এবং স্ত্রী পর্ব – ২৩

#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_২৩
#Jannatul_Ferdos

“আপ আপ আপনি?
” হ্যা আমি কেন কোনো সমস্যা?
“ক ক কই নাতো কি সমস্যা হবে?
” ও আচ্ছা। আমি মুসকানকে নিতে এসেছিলাম
“ওহ হুম নিন।
উৎস একটা ছোট হাসি দিয়ে মুসকানকে নিয়ে চলে যায়।নিরুপমা এবার হাফ ছেড়ে বাঁচে যে না উৎস তাকে চিনতে পারে নি।
উৎস ভেবেছিল নিরুপমা আসবে কোনো না কোনো ভাবে কিন্তু নাহ নিরুপমার কোনো দেখাই মিলল না।সে এই নিয়ে আবার ও হতাশার চরম পর্যায়ের শিকার হলো।সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে একে একে চলে যেতে লাগল।
” প্রবীর, তনিমা থাক তাহলে তোরা আমি যাই…দিলরুবা বলল
“কয়টা দিন থেকে যেতি আপা…প্রবীর খান বললেন
” নারে অন্যদিন এসে থাকব
“তা বললে হয় ফুফু?…উৎস একটু মুচকি হাসি দিয়ে দিলরুবা চৌধুরিকে বলল।
” পরে আবার আসব বাজান
“নাহ ফুফু তোমাকে থেকে যেতেই হবে…
উৎসের এমন জোরাজোরিতে বেশ বিপাকে পড়লেন দিলরুবা। নিরুপমার তো অবস্থা খারাপ কিছুতেই এই বাড়িতে থাকা যাবে না তাহলে নিজেকে কি ভাবে লুকিয়ে রাখবে?
” ইয়ে মানা উৎস বাবা আমি পরে আসব। আজ যাই রে।
“না ফুফু আমি কোনো কথা শুনব না
” বাবা দেখ সুরাইয়াকে নিয়ে এসেছি ও বাড়িতে চলে যাক তারপর না হয় আমি আবার আসব।
“না ফুফু আমি কোনো কথা শুনব না তোমাকে থাকতেই হবে।ও থাকল আমাদের বাসায় কি সমস্যা?
নিরুপমা উৎসকে ইচ্ছা মতো গালি দিচ্ছে।শয়তান, বেয়াদব ইতর, ছোটলোক, বাদর,হনুমান,পচা শামুক যা মন চাচ্ছে।এতো নাছড়বান্দা ছেলে উৎস নিরুপমা আগে জানত না।কিন্তু এখানে থাকাটা আটকাতে হবে।সে ইশারায় রুবায়েতকে ফোন দেখায়।সে বোঝায় তাকে কল দিতে।রুবায়েত আস্তে করে অন্য রুমে গিয়ে নিরুপমাকে কল দেয়।
” ইয়ে মানে ফুফু না মানে মামি আব্বু কল দিয়েছে আমি একটু আসছি
“আচ্ছা ঠিক আছে যা
নিরুপমা রুম থেকে বেরিয়ে রুবায়েত এর কাছে যায়।ততক্ষণে কল কেটে দিয়েছে।
” ভাবি কি করবে এখন?
“কিছু করার জন্যই ফোনটা দিতে বলেছি। এখন আমি ওইখানে যা যা বলব তুই শুধু আমার সাথে তাল মিলাবি ঠিক আছে?
” আচ্ছা চলো।
নিরুপমা এবার কাঁদো সুরে বলে..
“মামি আম্মু নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।আমাকে যেতে বলেছে।রুবায়েতকে ও মাত্র কল দিয়েছিল।
” হ্যা হ্যা আমাকে ও ফুফা কল দিয়েছিল
“এখন কি করবো। তুমি তো এবাড়িতে থাকবে।
দিলরুবা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে ব্যাপারটা
” আরে কাঁদিস না।উৎস বাবা শোন আমি আজ যাই বুঝলি ওকে ওর বাড়িতে দিয়ে আমি আবার আসব
“আমি গিয়ে পৌছে দিয়ে আসি?
নিরুপমা এবার বিষম খায়।
” একি কি হলো আপনার…উৎস জিজ্ঞেস করলো।তার কথায় রসিকতার সুর
“না তেমন কিছু না আমি ঠিক আছি।আমাকে আপনার পৌছে দিতে হবে না।আমি মামির সাথেই যাবো।
” উৎস তোকে বলেছিলাম না ও কোনো পুরুষ মানুষের সামনে যায় না।ও তোর সাথে যাবে না রে।আজ যাই কেমন।
উৎস এবার আর আটকাতে পারল না।নিরুপমাকে নিয়ে দিলরুবা তাদের বাড়িতে ফিরে আসে।রুমে ঢুকতেই নিরুপমা ঠাস করে শুয়ে পরে।উপরে ফ্যান চলছে আর নিরুপমা ফ্যানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।
“কিরে নিরু কি করছিস?
” ভাবছি ফুফু
“কি ভাবছিস?
” উৎস তোমাকে রাখার জন্য এতো পাগল হলো কেন?ও কি কোনো ভাবে আমাকে সন্দেহ করছে?
“কি করে বলি বলতো
” তোমাদের ছেলেটা তো একদম নাছোড়বান্দা। মনে চাচ্ছিল মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দেই হুহ
দিলরুবা চৌধুরি হাসে।মেয়েটার এই পাগলাটে ভাবটা যদি উৎস৷ বুঝতো।
“চা খাবি?
” মন্দ হয় না তুমি বসো। আমি বানিয়ে আনি
“তুই বস আজ আমার হাতের চা খেয়ে দেখ
” ঠিক আছে
নিরুপমা বোরকা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।দিলরুবা চৌধুরি চা নিয়ে আসে।৩ জনে মিলে চা পান করে আর বিভিন্ন গল্প গুজব করে।

২ দিন পর…
উৎস অফিস শেষে অপেক্ষা করছে।প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।এর মধ্যে বের হওয়া যাবে না।এমন ঝড় উঠলো হঠাৎ গাড়ি নিয়ে বের হওয়া রিস্ক হয়ে যাবে।উৎসের অফিস থেকে দিলরুবার বাসা কাছেই।উৎসের মনে পড়তেই একটা হাসি ফুটে আসে।ফুফুর বাসায় যাওয়ার একটা বাহানা পেয়েছে।এতোদিন সে একটা বাহানা খুঁজছিল।কারন উৎস কখনোই তার কোনো আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে থাকে না।যদি কারন ছাড়া যেত তো সন্দেহ করতো।সব সময় তনিমা আর প্রেমা যেত।আর উৎস রাতেই ফিরে আসত।যেই ভাবা সেই কাজ গাড়ি নিয়ে রওনা হলো দিলরুবার বাসার উদ্দেশ্যে।

“জানো ফুফু বৃষ্টির সময় খিচুরি আর কড়া করে ইলিশ মাছ ভাজা উফ আমার যে এতো বেশি ভালো লাগে কি বলব।
ইলিশ মাছ ভাজতে ভাজতে নিরুপমা বলছিল।
“হ্যা বৃষ্টির সময় খিচুরির কোনো তুলনা হয় না।
ইলিশ মাছ ভাজার ঘ্রাণে রুবায়েত দৌড়ে আসে।নাক টেনে বলে..
” আহ ভাবি জিভে পানি চলে আসছে গো।এতো সুন্দর ঘ্রাণ লাগছে।
“হয়ে এসেছে বসো। আমি খেতে দিচ্ছি। ওদের কথার মাঝেই কলিংবেল বেজে উঠে।
” এই সময় আবার কে এলো।এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে…দিলরুবা বললেন
“আমি দেখছি আম্মু।
রুবায়েত দরজা খুলে সামনে উৎসকে দেখে বড় সড় ঢোক গিলে।কোনো রকমে তার মাকে ডাক দেয়..
” আ আয়া আম্মু এ ই এদিকে আসো
মেয়ের এমন ডাকে তিনি আর নিরুপমা চোখাচোখি করে।
“যাও তো ফুফু দেখো কে এলো
দিলরুবা এসে উৎসকে দেখে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লো।
” আম্মু দেখো ভা ভাইয়া এসেছে।
দিলরুবা একটা মেকি হাসি দেয়।রুবায়েত দৌড়ে নিরুপমার কাছে যায়।
“ভাবি ভাবি তাড়াতাড়ি তোমার রুমে যাও
” কেন কি হয়েছে
“ভাইয়া এসেছে ধুর ছাই উৎস ভাইয়া এসেছে।
কাকে বলছিস আমি এসেছি রুবায়েত?উৎসের গলা শুনে নিরুপমার কাপুনি উঠে যায়।এবার সেই ধোরা পরেই গেল….

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here