#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_৬
#Jannatul_ferdos
উপস্থিত সকলের দৃষ্টি এখন উৎসের দিকে।নিরুপমা তাকে বুঝে উঠার চেষ্টা করছে যে মানুষটাকে তাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না সেই মানুষটা আজ তার জন্য এতো গুলো টাকা দেবে?তাহলে কি মানুষটা নিরুপমার প্রেমে পড়েছে?নাকি শুধু মনুষ্যত্ববোধ থেকেই এরুপ কাজ নিরুপমার প্রশ্নের উত্তর মিলল না…
“দুলাভাই আপনি ক্যান টাকা দেবেন?…..লতিফ প্রশ্ন করলো
” কেন আমি কি দিতে পারি না?
“না মানে তা ঠিক না
” এতো কথার প্রয়োজন নেই লতিফ আমি টাকা দিব বলেছি তো?
“আপনার টাকা দেওয়া লাগবে না……নিরুপমা বেশ কড়া গলায় বলল
” তুমি চুপ করো নিরুপমা
“আপনি চুপ করেন। আমি বললাম তো আপনার টাকা দেওয়া লাগবে না।আমি ম্যানেজ করে নিব
” এতো টাকা তুমি কই থেকে ম্যানেজ করবে নিরুপমা
“সেটা আপনার ভাবতে হবে না।
” তুমি বেশি পাকনামি করো না।ব্যাপারি সাহেব এই নিন চেক আপনার টাকা আপনি উঠিয়ে নিয়েন।আর টাকা যখন পেয়ে গেছেন তখন নিশ্চয়ই এইখানে আর আপনার কোনো কাজ নাই?এরপর এই বাড়ির আশে পাশে ও আসবেন না ঠিক আছে?
“হ টাকা যহন পাইছি আর আইতাম ক্যান?এই চলরে তোরা
খবির ব্যাপারি তার দলবল নিয়ে চলে গেলো।নিরুপমা তাদের যেতে না যেতেই উৎসকে প্রশ্ন করলো…
” টাকা গুলো কেন দিলেন?করুনা করে? যে মেয়েটার তো কোনো পথ নাই টাকা আনার সেজন্য করুন করলেন?
“করুন কেন করতে যাবো। আমি শুধু তোমার আর ঝুমুর এর সম্মান রক্ষা করলাম
“ওহ আচ্ছা।যে মানুষটা আমাকে মানুষ বলে গন্যই করে না সে আজ আমার সম্মান রক্ষা করতে আসছে?….. তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিরুপমা কথা গুলো বলল।
” নিরুপমা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো তুমি।
“আমি এখানে আপনি কিভাবে জানলেন?
” আমি মুসকান এর খোজে প্রেমার রুমে গিয়েছিলাম দেখলাম ও মুসকানের সাথে খেলছে।সারা বাড়িতে তুমি নেই তখন ও বলল তুমি নাকি খুব তাড়াহুড়ো করে এখানে আসছো।এজন্য আমি আসলাম
“আমি আজকাল আমাকে খুজেন ও প্রেমে ট্রেমে পড়িলেন নাকি আমার?
” তোমার এসবন টিপিকাল মার্কা কথা বন্ধ করো।জীবনে প্রেমে একবারই পড়েছিলাম।আর আমাকে কোনো সখ বা ইচ্ছা কোনোটাই নাই।হ্যা আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি কিন্তু কেন করি তাও জানো।যখন শুনলাম ফোন আসায় এভাবে চলে এসেছে মনে হলো হয়তো সিরিয়াস কিছু হয়েছে।এসে দেখি এমম একটা ঝামেলা।এখানে তোমার সম্মান জুড়ে আছে শত হোক তুমি আমাদের বাড়ির বউ সবাই তো জানে আমাদের ও একটা সম্মান আছে।টাকা জোগাড় করতে হলে তো তোমাকে আবার কোনো চাকরি করতে হতো।এতে আমাদের সম্মনাই যেত।খান বাড়ির বউ চাকরি করছে।এতো কথা না বলে চলো।মুসকান কে প্রেমা বেশিক্ষন রাখতে পারবে না।
“দাঁড়ান আমার শ্রদ্ধেয় মায়ের উদ্দেশ্যে কিছু বলি।মা ভালো হতে পায়সা লাগে না।একটু ভালো হয়ে দেখো মা জীবনটা কতোটা সুন্দর। আর তুমি ও একজন নারী। নারী হয়ে অন্য নারীর সম্মান রক্ষা করতে শিখো। আজ যদি বিপদে না পড়তে তাহলে আমাকে এতো মা মা করে ও ডাকতে না তোমার মেয়েও আপু আপু করতো না।আমি খুব ভালো করেই জানি তোমরা দুইজনের কেউই ভালো হওয়ার মতো মানুষ না।একটা কথা মনে রেখো উপরে ঢিল ছুঁড়লে সেট নিজের মাথার উপরেই এসে পড়ে।ওইযে প্রবাদ আছে না ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।ঝুমু তোর অভিনয়ের পর্ব এবার শেষ করতে পারিস টাকা দেওয়া হয়ে গেছে।
ঝুমুর এবার নিরুপমার পা জড়িয়ে কান্না করে দেয়…
” আপু তুই বিশ্বাস কর আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আমার মা একজন স্বার্থপর মহিলা ওনার ছায়াতলে থাকলে আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে।আপু আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ আপু।
“উঠ ঝুমুর।ঠিক আছে আমি ক্ষমা করেছি।পারলে এই মহিলার প্রতিটি কুচক্রী বুদ্ধি থেকে দূরে থাকিস।চলুন উৎস…
নিরুপমা বের হতেই পারুল বেগম ঝুমুরের কাছে গেলেন…
” আরে বাহ তুই তো অভিনয় করে ফাটিয়ে দিয়েছিস
“তোমার এগুলা অভিনয় মনে হয়েছে?আমি কোনো অভিনয় করি নি আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। তুমি খুবই বাজে একজন মহিলা
” ঝুমুর তুই কি ভুলে গেছিস আমি তোর মা। আমি তোকে জন্ম দিয়েছি
“জন্ম দিয়ে উদ্ধার করে ফেলেছো।তার চেয়ে ভালো হতো জন্মের সময় মেরে দিতে তাহলে না তোমার মা পেতাম আর না আপুর মতো একটা মেয়েকে আমি এতো কষ্ট দিতাম।খুবই জঘন্য মহিলা তুমি।
ঝুমুর দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো পারুল বেগম মুখে যা আসছে তাই বলে ঝুমুকে গালিগালাজ করতেছে।ঝুমুর কোনো কথায় কান দেয় না।নিজের রুমে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
উৎস আর নিরুপমা বাড়িতে ফিরতেই দেখে মুসকান কান্না করছে।প্রেমা ওকে অনেক চেষ্টা করছে থামানোর কিন্তু সে কিছুতেই থামছে না।উৎস গিয়ে কোলে নিলে ও থামে না । নিরুপমা উৎসের কোল থেকে নিলে মুসকান থেমে যায়।ঘটনায় উৎস আর প্রেমা দুজনেই অবাক। একে বলে মায়ের কোল। ছোট মুসকান নিরুপমার মাঝেই তার মাকে খুজে পেয়েছে।
” প্রেমা ওর দুধ বানিয়ে নিয়ে এসো
“হ্যা ভাবি যাচ্ছি।
প্রেমা দুধ বানাতে যায় আর নিরুপমা মুসকানকে নিয়ে সারাবাড়ি ঘুরে বেড়ায়।মাঝে মধ্যে মুসকান হাতের আঙুল মুখে পুরে খাচ্ছে আর কান্না করে উঠছে আবার কখনো চুপ সে জানান দিচ্ছে তার খুদা পেয়েছে।প্রেমা দুধ দিলে নিরুপমা মুসকানকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ায়।মুসকানকে প্রেমার কাছে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে যায় তনিমা বেগম রান্নার ব্যবস্থা করছেন
” আরে নিরু আসো।বাড়ির ঝামেলা ঠিক হয়েছে?
“হ্যা মা ঠিক হয়েছে।
” সকালে তো কিছু খেয়ে গেলে না।সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো এখন তো কিছু খেয়ে নাও
“আসার পথে আমি আর আপনার ছেলে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।
” অহ ভালো করেছো।।
“মা বাকি রান্নাটা আমি করি?এই বাড়িতে আসার পর তো আমাকে একদিন ও রান্না করতে দিলেন না।আমি কি মুসকানের মা ছাড়া এই বাড়িত আর কিছু না?
” ধুর পাগলি মেয়ে তা হবে কেন?সারাদিন মুসকানকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাও এজন্য আর মন চায় না তোমাকে দিয়ে কিছু করাতে।
‘”না মা কোনো সমস্যা নেই। আজ আমি রান্না করছি
“ঠিক আছে।
আজ প্রবীর খানের শরীরটা ভালো লাগছে না।এজন্য দুপুরের দিকেই বাড়িতে আসেন।অনেকদিন পর বাড়ির সকলে দুপুরের খাবার একসাথে খাবে।সকলে মিলে খেতে বসে।
” মা আপনি ও বসেন
“আরে না আমি তোমাকে সাহায্য করছি
” না মা সমস্যা নেই আপনি বসেন
নিরুপমা সবাইকে খাবার বেড়ে দিল।মুখে দিয়েই প্রবীর খান আর প্রেমা একসাথে জিজ্ঞেস করলো-“কে রান্না করেছে?
“ইয়ে মানে আমি।কোনো ভালো হয় নি?
” দারুণ সুন্দর হয়েছে বঊমা কি বলিস উৎস…প্রবীর খান খাবার মুখে নিতে নিতে বললেন।। এতোক্ষন উৎস চুপ করে খাচ্ছিল।রান্নার স্বাদে যে পরিবর্তন হয়েছে তা নিয়ে তার ভিতরে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই এমন মনে হলো।প্রবীর খানের কথাই সে উত্তর দিল
“হুম ভালোই হয়েছে খারাপ না।
নিরুপমা তার দিকে তাকিয়ে আছে।খুশিতে চোখ জ্বল জ্বল করছে।উৎস কখনোই তার প্রশংসা করে না।আজ সে তার রান্না ভালো হয়েছে বলল?নিরুপমার যেন খুশির বাধ মানছে না।সে একদিন উৎসের মন জয় করেই ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।
চলবে!
গরমের মধ্যে রোজা রেখে এতোটা কষ্ট হয় লিখতে মন চায় না।তারউপরে আবার ঘুমে ধোরে খুব।কষ্ট করে লিখেছি কেউ ছোট বলবেন না প্লিজ🙂