কথা দিলাম পর্ব -০৩

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩||
কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

“সোহম? ভিকি কোথায়? হঠাৎ এখানে আমাকে ডাকলো কে… এ কি? ওনারা এখানে কেন?”

“আমি ডেকেছি ওনাদের ড্যাড!”

মিটিং রুমে সোহম সুধাংশু বাবু আর দেবাং শুকে নিয়ে গিয়ে বসানোর কিছুক্ষণ পর আধভিকের বাবা আভাস রায় চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হন। সুধাংশু বাবুদের দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করেন তিনি তাই প্রশ্ন করেন। সোহম উত্তর দেওয়ার আগেই আধভিকের তরফ থেকে উত্তর পান। আধভিকের দিকে ফিরতেই উনি জিজ্ঞেস করেন,

“ওনারা এখানে কেন ভিকি? আমি তোমাকে কি বলে পাঠিয়েছিলাম তোমার মনে নেই? ওনাদের প্রোডাকশন হাউস আমরা কিনে নিয়েছি। আর ওদের আন্ডারে চলা কোনো সিরিয়াল, সিনেমা আমরা চালাবো না।”

“হ্যাঁ সবই মনে আছে। কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত অন্য কিছু ড্যাড। এই প্রোডাকশন হাউজের দায়িত্ব তুমি যখন আমাকে দিয়েছো তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও নিশ্চয় দিয়েছো?”

“অবশ্যই। কিন্তু আমি চাই না তুমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নাও তাই তোমাকে….

আভাস বাবু চুপ করে গেলেন। আধভিকের পিছন থেকে গুটি গুটি পায়ে সিয়ারা এসে আধভিকের পাশে দাঁড়িয়েছে মাথা নীচু করে। ভয়ে ভয়ে মাথা তুলে আভাস বাবুর দিকে তাকাতেই আভাস বাবু আধভিকের দিকে তাকিয়ে কঠোর কণ্ঠে বললো,

“ওনাদের আন্ডারে চলা কোনো সিরিয়াল, সিনেমা আমরা চালাবো না। ওনাদের থেকে আমরা ওনাদের প্রোডাকশন হাউজ কিনে নিয়েছি ব্যাস! আর কোনো সম্পর্ক নেই। আর এটা আমার অর্ডার।”

আভাস বাবু বেরিয়ে গেলেন। সিয়ারা আধভিকের দিকে ছলছল চোখে তাকালে আধভিক সিয়ারার দিকে তাকিয়ে আভাস বাবুর যাওয়ার দিকে তাকায়। সেই মুহূর্তে সমরেশ বাবু বলে ওঠেন,

“স্যার প্লিজ! আমাদের সিরিয়ালটা অনেক দূর এগিয়ে এসেছিলো। এইসময় সিরিয়ালটা বন্ধ করে দেবেন না।”

“আপনার এই সিরিয়ালের শেষ কীভাবে হয় সেটা জানার অপেক্ষায় আমিও আছি মিস্টার চক্রবর্তী। তাই জন্যেই তো আপনাদের ডাকা। আর আধভিক রায় চৌধুরী যা শুরু করে সেটাও তাঁর ইচ্ছায় হয়, শেষটাও তাঁরই ইচ্ছায় হয়। অন্য কেউ শেষ করতে চাইলেই সেটা শেষ করতে পারে না।”

শেষের দুটো কথা সিয়ারার চোখে চোখ রেখে বললো আধভিক।

“আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমি আসছি।”

আধভিক চলে গেলে সিয়ারা একটা চেয়ারে বসে পরে। আধভিকের কথার মানে সে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। সিয়ারা নিজের খেয়াল মগ্ন ছিলো, এমন সময় দেবাংশু প্রশ্ন কানে এলো ওর।

“কি বললো তোকে এ.ভি.আর.?”

“পরে বলবো।”

সিয়ারার ছোট্টো উত্তরে চুপ করে গেলো দেবাংশু। এদিকে সোহম ভাবছে, কি কথা হচ্ছে আধভিক আর আভাস বাবুর মধ্যে।

“এইভাবে ওখান থেকে চলে আসলে কেন ড্যাড? ওরা আমাদের গেস্ট, এটা ওদের অপমান করা হলো।”

“অপমান মাই ফুট! তুমি কেন ডেকেছো ওদের এখানে? ওই মেয়ে এখানে কি করছে ভিকি? আমাদের প্রোডাকশন হাউজে কি করছে ও?”

“তুমি জেনে বুঝে কেন ওদের প্রোডাকশন হাউজ কিনলে ড্যাড? আগে তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”

আভাস বাবু চুপ করে গেলেন আধভিকের প্রশ্নে। সেই দেখে আধভিক আবার প্রশ্ন করলো,

“তুমি ইচ্ছা করে কাজটা করেছো তাই না? সিয়ারাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এইভাবে সুধাংশু বাবুর থেকে সর্বস্ব কেড়ে নিলে?”

“হ্যাঁ কেড়ে নিলাম! কেড়ে নিলাম আমি, আর আমি যা করেছি বেশ করেছি। কোনো অনুতাপ নেই আমার এ জন্য। যেই মেয়েটা আমার থেকে আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়েছে, আমার ছেলের থেকে তাঁর সমস্ত সুখ-শান্তি কেড়ে নিয়েছে তাঁর এমন শাস্তিই প্রাপ্য। দিনের পর দিন তোমাকে গুমরে গুমরে মরতে দেখেছি আমি, নিজের একমাত্র সন্তানকে চোখের সামনে এভাবে দেখার কষ্ট তুমি বোঝো?”

আধভিক আভাস বাবুর কেঁপে যাওয়া কণ্ঠস্বর শুনে আর ভেজা চোখ দেখে ওনাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর বলে,

“আমি ঠিক আছি ড্যাড! একদম ঠিক আছি। তোমার কাছেই আছি। তোমার থেকে তোমার ছেলেকে কেউ কেড়ে নেয়নি। যদি কেড়ে নিয়ে থাকে তাহলে যে কেড়ে নিয়েছে সেই ফিরিয়ে দেবে। আমি যা করছি বুঝে শুনেই করছি, তুমি শুধু আমার পাশে থাকো।”

আভাস বাবু আর কিছু বললেন না। আধভিক ওনাকে নিয়ে ভিতরে এলে সবাই উঠে দাঁড়ায়। আভাস বাবু সিয়ারাকে একটু ভালো ভেবে দেখে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

“আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি আমার ব্যবহারের জন্য। আমার ছেলে এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি তাঁর সাথেই সহমত প্রকাশ করবো। ওর কথাই শেষ কথা, আসছি আমি।”

আভাস বাবু বেরিয়ে গেলে আধভিক আর সিয়ারা দুজনেই হতাশ ভাবে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর চোখ সরাতেই একে অপরের সাথে চোখে চোখ পরে যায়। সেসময় সোহম ডাকলে আধভিক সবাইকে বসতে বলে।

“স্যার, আপনাদের প্রোডাকশন হাউজ আমাদের আন্ডারে এখন তাই এর আন্ডারে চলা সমস্ত প্রজেক্টও আমাদের আন্ডারে।”

“আপনি কি ঠিক করেছেন এ বিষয়ে? সব প্রজেক্ট বন্ধ করে দেবেন?”

“এমনটা করবেন না স্যার।”

“সবার আগে সমরেশ বাবু আপনি আমাকে স্যার ডাকটা বন্ধ করুন আর সুধাংশু স্যার, আপনি প্লিজ আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্মোধন করবেন না।”

আধভিকের কথা শুনে সুধাংশু বাবু আর সমরেশ বাবু সম্মতি জানালে আধভিক বলে,

“আমি ঠিক করেছি আগে সিনেমা আর সিরিয়ালগুলোর স্ক্রিপ্ট পড়বো। সেটা পড়ার পর আমি ডিসিশন নেবো কোনগুলো চলবে আর কোনগুলো না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি চেঞ্জও করতে পারি স্ক্রিপ্টে। কোনো অসুবিধা থাকলে এক্ষুনি বলতে পারেন সমরেশ বাবু।”

“না, না। কোনো অসুবিধা নেই এতে আমার। তাছাড়া শুধুই তো প্রোমো লঞ্চ হয়েছে, স্ক্রিপ্ট এখনই চেঞ্জ হলে অসুবিধা নেই কারণ শুটিং তেমন হয়নি।”

“ঠিক আছে। আপনি এখন কি স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসেছেন? তাহলে আমি এখনই দেখে দিচ্ছি।”

“আমি আজ তাহলে আসি আধভিক?”

“সে কি স্যার এখনই চলে যাবেন? চা, কফি বা কোল্ড ড্রিঙ্কস নেবেন না?”

“পরে একদিন হবে। আজ আসি।”

সুধাংশু বাবু উঠে দাঁড়ালে আধভিকও উঠে দাঁড়ায়। হ্যান্ডশেক করে সুধাংশু বাবু বেরিয়ে গেলে দেবাংশুও পিছু পিছু বেরিয়ে যায়। সিয়ারাও বেড়াতে গেলে আধভিক পিছন থেকে বলে ওঠে,

“কিছুক্ষণ আগের কথা মনে আছে তো?”

“হ্যাঁ।”

সিয়ারা আধভিকের দিকে না ফিরেই নিজের উত্তর জানিয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। আধভিক তা দেখার পর বাঁকা হাসলে সোহম জিজ্ঞেস করে,

“স্যার? আপনি এতো গোপনে কাজ করছেন কেন?”

“তোমাকে কিছু জানাতে চাইনা তাই!”

আধভিকের কথা শুনে সোহম চুপ করে গেলো। বেশ খারাপ লাগলো কথাটা কিন্তু কিছু বললো না সোহম, চুপ করেই রইলো।

“সমরেশ বাবু যেই স্ক্রিপ্টটা দেবে সেটা নিয়ে আমার কাছে চলে এসো। আমি বেরোচ্ছি। সমরেশ বাবু আপনি সোহম কে স্ক্রিপ্টটা দিয়ে দিন, আজকে আমাকে একটু বেড়াতে হবে।”

“ঠিক আছে, তুমি তাহলে আমাকে স্ক্রিপ্টে কিছু চেঞ্জ করতে হলে জানিয়ে দিও? আজ আমি আসি তাহলে?”

“হ্যাঁ অবশ্যই। শুটিং কবে থেকে শুরু হবে আমি সেটাও জানিয়ে দেবো।”

সমরেশ বাবু স্ক্রিপ্টটা সোহমের হাতে দিয়ে বেরিয়ে গেলে আধভিক সোহমের দিকে তাকায়। সোহম একবার নিজের ডায়েরি দেখে নিয়ে বলে,

“আজকে তো কোনো মিটিং নেই স্যার, তাহলে?”

“তুমিই তো জানতে চাইলে আমি গোপনে কাজ করছি কেন? গোপন কাজ যখন উত্তরটাও গোপনেই দেওয়া উচিত তাই না?”

সোহম ক্যাবলা হাসি দিলে আধভিকও শব্দবিহীন হালকা হাসে। তারপর আভাস বাবুর সাথে কি কথা হয়েছে তা জানায় কিন্তু সিয়ারার সাথে কি কথা হয়েছে সেটা পুরোপুরি বলে না।

সিয়ারার বাড়িতে,

সিয়ারা ফ্রেশ হয়ে এসে ঘরে বসার কিছুক্ষণ পরেই সুধাংশু বাবু ওর ঘরে আসে। সিয়ারা বুঝতে পারে ঠিক কি জন্য এসেছেন উনি। তাই কিছু না বলে চুপ করে থাকলে সুধাংশু বাবু বলেন,

“আমি জানি না আধভিক তোমাকে ঠিক কি বলেছে আর জানতেও চাই না। আমার বিশ্বাস আধভিক এমন কিছু বলতেই পারে না যাতে কাওকে অসম্মান করা হয়। এর সাথে আমার তোমার উপরও বিশ্বাস আছে, তুমি অসম্মান হওয়ার মতো কোনো কাজ করবে না কখনও। তাই তো?”

সিয়ারা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। সুধাংশু বাবু সিয়ারার মাথায় হাত রেখে হাসিমুখে, “রেস্ট নাও” বলে বেরিয়ে গেলেন। সিয়ারা শুতে যাবে এমন সময় শুনতে পেলো,

“ড্যাড কিছু না জানতে চাইতেই পারে কিন্তু আমি জানতে চাই। কি কথা হয়েছে তোর এ.ভি.আর. এর সাথে?”

সিয়ারা তাকিয়ে দেখলো দেবাংশু দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নত করে উত্তর দিলো,

“তেমন কিছু না।”

“বলতে চাস না?”

“সেটা কখন বললাম? কথা হবে তারপর তো বলবো? তেমন কিছুই কথা হয়নি। উনি বলেছেন, আজকে…আজকে রাতে দেখা করতে ওনার সাথে।”

“হোয়াট? একা দেখা করতে বলেছে নিশ্চয়?”

“হ্যাঁ, কেন?”

“কেন মানে টা কি সিয়া? তোকে একা রাতের বেলা দেখা করতে বলেছে এর কি মানে হতে পারে তুই বুঝতে পারছিস না?”

দেবাংশু কে ভীষণ পরিমাণে রেগে যেতে দেখে সিয়ারা সামাল দেওয়ার জন্য বললো,

“দেব তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছু না। আমি সিরিয়ালের হিরোইন তাই জন্যেই ডেকেছে হয়তো।”

“ওহ রিয়েলি? তো হিরোকে কেন ডাকলো না? সিয়া, ও একটা প্রোডিউসার ওকেই? প্রোডিউসাররা কেমন হয় এটা নিশ্চয় তোর অজানা নয়? তার মধ্যে আবার ইয়ং ম্যান! আরওই চরিত্র খারাপ হবে, সুযোগ নিতে চাইবে।”

“জাস্ট শাট ইউর মাউথ দেব! বেশি বলছিস তুই। আধভিকের চরিত্র নিয়ে কথা বলার তুই কেউ হোস না ওকে? কতোটা চিনিস তুই ও’কে? আজ অবধি ও কোনো মেয়েকে বাজে নজরেই দেখেনি তো সুযোগ নেওয়ার কোনো প্রসঙ্গই আসে না। এভাবে অন্যের চরিত্রে আঙুল তোলার অধিকার তোর নেই, ভুলে যাস না।”

“তুই ও’কে এতো ভালো কীভাবে চিনিস? ওর ব্যাপারে খারাপ বলায় এতো খারাপ লাগছে তোর?”

দেবাংশু সন্দিহান দৃষ্টিতে সিয়ারার দিকে তাকালে সিয়ারা কোনো সংকোচ না করে সোজা, স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো।

“আজ অবধি কোনো খারাপ কিছু শুনেছিস ওর ওনার বিষয়ে? দর্শকরা না হয় ভিতরের খবর জানে না তবে আমরা তো ইন্ডাস্ট্রির লোক তাই না? কখনও কোনো কেলেঙ্কারি তে জড়িয়ে পরার খবর পেয়েছিস? উনি এইসব বিষয়ে ছিলেন না প্রায় দুবছর ধরে দেব। আর যদি খারাপ লাগার কথা বলিস তাহলে বলবো, হ্যাঁ আমার খারাপ লেগেছে। কিন্তু সেটা ওনার জন্য নয়, তুই প্রোডিউসার শব্দটা ব্যবহার করায়। ভুলে যাস না তোর বাবা, আমার আঙ্কেল সেও একজন প্রোডিউসার। পরবর্তী কালে তুইও হয়তো সেই জায়গাটাই নিবি। তার মানে আঙ্কেল খারাপ? তুই খারাপ? হতে পারে কয়েকজন খারাপ। এক বস্তা আমের মধ্যে দু চারটে পঁচা আম থাকে তাই বলে সব আম পঁচা হয়ে যায় না দেব। এটাও যদি তুই না বুঝিস ইন্ডাস্ট্রির মানুষ হয়ে তাহলে আমার কিছু বলার নেই। প্লিজ, আমি টায়ার্ড কোনো কথা বাড়াতে চাই না এখন আর।”

সিয়ারা রেগে মেগে দেবাংশুর থেকে অপর পাশ ফিরে শুয়ে পরলো। দেবাংশু সিয়ারার কথা মতো, কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। এদিকে, সিয়ারা চোখ বুজতেই আজকে সকালে আধভিকের সাথে কথোপকথন মনে পরে গেলো।

ফ্ল্যাশব্যাক…………………

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

বিঃদ্রঃ রেসপন্স নেই কেন গাইজ? কি ব্যাপার, ভালো লাগছে না?☹️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here