এবরশন
Part 1
.
.
বেবি টেষ্টটিউবের রেজাল্ট দেখে রিভা বড় ধরণের শক খেল ! সে প্রেগনেন্ট ! বিয়ের আগে মা হওয়ার বার্তা কোনো মেয়ের জন্যই শুভ লক্ষণ না । বরং এই সমাজে বেঁচে থাকা কষ্ট । কিছু দিন ধরেই রিভার বমি বমি ভাব হচ্ছে , খাওয়ার প্রতি রুচি কমে গেছে । খেতে বসলেই মনে হয় পেট পুরোপুরি ভরা । মিনহাজের সাথে দেখা করা খুবই জরুরি । কিন্তু ইদানিং ওর ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছে রিভা । তাহলে কি ও আমাকে নিয়ে গেম খেললো ! রিভার আবার বমি বমি লাগছে , শরীরটা গুলিয়ে যাচ্ছে । রিভা দৌড়ে বেসিনের সামনে যেয়ে হরহর করে বমি করে দিল । শরীরটা খুব দূর্বল । একটুও হাটঁতে ইচ্ছা করে না । সারাদিন ভালোই কাটে কিন্তু সমস্যা হয় রাতে । ভাই ভাবি অফিস থেকে ফিরলে । তবে কেউ তেমন রিভার দিকে কেয়ার নেই না । সারাদিন অফিসে থাকার দরুনে দুজনেই ক্লান্ত থাকে । তাই রিভা কি করছে বা রিভার অস্বাভাবিক পরিবর্তন ও কর্মকান্ড কারো চোখে পড়ে না । রিভার অবশ্য এই দিকে একটু সুবিধাই হয়েছে । তবে শুক্রবারে রিভাকে খুব সাবধানে চলতে হয় । কারণ ভাই ভাবি দুজনেই সেদিন বাসায় থাকে ।
পড়ালেখার সুবাদে ভাইয়ের বাসায় থাকে রিভা । গ্ৰামের বাড়িতে রিভার মা বাবা আছেন । আগামীকালই মিনহাজের সাথে দেখা করতে হবে । রিভা মনে মনে কিছু কথা এঁটে নিল । মিনহাজকে তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে বলতে হবে । ভাইয়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলবো । এভাবে আর বেশিদিন থাকা মোটেও ভালো হবে না । এক কেলেঙ্কারি কান্ড হবে যদি ভাই ভাবি এই সব জানে । সবচেয়ে আগে মিনহাজের সাথে দেখা করতে হবে । প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা মিনহাজকে জানানো অতি জরুরি । রিভার দম বন্ধ হয়ে আসছে । কেমন অস্থিরতা ভর করেছে বুকের ভেতর । মাথাটা ঝিম ধরে আছে ।
সন্ধ্যার একটু পরে রিভার ভাবির ডাকে রিভার ঘুম ভাঙে । রিভা চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে । চোখ ছোট ছোট করে ভাবির দিকে তাকাই । রিভার ভাবি সিরিয়াস কণ্ঠে বলেন
– কিরে এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিস কেন ? শরীর খারাপ ।
-না ঠিক আছি । তুমি কখন আসলে ?
-বিকেলে এসেছি । কলিংবেল দিয়ে যখন তোকে পেলাম না তখন চাবি দিয়ে খুলেছি । পরে তোর রুমে এসে দেখি তুই ঘুমাচ্ছিস । তাই আর ডাকি নাই ।
-ও , ভাইয়া এসেছে ?
রিভার ঘুমের ভাব এখনও কাটেনি । রিভার ভাবি কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেল । একটা জরুরি কথা বলার দরকার ছিল কিন্তু বলল না । ঘুমের আলসেমিতে কি বলা ঠিক হবে ? নিজের কাছে কনফিউজড হয়ে তিনি আর কথা বাড়ালেন না ।
রাতের খাওয়ার পর রিভা কয়েকবার মিনহাজের নাম্বারে কল দিল । কিন্তু এখনও বন্ধই বলছে । রিভার মনে হলো আরিফ ভাইয়ের কথা । আরিফ মিনহাজের ফ্রেন্ড । ওনার নাম্বার রিভার কাছে ছিল । এখন আছ কিনা দেখতে হবে। ফোনের কল কন্টাক নাম্বার দেখতে দেখতে আরিফের নাম দেখে রিভার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো । কল দিতে আর এক মূহুর্তও দেরি করলো না ।
আরিফ রিভার কলটা রিসিভ করে উচ্চ স্বরে বলল
-হ্যা রিভা বলো !
আরিফের কথা শুনে পাশে বসে থাকা মিনহাজ আরিফের ফোনটা নিয়ে লাইন কেটে দিল । তারপর আরিফকে বলল
-রিভা আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি যে আমার সাথে তোর কয়েক সপ্তাহ দেখা হয় না । নে কল দে এবার ।
মিনহাজের কথা শুনে আরিফ অবাক হলো । রিভার নাম্বারে কল দিতে যেয়েই আবার রিভার কল ভেসে উঠলো স্কিনে । আরিফ রিসিভ করে বলল
-হ্যা বলো , নেটওয়ার্ক সমস্যা ।
রিভা শান্ত কণ্ঠে বলল
-ভাইয়া মিনহাজের কোনো খবর জানেন ? ওর সাথে প্রায়ই এক সপ্তাহ যোগাযোগ নেই । ওর নাম্বারটাও বন্ধ পাচ্ছি ।
আরিফ কাচুমাচু করে বলল
-আসলে না মানে , আমারও কোনো যোগাযোগ নেই । কেন কোনো সমস্যা !
রিভা ভাবলো ওই ব্যাপারটা বলা কি ঠিক হবে ?
-না ভাইয়া , এমনি লাইনে পাচ্ছি না তো তাই । আচ্ছা ঠিক আছে ।
লাইনটা কেটে অস্থির ভাব করে আরিফ মিনহাজকে বলল
-কিরে দোস্ত তোর ফোন বন্ধ কেন ? আর আমাকেই মিথ্যা বলতে বললি কেন ?
মিনহাজ সিগারেটের ধোয়া আকাশ পানে উড়িয়ে বলল
-ওই টা খাওয়া শেষ । তাই যোগাযোগও বন্ধ । নতুন সিম কিনেছি । দুই একদিন কান্নাকাটি করে ভুলে যাবে, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে ।
সকালে নাস্তার টেবিলে রিভার ভাই বলল
-রিভা , আজ সন্ধ্যায় একটু রেডি হয়ে থাকিস তো ।
রিভা অবাক হয়ে বলল
-কেন ভাইয়া ?
-তোর বিয়ের ব্যাপারে একটা সমন্ধ আসবে । ছেলে আমার অফিসেই চাকরি করে । বাবা মার সাথে কথা হয়েছে । তাদের কোনো অমত নেই ।
রিভা ছোট্ট করে “আচ্ছা বলল ।
রিভা কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলেও তার মূল উদ্দেশ্য মিনহাজের সাথে দেখা করা । তাছাড়া শরীরের এই অবস্থা নিয়ে কলেজে আসার কোনো ইচ্ছে নেই । কলেজের পুকুর পাড়ে আসতেই মিনহাজকে পেয়ে গেল ।
-কি ব্যাপার তোমার ফোন বন্ধ কেন ? কত বার তোমার নাম্বারে কল দিয়েছি তুমি জানো ?
-আসলে ফোনটা হারিয়ে গেছে । আর তুমিও তো ইদানিং কলেজে আসছো না ।
-আচ্ছা ওসব বাদ দাও । তোমাকে একটা কথা বলা খূব জরুরি ।
-হ্যা বলো ।
রিভা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-আমি প্রেগনেন্ট মিনহাজ !
কথাটি শুনে মিনহাজ অবাক হলো !
-কি করে সম্ভব ! তুমি পিল খেয়েছিলে না ?
-হ্যা , কিন্তু তারপরও রেজাল্ট পজিটিভ । মিনহাজ তুমি তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও তোমার মা বাবাকে দিয়ে । আজ সন্ধ্যায় আমাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে । আমি ম্যানেজ করে নিব । তুমি তাড়াতাড়ি কিছ একটা কর । আমি কোনো ঝামেলা চাই না !
-ঝামেলা তো আমিও চাই না । তুমি এক কাজ করো , কোনো ভালো হসপিটাল থেকে এবরশনটা করিয়ে নাও । যা খরচ হবে আমি সব দিয়ে দিব !
মিনহাজের কথায় রিভা আকাশ থেকে পড়লো ! ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে এমন কথা শুনে মাথাটা আর একটু ঘুরাচ্ছে ।
রিভা বুঝতে পারছে না যে এখন কি বলবে ! রাগে ঘৃণায় রিভার চোখ লাল হয়ে উঠেছে । খুব কান্না পাচ্ছে । নিজেকে সামলে নিয়ে রিভা বলল
-এসব তুমি কি বলছো ! এত বড় পাপ আমি করতে পারবো না । আর তুমি না আমাকে ভালোবাসো ! তাহলে বিয়ে করলেই তো সব সমাধান হয়ে যাচ্ছে ।
-দেখো , এই সময় বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না । এখনও পড়াশোনা শেষ করলাম না । বাড়িতে বিয়ের কথা বলবো কিভাবে । তার চেয়ে ভালো হয় তুমি এবরশনটা করে ফেলো ।
রিভা রাগন্বিত কণ্ঠে বলল
-তুই একটা শয়তান , এর ফল ভালো হবে না । তুই আমার যে সর্বনাশ করেছিস তার !
রিভা আর কিছু বলল না পিছু ফিরে হাটঁতে লাগলো । প্রখর রৌদ্র ! রিভা হেঁটে চলেছে বাড়ির উদ্দেশ্যে । রাস্তায় একটা রিকশা ইজিবাইক কিছুই দেখা যাচ্ছে না । দুপুর গড়িয়ে বিকেলের কাছাকাছি । আর কত সময় হাঁটতে হবে কে জানে । রিভার খুব কান্না পাচ্ছে । এই বাচ্চা নিয়ে সে এখন কি করবে ? চারিদিকে কোনো মানুষ নেই । রিভা রাস্তার মাঝে বসেই কান্না করে দিল । নিজেকে আর সামলে নিতে পারছে না ।
সন্ধ্যায় রিভা বসে আছে ড্রয়িং রুমে । সামনে কয়েকজন অপরিচিত মানুষ । অবশ্য এখনও তাকিয়ে দেখা হয়নি সামনের লোকদের । কারণ পাত্র পক্ষের সামনে যত লাজুক সেজে থাকা যায় ততই ভালো । কিন্তু এতে রিভার ভ্রুক্ষেপ নেই । তবুও কোথায় যেন একটা বাঁধা অনুভব করে ।
সমাজের নিয়ম কানুনের বাইরে যাওয়া তো হয়ে ওঠে না । তাই সমাজকে প্রাধান্য দিতেই হবে ।
এই প্রথম রিভা কোনো ছেলে পক্ষের সামনে আসলো । কিন্তু তবুও তার কোনো ভয় বা অন্য রকম ফিলিংস কাজ করছে না । রিভার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা ঘুরছে ! পেটের বাচ্চা ! কিভাবে এর সমাধান খুঁজে পাবে ? তা এখনও রিভার অজানা ।
ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে সামনের লোকদের দেখার একটু চেষ্টা করলো রিভা । কিন্তু সামনে তাকাতেই রিভা অবাকের উচ্চ ধাপে পদার্পণ করলো । পরিচিত একটা মুখ ! চোখাচোখি হতেই রিভার দুইবার হার্ট মিস হওয়ার উপক্রম হলো !
চলবে…
(বিতর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন । গঠনমূলক মন্তব্য করুন ।)
.
.
.