#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ২
রোশনি:”আপু চকলেট বক্স টা কিন্তু আমার…!”
নওশি:”না! তুই কেন খাবি এটা আমার ভাইয়া আমাকে দিয়েছে”
রোশনি:”না আপুউউউ, তোর মানেই আমার আমার মানেই তোর। দে না প্লিজ!”
নওশি:”ইশ মোটেই না”
বিকালে বারান্দায় বসে বসে সাহরাফ সাহেব দুই মেয়ের চকলেট সংক্রান্ত ঝগড়া শুনছিলেন আর মনে মনে হাসছিলেন। ছেলেমেয়েদের এসব ছেলেমানুষি গুলো তিনি খুব উপভোগ করেন।
তিনি খুব ভালো করেই জানেন চকলেট লড়াইয়ে যেই জিতুক না কেন, চকলেট গুলো খেতে পরিবারের কেউই বাদ যাবে না।
নিজের মনেই হেসে উঠলেন তিনি।
“কি ব্যাপার! একা একা হাসছ যে?”
পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্ত্রী জাহরা
“আরে মেয়ে গুলোর কান্ড টা একবার দেখেছ? দুপুরে তোমার বড় ছেলে সায়ান কি যেন চকলেট এনেছে তাই নিয়ে মেতেছে কে বেশি নেবে”
“আর মেয়েদের বাবা বসে বসে ঝগড়া শুনছে?”
“আরে থাকুক না কি দরকার!”
স্বামীর উত্তর শুনে হেসে উঠলেন জাহরা খাতুন। তিনিও খুব উপভোগ করেন ছেলেমেয়েদের খুনসুঁটি, যেন ছেলেবেলা ফিরে পান।
“আচ্ছা বেশ….তোমাকে চা দিব?”
“হুম দাও”
দুই ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে সাহরাফ রহমান আর জাহরা খাতুনের সংসার। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেই সুখ বা শান্তি কোনোটারই অভাব নেই তাদের।
তিনি কলেজের অধ্যক্ষ পাশাপাশি ব্যবসা করেন তিনি।
একটা প্রাইভেট ফার্ম আছে তার।
খুব কষ্ট করে আজকের এই অবস্থানে তিনি এসেছেন, বলা যায় জিরো থেকে হিরো।
তার প্রচন্ডরকম পরিশ্রম করেই আজ তিনি এখানে, নিজেদের জমিজায়গা থাকলেও অনেকগুলো ভাইবোনের মধ্যে কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে, তার বাবামায়ের পড়াশোনার প্রতি সচেতনতা অনেক এগিয়ে নিয়েছে তাদের।
চায়ের কাপ হাতে ভাবছিলেন সাহরাফ সাহেব
বাবা মায়ের কথা মনে পড়তেই চোখ ভিজে উঠল তার।
জাহরা চা নিয়ে এসে দেখেন সাহরাফ সাহেবের চোখ ছলছল করছে.. অবাক হয়ে গেলেন তিনি।
আস্তে আস্তে পাশে বসে হাতের উপর হাত রেখে বললেন,
:আজ তোমার কি হয়েছে বলো তো? এই হাসছ এই আবার চোখ ছলছল করছে!!
সাহরাফ সাহেব স্ত্রীর কথাতে সম্বিত ফিরে পেয়ে বললেন,
“আসলে বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে!”
বাবা মায়ের কথা মনে হয়ে বাচ্চাদের মতো হয়ে যান সাহরাফ সাহেব,
স্বামীর মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন জাহরা। বিয়ের পর এবাড়িতে আসার পর আস্তে আস্তে তিনি অবাক হয়ে উপলব্ধি করেছেন এবাড়ির মানুষদের ভালবাসা, অবাক হয়ে যেতেন যে মানুষ এত সরল হয় কিভাবে। বিশেষত তার শ্বশুর শাশুড়ি। এককথায় অসম্ভব ভালো মানুষ তারা। নিজের প্রানপ্রিয় বাবা মাকে ছেড়ে, ভাইবোন ছেড়ে সেই অষ্টাদশী বালিকা থেকে প্রথম যখন এবাড়িতে বউ হয়ে পা দিয়েছিলেন তিনি সেদিনই তার শ্বশুর বলেছিলেন,
“তুমি আমার বড়মা”
শুনে সস্নেহে হেসে উঠেছিলেন তার শাশুড়ি। বাড়ির বড় বউ তিনি
নিজের মেয়ের থেকে আদর করতেন তার শাশুড়ি, বড়মা ছাড়া তার শ্বশুর ডাকতেন না কখনো। কি সরলতাই না ছিল তাদের মাঝে। কিন্তু মানুষ তো আর চিরদিন বেঁচে থাকেনা, সৃষ্টিকর্তার আহবানে পরপারে পাড়ি জমায় প্রিয় সেসব মানুষেরা, রেখে যায় একরাশ স্মৃতির পাতা… যাতে লেখা থাকে শুধুই ভালোবাসার কথা!
নিজের অজান্তে তারও চোখ ভিজে উঠল। আল্লাহ যেন তার বাবা মা আর শ্বশুর শাশুড়িকে জান্নাত দান করেন।
নিজেকে তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে দেখেন তিনিও এখনো উদাস হয়ে তাকিয়ে আছেন বাইরের দিকে। সাহরাফ সাহেবের হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন…
“মানুষ কি আর চিরদিন বেঁচে থাকে বলো? দেখ তো আমরাও একদিন চলে যায়, রেখে যাব স্মৃতি।”
একটু থেকে আবার বললেন,
“আমাদের মা বাবা চলে গেছে, আর আমাদের ছেলেমেয়েগুলোই আমাদের বাবা মা, দেখ আল্লাহ আমাদেরকে কত গুলো বাবা মা দিয়েছেন। বাবা মায়ের জন্য দোয়া কর ভালো লাগবে।”
“ঠিকই বলেছ তুমি, আল্লাহ ভাল রাখুন আমাদের বাবা মাকে।”
“বাবা ও বাবা… মা….”
ডাকতে ডাকতে সামনে এল তাদের বড় ছেলে সায়ান।
সায়ান:”ওহ, তোমরা এখানে বাবা!”
সাহরাফ সাহেব: “কি হয়েছে বাবা?”
সায়ান: “বাবা আমাদের কোম্পানির এবারের প্রোজেক্টটা অনেক বড় একটা প্রোজেক্ট, আমাদের রেপুটেশন এর ব্যাপার, আমি চাচ্ছি আমার পাশাপাশি তুমিও একটু হেল্প করো আমাকে।”
“তুই কি নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিস?”
“না বাবা আসলে তুমি অনেক এক্সপেরিয়েন্সড মানুষ তো, তাই আর কি, আর এত বড় একটা প্রোজেক্ট……”
“এত ভয় পাস না তো আছি তো আমি”
আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি রান্না শেষ করি বলে চলে গেলেন জাহরা…
“ঠিক বলছ বাবা পারব তো???”
“হ্যাঁ ইনশাআল্লাহ পারবি, আল্লাহর উপর ভরসা আর নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখ… আর শোন প্রত্যেকটা মিটিংয়ের জন্য নিজের সর্বোচ্চ প্রিপারেশন নিবি।”
“আচ্ছা বাবা।”
বাবার কথাতে অনেক ভরসা পেল সায়ান।
সাহরাফ সাহেব মুখে যদিও বললেন পাশে থাকবেন, তিনি আসলে মেন্টালি ছেলের পাশে থাকবেন। তিনি চান ছেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ুক, অভিজ্ঞতা তৈরি হোক।
তিনি চান তার সন্তানের সব দিক দিয়ে ভাল হোক, দক্ষ হোক…
যেমন টা চাই পৃথিবীর সব বাবামায়েরা।
.
.
চলবে…