এক প্রহরের খেলা, পর্ব:১৩+১৪

#এক_প্রহরের_খেলা
মোর্শেদা হোসেন রুবি

১৩||
-” আজাদ ভাই। মেইয়েটারে ধইরসি। শালি কী চালাক জানেন ? সে মোহনের রিক্সার কাছে ফিইরে না গিয়ে নাক মুখ ঢাইকে অন্য রিক্সা ভাড়া কইরতেসিল। ইবার আর কোন সুযোগ দেইনাই । এক্কেবারে সুজা মাইক্রোতে তুলে ফেলাইসি। জ্ঞান এহনো ফিরে নাই। আপনি তাড়াতাড়ি চইলে আসেন। মাইয়েটার জ্ঞান ফিরল বইলে।”
-” আচ্ছা ঠিকআছে। ওকে একদম ঘাঁটাবিনা। আর গায়েও হাত দিবিনা। যদি আমি শুনি যে সামান্যতম ফাত্রামি করেছিস ওর সাথে তো ভাল হবেনা। একেবারে শলমির মত করে হাত ভাঙবো একেক জনের। ফোন ররাখ, আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।” বলে ফোন কেটে দিয়ে দ্রুত থানায় ফোন করল আজাদ।

-” হ্যাঁ, সমু ভাই ? আপনার ঐদিকের খবর কী ? সব ঠিক আছে তো ? আপনি এক কাজ করুনন। আমার এলাকা থেকে আপনার পুলিশ জীপ ফেরত নিয়ে যান। যাকে যা দেখানোর দেখানো হয়ে গেছে। এদিকের কাজ শেষ, ওকে ? ”
-” কাজ আর কোথায় শেষ হলো রে ভাই ? পুরো থানা তোলপাড় করে ফেলতিসে একেকজন। কয়েকটা ইয়ং ছেলেপেলে এসে ঝামেলা করতিসে এখানে। এগের একদল বলতিসে তাগের মেইয়ে কিডন্যাপ হইসে। আরেকজন বইলতিসে তাদের মেইয়ে হারায়ে গেসে। এদিকে আমি খবর নিয়ে জানতে পারিসি পায়রা চত্বর থেইকে দুইটা মেইয়ে নিখোঁজ হইসে। আপনি একটু তাড়াতাড়ি আসেন তো ভাই । ঘটনা কেমন প্যাঁচ খাওয়া লাগতিসে।”
-” আচ্ছা, আমি আসছি।” মোবাইল রেখেই দ্রুত বাইক বের করল আজাদ। তার মন বলছে রুমকির স্বামীই থানায় গিয়ে ঝামেলা করছে। কিন্তু ওসি সাহেব দুইটা মেয়ের কথা কেন বলছে, এটা তার বুঝে আসেনি। যাই হোক, জায়গামত গিয়ে দেখলেই ঘটনা বোঝা যাবে। ”

একটানে সোজা থানায় চলে এল আজাদ। রুমকির কাছে একটু পরে গেলেও চলবে। সে যেখানে আছে থাক। তার ছেলেদের বলে রেখেছে ওর দেখাশোনা করতে। কাজেই ঐ দিকে আধাঘন্টা পরে গেলেও চলবে। আগে এ দিকের পরিস্থিতি সামলানো দরকার। রুমকির স্বামীকে দেখে রামছাগল মনে হলেও শালা যে ভেতরে ভেতরে ধড়িবাজ তা ওর কথা শুনেই বোঝা গেছে। রুমকির মত মেয়ের পাশে এরে মোটেও মানায় না। রুমকির পাশে মানায় তার মত রাফ এন টাফ হিরোকে। কিন্তু মেয়েটার বজ্জাত বাপের কারণে ঘটনা ঘটতে গিয়েও ঘটেনি। নইলে রুমকিকে তো সে একরকম পটিয়েই ফেলেছিল। মেয়েটা ওর প্রতি অনেকটাই ঝুঁকে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর শেষ রক্ষা হলো না। ঐ শকুনে বুড়ি হুট করে বিয়ে দিয়ে ফেলল মেয়েটার। শালা বুড়ি শকুনের হাড্ডি। এত বয়স হয়েছে, এখনও মরার নাম নেয় না। এবার বুড়িকে মজা দেখাবে আজাদ। কিচ্ছু করবে না রুমকিকে। ফুলের টোকাও দেবেনা। জাস্ট তিনদিন আটকে রাখবে। তারপর ফিরিয়ে দেবে ওর ফুলবাবু ঋভু মিয়ার কাছে। তখন দেখা যাবে মজনু মিয়ার দিলে কত প্রেম আছে। যার বউ তিনদিন অন্য পুরুষের সাথে গায়েব থাকে। তারপর ফিরে আসে। সেই বউ গ্রহন করতে কলিজা লাগে। কোন পুরুষই সহজে এটা মেনে নিতে পারেনা। যতই জানুক যে বউয়ের কোন দোষ নেই তারপরেও ছুঁত অচ্ছ্যুতের বালাই কার না আছে। ভাবনাটা মনে আসতে আগাম একটা তৃপ্তি এসে আচ্ছন্ন করে দিল আজাদকে। এবার জমবে খেলা। তার কাছে মেয়ে বিয়ে না দেবার মজা এবার টের পাবে আব্দুল্লাহ মামা। জল না ছুঁয়ে মাছ শিকার তো একেই বলে।

বাইক থানা চত্বরে পৌঁছালে দুর থেকেই পরিস্থিতির আঁচ টের পেল আজাদ। থানার বাইরে ছোটখাট জটলা। কী ব্যপার ? এত রাতেই লোকজন যোগাড় করে ফেলেছে নাকি রূপম মিয়া। বাইক স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে থানার ভেতরে ঢুকল সে। ছেলেগুলোকে একনজর দেখেই বুঝতে পারল এরা একজনও এ পাড়ার না। কেসটা কী ! এরা সবাই কী রূপমের লোক ? নাকি আরো কোন ঘটনা ঘটেছে ?
ভেতরে পা বাড়াতেই দুর থেকে রূপমকে নজরে এল আজাদের। সে দেখেও না দেখার ভান করে সরাসরি ওসির রুমে ঢুকে পড়ল। ওসি সাহেব ফোনে ব্যস্ত । আজাদকে দেখেই শেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে আজাদও হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরল। করমর্দন শেষে সামনের চেয়ার টেনে বসে পড়ল। ওসি সাহেব কান থেকে ফোন সরিয়ে টেবিলের ওপর ঝুঁকে প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল, ” করেছেন কী আজাদ ভাই ? ”
-” কী করেছি ? ”
-” আপনি কী দুনিয়াতে আপনি আর মেইয়ে মানুষ পেলেন না ? সব বাদ দিয়ে গেইসেন এমপি সাহেবের ছেলের বউকে হাত করতি ? ”
-” এম.পি’ র ছেলের বউ? ” আজাদের কপালের ভাঁজ বাড়ল। ঘন্টাদুয়েক আগে রূপমের বলা কথাটা মনে করার চেষ্টা করল। রূপম বলেছিল তার মামাত বোনের জামাই কোথাকার যেন ডিসি। সেক্ষেত্রে কথাটা হবে ডিসি সাহেবের শালার বউ। এমপি’র ছেলের বউ হয় কেমন করে !

ওসি গলা বাড়িয়ে ফিসফিস করে বললেন, ” আরে ফোনের পর ফোন আসতিসে। এমপি সাহেব নিজে ফোন দিসেন দু’বার। আমি তো ভয় পাচ্ছি তিনি আইসে না পড়েন। এই ঘটনা সামাল দিতে না পারলে ঝামেলায় পড়ে যাব আজাদ ভাই। এহন আপনি আইসেছেন। এগের সাথে কথা বলেন। এরা বলতিসে ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী আছে। আমি বলেছি ঘটনা তদন্ত হচ্ছে। তিনজনের একটা টিম পাঠাতি হইসে আমাকে ঐ পায়রা চত্বরে। ঐখানকার টহল পুলিশের দুজন নাকি মাইক্রো দেইখেসে। তাগেরও খবর দেয়া হইসে। এরা আসার আগে আপনি একটু ভিকটিমের শালার সাতি কথা বলেন। এগোরে বুঝানো যাইতেসে না। তারা মেলা কেওয়াজ বাইধেছে। ”
-” আমি কথা বলে কী হবে ? আমি তো প্রশাসনের লোক না।”
-” তাতে কী। আপনি এই এলাকার মাথা। কমিশনার সাহেবের খাস লোক। আপনার কথা এরা ফেলতি পারবি না।”
-” কিন্তু মেয়ে কিডন্যাপ আইমিন মিসিং হয়েছে রাত দশটার দিকে। আর এখন বাজে রাত একটা। মাত্র তিনঘন্টার মধ্যে ঢাকা থেকে লোকগুলো এলো কিভাবে। কিছু বুঝলাম না।”
-” ঢাকা থেইকে আসবে কেন ? এরা তো সব ঝিনেদার লোক। যে মেইয়েটা কিডন্যাপ হইসে তার বিয়ে হলো গিয়ে আপনার পরশু দিন। এমপি সাহেব চব্বিশ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। কালকের মধ্যে খুঁজে বের করতে না পারলি বিরাট সমস্যা হয়ে যাবে। ”
-” মানে ? যে মেয়ে কিডন্যাপ হইসে তার বিয়ে পরশু দিন হবে কেমন করে ? তার তো বিয়ে অলরেডি হয়ে গিয়েছে। তার হাজবেন্ডকেও আমি বাইরে দেখে এসেছি। তারচে বড় কথা ঐ মেয়ে সম্পর্কে আমার কাজিন। আমার মামাত বোন সে। কিসের মধ্যে কী আনছেন আপনি। মাথার স্ক্রু খুলে পড়ে গেছে নাকি আপনার ? ”
-” পড়েনি তবে পড়ার দশা হইসে। আপনে এটা দেখেন। তারা জিডি কইরেসে। এটা দেখলেই সব বুঝে আসবে।” ওসি সাহেব একটা খাতা বাড়িয়ে দিলে আজাদ সেটা হাতে নিয়ে দেখল।
কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ থাকার পর বলল, ” এই মেয়ের নাম এরা লিখেছে অদিতি হক। বয়স উনিশ বছর। অবিবাহিত। বুঝলাম না। এই মেয়ের সাথে আমার কী সম্পর্ক ? ”
-” আজাদ ভাই। যে মেইয়েটা কিডন্যাপ হইসে, তারে কী আপনি দেইখেছেন ? ”
আজাদ তাকিয়ে রইল ওসির দিকে। ওসি সাহেব দ্রুত সংশোধন করে মাথা নেড়ে খপ করে টেবিলের উপর রাখা হাতটা চেপে ধরল আজাদের।
-” মাইন্ড কইরেন না আজাদ ভাই। আপনি দামী মানুষ। আপনার সুনজরে আমরা আছি। সরাসরি বলে ফেললাম বলে মনে কষ্ট নিয়েন না। মানে আমি বলতে চাচ্ছিলাম, আপনার ছেলেপেলেরা কী কোন ফোন টোন আপনারে দিয়েছে। মানে আপনি যদি আমাকে নিশ্চিত করতেন তো বড় ভাল হত।”
-” আমি যার ব্যপারে আপনার সাথে রাত এগারটার দিকে কথা বলেছি তার নাম রুমকি। সে আমার মামাত বোন। আমি কোন অদিতিকে চিনিনা। তার সাথে আমার কোনকালের লেনাদেনা নেই। কাজেই রুমকির ব্যপারে কথা বলুন। অদিতি ফদিতি বাদ। ঐটা আপনার চ্যাপ্টার। ” মাছি তাড়ানোর মত করে হাত নাড়ল আজাদ। চেহারায় স্পষ্ট বিরক্তি।
ওসি সাহেব এবার টেবিল ঘুরে আজাদের পাশে চলে এল। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল, ” রুমকি তো কিডন্যাপড হয়নি রে ভাই। সে মিসিং। মিসিং মানে সে পালাইসে। পালিয়ে কমিনদে গেসে কেউ জানেনা। যে মেয়েটা কিডন্যাপড হইসে তার নাম…ঐ যে একটু আগেই বললাম। সে এমপি আরেফীন সমাদ্দারের একমাত্র ছেলের বাগদত্তা। বুঝলেন ব্যপারটা ?” বলে ওসি সাহেব থামলেন।

আজাদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওসি সাহেব ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বললেন, ” আপনার এলাকায় কে কারে কিডন্যাপ করসে সেটা আপনার জন্য বের করা কঠিন না ভাই। আমারে এ যাত্রা বাঁচান প্লিজ। আপনার কারণেই আমি এখনও শান্ত আছি। ওপর থেকে ঠেলা এলে আমারে ফিল্ডে নামতে হবে। বহু ঝামেলা করে শ্বশুরবাড়ী এলাকায় পোস্টিং নিইসি। বান্দরবান পাঠায়ি দিলি বান্দরের খেলা দেখতি হবে। আজাদ ভাই নিশ্চয়ই বুঝতেসেন আমি কী বলতে চাচ্ছি ! ”
আজাদ কয়েক সেকেন্ড ভাবল। তারপরেই ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ” আধাঘন্টা সময় দিন। আমি আসছি। আপাতত এদিকটা সামলে রাখুন।” বলেই চেয়ার ঠেলে উঠে দ্রুত বেরিয়ে গেল আজাদ। বারান্দা পেরোনোর সময় রুপমকে একঝলক দেখতে পেল। সে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। আজাদ ঐ দিকে আর গেলো না। সে দ্রুত বাইকে চাপল। তারপরই উল্কাবেগে বেরিয়ে গেল থানাচত্বর থেকে।

=====

-” দরজাটা খুলুন প্লিজ। আমি শায়লার বান্ধবী রুমকি। আন্টি….? ”

উপর্যুপরি ধাক্কা তার সাথে এই কথাটা বেশ কয়েকবার বলার পর প্রথমে জানালার গ্লাস সরল তারপর দরোজাটা খুলে গেল। যিনি উঁকি দিলেন তিনি শায়লার বাবা। তাঁকে দেখেই রুমকি চিনতে পারল। গত কয়েক বছরে তিনি এতটুকু বদলান নি। তবে আগে তার দাঁড়ি ছিল না, এখন বেশ লম্বা দাঁড়ি রেখেছেন। রুমকি তাকে সালাম দিলে তিনি যারপরনাই বিস্মিত হয়ে বললেন, ” একী ? এ সময়ে তুমি এখানে কেন ? তুমি রুমকি না ?”
-” জি, আঙ্কেল। আসলে আমি অনেক বড় বিপদে পড়ে বাধ্য হয়েই এখানে এসেছি । আমাকে একটু ভেতরে আসতে দিন আঙ্কেল। আমি সব খুলে বলছি। আমাকে একটু সাহায্য করুন প্লিজ।”
-” ওহ্, আ…আচ্ছা। তুমি ভেতরে এস, ভেতরে এসো মা। তোমাকে তো আমি চিনেছি। তুমি শিলুর সাথে স্কুলে পড়তে না ? ”
-” জি, আঙ্কেল ! আমরা একসাথে স্কুলে পড়তাম। ইয়ে, আন্টি শায়লা এরা কেউ বাসায় নেই ? ”
-” আছে আছে। তুমি এখানটায় স্থির হয়ে বসো। আমি শায়লাকে ডেকে আনছি। ওরা কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়েছে। তুমি বরং বোরকা খুলে আরাম করে বসো।” বলে শায়লার বাবা দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।
রুমকি আড়ষ্ট হয়ে সোফার এককোণে বসে পড়ল। মনে মনে অশেষ শুকরিয়া জানাল রবের উদ্দেশ্যে। যিনি একটি নিরাপদ ছাদের আশ্রয়ে ওকে এনে দিয়েছেন।

মিনিট দশেক বাদেই শায়লা ঘরে ঢুকল। তার সদ্য ঘুম ভাঙ্গা চোখগুলো লাল। সে রীতিমত চেঁচিয়ে উঠে বলল, ” কী রে, রুমকি তুই ? এত রাতে ? ”
রুমকি তার এক সময়ের প্রিয় বান্ধবীকে দেখতে পেয়ে ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। শায়লা কী বুঝল কে জানে। সে রুমকির হাত ধরে টানল।
-” তুই আমার সাথে আমার ঘরে আয় তো।” বলে বাবার দিকে তাকাল। বলল, ” বাবা, তুমি দরজাটা ভাল করে লাগিয়ে দাও। আর তোমরা শুয়ে পড়। কোন সমস্যা নেই, ওর সাথে আমি কথা বলছি। ”
-” আমাকে যদি দরকার হয় ? ”
-” অন্তত আজ রাতে না। তুমি শুয়ে পড়োগে বাবা ! সেরকম দরকার হলে তোমাকে ডেকে তুলব। আপাতত, তুমি ঘুম দাও।” শায়লার বাবা আর দ্বিরুক্তি না করে দরজায় তালা দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলেন। ক্লান্ত পায়ে রুমকী রওনা দিল শায়লার রুমের দিকে।

=====

এলাকার শেষ প্রান্তে এই নির্মানাধীন বাড়িটা গত তিন বছর ধরে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ীর মালিক সাততলা পর্যন্ত বিল্ডিং খাড়া করে দরজা জানালাও বসিয়েছেন। ইলেকট্রিসিটির কাজ শেষ হবার পরপরই টাইলস লাগানোর কাজ ধরেছিল লেবাররা। তারপরই হঠাৎ কোর্টের একটা সমন পাবার পরপরই বাড়ী নির্মানের সকল কাজ স্থগিত হয়ে গেল। সেই থেকে বাড়ীটা এভাবেই পড়ে আছে। কোন পরিবার এর বাসিন্দা হতে আসেনি। বাড়ীটা এখন কিছু লোকের আস্তানা আর বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। একবার বাড়ীর দোতলায় কিছু বখাটেদের অনৈতিক কাজের সময় এলাকাবাসী জেনে ফেলে বাড়ীর মালিককে অবজেকশান দেয় আর নিচে মেইন গেট লাগিয়ে তাতে তালা ঝুলাতে বলে। সেই থেকে এই বাড়ীর মেইনগেটে তালা ঝুলানো হয়। তবে তার একটা চাবি হাত ঘুরে আজাদ মুনতাসির এর পকেটেও চলে আসে। বিভিন্ন প্রয়োজনেই তার একটা ‘আনঅফিশ্যাল’ অফিস রুম দরকার পড়ে বলে বাড়ীওয়ালার কাছ থেকে রুমটা নেয়া। অবশ্য কোন ভাড়া দিতে হয়না এজন্য। তবে দুর্মুখেরা একে আজাদের মন্ত্রণা কক্ষ বলে। যদিও আজাদ নিজে একে ‘অফিস’ বলতেই ভালোবাসে। এমনিতে যারা সরল বাংলায় কথা না বোঝে তাদের জন্য এরকম একটা অফিসের আসলেই অনেক দরকার। আজাদ এই অফিসে বসে নিজ ভাষায় কথা বলে। আর তারা সব বুঝে যায়।

বাইকটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে রেখে সিঁড়ি বাইতে আরম্ভ করে আজাদ। এ বাড়ীর সমস্যা একটাই। আর সেটা হল আজাদকে সাততলা পর্যন্ত সিঁড়ি বাইতে হয়। কারণ লিফটের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে কী আর করা। গরজ বড় বালাই। তার উপর এখন তো লেজে আগুন লাগি অবস্থা।
সাততলায় পা দিতেই সাঙ্গপাঙ্গরা তটস্থ হয়ে সালাম ঠুকল। একজন দ্বিধাজড়িত কণ্ঠে বলল, ” ভাই, একটু সাবধানে যায়েন।”
-” হোয়াট…?”
-” না, মানে। মারে। ”
-” কে মারে ? ”
-” বন্দিনী আপায়।”
-” ফাজলামি বন্ধ রেখে ঠিক করে কথা বল। কাকে ধরে এনেছিস তোরা ? ”
-” আপনার মামাত বোন রুমকিকে। তবে সে আপনাকে কাজিন মানতে অস্বীকার করছে। বলে তোদের আজাদ মাই ফু…..! মানে আপনি সামনে গেলেই বুঝবেন। সায়মনের হাতে কামড় দিয়ে কী কইরেছে দেখেন না। তারপরে আবার হাত নোংরা বলে বমি করে আপনার অফিসের কার্পেটের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আপনি অনুমতি দেন নি বলে শালি….মানে মেইয়েটার হাত পা বানতে পারিনি। তার কাছেই তো যাওয়া যাচ্ছেনা। আপনি একটু কথা বলে শান্ত করেন তো ভাই।”

আজাদ নিরবে সবটা শুনল। তারপর চিন্তিত পায়ে অফিস রুমের দিকে এগিয়ে গেল। এটা মুলতঃ এই ফ্ল্যাটের মাস্টার বেড রুম। ঢোকার মুখে কয়েকটা চেয়ার ফেলে বসার ব্যবস্থা রেখেছে আজাদ কিন্তু সে নিজে ভেতরের ঐ রুমটাতে বসে। কনফিডেনশিয়াল আলাপের সময় সাধারণত সে তার চ্যালাপ্যালাদের কাউকে সামনে রাখেনা।

সতর্কতার সাথে অফিস রুমের ডোর আনলক করল আজাদ। নতুন দরজায় সামান্য ক্যাঁচ শব্দ হয়ে থাকবে হয়ত। প্রায় সাথে সাথেই সশব্দে চেয়ার ঠেলার শব্দ এলো। ভীতা হরিনীর মত একছুটে পজিশন নিয়ে ফেলল মেয়েটা। তার হাতে ওটা সম্ভবত নেইল কাটার। বাম হাতে কলম। সে দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে হিস্টিরিয়া গ্রস্তের মত চেঁচাল।
-” আবার এসেছেন ? আমি কিন্তু এগুলো দিয়ে চেহারা ভচকে দেব। আমার কাছে ছুরিও আছে। খবরদার যদি আমার দিকে এক পা এগোবেন তো। অমানুষ আপনারা। আপনারা কোন মায়ের পেট থেকে জন্ম নেন নাই। কোন মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়া সুসন্তান এমন অমানুষ হতে পারেনা। আমার এত বড় ক্ষতি করে পার পাবেন বলে ভেবেছেন ? আমার শ্বশুর একজন এমপি। আপনাদের সবার খবর করে ফেলবে সে দেখবেন। বের হন, এখান থেকে। আর আমাকে যেতে দিন। প্লিজ, আল্লাহর দোহাই লাগে। আমাকে যেতে দিন।”
মেয়েটা কথার মাঝখানেই হাউমাউ করে কাঁদছে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেকক্ষণ কেঁদেছে। ভীরু চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। টিকালো নাকের ডগায় তো যেন আগুন লেগেছে। তাজিনডঙের চূড়ো কী এরচেয়ে খাড়া ? সন্দেহ আছে আজাদের। কপালের খুচরো চুলগুলো কিছু বাতাসে উড়ছে আর কিছু ঘামেভেজা মুখে লেগে আছে। লম্বা বেণীটা ঘাড় টপকে একেবারে বুকের ওপর এসে পড়েছে। তুবড়ি ছোটানো ঠোঁটগুলো একে অপরের সাথে বারি খেয়ে সৃষ্টি করছে এক অপূর্ব দ্যোতনা । কান্নাভেজা কণ্ঠস্বর যদি এমন হয় তাহলে হাসলে কেমন লাগবে কে জানে। আর যদি দুটো ভালবাসার কথা বলে তাহলে ?

ভাবনাটা আজাদের ঘোর কাটিয়ে দিল। সে দ্রুত হাত তুলল সারান্ডারের ভঙ্গিতে। কপাল কুঁচকে বলল, ” কে তুমি ? ”
-” সেটা আপনার চামচাদের জিজ্ঞেস করুন। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন ? আর আমাকে তুমি বলছেন কোন সাহসে ? আমার পরিচয় জানেন ? ”
-” জানলে কী হবে ? ”
-” আপনার খবর হয়ে যাবে। এসব আলগা বাহাদুরি সব বের হয়ে যাবে। ফিল্মি স্টাইলে গুন্ডা পালা বের হবে আপনার। আমার স্বামী জানলে আপনার মাথা ফাটাবে।”
-” ওহ্, তাহলে তো চিন্তার কথা। আচ্ছা, ঠিকআছে। এসব নিয়ে পরে কথা বলব। তার আগে তুমি শান্ত হয়ে বসো আর আমার কথা শোনো।” বলে একটা চেয়ার টেনে বসতে গিয়েও চট করে দাঁড়িয়ে পড়ল আজাদ। কারণ মেয়েটা ছোঁ মেরে টেবিল থেকে পেপারওয়েট তুলে নিয়েছে। হিসহিস করে বলছে,
-” কথার ফাঁদে ফেলে আমাকে আটকানো যাবে না। এসব চালাকি জানা আছে আমার। এখন বেরোন এখান থেকে। আমার সামনে একদম বসবেন না। আপনাদের কারণে আমাকে আজ বেপর্দার মত থাকতে হচ্ছে। আমার হিজাব টেনে খুলেছে আপনার এক লোক। ওর কী হয় দেখবেন আপনি। একজন মেয়ের সম্মানে যে হাত দেয় তার হাত আল্লাহ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। এটা আমার বদদোয়া। আর আপনিও….!”
-” এক মিনিট। আমি কিন্তু তোমাকে কিডন্যাপ করিনি। আগে আমার কথাটা শোনো। তোমাকে ভুল করে এখানে আনা হয়েছে। ”
-“আপনি কিডন্যাপ করেন নি আর আপনার লোকেরা আমাকে এখানে বেড়াতে এনেছে তাই না ? এখন তো আমিই আপনাদের টার্গেটে আছি কারণ আমি আপনাদের সবাইকে দেখে ফেলেছি। আর এ কারণেই আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন না আপনারা ঠিক বলেছি না ? তাহলে এক কাজ করুন। গুলি করে মেরে ফেলুন আমাকে। তবু আমার কাছে আসবেন না। খবরদার।”
-” আহা, আসবোনা একবার বললাম তো। আমার কোনই ইচ্ছে নেই আপনার কাছে আসার। কিন্তু আপনি একটু শান্ত হবেন তারপরেই তো আমার কথাগুলো শুনবেন। আমি বসবো না, দাঁড়িয়েই বলব। এবার দয়া করে হাত থেকে পেপার ওয়েট কলম নেইলকাটার এগুলো সরান। প্লিজ। আপনাকে ছোঁবো না আমি। কথা দিচ্ছি, এখানে কোন অসম্মান হবে না আপনার।”

মেয়েটার ফোঁসফোসানী কিছুটা কমল। সে মাথা ঝাঁকিয়ে এক ঝটকায় তার লম্বা বেনীটাকে পেছনে পাঠিয়ে দিয়ে বলল, ” বলুন, কী বলবেন। ওখান থেকেই বলুন। একপা এগোলে সোজা মাথা সই করে পেপার ওয়েট ছুঁড়ব। আমার টার্গেট কিন্তু খুব ভাল।”

চলবে…

#এক_প্রহরের_খেলা
মোর্শেদা হোসেন রুবি
১৪||

চুল তার কবেকার
অন্ধকার বিদীষার নিশা !
মুখ তার শ্রাবস্তির কারুকার্য ||

ভোরের রাঙা আলো চোখে পড়তেই বিড়বিড়ানো বন্ধ হলো আমার। ঘুমের ঘোরেই আউড়ে চলছিলাম এতক্ষণ। চোখ মেলতেই বিশালকায় আকাশটা চোখে পড়ল। স্বচ্ছ নতুন একটা আকাশ। গতকালের মত ঘোলাটে নয়। ভোরের আকাশের সৌন্দর্য একদম আলাদা। একটু পরে যখন সূর্য উঠবে তখন এই সৌন্দর্যটা থাকবেনা। তখনকার সৌন্দর্যটা হবে অন্যরকম। সকালের আকাশের সাথে বিকালের আকাশের কোন মিল নেই। অথচ আকাশ তো ঐ একটাই। পার্থক্য শুধু ভালোলাগায়। কিন্তু আজ আকাশের এই সৌন্দর্য আমার ভাললাগাকে ছুঁতে পারছেনা। চোখ জুড়ালেও মন রাঙাতে পারছে না।
বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। উঠে বসে গা থেকে টুকরো ঘাসের কণাগুলো ঝেড়ে ফেললাম। আর তখনই মনে পড়ল, আমি গতরাতে এই পার্কেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বড়চাচ্চুর সাথে থানা থেকে বেরিয়ে কী একটা অযুহাতে সটকে পড়েছিলাম রাতে। ইচ্ছে ছিল ডক্টরস চেম্বারের পুরো এলাকাটা চষে ফেলব। কেবলি মনে হচ্ছিল যদি কোথাও আমার রুমকির দেখা মেলে। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত শরীরে পার্কে ঢুকে পড়েছিলাম। শরীরটা সঁপে দিয়েছিলাম শুকনো সবুজ ঘাসে চাদরে। জার্ণির ক্লান্তি আর রুমকির টেনশনে আমার স্নায়ুগুলো তখন রীতিমত কাঁদছিল। কখন যে ঘুম তার কোমল পরশে আমাকে টেনে নিয়েছিল টেরই পাইনি। যখন পেলাম তখন চারিদিকে আলো ফুটে গেছে।

উঠে বসার পর ঘাড়টা টনটন করে উঠল। শরীরের এখানে সেখানে ব্যথা। সারারাত বেকায়দায় মাটিতে শোবার ফল। রুমকি ঠিকই বলে, ফুলবাবু আমি। মানুষ হিসেবে যথেষ্ট আরামপ্রিয় বলে আম্মু আমার খাবার ঘুম এসবের দিকে খুব খেয়াল রাখতেন। মাটিতে বা সংকীর্ণ সোফায় শুয়ে অভ্যাস নেই আমার। পরদিনই শরীর তার নিজস্ব ভাষায় প্রতিবাদ করতে থাকে। যেমন আজ করছে।
হঠাৎ কী মনে হতেই দ্রুত পকেট হাতড়ালাম। নাহ্, খোয়া যায়নি। জায়গামতই আছে। মোবাইলটা বের করে দেখলাম সেটা বন্ধ হয়ে আছে। অন করে পকেটে রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে গিয়েও দুঃখেও হাসি পেল আমার। মোবাইল খোওয়া যায়নি বলে আহ্লাদিত বোধ করছি অথচ এখানেই আশেপাশে কোন এক জায়গা থেকে আমার প্রানপ্রেয়সী খোয়া গেছে। যে নিঃসন্দেহে মোবাইলের চেয়ে দামী। যে আমার অন্ধকার জীবনের এক কাঙ্খিত ভোর। আমার যৌবন সরসী নীরের এক অমলিন পদ্ম। এক মরু পিপাসার্তের জন্য শীতল জলাধার। যা এক প্রহরের ঝিমুনিতে এসে আবার মরিচীকার মতই মিলিয়ে গেছে। অবগাহন করা আর হয়ে ওঠেনি।

দুহাতের চাপড়ে প্যান্ট ঝেড়ে দাঁড়াতেই মোবাইল বাজল। বুকটা ছাঁৎ করে উঠল আমার। রুমকি নয় তো। ঝট করে মোবাইলটা বের করতেই নিরাশায় ম্লান হল আমার চোখজোড়া। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কানে ঠেকালাম সেটা। আপানের কণ্ঠস্বর।

-” অ ভাই, কই তুই ? কাল সারা রাত্তিরে তোর দেখা পেইলেম না। কত বার যে ফোন দিইসি। তোর ফোন সমানে বন্ধ পাচ্চি। তোর বড়চাচা কত জায়গায় খুঁইজলো তোকে। তুই এখন কোথায় আছিস ভাই?”

-” আসছি আমি ।” সংক্ষেপে বলেই ফোন কেটে দিলাম। কারো সাথেই এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। শরীরের অস্বস্তি মনের সাথে মিতালী পাতিয়েছে। গোটা দুনিয়াটাই অসহ্য লাগছে আমার। এমনিতে গতকাল সারাটা রাত একরকম জেগেই কাটিয়েছি। জীবনের এক অসহনীয় রাত পার করেছি বলা চলে। থানা থেকে বেরিয়ে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে হেঁটেছি অনেকক্ষণ। চোখের সামনে বারবার বিগত দিনগুলোর ছবি ভেসে উঠছিল। সেদিন সকালেও আমি নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়ার আগে রুমকি অন্যান্য দিনের মত আমার নাস্তা নিয়ে রুমে এসেছিল। ওর চোখে চিকচিক করছিল অনাগত স্বপ্ন পূরণের আশা। হয়ত ভোররাতের কিছু স্মৃতি তখনও ওর নেশা লাগানো চোখের তারায় দুষ্টুমির সাথে ঝিলিক দিচ্ছিল। আমি সেদিকে তাকিয়ে আউড়েছিলাম বনলতা সেনের কিছু লাইন। রুমকি তার জোড়া দাঁতের হাসিতে আমাকে কুপোকাত করে দিয়ে বলেছিল,
-” আপনারা ছেলেরা পারেনও বটে। পৃথিবীর সমস্ত কবিতা আর গান তো আপনাদের জন্যেই রচিত হয়। সময়মত ঐ দিয়েই কাজ চালিয়ে নেন আপনারা।” আমিও বেশ রোমান্টিক কায়দায় ওর ভেজা চুলে হাত ডুবিয়ে মুঠো করে ধরেছিলাম ঘন চুলের রাশি। বলেছিলাম আরো দুটো চরণ। তখনও ভাবিনি রুমকির সাথে আমার ওটাই হবে শেষ দেখা।

চোখের কোণ মুছে বাড়ী চলে এলাম। আপান আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে দেখেই তিনি হাত ধরে টেনে নিয়ে গোসলে পাঠিয়ে দিলেন। আমিও দ্বিরুক্তি করলাম না। সারা শরীরে ঘামের গন্ধ নিজেরই অসহ্য লাগছে। গোসল সেরে বেরোতেই দেখলাম আপান নাস্তার পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। খিদে নেই পেটে। তারপরেও আপানের টানাটানিতে বসতে হল। কিন্তু কিছু মুখে দিতে পারলাম না। ফ্যাঁসফেসে গলায় বললাম,
-” আমাকে চা দাও শুধু। মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। ”
-” চা তো খাবি। একটু রুটিও মুখে দে ভাই। আসার পর থেকে একটা দানা মুখে তুলিস নাই। এই দেখ তোর চাচী তোর জইন্যে কত কিছু কইরেছে। গরুর মাংসের ঝুরি….!”
-” তোমার রুমকির জন্য চিন্তা হচ্ছেনা আপান ? ” আপানের কথার মাঝখানেই হঠাৎ বাধা দিয়ে বললাম। আপান থেমে গেলেন। আমি আর কথা না বাড়ালাম না। মৃদু স্বরে বললাম,
-” আমাকে চা দিতে বলো। চা খেয়ে আমি বেরুব।”
-” আবার কমিনদে যাবা ভাই ? ”
-” রুমকিকে খুঁজব। সম্ভাব্য সব জায়গায়। কারণ আমি জেনেছি, রুমকি কিডন্যাপ হয়নি। কেউ তাকে কিডন্যাপ হতে দেখেনি। থানায় কথা বলেছি আমি। তারা বলছে, আপনার ওয়াইফ পালিয়েছে। তারা খবর নিয়ে দেখেছে। রুমকির কিডন্যাপ হবার মত কোন প্রমাণ পায়নি তারা।”
আপান মুখ নামিয়ে বসে রইলেন। কোন জবাব দিলেন না। ঋভূ তার দিকে তাকাল।
-” কী ভাবছ ? ”
-” ন্…না মানে। রুমকির মা তো খোলাসা করে কিছু কইতি পারতিসে না। আমি রাতে গেসিলাম ওগের বাসায়। আব্দুল্লাহর সাথি কতা হয়নি। কিন্তু এটা তো সবাই জানে রুমকি সারারাত লাপাত্তা।”
-” খোলাসা করে আর কী বলবেন উনি ? ”
-” ভাই রে। বয়স তো কম হলো না। আজাইদ্যা যদি রুমকিরে তুলে নিসে তো তারে এমনিতে ছাইড়ে দেবে বলে ভেবেছিস ?”
-” তুমি আসলে কী বলতে চাচ্ছ ? ”
-” আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তোর মা ফোন দিসিল ভোরবেলা। তোর বাবার সাথেও আমার কথা হইসে। তুই আজকেই ঢাকা চইলে যাবি। রুমকির চিন্তা তোরে করতি হবে না। দেশে আইন আছে থানা আছে পুলিশ আছে। তুই এখানে কিছু চিনিস না জানিস। আজাদ সহজ ছেইলে না। সে যদি রুমকিরে জোর করে নিয়ে গেছে তো সে অমনি ছাইড়ে দেবে না। ওগো জমিজমার ক্যাচাল জনমভর শুনি আসতিসি। মেইয়েটারে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে বাঁচাতি চাচ্ছিলাম। এখন আমাগের বংশে বিষ ঢুকালি পরে আমরা তা মানব কেন…? তাছাড়া মেইয়ে ঠিকই কিডনাপ হইসে। রুমকির মা স্বীকার করতিসে না।”
-” মানে ? ” বেশ দৃঢ়তার সাথেই বললাম আমি। অনুভব করলাম রাগে আমার সারা শরীর কাঁপছে। কোনমতে বলতে পারলাম, ” আপান, ঘটনা যা’ই ঘটুক। রুমকি আমার স্ত্রী। আর সে স্বেচ্ছায় কারো সাথে চলে যায়নি। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে। একটা কথা ভাল করে শুনে রাখো আপান। রুমকিকে না নিয়ে আমি একপা নড়বো না। তুমি যদি মনে করে থাকো তোমার রূপম একটা পুতুল যাকে নিজের অসুস্থতার দোহাই দিয়ে কবুল বলিয়ে নেয়া যায়, শরীরের বাসনা পাওয়া যায়না বলে, সুড়সুড়ি দেয়া কথা বলে বউয়ের সাথে একঘরে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে এ পর্যন্ত তোমার ভাবনাগুলো ঠিকআছে। কিন্তু তুমি যদি মনে করো তোমার রূপম তার হারিয়ে যাওয়া বউকে অচ্ছ্যুৎ ভেবে জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলবে তাহলে তুমি ভুল করছ। রূপম অমানুষ নয়। কাপুরুষ তো নয়ই।” এ পর্যন্ত বলেই ঝট করে উঠে বেরিয়ে এলাম আমি। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ তেমনি পড়ে রইল। যখন চা টা আমার সামনে দেয়া হয়েছিল তখনও জানতাম না যে ওটা আমার রিযিকে নেই। কে যেন বলেছিল, ঠোঁট পর্যন্ত আসার আগেও সূধা গড়িয়ে পড়তে পারে। কেউ নিশ্চিত বলতে পারবেনা গ্লাসের শরবতটা সে পান করতে পারবে কিনা । যদিও তা হাতে ধরা থাকে। আর এটাও জীবনের অনেক তেতো সত্যের আরেকটা সত্য।

===

-” তার চিহারা দেখার জন্যিই হিজাব টাইনে খুলতে হইসে বস। শালার ঐ মেইয়ে এমুন পাছড়া পাছড়ি শুরু করল যে রাগে টান মারি শেষে পুরা হিজাবই ছিঁড়ে ফেলাইসি। ” মিনমিন করে কথাগুলো বলার সময় নিজের হাতটাও দেখছিল সায়মন। দাঁত সবগুলো বসে গেছে হাতে। নাড়াতে গেলে এখনও যন্ত্রণা করে। আরো কিছু হয়ত বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আচমকা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সপাটে চড় পড়ল সায়মনের গালে। তাতেই সে ছিটকে পড়ল দেয়ালের ওপর। সে একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না চড়টার জন্য। একে তো হাতের কামড়ের যন্ত্রণা তার উপর অমন দেড়মনি ওজনের চড়। পুরোপুরি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল বেচারা। গালে হাত দিয়ে মুখ নিচু করে একবার আজাদ আর একবার রাজনের দিকে তাকাল সে। তবে চড় মারার কারণটা জিজ্ঞেস করার সাহস পেলনা । মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। আজাদ ততক্ষণে অন্যদিকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তর্জনী উঁচিয়ে রাজনকে বলছে,
-” মেয়েটাকে ধরে এনে অনেক বড় একটা ফ্যাসাদ তৈরী করেছিস তোরা। আমি তোদেরকে বলেছিলাম রুমকিকে ডক্টরস চেম্বার থেকে তুলে নিতে। আর তোরা কিনা পায়রা চত্বর থেকে এই মেয়েকে তুলে আনলি। এত বছর ধরে এই শিখেছিস? এখন কত ঝামেলা বাড়ল সে খবর আছে ? ওদের কথা বাদ দে, আমি তো তোর ওপর ভরসা করেছিলাম। আর তুই…!”
-” আজাদ ভাই। এই মেয়ের হাতেও ডাক্তারের ফাইল ছিল। তাছাড়া রুমকিকে প্রেসক্রিপশন ফর্মুলায় ধরতে পারিনি। আর ওকে আপনি ছাড়া ঠিকমত চেনে কেবল বাদল। বাদল ডাক্তারখানার গেট থেকেই আমাদের ফোন করে ইনফর্ম করসে একটা কালো বোরকা পড়া মেয়ের কথা। ওর বর্ণনার সাথে হুবহু মিলে গেছে এই মেইয়ের আগাগোড়া। আগপিছ ভাবার সময় পাই নাই। সুবিধে মত পাওয়ায় ঝট করে তুলে ফেলেছি গাড়ীতে। ” বলে রাজন তাকাল ভীত চোখে। তার কপালেও কী চড় জুটবে নাকি বুঝতে পারছে না। বস সাধারণত ওর গায়ে হাত তুলে না। আজ তো পুরো মারমুখি অবস্থায় আছে। কিছু হয়েছে কি না কে জানে। রাজন মুখ নামিয়ে ফেলল সসম্ভ্রমে। তবে আজাদকে এবার কিছুটা শান্ত মনে হল। সে এবার স্বগোতক্তির সুরে বলে উঠল।
-” আসল কাজ তো কিছুই হলো না। মাঝখান থেকে এক নতুন প্যারা জুটল।”
-” বস, অনুমতি দেন রাতেই নামায়া দিয়া আসি। কাম শেষ।”
-” হম। রাতে নামায়া দেই আর সব মিলে এ্যারেস্ট হই, তাই না ? ”
-” এছাড়া উপায় কী বস। এই মেয়েকে সামলানো যে কী কঠিন তা তো দেখতিসেন। ফুলন দেবী ডাকতে ইচ্ছে হচ্চে এরে।”
– “ফালতু কথা বন্ধ কর আর এটা কিভাবে কী করা যায় ভাবতে থাক। এই মেয়ে এমপি সমাদ্দারের ছেলের বউ। সমাদ্দার চাইলে থানার পিলার নাড়িয়ে দিতে পারবে। সমস্যা সেটা না। মাঝখান থেকে আমার নামটা উঠে আসবে এটাই চিন্তা। ”
-” আপনার নাম আসলোই বা। কী করতে পারবে আপনার। কাউন্টার একখান মামলা ঠুকি দিবেন ব্যস্, কেল্লা ফতে।”
-” তুই তোর মুখটা দয়া করে বন্ধ রাখ আর আমাকে ভাবতে দে। একটা কাজ তো তোদের দিয়ে ভালভাবে হয়না এখন আসছোস উপদেশ কপচাইতে। এ্যাই শোন্….!” বলতে বলতেই সায়মনের দিকে তাকাল আজাদ, ” তোর হাতের কী অবস্থা ? ”
-” পঙ্গু করে দিসে ভাই ? ঐ মেইয়ে পিরানহা মাছের মত আমার হাতে কামড় দিয়ে কী করিসে দেখেন। আরেকটু হলে মাংস তুলি নিসিল।” হাউমাউ করে কেঁদে কথাগুলো বলে কব্জিতে হাত বুলাতে লাগল সায়মন। আজাদ শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অনেকটা আপনমনেই বলতে লাগল।
” এই মেয়েকে পোষ মানানো সহজ হবে না। তার উপর মেজাজের যা তেজ দেখলাম, ছাড়া পেলে আমাকে একহাত দেখে নেবার সুযোগ সে মোটেও ছাড়বে না। ঝামেলা বাড়লেএ এ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়া আমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব না। কী যে করি ! “আনমনেই ঠোঁট কামড়ে ধরল আজাদ।
পাশ থেকে রাজন বলে উঠল, ” বস। একটা কাজ করি। মেয়েটাকে ওদের বাসার সামনে নিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসি। সে তো আর আমাদের কারো নামই জানে না। তাছাড়া আপনি যদি তারে একটু ভয় দেখান, মানে ইজ্জতের ভয় কার না আছে। ” এ পর্যন্ত বলতেই আজাদ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকালে রাজন সংকুচিত হয়ে গেল তবে কথা শেষ করল সে।

আজাদ ক্ষেপে গেল, -” তোর কী মনে হয় আমি বললেই সে মেনে নেবে ? এখানে হয়ত কিছু বলবে না কিন্তু ফিরে গিয়ে ঠিকই কেওয়াজ বাঁধাবে। ওর শ্বশুড়কে তুই চিনিস না, কিন্তু আমি চিনি। সহজ লোক নয় সে। তাছাড়া অযথা একটা মেয়ের সম্মান নষ্ট করে কথা বলব কেন যেখানে আমি তার ধারে কাছে যাইনি ! আমি এসব কথা বললে মেয়েটার বিয়ে হবে ? আক্কেল রেখে কথা বলিস। ফালতু সব বুদ্ধি দেস।”

আজাদের এ কথায় বাকিরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। আজাদ এবার কিছুটা বিরক্তি নিয়েই চেয়ার ঠেলে উঠে পড়ল। পকেট থেকে চাবি বের করে সায়মনের হাতে দিয়ে বলল,
-” আমার বাইকটা নিয়ে সোজা বাসায় যা। আম্মাকে বলবি আমার জন্য কিছু ভাল খাবার দিতে আর শোন্। এই সুযোগে তোর হাতের চিকিৎসাও করে আসবি। কুত্তার মত যাবি আর বিলাইয়ের মত আসবি। দেরী করলে বুক বরাবর গুলি মারব শালা। যা দৌড় দে। রান….।” বলেই রাজনের দিকে তাকাল আজাদ।
-” এ্যাই, তুই বেলালকে ফোন কর। ওকে এক্ষুণি থানায় যেতে বল। থানায় গিয়ে ওসি সাহেবকে আমার কথা বলতে বলবি। বলবে, কাল দুপুর নাগাদ মেয়ে পেয়ে যাবে তারা। ওসি সাহেব নিজেই এসে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। এটুকু বললেই সে বুঝে যাবে আর বলা লাগবেনা। বাকি কথা আমি বলব। তুই শুধু আমি যা বললাম এটাই বলে দে বেলালকে। ”
-” মেইয়ে নিয়ে যাবে এখান থেইকে ? ” প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল রাজন।
-” আহ্, আস্তে। না, এখান থেকে কেন। নিজেকে ধরিয়ে দেবার শখ কার আছে ! ওসি সাহেবকে বাইপাস মোড়ে যেতে বলবি। ওখান থেকেই এটারে বুঝে নেবে। বাকিটা আমি তাকে ফোনে বুঝিয়ে বলে দেব। তুই আগে এগুলো কর আর হ্যাঁ ! সায়মন এলে আমাকে নক করবি। মেয়েটা দুপুরের পর থেকে না খেয়ে আছে। এন্ডোসকপি করাতে গিয়েছিল ওখানে। গ্যাসট্রিকের সমস্যা। খিদেয় ওয়াক ওয়াক করছে। ওকে ভয় দেখিয়ে হলেও কিছু খাওয়ানো দরকার। নয়ত অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে গেলে আরেক ফ্যাসাদে পড়ব।”
বলেই আজাদ উঠে অফিস রুমের দিকে পা বাড়াল।

রাজনের হতবিহ্বল ভাব এখনও কাটেনি। চোয়াল অনেকখানিই ঝুলে পড়েছে। রোবটের মত করে পাশের জনের দিকে তাকালে সে গোমড়া মুখেই সুর করে বলে উঠল,
-” প্যায়ার তো হোনা হি থা….!” রাজন এবার নিজেও মাথা নেড়ে একমত প্রকাশ করল। তারপরই ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” বসের খারাপ সময় শুরু হলো বলে। কেন যে প্রেমে পড়তে যায়। আমারে তো ধাক্কা দিলেও আমি এর প্রেমে পড়তাম না ! ”

=====

খাবার হাতে প্রবেশ করতেই অদিতির অগ্নিমুর্তির মুখোমুখি হতে হল আজাদকে। সে গেট থেকেই বাম হাত তুলে সারান্ডার করল।
-” প্লিজ, নো অফেন্স। আগে খাবারটা খেয়ে নিন। এটা আমার বাসার খাবার। দোকান থেকে আনাইনি। খেতে মন্দ হবে না আশাকরি। ”
-” ওহ্, তারমানে আপনি চান এটা খেয়ে আমি বেহুঁশ হয়ে যাই আর আপনি….! একদম দুর হন এখান থেকে। যান বলছি..!”
-” দেখুন, এখন এই খাবার না খেলে আপনি এমনিতেও বেঁহুশ হবেন। তাছাড়া ফাইট করতে গেলে তো শক্তির দরকার হয়। খাবো না বলে জেদ করা বোকামী। তাছাড়া এতে কিছুই মেশানো হয়নি।”
-” আমি বিশ্বাস করিনা।” অদিতি তার জেদে অটল রইল। যদিও সুখাদ্যের ঘ্রান ওর খিদেটা চাগিয়ে তুলেছে। তবু সে এই খাবার খাবেনা। যদি ঘুমের ওষুধ মেশানো থাকে তো !
আজাদ সম্ভবত অদিতির মনের কথাটা বুঝতে পারল। সে সন্তর্পনে খাবারের বক্সটা টেবিলে নামিয়ে রেখে ঢাকনা খুলে এক টুকরা মাংস তুলে নিজের মুখে পুরল। রুটির কোন ছিঁড়ে সেটাও মুখে ফেলে চিবোতে লাগল। একই সময়ে বোতলের ক্যাপ খুলে উঁচু করে ধরে তা থেকে সামান্য পানি সরাসরি গলায় ঢালল। তারপর সেটা নামিয়ে রেখে শ্রাগ করার ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল, ” এরপরে আর সন্দেহ থাকার কথা না। এবার না খেয়ে মরতে না চাইলে ভিন্ন কথা। কাজেই চুপচাপ খেয়ে নিন। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। বাই দা ওয়ে, কাল আপনাকে বাইপাস মোড়ে নামিয়ে দিয়ে আসা হবে। আশাকরি শ্বশুর সাহেবকে আমার সবকথা গড়গড় করে বলে দেবেন। ঠিক আছে ? ”
-” বলবই তো। পিটিয়ে তোমার মত ভদ্রবেশী শয়তানের ছাল না তুললে তুমি আরেক মেয়েকে কিডন্যাপ করবে। বদমাশ কোথাকার।”
-” বদমায়েশী না করেই বদমায়েশ হয়ে গেলাম ! দেখুন, নিজের যোগ্যতাকে আমি বরাবরই এপ্রিসিয়েট করি। কিন্তু এটা কিন্তু আমার পাওনা ছিল না অদিতি। ”
-” আমার নাম নেবেন না।”
-” একটা জিনিস খেয়াল করেছেন। অ তে অদিতি, আ তে আজাদ, ই তে ইতু, ঈ তে ঈউশা, উ তে….!”
-” এসব কারা ? ” হতভম্ব দেখাল অদিতিকে।
-” অনাগত কিছু মানুষকে কল্পনা করে বললাম কথাটা। যাই হোক, এটা আপনার বিষয় না। আপনি খাবারগুলো খান। খেয়ে বিশ্রাম নিন। তারপর আমার মোবাইলে আমাদের দুজনের সেলফি তুলে আপনার মোবাইলে শেয়ার করে দেব যেন আপনার শ্বশুরকে আমার চেহারাটা দেখিয়ে দিতে পারেন। এটা বরং আরো ভাল হবে। শ্বশুর সাহেবকে ছবি দিয়েই বুঝিয়ে দেবেন যে , হাম তুম এক কামরে মে বান্ধ থে। নিন, চট করে খেয়ে নিন। খালি পেটে আসলে প্রেম জমেনা। খাবারগুলো রেখে গেলাম।”
-” এ্যাই, দাঁড়ান। কিসের সেলফি ? ”
-” বোঝেন নি ? ” আজাদ তাকিয়ে আছে। অদিতির চোখে ভয় ফুটল। সে কাঁপা স্বরে বলতে লাগল,
-” প্লিজ। আমাকে বিপদে ফেলবেন না। আমি আপনার কথা কিচ্ছু বলব না। আল্লাহর কসম করে বলছি। আমাকে সসম্মানে যেতে দিন, প্লিজ। বিশ্বব্রহ্মান্ডের স্রস্টার নামে কসম খাচ্ছি তবুও কী বিশ্বাস করবেন না ? ”
আজাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখের ইশারায় খাবারগুলো দেখাল। মৃদু স্বরে বলল, ” তাহলে সবগুলো খাবার ঠিকমত খেতে হবে। ” বলে অদিতি নামের মেয়েটাকে বিস্ময়াহত আর বাকরুদ্ধ অবস্থায় রেখে বেরিয়ে এল আজাদ।

রাজনকে ছুটে আসতে দেখল তখন , ” বস, বেলাল ফোন দিসে।”
-” হম, কী বলল ? ”
-” ঠিক বুঝতি পারলাম না।”
-” কী বুঝতে পারলি না ? ”
-” সমাদ্দারের ছেলে লোক লাগাইসে কিডন্যাপার খুঁজে বের করতি। সে তার হবুস্ত্রী’কে না খুঁজে আপনারে কেন খুঁজতিসে বুঝে আসলো না।”
-” খবরটা কে দিল ওসি সাহেব ? ” আজাদকে খানিক চিন্তিত দেখাল।
-” উঁহু…। বেলালের এক খাতিরের লোক ! সে তারে বইলেছে। বসের সাথে দেখা করাই দাও। ওনারে আমাগের সারের দরকার। বেলাল আরো বলল, জুনিয়র সমাদ্দার নাকি গোপনে লোক লাগাইসে। বিষয়টা বুঝে আসতিসে না। সে তো আপনার নামে নালিশ করে ওসিরে দাবড়ানির কথা। কিন্তু তিনি নাকি কেস পর্যন্ত ফাইল করেন নি। নো জিডি, নো এফ আই আর। ঐদিকে তিনি বিহাইন্ড দা সিন কাজ করতিসেন। ঘটনা কী বস ? ”

আজাদ কোন জবাব দিলো না। ওর কপালে পরপর তিনটা ভাঁজ পড়ল। সে নিজেও কিছুটা চিন্তিত এ ব্যপারে। অদিতির হবু স্বামী তার খোঁজ দিয়ে কী করবে ! জেলে পুরবে না মার্ডার করবে ! দুটোই তার জন্য কঠিন ! আজাদ কারো হাতের মোয়া না। এটা সমাদ্দার পুত্র এখন না জানলেও পরে জানবে। কিন্তু এর বাইরে আর কী কাজ থাকতে পারে তার। রিকোয়েস্ট করবে ? মুক্তিপণ দেবে নাকি গুলি করে মারবে ? আজাদ তো এমনিতেই তার বউকে ছেড়ে দিচ্ছে। তাহলে আবার এত খোঁজ খবর কিসের ! ”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here