এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব -৩৭+৩৮

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৩৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চারিদিকে গানের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।পাড়ার সবাই মিলে,পিকনিক করছে।সেখান থেকেই আওয়াজ আসছে।তানহা আর চৈতালি চুলায় আগুন ধরানো নিয়ে ব্যস্ত।

–ভাবি তাড়াতাড়ি চুড়িগুলো খুলে ফেলো।ভাইয়া দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।আমার সাথে তোমাকে-ও বকা দিবে।

–আমি উনাকে ভয় পাই নাকি।আমি কিছুতেই চুড়ি খুলবো না।উনি আমার সাথে এত বড় ফাজলামি কিভাবে করলেন,আমি যেটা পছন্দ করি না।উনি সেটাই করেছেন।এবার উনি যেটা পছন্দ করে না।আমি সেটাই বেশি করে করবো।কথা বলবো না ওনার সাথে?

–তোমার বর তুমি যা খুশি করো।আমার ভাই,আমাকে তেলে ভাজবে বলেছে।আমি ভাইয়াকে প্রচুর ভয় পাই।তুমি চুড়ি গুলো খুলো।বলেই তানহার হাত থেকে চুড়ি গুলো খুলে নিল।নিজের হাতের চুড়ি গুলো-ও খুলে নিল।ছাদের এক কোণে চুড়ি গুলো লুকিয়ে রাখলো।

রোকেয়া বেগম ছাদে আসলেন।তানহা আর চৈতালিকে একা একা কাজ করতে দেখে বলল।

–সাহায্য লাগলে আমাকে বলো।

–আম্মা আপনি হাঁটুর ব্যথা নিয়ে ওপরে আসলেন কেনো?আপনার কোনো কিছুর দরকার পড়লে,
আমাদের বলতে পারতেন।

–আমার মেয়েরা একদিন শখ করছে।আমি’ও তাদের আনন্দে ভাগ বসাতে চাই।আমি বয়সে বুড়ো হয়ে গেছি।আমার মনটা তো’ আর বুড়ো হয় নাই।মন তো’ অনেক কিছুই করতে বলে,লোক লজ্জার ভয়ে কিছু বলি না।আজকে আমি’ও তোমাদের সাথে ছাদে রান্না করবো।রাত জেগে আড্ডা দিব।আমার ছোট বেলার গল্প শোনাবো।তানহা নিচে এসে,চেয়ার নিয়ে ওপরে চলে আসলো।রোকেয়া বেগম’কে বসতে বলল।রোকেয়া বেগম চেয়ার টেনে বসেলেন।ইফাদ ফ্রেশ হয়ে ছাদে আসলো।

–আম্মু তোমরা সবাই ছাদে কি করছো?

–হাওয়া খাচ্ছি।তুই খাবি?

–ছাদে রান্না করবে।এসব বাজে বুদ্ধি কার,অসাবধানতা বসত যদি আগুন গেলে যায়।

–পৃথিবীতে কেউ রান্না করে খাচ্ছে না।তোমার বউ রান্না করতে এসেছে,তাই আগুন নিজ থেকে তোমার বউয়ের শরীরে গেলে যাবে।ইফাদ গম্ভীর মুখ করে চৈতালির দিকে তাকালো।চৈতালি মাথা নিচু করে ফেলল।

–সবকিছু নিয়ে নিচে চল।যা’ করার নিচে গিয়ে করবি।

–এমন করছো কেনো ভাইয়া।একটা দিনই তো’।ভাবি ভাইয়াকে কিছু বলো না।

–বাজে কথায় কান দিও না।আমাকে কয়টা পেঁয়াজ কেটে দাও।কথা বলে অযথা সময় নষ্ট করো না।

–তানহা সবকিছু নিয়ে,জেদ করতে নেই।তোমাদের পিকনিক করতে হলে,নিচে গিয়ে করো।

–তোমার এত দরদ লাগলে,তুমি ভাবির হয়ে রান্না করে দাও।

–দরকার পড়লে,আমিই রান্না করবো।শাড়ি পড়ে রান্না করতে হবে না।রাত করে চুল খোলা রাখছিস কেনো?দু’জনেই চুলগুলো হাত খোপা করে ফেল।

–তানহা মা উঠে এসো।একটা কাজে-ও ওকে সাহায্য করবে না।কত বড় বড় কথা হয়েছে।নিজেই রান্না করুক।তানহা চুপচাপ উঠে এসে শাশুড়ীর পাশে গিয়ে বসলো।চৈতালি চুলগুলো হাত খোপা করে নিল।তানহা চুলগুলো খোপা করছে না দেখে,ইফাদ রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে,শাশুড়ীর পা টিপে দিতে লাগলো।

–আমাকে এসব বলে লাভ নেই।সৌদি আরবে থাকতে,
সারাদিন কাজ করে এসে,নিজের রান্না নিজেকে-ই করতে হয়েছে।বলেই রান্না করতে শুরু করলো।ইফাদকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,সে বেশ ক্লান্ত।পরিবারের মুখে হাসি তুলে দেওয়া’র জন্য,যত্ন সহকারে নিজের ঘুমকে আটকে রেখেছে।রান্না শেষ করে,খেয়ে নিচে চলে আসলো সবাই।ঘড়ির কাটায় রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই।তানহা আগেই চৈতালির রুমে এসে বসে আছে।

–ভাবি রুমে যাও।ভাইয়া তোমাকে ডাকছে।

–উনি আমার থেকে দূরে থাকতে চান।এখন পারলে একা থাকুক।আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।তোমার যদি সমস্যা হয়।তাহলে আম্মার সাথে ঘুমাবো।

–আমার কোনো সমস্যা নেই।ভাইয়া এসে তোমাকে নিয়ে গেলে,আমাকে দোষ দিতে পারবে না।তানহা কিছু বলল না।শুইয়ে পড়ল।ইফাদ তানহার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেল।জার্নি করার ফলে,শরীরটা বেশ খারাপ লাগছিল।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ধরা দিল।তানহা আর চৈতালি গল্প করতে করতে দু’জন ঘুমিয়ে গেল।

পরের দিন সকাল বেলা তানহা রান্না করছে।ইফাদ এসে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।তানহা মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে।নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।ইফাদ তানহার সাথে কথা বলার জন্য উসখুস করছে।ইফাদ কিছু বলতে যাবে,তার আগেই চৈতালি আসলো।

–ভাবি তাড়াতাড়ি খেতে দাও।আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।ভাইয়া তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো?তোমার কাজ নেই।চৈতালির কথার কোনো উওর দিল না ইফাদ।না খেয়েই চলে গেল।চৈতালি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

–উনি না খেয়ে চলে যাচ্ছেন।ডেকে নিয়ে আসো চৈতালি।

–তুমি ভাইয়ার সাথে এখনো কথা বলো নাই।

–এত কথা বলছো কেনো?উনি চলে যাবার পরে ডাকতে যাবে।তানহার কথা শুনে,দৌড়ে ভাইয়ের কাছে গেল চৈতালি।ইফাদ ধমকে চৈতালিকে তাড়িয়ে দিল।

–ভাইয়া খাবে না বলছে,আমাকে ধমক দিয়েছে।

–আচ্ছা তুমি বসো।আমি তোমাকে খাবার দিচ্ছি।বলেই চৈতালিকে খাবার দিল।সারাদিন পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো।ইফাদ আর চৈতালি দু’জনেই একসাথে বাসায় ফিরলো।দু’জনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,তারা বেশ ক্লান্ত।ইফাদ ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল।সন্ধ্যার আজান কানে আসতেই ইফাদ মসজিদে চলে গেল।তানহা অজু করে এসে,নিজের রুমে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।নামাজ শেষ করে,রুমটা গুছিয়ে দিল।দুপুরে গোসল করার পরে মাথায় চিরুনি করা হয় নাই।ভেজা চুলগুলো বেঁধে রেখেছিল তানহা।চুলগুলো খুলে দিয়ে মাথায় চিরুনি করতে লাগলো।

–ভাইয়া টিন গুলো সরিয়ে দেন।এগুলোর আর প্রয়োজন নেই।রিয়াদ তুই চলে এসেছিস।

–আমি না এসে থাকতে পারি।আমার জন্য ভাবি তোর ওপরে রাগ করে আছে।আজকে ভাবির রাগ কমিয়ে দিয়ে,তারপরে যাব।এখন ভাবির চোখ বন্ধ করে নিয়ে আয়।ভাবির রিয়াকশন কেমন হয় দেখার জন্য মনটা উতলা হয়ে আছে।

–আম্মু আর চৈতালিকে-ও নিয়ে আসতে হবে।ওরা-ও আমার ওপরে রেগে আছে।আচ্ছা তুই রুমটা আরো সুন্দর করে গুছিয়ে দে।আমি ওদের নিয়ে আসছি।বলেই ইফাদ বাসার মধ্যে আসলো।চৈতালির রুমে আগে আসলো।তানহাকে দেখতে না পেয়ে বলল।

–তোর ভাবি কোথায় চৈতালি।

–ভাবি মনে হয় তোমার রুমে ভাইয়া।ইফাদ আর কোনো কথা বলল না।নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।তানহা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের সাথে যুদ্ধ করছে।তা-দেখে ইফাদ তানহার হাত থেকে চিরুনি কেঁড়ে নিয়ে,নিজে চিরুনি করে দিতে লাগলে,তানহা রুমে থেকে বেড়িয়ে আসতে লাগলো।ইফাদ তানহার হাত ধরে ফেলল।তানহা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে।ইফাদ তানহার হাত আরো শক্ত করে ধরলো।তানহা রেগে ইফাদের দিকে তাকালো।ইফাদ তানহাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসলো।তানহার মুখের সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল।

–এত রাগ কেনো তোমার?সারাদিন না খেয়ে আছি।একটা বার খাবার কথা বলতে পারতে।

তানহা ইফাদের কথা কোনো উওর করল না।আগের ন্যায় ইফাদের থেকে দূরে সরে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু ছেলে মানুষের শক্তির সাথে পেড়ে ওঠা এতই সহজ।নিজকে আর কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারছে না তানহা।অবাধ্য অশ্রুকণা গুলো চোখে এসে হানা দিচ্ছে,ধৈর্য হারা হয়ে বলল।

–আমাকে ছেড়ে দিন।একদম আমাকে স্পর্শ করবেন না।কেনো এসেছেন,নাটক করতে এসেছেন।আমাকে আপনার সস্তা মানুষ বলে মনে হয়।যখন ইচ্ছে হবে কাছে টেনে নিবেন।যখন ইচ্ছে হবে,ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে যাবেন।আমি আপনার কাছে থাকবো না।আপনি খুব বাজে লোক।আমি আপনার প্রয়োজন ছিলাম।কখনো প্রিয়জন ছিলাম না।এই বেলায় অবহেলা করে নেন।কারন পরের বেলায় আমি না-ও থাকতে পারি।

–তানহা একদম বাজে কথা বলবে না।আমাকে নিয়ে তোমার যত অভিযোগ আছে।একটা একটা করে অভিযোগ গুলো বলতে থাকো।সময়ের সাথে আমি সেগুলো পূর্ণ করে দিব।কিন্তু আমাকে একা করে দেওয়ার কথা বলো না তানহা।সময়টা তোমারই হোক,কিন্তু মৃত্যুটা আমার হোক।আমি বেঁচে থাকতে তোমার মৃত্যু সহ্য করতে পারবো না।আল্লাহ তায়ালা তোমার আগে যেনো আমাকে নিয়ে নেন।ইফাদের কথা শুনে তানহা রেগে ইফাদের কাছে থেকে সরে আসতে চাইলো।ইফাদ খুব শক্ত করে তানহাকে জড়িয়ে ধরলো।তানহা যতই ছুটবার চেষ্টা করছে।ইফাদ আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছে,ধস্তাধস্তি করতে করতে নিস্তেজ হয়ে ইফাদকে ধরেই হাউমাউ করে কান্না করে দিল তানহা।মেয়েটা পাহাড় সমান কষ্ট বুকে চেপে নিয়ে রাখে,কষ্ট গুলো হালকা করার জন্য হলে-ও কান্না করার দরকার।ইফাদ তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ পরে তানহার কান্নার গতিবেগ কমে আসলো।তানহার মুখটা ওপরে তুলে অশ্রুভেজা দুই নয়নে অধর ছুঁইয়ে দিল।দু-চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে,মাথায় চিরুনি করে দিয়ে,বিনুনি করে দিল।কান্না করে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলছে একদম।একটা কথা-ও বলছে না ইফাদের সাথে,ইফাদ তানহার দু-চোখ বেঁধে দিল।তানহা বারবার খোলার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু ইফাদের ধমকের কাছে দমে গেল।ইফাদ চৈতালি আর রোকেয়া’কে ডেকে নিয়ে বাহিরে গেল।

–রাত করে বাহিরে আসলি কেনো?

–ভাইয়া আমরা কোথায় যাব?তুমি ভাবির চোখ বন্ধ করে রেখেছো কেনো?

–এত কথা বলিস কেনো?সামনের দিকে তাকা।চৈতালি সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।

–ওয়াও ভাইয়া।এসব তুমি কবে করলে,আমি তো খেয়ালই করি নাই।এই জায়গা টুকু টিন দিয়ে ঘেরা ছিল না।

–খুব সুন্দর হয়েছে ইফাদ।এত সুন্দর বুদ্ধি তোকে কে দিয়েছে।

–আমি ছাড়া কে দিতে পারে।বলল রিয়াদ।

–একদম মিথ্যা কথা বলবি না।বুদ্ধিটা আমার রুমটা তুলতে তুই সাহায্য করেছিস।

তানহা কি হচ্ছে জানার জন্য উসখুস করছে।চোখের বাঁধন খুলতে গিয়ে-ও ব্যর্থ হচ্ছে,কারন ইফাদ দু-চোখ ধরে রেখেছে।তানহাকে একটু এগিয়ে নিয়ে গেল।তারপরে চোখের বাঁধন খুলে দিল।এতক্ষণ চোখ বেঁধে রাখার কারেন সবকিছু ঝাপসা দেখতে পাচ্ছে তানহা।বেশ কিছুক্ষণ সময় নিল।সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল।চোখ গুলো গোল গোল করে তাকিয়ে আছে।

–এটা আমার?অবাক হয়ে প্রশ্ন করল তানহা।

–না আমার বউয়ের পছন্দ হয়েছে।

–তুমি এসব কবে করলে,তুমি না বলেছিলে,সামনের জমিটুকু কাকে যেনো থাকার জন্য দিয়েছো।তাহলে তানহা লেডিস কর্নার আসলো কোথায় থেকে।

–এই জন্যই বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি সব সময় হাঁটুর নিচে থাকে।কেউ সারপ্রাইজ দেওয়ার আগে বলে,যে আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিব।তানহা ইফাদের কথা কান না দিয়ে,সামনের ছোট্ট দোকানটার দিকে তাকিয়ে আছে।দোকানের ওপরে বড় বড় করে লেখা তানহা লেডিস কর্ণার।ভেতরে মেয়েদের নানান রকমের বাহারি পোশাক সাজানো।মেয়েদের সাজসজ্জার জন্য গহনা-ও রয়েছে।ইফাদ তানহার হাতে দোকানের চাবি দিয়ে বলল।

–এই নেন ম্যাডাম আপনার দোকানের চাবি।আপনার জিনিস আপনার হাতে তুলে দিলাম।এখন আমার দায়িত্ব শেষ।তানহা দরজা খুলে রুমের মধ্যে প্রবেশ করল।তানহার সাথে সবাই মিলে প্রবেশ করল।তানহা খুশি হয়ে সবকিছু দেখছে।চৈতালি জামাকাপড় গুলো নেড়েচেড়ে দেখছে।রোকেয়া বেগম সবকিছু মুগ্ধ নয়নে পর্যবেক্ষণ করছে।ইফাদ তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা মুখের ভাব এমন করেছে,মনে হয় বিশাল কিছু পেয়েছে।তানহার হাসি মুখখানা দেখে ইফাদের মনে হচ্ছে,তার কষ্টগুলো স্বার্থক হয়েছে।

–ভাইয়া আমি এই ড্রেসটা নিব।তোমার বউকে বলবে,
যেনো আমার থেকে কম করে দাম ধরে।আমি গরিব মানুষ আমার এত টাকা নেই।চৈতালির কথা শুনে,সবাই হেসে দিল।

চলবে…..

(কি লেখছি নিজে-ও জানি না।আজকে জোর করে-ও গল্প লিখায় মন বাসাতে পারি নাই।ভুল ত্রুটি গুলো মার্জনা করবেন।)#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৩৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

দোকান বন্ধ করে সবাই বাসায় চলে আসলো।রাতে একসাথে খেয়ে যে,যার রুমে চলে গেল।তানহা চৈতালির রুমে গিয়ে বসে আছে।চৈতালি তানহা’কে বসে থাকতে দেখে বলল।

–আজকে আবার আমার রুমে কি চাই।ভাইয়া অনেকক্ষন আগে,তোমাকে ডেকেছে,যাচ্ছো না কেনো?

–উনি ডাকলে-ই আমাকে যেতে হবে।আমি’ও উনাকে যেতে নিষেধ করে ছিলাম।তবু-ও উনি আমাকে রেখে চলে গিয়েছিল।

–তোমাকে ছাড়া ভাইয়া-ও ভালো ছিল না।তোমার ইচ্ছে পূর্ণ করার জন্যই কত কষ্ট করল ভাইয়া।তোমার না ইচ্ছে ছিল।তুমি নিজ পায়ে দাঁড়াবে।কারো ওপরে নির্ভরশীল হবে না।ভাইয়া কিন্তু তোমাকে সুযোগ করে দিয়েছে।নিজের মনের মতো মানুষ পেতে হলে-ও ভাগ্য লাগে ভাবি।যা তুমি পেয়েছো।এখন থেকে তুমি কামাই করবে,আমার ভাইয়া বসে বসে খাবে।

–আমি পারবো না।তুমি আর তোমার ভাইয়া কামাই করছো।এতেই আমার হয়ে যাবে।তোমরা কামাই করবে আমি বসে বসে খাব।

–তাহলে ভাইয়াকে বলবো দোকানটা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে?

–আমার দোকান তুমি কেনো অন্য কাউকে দিয়ে দিবে।তোমার সাহস তো’ কম না।তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলো।চৈতালি কিছু বলতে যাবে।তার আগেই ইফাদ এসে বলল।

–চৈতালি একটু বাহিরে যা’।তানহার সাথে আমার কথা আছে।

–যা বলার চৈতালির সামনে বলতে হবে।ইফাদ গম্ভীর মুখ করে চৈতালির দিকে তাকালো।চৈতালি চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।তানহা বিছানায় বসে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ শান্ত কণ্ঠে বলল।

–আমাদের রুমে এসো তানহা।

–আমি যাব না।আমার কথার কোনো মূল্য পাই নাই।আমি’ও কারো কথার মূল্য দিব না।আমাকে তোমার পাগল মনে হয়।

–না আমার বউজান মনে হয়।উঠে আসবে নাকি আমি আসবো।তানহা ইফাদের কথার উত্তর দিল না।তানহা কম্বল মেলে দিয়ে শুইয়ে পড়তে যাবে,তখন-ই ইফাদ এসে তানহা’কে কোলে তুলে নিল।তানহা চোখ বড় বড় করে ইফাদের দিকে তাকালো।

–এটা কেমন ধরনের অসভ্যতামি।ইফাদ তানহার কথার কোনো উওর দিল না।চুপচাপ নিজের রুমে নিয়ে চলে আসলো।চৈতালি ভাইয়ের কান্ড দেখে হেসে দিল।

চৈতালি রুমে এসে ফোন হাতে নিল।ফেসবুক ঢুকতেই চোখে গুলো গোল গোল হয়ে আসলো।ফাইয়াজ তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছে।অনেক দিন মানুষটার সাথে দেখা হয় না।কোনো দরকারে নিশ্চয়ই রিকুয়েষ্ট দিয়েছে।না হলে এই সাদা বিড়ালটা কাউকে রিকুয়েষ্ট দেওয়ার মতো মানুষ না।চৈতালি রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করল।ফাইয়াজ অনলাইনে-ই আছে।চৈতালি ফাইয়াজের ইনবক্সে চেক করছে বারবার।ফলাফল শূন্য।ফাইয়াজ তাকে কোনো মেসেজ-ই দেয় নাই।ফাইয়াজের আইডিতে জ্বলে থাকা সবুজ আলোর দিকে তাকিয়ে আছে চৈতালি।এমন সময় একটা নোটিফিকেশন আসলো।চৈতালি দ্রুত নোটিফিকেশনটা সিন করল।ফাইয়াজ চৈতালির একটা পোস্টে কমেন্ট করেছে।চৈতালি পোস্ট ছিল।

“সঙ্গী যদি স্বস্তি না দেয়।তবে সঙ্গীহীন থাকাটাই শ্রেয়। ভালোবাসা যদি ভালো থাকাটাই কেড়ে নেয়।তবে এমন ভালোবাসার চেয়ে আস্ত একটা জীবন একা কাটিয়ে দেওয়াই ভালো”।

চৈতালি এই পোস্টে ফাইয়াজ কমেন্ট করেছে।

“সব পুরুষ তোমার অতীতের মতো নয়”।

চৈতালি কি উত্তর দিবে ভেবে পেল না।তাই কোনো উওর করলো না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বই হাতে নিয়ে পড়তে বসলো।

–সমস্যা কি?

–তোমার সমস্যা কি?চৈতালির রুমে গিয়ে বসে আছো কেনো?তোমাকে সবকিছু বললাম-ই তো’ তবু-ও কেনো রাগ করছো?থাকতে মূল্য বুঝবে না।হারিয়ে গেলে ঠিকি খুঁজবে।

–কার সাথে হারিয়ে যাবে।এই কয়দিনে নতুন কাউকে ভালো লেগে গেছে বুঝি।এখন আমাকে আর ভালো লাগছে না।

–ইসস তুমি এমন করে কথা বলছো কেনো?তুমি জানো?তুমি রাগলে তোমাকে কতটা কিউট লাগে।একদম চকলেটের মতো কিউট লাগে।

–অসভ্য।

–অসভ্যের বউ।

–থাকবো না তোমার কাছে,আমাকে রেখে যেখানে গিয়েছিলে,সেখানে যাও।

–পারলে আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে দেখাও।হাত-পা ভেঙে আমার কাছে রেখে দিব।কোথায় এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিলাম।আমাকে ভালোবাসে দিবে।তা-না করে মহারানী রাগ দেখাচ্ছেন।

–তুমি জানো আমার কি অবস্থা হয়েছিল।তুমি দূরে ছিলে,ভালো ছিল।তবু-ও নিজেই নিজেকে বুঝিয়ে রাখতে পারতাম।এখন তোমার প্রতি ভালোবাসাটা দিগুণ বেড়ে গিয়েছে।চাইলে-ও নিজের মন’কে বুঝ দিতে পারি না।জানো আমার অনেক কষ্ট হয়।

–আমার বউজানটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।এই যে,প্রমিস করলাম।তোমাকে আর কখনো কষ্ট দিব না।যতটা কষ্ট দিয়েছি।তার থেকে দিগুণ ভালোবাসে পুষিয়ে দিব।চলবে তো’ বউজান।তানহা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।

–আসলে এত দেরি হতো না।আমরা যেসব জিনিসের অর্ডার করে ছিলাম।দোকানদার ভুল করে অন্য জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে।সেজন্য আবার যেতে হয়েছে।রিয়াদের একটা কাজ ছিল।সেজন্য আরো দেরি হয়েছে।তুমি বলেছিলে,তুমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সফল হয়ে চাও।রোজগার করতে চাও।আমার বউজান আমাকে তার ইচ্ছের কথা বলেছে।আমি আমার বউজানের ইচ্ছে পূর্ণ করে দিব না।তাই কখনো হয়।সেজন্য আমি তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছি।আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক করেছি।তোমাকে ছেলেদের মধ্যে গিয়ে কাজ করতে দিতে পারবো না।তাই এই ব্যবস্থা করা।এখানে তুমি নিজে-ও সফল হতে পারবে।আর ছেলেরা-ও আসতে পারবে না।তোমার ইচ্ছে-ও পূর্ণ হলো,আর আমার ইচ্ছে-ও পূর্ণ হলো।বলেই তানহার কোলে শুইয়ে পড়ল।

–আমাকে যে,কষ্ট দিয়েছো?সেগুলো ফিরিয়ে দাও।

–আমি তোমাকে ফোন দিয়ে ছিলাম।তুমি ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেনো?

–তুমি ফোনের জন্য কষ্ট পেয়েছিলে,তাই রাগ করে ফোন ভেঙে ফেলছি।কিন্তু তোমাকে ফোন দিয়ে ছিলাম।তুমি কল রিসিভ করো নাই।

–ভালো হয়েছে।এবার নিজে কামাই করে ফোন ঠিক করবে।তুমি ভালো করেই জানো,কোনো অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলে,আমি রিসিভ করি না।তানহা ইফাদের চুল ধরে টেনে তুলল।

–এভাবে কেউ চুল টেনে ধরে।লাগে না।

–তোমার লাগলে আমি কি করবো?

–আমার লাগলে তোমার কিছু করতে হবে না।যা করার আমি করবো।তানহা উঠে চলে আসতে লাগলে,ইফাদ তানহা’কে ধরে ফেলল।রুমের লাইট অফ করে দিল।তানহা’কে কোলে তুলে নিল।অতঃপর আরো একটি রাত সাক্ষী হলো তাদের মধুচন্দ্রিমার।

পরের দিন সকাল বেলা স্রুতি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে।স্রতিকে দেখে স্রুতির বাবা বলল।

–বিকেলে তোমাকে দেখতে আসবে।তুমি তৈরি থেকো?আজকে বাসা থেকে বের হবার দরকার নেই।

–বাবা তুমি ভালো করেই জানো?আমি ইফাদ’কে ভালোবাসি।আমি ইফাদ’কে ছাড়া অন্য কাউ’কে বিয়ে করতে পারবো না।

–তুমি এমন একটা ছেলেকে ভালোবাসো।যার সাথে তোমার কোনো যোগাযোগ নেই।বাসায় কোথায় জানো না।তার সম্পর্কে কিছুই বলতে পারো না।তুমি বড় হয়েছো।আর কতদিন বাসায় বসিয়ে রাখবো।আজ আমরা আছি।কাল আমরা না-ও থাকতে পারি।তোমার আর অনির ভবিষ্যতে কি হবে?তোমাকে আর অনিকে বিয়ে দিয়ে,আমি নিশ্চিন্ত হতে চাই।তোমার জন্য অনিকে বিয়ে দিতে পারছি না।

–আমি ইফাদের খবর পেয়েছি।আজকে ইফাদের বাসায় যাব।তাকে সাথে নিয়ে তোমার সামনে আসবো।

–বেশ তবে তাই হোক,আজকে তুমি ইফাদ’কে না নিয়ে আসতে পারলে,তোমাকে আমার পছন্দ করা ছেলেকে-ই বিয়ে করতে হবে।রাজি তুমি?

–আমি রাজি বাবা।

–আচ্ছা আবির ইফাদ তানহার স্বামীর নাম না।স্রুতি কোন ইফাদের কথা বলছে?

–আপু আমি যেই ইফাদের কথা বলছি।সেই ইফাদ বিবাহিত না।

–তুই চুপ কর।আজকালকার ছেলেদের’কে তুই কতটুকু চিনিস।তাছাড়া ইফাদের সাথে তোর কোনো যোগাযোগ হতে দেখিনি।এভাবে একতরফা ভালোবাসলে হবে না।বিপরীত পক্ষের মানুষটাকে-ও ভালোবাসতে হয়।তবেই না সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত যাবে।আমার কেমন জানি লাগছে।আবির তুমি আমার স্রুতির মাথাটা খাও নাই তো’।

–আপু তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আমি ইফাদ’কে কত আগে থেকে ভালোবাসি।এখানে দুলাভাই আসলো কোথায় থেকে?আমি আসছি,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।বলেই স্রুতি চলে গেল।

–আপু একটা কথা বলবো।বলল অনি।অনির কথা শুনে প্রিয়া বিরক্ত হয়ে বলল।

–তুই আবার কি বলবি।তোর-ও আবার কাউকে পছন্দ আছে নাকি?

–না আপু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড চৈতালি আছে না।চৈতালির ভাইয়ের নাম-ও ইফাদ।আমি চৈতালি’কে ফোন করে জেনে নিব।স্রতি আপু ওদের ওখানে গিয়েছে কি না।

–তুই আমাকে চৈতালির কথা বলেছিলি ঐ চৈতালি নাকি,যে আবিরের সাথে মেলায় গিয়েছিল।

–হ্যাঁ আমি ঐ চৈতালির কথাই বলছি।

–ভালো হয়েছে।চৈতালি আমার বরের পেছনে ঘুরছে।এখন আমার বোন ওর ভাইয়ের পিছনে ঘুরছে।

–আপু চৈতালি ভাই সত্যি বিবাহিত।ইফাদ ভাইয়ার বউটা খুব সুন্দর।ব্যবহার-ও অনেক ভালো।চৈতালি একদিন কলেজে নিয়ে আসছিল।

–কি বলসি।তাহলে স্রুতিকে তো’ ইফাদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার কিছুতেই ভাঙতে দিব না।

–তুমি না বললে-ও স্রুতি আপু।চৈতালির ভাইয়ের সংসার ভাঙতে পারবে না।চৈতালি ভাই খুব সিরিয়াস একটা মানুষ।সেজন্য আপুকে পাত্তা দেয় নাই।বিদেশে থাকতে আপুকে বলেছিল,সে নাকি বিবাহিত।কিন্তু আপু বিশ্বাস করে নাই।অনির কথা শুনে,প্রিয়ার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে গেল।

ইফাদ নিজের রুমে তৈরি হচ্ছে,তানহা রান্না ঘরে কাজ করছে।হঠাৎ করে দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।তানহা দরজা খুলে দিতেই সালোয়ার কামিজ পড়া একটা মেয়েকে দেখতে পেল।স্রুতি তানহা’কে প্রশ্ন করল।

–ইফাদ আছে?

–জ্বী আছে,কিন্তু আপনি কে?ইফাদ’কে দিকে আপনার কি কাজ?

–বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখে কথা বলবে।নাকি বাসার মধ্যে প্রবেশ করতে দিবে?

–তানহা সরে দাঁড়ালো।স্রুতি ড্রয়িং রুমে আসলো।তানহা একটা চেয়ার এনে দিল।স্রুতি বসতে বসতে বলল।

–আমি ভুল না হলে,তুমি ইফাদের বোন চৈতালি তাই না।তানহা স্রুতির কথা শুনে,গোল বড় বড় করে তাকালো।ড্রয়িং রুমে কথার আওয়াজ পেয়ে,ইফাদ রুম থেকে বেড়িয়ে এসে বলল।

–কার সাথে কথা বলছো তানহা?দু’জনের দৃষ্টি ইফাদে’র দিকে বিদ্যমান।ইফাদ ভ্রু কুঁচকে স্রুতির দিকে তাকালো।তানহা ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে।হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।স্রুতি ইফাদ’কে দেখে খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।স্রুতির মুখ দেখে মনে হচ্ছে,বহু সাধনা করার পরে,তার প্রিয় জিনিসটা হাতে পেয়েছে।স্রুতি দৌড়ে ইফাদের দিকে এগিয়ে আসলো।স্রুতি’কে এগিয়ে আসতে দেখে ইফাদ সরে দাঁড়ালো।স্রুতির মাথা সোজা গিয়ে দেওয়ালে’র সাথে বাড়ি খেলো।স্রুতি ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠলো।অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকালো।

–এতগুলো দিন পরে আমাদের দেখা হলো,আজকে-ও তুমি আমাকে অবহেলা করবে।এভাবে সরে না গেলে-ও পারতে।

–আজব তো’ আপনি কে?এভাবে নির্লজ্জের মতো অন্যের স্বামীর ওপরে ঝাপিয়ে পড়ছেন কেনো?ইফাদ মেয়েটা কে?

–অন্যের স্বামী মানে,ইফাদ আমার স্বামী।ইফাদ’কে আমি বিয়ে করবো।আমি ছাড়া ইফাদ অন্য কারো হতে পারে না।এতগুলো বছর ধরে এমনি এমনি ইফাদের পেছনে পড়ে নাই।সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য ইফাদে’র আশায় বসে আছি।তুমি জনো না তোমার ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে,আমরা দু’জন দু’জনকে অনেক ভালোবাসি।তোমার ভাইয়া বাসায় কিছু বলে নাই।

–স্রুতি তোমার কোথা-ও ভুল হচ্ছে,তানহা আমার বোন নয়।তানহা আমার স্ত্রী।তানহার সাথে কথা বলতে হলে,নিম্ন স্বরে বলবে।আমার সামনে অনন্ত তানহার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলতে পারবে না।কি সব পাগলামি শুরু করে দিয়েছো।তুমি আমার বাসার ঠিকানা জানলে কি করে?স্রুতি ইফাদের কথা শুনে দু’পা পিছিয়ে গেল।মনে হচ্ছে,বিশাল আকাশটা তার মাথার ওপরে এসে পড়েছে।চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে আসছে।রেগে ইফাদের কলার চেপে ধরলো।

–তুমি আমার সাথে মজা করছো?তুমি জানো না।আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।তুমি আমাকে রেখে কিভাবে অন্য একটা মেয়ে’কে বিয়ে করতে পারো।ইফাদ নিজের থেকে স্রুতিকে ছাড়িয়ে দিল।খুব শান্ত কণ্ঠে বলল।

–দেখো স্রুতি আমি তোমাকে বলেছিলাম।আমি বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছিলাম।তুমি আমার কথা মেনে নিতে পারোনি।সেটা তোমার ব্যর্থতা।এভাবে যখন-তখন আমার কাছে আসবে না।আমি এসব একদম পছন্দ করি না।আর আমি তোমাকে ভালোবাসি না।তোমাকে কখনো বলেছি,আমি তোমাকে ভালোবাসি।অযথা ভিত্তিহীন কথা বলবে না।

–কেনো তোমার কাছে আসবো না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমার ওপরে শুধু আমার অধিকার আছে।আমার যখন ইচ্ছে তখন তোমার কাছে আসবো।তানহা নিরব দর্শকের মতো সবকিছু দেখছিল।কিন্তু শ্রুতির বারবার ইফাদের কাছে যাওয়াটা একদম সহ্য হচ্ছে না।স্রুতি ইফাদের দিকে এগোতে যাবে।তখনই তানহা স্রুতিকে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

–তখন থেকে আপনার নাটক দেখছি।একটার পরে একটা বাজে কথা বলেই যাচ্ছেন।একটা মেয়ে কতটা নির্লজ্জ হলে,অন্যের স্বামী গায়ে পড়ে।আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না।আমি আমার স্বামীর বিষয়ে খুব সিরিয়াস।আমাকে রাগিয়ে দিয়েন না।আমি রেগে গেলে,আপনাকে খুন করতে-ও দু’বার ভাববো না।আমার বাসায় এসে,আমার সামনেই বলছে,আমার স্বামী ওপরে তার অধিকার বেশি।কত বড় দুঃসাহস।তানহা রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।রাগী চোখে বারবার ইফাদের দিকে তাকাচ্ছে।ইফাদ কিছু বলতে যাবে।তার আগেই তানহা স্রুতির ঘাড় ধরে দরজার দিকে এগোতে লাগলো।স্রুতিকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে বলল।অধিকার দেখাবি।আমার বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে দেখাবি।বলেই দরজা লাগিয়ে দিল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here