এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ১২+১৩+১৪

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১২.
#WriterঃMousumi_Akter

আকাশে শুভ্র মেঘের ছড়াছড়ি প্রকৃতির উত্তাল হাওয়া বইছে।ছাদে দাঁড়িয়ে আছি বিষন্ন মন নিয়ে।বিহান ভাই ঢাকা যাওয়ার আগে আমার রুমে এসছিলেন আর উনার হোয়াটস এপ এ একটা মেসেজ এসছিলো।মেসেজ টা সাটার টেনেই দেখছিলাম।প্রেয়সী নামে সেভ করা কারো নাম্বার।একটা লাল লাভ স্টিকার পাঠিয়েছিলো সে।বিহান ভাই হয়তো খেয়াল করেন নি কিন্তু আমি খেয়াল করেছিলাম ওই মেসেজ টা।সেদিন থেকেই মন টা ভীষণ খারাপ।নিশ্চয় ই স্পেশাল কেউ হবে নইলে প্রেয়সী নামে সেভ রাখবে কেনো?।আজ কতদিন হয়ে গিয়েছে বিহান ভাই কে দেখি না।ভীষন মন খারাপ হচ্ছে আজ।প্রায় দু’মাস হয়ে গিয়েছে উনি ফেসবুকে এক্টিভ না হোয়াটস এপ এ আসে না।শুনেছি তার নাকি এক্সাম চলছে।এক্সাম এর সময়ে কারো সাথে কোনো রকম কন্ট্রাক্ট রাখেন না উনি।উনার পারসোনাল একটা সিম আছে তার নাম্বার কেউ জানে না।এক্সাম এর সময় কোনো প্রয়োজন হলে উনার টিচার দের সাথে কথা বলেন।আর নিয়ম করে দিনে দুবার মামির কাছে ফোন দেন।এক্সাম এর সময়ে একবার ফোন দেন।আমাকে হয়তো ভুলেই গিয়েছেন উনি।যতই ব্যাস্ততা থাকুক চাইলে কি এক মিনিট ফোন দেওয়া যায় না।আমাকে ইমপরটেন্ট মনে করলে অবশ্যই এক মিনিটের জন্য হলেও ফোন দিতো সে।হয়তো তার প্রেয়সী কে নিয়ে ভালোই আছে সে।তার প্রেয়সী কে নিয়ে সময় কাটাচ্ছে তাই এদিকের কথা খেয়াল ই নয়।আচ্ছা আমি বা উনাকে নিয়ে এত কিছু ভাবছি কেনো?কখনো তো আমায় ক্লিয়ার করে বলেন নি যে,দিয়া আমি তোকে ভালবাসি।আমার তোকে চাই।তুই ছাড়া আমি অসহায়।উনি আমার সাথে যেটা করেন এমন ও হতে পারে সেটা শুধুই মজা।মনের মাঝে ভীষণ জ্বলছে পুড়ছে উনার দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হয়তো মরে যেতে হবে।ফেসবুকে একটা স্টাটাস দিলাম,কতদিন দেখি না তোমায়।তোমাকে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হয়তো মরে যাবো।

হঠাত কুরিয়ার অফিস থেকে একটা ফোন এসছে আমার জন্য একটা পার্সেল এসছে।আমার জন্য কুরিয়ার এসছে কই এমন কেউ তো নেই যে আমাকে কুরিয়ার পাঠাবে।কে বা হতে পারে এমন।রেডি হয়ে কুরিয়ার অফিসের দিকে রওনা হলাম। ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি কে হতে পারে আর কে দিবে আমাকে কুরিয়ারে গিফট।

সুন্দরবন কুরিয়ার অফিসের সামনে অটো থেকে নামলাম।অফিসের ভিতরে গিয়ে দেখি একটা হলুদ পলিব্যাগ এসছে।পলিব্যাগ টা হাতে পেয়েই বুকের মাঝে ধুকপুকনি বেড়ে গিয়েছে হাজার গুন। বুক ধুকপুক সেকেন্ডে কয়েক বার করে হচ্ছে।পলি ব্যাগে বিহান ভাই এর নাম লেখা।মানে বিহান ভাই পাঠিয়েছেন এই গিফট।কিন্তু ক্যানো?এতদিনে মনে পড়েছে তার আমার কথা।এই দুই’মাসে একটা দিন আমার খোজ নেওয়ার প্রয়োজন হয় নি তার।এখন আবার গিফট পাঠানো হয়েছে।পলিব্যাগ টা খুলে দেখি ব্লু সিল্কের একটা শাড়ি আমার যে ব্লু ফেভারিট কালার উনি সেটা জানেন।সাথে ব্লু কাঁচের চুড়ির বক্স। শাড়ি টা দেখেই নিমিষেই মন টা ভরে গেলো আমার।প্রিয় জনের দেওয়া গিফট পৃথিবীর সব দামি জিনিসের থেকেও দামী।সাথে একটা নীল খামে নীল কাগযে চিঠি,,

স্রোতোশিনী,,
কি ভাবছো আমি তোমায় এতদিন ভুলে গিয়েছিলাম।তুমি আমাকে কোনভাবেই তোমাকে ভুলতে দাও নি।এই দুই মাস তুমি আমায় ঠিক ভাবে ঘুমোতে দাও নি।পড়ার ভীষণ চাপ ছিলো।এক টানা লং টাইম বই পড়ে যখন মাথা ধরেছে এক কাপ ব্লাক কফি হাতে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছি।ঠিক তখন ই আমার মস্তিষ্কে নাড়া দিয়েছে তোমার নাম।তোমার কথা ভাবতেই আমার মুখে ফুটেছে প্রশান্তির এক হাসি।সব ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছে।এই দু’মাসে প্রতিটি সন্ধা তোমার নামে নেমছে।আম্মুর এই পড়াকু ছেলেটাকে কতটা দূর্বল করে দিয়েছো দেখলে।কখনো চিঠি লিখিনি তাই তোমার মন মতো লেখা হয়ে উঠবে না।তোমার নীল কালার খুব পছন্দ তাইনা।তোমার কথা ভেবে আমি নীল রঙের প্রেমে পড়েছি।যেখানে নীল রঙ দেখি হিংসে হয় আমার।আমার মনে হয় ওই নীল রঙে মিশে আছো তুমি।মনে হয় পৃথিবীর সব নীল একত্রিত করে আমার কাছে রেখে দেই।অভিমান হয়েছে তোমার আমি সেটা জানি আবার মুখে একটু প্রশান্তির হাসি ও ফুটেছে তাইনা।আবার কি একটু লজ্জা ও পাচ্ছো।এত লজ্জা পেও না তাহলে আমি সামনে এলে লজ্জায় আমার সামনেই আসতে পারবে না।খুব অবাক হচ্ছো তাইনা হঠাত চিরকুট কেনো?এর কারণ আমিও জানিনা।দিয়া নামক পোকা তার মুখের হাসি সারাক্ষণ ঝংকার এর মতো বাজে আমার মাথায়।সারাদিন সারাক্ষণ ভেবে চলেছি তোমায়।কখনো কল্পনায়,কখনো স্বপ্নে আমার শরীরে উষ্ণতা দিয়েছো আমায় আলতো স্পর্শ করে।তোমার স্পর্শ আমার শরীরে কখনো তোলপাড় করা সমুদ্রের জোয়ারের মতো ঢেউ উঠেছে সেই মুহুর্তে তোমায় নিয়ে অনেক কিছু ভেবে ফেলেছি।কি ভেবেছি সেটা বলতে পারবো না।বললেও তুমি বুঝবে না।কারণ তুমি যে একটা পুচকি। অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু সব বলে দিলে তুমি কিছুই বুঝবে না।

ইতি তোমার সারাক্ষণ বিরক্তময় প্রিয় মানুষ।

চিঠিটা সহস্র বার পড়েছি তবুও মন ভরে নি।পড়ার নেশায় ধরেছে আমায়।যতবার পড়েছি উনার মুখে ভেষে উঠেছে আমার চোখের সামনে।উনি এলে কিভাবে মুখ দেখাবো উনার সামনে।ফোনটা হাতে নিলাম উনার পিকচার বের করে কয়েকশত বার দেখলাম।

“এমন সময় তোহা আপু, মেহু আপু আমার রুমে প্রবেশ করলো।ওদের দেখে চিঠিটা বই এর ভাজে লুকিয়ে রাখলাম।তোহা আপু আমাকে বললো দিয়া আমার একটা উপকার করতে পারবি।”

“ভ্রু উচু করে বললাম কি উপকার।”

“বিহান ভাই কে আমার ভীষণ ভাল লাগে দিয়া।প্লিজ একটু সেটিং করায় দে না।তোর না মামাতো ভাই। তুই বললে ঠিক ই রাজি হবে।”

“মেহু আপু তোহা তোর মনে মনে তাইলে এই ছিলো।আমি বলে দিচ্ছি বিহান ভাই জীবনেও প্রেম করবে না।বিহান ভাই যদি কারো সাথে প্রেম করে আমি বস্ত্রহীন থাকবো।”

“সিওর মেহু আপু।আর শুভ ভাই কারো সাথে প্রেম করলে কি করবা।”

“শুভ কে চুম্মা দিবো পাক্কা দেখে নিস।”

“রিয়া বললো বিহান ভাই কে দিয়া তোহা আপুর হয়ে প্রপোজ দিলে দিয়ার লাশ চিত্রা নদীতে পাওয়া যাবে এতে কোনো ভুল নেই।”

“তোহা আপু আবার বললো,দিয়া তোর মামিকে তুই কিন্তু রাজি বানিয়ে ফেল। দেখ দিয়া আমার অন্য কোথাও বিয়ে হলে কত দিন পর পর দেখা হবে। তোর মামাতো ভাই এর সাথে বিয়ে হলে মাঝে মাঝেই দেখা হবে। লাভ কিন্তু তোর ই দিয়া।”

“আমার দুই মামাতো ভাই আর আমার ভাই কে তোমরা তিন ভন্ড মহিলা ভাগ করে নাও।আমি এসব ঘটকালি করতে পারবো না তোহা আপু।বিহান ভাই আমার হাতে একটা ছাটা ধরিয়ে দিবে।আজন্ম কাল আমাকে ঘটকালি করেই বেড়াতে হবে।আমি কিছুতেই এই ঘটকালি ফটকালি করতে পারবো না।তাও আবার বিহান ভাই এর ঘটকালি।”

ওদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।
————————————————–
পরের দিন সকাল দশ টায় তবুও বর্ষনের অপেক্ষা উপন্যাস পড়ছি।খুব মন দিয়েই পড়ছি।এটা পড়ার কারন এই উপন্যাসে আমাদের দুজনের নাম ই আছে।মানে আমি আর বিহান ভাই এর নাম ই আছে।যে কারনে খুব মনোযোগ দিলাম উপন্যাস।

এমন সময়ে কেউ এক ঝঁটকায় হাত থেকে উপন্যাস টা কেড়ে নিয়ে গেলো।

পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি কপালের চামড়া কয়েক টা ভাজ ফেলে উপন্যাস টা হাতে নিয়ে গায়ে বাঙি কালারের গেঞ্জি আর পরনে কালো থ্রি কোয়ার্টার পরে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছেন বিহান ভাই।দেখেই আতকে উঠলাম আমি।উনি এখন এই মুহুর্তে কোথা থেকে এলো।কই একবার ও তো জানালো না আমাকে।আমি জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললাম এ কি আপনি কখন এলেন।

“বিহান ভাই আমার হাত ধরে এক ঝটকায় টান দিয়ে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিলেন আর নিজে বসে পড়লেন।
কিরে দিয়া মুরব্বিরা আসলে আসন ছেড়ে দিতে হয় এটা জানিস না।দিন দিন সব আদব কায়দা ভুলে যাচ্ছিস।”

“আপনি জানেন না ছোট দের আদর করে বসতে দিতে হয়।ছোট রা আদরের জিনিস। ”

“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাত ধরে টান দিয়ে উনার কোলের উপর বসিয়ে দিলেন।হুম জানি ছোট দের আদর করে কোলে বসাতে হয়,হাগ দিতে হয়,কিস দিতে হয় এসব পাওয়ার যোগ্য ছোটরা।”

“এক লাফে উনার কোল থেকে উঠে বললাম আপনি কিস করতে চাইছেন?..”

“আমি তোকে কিস করলে সেটা নতুন কিছু না।ছোট বেলা অসংখ্য কিস করেছি।কিন্তু বড় হয়ে কিস করতে কেমন একটা লাগে।আমার ইচ্ছা ছিলো না বাট তুই যখন চাইছিস দিতেই পারি।”

“দেখুন ছোট বেলার কথা কি মন এ আছে আমার।”

“জানতাম ভুলে যাবি তাই সব ভিডিও করে রেখেছি।”

“শুনলাম আরো এক মাস পরে আসবেন হঠাত এখন।”

“এখন না আসলে তার অভিমানের পাহাড় আরো গভীর হয়ে যেতো।আমাকে যে আসতেই হতো।অনেক দিন তাকে বিরক্ত করি না।তার রাগি রাগি চোখ মুখ দেখি না।এ শহর আমার প্রেয়সীর। তার টানে আমাকে ছুটে ছুটে আসতেই হতো।তার পর আবার শুনছি শ্বশুরের মেয়ে নাকি প্রেম করছে।প্রেম করে দেবদাসি অবস্থা তার।শ্বশুরের মেয়ে তার জামাই কে স্যাকা দিয়ে অন্যর হয়ে যাবে এটা তো হতে পারে না।
এনি ওয়ে দিয়া তোর প্রেম কেমন চলছে সাংঘাতিক স্টাটাস দেখে আমি ছুটে চলে এসছি।”

“আমি তো আর আপনার মতো না আবেগ প্রকাশ না করে থাকতে পারি না।
আপনার প্রেয়সী কেমন আছে?”

“কাল জানাবো কেমন আছে।এখন মনে হচ্ছে রেগে আছে বেশী প্রশ্ন করা যাবে না।”

“আপনি আমার ফেসবুক থেকে স্টাটাস ডিলিট করেছেন কেনো?”

“তাহলে কি করবো এমন স্টাটাস দিয়েছিস আমার প্রেজটিজ এ লাগছিলো।মানুষ যদি জানে আমার কাজিন এ ধরনের স্টাটাস দিয়েছে আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।এগুলা স্টাটাস দেই এঞ্জেল এলিনা রা। আমি নেই এ দু’মাসে নাকি প্রেম ট্রেম করেছিস।রিয়া,তোহা,মেহু আমাকে এই নিউজ দেওয়ার জন্য ডেকে এনেছে।তুই নাকি রাত জেগে চিঠি লিখিস সেই ছেলে নাকি বাসার সামনে থেকে এসে নিয়েও যায়।আবার উপন্যাস দিয়ে যাচ্ছে তার ভিতরে চিরকুট দিয়ে যাচ্ছে।দিয়া এই ঘটনা সত্য হলে কি যে হবে তার ঠিক ও নেই।”

“কে বলেছে আপনাকে আমাকে উপন্যাস দিয়েছে কেউ”

“কাল বিকালে পাশের পাড়ার আহিন তোকে উপন্যাস দিয়ে গিয়েছে আর তুই লালা কালারের গাউন পরে সেটা আনতে গেছিলি।এই নড়াইল শহরের সব ইয়াং ছেলে আমাকে চিনে বুঝলি।তুই এক পা বাড়ালে তার নিউজ সাথে সাথে চলে যায় আমার কাছে বুঝলি।”

মানুষ এতটা বিদঘুটে কিভাবে হতে পারে।কোথায় ভেবেছিলাম উনি চিঠি পাঠিয়েছেন এবার এসে হয়তো খুব ই রোমান্টিক কথা শোনাবেন।নাহ এর দেখছি কোনো চেঞ্জ নেই।কোথায় ভেবেছিলাম এবার এসে বলবে মিস ইউ জান।তা না জঘন্য ব্যবহার শুরু করেছেন।আমায় যে একটা চিঠি দিয়েছেন উনি সেটা কি ভুলে গিয়েছেন অদ্ভুত মানুষ তো।আমার পেছনে এত গুলো গোয়েন্দা রেখেছেন উনি।না জানি আহিন বেচারা কে কি করবেন উনি?
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৩.
#WriterঃMousumi_Akter

“প্রিয়,,
কখনো ভাবিনি তোমার থেকে এমন চমৎকার গিফট পাবো।এই গিফট শুধু গিফট ই নয় আমার জীবনে তোমার আগমনের সূচনা। তোমাকে নিয়ে কত শত বার কবিতা লিখেছি কিন্তু তোমাকে বলতে পারি নি।তুমি আমার সেই অনুভূতি যার উপর রেগে গেলেও অন্য রকম অনূভুতি জাগ্রত হয়।যার রাগ আমার কাছে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।আমি অপেক্ষা করছি তোমার উত্তরের।আমার মন তোমাকে জানান দিতে চাই ভালবাসি প্রিয়।তোমার লেখা চিঠি টা কতশত বার পড়েছি তার ঠিক নেই।যতবাড় পড়েছি লজ্জায় চিবুক নেমেছে আমার।

ইতি আমি।”

চিঠিটা বিশ্রি ভাবে পড়ে বিহান ভাই এর মুখের উপর ছুড়ে মারলো তোহা আপু।মেহু আপু,তোহা আপু,বিভোর ভাই,তিয়াস ভাই,এরা সবাই মিলে বিহান ভাই কাছে নালিশ দিয়েছে আমি নাকি প্রেম করছি।যে চিঠিটা পড়ে শোনালো চিঠিটা আমার ই লেখা বিহান ভাই এর জন্য।গালে হাত দিয়ে বসে আছি আমি আর আমার চারপাশে বসে আছে বিচারক বিহান ভাই সহ গোয়েন্দা টিম আমার কাজিনরা।নিজের প্রিয়জন কে লেখা চিঠি যদি হাঁটের মধ্য পড়া হয় তাহলে কি বিশ্রি লাগে বলুন।রিয়া,মেহু আপু, তোহা আপু বার বার রিপ্লে করছে চিঠির উত্তর। আমার যা অবস্থা সেটা বলার মতো নয়।বিহান ভাই চিঠিটা হাতে নিয়ে কপাল ভাজ করে বিরক্তির সহিত তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।বিহান ভাই কে বেশ ভাবান্তর লাগছে কি ভাবছেন উনি।বিহান ভাই ভ্রু নাচিয়ে বললেন কিরে দিয়া কাহিনী কি।বেশ সুন্দর ভাবে টাইপ করে লিখেছিস।তোহা আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, দেখ দিয়া হাতের লেখা কিন্তু তোর ই এটা অস্বীকার করে লাভ নেই।মেহু আপু বললো,বিহান ভাই জানেন আপনার হাতে যে উপন্যাস সে দিয়া কে একটা লাভ লেটার সহ এই উপন্যাস টা দিয়েছে।আপনার কাছে বিচার দিলাম এখন দিয়া কে কি শাস্তি দিবেন বলুন।আজ যদি দিয়াকে শাস্তি না দেন তাহলে কার্ফু জারি করবো।

ওদের কথা শুনে আমার যা অবস্থা এখন সেটা বলার উপায় নেই।বিহান ভাই কে কিভাবে বলি ওই চিঠি আপনাকেই লেখা।উনার ভেতরে রাগ আস্তে আস্তে কুন্ডলী পাকাচ্ছে।কি মানুষ চিন্তা করা যায় আহিন আমাকে উপন্যাস দিয়েছে এই নিউজ শুনে ঢাকা থেকে চলে এসছেন।আহিনের ব্যাপার টা শুধু বিহান ভাই ই জানেন।বিহান ভাই আমাকে বলেন,দিয়া এই চিঠি ফুপ্পি কে দেখাবো নাকি?বিহান ভাই কে বললাম না প্লিজ বিহান ভাই আপনার যা ইচ্ছা শাস্তি দিন তবুও আম্মুকে দেখাবেন না।তাহলে আম্মু আমার ফোন কেড়ে নিবে।আম্মু এমনি তে সারাক্ষণ বকা ঝকার উপর রাখে তার উপর এই চিঠি দেখে আজ কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে যাবে।বিহান ভাই অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন,সবার সামনে কান ধরে বিশ বার উঠ বস করে এক পা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকবি এটা প্রথম শাস্তি।এর পর তোর সে উনার চিঠি আর কি গিফট দিয়েছে সেটা দেখে বাকি শাস্তি দিবো।আমি জানি বিহান ভাই এর কথা না শুনলে উনার রাগ আরো সাংঘাতিক হয়ে যাবে।মাত্রই কান ধরে কয়েক বার উঠবস করেছি এর ই মাঝে মেহু শাড়ি,চুড়ি গুলা এনে বিহান ভাই এর হাতে দিয়ে বিহান ভাই এর চিঠিটা বিশ্রি ভাবে পড়তে লাগলো।বিহান ভাই যেনো থমকে গেলেন।মেহুর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন ভ্রু কুচকে। উনি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।বিহান ভাই আমাকে থামিয়ে দিলেন কান ধরে উঠবস করা থেকে।বিহান ভাই এর অবস্থা দেখে এক ভয়ানক হাসি পেলো আমার।আমাকে কান ধরে উঠবস করানো তাইনা।এইবার বোঝো ঠ্যালা।মেহু চিঠির প্রতিটি লাইন খুটিয়ে খুটিয়ে পড়তে লাগলো।মেহুর পড়া শেষ হলে রিয়া,রিয়ার শেষ হলে তোহা আপু একেক করে পড়েই যচ্ছে।তিয়াশ ভাই বলে উঠলো,যে চিঠি দিয়েছে ওর গুষ্টি সহ উদ্ধার করবো কোন মফিজ তার ঠিক ও নেই আবার আমার বোন কে চিঠি দেওয়া।বিহান ভাই তিয়াস ভাই এর কথা শুনে তিয়াস ভাই এর দিকে কপালের চামড়া ভাজ করে তাকিয়ে রইলেন।তোহা আপু বলে উঠলো নিশ্চয় সে মফিজ আজন্ম ব্রাশ করে না।বিভোর ভাই বলে উঠলো কোন ক্ষ্যাতের মুলা তার ঠিক নেই।এই চিঠি যে লিখেছে তার মতো মখলেজ এর সাথে আমার বোনের বিয়ে দিবো না।আরো কিছু বিশেষ গালির বন্যা বয়ে গেলো।

“আমি হালকা কেশে বিহান ভাই কে বললাম ইয়ে বিহান ভাই,আবার কি কান ধরে উঠবস করবো।”

“বিহান ভাই কি যে বিরক্তি নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। এইদিকে আমার হাসি চেপে রাখতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।”

“সিরিয়াসলি বিহান ভাই এর মুখের যা অবস্থা। আমি তো বুঝতে পারছি উনার কি বাজে ফিলিংস হচ্ছে।”

“বিহান ভাই চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,আমি এখন আসি ঢাকা থেকে এসছি রেস্ট নিতে হবে।”

“সবাই অবাক হয়ে গেলো বিহান ভাই এর মাঝে কোনো রিয়াকশন নেই।”

“তোহা আপু বললো,দিয়াকে আর শাস্তি দিবেন না।”

“বিহান ভাই এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন,শাস্তি দিতাম বাট ছেলেটার রুচি আছে বুঝলাম।অখাদ্য না তোদের থেকে ভাল আছে।সো দিয়া কে প্রেম করার পারমিশন দিলাম।দিয়া তোর যদি প্রেম করতেই হয় তাহলে এই ছেলের সঙ্গেই করবি।এই ছেলের সঙ্গে প্রেম করলে জিতবি বলে দিলাম।”

সবাই বিহান ভাই এর সাথে কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।বিহান ভাই বেরোনোর পরে কাজিন গুষ্টির দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বললাম কি ব্যাপার আমার বিরুদ্ধে এত বড় যন্ত্র তাইনা?বিহান ভাই কে সেই ঢাকা থেকে ডেকে আনা হয়েছে।আজ থেকে তোদের সব কটার খবর আছে।

–বিভোর ভাই বলে উঠলেন,অদ্ভুত ব্যাপার দিয়া।বিহান কে জ্বীনে ধরে নি তো।

–রিয়া বলে উঠলো,হ্যাঁ ধরেছে আপনাকেও ধরবে আমার বান্ধবী সিজুকা জ্বীনে।

–হাইরে সিজুকা তোর বান্ধবী বোঝে না ক্যান আমার তোরে না তোর বান্ধবী কেই ভাল লাগে।

–রিয়া বললো,বিভোর ভাই কি ঘুরিয়ে পেচিয়ে আমাকেই মিন করলেন।

‘মেহু আপুকে শুভ ভাইয়া দাঁড় করালেন এই মেহু ভেতরে কিসের মিটিং হলো রে।’

‘শুভ ভাই আর বইলো না দিয়া কে কেউ একজন গিফট দিয়েছে তার ই নালিশ দিয়েছিলাম বিহান ভাই এর কাছে।’

‘তুই এত কিপ্টা ক্যান রে।আমাকেও তো মাঝে মধ্য গিফট টিফট দিতে পারিস।’

‘আজ আমি শপিং যাবো তোমার জন্য বিশেষ কিছু গিফট কিনবো।’

‘বিশেষ কি?’

“ওই যে হাফ প্যান্ট যাকে বলে আন্ডার…..”

“থাক বুঝছি।ও গুলো আমার আছে অনেক। তোর দেওয়া লাগবে না।”

_______________________________

পরেরদিন মা তার আদরের ভাতিজার জন্য নাড়ু বানিয়েছে।তার ভাতিজা এলেই কিছু না কিছু বনাবেই আর ঘুরে ঘুরে আমাকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটা পৌছে দেওয়ার জন্য।আম্মু টিফিন বক্স ভরে নাড়ু ভরে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো যা তো দিয়া বিহান কে দিয়ে আয়।আম্মুকে ডিরেক্ট বলে দিলাম ভেরি সরি আম্মু এটা কিছুতেই পারবো না।আমার এখন একটুও ভাল লাগছে না।আম্মু তার ভাতিজার মতোই ঘাড় ত্যাড়ার উপরের যা আছে সেটায়।আম্মু আমাদের দুই ভাই বোনের থেকে বিহান ভাই কে বেশী ভালবাসেন প্রায় বলা চলে।আম্মু আমাকে বলে দিলো ঠিক আছে আমি যাচ্ছি রান্নাঘরের যে থালা বাটি আছে সব ধুয়ে রাখবি আমি যেনো এসে দেখি সব ধোয়া হয়ে গিয়েছে।তোর বাবা শুভর কাছে ছোট মাছ পাঠিয়েছে ওগুলো না কাটলে নষ্ট হয়ে যাবে ওগুলো কাটবি আমি গেলাম।আমি মাছ গুলো চেক দিয়ে দেখি আমার আজ সারাবিকাল সারারাত লাগবে তাও শেষ হবে না।আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম আম্মু দাও আমিই যাচ্ছি তাও এই মাছ আমি কাটতে পারবো না।এর থেকে ভালো বিহান ভাই এর কয়েক টা বকুনি খেয়ে আসি।চুল ছেড়ে দিয়ে ড্রেস টা চেঞ্জ করে নিয়ে হলুদ কামিজ আর লাল ধুতি সালোয়ার পরে বেরোলাম।বিহান ভাই কে অনেক দিন না দেখলে যেমন ছটফট করি তেমনি উনি এলেই আমার অশান্তি শুরু হয়।সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে থাকতে হয়।এখন তাও একটু কম বকেন ওহ বাবা আগে কথায় কথা থাপ্পড় দিতেন।উনার কোন কিছু স্পর্শ করলে রোদে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন।ছোট বেলা থেকে এক প্রকার ভয় জমে আছে মনের মাঝে।আবার বেহায়ার মতো আমি উনাকে দেখেই ক্রাশ খেতে থাকি।

মামাদের বাড়ি পৌছালাম বাড়িতে প্রবেশ করে দেখি বিভোর ভাই এর আম্মু গেট এ দাঁড়িয়ে আছেন।মামিকে দেখে স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললাম,মামি আম্মু নাড়ু পাঠিয়েছে আপনাদের জন্য বলেই বিভোর ভাই দের বাটি টা মামির হাতে তুলে দিলাম।বিভোর ভাই এর আম্মু ও ভীষণ ভালো।আমাকে খুব ভালবাসেন।আবার বিহান ভাই কেও খুব ভালবাসেন।বিহান ভাই বাড়িতে আসলে বিভোর ভাই এর আম্মু যেনো বেশী খুশি হন।এমন কাকিমা কোথাও দেখা যায় না আজকাল।বিভোর ভাই এর আম্মুর তুলনা নেই এদিক দিয়ে।মামি আমাকে বলেই দিলেন দিয়া রাতে বিহানের জন্য খাসি রান্না করবো।বিহান খাসির মাংস ভালো পছন্দ করে তুই কিন্তু থেকে যাবি।মামিকে বললাম,মামি তোমাদের ছেলে বাড়িতে এসছে তাকেই খাওয়ায় যাতে রাগ দেখাতে জোর পায় শরীরে।মামি হেসে দিয়ে বলেন আমাদের ছেলে বিয়ের পরে ভাল হয়ে যাবে দেখে নিস।

মামির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিহান ভাই দের বাসার ভেতরে প্রবেশ করলাম।মামি মামি করে ডাকছি কোনো সাড়াশব্দ নেই।মনে হচ্ছে বাসায় কেউ নেই।রান্না ঘরে নাড়ুর বক্স টা রেখে জোরে বললাম মামি রান্নাঘরে নাড়ুর বাটি রেখে গেলাম পরে নিয়ে নিও।

এমন সময়ে যমরাজ হাজির।বিহান ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন উস্কো খুশকো চুল নিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে। উনি মাত্রই মনে হচ্ছে শাওয়ার নিয়ে এসছেন।থ্রি কোয়ার্টার পরা গায়ে লাল গেঞ্জি।উনার আপাদমস্তক ভাল ভাবে দেখলাম।এই খেলাম আরেক বাড়ি উনাকে এই লুকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।এতক্ষণ উনি চুপ ছিলেন আমার জন্য মঙ্গলজনক ছিলো ব্যাপার টা।এবার উনি মুখ খুললেন।টাওয়াল টা আমার গায়ের উপর ফেলে দিয়ে বললেন,এভাবে ষাড়ের মতো চিল্লাছিস কেনো? এই শহরের পরিবেশ নষ্ট করছিস তুই।

-উনার কথার উত্তর দিতেই মুখ খুললাম,কারণ ষাড় কথাটা হজম হলোনা আমার।

‘মানুষের কানে সমস্যা থাকলে তো জোরে জোরে ডাকতেই হবে।’

‘এই হ্যালো কার কানে সমস্যা? বাই এনি চান্স তুই আমাকে বলছিস না তো।’

‘আরে না না বিহান ভাই আপনাকে কেনো বলবো।যারা শুনেও ডাক শোনে না তাদের বলছি।’

‘ওকে ফাইন।তুই এটা কি পরেছিস দিয়া? এটা কোন ডিজাইনের সালোয়ার।এটার নাম কি?কেমন একটা অদ্ভুত লাগছে দেখতে।’

‘এটার নাম ধূতি সালোয়ার বুঝেছেন।অদ্ভুত লাগছে মানে।’

‘হ্যাঁ তোকে মন্দিরের পুরোহিত দের মতো লাগছে।আর খুব ই বাজে লাগছে ইউ নো।’

‘ওকে ধন্যবাদ এবার আমি আসি।’

‘ওয়েট আসবি মানে।তোর জাত গুষ্টি আজ আমাকে যেভাবে গালি গালাজ করেছে এই জিন্দেগীতে ভুলবো না আমি।এত বড় অপমান জীবনে কেউ আমাকে করে নি।এইজন্য বলি রাজাকার এর বংশ।রাজাকার না হলে একটা ছেলেকে ঘরের মাঝে ফেলে এইভাবে কেউ অত্যাচার করে।রাগ যা হচ্ছিলো আমার তখন বলার মতো না।এই সব কিছু তোর কেয়ারলেস ভাবের জন্য হয়েছে তাই এই জন্য শাস্তি যা পাওয়ার তুই পাবি।না হলে চিঠি আমার হাতেই আছে।ফুপ্পিকে দেখাবো কিন্তু তোমার মেয়ে তোমার জামাই কে চিঠি লিখছে।’

‘আমি জানতাম এখানে এসছি এমন ই কিছু হবে।জঘন্য ভাবে হেসে দিয়ে বললাম তা আমাকে কি করতে হবে এখন বিহান ভাই।’

‘আমার রুমে যা বেডের উপর আয়রন করার জন্য আমার ৩০ টার মতো টি-শার্ট রাখা আছে ওগুলো আয়রন করতে থাক আর কয়েক টা প্যান্ট আছে।’

মানে উনি আমাকে কি উনার খাস দাসি পেয়েছেন। এগুলা আয়রণ করতে গিয়ে পুড়ে যাবে আবার কি না কি শুনাবেন তার ঠিক নেই।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১৪.
#WriterঃMousumi_Akter

আমার মতো আইলসার কাছে দিয়েছে কাপড় আয়রণ করতে।আমি এমনি তে ভাল একটা পারি না তার উপর কাপড় কিছু হলেই রক্ষে নেই।নিজে তাই ঘুচিমুচি কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়। আমার ড্রেস সব শুভ ভাইয়া আয়রন করে দেয়।কাপড় আয়রন এর ভয়ে ড্রেস ধুয়ে পানি চিপে না ফেলে পানি অবস্থায় নেড়ে দেই যাতে কাপর ঘুচিমুচি না হয়।এ নিয়ে আম্মু অনেক বার গালিগালাজ করেছে আমাকে।আম্মু আমাকে বলে এত বড় মেয়ে কাপড় ও ঠিক ভাবে শুকাতে দিতে পারিস না।পোশাক কোকড়ানো দেখলে আম্মু বকাঝকা দিয়ে নিজেই আয়রণ করে দেয়।এটা নিয়ে আম্মু কম কথা শুনায় নি।আম্মু বলে, বিহানের পা ধোয়া পানি খেতে পারিস না।এটা আম্মুর একটা জাতীয় ডায়লগ এ পরিণত হয়েছে।ছেলে মানুষ নিজের ড্রেস নিজে পরিষ্কার করে, বিহানের কাপড়ের ভাজ ভাঙে না।আর কত ব্লা ব্লা ব্লা তার ভাতিজা ইজ গ্রেট ভাতিজা।

বিহান ভাই এর পোশাক আর আমি বসে আছি উনার বিছানায়।বিহান ভাই মাল্টিপ্লাগ এনে দিলেন।এখন কিভাবে শুরু করবো সেটাই ভাবছি।চার চার টা গেঞ্জি আয়রণ এর পরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম আমি।বিহান ভাই উনার রুমে রাখা ডিভান এর উপর বসে বসে ফোন চাপছেন আর মাঝে মধ্য ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখছেন আমি কি করছি।এই নিয়ে আটটা গেঞ্জি আয়রণ করলাম।কিন্তু আট টার মাঝে চার টা পুড়ে গিয়েছে।খুব বেশী পোড়ে নি একটু পুড়ে গিয়েছে বিহান ভাই কে না বলে সুন্দর ভাবে ভাজ করে রেখে দিলাম যাতে উনি বুঝতে না পারেন।এর পরের টা আয়রণ করতে গিয়ে সেটা আরো বিদিগিস্হা ভাবে পুড়ে গেলো।চোখ বড় বড় করে টি-শার্ট এর দিকে তাকিয়ে রইলাম হঠাত খেয়াল করি উসখো খুশকো চুল নিয়ে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এর পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।উনার ভাব লক্ষণ কি এই আয়রণ দিয়ে কি আমাকে আয়রণ করে দিবেন নাকি।উনাকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম দেখুন,আমার কোনো দোষ না আমাকে দিয়ে জোর করিয়ে কাজ করালে তো নষ্ট হবেই তাইনা।এ কাজ আমি পারি নাকি।

বিহান ভাই কপাল এর চামড়া টান টান করে বললেন,আচ্ছা এ কাজ তাহলে পারিস না।আমাকে অত্যাচার করতে পারছিস না বলে আমার টি-শার্ট এর উপর অত্যাচার করছিস।আচ্ছা দিয়া তুই কি তোর বংশের মতো হয়েছিস নাকি।তোর কাকা তোহার বাবা এক দোকানদারের সাথে ঝামেলা হইছে দোকানদার কে না পেয়ে তার কর্মচারীকে মেরেছে।কথায় আছে না মানুষ তার জাতের মতো হয়।তোর বাপ কাকারা যা করে বেড়ায় তুই তো তাই ই করছিস।আমাকে কিছু করতে না পেরে রিতীমত আমার গেঞ্জি কে অত্যাচার তাইনা।

“আমিও উদিগ্ন হয়ে বলে উঠলাম,আপনি জানেন ওই দোকানদার কি করেছে।”

“বিহান ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ভেরি সরি আমি জানতে চাইছি না তোদের পারিবারিক কাহিনী।তোদের যে কাহিনী শুরু হলে আর শেষ হবে না।দিয়া তুই চট করে যা তো ফুপ্পি যে নাড়ু পাঠিয়েছে ওইটা রান্নাঘর থেকে নিয়ে যায়।”

কি রাগ হয় নিজের ইচ্ছামতো খানিক টা বলে জাত গুষ্টির অপমান করে দিলেন আর আমি বলতে গেলেই থামিয়ে দেন।আমিও খানিক টা উত্তেজিত হয়ে বললাম,”আপনাকে শুনতেই হবে।”

“বিহান ভাই বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন যেতে বলেছি আমি।”

“রান্নাঘর থেকে নাড়ুর বাটি টা নিয়ে উনার দিকে এগিয়ে দিলাম।”

“বিহান ভাই এমন ভাবে তাকালেন উনার কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গেলো।উনার এই বিশ্রি তাকানো দেখে বুঝলাম না কাহিনী কি?মিনিট খানিক তাকিয়ে থেকে বললেন,এভাবে দিলে কি বাটি সহ গিলে ফেলবো।আমি কি তোর মতো খান বংশের পেটুক নাকি।তোরা তো খেতে খেতে নড়াইল জেলার অর্ধেক ই খেয়ে ফেললি।ভাজ্ঞিস মানুষ খাওয়ার নিয়ম নেই তাহলে এ জেলায় একটা মানুষ ও জীবীত থাকতো না তোরা ছাড়া।সব তোদের পেটে যেতো”

“রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে বললাম,সমস্যা কি আপনার।আর একবার যদি বাজে কথা বলেন আমি কিন্তু এক্ষুণি চলে যাবো এখান থেকে।”

“সাহস থাকলে যা পা কেটে রেখে দিবো।টিফিন বাটির মুখ খুলে দে না হলে খেতে পারছি না।উফফ গড শ্বশুর এর মেয়ে দিন দিন কি তার জামাই এর আদর সোহাগ এর অভাবে খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে।তার এই রাগি জামাই কেই উলটা রাগ দেখায়।ভাবা যায় এগুলা।অবশ্য হওয়াটা স্বাভাবিক কারণ সে সানি লিওনির মস্ত বড় ফ্যান।এমন রোমান্টক গান দেখলে এমন তো হবেই।আই ফিল ইওর পেইন দিয়া।”

“আপনি এই কথা গুলো কাকে বলছেন বিহান ভাই।”

“ওই যে প্রেয়সী, প্রেয়সী কে বলছি বলেই একটা নাড়ু মুখে দিয়ে খেতে খেতে বললেন আহা ফুপ্পির হাতের নাড়ু কি স্বাদ।”

“মনে মনে বললাম, কিভাবে কথাটা ঘুরিয়ে দিলেন বিহান ভাই।ইনডিরেক্ট আমাকে শ্বশুরের মেয়ে বলেন আমি কি সেটা বুঝি না শ্বশুরের ছেলে।”

“বিহান ভাই কে বললাম এবার আমি আসি বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললাম।”

“বিহান ভাই বললেন,আম্মু বাসায় নেই
দিয়া একটা দুধ চা বানিয়ে নিয়ে আয় তো।”

“উনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রান্নাঘরে গেলাম দশ মিনিটের মাঝে দুধ চা বানিয়ে এনে উনার সামনে ধরলাম।”

“বিহান ভাই চা একটু মুখে দিয়ে বললেন,
নাহ এটার টেস্ট ভালো হয় নি।তুই এক কাজ কর একটা লাল চা বানিয়ে নিয়ে আয়।”

“রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে আবার ও গেলাম।আবার লাল চা বানিয়ে নিয়ে এলাম।”

“নাহ দিয়া এ টাইমে আমি চা খাই না।এক মিনিট আগে আমার চা খাওয়ার টাইম শেষ হয়ে গিয়েছে।যা একটা কোল্ড কফি নিয়ে আয় তো।আমি আবার সব খাদ্য খাবার মেইন টেইন করে চলি তো।”

“ধৈর্য ধরে আবার ও গেলাম কোল্ড কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম আর উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম এই নিন আপনার কফি।”

“তুই কি গাধী আমি কোল্ড কফি খাই এ টাইমে। দ্রুত গিয়ে ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।কিরে আবার রেগে যাচ্ছিস নাতো।শোন স্বামির সেবা যত্ন করা ফরজ। কর কর জান্নাত পাবি।”

“আপনি কি আমার স্বামি ?”

“আমার মতো কেউ ই তো হবে নাকি।একই কথা।রেগে যাস না কফি টা নিয়ে আয়।”

“আবার গেলাম ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে উনার হাতে এগিয়ে দিলাম।”

“কফি টা খানিক সময় রেখে দিয়ে বলেন এটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।খাওয়া যাচ্ছে না দিয়া।”

“প্রচন্ড রেগে গিয়ে উনার কলার চেপে ধরে মুখের মধ্য কফি ঢেলে দিলাম। উনার মুখ গড়িয়ে কফিতে উনার গেঞ্জি ভিজে গেলো।উনার কলার চেপে ধরাতে উনি আচমকা পড়ে গেলেন বেডের উপর সেই সাথে আমিও গিয়ে উনার বুকের উপর পড়লাম।রাগে চোখ মুখ ঝা ঝা করছে আমার।উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু উনি কোমর চেপে ধরে রেখেছেন।কি অসভ্য মানুষ ভাবা যায় ইচ্ছা করে কোমর চেপে ধরে রেখেছেন।উনার হাতে চিমটি কেটে উঠে চলে গেলাম।আর যেতে যেতে বললাম আমাকে কি কাজের মহিলা পেয়েছেন।বিহান ভাই বললেন,ঘরের বউ বললেও তো মানবি না। ”

বাড়িতে রাগে রাগে এলাম আমাকে আধাঘন্টা ধরে একবার রান্নাঘর একবার উনার ঘর করিয়েছেন।এটা একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব।পায়ে ব্যাথা হয়ে গিয়েছে আমার।আমাকে যেনো উনার বাসার কাজের মহিলা পেয়েছে।আর জীবনেও উনাদের বাড়ি যাবো না।উনি ঢাকা না গেলে আর বাড়ি থেকে বেরোবো না।

বাড়িতে এসে ফ্যানের নিচে টান টান হয়ে সুয়ে রইলাম।রাগে কি অস্হির লাগছে আমার।এমন সময় রিয়া এলো আমার রুমে।আমার মুড অফ দেখে রিয়া বললো কিরে বিহান ভাই কিছু বলেছে দিয়া।আমি রিয়ার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম দয়া করে ওই রাক্ষস এর নাম বলিস না প্লিজ।রিয়া আমাকে বললো দিয়া একটা জিনিস ভাবছি কি জানিস বিহান ভাই এর প্রেমিকা কে হবে?উনি তার সাথে ঠিক কি বিহ্যাভ করবেন।উনি কি আদেও প্রেম করবেন কখনো।এত গুলো মেয়ের ক্রাশ বলে কথা।

আমি রিয়াকে বললাম,প্রেম তো বাড়ির কাছে আমি সব মেয়েদের কাছে গিয়ে পই পই করে বললো চিরকুমারী থাক বইন তোরা তবুও ওই বিশ্রি মানুষ এর সাথে কেউ রিলেশন এ যাস না।আনরোমান্টিক ঘাড় ত্যাড়া জঘন্য মানুষ একটা।

“রিয়া আবার বললো,আচ্ছা দিয়া যদি বিহান ভাই বাই এনি চান্স তোর বর হয় কি করবি।”

“এটা কক্ষনো সম্ভব নয়।সেদিন আমি কচু গাছে গলায় দড়ি দিবো।তার থেকে আলিপ যথেষ্ট ভালো আছে।”

“দিয়া আবার আলিপ এর নাম বলছিস আমি কিন্তু রেকর্ড করেছি।”

“তুই ফোন দে রিয়া।আজ তোর ফোন আমি কুচি কুচি করে ফেলবো।এটা বিহান ভাই শুনলে আবার কি থেকে কি হয়ে যাবে।”

রিয়া ফোন নিয়ে এক দৌড় দিলো।আমি ওর পেছনে ছুটবো তখন ই দেখি বিহান ভাই নিচে আয়রা কে কোলে নিয়ে রিয়ার আম্মুর সাথে কথা বলছে।উনাকে দেখেই ঘরের দরজা লক করলাম।আজ কিছুতেই আর দরজা খুলবো না।না মানে না।

“আম্মু এসে প্রচন্ড জোরে দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে।এই দিয়া এত সকালে দরজা লক ক্যানো?”

“আম্মু আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।রাতে খাবো না আমি”।

“তোর না কয়েক দিন পরে পরীক্ষা রাত আট টা বাজে কিসের ঘুম।চড় মেরে গাল লাল করে দিবো।দরজা খোল এক্ষুণি।”

আম্মুর জোরাজুরিতে দরজা খুলতেই দেখি আম্মুর পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।গায়ে অফ হোয়াইট শার্ট পরা,শার্টের হাতা গোটানো,পরণে জিন্স মাসআল্লাহ দেখতে কিউট লাগছে।আম্মু বিহান ভাই কে ডেকে এনেছেন আমার লেখাপড়ার কি অবস্থা সেটার তদন্ত করানোর জন্য।মানুষ আর পেলো না আম্মু উনাকেই ডেকে এনেছে।উনাকে দেখে না পাচ্ছে হাসি না পাচ্ছে কাঁন্না।উনি কিছু বলার আগেই বলে উঠলাম বিহান ভাই চা, না কফি খাবেন আর হ্যাঁ গায়ের জামা খুলে দিন আয়রন করে দেই।কথার বলার সঙ্গেই অদ্ভুত কথা বলে উঠলেন উনি,তোর আমার বডি দেখতে ইচ্ছা করছে ছিঃদিয়া ছিঃ।
এই যে আবার শুরু হয়েছে উনার বাজে কথা।

এবার উনি বলে উঠলেন,

“দেখি কি লেখাপড়া করছিস।শুনলাম প্রচন্ড ফাঁকি মারছিস।এই নে শীট গুলা দেখ।তোর জন্য খুজে খুজে এনেছি।এখানে কিছু ম্যাথ আছে স্টার চিহ্ন দেওয়া ওগুলো কর।”

“ম্যাথ গুলা দেখে মাথা ঘুরতে লাগলো এত কঠিন ম্যাথ।এমনি তেই ম্যাথ ভাল লাগে না।”

“বিহান ভাই আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে রইলেন।আমি ম্যাথ করতে গিয়ে পাগল হওয়ার উপক্রম।যাও বা পারতাম উনি থাকাতে সব সূত্র ভুলে গিয়েছি।খাতায় শুধু আঁকিবুকি করছি।”

“বিহান ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,কি ব্যাপার কিছুই তো পারছিস না পরীক্ষায় তোর জন্য বিশাল একটা রসগোল্লা অপেক্ষা করছে।এমনি তে তোরা খাওয়া ছাড়া কিছু বুঝিস না বিশাল গোল্লা টা পরিবারের সবাই মিলে ভাগ যোগ করে খেয়ে নিস।”

এমন সময় কলম টেবিলের নিচে পরতেই দুজনে নিচু হয়ে কলম তুলতে গিয়েই শরীর পশম শিউরে উঠলো আমার।

বিহান ভাই এর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট স্পর্শ লেগে গেলো আমার।এটা শুধু স্পর্শ ছিলো সেটা নয়।এটা ডিরেক্ট একটা চুমু ছিলো।উনি কি ইচ্ছাকৃত চুমু দিলেন আমায়।

চলবে,,,,
চলবে,,

(
চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here