এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ১০+১১

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১০.
#WeiterঃMousumi_Akter

ব্রিজ থেকে ফেরার সময় দেখলাম গাছের আড়ালে কিছু একটা নড়াচড়া করছে।সেই আত্মা ভেবে বিহান ভাই এর হাত শক্ত ভাবে ধরলাম আমি।বিহান ভাই আমাকে বলেন ওয়েট কর নিশ্চয় শুভ,তিয়াশ,বা বিভোর কারো সাথে লাইন মারছে।আমি বললাম ওই আত্মা ও হতে পারে।বিহান ভাই আমাকে বলেন তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড় বাকিটা দেখতেছি।তারপর কি হলো জানিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি হাতে গাড় টুকটুকে লাল রং হয়েছে মেহেদীর।বাট জমা ওড়নার বিভিন্ন জায়ভা কালার হয়ে গিয়েছে।মেহেদীর রং কখন লেগে গিয়েছে বুঝতেই পারলাম না।হাতের দিকে চোখ যেতেই চোখ পড়লো আই লাভ ইউ রাক্ষস ভাই লেখাটার উপর।কি ফাজিল এই ছেলে আমার ফোন থেকে সব দেখে নিয়ে আবার সেটা হাতেই লিখে দিয়েছে।এক্ষুণি ঘুম থেকে উঠতে হবে উঠার সময় দেখি রিয়া আর মেহু আপু আমার গায়ের উপর দুইজন দুই পা তুলে ঘুমিয়ে আছে।মানে আমাকে তাদের কোলবালিশ বানিয়েছে।বাহ আমাকে ভর দিয়ে কি আরামে ঘুমোচ্ছে তারা।মারাত্মক জোরে চিৎকার দিতেই ঘুম ভেঙে গেলো তাদের।দুজন ই লাফিয়ে উঠে গেলো।রিয়া আর মেহু আমাকে বলছে এই দিয়া ভয় পেয়েছিস নাকি।আমি বললাম দুজনে বিয়ে করলেই হয় আমার মতো পিচ্চির উওর এত অত্যাচার কেনো শুনি।মেহু আপু বললো সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বাড়িতে আত্মীয়ের জব্য এক্সট্রা কোলবালিস নেই সে বাড়িতে আমি আর যাবো না।রিয়া হেসে দিয়ে বললো শুভ দা আছে তো তোমার বিশেষ কোল বালিস।মেহু আপু বললো তোরা শুভ ভাই এর নামে বাজে কথা বলে একটা প্রেম ও হতে দিচ্ছিস না আমার।এরই মাঝে বাবার আওয়াজ শোনা গেলো।

বাবার সাদা পাঞ্জাবী টা হারিয়ে গিয়েছে।বাবা রাতে খুলে রেখে ঘুমিয়েছিলেন।কিন্ত সেটা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।বাবার পাঞ্জাবী টা গেলো কোথায়?বাবা ঘুম থেকে উঠে পাঞ্জাবী পাঞ্জাবী করছে।মা, মামি সবাই খুজছে অথচ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না সেই পাঞ্জাবী।বাবার পাঞ্জাবী খোজার জন্য রুম ময় মানুষের কোলাহল এ ঘুম ভেঙে গেলো বিহান ভাই এর।কাল রাতে বাবা, বিহান,ভাই,বিভোর ভাই,আলিপ,শুভ ভাইয়া সবাই একই খাটে ঘুমিয়েছিলো।প্রচুর আত্মীয় হওয়াতে যে যেখানে জায়গা পেয়েছে ঘুমিয়েছে।আমিও খুজে চলেছি কিন্তু কোথাও নেই সে পাঞ্জাবী।বিহান ভাই ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন।উনার এই একটা জিনিস খুব অপছন্দের সেটা হলো খুব ভোরে কেউ উনার ঘুমের ডিস্টার্ব করলে।বিহান ভাই এর চোখে মুখে ভীষণ বিরক্তি দেখা যচ্ছে।বিহান ভাই টাওয়াল গলায় দিয়ে ব্রাশ আর পেষ্ট নিয়ে ব্রাশ করতে করতে বেলকনিতে প্রবেশ করলেন।আমি বিহান ভাই এর কাছে গিয়ে বললাম আপনি কি বাবার পাঞ্জাবী টা দেখেছেন।

“বিহান ভাই গালের পেষ্ট এর ফেনা নিচে ফেলে বললেন আচ্ছা সাজ সকালে এই কিপ্টার ছেলে ছেলে কিপ্টা এত চিল্লাচ্ছে কেনো বলতো?”

“দেখুন একদম সাজ সকালে বাজে কথা বলবেন না আমার দাদু আর বাবা মোটেও কিপটা নয়।”

“কিপ্টা না হলেও হাড় কিপটা তাতে সন্দেহ নেই।”

“হাড় কিপ্টার কি করলো”

“হাড় কিপ্টা না হলে কেউ সামান্য একটা পাঞ্জাবীর জন্য এই ভাবে চিল্লায়।এই পুরা শহর শব্দ দূষণ করে দিয়েছে।উফফ আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।এক গাদা মহিলা কে লাগিয়ে দিয়েছে পাঞ্জাবী খুজতে।আর তারা রুমময় চ্যা চ্যা ফ্যা ফ্যা করছে।জাস্ট বিরক্তিকর।”

“শুনুন ওটা বাবার নতুন পাঞ্জাবী।তাছাড়া ছিলো তো রুমেই যাবে টা কোথায়?”

“আই ডোন্ট নো।শান্তিতে ব্রাশ করতে দে তো।”

“আচ্ছা বিহান ভাই আবার চোর টোর আসে নিতো।”

“টোর টা কি?এর মিনিং টা কি?”

“চ্যা চ্যা ফ্যা ফ্যা এর পরিপূরক ”

“জাস্ট অশিক্ষিত মহিলা তুই।এইগুলা তোর থেকেই শেখা।তোকে এ ভাষায় না বললে বুঝবি না।তাই এ ভাষাতেই বলা।।”

“একজন কলেজ স্টুডেন্ট কে অশিক্ষিত বলছেন আপনি।”

“লাইক সিরিয়াসলি।তোর এই শিক্ষা যেনো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিস না।তাহলে এই খুলনা বিভাগ টা বাংলা ভাষার অপমানে ভরে যাবে।তোর ওই যে কিছু ভাষা আছে পড়া টড়া,রিয়া ফিয়া,কাকু টাকু,মামা ফামা,ব্রাশ ফ্রাশ আরো অনেক কিছুই আছে। ”

“দেখুন এগুলা খাটি বাংলা ভাষা।আমি যে বাঙালি সেটা বোঝা যায়। ”

“তোর বাপ এখনো চিল্লাছে।যা গিয়ে দেখ,পাঞ্জাবী ব্রিজের সামনের বকুল গাছে আছে।পাঞ্জাবী টা এনে দিয়ে ক্ষমা দে”

ওখানে কিভাবে গেলো।

“মেবি ভূতে নিয়েছে”

“এ কাজ আপনি করেছেন তাইনা।দেখুন আমি কিন্তু বাবা কে বলে দিবো।”

“সকালে ব্রাশ করেছিস।”

“না করবো।”

“থাক করা লাগবে না বলেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলেন আর উনার মুখের ব্রাশ দিয়ে এমন ভাবে আমার দাঁত ঘষে দিলেন যেনো বাথরুম এর ব্রাশ দিয়ে ঘষছেন।এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বললে ঠিক ই টয়লেট ব্রাশ দিয়ে দাঁত ঘষে দিবো বলেই বেরিয়ে গেলেন”

“ইয়াক থু! বমি নিড।মনে চাইছে উনার গালে মুখে বমি করে দেয় আমি”

দুপুর একটায় বরযাত্রী চলে এসছে।বরযাত্রীতে রং বেরঙের মেয়ে এসছে।বাসার ছেলে গুলোর নজর ওই ডানাকাটা পরীদের দিকে।বিভোর ভাই মারাত্মক ভাব নিচ্ছেন মেয়েদের দেখে সাথে শুভ ভাইয়া ও আছে।তাছাড়া অন্যান্য কাজিন রা তো আছেই।শুধুমাত্র বিহান ভাই এর ই কোনো খেয়াল নেই কোথাও কোনো মেয়ে আছে কিনা।এই ভাবের ছড়াছড়ি চলছেই।গত রাতেই বলাবলি হয়েছে বিভোর ভাই একটা মেয়ে পটিয়েই ছাড়বে।এই দিকে শুভ ভাইয়া বলে তুই একটা পটালে আমি পটাবো ২ টা।এই দিকে তিয়াস ভাইয়া বলে ওকে আমি সব গুলাই পটাবো।আর বিহান ভাই বলেন ছ্যাচড়া হলে যা হয় আরকি।নীল শাড়ি পরা এক আপুকে পটাচ্ছেন বিভোর ভাই আর তিয়াশ ভাই।তিয়াশ ভাই মারাত্মক কন্ঠে গানের সুর তুলেছেন নীল নীল নীলাঞ্জনা চোখ দুটো টানা টানা কপালের ও টিপ যেনো জোনাকির ভীড় আমি প্রেমে পড়েছি তুমি করোনা মানা।

মেয়েটি একটা পাঁচ বছরের বেবি তিয়াশ ভাইয়ার কোলে তুলে দিয়ে বলেন এই নাও বাবু তোমার নতুন আব্বু।যাও পাপ্পা বলে ডাক দাও।ছেলেটি তিয়াশ ভাইয়া কে পাপ্পা বলে ডাকা শুরু করলো।কি সাংঘাতিক বাচ্চা ভাবা যায়।

বিহান ভাই বলে উঠলেন তোর কপালে কি সারাজীবন অন্যর ওয়াইফ ই জোটে।এদিক দিয়ে ও লাভ তোর ওদিক দিয়ে দেখলেও লাভ তোর।বোনাস পেয়ে গেলি।

কি একটা অবস্হা।বিহান ভাই এই মারাত্মক অপমান টা না করলেও পারতেন।

অলরেডি অনেক ওয়ার্নিং এ আছি বিহান ভাই এর।যার জন্য ছেলেদের থেকে কয়েক মাইল দূরত্ব বজিয়ে রইলাম।

বিভা আপুর বিয়েটা মিটে গিয়েছে।আমার মাথায় এখন পায়চারী করছে কাল রাতে সাদা কিছু একটা দেখে ভূত ভেবে ভয় পেলাম সেটা তাহলে বিহান ভাই এর ই কাজ ছিলো।উনি বাবার পাঞ্জবি নিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখে এসছেন।কি সাংঘাতিক ছেলে ভাবা যায়।বিয়ে মিটে যাওয়ার পরে আমরা জমিদার বাড়ি ঘুরতে গেলাম।জমিদার দের পুকুর পাড়ে বসে আছি আমরা।বিহান ভাই বলে উঠলেন নবাগত নায়কা নিশ্চয়ই বড় পর্দায় চান্স পাবে খুব শিঘ্রই সাথে নায়ক ও আছে।

উনার কি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,,কে নায়ক আর কে নায়কা।

বিহান ভাই তোহা আপুর দিকে তাকিয়ে বলেন,আমাদের তোহা। টিকটক সেলিব্রিটি। ফেসবুক ময় তার টিকটক ভিডিও সাথে আছে আমাদের বিভোর।এনি ওয়ে বিভোর কাল সারারাত নাক ডাকার জন্য আমি ঘুমোতে পারি নি।তোহা ঘুমোবে কিভাবে।

বিভোর ভাই বলে উঠলেন আমি ক্যানো ঘুমোবো। বউ হবে তোমার ঘুমোবো আমি।

আমার বউ তোর বোন ই হবে এগুলা বলে লাভ নেই।তোহার সাথে আমার কেমনে কি?

বিভোর ভাই ফেসবুক আর গুগলে সার্চ দিলেন বিহান গফ।সাথে সাথে চলে এসছে তোহা আপুর নাম।

বিহান ভাই বলেন,গুগল ভুল করেছে সাথে জুকার ও।তা কোন ওয়েবসাইটে আগে এটা পোস্ট করে নিয়েছিলি বিভোর।আর এডিট ভালোই শিখছিস।রিয়েলি মারাত্মক।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
১১.
#WriterঃMousumi_Akter

একটা মানুষ কোন লেভেল এর ফাজিল হলে আর খারাপ হলে তার মেয়েকে ভয় দেখানোর জন্য তার বাবার পাঞ্জাবী মধ্য রাতে নিয়ে বকুল গাছে গিয়ে আটকাতে পারে।আমার বাবার পাঞ্জাবীর দিকেই নজর গেলো উনার।মনে চাইছে মারাত্মক আকারের একটা প্রতিশোধ নিয়ে নেই কিন্তু কিভাবে নিবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।জমিদার দের পুকুর পাড়ে বসে নিজে নিজে প্লান করেই যাচ্ছি আর ভেবেই যাচ্ছি আরেক দিক দিয়ে একভাবে থু থু ফেলে যাচ্ছি।সবাই আমার এই ননস্টপ থুথু ফেলার কারণ জানতে চাইছে কিন্তু আমি চুপ হয়ে আছি। থু থু ফেলতে থেলতে গলা শুকিয়ে গিয়েছে আমার।কারো কথার কোনো উত্তর না দেওয়াতে বিহান ভাই বলে উঠলেন,দিয়া কত টাকা কন্ট্রাক নিয়েছিস।

উনার কথা শুনেই আমার মন সন্দিহান হয়ে উঠলো,নিশ্চয় উনার উদ্ভট চিন্তাভাবনা থেকে জঘন্য জোনো আইডিয়া বের করেছেন কিন্তু কি সেটা?

আমি সন্দিহান৷ দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই উনি বলেন,

“এই যে জমিদারদের ঐতহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে দিয়া বড়ই চিন্তিত।ও নিশ্চয়ই জমিদার দের পূর্ব পুরুষ দের সাথে কথা বলে কন্ট্রাক করেছে।ও এই পুকুর টা পানিতে ভরিয়ে তুলবে।বিনিময়ে দিয়া একটা এমাউন্ট এর টাকা পাবে।দিয়া নিশ্চয়ই বলেছে ওর মুখে আজ অমৃত পড়েছে সেই অমৃত এর থু থু পুকুরে ফেললে পুকুরে অমৃতের পানি ভরে যাবে।তা দিয়া কত টাকার কন্ট্রাক।আমার দিন কাল খুব অভাবে যাচ্ছে কিছু টাকা ধার দিস প্লিজ।কথা দিচ্ছি টাকা মেরে দিবো না আই প্রমিজ আবার ফেরত দিবো।”

মানুষ এত অসহ্য কথা কিভাবে বলতে পারে।উনার দিকে রাগান্বিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি।

“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?খবর দার এবার যেনো আমার মুখে ফেলিস না।তাহলে অমৃত আবার খাইয়ে দিবো সকালের কথা মনে আছে তো?”

‘কেনো থু থু ফেলছি জানেন না তাইনা?”

“আমি তো জানি বাট এরা তো জানেনা।তুই বলিস নি এদের এখনো।ওকে আই হেল্প ইউ নিব্বি।”

“বিভোর ভাই,তিয়াস ভাই,তোহা আপু,মেহু আপু,রিয়া সবার আগ্রহ বেড়ে গেলো কি এমন হয়েছিলো এটা জানার জন্য।”

“আমি বিহান ভাই এর দিকে ভীষণ রাগান্বিত মুড নিয়ে তাকালাম।কারণ এটা আমার মান সম্মান এর ব্যাপার।বিহান ভাই যদি এটা বলে দেন এরা আমাকে ক্ষেপাইতেই থাকবে।”

বিহান ভাই সবাই কে থামিয়ে দিয়ে একটা চিঠি পড়তে থাকেন,

প্রিয়,
কখনো চিঠি লেখা হয় নি।তোমাকে দেখে দু লাইন লিখতে ইচ্ছা হলো।কি লিখবো সেটা জানিনা।তবে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি আমি।আই লাভ ইউ দিয়া।তোমার বিহান ভাইয়ার আছে চিঠি টা দিয়ে গেলাম। উনাকে উত্তর টা দিয়ে দিও।আমার টিকটক একাউন্ট টা চেক দিও।

সবার এটেনশন এখন চিঠির দিকে।বিহান ভাই চিঠিটা পড়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন এই নে একজন টিকটক সেলিব্রিটি তোকে চিঠি দিয়েছে।দিয়া একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।একজন স্টার এর হবু বউ বলে কথা।বিয়ের বাড়ি থেকে এক চুল কটা খাবিস এই চিঠি দিয়ে গিয়েছে।

মেহু আপু বলে উঠলো বিহান ভাই আপনার বোনের চিঠি আপনার কাছে দিয়েছে আপনি এ নিয়ে কিছু বলবেন না।আমরা হলে তো এত সময় মার মাটিতে পড়তো না।

তোমরা আমার বোন তাই অবশ্যই তোমাদের ব্যাপারে কথা বললাম।কিন্তু দিয়া এদিক ওদিক কোনদিকেই আমার বোন হওয়ার যোগ্য না।এখনো সে যোগ্যতা সে অর্জন করতে পারে নি।

“রাগে শরীর আরো রিরি করে উঠলো।মনে মনে বললাম বোন হবো কিভাবে মনে মনে আমাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবে।রাগ কন্ট্রোল করে একটা স্বভাব সুলভ হাসি দিয়ে বললাম,বিহান ভাই ক্যানো আপনার বোন হওয়ার যোগ্য না সেটা ক্লিয়ার করে বলুন।না পারলাম আপনার বোন হতে না পারলামা অন্য কিছু হতে।”

“পারবি না তো কারণ তোর শরীরে রাজাকারদের রক্ত বইছে দেখা গেলো কবে আমার গলা কেটে দিলি।আম্মুর একমাত্র সুন্দর স্মার্ট ছেলেটা অকালে প্রাণ হারালো।”

“এরই মাঝে তোহা আপু বলে উঠলো,বিহান ভাই আমার মনে একটা শখ জেগেছে।”

“বিহান ভাই এক ভ্রু খানিক টা উঁচু করে বলেন,কি শখ।”

“আপনার সাথে ডুয়েট টিকটক করা।”

“বইনা তোর শখ শুনে আমার আয়ু কমে গিয়েছে।টিকটকার দের সব ব্লক লিস্টে পাঠিয়েছি।বাকি আছিস তুই।কবে দেখবি টিকটক স্টার দের সাথে ব্লক লিস্টে সংসার করছিস।”

“বিহান ভাই টিকটক কি খারাপ কিছু।”

“আমার কাছে একদম ই ফালতু লাগে বইন।টিকটক হোক আর যেটাই হোক ভালো কিছু করতে পারিস তো।তোরা এগুলা কি করিস নাউজুবিল্লাহ। তোদের জামাই দেখলে কি ভাববে এগুলা।”

আমি এবার ইচ্ছা করেই বলে উঠলাম তোহা আপু আর বিহান ভাই এর ডুয়েট টিকটক এর গান হবে” তুমি দিও নাগো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া ”

বিহান ভাই নিমিষেই নিজের মুড চেঞ্জ করে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন।রাগি রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললেন “খুব পেকেছিস তাইনা।”

বিহান ভাই রেগে যাওয়া মানেই মহা বিপদ আমি আর কিছুই বললাম না।

আগামিকাল বিকালে বিহান ভাই ঢাকা ফিরে যাবেন।আম্মু আমাকে বললো আমি যেনো বিহান ভাই কে বলি কাল ঢাকা যাওয়ার সময় আমাদের বাসা হয়ে যেতে।

ফোন করার ইচ্ছা আমার ছিলোই না।কিন্তু মা জননীর কথা ফেলা যাবে না।ভয়ে ভয়ে ফোন টা দিলাম,,

‘ফোন দিয়ে বললাম,হ্যালো বিহান ভাই’

‘বেয়াদব মহিলা একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।’

‘আমি কি করেছি বিহান ভাই।মা তোমায় ফোন দিতে বলেছে তাই দিলাম।রাগে রাগে আপনি ছেড়ে তুমি বললাম।তুই বললে ব্যাপার টা আরো বিশ্রি লাগতো।’

‘ফোন দিয়ে যে সালাম দিতে হয় সেটাও জানিস না।এটা তোর বেয়াদবির প্রথম লক্ষণ।’

দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,”আসসালামু আলাইকুম বিহান ভাই”

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’

‘মা তোমাকে আসতে বলেছে।(মনে মনে বললাম তোকে আসতে বলেছে)’

‘এক মিনিট তুই আমায় তুমি তুমি করছিস হুয়াই।আমি তোর বড় না ছোট।তুই তো আমায় তুমি বলিস না।নিশ্চয়ই মনে মনে তুই তুকারি ও করছিস।’

‘দেখুন বিহান ভাই আন্দাজে কিছুই বলবেন না।’

‘কানের কাছে সব সময় ভ্যা ভ্যা করে ভাই ভাই করবি না তো।অহেতুক ফোন দিয়েছিস কেনো সেটা বল সময় নষ্ট হচ্ছে আমার।’

‘ভাই কে ভাই ছাড়া কাকা ডাকবো।’

‘দেখ দিয়া তোকে আমি বোনের নজরে দেখি না কখনো।”

“ক্যানো বিহান ভাই।”

“এত ভাই ভাই না করে আহত না করে তার থেকে বেটার কাকা ডেকে নিহত কর।ফোন রাখ।”

ঢাকা যাওয়ার আগে আম্মু একবার আসতে বলেছে তাই ফোন দিয়েছিলাম।

আমি আর রিয়া পরের দিন সকালে কোচিং এ যাচ্ছি।হঠাত বিভোর ভাই এর সাথে দেখা।বিভোর ভাই আমাদের দেখেই মারাত্মক বেসুরা কন্ঠে গান শুরু করলেন,

“ও রিয়া ও রিয়া দিল চুরায়ে লিয়ে এ কিয়া কিয়া না ন্ননান্নানা না না আরে রে এএ এ”

“রিয়া বলে উঠলো,বিভোর ভাই গান টার মান সম্মান নষ্ট করবেন না প্লিজ।”

“আমার মতো একজন সিঙ্গার কে অফমান করা হচ্ছে”

“আপনি কিন্তু অপমান বানান কে অপমান করছেন।”

“ওটা আমি অখম হাসান এর নাটক দেখে শিখেছি।রিয়া বলছি তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে।”

“হ্যাঁ আছে বিভোর ভাই অনেক গুলা আছে কিন্তু কেনো?”

“লাস্ট সিরিয়ালে আমার নাম টা লিখতে পারো।আমার খুব শখ একটা প্রেম করবো।”

“প্রেম আর কত করবেন বিভোর ভাই।এই নিয়ে ৬২ টা প্রপোজ করেছেন।”

“আরে ওগুলো প্রপোজ না জাস্ট মজা। আসলে কিন্তু আমি সিঙ্গেল।তবে তোমার সাথে হলে ভাল হয়ে যাবো।দেখো না রোজ গান গায় ও রিয়া ও রিয়া।”

“আমি বিহান ভাই কে বলে দিবো কিন্তু।”

“বিহান বলবে ঠিক আছে বিভোর এর মতো ছেলে নেই জিতবা রিয়া।”

“বিহান ভাই এ কথা বললে আমি তখন ই রাজি হবো।”

“বিহান যতদিন না বলে ততদিন তোমার বান্ধবী সিজুকার সাথে রিলেশন করিয়ে দাও।”

“আবার সিজুকা আমি সিজুকা কে বলে দিবো আপনার আশে পাশে না ঘেষতে বুঝলেন।”

ওদের ঝগড়া শুনে হাসতে হাসতে আমি শেষ।

পরের দিন দুপুরে হঠাত সাজুগুজু করতে মন চাইলো।বার বার উকি দিচ্ছি কখন সে আসবে।জানি এসেই বাজে কথা শুনাবে।তবুও ঢাকা চলে যাবে মনের মাঝে খুব খারাপ লাগছে।

গায়ে এ্যাশ কালারের শার্ট, পরনে কালো জিন্স,পায়ে শু।শার্টের হাতা গোটানো।হাতে ঘড়ি চুল গুলো উড়ছে সামনে থেকে।দেখে হাই ভোল্টেজ এর ক্রাশ খেয়েছি।

আমার রুমে প্রবেশ করেই বলেন,

“কিরে এমন লাল টুকটুকে শাড়ি পায়ে আলতা হাত ভর্তি লাল চুড়ি পরে ভয়ানক মহিলাদের মতো সেজেছিস ক্যানো?”

“আমি যে মাঝে মধ্য শাড়ি টাড়ি পরি আপনি সেটা জানেন না।”

“শাড়ির কথা জানতাম টারির কথা জানতাম না তো।”

“এখন জেনেছেন খুশি হয়েছেন। ”

“কিছু না বলে বিছানায় সুয়ে পড়লেন উনি।
নারে খুশি হয় নি ভয় পেয়েছি তোকে দেখে।এমন পেত্নি সেজেছিস বকুল গাছের পেত্নি ভেবেছি।”

“তাহলে কি আপনার মতো শুধু গ্রে আর এশ কালার পরবো”

“মেয়ে মানুষ মানেই অাধ্যতিক সব স্টাইল আর ডিজাইন।
আচ্ছা তোর পায়ের এই কালো সুতোর বিশ্লেষণ টা কি রে?না মানে বিয়ে হচ্ছে না বলে পরেছিস তাইনা।কোন হুজুরের থেকে ফু দিয়ে এনেছিস”

দেখুন এটা স্টাইলের জন্য পরেছি।

বিহান ভাই পায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন,

“ঝংকার বাজে, বেজে চলুক নাহয় তোমার ওই অস্থির মন মন্দিরে।তুমি প্রার্থনাগারের প্রথম রক্তজবার মতো লাল আলতা রাঙা পায়ে আবার প্রবেশ করো আমার হৃদমাজারে।”

চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here