এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব -১৪

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–ওভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।খাঁটি সিঙ্গেল মেয়ে আমি।এখন আমার ফোনটা আমার হাতে দেন।

–মিথ্যা কথা বলতে মুখ কাঁপছে না।

–আমি মিথ্যা কথা বললাম বুঝি।তা’ আমি কি’ মিথ্যা কথা বলছি শুনি।

–তুমি সিঙ্গেল কিভাবে হতে পারো।জলজ্যান্ত তোমার একটা জামাই আছে।

–কে? আমার জামাই।

–আমি’!

–আপনি স্বীকার করলেন আপনি আমার স্বামী।তাহলে সেদিন ফোন চেয়ে ছিলাম।আমাকে কেনো আপনার ফোনটা দিলেন না।

ইফাদ তানহা’র প্রশ্নের উত্তর দিল না।ফেসবুক আইডি’র সবকিছু ঠিক করতে লাগলো।সুন্দর একটা বোরকা পড়া মেয়ের ছবি প্রোফাইলে দিয়ে দিল।এই প্রথম তানহা’র নিজের ফোন হয়েছে।আবির হাসনা বেগম’কে বলেছিল,তানহাকে একটা ফোন কিনে দিতে।কিন্তু হাসনা বেগম কিনে দেন নাই।আবিরকে বুঝিয়েছে।ফোন পেলে তানহা খারাপ হয়ে যাবে।মায়ের কথায় যুক্তি আছে।ভেবে আবির আর কিছু বলে নাই।ইফাদ ফোনের দিকে মনযোগী হয়ে আছে।নতুন ফোন তানহার আগ্রহ একটু বেশিই।তানহা ফোন দেখার জন্য ইফাদের গা ঘেঁষে বসেছে।ইফাদ বিরক্ত হয়ে বলল।

–একটা কাজ করো।আমার কোলের মধ্যে এসে বসো।

তানহা কোনো কথা না বলে,কম্বলের মধ্যে দুটো ঢুকিয়ে দিয়ে,ইফাদের কোলের মধ্যে বলে পড়লো।ইফাদ চোখ গোল গোল করে,তানহার দিকে তাকালো।

–দেখুন ঠান্ডার মধ্যে নেকামি করার ধৈর্য আমার নাই।এমনিতেই অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে বসিয়ে রেখেছেন।আমার ফোনটা-ও হাতে দিচ্ছেন না।বসতে বলেছেন।বসেছি,এভাবে উজবুক মতো তাকিয়ে থাকার কিছু নেই।

–তুমি আমাকে উজবুক বললে,তোমার ফেসবুক একাউন্ট এখনই ডিলিট করে দিব।ফোন এখনো হাতেই পড়ে নাই।এখনই এমন পাগলামি করছো।নিজের হাতে ফোন পেলে আমাকে চিনবেনই না।

–দুইটা বছর ছিলেন না।আমার ফোন ছিল না।আমি একা থাকি নাই।আমি কি’ আপনাকে ভুলে গিয়েছি।লাগবে আপনার ফোন।আমি চলে যাচ্ছি।তানহা উঠে যেতে লাগলে ইফাদ তানহা’কে দু’হাতে আবদ্ধ করে ফেললো।

–এত রাগ করো কোনো?আমি তো’ তোমার সাথে মজা করছি।এই নাও তোমার ফোন।

–লাগবে না।

–এতক্ষণ ফোন ফোন করে,জীবন শেষ করে দিচ্ছিলে।এখন নিবে না কেনো?

–আপনি কার নামে সিম তুলেছেন?

–কেনো আমার নামে!

–আমি এই সিম দিয়ে অপরাধ মূলক কাজ করবো।আর পুলিশ এসে আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে।

–আমারই ভালো কোনো কাজ করতে হবে না।আমি জেলে বসে বসে খাব।

–পুলিশের মার তো’ খান নাই।একদিন খেলে দ্বিতীয় দিন বলবেন না।দেখি আপনার ফোন দিন।

–দিতে পারি আমার একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

–আমার সাথে কয়টা ছবি তুলতে হবে।

–আচ্ছা তুলবো।এখন আপনার ফোন দেন।ইফাদ নিজের ফোনটা তানহার দিকে এগিয়ে দিল।তানহা ফোন হাতে নিয়ে বলল।

–পাসওয়ার্ড বলুন।

–আমার কাছে দাও।আমি খুলে দিচ্ছি।

–আমাকে বললে,আপনার সব টাকা পয়সা সব লুটে নিব নাকি।

–আমার “বউজান”।

–আপনার মতলব কি’ বলেন তো’।

–আমার কোনো মতলব নেই।

–তাহলে পাসওয়ার্ড বলতে বললাম।আপনি আমার বউজান বললেন কেনো?

–আরে বোকা আমার পাসওয়ার্ড-ই আমার বউজান।

তানহা হতভম্ব হয়ে ইফাদের দিকে তাকালো।মানুষের পাসওয়ার্ড আবার এমন হয় নাকি।তানহা ফোনের দিকে মনযোগ দিল।প্রথমে ইফাদের গ্যালারিতে গেল তানহা।সেখানে ইফাদের অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে পেল।চৈতালির,ইফাদের বড় ভাইয়ের,ইফাদের বাবার,পারিবারিক ছবি-ও দেখতে পেলো তানহা।সবকিছু মনযোগ সহকারে দেখছিল তানহা।

ইফাদ তানহার ফোন নিয়ে নিজের আইডি সার্চ করলো।তারপর তানহার আইডি থেকে নিজের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠালো।ইফাদ খপ করে তানহার হাত থেকে নিজের ফোন নিয়ে নিল।ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে,আবার দিয়ে দিল।তানহা এতে বেশ বিরক্ত হলো।দু’জনেই ফোনের মধ্যে মনযোগী হয়ে আছে বেশ।

তানহা ইফাদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখছিল।তখনই স্রুতি ইসলাম আইডি থেকে মেসেজ আসলো।তানহা দ্রুত মেসেজ সিন করে ফেললো।

–ইফাদ কেমন আছো।তুমি আমার নাম্বার ব্লক করে রাখছো কেনো?তুমি নাকি বাংলাদেশে আমাকে বলোনি কেনো?তুমি আমাকে তোমার বাসার ঠিকানা দাও।আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।তোমার সাথে কথা না বলতে পারলে আমার ভালো লাগে না।তুমি কি’ আমার অনুভূতি বুঝো না।আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি ইফাদ।

মেসেজটা পড়ে তানহার মুখের আধার ঘনিয়ে এলো।তারমানে ইফাদ অন্য কাউকে ভালোবাসে।আমার জন্য শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করছে।ফুরফুরে মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।আঁড়চোখে ইফাদের দিকে তাকালো।ইফাদের দৃষ্টি ফোনের দিকে বিদ্যমান।

–স্রুতি কে?

তানহার কথা শুনে ইফাদ চমকে উঠলো।মনে মনে যে,ভয়টা পেয়েছিল।সেটাই হলো’।স্রুতি মেয়েটা ইফাদের কাছে বিরক্তিকর একটা মেয়ে।কাজের জন্য সৌদি আরবে সহ্য করেছে।বাংলাদেশে এসেই স্রুতির নাম্বার ব্লক করে দিয়েছিল।আজকে আসার সময় ইফাদ স্রুতির রিকুয়েষ্ট ডিলিট করে দেওয়ার বদলে একসেপ্ট করে ফেলছিল।ভেবেছিল বাসায় এসে আনফ্রেন্ড করে দিবে।তার আগেই তানহা দেখে ফেললো।কি’ সর্বনাশ আমার সংসার শুরু হবার আগে,সবাই যুক্তি পরামর্শ করে ভেঙে দেওয়া’র প্রচেষ্টায় নেমেছে।ইফাদের থেকে উত্তর না পেয়ে তানহা বলল।

–এই জন্য আপনি আমাকে ফোন দিতে চান না।স্রুতি মেয়ের সাথে আপনি রিলেশনে আছেন।নেন কথা বলুন।আপনার ভালোবাসার মানুষের ভালো লাগছে না আপনাকে ছাড়া।আপনাকে অনেক ভালোবাসে আপনার গার্লফ্রেন্ড।

–তুমি আমাকে ভুল বুঝছো তানহা।আমি তোমাকে সবটা খুলে বলছি।

–আমি ছেলেদের সাথে কথা বললে আপনার মুখের দিকে তাকানো যায় না।আর একটা মেয়ে আপনাকে ভালোবাসি বলেছে।তবু্ও আমি ধৈর্য ধরে আপনার সাথে কথা বলবো।আপনি না বললেন আপনি মেয়েদের ঘৃণা করেন।তাহলে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে মেয়ে আসলো কোথায় থেকে।

–আমি ভুল করে নিয়ে ফেলছি।তুমি আনফ্রেন্ড করে দাও।

–হ্যাঁ আমি আনফ্রেন্ড করে দিব।আপনি পরে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়ে।আপনার গার্লফ্রেন্ডকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বুঝিয়ে নিবেন।

–তাহলে ব্লক করে দাও।

–একটা আইডি ব্লক করে দিব।অন্য আইডি দিয়ে কথা বলবেন তাই না।

–স্রুতি মেয়েটা সৌদি আরবে থাকতে আমাকে বিরক্ত করতো।সেখানে আমি কাজ করতাম দেখে ওকে সহ্য করছি।বাংলাদেশে আসার পরে ওর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে।আল্লাহর কসম ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।বাংলাদেশে আসার পরে মনের ভুলেও যোগাযোগ রাখি নাই।

–আচ্ছা বিশ্বাস করলাম আপনার কথা।

–একটা কথা কি’ জানো তানহা।বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা অর্থহীন।আর অধিকার ছাড়া সম্পর্ক মূল্যহীন।

তানহা একহাতে ইফাদে’র দু’গাল চেপে ধরে বলল।

–বিশ্বাস আছে দেখে আপনার কথা গুলো শুনলাম আর বিশ্বাস করলাম।অধিকার আছে দেখে কৈফিয়ত চাইলাম।আপনি শুধু আমার মনে থাকে যেনো।মনের ভুলেও যদি আপনার দু’চোখ অন্যদিকে যায়।আপনার দু-চোখ আমি উপরে ফেলে দিব।আমাকে দেখে যতটা ভালো মেয়ে মনে হয়।আমি কিন্তু এতটা ভালো মেয়ে নই।আমি নিজের ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রে খুব স্বার্থপর।যেটা আমার সেটা শুধুই আমার।এক বিন্দু যদি অন্য কারো হয়।তাহলে তাকে আমার লাগবে না।

–গাল ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি কি সাংঘাতিক বউ আমার।ঘরে সুন্দরী বউ রেখে কেউ অন্য মেয়েদে’র দিকে তাকায়।আমি ভাই কালো মানুষ।তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে আমাকে বিয়ে করেছে।এটাই আমার কাছে অনেক।এখন তুমি কিভাবে ভালো থাকবে।তোমাকে কিভাবে ভালো রাখা যায়।এসব ভাবতে হবে।বাহিরের কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই।তুমি কথা দিয়েছিলে ছবি তুলবে।

দু’জন মিলে অনেক গুলো ছবি তুললো।তানহা মুখ ধুইয়ে এসে শুইয়ে পড়ল।ইফাদ ফ্লোরে শুইয়ে পড়ল।তানহা মনযোগ সহকারে ফোন দেখছে।তানহার ফ্রেন্ড লিস্টে ইফাদ ছাড়া কেউ নেই।ইফাদ নিজের আইডির সাথে তানহার আইডি ট্যাগ করে ম্যারিড স্ট্যাটাস দিয়েছে।তানহার আইডিতে কোনো লাইক কমেন্ট না পড়লেও ইফাদের আইডিতে পড়তে শুরু করেছে।সবাই ইফাদ আর তানহাকে শুভকামনা জানালো।

–তানহা’!

–বলেন।

–আজকে তুমি নিচে ঘুমাবে।দিন দিন শীত প্রচুর বাড়ছে।ফ্লোরে ঘুমানো কষ্টকর হয়ে গিয়েছে।

–আমি কেনো নিচে ঘুমোতে যাব।আমার এত কিসের দুঃখ জেগেছে মনে।

–একদিন তুমি ফ্লোরে ঘুমাবে একদিন আমি ঘুমাবো।

–আমি এত মহান নই।পারবো না ফ্লোরে ঘুমোতে।আপনি আপনার ঘরবাড়ি ভেঙে বিছানায় চলে আসুন।

–না’।

–কেনো আমার গায়ে কি’ চুলকানি আছে।আমার সাথে ঘুমালে তা’ আপনার শরীরে প্রবেশ করবে।

–আমার মেয়ে মানুষের সাথে ঘুমোতে শরম করে।

–প্রথম দিন এসে ঘুমিয়ে ছিলেন।তখন শরম করেছিল না।অন্ধকারের মধ্যে টেনে ধরে ছিলেন।তখন শরম করেছিল না।

–এভাবে বলছো কেনো?একটা বার ভেবে দেখো?আমি কতদূর জার্নি করে আসছিলাম।আমার একটু ঘুমের দরকার ছিল।আমার চারিদিকে কোনো খেয়াল ছিল না।সাত-পাঁচ না ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছি।

–এখন-ও সাত-পাঁচ না ভেবে উঠে এসে বিছানায় ঘুমান।

–আমার কিন্তু ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরার অভ্যাস আছে।

–কেউ যদি ঘুমের মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমি কিছু মনে করবো না।

–কিন্তু আমার শরম করে।

–আল্লাহ তুমি আমাকে কার পাল্লায় ফেলে দিলে।এই ছেলের কথায় কথায় শরম করে।এত যখন শরম করে নিচেই ঘুমিয়ে পড়ুন।আর একটা কথা বললে,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।বলেই তানহা অন্য দিকে ঘুরে শুইয়ে পড়ল।

ইফাদ গভীর ভাবে চিন্তায় মগ্ন হলো।এভাবে ত্রিশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেলো।ইফাদ আবার বলে উঠলো।

–এই তানহা বিছানায় আসি।

–না।

–কেনো?

–আসতে দিতে পারি।কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

–আপনি নামাজ পড়েন না।বিষয়টা আমার একদম ভালো লাগে না।আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।আপনি আমাকে কথা দিন।ভোর থেকে আমার সাথে নামাজ পড়বেন।

–আচ্ছা এই ব্যাপার বউ তুমি আমাকে আদর করে ডেকে দিবে।আমি উঠে নামাজ পড়তে যাব।বউ হয়েছো এতটুকু জানো না।সকালে স্বামীকে ভালোবাসে ভুলিয়ে ভালিয়ে বুঝিয়ে ঘুম থেকে তুলতে হয়।

–অবশ্যই তা’ আবার বলতে হবে জামাই জান।আপনার জন্য সকালে’র ঠান্ডা পানি আমি রেডি করে রাখবো।

ইফাদ মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে ফেললো।

–এই তোমার ভালোবাসা।

–আপনি নামাজ পড়বেন না।আর আমি আপনাকে ভালোবাসবো কখনোই না।যদি নামাজ পড়েন।তাহলে ভালোবাসবো এর আগে না।

–বললাম তো’ নামাজ পড়বো।আমি এখন ওপরে আসতে পারবো।

–আসুন।

ইফাদ নিজের ফ্লোরের সংসার ভেঙে সবকিছু নিয়ে,তানহার সংসারের দিকে এগোতে লাগলো।বিছানায় শুইয়ে কম্বলের মধ্যে ঢুকে গেলো।

–এত কিনারে শুইয়েছেন কেনো?পড়ে যাবেন।একটু এগিয়ে আসুন।তানহার কথায় ইফাদ একটু সাহস পেলো।একটু এগিয়ে গেলো।তানহা নিজের ফোনে ব্যস্ত।ফোন ব্যবহার করা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।ইফাদ রেগে বলল।

–তানহা তোমার ফোন ব্যবহার করা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।ফোন রেখে চুপচাপ ঘুমাও।ঘড়িতে দেখেছো কয়টা বাজে।

–একটা বাজতে যাচ্ছে আর একটু দেখেই ঘুমিয়ে যাব।

–অন্যদিন এগারোটার সময় ঘুমিয়ে যাও।একটা বাজতে যাচ্ছে।এখনো তাকিয়ে আছো।ফোন কিন্তু ভেঙে ফেলবো।

তানহা মন খারাপ করে ফোন রেখে দিল।ফোন বালিশের নিচে রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।মনটা ফোন ফোন করছে তানহার।ইফাদের ভয়ে নিতেও পারছে না।কিছু সময় অতি বাহিত হবার পরে দুজনেই ঘুমিয়ে গেলো’।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here