এক মুঠো গোলাপ পর্ব ৩০

এক মুঠো গোলাপ
sinin tasnim sara
৩০
_____
খুব তাড়াহুড়ো করে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হলো সুপ্তর। কবির সাহেব যথেষ্ট অসন্তুষ্ট এরকম তাড়াহুড়োর বিয়েতে। বড় মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার সুযোগ হয়নি। অনেক আত্মীয় স্বজন জানেই না রাফনিদ বিবাহিত। ছোটো মেয়েটারও একই অবস্থা, ব্যাপারটা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে বেচারার। ইচ্ছে ছিল বিশাল আয়োজন করে মেয়ে বিদায় করবে কিন্তু কই, পূরণ হচ্ছে কই সে ইচ্ছে ৷
বিশেষ আত্মীয় স্বজনকেই বলার সুযোগ নেই। হাতে গোণা দু একজন, যারা না-হলেই নয় তাদের ডাকা হয়েছে।
গতকাল সুপ্তর নানী আর মেজো মণির পরিবার এসেছে। বড় মণি সাফ সাফ মানা করে দিয়েছেন, এসব উল্টোপাল্টা প্রোগ্রামে আ্যাটেন্ড করার টাইম নেই তার। রইলো বাকি বড় মামা। উনি তো বিদেশে, হুটহাট আসতে পারছেন না। ছোটো মামা কে ইনভাইট করা হয়েছে কি-না, জানেনা সুপ্ত।
আপাতত ও বসে আছে বাসার ছাদে, নানী ওর গায়ে উপটান লাগিয়ে দিচ্ছেন। এটা লাগালে না-কি মেয়েরা সুন্দর হয়।
সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হবে কি-না জানেনা সুপ্ত, কিন্তু উপটান থেকে ভেসে আসা চন্দনের সুবাস ওর খুব ভালো লাগছে।
শরীরের উন্মুক্ত অংশগুলোতে উপটান লাগানো শেষ করে নানী সুপ্তকে খানিক বিরক্তিমাখা গলায় আদেশ করলেন_
— ছেমরি গেঞ্জিডা উপরে তুল তো। প্যাডে একটুখানি ডইলা দেই।
নানীর কথা শুনে বন্ধ চোখজোড়া আপনা থেকেই খুলে গেল সুপ্তর। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো_
— পেটে কেন?
— ক্যান আবার। প্যাড-কমর এইল্লা জায়গায় তো দাগের ছড়াছড়ি। জামাইরে চোখে ধান্দা লাগাবি কি দিয়া? খালি মুখখান ঠিক থাকলে হইবো? বাকিডি ঠিক রাখা লাগবো না!
— ধান্দা লাগাতে আলাদা করে যত্ন নিতে হবে কেন? আমি যা আছি তাতেই সে আমাকে একসেপ্ট করবে। যদি ভালোবেসে থাকে।
— ঐসব বড় বড় কতা উপন্যাসের বইয়ে ভাললাগে বুবু। বাস্তব জীবন এইরকম সুন্দর না।
— কে বলেছে সুন্দর না!
— আমার চুলে পাক ধরছে কি এম্নে?
ভ্রু কোঁচকালেন নানী। তা দেখে ঠোঁট চেপে হাসলো সুপ্ত। প্রসঙ্গ পাল্টাতে জিজ্ঞাসা করলো_
— তুমি উপন্যাস পড়তে বুবুনি?
— না বুবু। আমি তো অত পড়ালেহা জানি না। তবে তোর নানাভাই সবসময় বই নিয়ে বইসা থাকতেন। চাকরি থাকা অবস্থায় দিনে তো পারতেন না, রাইত জেগে বই পড়তেন। আর অবসর সময়ে লাইব্রেরি ছাড়া তারে ঘরমুখো করতে পারিনাই। কত খ্যাচ খ্যাচ করছি! উঁহু শোনে নাই। আমার রাগ দেইখা বরং হাসতো সে। বলতো, “চামেলি, বই হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার। জ্ঞানের পরিধি যত বিশাল হবে জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী ততই বদলাবে।”
লাইব্রেরি টা ছিলো তার কাছে শান্তির জায়গা। চারিদিকে বইয়ে ঠাঁসা আর মাঝখানে সে বইসা আছে। এমন দৃশ্য ভাবতেও তার ভালো লাগতো।
— নানাভাই তোমাকে বই পড়ে শোনাতো?
— হ। আমাদের নতুন নতুন সংসারে প্রতি রাতেই সে আমারে বই পড়ে শোনাতো। মনে কর একটা রুটিনই ছিলো এইরকম। আহা কি দিন পার করছি আমরা!
আমি যে স্বল্প শিক্ষিত। এইটা নিয়া সে কখনো কথা শোনায় নাই আমারে, বরং সবসময় জোর করছে পড়ালেহা শুরু করার জন্যে।
— তুমি পড়লে না কেন?
— মানা ছিলো শ্বাশুড়ি, ননদ আবার বাড়ি থেকে আমার আম্মা-ভাবী’র। সবাই শাঁসাইছিল,পড়লে সংসার করতে দিবে না। আমি তো ভীতু ছিলাম বুবু। তোর নানাভাই তখন শহরে থাকতেন। নতুন বউ আমি, গ্রামের বাড়িতে থাকি শ্বাশুড়ি ননদের সাথে।
একলা মানুষ সাধ্য আছে ঝগড়া করে পড়ালেহা চালায় যাওয়ার!
— তুমি শহরে চলে আসলে কবে?
— তোর বড় মামা হওয়ার পর। আসলে আইয়ুব সবসময় অসুস্থ থাকতো। প্যাডের মধ্যে পুষ্টি পায়নাই তো তাই। এদিকে গ্রামে ভালো ডাক্তার আছিলো না। এতদূর থেকে দৌড়ঝাঁপ কষ্টসাধ্য। তাই তোর নানাভাই সিদ্ধান্ত নিলো বাচ্চাসহ আমারে শহরে নিবে।
— তোমার শ্বাশুড়ি অমত করেনি?
— উঁহু । নাতির জীবনের ব্যাপার! তবে আমার ননদ অনেক বাঁধা দেবার চেষ্টা করছে। সে তো কবিরাজও ডেকে আনাইছিল চিকিৎসার জন্য। তবুও শহরে যাইতে দিবে না আমারে। পরে তোর নানাভাই রাগারাগি করলো ওর ছেলেমানুষী তে। ঝগড়া হইলো ভাইবোনের। তাকে নারাজ রেখেই আমরা চলে আসলাম।
— তোমার ননদ তো একদম লেডি হিটলার ছিলো। হুমমম এবার বুঝতে পেরেছি বড় মণি কার মত হয়েছে!
— কার মত?
— তোমার ননদের মত। লেডি হিটলারের ভাতিজি সেকেন্ড লেডি হিটলার।
হাসতে হাসতে বললো সুপ্ত। নানু ওর পিঠে আলতো চাপড় মেরে চোখ রাঙানোর চেষ্টা করে বললেন_
— চুপ ছেমড়ি। আমার মাইয়ারে হিটলার ডাকোস আমার সামনেই!
— আরে চোখ রাঙাও কেন। মনে মনে তুমিও জানো তোমার বড় মেয়ে তোমার ননদেরই জেরক্স কপি।
— একটু একটু স্বীকার করি।
ফিসফিসিয়ে বললেন সুপ্তর নানী। একযোগে হেসে উঠলো নানী-নাতনি।
,
খুব তাড়াহুড়ো করে হলুদ বাটছে রাফনিদ। সীমিত আকারে সুপ্তকে হলুদ ছোঁয়ানো’র সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিয়েশাদীর ব্যাপার, হলুদ না হলে হয়!
সুপ্তর বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে অনেকেই এসে পড়েছে ইতমধ্যে। তারা সবাই বাসা ডেকোরেট করতে ব্যস্ত।
ওদিকে সুপ্তকে ছাড়তেই চাচ্ছেন না চামেলি বেগম। আজ সকল প্রকার ঘষামাজার মাধ্যমে নাতনিকে চকচকে করে ক্ষ্যান্ত হবেন তিনি। নানুর অত্যাচারে বন্ধুদের সাথে বসে দুদণ্ড কথাও বলতে পারেনি সুপ্ত। মনে মনে সে ভীষণ বিরক্ত।
আরে নিদ্রর সাথেও তো কথা হয়নি! সীমিত আয়োজনে বিয়ে করেও যদি এত প্যারা খেতে হয় তাহলে হিউজ প্রোগ্রামে কি অবস্থা হবে। ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে সুপ্তর।
বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশ পানে তাকিয়ে মনে মনে প্রার্থনা করলো, “খোদা আমার জামাইটাকে একবার দেখার সুযোগ করে দাও প্লিইজ”
_______
আভাদের ফ্ল্যাটে উঠেছে অনিমা এবং নিদ্র। কিন্তু নিদ্রর মামা-মামীকে কোনোভাবেই রাখা সম্ভব হয়নি। ওনারা রংপুরেই একটা হোটেলে উঠেছেন।
নিদ্র জানতো মামা-মামী কখনোই এ বাসায় আসবেন না। বোনের সংসার যেখানে হয়নি, বোনের স্থানটা যেখানে অন্য কেউ দখল করে নিয়েছে সেখানটায় কোনো ভাইয়ের’ই রাত্রিযাপন সম্ভব নয়।
অনিমা’র অবশ্য এসবে কিছু যায় আসে না। সে প্রোগ্রেসিভ সমাজের রুলস ফলো করে চলে। ডিভোর্স হয়েছে বলে হাজবেন্ডের সাথে যোগাযোগ রাখা যাবে না কিংবা হাজবেন্ডের ফ্যামিলির সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না, এরকম মতবাদে সে বিশ্বাসী নয়।
হ্যাঁ ডিভোর্সের পর প্রথম কয়েকবছর সে একদমই যোগাযোগ রাখেনি নুহাশের সাথে তবে, নিদ্র’র কাস্টেডি নিয়ে যখন কোর্ট কাচারি হলো তারপর থেকেই নুহাশের সাথে টুকটাক যোগাযোগ রয়েছে তার। মজার ব্যাপার হলো নুহাশের দ্বিতীয় বিয়ের পেছনে কলকাঠি কিন্তু অনিমা’ই নেড়েছিল ।
অনিমার কাছে জীবনটা এক্সপেরিমেন্টাল। টক ঝাল মিষ্টি সব রকমেরই টেস্ট থাকা প্রয়োজন এতে।
বিয়ের তোড়জোড় এ বাসাতেও শুরু হয়েছে। নিদ্রর গায়ে হলুদ খানিক পরেই। নুহাশ প্রফুল্লচিত্তে কাজ করে বেড়াচ্ছেন। তার বর্তমান স্ত্রী, প্রাক্তন স্ত্রী’র কাজে হাত লাগাচ্ছেন।
যদিও ব্যাপারটা অদ্ভুত কিন্তু নুহাশের কাছে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে ।
অনিমার সাথে সম্পর্ক হবার পর থেকেই সকল অদ্ভুত ঘটনা সে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শিখে গেছে।
কষ্ট একটাই, ছেলেটা তার সাথে আজও কথা বলে না। শুরুতে নিদ্র এরকম ছিলো না। নিদ্রর কাস্টডি কিন্তু নুহাশই পেয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে বাকি জীবন কাটানোর ইচ্ছে ছিলো তার।
কিন্তু সেদিনের ঐ ঘটনা.. বাধ্য হয়ে বিয়েটা করার পর থেকে নিদ্রর সাথে তার দূরত্ব। নিদ্র কিছুতেই মানতে পারেনি বাবা-র পুনরায় বিয়ে।
সে ঐদিনই বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। একা একাই গিয়ে ওঠে মায়ের বাসায়।
ছেলেকে ফিরিয়ে নেবার মুখ ছিলো না নুহাশের। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা বলেছিল আইনি সহায়তা নিতে কিন্তু যার জন্য আইনি সহায়তা নিবে সে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে গিয়েছে। লড়বে কার জন্য!
নুহাশও আর কিছু বলেনি।
এই এতটা বছর নিদ্রকে একবার চোখের দেখাও দেখতে পারেনি। কতশত কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে রেখেছিল কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না।
চাপা কষ্ট এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে হার্ট আ্যাটাক করে বসলো।
তার অসুস্থতাই পুনরায় নিদ্রকে টেনে আনলো এদিকে।
আসার পর ভালোমন্দ দু’টো কথা হয়েছিল ঠিক, তা না হওয়ার শামিল। সুস্থ হবার পর আবারও কথা বন্ধ।
নুহাশ এখনো আশা করে কোনো মিরাকল হোক, ছেলেটা পুনরায় তাকে বাবা বলে ডাকুক।
কে জানে তার এই আশা পূরণ হবে কি না!
,
আসরের পর পরই দু বাড়িতে হলুদ প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেলো।
নিদ্রর পাঠানো বাসন্তী রঙা শাড়ি আর তাজা ফুলে সুপ্তকে সাজানো হলো।
নিদ্রর খুব ইচ্ছে ছিলো এই গেটআপে সুপ্তকে দেখবে। সরাসরি সুপ্তর সাথে কথা হওয়াটা অসম্ভব হয়ে উঠছিল, তাই শেষ পর্যন্ত আভাকে পাঠিয়ে দিলো এই বাসায়।
আভা’র ইচ্ছেও ছিলো কনে পক্ষে থাকার। সে নাচতে নাচতে বান্ধবীর বাসায় চলে আসলো।
এসেই ডিক্লেয়ার করে দিলো বর কনের হলুদ একসাথে হবে, ভিডিও কলে।
ছেলেমেয়েদের আবদার, অমত করার সুযোগ নেই।
ভিডিও কল হলেও মজা কিন্তু কম হলো না।
নিদ্র এক ফাঁকে সুপ্তকে বলে দিলো রাত অবধি যাতে এই গেটআপে থাকে। সে আসবে হবু বউকে হলুদ মাখাতে।
সুপ্ত লজ্জামাখা হাসিতে সম্মতি জানালো।
,
হলুদ শেষে ছাদে গোল করে বসে কনে’কে নিয়ে গল্প আড্ডায় মেতে উঠলো সব। মজার ব্যাপার তাদের মধ্যে ফাগুন’ও রয়েছে।
সুপ্ত’র একটুখানি অস্বস্তি হচ্ছিল ওর সামনে। বেশকিছুক্ষণ ধরেই লক্ষ করছিল ফাগুন।
ওর মনে হলো সুপ্তকে সহজ করা দরকার। তাই উঠে গিয়ে সুপ্তর দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকলো_
— মিসেস নিলাশ উড ইউ মাইন্ড, আমরা দু মিনিট আলাদা কথা বলতে পারি?
হঠাৎ ফাগুনের এমন প্রশ্নে কি বলবে ভেবে পেলো না সুপ্ত। অস্বাভাবিকভাবে ফাগুনের দিকে তাকালো।
ওপাশ থেকে জয় কৌতুকের সুরে বললো_
— ব্যাটা মানুষের বউ রে নিয়া আলাদা কথা আবার কি! যা কইবি এইখানে ক।
— আরে আমি কি মানুষের বউ কে নিয়ে ভেগে যাচ্ছি! জাস্ট দু মিনিট কথা বলবো।
হাসতে হাসতেই বললো ফাগুন।
সুপ্ত এবারে বন্ধুদের দিকে একবার, আভার দিকে একবার তাকালো প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে। আভা আলতো করে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
সুপ্ত ওঠবার মুহুর্তে জেরিনের দিকেও তাকাতে ভুললো না। ওর চোখেমুখেও হাসি লেপ্টানো। ব্যাপার কি! ওর জেলাস ফীল হচ্ছে না?
শাড়ি সামলে উঠে, ফাগুনের পিছু পিছু পা বাড়ালো সুপ্ত।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে ছাদের কিনারে এসে দাঁড়ালো। ফাগুন পানির ট্যাংকে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো এবং সুপ্ত কার্নিশ ধরে।
ফাগুন’ই প্রথমে বললো_
— তুমি কি সামহাউ আমার সামনে থাকতে অস্বস্তি বোধ করছো?
ফাগুনের সাবলীল প্রশ্নে আরো দমে গেল সুপ্ত। তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে পারলো না। ফাগুন মৃদু হেসে ওকে সহজ করবার জন্য বললো_
— আমি কিন্তু মুভ অন করেছি সুপ্ত। হ্যাঁ তোমার জায়গা আমার মনে এখনো রয়েছে। এখনো তোমায় ভুলতে পারবো না কিন্তু তোমাকে পাইনি বলে অভিযোগ নেই আমার।
ভালোবাসলে’ই পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভালোবাসা কে ভালো থাকতে দেখা, তার জন্য প্রার্থনা করাতেও অপার সুখ।
— আমার সবসময় গিল্ট ফীল হয়। তুমি আমার জন্যই আমাদের সবার থেকে দূরে সরে গিয়েছ, পরিবর্তন হয়েছ।
— কথাটা ভুল বলোনি। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি,বিপথে যাইনি। ক্যারিয়ার গড়ায় মন দিয়েছি। তোমাদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেবার কষ্টবোধটা আমার ভেতরে আছেই। আমি চেষ্টা করবো এরকমটা যাতে আর না হয়।
একটা নিউজ জানো?
ফাগুনের প্রশ্নে ওর দিকে তাকালো সুপ্ত।
— ভেরি রিসেন্টলি একজন আমাকে প্রপোজ করেছে। ভাবছি আ্যাকসেপ্ট করে ফেলবো। তুমি কি বলো?
— কে সে?
— তুমি তাকে চেনো।
— আমি চিনি!
ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেললো সুপ্ত। ফাগুনের ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে রয়েছে।
খানিক চিন্তা করতেই যেন বুঝে গেলো সুপ্ত। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে অদূরে বসে থাকা জেরিনের দিকে তাকিয়ে আবার ফাগুনের দিকে তাকালো।
— জেরিন?
মৃদু হেসে মাথা কাত করে সম্মতি দিলো ফাগুন।
— ওহ্ মাই গড! এতদিন পর?
বিস্ময়ে ছোটোখাটো চিৎকার’ই দিয়ে ফেললো সুপ্ত।
ফাগুন শব্দ করে হেসে ফেললো ওর কান্ডে। মুখ ঘুরিয়ে জেরিনের দিকে তাকিয়ে সুপ্তকে উদ্দেশ্য করে বললো_
— একটু বেশিই টাইম নিয়ে নিলো ম্যাডাম।
জেরিন বসে থেকেই বুঝতে পারলো ওকে নিয়ে কথা হচ্ছে। নিমেষেই একরাশ লজ্জা ভর করলো ওর চোখেমুখে।
সুপ্ত গালে হাত দিয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো_
— কংগ্রাচুলেশনস। জলদি আ্যাকসেপ্ট করে ফেলো। জলদি দাওয়াত চাই, নতুন জামাই নিয়ে তোমার বিয়েতে যাবো আমি।
— আচ্ছা । তুমি আসবে বলেই আমি বিয়ের কাজটা জলদি সেরে ফেলবো।
সুপ্তর দিকে তাকিয়ে বললো ফাগুন। সুপ্ত আর কিছু বলবে তার পূর্বেই হাতে থাকা সেলফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো। স্ক্রিনে নিদ্রর নাম ভেসে উঠতে দেখা গেলো। ফাগুনও ঐ মুহুর্তে তাকায় ফোনের দিকে ফলে তারও চোখে পড়ে যায়।
হালকা কেশে বলে, তুমি কথা বলো আমি আসছি?
সুপ্ত কেবল মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।
ফাগুন প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে চললো আড্ডার আসরে।
“মুভ অন” শব্দটা ভীষণ ভারি। এর ভার বহন করতে করতে কত কিছুই বিসর্জন দিতে হলো। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ফাগুনের ।
যেতে যেতেই পিছু মুড়ে তাকালো একবার। অন্ধকার ছাপিয়ে যে লাবণ্যময় সৌন্দর্যের অধিকারীনি জ্বলজ্বল করছে চোখের তারায়, সর্বস্ব তাকে দিয়ে বসে আছে। নিজের বলতে আজ কিছুই নেই ফাগুনের কাছে। ছিঁটেফোটা অনুভূতিও না।
এভাবে নতুন শুরু কি সম্ভব?
_____
নিদ্র আসার পর আভাকে টেক্সট করে দেয় সবাইকে নিয়ে নিচে যেতে। ও আসছে দেখা করতে।
সুপ্তদের বাসাটা বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। আশেপাশে আরো কয়েকটা বাড়ি রয়েছে। দেয়ালের ওপাশে একটা চারতলা বাসা আছে একদম এই বাসার সাথে লাগানো।
সুপ্তদের বাসায় যেতে হলে ঐ বাসার ছাদে পৌঁছুতে হবে। তারপর ঐ ছাদ থেকে এই ছাদ।
কিন্তু ঐ বাসায় যাবে কি করে!
বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো নিদ্র।
ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলো ব্যালকনির গ্রীল বেয়ে সহজেই দেয়ালে ওঠা সম্ভব। দেয়াল থেকে সানসেট।
প্রত্যেকটা ফ্লোর হিসেবেই এমন সানসেট করা রয়েছে।
মনে মনে বাড়িওয়ালা কে একটা ধন্যবাদ দিলো নিদ্র, এই সিস্টেমে বাসা বানানোর জন্য।
কালবিলম্ব না করে আশেপাশ থেকে ভেসে আসা মৃদু আলোয় গ্রীল বেয়ে উঠতে শুরু করলো সে।
সেকেন্ড ফ্লোর অবধি আসতেই মনে হলো নিচে থেকে যতটা সহজ ভাবছিল ততটাও সহজ নয় এই দেয়াল বেয়ে ওঠা। স্লিপ কেটে পড়ে গেলে অবস্থা শেষ! বিয়ে আর করতে হবে না।
বেশ কসরত করে, জানের ভয় নিয়ে আধ ঘন্টা খরচ করে অবশেষে শ্বশুরবাড়ি’র ছাদে উঠতে পারলো নিদ্র। এদিকে সুপ্ত সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে ওর জন্য। সন্তর্পণে আশেপাশে তাকাচ্ছে, আবার ফোনটা দেখছে।
ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে বসে কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে অবশেষে সুপ্তকে কল করলো নিদ্র।
ওকে কিছু বলতে না দিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো_
— পূর্ব দিকে এসো। আমি এখানে।
ফোন পেয়ে দৌড়ে আসলো সুপ্ত। জাপটে ধরলো নিদ্রকে। বুকে মুখ লুকিয়ে বললো_
— মনে হচ্ছে কতদিন পর দেখছি তোমাকে।
— মিস করছিলে বুঝি?
— হ্যাঁ অন্নেক।
নিদ্রর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো সুপ্ত। নিদ্র চমৎকার হেসে ওর গাল চেপে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
— খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। আমার ভাবনার চাইতেও সুন্দর ।
— সত্যি?
— হু। বিয়ের পর সবসময় শাড়ি পরেই থাকবে। তোমায় এত মানায়!
— ইশশ সবসময় সামলাতে পারবো না।
— পরতে পরতেই শিখে যাবে। কিন্তু শাড়ি পরা মাস্ট।
— আচ্ছা ঠিকাছে। তোমার জন্য পরবো।
— দ্যাটস মাই গার্ল।
— আচ্ছা কীভাবে এলে তুমি?
— ঐ। দেয়াল বেয়ে।
— কষ্ট হয়নি?
— হয়েছে, অল্প। তোমায় বুকে জড়িয়ে নিতেই সেটাও গায়েব।
নিদ্রর কথা শুনে ভারী লজ্জা পেলো সুপ্ত। ওর বুকে আলতো কিল মেরে বললো_
— উহু ডায়লগ!
— ডায়লগ না রে সত্যিই
— হয়েছে অনেক সত্যি বলেছেন। এবার বলুন তো এত রাতে দেয়াল টপকে আসলেন কেন?
— তোমায় দেখবো বলে।
— আর?
— আর,
সুপ্তকে এক হাতে আগলে নিয়ে অপর হাত দিয়ে পকেট থেকে হলুদের প্যাকেট টা বের করলো।
— হলুদ লাগাবে তুমি আমাকে?
— হ্যাঁ। আমার বহু দিনের শখ, আমার ব্রাইডে নিজে হলুদ মাখাবো।
— দাও মাখিয়ে দাও।
গাল বাড়িয়ে বললো সুপ্ত।
প্যাকেট থেকে সবটুকু হলুদ নিয়ে সুপ্তর দু গালে মাখিয়ে দিলো নিদ্র।
ফিসফিসিয়ে দুষ্টুমি’র স্বরে বললো,
“আমার হলুদ ব্যাঙ টা”
নিদ্রর মুখে “হলুদ ব্যাঙ” শুনে সুপ্তর সেই দু বছর আগে দেখা স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো।
চোখ ছোটো ছোটো নিদ্রকে জিজ্ঞেস করলো_
— কি বললা?
— বউ আমার হলুদ ব্যাঙ,
করে শুধু ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ!
— এই বদমাশ এই
রেগে খামচে দিলো সুপ্ত নিদ্রকে। নিদ্র ওকে জ্বালাতে সুর করে বলতেই থাকলো, “সুপ্ত হলুদ ব্যাঙ, করে শুধু ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ”
সুপ্ত রেগে কপাল চাপড়ে নিজেকেই বললো, “শেষ পর্যন্ত এই ছেলে আমার কপালে ছিলো আল্লাহ!”
চলবে,

[ না লেখার ফলে আউলায় যায় সব 😑]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here