ওয়াডে আছে।বাচ্চাদের প্রতি তার বিষেশ ভালোবাসা কাজ করে।বাচ্চাদের সাথে থাকলে তাকে মোটেও রাগি, ভয়ঙ্কর মনে হয় না।মনে হয় কত ভালোবাসে সে সবাইকে।সবার ভালোবাসাই তার প্রাপ্য।বাচ্চারাও তাকে খুব ভালোবাসে এক কথায় নিভ্রর জন্য পাগল এরা।নিভ্র বাচ্চাদের সাথে নানা ভঙ্গিতে গল্প করছে।আর যুবতী নতুন নার্স গুলো তাকে দেখছে।এক কথায় ড্যাবড্যাব করে দেখছে।নিভ্র একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়েছে।নিয়ে হাত নাচিয়ে নাচিয়ে তাকে নাচ করাচ্ছে আর বাচ্চাটা খিলখিল করে হেঁসে উঠেছে।তা দেখে নিভ্রও হাসছে।নিভ্রর আজকের মত কাজ প্রায় শেষ তাই উঠে দাঁড়িয়েছে। আজ তার অপারেশন নেই।তাই বিকেলেই বাসায় যাবে বলে ঠিক করে।নিভ্র কাঁচের গ্লাসের দরজা ঠেলে বাইরে আসতেই ধাক্কা।নিভ্র নিজের সাথে ধাক্কা ধাক্কি মোটেও পছন্দ করে না।কারন হসপিটালের নার্সরা প্রায় অজুহাত দিয়ে বা এমনেই গায়ে পরে তার উপর হসপিটালে বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসার বদলে তাকে দেখতে আসে তাই কড়া সিকিউরেটির ব্যবস্থা করেছে সে।রোগী ছাড়া হসপিটালে আসা নিষেধ। নিভ্র রেগে সামনে তাকায়।সাফাকে এভাবে বাচ্চা কোলে নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে অবাক হয়।পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পর্যবেক্ষণ করে।সাদা গোল জামায় সাফাকে সাদা পরী লাগছে।চুলগুলো আজ খোঁপা করে রেখেছে তবুও কিছু অবাধ্য চুল সামনে এসে তার নীলাভ চোখের পাপড়ির উপড় পরছে।ক্লান্ত লাগছে তাকে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম সাথে নাকেও ঘাম জমে আছে।সাফার চিৎকারে নিভ্র তার দিকে তাকায়……
—“আপনি এখানেও??আজব তো হসপিটাল কি আপনার বাপের?? মনে তো হয় তাই। তা না হলে এখানেও মডেলিং করতে চলে আসতেন না।”??
—“আজেবাজে কথা রাখো আর বাচ্চাটার কি হয়েছে বলো?”
.
সাফা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে দেখছে নিভ্রকে। তার ধারনা মতে পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ঙ্কর পেশা হল ডাক্তারি।এটার মত ভয়ঙ্কর আর কিছু নেই।আর সব ডাক্তার গুলো খারুস আর ভায়াবহ হয় তা ছাড়া ডাক্তারদের চেহারা দেখলেও তার ভয় করে।কেমন যেন বদসুরত হয় তারা।তার জীবনে এই প্রথম তার মনে হচ্ছে এই পোষাক টাতে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকেই পারফেক্ট লাগছে।সাদা এ্যাফ্রোন, ভিতরে সাদা শার্ট কালো প্যান্ট।গলায় ঝুলানো স্টেথোস্কোপ। আর সেই সবুজ চোখ। যা মেয়েদের দূর্বল করার একমাত্র হাতিয়ার এই ছেলের কাছে।ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যে মন্ডিত এই ছেলে।নিভ্র সাফার চোখের সামনে বিরক্তি নিয়ে তুরি বাজিয়ে বলে উঠে……
—“সমস্যাটা কি?? এভাবে তাকিয়ে না থেকে বলো কি হয়েছে বাচ্চাটার??আর বাচ্চাটা তোমার কে??
—“আমার কেউ না বাচ্চাটা।রাস্তায় পেয়েছি। কিন্তু এত কথা আপনাকে কেনো বলবো??ডাক্তার কই??
–“সিস্টার দিয়া”(নিভ্র চেঁচিয়ে ডেকে উঠে)
—“ইয়েস স্যার”
—“বাচ্চাটাকে ওর কোল থেকে নেও মাথায় ব্লেডিং হচ্ছে ইমিডিয়েটলি সেলাই দিতে হবে।”
—“এই এই আপনি কি সব বলছেন??দেখেন এটা শুটিং করার টাইম না। বাচ্চাটা সত্যিই অসুস্থ ওকে সত্যিই সত্যিই ডাক্তারের প্রয়োজন আপনার মত নকল ডাক্তার মানে মডেল ফডেল কে না বুঝলেন।”
.
নিভ্র জবাব দিল না।বাচ্চাটাকে কোল থেকে নিয়ে নিল।সে যানে এই মেয়েকে একটা বললে এ আরো তিনটে শুনিয়ে দিবে।নার্স দিয়া বলে…..
—“আরে ম্যাম আপনি যানেন না উনিই ডাক্তার ??আরে উনি ডা.নিভ্রনীল।
.
সাফা হা করে নিভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।এবার আবার ডাক্তার??সাফা অবাক হয়ে বলে উঠে…..
—এই আপনি কি দশভুজা?? কত কিছু করেন আপনি??একবার ভিলেন,একবার মডেল আর এখন ডাক্তার। হাউ ক্যান দিস পসিবল?? কেমনে??
নিভ্র সাফার চোখ বড় করা দেখে হালকা হাসে। যা দেখে দিয়ার মুখ হা হয়ে যায়।তার তিন বছরের চাকরিতে সে কখনো নিভ্রনীলকে কোনো মেয়েকে দেখে হাঁসতে দেখেনি।নিভ্র বাচ্চাটাকে দিয়ার কোলে দিয়ে বলে উঠে……
—“দ্রুত জরুরি বিভাগে নিয়ে যাও আমি আসছি”
.
দিয়া হাটাঁ দেয় বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আর বারবার পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।তার তো মাথায় ডুকছেনা এই ভয়ঙ্কর প্রানি নিভ্র বিনা করানে নোটিশ ছাড়া হসলো কেমনে??ভায়াবহ ব্যাপার।এটা নিয়ে আজ সবার সাথে একটা সমালোচনার পাহাড় তৈরি করা যাবে।নিভ্র এ্যাফ্রোনের নিচ দিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে সোজা হয়ে বলে……
—“বাচ্চাটার ফ্যামিলি মেম্বর কোই??”
—“আমি কি যানি??”আমি তো ওকে রাস্তায় পেয়েছি।এসব ছাড়েন শুধু এটা বলেন আপনি সত্যিই ডাক্তার???
–“তোমার এখনো সন্দেহ আছে??”(ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে)
—“হুম আছে”
—“হোয়াট?? ”
—“না মানে আপনি একজন হয়ে এত কিছু কিভাবে করেন সেটাই সন্দেহ হচ্ছে। আর কি কি পেশায় আপনি নিয়জিত আছেন বলবেন??? ”
—“তোমার মনে হয় আর কয়টা বাকি আছে??”
—“মনে তো হয় আরো দশ বারো টা”
.
নিভ্র আবার মুখ টিপে হাসলো।তারপরে পিছনে ঘুড়ে বলে..
—“আর নেই”
–“আপনার বাকি পেশা গুলোর মাঝে এটা সুন্দর বেশি তাই আজ থেকে আপনার নাম চেঞ্জ করা হলো”

নিভ্র আবার পিরে তাকায়।তাকিয়ে বলে…..
—“তা কি নাম দিবে এবার??”
—ভিলেন বাদ,মডেল ফডেলও বাদ শুধু ডাক্তার সাহেব…
.
বলেই একটা মিষ্টি হাসি দেয়।নিভ্র অদ্ভুত নজরে দেখে সেই হাসি।মুখের চারপাশে চোখ বুলিয়ে গালের টোলটা খুঁজে।কিন্তু ব্যর্থ হয় সে।চোখমুখ না খিঁচলে বা দাঁত বের না করলে সাফার টোল দেখা যায় না।নিভ্র ডান হাত দিয়ে সামনের চুলগুলো পিছনে নিলো।সবুজ চোখগুলো সরু করে সাফার দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ তাকিয়েই পিছনে ঘুড়ে সামনে হাটাঁ দেয়।সাফা সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে সরাতেই ভিঁজা ভিঁজা লাগে হাতটা সামনে এনে রক্তাক্ত হাত দেখেই সাফার মাথা ঘুড়ে উঠে ঘামে তার কপাল ভিজেঁ উঠে।হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে।আজ দুপুরে সে লাঞ্চ করেনি।বাবা বাসায় ছিলোনা আর তার বাবা না থাকলে তার খেতে ভালো লাগে না।সব মিলিয়ে শরীর দূর্বল থাকায় সাফা ধাম করে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।নিভ্র অনেকটাই চলে এসেছে পিছনে কিছু পড়ার হালকা আওয়াজে নিভ্র পিছনে ঘুড়েই সাফাকে দেখলো না। নিচের দিকে তাকিয়ে সে চকিতেই সাফার কাছে গেলো।ডান হাত ধরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে পাল্লর্স রেট চেক করলো।খুব ধীর গতি দেখেই বুঝতে পারে দূর্বলতাটা।নিভ্র চারপাশে একবার তাকালো।একবার ভাবছে কোলে তুলে নিবে আবার কেনো যেন নিতে পারছে না।তবুও সব কিছু উপেক্ষা করে সাফাকে কোলে তুলে নিলো।সাথে সাথে নিভ্রর হার্ট দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করে।নিঃশ্বাস দীর্ঘ হয়ে আসে।নিভ্র চোখ বুজে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলো।জীবনে প্রথম সে এমন কম বয়সের কোনো যুবতীকে কোলে নিয়েছে।তার মত স্ট্রং লোকেরও কাঁপাকাঁপি হচ্ছে ভাবতেই তার অবাক লাগে।নিভ্র সাফাকে বেডে শুয়ে দিল।এক হাতের রক্ত পরিষ্কার করে দিল।নার্সকে সেলাইন নিয়ে আসতে বললো।স্যালাইন আনতেই ডান হাতে লাগিয়ে দিলো।নার্স অবাক হয়ে দেখছে।বয়স্ক হওয়াই তার অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারটা।নিভ্র সাধারনত মেয়েদের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখে।এখানে নিজের রুমের চেকআপ বেডি শুয়ে দিয়েছে।ব্যাপারটা ভিন্ন তবুও নিভ্র রোগীদের প্রতি যত্নবান ভেবে তিনি এড়িয়ে গেলেন।নিভ্র নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে উঠে….
—“কি হচ্ছে তোর নিভ্র??”এভাবে ড্যাসপারেট হওয়ার মত কিছু নেই। কুল কুল।
.
নিভ্র বাচ্চা মেয়েটার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।তাকে একটা কেবিনে রেখেছে।রক্ত একটু বেশিই গেছে তাই তাকে এক ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে।সাফার জ্ঞান ফিড়তেই নিজেকে এভাবে বেডে দেখে সে একটু ভয় পেয়ে যায়।সুই স্যালাইন, ইনজেকশন এসবে তার ভয় হয় খুব।আর হসপিটাল তো তার সবচাইতে অপছন্দের জায়গা।সাফা উঠে দাড়িয়ে পড়ে।স্যালাইনটা হাত থেকে কিভাবে খুলবে ভেবে পাচ্ছেনা।তাই সম্পূর্ণ স্যালাইন নিয়েই হাটাঁ দেয়।এক হাতে স্যালাইন ব্যাগ নিয়ে সাফা নিভ্রর রুমে ঘুড়ছে।এত এত ডিগ্রি আর প্রাইজ দেখে সে মনে মনে বলে উঠে……..
—“বাপরে বাপ কি ব্রিলিয়েন্ট। এত জ্ঞান রাখে কোই??সব সময় তো দেখি রামগরুড়ের ছানা হাসতে তার মানা হয়ে ঘুড়ে বেড়ায়।আক্রুড় মত।
.
সাফা দুষ্টু বুদ্ধি নিয়ে নিভ্রকে নকল করা শুরু করে…….
—“এই মেয়ে সমস্যা কি??তুমি বেশি কথা বলো??চুপ করো তা না হলে ফেলে দিবো!!
সাফা নিভ্রর এ্যাফ্রোনটা গায়ে জড়িয়ে নেয়।বেশ কষ্ট হয় তার।ব্যাথাও পায়।তবুও এ্যাফ্রোনটা পড়ে স্টেথোস্কোপ কানে দিয়ে রোগী দেখার ভঙিতে বলে উঠে…….
—“কি সমস্যা আপনার”(নিভ্রর গলা নকল করে)
নিজেই আবার রোগীর জায়গায় জবাব দেয়….
—“পেটে ব্যাথা”।
—“প্যারাসিটেমাল দুই বেলা খাবেন ভালো হয়ে যাবে।আর আপনার কি সমস্যা।”
—জ্বর
—প্যারাসিটেমাল তিন বেলা খাবেন। আর আপনার??
—মাথা ব্যাথা
—প্যারাসিটেমাল চার বেলা।সকালে, দুপুরে, বিকেলে,আর রাতে।
.
বলেই হি হি করে হেসেঁ উঠে।সাফা এ্যাফ্রোনটা পড়ে নাচতে নাচতে সামনে তাকিয়ে থ হয়ে দাড়িয়ে যায়।তাড়াতাড়ি নিজের গায়ের এ্যাফ্রোনটা নিয়ে টানাটানি করছে।নিভ্র বুকে হাত গুঁজে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে।আর মনে মনে ভাবছে এই মেয়ে ডাক্তার হলে সব রোগী মারা পড়তো। সব রোগের জন্য প্যারাসিটেমাল দিয়ে দিবে।তাও তিন বেলা।সাফা ভয়ে এ্যাফ্রোনটা খুলতে যাচ্ছে তাই হাতের স্যালাইনের কারনে ব্যাথা পাচ্ছে।নিভ্র বুকের হাতগুলো নামিয়ে নেয়।সোজা হয়ে সাফার সামনে এসে দাড়ায়।সাফার হাতগুলো এ্যাফ্রোন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে হাত দিয়ে সাফার গাঁ থেকে এ্যাফ্রোনটা খুলে দেয়।কান থেকে স্টেথোস্কোপটাও খুলে পাশের টেবিলে রেখে দেয়।সাফা অবাক হয়ে দেখছে।সে ভেবেছে তাকে আজ বেশ ঝাড়ি খেতে হবে। ভাগ্য ভালো এমন কিছুই হয় নি।নিভ্র এবার সরু চোখে তাকিয়ে বলে……
—প্যারাসিটেমাল যদি সব রোগের ঔষুধ হয় তবে আমাদের মতো ডাক্তারের প্রয়োজন ছিলো না।ভাগ্যিস তুমি ডাক্তারি পড়নি।তা না হলে রোগীরা এমনেই মারা যেতো।যে হারে প্যারাসিটেমল দুই বেলা তিন বেলা চার বেলা করছো হার্ট অ্যাটাক করলেও তুমি এই প্যারাসিটেমাল দিতে।মাই গড
.
বলে হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে হেঁসে উঠে।সাফা সব ভুলে অপলক তাকিয়ে আছে।সে জানতোইনা এই গোমড়া মুখো ছেলেটা হাঁসতেও পারে।আর হাসলেও একে এতো সুন্দর লাগে??ভাবা যায়।সাফা অবাক হয়ে দেখছে।সাফাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিভ্র হাসি থামিয়ে দিল।সাফার ভাবনার ইতি হলেই সে বলে………
—“মেয়েটা কেমন আছে??”
—ভালো আছে।
—“দেখা করতে পারি??”
—চল আমার সাথে।তবে তার আগে তোমার স্যালাইন খুলে দি।তা না হলে স্যালাইন প্রায় শেষ যে কোনো সময় রক্ত উঠে যেতে পারে।এদিকে এসো।”
সাফা লাফিয়ে দু কদম দুরে গিয়ে করুন সুরে বলে উঠে…….
—-“না না খুলতে হবে না।ব্যাথা পাবো।প্লিজজজ”
—খুলতে হবে না মানে কি??এটা না খুললে তোমার হাতের রক্ত স্যালাইনের নলে উঠে যাবে।এদিকে এসো মানে এসো।ফাইজলামি করবা না।
—দেখেন আমি কি আপনাকে এটা লাগাতে বলেছি??না তো আপনি নিজেই লাগিয়েছেন। এখন আমি খুলতে চাই না তাই খুলবো না।প্লিজজজ আপনি এটা খুলিয়েন না।যানেন কত ব্যাথা হবে??আউ আমার তো এখনই কষ্ট হচ্ছে।
সাফার কথা শুনে নিভ্র বিরক্ত হলো।একপা দু পা করে এগিয়ে গেলো সাফার কাছে।এক টানে ওকে নিজে কাছে এনে।কোমড় জড়িয়ে নিতেই সাফা যেনো অকাশ থেকে পরেছে।এমন করে তাকিয়ে আছে।চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।নিভ্র এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে হাতের স্যালাইনটা খুলে দিতে সাফা ব্যাথা পায়।ব্যাথার কারনে সাফার চোখে পানি চলে আসে।নিভ্র বলে…..
—“কিছুক্ষণ পরেই ভালো হয়ে যাবে।এখন কান্নাকাটি করবে না।ঝগড়ায় তো এক নাম্বার আর সামান্য সুইকে ভয় পাও।আজব মেয়ে তুমি।আমি তো তোমাকে সাহসি মনে করেছি।যেভাবে সবার সামনে আমার মাথা ফাটিয়েছ!!এভাবে তাকাবে না।চলো মেয়েটার কাছে।
নিভ্র মনে মনে হাসলো।সাফার এমন মুখ ফুলানো দৃশ্য দেখে তার ভালোই লাগে সাথে হাসি পায়।পরক্ষনেই আবার নিজেকে সামলে নেয় নিভ্র।
.
সাফা বাচ্চা মেয়েটার সাথে কথা বলছে।তাকে গল্প শুনাচ্ছে।নিভ্র সোফায় বসে দেখছে ওদের।সাফা হাত নাড়িয়ে গল্প বলছে।নিভ্র স্থির দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে তাদের দিকে।হঠাৎ একটা মহিলা হাউমাউ করে কেঁদে রুমে ডুকে পরে।সাফা নিভ্র দুজেই অবাক হয়।সাফার হাতের ভাজ থেকে বাচ্চাটা চেঁচিয়ে বলে………
—“আম্মু আম্মু আমি এখানে তুমি কোথায় ছিলে??”
সাফা বুঝতে পারে বাচ্চাটার মা এ।সাফা সরে উনাকে জায়গা করে দেয়।আর মুচকি হেঁসে নিভ্রর পাশে বসে পরে।নিভ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারে এরা মা মেয়ে।সাথে সাথে তার মাথার রগ গুলো ফুলে উঠে।মনে মনে বলে….কেমন মা মেয়েকে রাস্তায় একা রেখে ঘুড়ে। নিভ্র বিরক্তির সাথে রাগ নিয়ে মহিলাটাকে কিছু বলবে বলে বসা থেকে উঠে দাড়ায়। সাফা নিভ্রর হাত ধরে বসিয়ে দেয়।আর তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে…………..
—“🍁
মায়ের গায়ে স্পেশাল একটা গন্ধ থাকে বুঝলেন সে গন্ধ শুধু সন্তানরাই পায়। আমি যখন ভূতের মুভি দেখে তার কোলে গুটিশুটি মেরে জড়িয়ে ঘুমাতাম তখনই এটা পেতাম……মা তো জোনাকির আলোর মতই আমাদেরকে আলোকিত করে……….দেখেন বাচ্চাটা এতক্ষণ চুপ করে ছিলো।কিন্তু মাকে পেয়ে সে ব্যাথা ভুলে তার সাথে কেমন হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।কত খুশি দেখাচ্ছে।মাকে জড়িয়ে গায়ের ঘ্রান নিচ্ছে।

নিভ্র সাফার দিকে তাকিয়ে আছে।মায়ের সম্পর্কে বলা কথাগুলো তার কলিজা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। চোখ ভিজেঁ আসছে।হঠাৎ পুরনো কথা মনে হতেই সে সাফার হাত ঝাড়ি দিয়ে উঠে দাড়ায়।বাচ্চাটাকে আর তার মাকে একবার দেখে কাঁচের গ্লাস ঠেলে বেড়িয়ে যায়।সাফা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিভ্রর পিছনে ছুট লাগায়।নিভ্র সোজা নিচে চলে যায়।হসপিটালের সামনে বিশাল বাগান।ফুলের গাছে ভরপুর জায়গাটা।বাগানের পাশেই পার্কিং এরিয়া।নিভ্র বাসায় যাবে বলে সেদিকে হাটাঁ দেয়।এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।এই দিকটার লাইটগুলো এখনো জ্বালান হয়নি।নিভ্র এগোতেই সাফা ওর হাত ধরে ফেলে।রাগি রাগি গলায় হাঁপাতে হাঁপাতে বলে……
—আপনি কি মানুষ বলেন তো??আমার কিন্তু সন্দেহ আছে।মনে হয় এলিয়ে টাইপের কিছু হবেন।তা না হলে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে নিচে নেমে এলেন???
—“তুমি হয়তো যানো না লিফট আছে হসপিটালে। আমি লিফট দিয়েই নেমেছি।আর রাত হয়ে এসেছে প্রায় বাসায় যাও।”
—আরে দাঁড়ান না।এই বাগানটা সুন্দর তো!!এটার চাইতে বড় কথা ওই বাচ্চাটার সাথে দেখা না করে চলে এলেন যে??ওকে বাই তো বলে আসতে পারেন??চলেন?
—না বাই বলতে হবে না।মুড নেই।আমি বাসায় যাবো।আর বকবক না করে যাও এখান থেকে।

সাফা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।এই লোক এমন কেনো??একটু নরমাল বিহেভ করলে কি হয়।সাফা চারপাশে চোখ বুলাতেই চেঁচিয়ে উঠে।নিভ্র এমন চেঁচামিচি শুনে দ্রুত সাফার কাছে এসে দাড়ায়।সাফা খুশিতে গদগদ হয়ে হাত দুটো একসাথে মুষ্টি বদ্ধ করে বলে…….
—ওয়াওওও জোনাকির আলো
নিভ্র ঘুড়ে দাঁড়ালো। সামনে তাকিয়ে দেখে সারা বাগান জোনাকির আলোতে আলোকিত হয়ে আছে।নিভ্র আবার সাফার দিকে তাকালো।সাফার গায়ে এসে জোনাকি বসছে।সাফাকে জোনাকিরা নিজের আলো দিয়ে আলোকিত করছে।হলুদ আলোয় আলোকিত। নিভ্র অবাক হয়ে দেখছে।তার মনে হচ্ছে তার সাথে কিছু একটা হচ্ছে। ভয়ঙ্কর কিছু হচ্ছে।হঠাৎ সে সাফার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।এক হাত সাফার কোমড়ে রেখে আর এক হাত সাফার ডান হাতে রাখে।সাফা চকতেই তাকায়।তার সারা শরীরে শিহরণ দিচ্ছে মনে হয়।সাফা ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়।নিভ্র ইশারায় চুপ থেকে সামনে তাকাতে বলে।সাফা চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়।নিভ্র সাফার ডান হাতের পিঠ নিজের ডান হাতে নিয়ে তা সামনে লম্বা করে বাড়িয়ে দিলো।সাথে সাথে একঝাঁক জোনাকি উড়ে এসে সাফার হাতে বসে।সাফা তো খুশিতে নেচেদিবে টাইপের অবস্থা।সাফা ঘুড়ে নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্রও তাকায়।দুজন দুজনের চোখে অদ্ভুত ভাবে হারায়।নিভ্রর সবুজ চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাফার নীলাভ চোখ।নিভ্রের মনে হচ্ছে আর বেশিক্ষণ থাকলে না জানি কি হয় তাই ধীরে হাত সরিয়ে নিয়ে দুরে দাড়ায়।সাফা জোনাকি গুলোর দিকে তাকায়।তার চোখে মুখেও জোনাকি উড়ে এসে বসছে।সাফা মুখ কুঁচকে আছে।আবার সেই টোল দৃশ্যমান হয়ে উঠে।জোনাকির আলোতে তা আরো সুন্দর দেখাচ্ছে।নিভ্রর ইচ্ছে করছে এবার হাত রাখতে সেই ভয়ঙ্কর গর্তে।নিভ্র মনের অজানতেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে কিছু ছবি তুলে নেয়।সাফা জোনাকিগুলো নিয়ে খেলছে।এদিক ওদিক ঘুড়ছে।এবার কিছু জোনাকি মুঠোয় ভড়ে নিভ্রর সামনে দাড়ায় নিভ্র তখন চকিতে ফোনটা পকেটে ডুকিয়ে নেয়।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে চুরি করেছে।সাফা ভ্রুকুঁচকে বলে……
—কি করছেন??আপনাকে দেখে কেমন চোর চোর গন্ধ আসছে।
নিভ্র মনে মনে আওড়ায়…..
—আমি কি সত্যিই চুরি করেছি??নাকি আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু চুরি হয়েগেছে??
সাফার দিকে রাগ মিশ্রিতো চোখে তাকাতেই সাফা বলে…..
—“আরে মজা করছিলাম।এত বড় ডাক্তার সাহেব কি চুরি করতে পারে আবার আপনি দশভুজা। যাই হোক হাতের দিকে তাকান।
নিভ্র ভ্রুকুঁচকাতেই সাফা শাসনের সুরে বলে…..
—এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো??সুন্দর করে তাকান।
নিভ্র ভ্রু ঠিক করে তাকাতেই সাফা তার হাতের একঝাঁক জোনাকি ছেড়ে দেয়। জোনাকিগুলো নিভ্রর গায়ে মুখে আছড়ে পরে।আর সাফা খিলখিল করে হেসেঁ বলে…..
—অন্ধকার জায়গাটাকে…আলোকিত করতে তো বেশি কিছু না একঝাঁক আলোই যথেষ্ট.. আর তা যদি হয় জোনাকির আলো তবে তো আর কথাই নেই..জোনাকির সোনালি আলোয় ডেকে যাবে অন্ধকার……🍁
.
#চলবে…………….🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here