এক_বাক্স_ভালোবাসা পর্ব ২+৩

#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_২+৩
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।

আদি: ওরে পেত্নী আমায় ছেড়ে দে আমার কিছু হলে কিন্তু তোকেই আমার বেবির মা হতে হবে।

~~আমায় টেনশনে ফেলে দিয়ে তুই মহা শান্তিতে ঘুমাবি এটা আমি কিভাবে সহ্য করি বল..

আদি: আর ভুলেও ঘুমাব না তবুও আজকের মতো ছেড়ে দে প্লীজ।

~~এখনি পালাব চল। (ছেড়ে দিয়ে)

আদি: পাগল নাকি এখন পালিয়ে গেলে কালকেই আমাদের খুঁজে বের করে অঃতপর বিকেলে বিয়ে এতে তো আমাদের বাবাদের সম্মান নষ্ট হবে না আর সম্মান নষ্ট নাহলে তো আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

~~ তা ঠিক কিন্তু আমরা পালিয়ে কোথায় যাব?

আদি: সব রেডি করা আছে। তুই শুধু বিয়ের কিছুক্ষন আগে রাস্তার মোরে এসে দাঁড়াবি তাহলেই হবে আমি সালমান খানের মতো উপস্থিত থাকব।

~~ আদি আমারনা খুব ভয় করছে যদি বাবা জেনে ফেলে তাহলে কি হবে?

আদি: আরে উগান্ডার পেত্নী এতই যখন ভয় তাহলে বিয়ে করে নে… আর চাইলে আমার থেকে সাহস ধার নিতে পারিস।

~~ কিভাবে?

আদি আমায় জড়িয়ে ধরে..
আদি: এভাবে।

~~ আমায় ছাড় বলছি নাহলে কিন্তু এখুনি তোর ঘার মটকিয়ে রক্ত চুসে খাব।

আদি: আরো বোকা আমি তোকে আমার থেকে সাহস দিচ্ছি।(শক্ত করে ধরে)

~~ আদি গাদি বাবা কল দিচ্ছে আমায় ছেড়ে দে অনেক সাহস দিয়েছিস আর চাই না।

বাবার কথা শুনতেই আদি আমায় ছেড়ে দিল আমি এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে না থেকে আদির রুম প্রস্থান করে এক দৌঁড়ে বাসায় উপস্থিত হলাম এসে দেখি বিরোধী পক্ষ দাঁড়িয়ে আছে।

বাবা: কোথায় গিয়েছিলি? (ধমক দিয়ে)

~~আদির বাসায়। (মাথা নিঁচু করে)

বাবা: কাল বিয়ে আজ তুই এ বাসা থেকে ওই বাসায় ঘুরে বেড়াচ্ছিস আশেপাশের মানুষ নানা কথা বলছে আর কত সম্মান নষ্ট করবি আমার?

বাবা এখনও তো তোমার সম্মানের কিছুই নষ্ট হয়নি, নষ্ট তো কাল হবে কাল আমি সবথেকে খুশি হবো বিয়েও ভাঙবে আর তোমার সম্মানও ভাঙবে হা হা হা (মনে মনে)

বাবা: ওকে দেখে মনে হচ্ছে বিয়েতে নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল পাকাবে কিন্তু আমি ওর প্লান সফল হতে দেব না। এখন থেকে কাল বিয়ে পর্যন্ত ওর রুম থেকে বের হওয়া বন্ধ। (মাকে বলল)

মনে হচ্ছে এখুনি মায়ের কোলে উঠে তারপর কোল থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে যাই। ভদ্র মেয়ের মতো নিজের রুমে এসে বসে রইলাম। রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না মনের মধ্যে কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে ভয়কে উপরে পাঠিয়ে ফোন ঘাটতে লাগলাম।। কিছুক্ষন পরে রুমে মায়ের প্রবেশ,

মা: কিরে এখনও ঘুমানি কেন? কাল সকাল সকাল উঠতে হবে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর।

~~ মা আমি এই বিয়েটা করতে চাই না তুমি বাবাকে একটু বুঝিয়ে বল প্লীজ!

মা: কোনো লাভ নেই জানিস তো তোর বাবার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত আর আদি তো খুব ভালো ছেলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় আর তোরা তো সেদিন একসাথে ছিলি তারপরেও সমস্যা কোথায়?

~~ মা তুমিও এটা বলতে পারলে?

মা: সবাই যেটা বলছে আমিও সেটাই বলেছি এখন আর বগ বগ না করে ঘুমিয়ে পর তোর বাবা দেখলে বকা দেবে।

মায়ের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়ে পরলাম। আজ বুঝতে পারলাম আমার শত্রু মাও আমায় ওই সয়তান আদির গলায় ঝুলানোর জন্য সবাই উঠে পরে লেগেছে। আমরাও দেখে নেব কাল কিভাবে আমাদের বিয়ে দিতে পার.. সব ভাবনার সমাপ্ত ঘটিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে ঘুম ভাঙে মায়ের ডাকে চোখে ঘুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে পা বাড়াতেই মনে এটা আমার বাসা নয় এটা বড় কোনো শপিং মল কিন্তু এই শপিং মলে শুধু আমার রিলেটিভরাই এসেছে। চারদিকে মনোমুগ্ধকর সাজানো দেখে আমি মনে মনে সালমান খানের সঙ্গে ড্যান্স করেতে লাগলাম। আমার আর সালমান খানের রোমান্সে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলো পাগল প্রেমিক অভি।

~~ এই সয়তানের হাড্ডি তুই এখানে কি করছিস?

অভি: আমার ভালবাসার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তার শোক দিবস পালন করতে আসছি।

অভির কথায় আমার ঘোর কাঁটে তারমানে এসব আমার বিয়ের জন্য আয়োজন করা হয়েছে, না না এটা আমি কখনও হতে দেব না।

~~ এই আদি কই রে?

অভি: জানেমন ভাইয়া তো বিয়ের জন্য রেডি হচ্ছে চলো এখুনি আমরা পালিয়ে যাই।

~~ সয়তান ছেলে একদম চুপ পালাব নাকি তোর ভাইয়ের গলায় ঝুলব সেটা আমি বুঝে নেব এখন সামনে থেকে সর।

অভি: জানেমন একটা চুম্মা দাও এক সেকেন্ডে চলে যাব।

~~ তুই যাবি নাকি জুতা খুলব…

অভি: আচ্ছা যাচ্ছি।

ইচ্ছে না থাকা সত্বেও সবাই জোর করে আমায় গায়ে গলুদ অনুষ্ঠানে যোগ করাল গায়ে হলুদের পর সবার কথা মতো রুমে বসে আছি মনে হচ্ছে ছোট বেলায় যেমন পুতুলের পারমিশন না নিয়ে বিয়ে দিতাম ঠিক তেমন করে সবাই মিলে জোর করে আমায় বিয়ের জন্য রেডি করছে। মাঝে মাঝে আদির সঙ্গে কথা বলে মনটা শান্ত করে নিচ্ছি। বিকেলের পর সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো বাড়িতে বিয়ের বাজনা আরো দ্বিগুণ জোরে বাজতে শুরু করল আর এদিকে আমার কলিজা স্থির হতে লাগল। এক গাঁদা আটা ময়দা আর ভারি জুয়েলারি পড়িয়ে সবাই আমার রুম থেকে প্রস্থান করল এই সুযোগে আমি আদি গাদিকে কল দেই।

রিং বাজতেই সয়তানটা কল রিসিভ করে…
~~ আদি একটু পরেই আমার বিয়ে প্লীজ এই বিয়ের হাত থেকে আমায় বাঁচা নাহলে আমার লাইফ শেষ হয়ে যাবে।

আদি: আরে তোর মতো পেত্নীর হাত থেকে আমিও বাঁচতে চাই। টেনশন করিস না সব রেডি আছে শুধু সময়ের অপেক্ষা শোন তুই ঠিক ১০ মিনিট পর রাস্তার মোরে চলে আয় আমি সেখানেই থাকব।

~~আচ্ছা কিন্তু আদি আমার খুব ভয় লাগছে..

আদি: এই সালমান থাকতে কিছু হবে না। (টুট টুট..)

২০ কেজি ভয় নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। সুন্দর সুন্দর কিছু ড্রেস, গয়না আর কিছু টাকা নিয়ে বের হব ঠিক তখনি দরজায় নক পরল।

মা: হিমু দরজা বন্ধ করেছিস কেন? আদির বাড়ির সবাই এখনি এসে পরবে।

~~ এইতো মা শাড়িটা একটু ঠিক করছি আমার বিয়ে বলে কথা পরীর মতো সাজতে হবে তুমি বোনকে একটু পাঠিয়ে দাও।

মায়ের সাউন্ড না পেয়ে বুঝতে পারলাম মা চলে গেছে। কোনো উপায় না পেয়ে জানলা দিয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম কারন আমাদের বাসার পিছনে একটু অন্ধকার টাইপের মানুষ তেমন একটা যাওয়া আসা করে না। পালানোর জন্য দড়ি হিসেবে ব্যবহার করলাম বিয়ের শাড়ি। মনে মনে বাবার থেকে সাহস চুরি করে ঝুলে পরলাম শাড়ির সঙ্গে। নেমে মাথায় ওড়না গুঁজে সোজা চলে আসি রাস্তার মোরে এসে দেখি সেখানে দুটি সয়তান দাঁড়ানো মানে আদি গাদির সঙ্গে তার মোটরগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।

~~ তাড়াতাড়ি চল…

আদি: তুই কি সারাজীবনের মতো শশুর বাড়ি যাচ্ছিস?

~~ ওই এটা বললি কেন? ( ভ্রু কুঁচকে)

আদি: না মানে ব্যাগটা তো সেই লেভেলের বড় তাই বললাম আরকি।

~~ সেটা তোকে দেখতে হবে না আমার যা ইচ্ছে তাই করব আর বগ বগ না করে তাড়াতাড়ি চল নাহলে ফেঁসে যাব।

~~ দাঁড়া সৃজনকে একটা কল করে নেই ওইখানে সব ঠিক আছে কিনা।
ওরে আমার ফোন কই… আমি মনে হয় ফোন বাসায় রেখে আসছি তুই দুই মিনিট এখানে দাঁড়া আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।

~~এই হাতির ডিম তুই এখন কোথায়ও যেতে পারবি না সামান্য একটা ফোনের জন্য আমি তোর গলায় ঝুলতে চাই না। (আদির জামার কর্লার ধরে)

আদি: আরে এভাবে ধরছিস কেন? আমি যাব দেন ফোনটা নিয়ে চলে আসব।

~~ কোনো প্রয়োজন নেই আমরা সেখানে পৌঁছেই সব জানতে পারব তবুও তুই বাসায় যেতে পারবি না।

আদি: হিমু একটু বোঝার চেষ্টা কর আমার ফোন সঙ্গে না থাকলে মনে হয় আমি আমার গার্ল ফ্রেন্ডকে হারিয়ে ফেলছি।

~~ একদম ন্যাকামি করবি না এখনি বাইক স্টার্ট কর নাহলে এখন তোর কপালে কি আইটেম আছে তা আমি নিজেও জানিনা।

আদি: আচ্ছা চল।

আর এক মূহুর্ত সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আদি ওর মোটর গাড়ি স্টার্ট করল অবশেষে আমরা পালাতে সফল হলাম। বিয়ে মানেই প্যারা আর এই প্যারায় হিমু কখনও পরবে না। রাতের অন্ধকারে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের গন্তব্য স্থলে।

~~ এটা কি বাইক নাকি কোনো রিক্সা? (রেগে)

আদি: তোর চোখে কি ন্যাবা হয়েছে নাকি যে আমার বিএম ডব্লিউ বাইককে রিক্সা বলছিস?

~~ যেভাবে চালাচ্ছিস কোনো অন্ধ লোকও বলবে এটা রিক্সা না সারা রাতে কেন এক বছরেও আমরা পৌঁছাতে পারব না।

আদি: তোর স্থানে গার্ল ফ্রেন্ড থাকলেই দেখিয়ে দিতাম এটা বিএম ডব্লিউ নাকি সিএম ডব্লিউ। আমার গার্ল ফ্রেন্ড আমায় আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরবে আর আমি ওর হাতের স্পর্ষ পেয়ে সুখের জোয়ারে ভাসতে থাকব মানে ফুল গিয়ারে চালাব।

~~ আদি আমরা এখন বিয়ের হাত থেকে পালাচ্ছি এভাবে বাইক চালালে বাবা রিক্সা নিয়ে আমাদের পিছনে আসলেও ধরে ফেলবে।

আদি: এতোই যখন বিএম ডব্লিউতে উড়তে চাচ্ছিস একবার গার্ল ফ্রেন্ডের মতো জড়িয়ে ধরলেই তো হয়।

~~ আমি তোকে জড়িয়ে ধরব? কখনও না এতোদিনে ধরিনি আজও ধরবো না।

আদি: কেন একটু জড়িয়ে ধরলে কি আমার বেবির মা হয়ে যাবি?

~~ কি বললি তুই…আমি হবো তোর বেবির মা? তোর সঙ্গে বিয়ে হলেও না।

আদি: এমন করছিস কেন… একটু জড়িয়ে ধরলে এতোক্ষনে আমরা পৌঁছে যেতাম প্লীজ একটু ধরনা প্লীজ প্লীজ…

~~ ওকে ওকে ধরছি তবুও দ্রুত চালা।

আদি: এখন দেখাচ্ছি এটা রিক্সা নাকি বিএম ডব্লিউ।

১ ঘন্টা পর আমরা আমাদের গন্তব্য
স্থলে পোঁছাই হয়তো আমাদের বাবা মা এতোক্ষনে বিভিন্ন স্থানে লোক লাগিয়ে দিয়েছে আমাদের খোঁজার জন্য কিন্ত আমরা তো তাদের থেকে দ্বিগুণ চালাক তাই তাদের অজানা স্থানে চলে এসেছি। এসে কিছুটা অবাক হই কারন বাড়িটি বেশ সুন্দর করে সাজানো ঠিক বিয়ে বাড়ির মতো।

~~ আদি এখানে কি কোনো অনুষ্ঠান নাকি?

আদি: জানিনা সৃজন তো আমায় তেমন কিছু বলেনি চল ভিতরে গিয়ে দেখি।

~~ হুম চল।

বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই কিছু ভূত পেত্নী আমাদের চোখে পরতেই আমরা দুজনেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম। ( কিছুটা অজ্ঞানের মধ্যেও পালানোর চেষ্টা)

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_৩
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।

বাসায় প্রবেশ করতেই কিছু ভূত পেত্নী আমাদের চোখে পরতেই আমরা দুজনেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম।( কিছুটা অজ্ঞানের মধ্যেও পালানোর চেষ্টা।)

কিছুক্ষন পর নিজেকে একটা রুমে আবিস্কার করলাম চোখ খুলতেই দেখলাম আমার চারদিকে অনেক ধরনের ভুত পেত্নী দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আদিকে কোথাও দেখতে পেলাম না। আদি কোথায়.. ও তো আমার সঙ্গেই ছিল। তারমানে কি এই ভূত পেত্নীগুলো আদির ঘাড় মটকে দিয়েছে, এবার কি আমার পালা?

বাবা: অনেক লুকোচুরি খেলা হয়েছে কিন্তু আর নয় এই মূহুর্তে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে তাড়াতাড়ি হিমুকে রেডি করে নিয়ে এসো।(মাকে উদ্দেশ্য করে বলল)

বাবা চলে যাওয়ার পর..
~~ মা আমি এই বিয়ে করতে চাইনা প্লীজ তুমি বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলো।

মা: একদম চুপ আর কত জ্বালাবি আমাদের? আদির সঙ্গে তোর বিয়ে হবেই।

~~ ও মা প্লীজ এই বাচ্চা মেয়েটার সঙ্গে এমন অত্যাচার করো না!

মা: একটাও কথা না আর শোন এখান থেকে পালানোর চেষ্টা ভুলে করতে যাস না বিপদে পরে যাবি কারন আমার স্বামী বাসার চারপাশে লোক লাগিয়ে দিয়েছে।

~~ মা তোমরা আমার সাথে এমন করতে পার না।

মা: একদম ন্যাকামি করবি না আমি যাচ্ছি ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হবি নাহলে তোর বাবাকে পাঠিয়ে দিব।

কেউ আমার মনের কষ্ট বুঝল না। আজ একটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে অন্তত পালাতে পারতাম তাও নেই। অবশ্য থাকলে লাভ হতো না কারন আমি তো বিয়েই করতে চাই না শুধু প্রেম করে টিডিং টিডিং করে ঘুরে বেড়াতে চাই কিন্তু সেটা আমার রাক্ষস বাবা ছিঁনিয়ে নিয়েছে ধুর ভাল লাগে না।

কোনোরকম নিজের সঙ্গে শাড়িটা পেঁচিয়ে পৃথিবীর সব কষ্ট মাথায় নিয়ে বসে আছি। কিছুক্ষন পর মা বোনের প্রবেশ তারা এসে আমায় বিয়ের স্থানে নিয়ে চলল। মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলার সাহস পেলাম না শুধু মাত্র দুই বাবার জন্য। বিয়ের স্থানে এসে দেখি আদি বসে আছে ইচ্ছে করছে এখুনি আদি গাদিকে গিলে খাই অবশ্য এখানে ওর কোনো দোষ নেই কারন আমরা দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার। সাধারন ভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন করা হয় আর আমরা দুজনে বিয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ হই অঃতপর আমাদের নিয়ে বাসায় এলো। বাবা মা আমায় কিছু না বলেই আদির সঙ্গে তার বাসায় পাঠিয়ে দিল। যতদূর জানি মেয়ে শশুর বাড়ি যাওয়ার সময় কাঁদে কিন্তু আমি সেই সুযোগটা পেলাম না ন্যাকা কান্না থেকে আমি বঞ্চিত হলাম।

আন্টি (আদির মা) আমাকে বাসায় এনে এক অন্ধকার রুমে মানে অন্ধকার নামক বাসর ঘরে রেখে দিয়ে চলে গেল। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এটা আদির রুম।
কিছুক্ষন পর রুমে দ্বিতীয় ব্যাক্তির প্রবেশ।

আদি: আমার দিকে রাক্ষসীর মতো তাকিয়ে আছিস কেন?

~~ আদি আমার বিয়ে হয়ে গেছে আমি আর প্রেম করতে পারব না আমার জীবন শেষ তুই আমার জীবন শেষ করে দিয়েছিস।

আমি: এ তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ করবি নাকি মেরে পেত্নী বানিয়ে দেব?

~~ আমি তোকে বিয়ে করিনি মানে বর হিসেবে মানি না।

আদি: তোকে বউ হিসেবে মানতে আমার বয়েই গেছে। আমার বউ তো হবে আমার স্বপ্নের সেই রাজকুমারী.. সর তো আমি ঘুমাব।

~~ আদি তুই এমন করতে পারিস না!

আদি: শুধু তোর জন্য আমি বিয়ের জালে ফেঁসে গেছি তোর জন্যই হয়তো আমার স্বপ্নে সেই রাজকুমারী আর আসবে না। তুই আমার জীবনে একটা লম্বা প্যারা।

~~ কি বললি তুই.. এই হাতির ডিম কি করছি আমি? ( আদির বুকের উপরে উঠে গলা চেঁপে ধরে)

আদি: হিমু ছাড় আমায় নাহলে মরে যাব আর আমি মরে গেলে কিন্তু কোনোদিন আমার বেবির মা হতে পারবি না।

~~ হ্যাঁ তোকে মেরেই ফেলব তারপর সকালের হেডলাইন হবে “বাসর ঘরে বউয়ের হাতে স্বামী খুন” এটা হবে আমাকে বিয়ে করার শাস্তি।

আদি: পালানোর সময় বাসায় ফোন রেখে গেছিলাম সেটা বাবার হাতে পড়ায় ধরা খেয়েছি বাবা সৃজনকে কল করে ওকে ভয় দেখিয়ে এসব করেছে আর সৃজনদের বাসায় নাকি আজ একটা অনুষ্ঠান ছিল সেই সুযোগে..

~~ তোর মতো সয়তানের সঙ্গে সারাজীবন কাঁটাতে হবে এটা ভাবলেই আমার কলিজা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে.. কি করব আমি এখন?

আদি: আয় আমরা বাসর করি তাহলে সব প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে। (দাঁত কেলিয়ে)

~~ কি?? ( রাগি চোখে)

আদি: না মানে বলিছি অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পর আমি ঘুমাইলাম।

আমার সাথে এমনটা হবে তা কখনও ভাবিনি বিয়ে মানে তো স্বামীর দাসী হয়ে থাকা আমি আর আগের চলতে পারব না প্রোপোজ তো দূরের কথা আমার দিকে কেউ ঘুরেও তাকাবে না। আমি আদির দাসী হবো কখনও না দশবার মরে গেলেও না নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেও পারিনি।
সকালে ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আবিস্কার করি আদির বুকে…

~~ ওই আদি গাদি তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি কেন? ( বেড থেকে নেমে)

আদি: তুই আমায় আগে জড়িয়ে ধরেছিস তাই আমি ভাবলাম তুই স্বামীর অধিকার চাস তাই আমিও ধরেছি।

~~ আমি তোকে স্বামী হিসেবে চাইব? এই শোন আমায় পাগলা কুকুরে কামড়ায়নি যে তোকে আমার স্বামী ভাবব। আমি বালিশ ভেবে জড়িয়ে ধরেছি এছাড়া অন্য কিছু নয়।

আদি: আমিও তোকে সেই রাজকুমারী ভেবে জড়িয়ে ধরেছি এছাড়াও অন্যকিছু নয়। (দাঁত কেলিয়ে)

আদির সঙ্গে ফালতু বগ বগ না করে দ্রুত সাওয়ার নিয়ে নিচে চলে আসি কারন নিচের পরিস্থিতিটাও তো দেখতে হবে। আচ্ছা আঙ্কেল আন্টি কি আমায় আগের মতো চলতে দেবে নাকি বাসা বন্দি করে রাখবে.. যাই করুক
ভালো বউয়ের মতো আন্টির মন জোগাতে হবে নাহলে স্বাধীনতার পতাকার মতো উড়তে পারব না।

অভি: জানেমন তোমায় খুব সুন্দর লাগছে ইচ্ছে করছে তোমায় নিয়ে প্রেমের রাজ্য ভ্রমন করে আসি।

~~ এই সয়তানের ডিব্বা একদম ফালতু কথা বলবি না আমি তোর ভাইয়ের বউ আমার সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলবি বুঝেছিস..

অভি কিছুটা আমার কাছে এসে বলল…
অভি: আমি জানি তোমাদের বিয়ে হলেও তোমরা এই বিয়ে মানো না আর মানলে তোমরা অবশ্যই কাল বাসর করতে।

~~আমরা বাসর করেছি কিনা তা তুই জানিস?

অভি: অবশ্যই কারন কাল রাতে দরজায় কান পেতে সব শুনেছি। (বলেই ২৮টা দাঁত বের করে দিল)

কি সয়তান ছেলেরে বাবা… এ ছেলে তো আমায় যে কোনো সময় ভাগিয়ে নিয়ে যাবে অবশ্য আদির যায়গায় অভি থাকলে ভালোই হতো তাহলে আজ এই হাদারাম আদির সঙ্গে বিয়ে হতো না। ভাই কেন যে তুই আদির আগে ডাউনলোড হলি না…

আদির মা: হিমু তুমি একা যে আদি কোথায়?

এইতো সুযোগ আদির গাদিকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার তাই মুখ কালো করে বললাম…
~~ আসলে আন্টি আদি এখনো ঘুমাচ্ছে আমি ওকে অনেক ডেকেছি কিন্তু আমাকে বকা দিয়ে পাঠিয়ে দিল।

আদির বাবা: কি অপদার্থটা তোমায় বকা দিয়েছে ওর সাহস তো কম নয় ওকে নিচে আসতে দাও ওকে গুলি করে মারব।

এইতো হিমু তোর বুদ্ধি কাজে দিয়েছে এবার আদিকে কে বাঁচায়। আমাকে এই বিয়ের হাত থেকে যেদিন মুক্তি দিয়ে পালাতে সফল হবি সেদিন তোর পিছু ছাড়ব এর আগে নয় আঙ্কেল আন্টিকে দিয়েই তোকে জ্বালিয়ে কয়লা বানিয়ে দিব।

অভি: বাবা ওই তো ভাইয়া চলে এসেছে।

আয় আয় তোর জন্য সুন্দর গিফট তৈরী করা হয়েছে। (মনে মনে)

আদির বাবা: আদি তুই নাকি হিমুকে বকা দিয়েছিস, তোর সাহস কিভাবে হয় আমার পরিবারের একমাত্র বড় ছেলের বউকে বকা দেওয়ার?

(এটা কি হলো সকাল সকাল বাবা আমায় বকা দিচ্ছে কেন আমি আবার কি করলাম নাকি আমার বিরুদ্ধে কোনো স্বড়যন্র করছে… হিমু কেন হাসছে তার মানে আমাকে নিয়ে এই পেত্নী নিশ্চয়ই কিছু বলেছে তোকে তো পরে দেখে নিচ্ছি। ভাতের সঙ্গে বাবার এক গাঁদা বকুনি ফ্রি খেয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেব ঠিক তখন আমার রাক্ষস বাবার ডাক পরল..)

আদির বাবা: আদি আজ থেকে প্রতিদিন তোর সঙ্গে বাইকে করে হিমুকে নিয়ে যাবি এবং বাসায় নিয়ে আসবি আমি চাইনা আমার ছেলের বউ একা কলেজে যাক।

আদি: আচ্ছা আগের মতোই মাঝে মাঝে নিয়ে যাব কিন্তু প্রতিদিন পারব না।

আদির বাবা: কেন পারবি না?

আদি: আমার কলেজের মেয়েরা ওকে যদি আমার বাইকের পিছনে প্রতিদিন দেখে তাহলে আর কোনো মেয়ে আমার প্রোপোজে রাজি হবে না।

আদির বাবা: কি বললি তুই? আরেকবার বল তো…

আদি: তোমরা সবাই যেটা শুনেছ সেটাই বলেছি।

আদির বাবা: আমার বন্দুকটা নিয়ে এসো এখুনি আমি ওর মাথার খুলি উড়িয়ে দেব।( আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বলল)

ওরে আঙ্কেল তো রেগে পুরাই আগুন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে আঙ্কেলের শরীরে ডিম ছুড়ে মারলে নিমিষেই অমলেট হয়ে যাবে। আঙ্কেলের কথা শুনে মূহুর্তেই আদি তার পা জড়িয়ে ধরল…

আদি: ও বাবা আমার বউকে প্রতিদিন বাইকের পিছনে বসিয়ে কলেজে নিয়ে যাব প্রয়োজনে ওকে নিয়ে সম্পূর্ন কলেজ দশবার চক্কর দিব তবু এমনটা করো না।

আদির বাবা: আচ্ছা ঠিক আছে এখন ওকে নিয়ে কলেজে যা।

আদি আর কিছু না বলে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল আর আমিও ওকে অনুসরন করে পিছনে চলে আসলাম। আমি বাইকের পিছনে উঠি কিছুটা পথ যেতেই বাইক থামিয়ে বলল…

আদি: আমার বাইকের পিছনে প্রতিদিন যেতে হলে তোকে একটা শর্ত মানতে হবে।

~~ কি শর্ত? বল শুনি…

আদি: আমাকে জড়িয়ে ধরতে হবে মানে আমি খুব স্পীডে চালাই তো তাই।

~~দাঁড়া এখনি আঙ্কেলকে কল করতেছি।

আদি: কর আমার কোনো সমস্যা নেই কারন আমি এখন বাইরে পালাতে এক সেকেন্ডও প্রোয়োজন হবে না। আমি পালানোর পর তোকে একটা টাকলা নানার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমায় দাওয়ার করিস রোস্ট খাওয়ার জন্য এখন আমি আমার রাজকুমারীর কাছে গেলাম…

~~ আরে জড়িয়ে ধরছি তো।

আদি: এইতো বুদ্ধিমতী মেয়ে শক্ত করে ধর।

( ওর নরম হাত দিয়ে আমায় আস্তে করে জড়িয়ে ধরল। ওর হাতের স্পর্ষ পেয়ে মনে হচ্ছে আমার কলিজা এখনি মাংস হাড্ডি ফেঁটে বাইরে বেরিয়ে আসবে। এর আগেও হিমু আমায় জড়িয়ে ধরেছে তবে কখনও এমন অনুভূতি হয়নি।)

#চলবে
(প্লীজ পড়ে কেউ চুপি চুপি চলে যাবেন না অন্তত একটা রিয়াক্ট দিয়ে যাবেন আর তার পাশাপাশি কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here