এক শ্রাবণ হাওয়ায় পর্ব ৩৮+৩৯

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৩৮
প্রেমের স্নিগ্ধতায় আজ সকালটা বেশ ফুরফুরে। আমি পরম আবেশে বারান্দায় সকালের মৃদু হাওয়া অনুভব করতে ব্যস্ত। আজ সকালে উঠেই আমার ঠোঁটকোলে আপনাআপনি হাসি চলে এসেছে। কেননা আমি বারান্দায় টবে যেই গোলাপের চারা পুঁতেছিলাম আজ সেখানে ফুলের ছোট্ট অংশ গজিয়েছে। আমি কিছুক্ষণ সম্মোহনের মতো তাকিয়ে রইলাম সেখানে। রোদ্দুরের প্রতিফলিত রশ্নি আমার চোখে পড়াতে অন্যরকম লাগছিলো আমার নিজের কাছেই। হঠাৎ আনভীরের ডাক পড়তেই আমি ধ্যান কাটিয়ে রুমের ভেতরে চলে গেলাম। উনি হতদন্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটে সব গুছাচ্ছেন আর রেডি হচ্ছেন। আজ সকাল সকালই জরুরি প্রয়োজনের তাগিদে দ্রুত যাবেন ভার্সিটিতে। কিন্ত আজ আমি যাবো না। শিউলি ভাবির শারীরিক অবস্থা একটু দুর্বল তাই আজরান ভাইয়া আর আনভীর দুজনেই বলেছেন ভাবির খেয়াল রাখতে। তাই আমি আর উনার সাথে গেলাম না।

আনভীর দ্রুত চশমাটা পড়ে চুল আছড়িয়ে ল্যাপটপটা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলেন। ক্রমশ দ্রুততার সাথে টাই পড়তে গিয়ে বারবার নষ্ট করে ফেলছেন। আমি এসব কিছু ঠোঁট চেপে খাটে বসে দেখছিলাম। একপর্যায়ে উঠে এগিয়ে যাই উনার কাছে। উনার শক্তপোক্ত ঘাড় ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতেই আনভীর হতভম্ব হয়ে যান। উনার ব্যস্ততম মুখে এখন বোকাসুলভ রেশ। আমি অগোচরে একটা হাসি দিলাম। সেদিন রাতে নিজের ভালোবাসি হীনা অনুভূতি এক্সপ্রেস করার পর থেকে কেমন যেন বোকা বোকা হয়ে গিয়েছেন। আমি কথা না বাড়িয়ে উনার হাত থেকে টাই নিয়ে ধীরসুস্থে উনার গলায় বেধে দিতে মগ্ন হয়ে গেলাম। উনার বোকাসুলভ দৃষ্টি এবার রূপ নিয়েছে কৌতুহলভরা দৃষ্টিতে। ভ্রু জোড়া হালকা কুচকে দেখে যাচ্ছেন আমার কার্যকলাপ। তারপর মিহি গলায় বললেন,

-‘তুমি এখন আর আগের মতো পিচ্চি পিচ্চি নেই আহি? কেমন যেন বউ বউ লাগে তোমায় দেখতে।’

আমি সরু চোখে পরখ করে নিলাম উনাকে। রূঢ় কন্ঠে জিঙ্গেস করলাম,

-‘ওহ্ ! এখন তাহলে বউ বউ লাগে কেনো আমায়?’

-‘উমমম্ , সেটা তো বলতে পারছি না।’

উনি এমন একটা ভান ধরলেন যে এর উত্তর উনার অজানা। আমি দ্রুত টাইটা বেঁধে দিয়েই বলে ওঠলাম,

-‘এখন আপনার দেরি হচ্ছেনা মহাশয়? ফাজলামি বন্ধ করে এবার বেরোন।’

উনি চলেই যাচ্ছিলেন হঠাৎ আমার ডাকে পেছনে ফিরলেন। আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে আজ উনাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। আমি কাট কাট গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লাম,

-‘আপনায় আজ এত সুন্দর লাগছে কেনো? আমার সাথে যখন ভার্সিটি যান তখন তো এতটাও সুন্দর লাগে না , ব্যাপারটা কি?’

আনভীর বোকাসুলভ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার উদ্দেশ্যে। যেন আমার পুরোটা কথাই উনার মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছে। আমি দু’কদম এগিয়ে উনার মুখোমুখি হলাম। নিজের পা জোড়া উচু করে ছোট ছোট হাত দিয়ে খানিকটা এলোমেলো করে দিলাম উনার মসৃন কালো চুল। আনভীর কৌতুহলতার সাথে দেখে যাচ্ছেন আমার উদ্ভট কার্যকলাপ। চোখে-মুখে চরম প্রকারের বিষ্ময়। অদ্ভুতভাবে উনার সিক্ত চুলগুলো এলোমেলো হওয়ার দরুন উনাকে আরও বেশি মোহনীয় মনে হলো আমার কাছে। আগের থেকেও বেশি সুন্দর। আমি হতাশায় হাসফাস করতে থাকলাম। কোথায় চেয়েছি উনার সৌন্দর্যের মাত্রাটা একটু কমিয়ে দিতে আর হলোটা কি। আনভীর এবার মিহি স্বরে বললেন,

-‘তোমার কাজ হয়েছে মহারাণী? এড এনি চান্স তুমি কি এটা চাচ্ছো যে আমি আজ সারাদিন ঘরে থাকি ; তোমার সাথে?’

চোখজোড়া বড় বড় হয়ে এলো আমার। আমি উনার থেকে সরে আসতে যাবো উনি আমার দু হাত চেপে নিজের খানিকটা কাছে টেনে নিলেন। উনি সম্মোহনী কন্ঠে বলে ওঠলেন,

-‘পিচ্চি বউটার এই এক জ্বালা। নিজে থেকে কাছে এসে বুকে আগুন ধরিয়ে ফট করে চলে যায়। এখন যে আমার বুকে আগুন ধরেছে এটা নিভাবে কে?’

লজ্জায় ক্রমশ গাল-নাক লাল হয়ে এসেছে আমার। আমি মনে মনে এই বিলাইটাকে কয়েকশ’ গালাগাল দিলাম। কিন্ত দিলেই বা কি হবে? এই লোক যেই ঠোঁটকাটা মানুষ, কবে জানি আমার কানও এই লোকের ভয়ে নাউযুবিল্লাহ্ পড়া শুরু করবে। আনভীর দুষ্টু হাসি দিয়ে আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে আসতেই ফট করে এসে পড়লেন শিউলি ভাবি। আমাদের দেখে উনি তো স্তব্ধ হয়েছেনই আনভীরও হুড়মুড়িয়ে ছেড়ে দিলেন আমায়। আমরা দুজনেই এবার অস্বস্তির চরম মাত্রায় চলে গিয়েছি। ভাবি এবার ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

-‘কি দেবরজী? বউকে ছাড়া যেতে ইচ্ছে করেনা আপনার?’

উনি তপ্তনিঃশ্বাস ফেললেন। দ্রুত হাতঘড়িটা পড়ে বেরিয়ে গেলেন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।আমি উনার অসহায় মুখখানা দেখে ফট করে হেসে দিলাম। আমি জানি ভাবির সামনে এভাবে পড়াতে উনি নিজেও প্রচন্ড বিব্রত বোধ করছেন। আমি তারপর ভাবিকে বসিয়ে দিলাম আমাদের খাটে। ভাবি আগের তুলনায় খানিকটা গুবলুবুবলু হয়েছে। বেশ কিউট লাগে দেখতে। গালগুলোও কেমন টসটসে রক্তিম লাল। আমি অতি আগ্রহের সাথে ভাবির পেটের কাছটিতে মাথা রাখলাম। আমি এ কাজ প্রায়শই করি। ভাবিও আমার এমন বাচ্চামো দেখে হেসে ফেলেন হঠাৎ হঠাৎ। আর বলতে থাকেন আজরান ভাইয়ার কীর্তিকলাপগুলো।

আজরান ভাইয়া আনভীরের তুলনায় একটু অন্যরকম। নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পছন্দ করেন যেদিকে আনভীর কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট টাইপ। আজ আমাদের বিয়ের এতসময় পেরিয়ে গেলো অথচ মহাশয়ের মুখ দিয়ে কখনোই আমার উদ্দেশ্যে ভালোবাসি কথাটা বেরোইনি। আর আজরান ভাইয়ার মুখ থেকে ভাবির উদ্দেশ্যে আমি ভালোবাসি শুনিনি এমন কোনো দিনও বাদ পড়েনি। ভাবির প্রেগনেন্সির পুরোটা সময় উনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন ভাবিকে সময় দেওয়ার জন্য। যদি না পারেন তাহলে আমায় খেয়াল রাখতে বলেন। উনাদের দুজনকে দেখলেই মাথায় একটি কথা আসে , ‘একটি সুন্দর-সুখী দম্পতি’। হয়তো সেই সোনামণাটা পৃথিবীর আলো দেখার মাধ্যমেই তা আরও পরিপূর্ণতা পাবে।আমার বুকের ভেতর হঠাৎই একটু খালি খালি ভাব অনুভূত হতে থাকলো। আনভীর নিঃসন্দেহে ভালোবাসেন আমায়। হয়তো তা প্রকাশ করাটা পছন্দ করেন না। তবুও আমার মনেও ভাবিকে দেখে একটি ছোট্ট পৃথিবী আনার জন্য হৃদয় কেমন যেনো আনচান করে ওঠে। আমি জানি আনভীর এখন মানবেন না। উনার কাছে আগে আমার পড়াশোনা , তারপর সব। আমি মেনে নিয়েছি বিষয়টা। ক’জনই বা চায় যে তার স্ত্রী নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলুক?

_____________

একগাঁদা বিরক্তি নিয়ে ক্যাম্পাসের ক্যান্টিসে বসে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। আশপাশের মানুষ হা করে তাকিয়ে আছে আমায় এমন কাজ করতে দেখে। উনাদের হা করাটাই আসলে স্বাভাবিক, বরংচ আমায় এভাবে ক্যান্টিনে বইয়ের পাতা উল্টানোর ব্যাপারটাই সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক। আসলে কিছুক্ষণ আগে আনভীরের সাথে রাগ করে এখানে এসে পড়েছিলাম। দু’দিন পর থেকেই আমার পরীক্ষা শুরু হবে সেই সুবাদে পড়ার প্রচুর চাপ। সেজন্য আমি ভার্সিটির লাইব্রেরিতে চলে গিয়েছিলাম কিছু বই নেওয়ার জন্য। সেখানে গিয়েই আচমকা আমি আনভীরের মুখোমুখি হই। উনিও কিছু বইয়ের প্রয়োজনে এখানে এসেছেন। আমায় দেখে শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

-‘ক্লাস নেই তোমার?’

-‘ক্লাস শেষ। বই নেওয়ার জন্য এখানে এসেছিলাম।’

আনভীর ছোট্ট করে ওহ্ প্রতিউত্তর দিয়ে লাইব্রেরির একপ্রান্তে ল্যাপটপ আর কয়েকটা এসাইনমেন্ট এর কাগজপত্র নিয়ে বসে পড়লেন৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম উনার দিকে। কই এখন অফটাইম আছে একটু নিজেকে রিলেক্স করবেন আর উনি এই সময়েও স্টুডেন্টদের কাজ চেক করতে মগ্ন হয়ে আছেন। আমি এবার আমার ডিপার্টমেন্ট এর শেলফ খুঁজে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় বইগুলো বের করতে মগ্ন হয়ে গেলাম। শেলফগুলো যেমন বড়ো, আমি ততটাই খাটো। কয়েকটা বইতো আমার নাগালের বাইরে। আমি নিজের পা জোড়া উচু করে অনবরত চেষ্টা করতে থাকলাম বইটা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। তবে এটা আমার জন্য একেবারেই অসম্ভব। একরাশ হতাশা নিয়ে আমি যখন পা জোড়া নিচে নামিয়ে হাত নামিয়ে দিতে যাবো তখন আমি দেখলাম একটি বলিষ্ঠ হাত আমার হাত থেকে অল্প কিছু দুরত্বে রেখে বইটা নামিয়ে নিলেন৷ আমি হতভম্ব হয়ে আগন্তুকটিকে দেখার জন্য পছনে ঘুরতেই দেখি আমি আনভীরের দু’বাহুর মাঝে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমার পেছনে বুক শেলফ আর সামনে আনভীর। আনভীর এবার ভ্রু নাড়িয়ে বললেন,

-‘আমাদের মতো বরদের পিচ্চি বউ নিয়ে এই একটা জ্বালায় পড়তে হয়৷ কিছুই হাতের নাগালে পায় না।’

বলেই উনি বিদ্রুপ হেসে চলে গেলেন সেখান থেকে। আমি যেন রাগে টুইটুম্বুর। মিঃ আনভীর রেজওয়ান খান ওরফে আনভীর খান ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করেছেন আমায়। আমিও দেখবো বাড়িতে গেলে আপনি কোন বউয়ের সাথে এত আদর করে কথা বলেন। ব্যাটা চশমিশ বিলাই কোথাকার!

বই নিয়ে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম তখনই আমার হঠাৎ চোখ গেলো আনভীরের দিকে। উনি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছেন, খুবই মিহি কন্ঠে যেহেতু এটা লাইব্রেরি।মেয়েটি আর কেউই না , আমাদেরই ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের নতুন টিচার রোজলীন ম্যাম। আমি কাছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি এই শাকচুন্নি মেয়েটা সুযোগ পেলেই আনভীরের সাথে কথা বলে। আমি বুঝিনা উনারা দু’জন দুই ডিপার্টমেন্টের টিচার , তবুও এত কথা কিসের? শুধু কথা না, একেবারের পুরো জমে ঘি হওয়া টাইপ কথাবার্তা। আমার বইয়ের পাতা থেকে বারবার চোখ সরে উনাদের দিকেই নজর যাচ্ছে। আনভীর আড়চোখে আচমকা দেখলেন আমায়। আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম , যত দ্রুত সম্ভব এই শাকচুন্নিরে বিদায় করেন। কিন্ত উনি এমন একটা খাপছাড়া ভাব করলেন যেনো বউ তো আমি না , ওই রোজলীন টিচার উনার বউ। একপর্যায়ে ধৈর্যহারা হয়ে আমি ব্যাগ নিয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে প্রস্থান করলাম সেখান থেকে। একবারও নজর দিলামনা যে উনি কি করছেন বা উনার প্রতিক্রিয়াটা কি। থাকুক , উনি ওই ন্যাকামি টিচারকে নিয়ে সে সুযোগ পেলেই ‘মিঃ আনভীর-মিঃ আনভীর’ বলে ভ্যা ভ্যা করে ওঠে। আমি তাই নিজেকে শান্ত করার জন্য চুপচাপ এসে পড়ি ক্যান্টিনে।

এখানে খাওয়া-দাওয়া হয় কম , আড্ডা মাস্তি হয় বেশি। দু’একজন পড়ুয়া স্টুডেন্ট খাওয়ার ফাঁকে ক্যান্টিনের এক কোণে বই নিয়ে বসে পড়ে। এ নিয়ে ট্রলের যেনো শেষ নেই। কিন্ত আমায় দেখে কেউ এমন কিছু করার সাহস পেলো না যেহেতু সবাই জানে আমি এই ভার্সিটির ওয়ান অফ দ্য মোস্ট স্ট্রিক্ট টিচার আনভীর রেজওয়ান খান এর ওয়াইফ। এখন কেন জানি নিজের কপালে আমারর নিজেরই বারি মারতে ইচ্ছে করছে। উনার সামনা-সামনি থাকলে একটু বুঝতে পারতাম আনভীর কি করছেন আর আমি করলাম টা কি? হাদার মতো ব্যাগপত্র নিয়ে এখানে মুখ ফুলিয় বসে রইলাম। ধ্যুর !

এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা প্লেট আমার দিকে কেউ এগিয়ে দিতেই আমি হতভম্ব হয়ে যাই। প্লেটে মিনি সাইজের একটা স্যান্ডউইচ আর সাইডে সসের প্যাকেট আছে। মানুষটির দিকে তাকাতেই আমি আরও এক ধাপ অবাক হলাম।কেননা আমার বরাবরের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন আনভীর। চোখের সরু দৃষ্টি নিবদ্ধ আমার হতভম্ব মুখশ্রীর দিকে। আমি কিছু বলতে যাবো তার পূর্বেই উনি নির্লিপ্তভাবে বললেন,

-‘তোমার তো আবার রাগ করলে বেশি ক্ষুধা লাগে, তাই এই স্যান্ডউইচটা আগে খেয়ে এনার্জি গেইন করো। তারপর নাহয় রাগের বশে চুল ছিড়ো অথবা রাগ কমানোর জন্য আমায় আদর করো, দ্যাটস ইউর চয়েস। আইডিয়াটা ভালো না আহি?’
#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৩৯
-‘তোমার তো আবার রাগ করলে বেশি ক্ষুধা লাগে, তাই এই স্যান্ডউইচটা আগে খেয়ে এনার্জি গেইন করো। তারপর নাহয় রাগের বশে চুল ছিড়ো অথবা রাগ কমানোর জন্য আমায় আদর করো, দ্যাটস ইউর চয়েস। আইডিয়াটা ভালো না আহি?’

আমি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলাম উনার এমন গা ছাড়া কথায়। লজ্জায় কান নাক দিয়ে রীতিমতো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি ঘাড় বাকিয়ে আশপাশেও তাকিয়ে নিলাম যে কেউ শুনেছে কি-না। কিন্ত আনভীর কথাটা বলেছিলেন খুবই আস্তে , এমনভাবে বলেছিলেন আমি ছাড়া আর কারও কাছেই উনার এই মারাত্নক কথাটি বোধগম্য হবে না। তাছাড়া এখানকার স্টুডেন্টরা আর স্যার-টিচাররা একটু অন্যরকম। অন্যদের প্রতি আগ্রহ কম দেখায় আর নিজেদের প্রতি আগ্রহ দেখায় বেশি। আমার শরীর তবুও অস্বস্তিতে রীতিমতো রি রি করছে।আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে দিলাম,

-‘অনেক ভালো আইডিয়াটা। আপনারে তো নোবেল দেওয়া উচিত।নেক্সট টাইম আপনি রেগে গেলে আপনাকে আমি এক বালতি মধু এনে দিবো নে। তারপর আমার সাথে ক্যাচ ক্যাচ না করে মুখে মধু পুড়ে বসে থাকবেন।’

আনভীর যেন মজা পেয়ে গেলেন আমার এ কথায়। তাই বললেন,

-‘আমার নোবেল-মধু কিছুই লাগবেনা তো। তোমার জাস্ট একটু আদর পেলেই চলবে। ‘

আমি কপালে হাত দিয়ে আড়নজরে আশপাশ আবার তাকালাম। নাহ্ , কারওই আমাদের দিকে নজর নেই। তাছাড়া আমার মনেও হয়না যে নজর দিবে। দূর থেকে দেখলে এটাই মনে হবে যে আমাদের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কেউ যদি কাছে এসে এই অসভ্য লোকের অসভ্য কথাগুলো শুনতো নির্ঘাত এতক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো।আমি কথা বাড়ালাম না এবার। টেবিল থেকে উঠে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতেই উনি থমথমে গলায় বলে ওঠলেন,

-‘তুমি ভালোমতই জানো আমি এখানে তোমায় জোর করে না খাওয়াতে পারলেও বাসায় ভালোমতো সাইজ করতে পারবো। এটা ক্যাম্পাস , এন্ড আমি চাচ্ছিনা সবার সামনে তোমার খাওয়া দাওয়া নিয়ে ন্যাকামি করতে। সকালে কিছুই খাওনি তুমি আহি। এখন ফটাফট খেয়ে নেও।’

উনার এই থ্রেড আমায় ভয় দেখানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো। আমি শেষমেষ বাধ্য মেয়ের মতো প্লেট থেকে স্যান্ডউইচ নিয়ে নিলাম। কিন্ত মুখের রাগ প্রকাশের থেকে এক বিন্দুও এদিক সেদিক নড়িনি। এতদিন আপনি রাগারাগি করেছেন, আজ আমি রাগ করবো। নায়িকা শাবনূরের মতো অভিমানের চোটে তথাকথিত নায়ক সালমান শাহ্ এর সাথে যেভাবে দু’দিন কথা বন্ধ রেখেছিলেন সেভাবেই আমি আনভীরের সাথে কথা বন্ধ রাখবো। ব্যাটায় থাকুক ঐই রোজনীল ওরফে নীল গোলাপ-কালো গোলাপ নিয়ে। যতদিননা উনি সালমান শাহ্ এর মতো আমার অভিমান ভাঙাবেন না , ততদিন আমি গলছি না হুহ্। উনার বুকেও আগুন ধরাবো। আগুনে দাউদাউ করে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাক , দরকার পড়লে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে উনারে ভর্তি করিয়ে রাখবো তবুও ওই ম্যামের টপিকের জন্য উনায় মাফ করবো না। আনভীর আমার খাওয়ার সময় আকাশ কুসুম কল্পনা করতে দেখে বলে ওঠেন,

-‘মনে হচ্ছে রাগটা কমার বদলে বেড়ে গেলো।’

আমি কিছু বললাম না। খেয়েদেয়ে উনার উদ্দেশ্যে বললাম,

-‘আমি বাসায় যাচ্ছি।’

-‘ওয়েট করো। আমি দিয়ে আসি তোমায়।’

-‘আমি বাচ্চা না বুঝেছেন? ওই নীল গোলাপ কালো গোলাপ ম্যাডামের কাছে যান।’

বলেই বড়ো বড়ো কদম ফেলে চলে গেলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।

_______________

আজ পুরোটা দিন কড়াকড়ি ইগ্নোর করেছি উনাকে। উনি আমার সামনে আসলেই আমি দু’মাইল দূরে সরে আসতাম।আনভীর কিছুক্ষণ পরপরই অসহায়ের মতো তাকাচ্ছিলেন আমার দিকে। তবে আজ উনার এই অভিনব কায়দা একটুও মন গলাতে পারলো না আমার। আমি ওপর দিয়ে মুখ টসটসে আলুর মতো করে রাখলেও ভেতর ভেতর পৈশাচিক আনন্দে মেতে আছি। খুব শখ না বউ ছেড়ে ওই ম্যামের সাথে হেসে খেলে কথা বলার? তাও আবার জমে ক্ষীর হওয়া টাইপ কথাবার্তা , একটু চিনি মিশালেই যেন কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে ঝড়ঝড় করে মিষ্টি পড়বে। আনভীর অনবরত ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন আমার সাথে দুদন্ড কথা বলার জন্য। কিন্ত আমিও নিজ মনে প্রবল। আমি এবার মায়ের রাতের খাবারের পর ওষুধগুলো খাইয়ে বাবার কাছে গেলাম। বাবার নিত্যদিনের অভ্যাস রাতে খাবারের পর বারান্দায় বসে আমার হাতের চা খাবেন। যদিও এত রাতে চা দিলে ঘুম কেটে যায় তবুও বাবা অভ্যাসমতো রাতে বই নিয়ে বসেন বলে ঘুম কাটানোর জন্য চা বা কফি খান একটু আধটু। কথার এক পর্যায়ে বাবা হঠাৎ বই থেকে চোখ সরিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলো,

-‘কি হয়েছে আমার ওই পাগল ছেলেটার?’

আমি শূণ্যদৃষ্টি নিয়ে তাকালাম বাবার দিকে। যার অর্থ আমি কিছুই বুঝিনি।বাবা তাই এবার বলে ওঠলেন,

-‘বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি ওর মুখ কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে। আগের মতো একরোখা ভাবটাও নেই। যেই ছেলে প্রতিদিন খাওয়ার আগে আমার সাথে একটু আধটু কথা বলে যেতো তার তো নজর মনে হয় অন্যদিকে চলে গিয়েছে।,,,,পাগলটার সাথে ঝগড়া-ঝাগড়ি করেছো নাকি?’

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে দিলাম বাবাকে। বাবা খানিকটা শব্দ করে হেসে ওঠলেন। উনি তারপর আমায় অভয় দিয়ে বললেন,

-‘সাবাস ! এই নাহয় তুমি আমার ছেলের বউ? ওই ব্যাটাকে এমনেই সাইজ করতে হবে। তারপর দেখবে তোমার কথায় উঠবে আর বসবে।’

বাবাকে দিয়ে এমন একটা কিছুই আশা করেছিলাম। তবে এতটাও আশা করিনি যেমনটা উনি করছেন। এই বাড়ির মানুষগুলো বড়ই অদ্ভুত। শুরুতে আনভীর আমায় মেনে নিতে চাননি দেখে শ্বাশুড়ি মা কি কান্ডগুলোই না করেছিলো। আমায় নীল শাড়ি পড়িয়ে আনভীরের সামনে নিয়ে যাওয়া, মহাশয়ের পছন্দের জিনিস রান্না করা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। বাবাও অনেকটা সেরকম । কই ছেলের সাথে রাগ করেছি বলে আমায় শাসাবে উল্টো আমায় উপদেশ দিচ্ছেন কিভাবে করলে ওই চশমিশ বিলাইয়ের নাকের ডগার ইগো কমানো যায়। এদের থেকেও দু’ধাপ এগিয়ে আছে আজরান ভাইয়া। বিগত কয়েকমাস ধরে হানিমুন-হানিমুন করে আমার আর আনভীরের মাথা ধরিয়ে দিয়েছেন। সুযোগ পেলেই আমায় আর আনভীররে টেনে বাইরে ঘুরতে পাঠিয়ে দেন যাতে উনার রসকষহীন ভাবটা একটু হলেও কমে। আমি শুধু আফসোস করে বলতে পারিনা যে, ‘আজরান ভাইয়া! আপনার এই গর্দেভ ভাই আপনার মতো এতটা রোম্যান্টিক না। সুযোগ পেলেই ধমকের ওপর সিধে করে রাখে।’

বাবা এবার বললেন,

-‘এক কাজ করো তো। একটু কষ্ট করে আজরানকে ডেকে নিয়ে আসো। এখন আনভীর যা থমথমে মুডে আছে , ওকে ডাকাটাই বিপদ আমার জন্য।’

আমি মিহি হেসে চলে গেলাম আজরান ভাইয়াকে ডাকার জন্য। রুমে গিয়ে দেখি শিউলি ভাবি বসে আছেন মুখ ফুলিয়ে। আজরান বাইয়া একপাশে বসে মোবাইল স্ক্রলিং করতে মগ্ন ছিলো। ভাবি একটু নড়লে চড়লেই আজরান ভাইয়া আহত সুরে বলে ওঠেন,

-‘এত নড়াচড়া করছো কেনো বউ? বেশি খারাপ লাগছে?’

-‘না তো ! আমার তো খুশি লাগছে এভাবে সং সেজে বসে থাকতে।’

শিউলি ভাবির কথা শুনে আমি ঠোঁট চেপে হাসলাম। কেননা বুঝতে পেরেছি আজরান ভাইয়া ইতিমধ্যে বহুবার এমন ভাবে জ্বালিয়েছেন ভাবিকে। ডেলিভারির সময়ের এখনও এত টাইম বাকি তবুও ভাইয়ার এধরনের কথাবার্তা আমায় না হাসিয়ে পারলো না। বেচারা অনাগত সন্তানের বাবা হওয়ার আনন্দে ইতিমধ্যে পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছেন। আমি যদি কখনও প্রেগনেন্ট হই আনভীর আর যাই হোক আজরান ভাইয়ার মতো সিমপ্যাথি দেখাবেন না। হয়তো ধমকের ওপর রাখবেন , নয়তো কেয়ারিং এর চোটে এতটাই ওভারপ্রোটেকটিভ হবেন যে আমার রাতের ঘুম তো হারামই, উনার ঘুমটাও হয়ে যাবে নিশ্চিহ্ন। ‘বাবা ডাকছে’ এই কথাটা আজরান ভাইয়াকে বলতেই ভাইয়া আমায় ভাবির পাশে বসিয়ে চলে গেলেন। বরাবরের মতো বললেন উনার গুলুমুলু বউটার খেয়াল রাখতে। আমি ভাবিকে আলতো হাতে জরিয়ে ধরেই আহ্লাদি সুরে বললাম,

-‘বেবি কিক মারে?’

-‘মারে মানে! কিক মেরে পারলে উড়িয়ে ফেলে।’

ভাবি কথাটি মজার ছলে বলাতে হেসে ফেললাম আমি। ইসসস! কখন যে বেবিটার ছোট ছোট হাতগুলো আমি ধরবো?আজরান ভাইয়া আসার আগ পর্যন্ত এতক্ষণ ভাবির সাথেই ছিলাম আমি। তখনই আজরান ভাইয়ার সাথে হুড়মুড়িয়ে রুমে এসে পড়লেন আনভীর। আমায় শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

-‘কি মিসেস ওয়াইফি? ওয়েট করছি তো? ঘুমাতে আসবেন না?’

-‘আপনি যান, আমি আসছি।’

কোনোমতে কথাটি বলে আমি অন্যদিকে মাথা ঘুরালাম। কিন্ত উনি নড়লেন না। বরং থম মেরে বসে পড়লেন সাইডে চেয়ারটিতে। আজরান ভাই বিরক্ত হয়ে উনাকে বললো,

-‘এভাবে বসে আছিস ক্যান?’

-‘বউ ছাড়া নড়ছিনা আমি।’

উনার কথা শুনে চোখজোড়া ক্রমশ ক্ষুদ্র হয়ে এলো আমার। আজরান ভাইয়াও মহাবিরক্ত। বেচারা কোথায় চেয়েছিলো বউয়ের সাথে একটু কোয়ান্টিটি টাইম স্পেন্ড করতে আর আনভীর তো রীতিমতো অনড় হয়ে বসে আছেন। আজরান ভাইয়া এবার অতি আক্ষেপে বলে ওঠলো,

-‘তোর বউকে কেউ ধরে রেখেছে? নিয়ে গেলে নিয়ে যা। এই আহি ! বোন, যাও না ওর সাথে? নাহলে ও সত্যি সত্যিই এখান থেকে যাবে না।’

আমায় কোনো কথা বলতে না দিয়েই উনি আমায় কোলে তুলে ধপ ধপ শব্দ করে প্রস্থান করলেন এখান থেকে। আমার চোখজোড়া চড়কগাছ। কেননা আমার কল্পনাতীত ছিলো আজরান ভাইয়ার কথায় আমি রাজি হওয়া মাত্রই উনি এভাবে আমায় কোলে তুলে নিবেন।

আমায় বিছানায় ফেলা মাত্রই ব্যাথায় আমি ‘উহ্’ শব্দ করে দিলাম। উনি এবার আমায় পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে নিমিষেই শান্ত হয়ে গেলেন।রুমটা মৃদু অন্ধকার। ডিম লাইটের আলোতে সবকিছু ঝাপসা দেখাচ্ছে। অন্যসময় উনার এমন কাজে আমি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতাম। দু’চারটা কিল ঘুষি মারতেও ভুলতাম না। কিন্ত এবার আমি নিশ্চুপ। ওইযে বললাম না, উনার প্রতি মৌনতার অনশন করছি! আমায় প্রতিক্রিয়াহীন দেখে আনভীর জড়ানো গলায় বলে ওঠলেন

-‘আহি!’

আমার সারা শরীরে কেমন যেন একধরনের জমকালো হাওয়া বয়ে গেলো। উনি নির্বিকার। আষ্টেপৃষ্টে আমায় নিজের সঙ্গে মিশিয়ে পেছন থেকে ঘাড়ে মুখ গুঁজে আছেন। উনি এবার বলে ওঠলেন,

-‘রাগ করোনা প্লিজ! মিস. রোজনীল তো এভাবেই কথা বলে আমার সাথে। মাঝে মাঝে আমার নিজেও প্রচন্ড বিরক্ত লাগে৷ কিন্তু উনার মুখের ওপর কি আর না করা যায়? ‘

আমি নিশ্চুপ।

আনভীর আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে বললেন,

-‘এট এনি চান্স তুমি কি জেলাস?’

উনি ভ্রু নাচিয়ে বললেন। আমি ধৈর্যহারা হয়ে বলে ফেললাম,

-‘শুধু জেলাস না, প্রচন্ড রকমের জেলাস। আমার উত্তর শুনে এবার খুশি তো? ওই মহিলার সাহস কি করে হয় আমার বরের দিকে নজর দেয়?’

আনভীর ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। বলে ওঠলেন,

-‘ আমার তোমায় জেলাস করারও ছোটোখাটো একটা ইনটেনশন ছিলো আমার। তাইতো মিস রোজনীল এর সাথে তোমায় দেখিয়ে দেখিয়ে,,,,,,’

কথাটি অসমাপ্ত রেখেই উনি ঠোটজোড়ায় দুষ্টুমির আভাস ছাড়িয়ে দিলেন৷ রাগে আমার সারা শরীর রি রি করে ওঠলো এবার৷ উনার জন্য জেলাসির চক্করে আমি যেদিকে ছোট্টখাট্টো একটা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম সেখানে এই অসভ্য, বদমাশ চশমিশ বিলাই আমায় দেখানোর জন্য এসব করে বেড়াচ্ছিলো? আপনি ভুল করেছেন, আনভীর রেজওয়ান খান এই আহির সাথে পাঙ্গা নিয়ে। আমি আর দুদন্ড ভাবার সময় নিলাম না। উনার ওপর ওঠে থুতনির কাছে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কামড় দিতেই উনি মুখ দিয়ে ছোট্ট একটি আর্তনাদ করেন। ইসসস! ফর্সা মুখের থুতনির কাছে যে কেউ দেখলেই বুঝবে এটা কিসের দাগ। এবার দেখবো এই চশমিশ বিলাইটা কিভাবে আমার লাভ বাইট নিয়ে ভার্সিটিতে যায়?
.
.
.
~চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

ভুলক্রুটি মার্জনীয়।
আজকের এই পোস্টটিতে প্রায় ১০০০ কমেন্টের অনুরোধ থাকবে। অনেকের নিউজফিডে গল্প যাচ্ছেনা। কারন রিচ কম। সবাই বেশি বেশি কমেন্ট করুন প্লিজ!
~চলবে……..ইনশাআল্লাহ

ভুলক্রুটি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here