#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_২২
#Jannatul_Ferdos
ছেলের এমন কথায় তনিমা বেগম ছল ছল নয়নে তাকালেন।তিনি নিজে ও জানেন না ছেলের এই প্রশ্নের উত্তর।
“মা ও মা বলো না কিছু
” আমি জানি রে বাবা।তুই তো দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝলি না রে সোনা।এখন খুঁজে কি হবে?যা যাওয়ার তা তো গেলোই।আফসোস তুই শুধু বুঝলি না।
“আমি বুঝিনাই গো আম্মু মেয়েটা এতো অভিমানী। আমি যে ওকে এতোটা আঘাত করেছি আমি বুঝতে পারি নাই।
“শুধু অভিমান নারে বাপজান মেয়েটার আত্মসম্মান খুব বেশি তাও মুসকানের দিকে তাকিয়ে তোর খারাপ ব্যবহারের পরে ও থেকে গেছিল কিন্তু তুই সেদিন একটা বাইরের মানুষের সামনে তাকে অপমান করলি।স্ত্রী হিসাবে মানতে পারিস না ঠিক আছে তাই বলে কি বাইরের মানুষের সামনে ও মেয়েটাকে অপদস্ত করবি?
” আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিলাম আম্মু।নিরুপমা অরিত্রার আম্মুকে অসম্মান করেছিল আমি আমার মাথা ঠিক রাখতে পারি নাই।
“আর অরিত্রার মা যে নিরুপমাকে অপমান করলো?তুই জানিস মেয়েটা তার আত্মসম্মানে এক চুল আঘাত পড়তে দেয় না সেখানে তাকে যা নয় তা বলে অপমান করা হলো আর তুই তার স্বামী হয়ে শুধু দেখে গেলি প্রতিবাদ করলি না।নিরুপমার জায়গায় অরিত্রা হলে তার অপমান দেখতে পারতি?
উৎস চুপ থাকে।তার আসলেই এইখানে কিছু বলার নেই।শুধু বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট।সে শুধু যে মুসকানের জন্য নিরুপমাকে খুঁজছে তা না সে নিজের জন্য ও খুঁজছে।নিরুপমা তার অস্তিত্বে মিশে গেছে দেড়িতে হলেই সে বুঝতে পেরেছে তাকে অনুভব করতে পেরেছে।শুধু একটাই চাওয়া একটাবার নিরুপমা ফিরে আসুক মনের জেলখানায় বন্দি করে রাখবে যাতে পালাতে না পারে।
নিরুপমা ফোনে মুসকানের ছবি দেখছে। মুসকানের সাথে নিরুপমার অনেক ছবি তোলা আছে।কিছু সংখ্যক সেল্ফি আর কিছু সংখ্যক প্রেমা অপ্রস্তুত ভাবেই তুলেছিল।কাল মুসকানের জন্মদিন। ভাবতেই তার বুক ভারি হয়ে আসছে।সেতো কখনো মুসকানকে অন্যের মেয়ে হিসাবে দেখে নি।তার প্রথম সন্তান মুসকান এই রীতি সে মেনে চলে।আর তার প্রথম সন্তানের জন্মদিন সে থাকতে পারবে না।যদি ও জন্মদিন সে পালন করত না কেননা সাথে যে কাল অরিত্রার ও মৃত্যু বার্ষিকী। কিন্তু মেয়েটাকে তো নিজে হাতে একটু সাজিয়ে দিতে পারত না।আদর করতে পারত।নিরুপমার এসব ভাবনা ছেদ ঘটিয়ে দিলরুবা চৌধুরি আসে।।
“নিরু কি করছিস?
” এই মুসুর ছবি দেখি ফুফু।কাল ওর জন্মদিন। মেয়েটাকে একটু আদর করতে পারব না।
“কেন পারবি না অবশ্যই পারবি
” কিভাবে ফুফু?
“উৎস ফোন দিয়েছিল কাল নাকি মুসুর জন্মদিনের পার্টি রেখেছে।আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে উৎস তোকে ফাঁদে ফেলে ধোরে ফেলার প্লান করছে।ও জানে তুই মুসুর জন্মদিনে অবশ্যই যাবি।
” চিন্তা করো না ফুফু আমি যাবো এবং উৎসের সামনে দিয়েই আবার ফিরে আসব
“আমি চিন্তা করছি না কারন তার ব্যবস্থা আমি আরো আগেই করে রেখেছি
” কি ব্যবস্থা?
“উৎসকে বলেছিলাম যেতে পারব না ও বলল কেন তখন বললাম আমার বড় ননোদের মেয়ে এসেছে ওকে রেখে কিভাবে যাই?উৎস বলল আরে সমস্যা নেই তাকে নিয়েই আসো।তুই বোরকা পড়েই যাবি যেভাবে ভার্সিটিতে যাস।আর আমি ওকে বলেছি তুই পর্দা করিস কারোর সামনে তুই যাবি না। ও বলেছে সমস্যা নেই
” তুমি অনেক ভালো গো ফুফু
“ধুর পাগলি মেয়ে।মেয়ের জন্য মা এইটুকু করতে পারবে না??
নিরুপমা দিলরুবাকে জড়িয়ে ধোরে।
সকালে উৎস মসজিদে মিলাদ দিয়ে এতিম বাচ্চাদের খাইয়ে আসে।দুপুরে ও তাদের খাওয়াবে।কিছু গরীব লোকদের দান সদকা করে।উৎস নিজেকে খুব কষ্টে কন্ট্রোল করছে।এক বছর হয়ে গেল অরিত্রা তাকে ছেড়ে চলে গেছে।মুসকানকে কোলে নিয়ে দেওয়ালে টাঙানো অরিত্রার ছবির সামনে এসে দাঁড়ায়।
” অরি দেখো তোমার মুসকান কতোটা বড় হয়ে গেছে।তুমি চলে গেছো এক বছর হয়েছে সাথে তোমার মেয়ের ও এক বছর হয়ে গেল।তুমি চলে যাওয়াই ওর মায়ের অভাব পূরণ করেছিল নিরুপমা আমার ভুলে সে ও হারিয়ে গেল।তুমি দোয়া কইরো অরি যেন আমি নিরুপমাকে খুঁজে পাই।
উৎসের চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে।অরিত্রার শোকে না নিরুপমার শোকে তা সে জানে না।
সন্ধ্যার দিকে উৎসের কথা অনুযায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।তার চোখ শুধু নিরুপমাকে খোঁজায় ব্যস্ত।দিলরুবা চৌধুরি, রুবায়েত আর নিরুপমা উপস্থিত হয়।উৎস তার ফুফুকে জড়িয়ে ধোরে।নিরুপমা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে উৎসকে দেখছে।কতোদিন পর মানুষটাকে আবার দেখলো।এইতো কিছুদিন আগে ১৫ দিনের মতো হবে দেখে ছিল কিন্তু নিরুপমার কাছে মনে হচ্ছে কতো যুগ পর দেখছে প্রিয় মানুষটাকে।
“কেমন আছো ফুফু?
” আছি ভালোই।তোকে আর কি জিজ্ঞেস করবো?ভালো না থাকার তো আর কারন নেই। এখন তো নিরুপমা নেই…দিলরুবা কিছুটা তিরস্কার সুরে বলল
“আহ মা থামো না।আজকের দিনে এমন ভাবে বইলো না
” নারে রুবায়েত সমস্যা নেই।এটা আমার প্রাপ্য।যাক গে বাদ দে চল ভিতরে আয়।
কথাটি বলেই নিরুপমার দিকে জিজ্ঞাসু চাহনিতে তাকালো
“ও সুরাইয়া। বলেছিলাম না আমার ননোদের মেয়ে আসবে
” ওহ হ্যা।আপনি ও ভেতরে আসুন।
নিরুপমা কিছু না বলে হাটা শুরু করে।মানুষটার সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। নিরুপমা চোখ বুলিয়ে মুসকানকে খুঁজে।তখন রুবায়েত এসে নিরুপমাকে নিয়ে যায় প্রেমার কাছে।মুসকান প্রেমার কাছে ছিল।
“প্রেমা এই যে আমার ফুফাতো বোন।মুসকানকে দেখে ওর নাকি কোলে নিতে ইচ্ছা করছে কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না।
” আরে লজ্জার কি আছে।এই নাও কোলে নাও
নিরুপমা মুসকানকে কোলে নেয়।তারপর মুখে চুমু খেয়ে আদর করে।মেয়েটাকে পেয়ে যেন বুকে শান্তি পাচ্ছে সে।কতোগুলো মাস পর সে মেয়েটাকে আদর করছে।নিরুপমা গলাটা একটু ভারি করে প্রেমাকে বলে..
“আমি কি মুসকানকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করতে পারি?
” হ্যা সমস্যা নেই ঘুরো
“ধন্যবাদ
নিরুপমা মুসকানকে নিয়ে অন্যদিকে চলে আসে।এবার অজস্র চুমু খায় গালে মুখে।কান্না করে দেয় নিরুপমা। কোনো রকম কান্না আটকে রেখে সে মুসকানের সাথে কথা বলতে শুরু করে…
” মাম্মা তোর খুব অভিমান মায়ের উপরে তাই না?মা তোকে ছেড়ে চলে গেছি?তুই অনেক কেঁদেছিস তাই না মা।কি করব বল তোর বাবা যে আমাকে ভালোবাসে না। আমি তার উপরে রাগ করে তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাই নারে সোনা?আমাকে ক্ষমা করে দে বাবুই।
কথাটি বলেই যখন নিরুপমা পিছনে ঘুরে। তার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। তার সামনে উৎস দাঁড়িয়ে আছে তবে কি উৎস সব শুনে ফেললো?তাকে চিনে ফেলল?নিরুপমা থর থর করে কাঁপতে শুরু করলো।
চলবে!!